আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে সিজদা করা বৈধ নয়। ইবাদতের সিজদাও বৈধ নয়, সম্মান প্রদর্শনের সিজদাও বৈধ নয়। উভয় প্রকার সিজদাই নিষিদ্ধ। কিন্তু উভয়ের মধ্যে স্তরগত পার্থক্য তো অবশ্যই রয়েছে। যদিও জাহেরিরা এটা স্বীকার করতে চায় না।

ইবাদতের সিজদা কোনোকালেই বৈধ ছিল না। পক্ষান্তরে সম্মানের সিজদা পূর্ববর্তী কোনো কোনো শরিয়তে বৈধ ছিল। ইবাদতের সিজদা শিরক আর সম্মানের সিজদা হারাম ও কবিরা গুনাহ। এক শরিয়তে যা হালাল, অন্য শরিয়তে তা হারাম হতে পারে। এর অনেক দৃষ্টান্ত রয়েছে। কিন্তু যা কিছু কুফর ও শিরক, তা কোনোকালেই কোনো শরিয়তে বৈধ ছিল না।

তাওহিদের কালিমা হলো লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ। এ থেকে স্পষ্ট যে, আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউ ইলাহ হতে পারে না। ইলাহ মানে মাবুদ। সুতরাং মাবুদ একমাত্র আল্লাহই। এই কালিমা যে শুধু আমাদের কালিমা, তা নয়; বরং সকল আসমানি ধর্মের কালিমাই ছিল এটা। আল্লাহ ছাড়া যদি অন্য কেউ ইলাহ ও মাবুদের আসনে অধিষ্ঠিত হয় তাহলে তাকেই বলা হয় তাগুত। গাইরুল্লাহ তাগুত হতে পারে; কিন্তু কখনো ইলাহ ও মাবুদ হতে পারে না।

গাইরুল্লাহ মাবুদ হতে না পারলেও মাসজুদ কিন্তু বিভিন্ন সময়েই হয়েছে। মাসজুদ অর্থ এমন ব্যক্তি, যাকে সিজদা করা হয়েছে। আদম আ. মাসজুদ হয়েছেন। ইউসুফ আ.-ও মাসজুদ হয়েছেন। কিন্তু তারা মাবুদ হননি। তাদেরকে যে সিজদা করা হয়েছিল, তা ইবাদতের সিজদা ছিল না; বরং সম্মানের সিজদা ছিল। ফেরেশতাদের জন্য আদম আ.-কে এবং পিতামাতা ও ১১ ভাইয়ের জন্য ইউসুফ আ.-কে সিজদা করা তাদের শরিয়ত অনুসারে বৈধ ছিল। যদি এটা শিরক হতো তাহলে কোনোদিনও বৈধ হতো না।

যদি সকল সিজদাই ইবাদত হয়ে থাকে তাহলে তো আদম ও ইউসুফ আ.-কেও মাবুদ বলতে হবে। আর প্রকাশ থাকে যে, গাইরুল্লাহ মাবুদ হলে আর মাবুদ থাকে না; বরং তাগুত হয়ে যায়। আল্লাহর নবিদের তাগুত বলার দুঃসাহস আছে কার! নবিগণ ছিলেন তাওহিদের মূর্তপ্রতীক। তারা নিজেরা মাবুদ হবেন আর শক্তি-সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও চুপ থাকবেন, এটা তো কখনোই ভাবা যায় না। উপরন্তু আল্লাহ তাআলা মহান ফেরেশতাদেরকে গাইরুল্লাহর ইবাদত করতে বলবেন, এটাও তো কোনোদিন হতে পারে না।

তা ছাড়া কুরআনে সেসব সম্প্রদায়ের ব্যাপারেও এসেছে যে, তারা আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে মাবুদ হিসেবে গ্রহণ করেনি। ইউসুফ আ.-এর ঘটনার দিকে লক্ষ করলে দেখা যায়, তিনি আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও ইবাদত করা থেকে কীভাবে মানুষকে ফিরিয়েছেন। এমনকি জেলজীবনের সঙ্গীদেরও গাইরুল্লাহর ইবাদত করতে যুক্তি-প্রমাণসহকারে বারণ করেছেন। সেখানে কীভাবে ভাবা যায় যে, স্বয়ং তার ইবাদত করা হবে আর তিনি সেটাকে নীরবে, বরং সন্তুষ্টচিত্তে গ্রহণ করবেন! গাইরুল্লাহর ইবাদত না কোনোদিন বৈধ ছিল আর না তা বৈধ হওয়া কস্মিনকালেও সম্ভব।

রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, ‘আমি যদি কোনো মানুষকে অপর কাউকে সিজদা করার আদেশ করতাম তাহলে নারীদেরকে আদেশ করতাম, তারা যেন তাদের স্বামীদেরকে সিজদা করে…।’ এই হাদিস থেকে দুটো বিষয় প্রতীয়মান হয় : (১) সম্মানের সিজদাও আমাদের শরিয়তে বৈধ নয়; বরং তা নিষিদ্ধ ও অবৈধ। (২) সম্মানের সিজদা আর ইবাদতের সিজদার মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। কারণ, এটা কীভাবে ভাবা যায় যে, রাসুলুল্লাহ সা. গাইরুল্লাহর ইবাদত করা এবং আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে মাবুদ হিসেবে গ্রহণ করার অনুমতি দেওয়ার সম্ভাব্যতা প্রকাশ করবেন!

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, যে ইবাদত করে, তাকে আবিদ বলা হয়। যার ইবাদত করা হয়, তাকে মাবুদ বলা হয়। আর যে সিজদা করে, তাকে সাজিদ বলা হয়। যার সিজদা করা হয়, তাকে মাসজুদ বলা হয়।

Share This