জাতিসংঘ ঘোষিত বিশ্বের সবচেয়ে নির্যাতিত জাতি হলো রোহিঙ্গা জাতি। ১৯৮২ সালের মিয়ানমারের নাগরিকত্ব আইনে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব অস্বীকার করা হয়েছে। এ ছাড়াও রোহিঙ্গাদের আন্দোলনের স্বাধীনতা, রাষ্ট্রীয় শিক্ষা এবং সরকারি চাকরির অধিকার হরণ করা হয়েছে। রোহিঙ্গারা ১৯৭৮, ১৯৯১-১৯৯২, ২০১২, ২০১৫ ও ২০১৬-২০১৭ সালে সামরিক নির্যাতন এবং দমনের সম্মুখীন হয়েছে।
২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রাতে অপারেশন ক্লিয়ারেন্স নামে যে বর্বর হামলা চালানো হয়েছে রোহিঙ্গাদের ওপর, তা ছিল বিশ্বের ইতিহাসে জঘন্যতম হামলার নিকৃষ্ট উদাহরণ। শান্তিতে নোবেলধারী অং সান সুচি’র মিয়ানমার সরকারের নির্দেশে সে দেশের সেনাবাহিনী, বর্ডার গার্ড পুলিশ এবং নাইন সিক্স নাইন সংঘের উগ্র বৌদ্ধ যুবকরা রোহিঙ্গাদের ওপর ইতিহাসের এই জঘন্যতম হামলা চালিয়েছে। জাতিসংঘ ও হিউম্যান রাইটস্ ওয়াচ মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের ওপর চালানো দমন ও নির্যাতনকে জাতিগত নির্মূলতা হিসেবে আখ্যা দিয়েছে।
বর্তমানে বাংলাদেশে নিবন্ধিত রোহিঙ্গা শরণার্থীর সংখ্যা হলো ১১ লাখ ১৮ হাজার। সংখ্যাটা একেবারে কম নয়। অনিবন্ধিত বা বাংলাদেশ ছাড়া অন্যান্য দেশে আশ্রয় গ্রহণকারী রোহিঙ্গাদের হিসাব এ থেকে আলাদা। এই ১১ লাখ রোহিঙ্গাদের মধ্যে অধিকাংশই মুসলিম। অল্প কিছু হিন্দু ধর্মাবলম্বীও রয়েছে।
তবে বর্তমানে ফ্যাসিবাদীদের ছত্রছায়ায় পরিচালিত খ্রিষ্টান মিশনারি সংস্থাগুলোর অবাধ ‘দাওয়াহ’ ও ‘নুসরতে’ রোহিঙ্গাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ খ্রিষ্টানও রয়েছে; যারা রিফিউজি হয়েও জীবনের আকর্ষণীয় সব সুযোগ-সুবিধা উপভোগ করছে। মদ, নারী নিয়ে জীবনটাকে উপভোগ করছে। তাদেরকে ‘রেস্ট হাউজে’র সঙ্গে পরিচিত করা হয়েছে। তাদেরকে অন্য সবার থেকে আলাদা রাখা হচ্ছে। পার্থিব জীবনের ধোঁকায় পড়ে ধীরে ধীরে এই পরিমাণটা হয়তো বাড়তে থাকবে। আর মুসলিম দায়িদের ওপর প্রচণ্ড সীমাবদ্ধতা আরোপ করার কারণে তাদের মধ্যে ইসলামের আলোও হয়তো ক্রমশ ফিকে হয়ে আসবে।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য অনেকে অনেক ফর্মুলা উপস্থাপন করছেন। কিন্তু এক্ষেত্রে প্রায় সবগুলো ফর্মুলাই গভীর দৃষ্টিতে দেখলে নিতান্ত অসার হিসেবে ঠেকে। তুলনামূলক বিচারে সদ্য প্রয়াত সাবেক রাষ্ট্রপতি জেনারেল এরশাদের ফর্মুলাটা সুন্দর। তার ফর্মুলা ছিল : জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে মিয়ানমারের রাখাইনে শান্তিরক্ষী পাঠাতে হবে। আর রোহিঙ্গাদের নাগরিক অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে। কর্ম, শিক্ষা, চিকিৎসাসহ মৌলিক অধিকার দিতে হবে রোহিঙ্গাদের। বিচার করতে হবে মিয়ানমারে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর মানবতাবিরোধী অপরাধের। দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করতে হবে গণহত্যা, গণধর্ষণ আর অগ্নিসংযোগের বিচারে।
তবে এক্ষেত্রে লক্ষণীয়, কুফফার বিশ্ব, বিশেষ করে সাপের মাথা আমেরিকা কোনোদিনও মাজলুম মুসলমানের প্রতি আন্তরিক হবে না, এটাই স্বাভাবিক। তারা নিজেদের ইমেজ রক্ষার্থে ঠিক যতটুকু না করলেই নয়, ততটুকুর মধ্যেই নিজেদের সীমাবদ্ধ রাখবে। অপরদিকে মুসলিম বিশ্বের পুতুল শাসকরা কেবলই হম্বিতম্বির মধ্যে নিজেদের কার্যক্রম আবদ্ধ রাখবে। যার কারণে রোহিঙ্গাদের জন্য যদি বাস্তবেই শান্তির জীবন নিশ্চিত করার প্রয়াস থাকে, তাহলে রোহিঙ্গাদের দ্বারাই এ কাজটি করাতে হবে। তারা নিজেরাই নিজেদের হারানো অধিকার ফিরিয়ে আনবে। নিজেদের স্বাধীনতা ও স্বাতন্ত্র্য উদ্ধার করবে। ৭১ এ ভারত যেমন বাঙালি মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ ও অস্ত্র দিয়ে সহায়তা করেছিল, বাংলাদেশও যদি এভাবে রোহিঙ্গাদের প্রশিক্ষিত ও সশস্ত্র করে আরাকানে ফেরত পাঠাতে পারে, তাহলে রোহিঙ্গারা নিজেরাই পারবে নিজেদের ভবিষ্যৎ ঠিক করে নিতে। এই কাজটা যথাযথভাবে করতে পারলে বাংলাদেশকেও আর ১১ লাখ রোহিঙ্গার ভার বহন করতে করতে ক্লান্ত হতে হবে না। রোহিঙ্গারাও পাবে স্থায়ী সমাধান।
তবে এক্ষেত্রে সবচে বড় জটিলতা হলো, ক্ষমতাসীনরা কেউই আরাকানরাজ্যের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব চায় না। বরং সবাই চায়, রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের হা করে থাকা মুখের ভেতর ফিরিয়ে দিতে।