২০০৯/১০-এর কথা। তখন আমার মাদরাসায় খেদমতের বয়স ছিল মাত্র দুবছর। খেদমতের শুরুতে বেতন সেই যে সাড়ে চার হাজার টাকা নির্ধারিত হয়েছিল, তখন পর্যন্ত তা-ই চলছিল। বিয়ের মাত্র কয়েকমাস পর মাদরাসার কাছে বাসা নিলাম। বাসার ভাড়াই ছিল ৫৩০০ টাকা। অর্থাৎ আমার বেতনের থেকে আরও আট শ টাকা বেশি। যেহেতু খেদমতের জীবনে পা রেখেছি, তাই বাসা থেকে টাকা আনারও সুযোগ ছিল না। একে তো আব্বার কাছে চাইতে সংকোচও লাগত, আবার তার কাছে চাইলে তিনি এটাকে খুব খারাপ নজরে দেখতেন, দু-চার কথা শুনিয়েও দিতেন। যদিও তার যথেষ্ট পরিমাণ টাকাপয়সা ছিল; কিন্তু ছেলে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরও পিতানির্ভর হয়ে থাকাকে তিনি ইতিবাচকভাবে দেখতেন না। তাছাড়া আমার সংসারের অর্থনৈতিক অবস্থা সম্পর্কেও তিনি বিস্তারিতভাবে জানতেন না। আব্বা যে কয়বার বাসায় এসেছেন, তখন আলহামদুলিল্লাহ তাকে আমাদের অভাবের বিষয়টি খুব একটা বুঝতে দিইনি।
সাড়ে চার হাজার টাকা বেতন পেয়ে ৫৩০০ টাকা বাসা ভাড়া জোগাড় করতেই তো হিমশিম খেতে হতো। বাসায় রান্নাবান্নার জন্য যে বাজারঘাট করব, সে সামর্থ্য হওয়ার তো প্রশ্নই আসে না। মাদরাসায় আমার জন্য যে খাবার বরাদ্দ ছিল, দুজন মিলে সেই খাবারকেই ভাগজোগ করে খেয়ে দিনাতিপাত করেছি। এমনকি সকালবেলায়ও বাসা থেকে মাদরাসায় তো ফজরের পরেই চলে আসতাম। এরপর যখন নাস্তা দিত তখন সেই নাস্তা সাথে নিয়ে দরসের ফাঁকে কষ্ট করে দুমাইল পথ মাড়িয়ে বাসায় যেতাম, এরপর একসাথে বসে দুজন মিলে ভাগবণ্টন করে খেয়ে নিতাম। তারপর আবার মাদরাসায় ফিরে দরস করাতাম। এতটুকু সামর্থ্য ছিল না, যা দিয়ে অন্তত একবেলার খাবার রান্না করার মতো বাজার করতে পারি।
আমার শ্বশুর এমনি বেশ বিত্তশালী মানুষ। তদুপরি আমার স্ত্রী হলো তার একমাত্র মেয়ে। সে হিসেবে বাবার বাড়িতে তাকে কখনো কষ্টের মুখ দেখতে হয়নি। আর্থিক কষ্ট কী জিনিস, তার সঙ্গে সে ছিল একেবারেই অপরিচিত। এমন একটা মেয়ে সেই সচ্ছল পরিবার থেকে এসে এমন কষ্টের মধ্যেও অম্লানবদনে দিনাতিপাত করবে, বিষয়টা ভাবতেও অবাক লাগে। সে যদি বাস্তবিক অর্থেই সবরকারী না হতো তাহলে কখনোই হাসিমুখে এত সব কষ্টকে মেনে নিতে পারত না। স্বামী মাদরাসার প্রচুর ব্যস্ততার কারণে দিনের বড় অংশজুড়ে সময়ই দিতে পারে না, মাসে একদিনের জন্যও ঘরে রান্না করার মতো বাজার করে আনতে পারে না, মাদরাসার বোর্ডিংয়ের খাবারেরও যে অবস্থা, কোনো বেলায় খাওয়া যায় আবার কোনো বেলায় খাওয়াই দায় হয়ে যায়—এত কিছুর পরও সে যে আমাকে ছেড়ে যায়নি বা এখনো সেই অবস্থা স্মরণ করে আমাকে একবারও খোটা দিচ্ছে না, এ কথা স্মরণ হলেও তো তার প্রতি কৃতজ্ঞতাবোধে অন্তরটা পূর্ণ হয়ে যায়।
এভাবেই দিন চলছিল। বিয়ের বয়স যখন ছয়/সাত মাস হলো তখন স্ত্রীর পেটে সন্তান আসল। মেয়েদের এ সময়টা থাকে বেশ সেনসিটিভ। এ সময়ে তাদের খুব যত্ন নিতে হয়, ভালো ভালো খাবার খাওয়াতে হয়। এমনিও এ সময়টাতে মেয়েদের অনেক কিছু খেতে ইচ্ছে হয়। কখন যে কী ইচ্ছে হবে, তা আগে থেকে ঠাহরও করা যায় না। তথাপি যা ইচ্ছে হয়, তা খেতে না পারলে মানসিকভাবে তারা খুব ভেঙে পড়ে। সবমিলিয়ে বেশ দুশ্চিন্তার মধ্যে পড়ে গিয়েছিলাম। কীভাবে কী হবে, বুঝেই উঠতে পারছিলাম না। মাদরাসায় তখন সপ্তাহে চার/পাঁচ দিনই সকালবেলার নাস্তা হিসেবে খিচুড়ি দিত। এই খিচুড়ি টেনে বাসায় তো নিয়ে যেতাম। কিন্তু বেশিরভাগ দিনই এমন হতো, সে অন্যান্য বেলায় যা একটু খেতে পারত, সকালবেলায় তা-ও পারত না। কষ্ট করে দুলুকমা খিচুড়ি মুখে দিলেই দেখা যেত, বমি করে সব ফেলে দিচ্ছে। একে তো অসুস্থ, এর ওপর আবার বমির প্রভাবে শরীর একেবারেই দুর্বল হয়ে যেত। তখন খুব খারাপ লাগত। সে মুহূর্তে যে ফলফলাদি বা অন্য কিছু কিনে এনে তাকে খাওয়াব, সে সামর্থ্য তো আমার ছিল না। ইচ্ছে তো হতো অনেক কিছুই; কিন্তু সামর্থ্যের দিকে তাকিয়ে করোটির ভেতর চুপসে যেতাম, বেদনার্ত হৃদয় নিয়ে তাকে একা রেখে বাসা থেকে মাদরাসায় চলে আসতাম।
এরপর যখন সন্তান প্রসবের সময় ঘনিয়ে আসল তখন আমার পেরেশানি যেন আরও বেড়ে চলছে। দুজন না হয় কিছু একটা খেয়ে কোনোরকম জীবনধারণ করছি; কিন্তু সন্তানকে তো আর এভাবে রাখা যাবে না। আমার স্ত্রীর সামনেও তো এসকল অবস্থা স্পষ্ট ছিল। এরপরও আলহামদুলিল্লাহ সে ভেঙে পড়েনি বা একবারের জন্যও আমাকে ছেড়ে চলে যাওয়ার কথা ভাবেনি। আমার শ্বশুরের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। তিনি আর্থিকভাবে বেশ সচ্ছল ছিলেন। মেয়ের দৈনন্দিন অবস্থাও নিশ্চয়ই তার অজানা ছিল না। এরপরও তিনি তাকে নিয়ে যাওয়ার কথা না ভেবে উল্টো বরং তাকে সান্ত্বনা দিয়েছেন, তার ভেতরে শক্তি জুগিয়েছেন। এক্ষেত্রে আমার শাশুড়ির অবদান সবচে বেশি। তিনি তাকে নিজের জীবনের গল্প শোনাতেন। এরপর বাস্তব অভিজ্ঞতার আলোকে সবর করার উপদেশ দিতেন।
আমার নানা শ্বশুরের পরিবার দীনদার ছিল না। শাশুড়ির বড় দুবোনেরও বিয়ে হয়েছিল জেনারেল ছেলেদের সঙ্গেই। কিন্তু আমার শাশুড়ির ছোটকাল থেকে স্বপ্ন ছিল, তিনি কোনো আলিমের সঙ্গে বৈবাহিক বন্ধনে আবদ্ধ হবেন। যেই ভাবা, সেই কাজ। একাধিকবার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠিত জেনারেল পরিবার থেকে তার বিয়ের প্রস্তাব এসেছে, এমনকি দুয়েকবার বিয়ের দিনতারিখও ঠিক হয়েছে; কিন্তু তিনি সবগুলোকে নাকচ করে দিয়েছেন। এমনকি একবার বিয়ের মজলিসে স্পষ্ট অস্বীকৃতি জানিয়ে বিয়ে ভেঙে দিয়েছেন। শেষাবধি আমার শ্বশুরকে সম্পূর্ণ তার নিজের আগ্রহে বিয়ে করেছেন। এই বিয়েতে তার বাবা-মা’র আন্তরিক সম্মতি ছিল না। মেয়ের পীড়াপীড়িতে একপ্রকার বাধ্য হয়েই তারা আমার শ্বশুরের সঙ্গে তাকে বিয়ে দিয়েছেন।
আমার শ্বশুররা ছিলেন নয় ভাই। বয়সে তিনি ছিলেন বড়। সে সময়ে তার আর্থিক অবস্থা ছিল মারাত্মক দুর্বল। মাদরাসার আশেপাশে কোনো বাসা ভাড়া নিয়ে থাকবেন, এই সামর্থ্য তার ছিল না। যার ফলে শাশুড়ি তার পৈতৃক ভিটাবাড়িতেই উঠেছিলেন। পুত্রবধূকে পেয়ে অন্যান্যদের মতো আমার দাদিশাশুড়িও হাত-পা মেলে বসেছিলেন। পরিবারের সব কাজ করা থেকে শুরু করে সাত-সাতটা ছেলেকে পেলেপুষে মানুষ করার কাজ বলতে গেলে আমার শাশুড়ি একা সামলিয়েছেন। আমার শ্বশুর সারা সপ্তাহ তো মাদরাসায়ই থাকতেন। বৃহস্পতিবার দরস শেষ করে বাড়িতে যেতেন। এখন তিনি বেশ শান্ত স্বভাবের মানুষ হলেও সে সময়ে তার মেজাজ ছিল খুব খিটখিটে। বাড়িতে এসে স্ত্রীর কাজকর্মে একটু এদিক-সেদিক দেখলেই চটে যেতেন। সাধারণ সাধারণ বিষয় নিয়ে তার ওপর মারাত্মক চড়াও হতেন, কখনো-বা গায়েও হাত তুলতেন। আমার শাশুড়ি মুখ চেপে সব সয়ে যেতেন। বাবার বাড়িতে যে কিছু জানাবেন, সে সুযোগও ছিল না। স্বামীর সঙ্গে যে মন খুলে সারা সপ্তাহের হাসি-কান্নার কথা শেয়ার করবেন, সে কপালও তার হয়নি। এভাবেই চলছিল দিন।
সবরের ফল কী পাওয়া যায়, তার চাক্ষুষ সাক্ষী আমার শাশুড়ি। একসময় এত কষ্ট করে আসা মানুষটি এখন বোনদের মধ্যে সবচে ভালো আছে। অথচ তার অন্য বোনদের বিয়ে হয়েছিল একেকজন প্রতিষ্ঠিত সম্পদশালী জমিদার ছেলের সাথে। বান্দা সবর করলে আল্লাহ যে তাকে ব্যর্থ মনোরথে ফেরান না—এসব গল্প শুনিয়ে আমার শাশুড়ি তার মেয়ের মনোবল দৃঢ় করতেন।
অবশেষে যখন সন্তান প্রসবের সময় নিকটবর্তী হলো তখন আমি মারাত্মক অস্থিরতায় ভুগছি, ভগ্নহৃদয় নিয়ে আল্লাহর কাছে রোনাজারি করছি। দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমার প্রথম সন্তান স্বাভাবিক পন্থায় না হয়ে তার ক্ষেত্রে সিজারের আশ্রয় নিতে হলো। সিজার করতে যে বিরাট অ্যামাউন্টের দরকার, সে অ্যামাউন্ট তো আমার ছিল না। বাধ্য হয়ে ঋণ করে সিজার সম্পন্ন করলাম। আমার মেয়ে পৃথিবীর মুখ দেখল। শিশুর মিষ্টি কান্না আর মায়ের মুখের হাসি দেখে আমার অন্তরটাও জুড়িয়ে গেল।
মেয়ে হওয়ার পর বাসাটা ছেড়ে দিলাম। বাসায় মালসামানা বলতে তেমন কিছু ছিল না। কাপড়চোপড় যা ছিল, তা তো সাথে করে নিয়েই গেল। আর খাটটা আমি মাদরাসায় এনে রাখলাম। এরপর দীর্ঘ সাতমাস সে তার বাবার বাড়িতেই ছিল।
মেয়ে আসার পর আমার উস্তাদদের সুসংবাদটা অবগত করলাম। আমার সম্মানিত উস্তাদ মেয়ে হওয়ার সংবাদ শুনে বললেন, ‘মা শা আল্লাহ, প্রথমে মেয়ে হওয়া বরকতের কারণ। আল্লাহ তাআলা ইন শা আল্লাহ তোমাদের সংসারে বরকত ঢেলে দেবেন।’ তখন এ কথাটা শুধু শুনেই গেছি; এর হাকিকত উপলব্ধি করিনি। সাধারণভাবে করার কথাও নয়। তবে কুদরতের ফায়সালা বোঝা তো দায়।
মেয়ে দুনিয়াতে আসার কিছুদিন পরই আল্লাহর অনুগ্রহে আমি খতিবের চাকরিটা পেয়ে গেলাম। তা-ও পেয়েছি বিস্ময়করভাবে। ইন্টারভিউয়ের সংবাদ শুনে সময়মতো সেখানে উপস্থিত হলাম। তারা প্রত্যেক আবেদনকারীকে একেক সপ্তাহে জুমার নামাজ পড়াতে দিলেন। এভাবে অনেকেই জুমার নামাজ পড়ালেন। সেখান থেকে তারা এগারোজনকে চূড়ান্ত পর্যায়ের জন্য বাছাই করল। এরপর একদিন ইন্টারভিউ কল করা হলো।
যথাসময়ে সেখানে গিয়ে দেখি, সেই এগারোজনের মধ্যে রয়েছেন দেশের বিশিষ্ট ক’জন ব্যক্তি। যেমন : বসুন্ধরা মাদরাসার ফতোয়া বিভাগের প্রধান মুফতি এনামুল হক সাহেব। রয়েছেন হাজারীবাগের প্রসিদ্ধ এক বক্তা। এছাড়া আরও যারা রয়েছে, তাদের সামাজিক অবস্থানও শক্তিশালী। এসব দেখে মন অনেকটা দুর্বল হয়ে গিয়েছিল। এরপরও আল্লাহর ওপর ভরসা করে ইন্টারভিউতে অংশগ্রহণ করলাম। কিন্তু ইন্টারভিউ শেষ করার পর সেখানে আর অপেক্ষা করতে মন চাচ্ছিল না। তাই আর দেরি না করে ফেরার পথ ধরলাম। মসজিদ থেকে বেরিয়ে গাড়িতে উঠব, তার আগে হঠাৎ মনে আসল, অনেকদিন হলো গালিব ভাইয়ের মাকতাবায় যাওয়া হয় না। আজ যখন এদিকটায় আসা হয়েছে, মাকতাবাটা না হয় একটু ঘুরেই যাই। ভাবনা অনুসারে গালিব ভাইয়ের মাকতাবায় গেলাম। তার সঙ্গে কুশল বিনিময় করে মাকতাবার বুকশেলফে সাজানো বইগুলো নেড়েচেড়ে দেখছিলাম। হঠাৎ অচেনা নম্বর থেকে ফোন এল। রিসিভ করলাম। ওপাশ থেকে সালাম ভেসে আসল। ‘আপনি কি অমুক বলছেন?’ ‘জি।’ ‘আচ্ছা, আপনি কি চলে গিয়েছেন?’ ‘জি, আমি তো কিছুক্ষণ আগে চলে এসেছি।’ ‘ও আচ্ছা, মুতাওয়াল্লি সাহেব বলছিলেন, আপনি যদি ধারেকাছে থাকেন তাহলে কষ্ট করে যেন একটু মসজিদে এসে উনার সঙ্গে দেখা করেন।’ প্রথমে ভাবছিলাম, যাব না। এরপর ভাবলাম, ধারেকাছেই যখন আছি, তাহলে একটু গিয়ে দেখা করেই আসি, কেন এ সময়ে হঠাৎ আমাকে স্মরণ করলেন।
মসজিদে গিয়ে তাকে পেলাম তিন তলায়। সালাম দেওয়ার পর তিনি সরাসরি জিজ্ঞেস করলেন, ‘মাওলানা সাহেব, আপনাকে আমরা প্রতি মাসে চার হাজার টাকা করে বেতন দেবো। আর ইউ অ্যাগ্রি?’ অকস্মাৎ এমন প্রস্তাব শুনে আমি যেন আকাশ থেকে পড়লাম। তাছাড়া সে সময়ে আমার জন্য চার হাজার টাকাই তো অনেক। আমি তাঁর প্রস্তাবে আন্তরিক খুশির সঙ্গে সম্মতি প্রকাশ করলাম। সেই সময়টাতে আমার হৃদয়ের মানসপটে শ্রদ্ধেয় উস্তাদের কথা বারবার ভেসে উঠছিল। আমার তখন নিশ্চিতভাবে মনে হচ্ছিল, এই যে চার হাজার টাকা, তা আমার মেয়ের রিজিক। সে এই রিজিক নিয়েই পৃথিবীতে এসেছে। আল্লাহ আমার জন্য বরকতের দুয়ার উন্মুক্ত করেছেন।
এভাবে দিন যাচ্ছিল। বাবুর বয়স যখন সাত মাস তখন পুনরায় বাসা নিলাম। বছর ঘুরতে না ঘুরতে মসজিদের বেতন বেড়ে গেল। মাদরাসার বেতনও হুড়হুড় করে বাড়ছিল। তিন বছরের মাথায় মাদরাসার বেতন সাড়ে চার হাজার থেকে বেড়ে হলো বারো হাজার, আর মসজিদের বেতন চার হাজার থেকে বেড়ে হয়ে গেল দশ হাজার। যা সেই মাদরাসা এবং মসজিদ উভয়টির ইতিহাসে ছিল বিরল একটি ঘটনা। আলহামদুলিল্লাহ, মেয়েটা দুনিয়াতে আসার পর শুধু নেয়ামত বেড়েই যাচ্ছিল। এমনভাবে রিজিকে প্রবৃদ্ধি ঘটছিল, যা কখনো কল্পনাও করিনি।
এরপর তো এই মসজিদের খেদমতটা পেয়ে গেলাম। এখানে যখন পেশ ইমাম হিসেবে দায়িত্ব নিই তখন আমার বেতন ধরা হয় ২৭ হাজার টাকা। তিন বছরের মাথায় সেই বেতন এসে এখন হয়েছে ৩৫ হাজার টাকা। মাঝে মাদরাসা নিয়ে একটু পেরেশানি গেলেও এখন অনাবাসিক উস্তাদ হিসেবে বেশ ভালোই আছি। নিয়মিত দরস করাচ্ছি। মাদরাসার অভ্যন্তরীণ কোনো ঝামেলাও আমাকে স্পর্শ করছে না। সেখান থেকে মোটামুটি ভালো একটা অ্যামাউন্ট আসছে। আল্লাহ তাআলা এখন আর বাহ্যিক কোনো অভাব আমাদের সংসারে রাখেননি। নিজের পরিবারের দেখভাল করা, বাবা-মা’রও আর্থিক খেদমত করা—সবকিছুই আল্লাহ বেশ ভালোভাবে চালিয়ে নিচ্ছেন। মেয়ের বয়স এখন প্রায় সাত বছর। ছেলেটার বয়সও হয়েছে আঠারো মাস। নুরুল আনওয়ারের সেই কবিতাটাই ইদানীং বারবার স্মরণ আসছে—
إذا اشتدت بك البلوى ففكر في “ألم نشرح “
فعسر بين يسرين إذا فكرته فافرح.
আমার সবচে প্রিয় উস্তাদের জীবন থেকে পাওয়া শিক্ষণীয় একটি অধ্যায়।
মুহতারাম! লেখাটি পড়ে শংকা যেমন জেগেছে, উদ্দীপনাও পেয়েছি! আলহামদুলিল্লাহ।