উসুলুল ফিকহ মানে হলো আদিল্লাতুল ফিকহ। সংক্ষেপে বললে, উসুলুল ফিকহ হলো এমন কিছু কাওয়ায়িদের নাম, যার মাধ্যমে একজন মুজতাহিদ শরিয়াহর বিস্তর দলিল থেকে শরিয়াহর কর্মগত বিধিবিধান উদঘাটন করতে পারেন।

القواعد التي يتوصل بها المجتهد إلى استنباط الأحكام الشرعية العملية من أدلتها التفصيلية. والقواعد هي الضوابط العامة، التي تشتمل على أحكام جزئية. والأحكام هي ثمرة الاستنباط. والأدلة التفصيلية هي الأدلة الجزئية التي تتعلق بمسألة بخصوصها، وتدل على حكم بعينه.

উসুলুল ফিকহ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো উসুলু ফিকহিল আহকাম। উসুলে ফিকহের কিতাবগুলোতে আহকাম বোঝার মূলনীতি উল্লেখ করা হয়ে থাকে। উসুলুল ফিকহ বলতে সাধারণত চারটা জিনিস বোঝানো হয়ে থাকে—

  1. الأحكام الشرعية ومراتبها (শরয়ি বিধানাবলি ও তার স্তরসমূহ)

এক্ষেত্রে মৌলিক কাজ দুটো :

ক. শরয়ি বিধিবিধান বোঝানোর জন্য যেসকল পরিভাষা ব্যবহার করা হয়ে থাকে—যেমন : ফরজ, ওয়াজিব, হারাম, মাকরুহ ইত্যাদি—সেগুলোর পূর্ণাঙ্গ পরিচয় আত্মস্থ করা। স্মতর্ব্য যে, প্রতিটি পরিভাষা জানার নির্ধারিত নিয়মকানুন রয়েছে। তা অনুসরণ করে শরয়ি পরিভাষাগুলোর ব্যাখ্যা করলেই কেবল যথাযথ ব্যাখ্যা হবে। অন্যথায় পদস্খলন হওয়ার সমূহ আশঙ্কা রয়েছে। সঠিক মূলনীতি অনুসরণ না করার কারণে আমরা অনেকসময় ভুল বুঝে থাকি। যেমন : যদি জিজ্ঞাসা করা হয়, ফরজের পরিচয় কী? তাহলে অনেকেই উত্তর দিয়ে থাকেন—

ما ثبت بدليل قطعي الثبوت والدلالة.

আচ্ছা, যদি সুবুত (প্রামাণিকতা) এবং দালালাহ (নির্দেশনা) অকাট্য হলেই তা ফরজ হয়ে যায় তাহলে তো অনেক মুবাহও ফরজ হিসেবে প্রতীয়মান হবে। যেমন : আল্লাহ বলেন—

وإذا حللتم فاصطادوا

এই আয়াতটি সুবুত এবং দালালাহ উভয় বিচারেই অকাট্য। এখন কি মাছ শিকার করাকে ফরজ বলা হবে?

এখানে যে বিচ্যুতিটা হয়েছে, তা হলো, আমরা সংজ্ঞার গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশকে বাদ দিয়েছি। আর তা হলো ‘তলবে জাযেম’। শুধু ‘কাতয়ি’ হলেই কোনো বিষয় ফরজ হয়ে যায় না; বরং তলবটা হতে হয় ‘তলবে জাযেম’। এই আয়াতে যে তলবটা রয়েছে, তা হলো ইবাহাতের তলব; তলবে জাযেম নয়। এ জন্য আয়াতের বিধানটা মুবাহই থাকবে; ফরজ হবে না।

আমাদের মাযহাবে উসুলে বাজদাবির আঙ্গিকে যেসকল কিতাব রচিত হয়েছে, সেগুলোতে আহকাম বিষয়ক বিস্তারিত আলোচনা পাওয়া যায় না। তাই এ বিষয়ে জানার জন্য ইমাম ইবনুল হুমাম রহ. (৮৬১ হি.)-এর আত-তাহরির, ইমাম সদরুশ শরিয়াহর আত-তালউইহ এবং মুহিব্বুল্লাহ বিহারি রহ. (১১১৯ হি.)-এর মুসাল্লামসহ অন্যান্য গ্রন্থ অধ্যয়ন করা যেতে পারে।

খ. আহকাম বোঝার আলামত ও পদ্ধতি জানা। যেমন : কোন কোন আলামত থাকলে আমরা বুঝব, এখানে তলবে জাযেম রয়েছে কিংবা তলবে ইবাহাত রয়েছে। সেই আলামতগুলো জেনে আত্মস্থ করে নিতে হবে। কিছু কিছু আলামত উসুলে ফিকহের গ্রন্থাদিতে রয়েছে। অন্যগুলো ফিকহে মুদাল্লাল, ফিকহে মুকারান এবং আহকামুল কুরআনের কিতাবগুলো থেকে আত্মস্থ করে নিতে হবে।

  1. আদিল্লাতুল আহকাম

শরয়ি বিধান প্রমাণিত হওয়ার জন্য যে দলিলের প্রয়োজন, তার সুবুত, দালালাহ এবং স্তর নিয়ে আলোচনাই হলো এ অধ্যায়ের মূল বিষয়।

  1. কাওয়ানিনু দালালাতিন নস ওয়া আলফাজুহা

নসের শব্দ ও বাক্যের কী নির্দেশনা, তা সুনির্দিষ্টভাবে জানার জন্য ইমামগণ কিছু নিয়মনীতির অনুসরণ করে থাকেন, যা মূলত ‘কাওয়ানিনুল লুগাহ’ থেকে গৃহীত। তবে ফকিহগণ এ অধ্যায়কে আরও সমৃদ্ধ করেছেন। নসের নির্দেশনা নির্দিষ্টভাবে বোঝার জন্য এ বিষয়ক আলোচনাগুলো করা হয়ে থাকে। যেমন : উসুলুল ফিকহের গ্রন্থাদিতে আম, খাস, হাকিকত, মাজায নিয়ে আলোচনা করা হয়ে থাকে।

  1. মাকাসিদুশ শারিয়াহ

শরয়ি হুকুম বোঝার ক্ষেত্রে এর গুরুত্ব অপরিসীম। উসুলুল ফিকহের সাধারণ গ্রন্থাদিতে এর আলোচনা না থাকলেও ইমামগণ বিভিন্ন গ্রন্থে এ সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। যেমন ইমাম শাতেবি রহ. আল-মুওয়াফাকাত ফি উসুলিশ শারিয়াহ গ্রন্থে মাকাসিদুশ শারিয়াহ সম্পর্কে সুদীর্ঘ আলোচনা করেছেন।

 

উসুলুল ফিকহ জানার উপকারিতা হলো, মুজতাহিদ ব্যক্তি এর সাহায্যে উসুলি কায়দাগুলো প্রয়োগ করে শরিয়াহর বিস্তর দলিলাদি থেকে শরিয়াহর কর্মগত বিধিবিধান উদঘাটন করতে পারেন। কারণ, যার মধ্যে ইজতিহাদের যোগ্যতা রয়েছে, তিনি উসুলি কায়দার আলোকে  সাধারণ এবং সূক্ষ্ম নুসুস উপলব্ধি করতে পারেন, এর পাশাপাশি নবোদ্ভাবিত বিষয়গুলোর বিধান আহরণ করার জন্য কিয়াস ইসতিহসান ইসতিসলাহ ইসতিসহাব ইত্যাদি উৎসকে কাজে লাগাতে পারেন।

অপরদিকে যাদের মধ্যে ইজতিহাদের যোগ্যতা নেই, তারা ইলমুল উসুলের মাধ্যমে বিধান উদঘাটনের পন্থা, ইমামগণের মূলনীতি এবং ফতোয়ার আলোকে সাদৃশ্যপূর্ণ মাসায়িলের ক্ষেত্রে নিত্যনতুন মাসআলার সমাধান বের করে আনার পন্থা সম্পর্কে জানতে পারেন। পাশাপাশি বিভিন্ন ইজতিহাদি মাসায়িলে ফকিহগণের সিদ্ধান্ত এবং দলিলের মধ্যে পরস্পর তুলনা করা ও তার কোনোটিকে অগ্রগণ্য করা এবং দলিলের বিচারে সবচে শক্তিশালী মতের ওপর নির্ভর করার যোগ্যতা অর্জন করতে পারেন। সর্বোপরি উসুলুল ফিকহের মাধ্যমে ইমামগণের বক্তব্যের উৎস সম্পর্কে জানা যায়।

 

Share This