ঋণ তা-ই হয়, যা ঋণগ্রহীতার হাতে পৌঁছায়। উদাহরণস্বরূপ, আপনি কারও থেকে ৫০ হাজার টাকা ঋণ নিচ্ছেন। এই টাকাটা ঋণদাতা আপনার হাতে সরাসরি না দিয়ে ব্যাংকে পাঠাল। ব্যাংকে পাঠালে মূল টাকার সঙ্গে তাকে নির্ধারিত পরিমাণ অনলাইন চার্জ গুনতে হবে। ধরে নিলাম, তাকে অনলাইন চার্জ বাবদ আরও ৫০ টাকা অতিরিক্ত দিতে হলো। এখন পরিশোধের সময় আপনি তাকে কত পরিশোধ করবেন? ৫০, ০০০ নাকি ৫০, ০৫০? উত্তর হলো, আপনি তাকে ৫০, ০০০ পরিশোধ করবেন। কারণ, এখানে আপনার গৃহীত ঋণ তা-ই। হ্যাঁ, এই ৫০, ০০০ তাকে ফেরত পাঠাতে আপনিও যদি ব্যাংকিং সার্ভিস গ্রহণ করেন, তাহলে এক্ষেত্রে যে চার্জ আসবে, তা আপনাকেই বহন করতে হবে। ঋণদাতার প্রাপ্য থেকে বিয়োগ করার সুযোগ নেই।
অবশ্য কারও সঙ্গে যদি এভাবে কথা থাকে যে, আমি তোমার থেকে ৫০, ০০০ টাকা ঋণ নিচ্ছি। তবে এই টাকা আমার একাউন্টে পৌঁছানোর দায়িত্ব তোমাকে দিলাম। সুতরাং তুমি আমার প্রতিনিধি হিসেবে এই কাজটা করো। এতে খরচ যা হয়, তা আমিই বহন করব। তাহলে এক্ষেত্রে ঋণ পরিশোধের সময় ৫০, ০০০ টাকা দেওয়াই যথেষ্ট নয়; বরং তাকে অপরিহার্যভাবে ৫০, ০৫০ টাকা পরিশোধ করতে হবে।
এবার আসি বিকাশ প্রসঙ্গে। উদাহরণ হিসেবে পূর্বের মাসআলাটিকেই ধরা যায়। তবে এক্ষেত্রে তিন সুরত হবে :
(ক) ঋণদাতা ঋণগ্রহীতার পারসোনাল একাউন্টে ৫০, ০০০ টাকা সেন্ড মানি বা ক্যাশ ইন করেছে।
(খ) ঋণদাতা দোকানদারের এজেন্ট নম্বরে ঋণগ্রহীতার জন্য ৫০, ০০০ টাকা ক্যাশ আউট করেছে।
(গ) ঋণদাতা দোকানদারের পারসোনাল নম্বরে ঋণগ্রহীতার জন্য ৫০, ০০০ সেন্ড মানি করেছে।
উল্লেখ্য, এখানে টাকার পরিমাণ ও বিকাশ শব্দের ব্যবহার উভয়টিই উদাহরণ হিসেবে আনা হয়েছে। যার কারণে এই প্রশ্ন আসবে না যে, বিকাশের পারসোনাল নম্বরে একসঙ্গে তো এই পরিমাণ টাকা সেন্ড মানি করা যায় না।
উপরিউক্ত তিন সুরতের মধ্যে পার্থক্য হলো, প্রথম সুরতে ঋণগ্রহীতার একাউন্টে ৫০, ০০০ টাকাই এসে পৌঁছাবে। এবার এই টাকা সে যদি মোবাইল রিচার্জ বা অন্য কারও কাছে সেন্ড মানি করার কাজে লাগায়, তাহলে পুরো টাকাটাই সে ভোগ করতে পারবে। এমনকি বিশেষ কোনো অফারকে কাজে লাগিয়ে বিল পেমেন্ট করে সে ৫০ হাজারের দ্বারা ৫৫/৬০ হাজারের ফায়দাও লুফে নিতে পারে। তবে সে যদি এর দ্বারা বিল পেমেন্ট বা ক্যাশ আউট করতে চায়, তাহলে কিছু টাকা তাকে সার্ভিস চার্জ গুনতে হবে। এখন সে নিজের জন্য কোন অপশনটি বেছে নেবে, এটা একান্তই তার বিষয়। তবে এক্ষেত্রে সে পুরোপুরি ৫০ হাজার টাকা ঋণ হিসেবে বুঝে পেয়েছে বলেই ধর্তব্য হবে। আর এক্ষেত্রে বিকাশ এপ ব্যবহার করে সেন্ড মানি করে থাকলে ঋণদাতারও কোনো খরচ হওয়ার কথা নয়। তবে এপ ব্যবহার ছাড়া সাধারণ উপায়ে সেন্ড মানি করলে তার একেবারেই সামান্য চার্জ খরচ হয়েছে। উভয় অবস্থায় ঋণদাতা যথাসময়ে ঋণগ্রহীতার কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকাই ফেরত পাবে।
দ্বিতীয় সুরতেও ঋণগ্রহীতা ৫০ হাজার টাকা বুঝে পেয়েছে। তবে এক্ষেত্রে ঋণদাতার খরচ বেশ ভালোই পড়েছে। যদি সে এপ ব্যবহার করে ক্যাশ আউট করে থাকে তাহলে তার খরচ হয়েছে (১৫*৫০=৭৫০)। আর সাধারণ উপায়ে ক্যাশ আউট করলে খরচ হয়েছে (১৮.৫*৫০=৯২৫)। তবে তার খরচ যা-ই হোক না কেন, ঋণগ্রহীতা হাতে পেয়েছে ৫০ হাজার টাকা। সুতরাং তার ওপর যথাসময়ে ৫০ হাজার টাকা ফিরিয়ে দেওয়াই ওয়াজিব হবে। অবশ্য যদি আগে থেকে এই সার্ভিস চার্জ ঋণগ্রহীতা নিজে বহন করার কথা হয়ে থাকে, তাহলে ধরা হবে সে সর্বমোট ৫০ হাজার ৭৫০/৯২৫ টাকা ঋণ নিয়েছে। সুতরাং তাকে তা-ই ফিরিয়ে দিতে হবে।
তৃতীয় সুরতে ঋণদাতা ৫০, ০০০ টাকা পাঠালেও ঋণগ্রহীতা হাতে পাবে ৪৯, ০৭৫ টাকা। কারণ, দোকানদার ক্যাশ আউট করার জন্য প্রতি হাজারে ১৮.৫০ টাকা করে কেটে রাখবে। কোনো কোনো দোকানদার প্রতি হাজারে ২০ টাকা করে কেটে রাখে। এ সুরতে ঋণগ্রহীতা ব্যক্তির ঋণ তা-ই হবে, যা সে হাতে পেয়েছে। সুতরাং ঋণদাতা ৫০ হাজার টাকা পাঠালেও ঋণগ্রহীতা যা হাতে পেয়েছে, সেটা পরিশোধ করার দায়ই তার কাঁধে বর্তাবে।
এবার ঋণগ্রহীতা যখন ঋণদাতার কাছে সেই টাকা ফেরত পাঠাবে, তখন মাসআলা কী হবে?
যদি সে সরাসরি ঋণদাতার হাতে টাকা তুলে দেয়, তাহলে যেই পরিমাণ অর্থ ঋণ হিসেবে তার ওপর অবধারিত হয়েছিল, তা পৌঁছে দেওয়ার দ্বারাই সে দায়মুক্ত হবে।
আর যদি সে ব্যাংক বা কুরিয়ারের মাধ্যমে তা পাঠাতে চায়, তাহলে স্বাভাবিকভাবে এর সার্ভিস চার্জ তাকেই বহন করতে হবে।
এবার কথা হলো, যদি সে বিকাশেই এই টাকা রিটার্ন করে, তাহলে কী হবে?
এক্ষেত্রে সে যদি এজেন্ট নম্বরে ক্যাশ আউট করে, তাহলে পুরো টাকাটাই তাকে ক্যাশ আউট করতে হবে। আর এর চার্জ বাবদ তার একাউন্ট থেকে অতিরিক্ত যে টাকা কেটে নেওয়া হবে, সেটা তার জিম্মা থেকেই যাবে। এই টাকার দায় ঋণদাতার ওপর চাপানো যাবে না। অবশ্য সে যদি টাকা সরাসরি পৌঁছে দিতে চায় আর ঋণদাতাই তাকে বিকাশ ব্যবহার করতে আদেশ করে এবং সে নিজেই এর খরচ বহন করবে বলে কথা দিয়ে থাকে, তাহলে এই পরিমাণ টাকা ঋণের অর্থ থেকে বিয়োগ করার সুযোগ রয়েছে। একইভাবে সে যদি এজেন্টের পারসোনাল একাউন্টে সেন্ড মানি করে, তাহলে তাকে মূল টাকার সাথে সার্ভিস চার্জও যোগ করে দিতে হবে।
আর যদি সে ঋণদাতার পারসোনাল একাউন্টে ঋণের অর্থ সেন্ড মানি বা ক্যাশ ইন করে, তাহলে সে যত টাকা ঋণ নিয়েছিল, ঠিক তত টাকাই ফেরত পাঠাতে বাধ্য। অতিরিক্ত টাকা পাঠানোর কোনো বাধ্যবাধকতা তার ওপর নেই। কারণ, এখানে তার ঋণ যা ছিল, সে তা-ই ফেরত পাঠিয়েছে। ঋণ তা-ই, যা তার করায়ত্তে এসেছিল। আর পরিশোধও তা-ই, যা ঋণদাতার করায়ত্তে এসেছে। এখন ঋণদাতা এই টাকা মোবাইল রিচার্জ করলে বা অন্য কাউকে সেন্ড মানি করলে পুরো টাকাই ভোগ করতে পারবে। এমনকি বিশেষ কোনো অফারকে কাজে লাগিয়ে বিল পেমেন্ট করে সে ৫০ হাজারের দ্বারা ৫৫/৬০ হাজারের ফায়দাও লুফে নিতে পারে। আর ক্যাশ আউট করতে হলে এর জন্য আলাদা সার্ভিস চার্জ দিতে হবে। এবার সে নিজের জন্য কোন অপশন বেছে নবে, এটা তার ব্যাপার। এর দায়ও একান্ত তার। তবে ঋণগ্রহীতা যদি স্বতঃস্ফূর্তভাবে ক্যাশ আউট করার চার্জও মূল টাকার সঙ্গে পাঠিয়ে দেয়, যদিও ক্যাশ আউটের চার্জের পরিমাণেও বিকাশ এপ ও সাধারণ উপায়ের মধ্যে পার্থক্য থাকে, তবে ঋণদাতার জন্য তা থেকে উপকৃত হওয়া জায়িয হবে। অবশ্য তার জন্য এই টাকা গ্রহণ না করাই উত্তম হবে।
هذا ما عندي، والله أعلم بالصواب، وإليه المرجع والمآب.
মুহতারাম, ৩য় সুরতে ৪১,০৭৫ টাকা নয়, ৪৯,০৭৫ টাকা পাবে ঋণগ্রহীতা। এত টাকা পাঠাতে চার্জ ৯০২৫/১০০০০ টাকা লাগছে না, লাগছে ৯২৫/১০০০ টাকা। আসলে এই সামান্য বিষয়টায় ভুল ধরার কোনো দরকারই ছিলো না। কিন্তু অনেকে চার্জের পরিমাণ দেখে আঁতকে উঠতে পারে।
দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য শুকরিয়া। তবে এখানে ১ আর ৯ এর পার্থক্য দেখে যেটা মনে হচ্ছে, সম্ভবত এটা টাইপিং মিসটেক ছিল। অন্যথায় ক্যালকুলেটর সামনে রেখে এমন ভুল হওয়ার কথা নয়।