কোনো হারবি কাফির মারা গেলে কি মুসলমানের দুঃখ হয়? কলজে পুড়ে যায়? হারবি কাফির শব্দ বললাম, কারণ জিম্মি বা আহদি কাফির বর্তমান পৃথিবীতে কোথায়ই বা আছে! মুসলিম মারা গেলে আমরা দুঃখিত হই। মুসলিম নিহত হলে আমরা প্রতিবাদ করি। এর অর্থ কি এটা যে, অমুসলিম মারা গেলে বা নিহত হলে আমাদের দুঃখিত হতে হবে? প্রতিবাদ করতে হবে? আমাদের উদারতার মাপকাঠিও তো ইসলাম; ইসলামশূন্য মানবতা নয়।

দেশদ্রোহী মারা গেলে যেমন সবাই খুশি হয়, খোদাদ্রোহী মালউনরা মারা গেলেও সাধারণভাবে মুসলিমরা খুশি হয়। একান্ত খুশি না হলেও শোকাহত হওয়ার প্রশ্নই তো আসে না। মুসলিম মানেই সাম্প্রদায়িক। অসাম্প্রদায়িক হওয়ার সুযোগই বা কোথায়!

কুকুর-বেড়াল মারা গেলে দুঃখ হতে পারে। কারণ, তারা তাওহিদবাদী, আমাদের উপকারকারী। কিন্তু খোদাদ্রোহী মারা গেলে দুঃখিত হওয়া তো অনেকটা নিজে রাজাকার হওয়ার প্রমাণ।

একটা হলো ক্রিয়া, আরেকটা হলো প্রতিক্রিয়া। বাস্তবে যদি মুসলিমরা অমুসলিমদের ওপর দুর্ঘটনা ঘটিয়ে থাকে তবে এটা ক্রিয়া নয়; বরং প্রতিক্রিয়া। দেশে দেশে মুসলিম নিধন বন্ধ করলে, মুসলিমদেরকে আলাদা দারুল ইসলাম প্রতিষ্ঠা করে দিলে এসব দুর্ঘটনা দেখতে হবে না।

মুসলিম হয়ে জন্মানোই তাগুতের দৃষ্টিতে অপরাধ। আজ হোক আর কাল, মার তো খেতে হবেই। অযথা ইনিয়েবিনিয়ে গোলামি প্রকাশ করা আর ইসলামি ভাবাদর্শকে জলাঞ্জলি দিয়ে পাশ্চাত্যের সুরে কথা বলার কী প্রয়োজন!

খোদাদ্রোহীদের জন্য আমাদের কোনো দরদ নেই। কোনো মায়া নেই। হ্যাঁ, তাদের প্রতি এতটুকু দরদ আছে যে, আমরা তাদের জন্যও ইসলাম পছন্দ করি, ইসলাম কামনা করি। যেন ওপারে তারা সুখি থাকে। এপারেও সম্মানিত জীবন যাপন করে। এ ছাড়াও জিম্মি ও আহদিদের জন্য আমাদের দায় ও কর্তব্য আছে। কিন্তু হারবিদের জন্য তা-ও নেই।

দারুল ইসলাম ও দারুল কুফরের বাইরে গিয়ে দরবারি মোল্লারা যেমন ক্লীব রাষ্ট্র দারুল আবালের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছে, একইভাবে কেউ যদি হারবি ও চুক্তিবদ্ধ কাফিরের বাইরে গিয়ে কুফফারের নতুন প্রকার আবিষ্কার করে, তবুও আমরা আমাদের অবস্থানেই অটল থাকব আর স্বার্থান্বেষী মোল্লাদের অসার আবিষ্কারকে তাদের মুখে ছুড়ে মারব। কথাগুলো অনেকেরই ভালো লাগবে না। পছন্দ হবে না। কী আর করা! শুরু হোক তাহলে চৌদ্দগোষ্ঠী উদ্ধার করা!

…….. ……… ……… ………

আপনি কেন কাফিরদের মৃত্যুতে ইয়া বড় বড় শোকবার্তা প্রকাশ করেন না? আমাদেরকে দেখুন, আমরা মুসলমানদের রক্তের বন্যা দেখে নীরব থাকলেও কাফিরদের প্রসঙ্গ আসলেই কত বেশি উদার সেজে বসি। আমরা মিডিয়ার সঙ্গে বাঁচি, মিডিয়ার সঙ্গে নাচি। মিডিয়া যেখানে অশ্রু বিসর্জনের সবক দেয়, সেখানে বিনা বাক্যব্যয়ে অশ্রুর বন্যা ভাসিয়ে দিই। এমনকি মুসলমানদের প্রসঙ্গ ধরা হলেও সিরিয়ান মুসলিমদের চাইতে বরাবরই পশ্চিমা দেশের মুসলিমদের প্রতি আমাদের সিম্পেথি অনেক বেশিই কাজ করে। আপনি আমাদের মতো হতে পারেন না? ‘নিরপরাধ কাফিরের’ মৃত্যুতে শোক প্রকাশ না করা, বরং স্বস্তি প্রকাশ করা তো চরম উগ্র মতবাদ? এগুলোর কারণে ইসলামের বদনাম হয়। দেখেন না, কত মৌলবি আপনার বিরুদ্ধে একসঙ্গে আওয়াজ উচ্চকিত করেছে এবং আপনাকে বিভিন্ন ধরনের হুমকি-ধমকি দিয়ে যাচ্ছে?

সবই বুঝলাম। বাট সমস্যা তো অন্য জায়গায়। আমি আগে আলোচনা করেছি, চুক্তিবদ্ধ কাফিরদের ব্যাপারে আমাদের অনেক দায় ও কর্তব্য রয়েছে। কিন্তু হারবি কাফিরদের ব্যাপারে আমাদের কোনো দায় ও কর্তব্য নেই। প্রতিটা হারবি কাফির শুধু আল্লাহ ও তাঁর রাসুলেরই দুশমন নয়, বরং আমাদেরও দুশমন ও শত্রু; চাই তারা কার্যত যুদ্ধে লিপ্ত থাক বা না থাক। এর অর্থ এ নয় যে, আমরা অযথাই তাদের ওপর আক্রমণ করাকে সমর্থন করি; বিশেষত যদি তার মধ্যে ইসলামের সার্বিক কোনো কল্যাণ না থাকে, উল্টো বরং তার দ্বারা মুসলিমরা ক্ষতিগ্রস্ততায় নিপতিত হয়।

আপনি যে ‘নিরপরাধ কাফির’ শব্দ ব্যবহার করলেন, এই শব্দের তাৎপর্যই তো আমার বোধে ধরে না। ‘নিরপরাধ বিদ্রোহী’, ‘নিরপরাধ রাজাকার’, ‘নিরপরাধ ধর্ষক’, ‘নিরপরাধ খুনি/চোর/ডাকাত/সন্ত্রাসী’ শব্দগুলো কি যথার্থ? যদি এগুলো যথার্থ না হয় তাহলে ওটাই বা যথার্থ হবে কীভাবে? তার মানে আপনার চোখে বিদ্রোহ, রাজাকারমূলক কর্মকাণ্ড, ধর্ষণ, মদপান, খুন, চুরি, ডাকাতি, সন্ত্রাস ইত্যাদি অপরাধ হলেও কুফর কোনো অপরাধ নয়? অথচ উল্লেখিত অপরাধগুলো ছিল কবিরা গুনাহ, যা ক্ষমার যোগ্য। কিন্তু কুফর তো এমন ধ্বংসাত্মক গুনাহ, যা ক্ষমারই অযোগ্য। আমাদের পূর্বসুরি ইমামগণ তো বিদআতি, বাতিল ও পাপাচারী লোকদের মৃত্যুতেই স্বস্তি লাভ করতেন; এমনকি খুশি পর্যন্ত প্রকাশ করতেন। যার ভুরি ভুরি দৃষ্টান্ত ইতিহাসের গ্রন্থাদিতে উল্লেখ হয়েছে। সেখানে কাফির তো আরও জঘন্য।

ইমাম নাসায়ি রহ. তার ‘সুনান’ গ্রন্থে একটি অধ্যায় রচনা করেছেন। যার শিরোনাম দিয়েছেন—
الاستراحة من الكفار
অর্থাৎ কাফিরদের (মৃত্যুতে) স্বস্তি লাভ করা।

সেখানে তিনি একটি হাদিস বর্ণনা করেছেন, যে হাদিসটি ‘সহিহ মুসলিম’, ‘সহিহ ইবনু হিব্বান’, ‘শুআবুল ইমান’-সহ অনেক গ্রন্থেই বর্ণিত হয়েছে। রাসুলুল্লাহ ﷺ-এর সামনে দিয়ে একটি লাশ যাচ্ছিল। তিনি সেটা দেখে বললেন :
مُسْتَرِيحٌ وَمُسْتَرَاحٌ مِنْهُ
সে নিজে স্বস্তি লাভ করল অথবা তার থেকে মানুষ স্বস্তি পেল।

‘ওয়াও’ শব্দের শাব্দিক অর্থ যদিও ‘এবং’। কিন্তু এখানে আমরা হাফিজ ইবনু হাজার আসকালানি রহ.-সহ অন্যান্য ব্যাখ্যাকারগণের ব্যাখ্যার আলোকে ‘অথবা’ শব্দ দ্বারা অনুবাদ করেছি। সাহাবিগণ রা. এই বাক্যটির ব্যাখ্যা রাসুলুল্লাহ ﷺ-কে জিজ্ঞেস করলেন। জবাবে রাসুলুল্লাহ ﷺ বললেন :
الْعَبْدُ الْمُؤْمِنُ يَسْتَرِيحُ مِنْ نَصَبِ الدُّنْيَا وَأَذَاهَا إِلَى رَحْمَةِ اللَّهِ
মুমিন বান্দা দুনিয়ার কষ্ট-ক্লেশ থেকে মুক্তি পেয়ে আল্লাহর রহমতে গমন করার মাধ্যমে স্বস্তি লাভ করে।

والكافر يموت فيستريح منه العباد والبلاد والشجر والدواب
আর কাফিরের থেকে মানুষ, পৃথিবী, বৃক্ষরাজি এবং জীবজন্তু স্বস্তি লাভ করে।

কাফিরের মৃত্যুতে বৃক্ষরাজি কেন স্বস্তি লাভ করে? মুহাদ্দিসগণ এরও সুন্দর ব্যাখ্যা দিয়েছেন :
لأن الكفار سبب لمنع الأمطار ، والجدب والقحط ، وكل شر ، والشجرة معلوم أنها إذا انقطع عنها المطر ماتت
কারণ, কাফিররা অনাবৃষ্টি, দুর্ভিক্ষ, অনাহার এবং সব অনিষ্টের কারণ। আর এটা তো সবার জানা যে, বৃষ্টি বন্ধ হয়ে গেলে বৃক্ষ মরে যায়।

পৃথিবীতে আল্লাহর অবাধ্যতা হলে আল্লাহ অসন্তুষ্ট হন। আল্লাহর অসন্তোষকে আরবিতে ‘গজব’ বলা হয়। পৃথিবীর মধ্যে মানুষ যা কিছু অপকর্ম করে, এর কারণে অনেক সময় সে আল্লাহর গজবে নিপতিত হয়। মানুষ এর কারণ হিসেবে বেপর্দা, ব্যভিচার, দুর্নীতি, সন্ত্রাস, মদ্যপান ও অশ্লীলতাকে ঠিকই চিহ্নিত করে। মৌলবিরা মিম্বরে মিম্বরে এসবের বিরুদ্ধে নিজেদের আওয়াজও উচ্চকিত করে। কিন্তু বর্তমান পৃথিবীতে অধিকাংশই যেহেতু অতি উদারমনা তথাকথিত মানবধর্মের অনুসারী, ইসলামধর্মের নয়; তাই কুফর-শিরককে তাদের কাছে কোনো অপরাধই মনে হয় না। তারা পৃথিবীর মোট জসংখ্যার তিন চতুর্থাংশের সর্বোচ্চ অপরাধকে কোনো অপরাধ হিসেবেই গণ্য করে না। তারা অশ্লীলতাকে জাহিলিয়াত হিসেবে চিহ্নিত করতে পারলেও আল্লাহর সার্বভৌমত্ব অস্বীকার যে এই যুগের সবচে বড় জাহিলিয়াত, এটাকে চিহ্নিত করতে পারে না।

রোগই যখন চিহ্নিত করতে পারে না, দাওয়া বা ঠিকভাবে কীভাবে দেবে! এ জন্যই তো দেখা যায়, মৌলিক রোগ বাদ দিয়ে শাখাগত রোগ নিয়ে পড়ে থাকে। অমুসলিমদের সঙ্গে সখ্য আর মুসলিমদের বিভিন্ন উপদলের সঙ্গে বৈরিতা লালন করে। মুসলমানদেরকে আমলের দাওয়াত দেওয়ার জন্য দিনরাত তৎপর থাকলেও অমুসলিমদের ইমানের দাওয়াত দেওয়াকে ফালতু বিষয় মনে করে বা এর প্রয়োজনীয়তাকে থোড়াই কেয়ার করে। ক্যান্সার বাদ দিয়ে জ্বরের চিকিৎসায় সবগুলো সময় ব্যয় করে।

একজন কাফির দুনিয়া থেকে চলে গেলে সে সিজ্জিনে যায়, জাহান্নামের শাস্তিতে নিক্ষিপ্ত হয়। তার মৃত্যুতে সবাই যেন হাফ ছেড়ে বাঁচে। ফেরেশতারাও তার প্রতি কোনো মানবতাবোধ দেখায় না। সে তথাকথিত ‘নিরপরাধ’ হলেও দুনিয়ার মধ্যে প্রাণ সংহার করার পূর্বেই শাস্তির ফেরেশতারা আজাব নিয়ে তার সামনে হাজির হয়। সে চিরকালের জন্য স্রষ্টার গজব ও জাহান্নামের উপযোগী হিসেবে বিবেচিত হয়। তার জন্য কেঁদেকেটে আমরা অস্থির হয়ে যাই। যদিও প্রতিদিন হাজারো মুসলিমের মৃত্যুতে আমাদের কোনো অনুশোচনা জাগে না। আমাদের নেতারাও এখন আর সে কারণে বিবৃতি দেয় না। কতই আর দেবে! এই দারুল আমান পৃথিবীতে মুসলিমদের যে কোনো আমান নেই, এটা তাদেরও জানা হয়ে গেছে। তাই মুসলিমদের জন্য মৃত্যুই স্বাভাবিক নিয়তি হিসেবে সবাই মেনে নিয়েছে। হ্যাঁ, যেহেতু অমুসলিমদের জন্য এখানে এখনো আমান রয়েছে, তাই অমুসলিমদের মৃত্যুতে আমরা শোকাহত হই। শোকবার্তা প্রকাশ করি। আর আমরা ছাড়া বাকি সবাই স্বস্তি লাভ করে। তারা তার বিদায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে।

হ্যাঁ, এটা ঠিক যে, কোনো ব্যক্তি ইমানহারা অবস্থায় মৃত্যুবরণ করলে আর তার কাছে কোনো না কোনোভাবে ইসলামের দাওয়াত না পৌঁছে থাকলে আমরা নিজেদের ব্যাপারে উদ্বিগ্ন হতে পারি। কারণ, দাওয়াতের এক গুরুদায়িত্ব আদায়ে আমরা শৈথিল্য করেছি। কিন্তু আজকাল এমন অমুসলিম নেই বললেই চলে।

এটা তো সব কাফিরের ক্ষেত্রেই। উপরন্তু চুক্তিবদ্ধ কাফিরদের তো পার্থিব কিছু অবস্থা ও অবস্থান রয়েছে। হারবি কাফিরদের তো তা-ও নেই। কিন্তু আমাদের মোল্লাদের এ দুয়ের মধ্যে পার্থক্য করার সময় কোথায়! এ জন্যই তো আহলে কিতাব নারীদের বিয়ে করার প্রসঙ্গ আলোচনায় আসলে দুই প্রকারের মধ্যে কোনো বিভাজন না করে ঢালাওভাবে ফাতওয়া দিতে থাকে তথাকথিত মানবধর্মের অনুসারী মুফতিরা। তারা চুক্তিবদ্ধ অমুসলিমের বিধান নিয়ে কোনো ভাবনাচিন্তা ছাড়াই প্রয়োগ করতে থাকে হারবি কাফিরদের ওপরও। কারণ, তাদের মতে গোটা দুনিয়াটা দারুল ইসলাম, হাতেগোণা দুয়েকটা রাষ্ট্র হলো দারুল আমান আর একমাত্র ইজরাইল হলো দারুল হারব। বেচারারা আবার নিজেদের মূর্খতা হেতু দারুল কুফর ও দারুল হারবকে আলাদা করে দেখে। সুতরাং গোটা দুনিয়ার কাফিররা চুক্তিবদ্ধ বৈ কিছু নয়।

…….. ……… ……… ………

একটি ব্যবচ্ছেদ প্রসঙ্গ ও আমাদের কিছু কথা

কেউ যখন ব্যক্তি-আক্রমণ করে কিছু লেখে, সেটার জবাব দেওয়ার রুচি হয় না। আমার ফ্রেন্ডলিস্টে এমন অনেকজন আছে, যাদের সঙ্গে আমার অধিকাংশ বিষয়ে মতানৈক্য রয়েছে। এতদ্‌সত্ত্বেও আমি তাদেরকে লিস্টে রাখি। এমনকি তাদের ভালো পোস্টে লাইক/লাভ রিয়েক্টও দিই। এই ব্যবচ্ছেদকারীও এতকাল লিস্টে ছিল। নিজেকে আমি ভুলের ঊর্ধ্বে মনে করি না। তাই দালিলিক ব্যবচ্ছেদকে আমি ইতিবাচক হিসেবেই নিই। সংশোধনের উদ্দেশ্যে তিনি ব্যবচ্ছেদনামা রচনা করলে আমার কোনো আপত্তি ছিল না। উল্টো বরং তাকে সাধুবাদ জানাতাম। কিন্তু…। লেখার শুরুতে-শেষে কিছু ট্যাগ লাগিয়ে নিলে মনে হয় সিম্পেথি ভালো পাওয়া যায়, এ জন্য অনেকে ব্যবচ্ছেদনামা লিখতে গিয়েও এই কাজটা করে।

যাহোক, সেই কথিত ব্যবচ্ছেদ সম্পর্কে কিছু বলতে রুচিতে ধরছিল না। এতদ্‌সত্ত্বেও লিখতে হচ্ছে, যেহেতু তিনি তার লেখায় দু-চারটা বিষয়কে দলিল হিসেবে দেখাতে চেয়েছেন। যদি বাস্তবেই সেগুলো দলিল হয় তাহলে মেনে নেওয়া আমার দায়িত্ব। আর যদি এ ক্ষেত্রে তার ভুল হয় তাহলে সেটাও চিহ্নিত করে দেওয়া আমার দায়িত্ব। তার সংশোধনের প্রত্যাশায় নয়। কারণ, নতুন করে আর গালি খাওয়ার ইচ্ছা নেই। কিন্তু অন্যদের সামনে বিষয়টি স্পষ্ট করার স্বার্থে।

আক্রমণ তো চতুর্দিক থেকে। এরপরও লিখছি। জানি না, এই পোস্টটা কতক্ষণ থাকবে। রিপোর্টকারীরা তো সর্বদা ওঁত পেতে থাকে। এ বিষয়ে পূর্বে যা লিখেছিলাম, ফেসবুকের উদারমনা (!) ভাইয়েরা রিপোর্ট করে সেগুলো উধাও করে দিয়েছে। এরপরও যে পোস্টটির ব্যবচ্ছেদ তিনি করেছেন, প্রোফাইল থেকে রিমুভ হওয়ার পর লেখাটিকে পেইজে উঠিয়ে রেখেছি। সর্বশেষ পেইজ থেকেও রিমুভ করে দেওয়ার পর এখন সাইটে সংরক্ষণ করছি।

এবার আসি সেই ভাইয়ের ব্যবচ্ছেদ প্রসঙ্গে।

১.
আমাদের লেখার একটা অংশ ছিল নিম্নরূপ :

//আপনি যে ‘নিরপরাধ কাফির’ শব্দ ব্যবহার করলেন, এই শব্দের তাৎপর্যই তো আমার বোধে ধরে না। ‘নিরপরাধ বিদ্রোহী’, ‘নিরপরাধ রাজাকার’, ‘নিরপরাধ ধর্ষক’, ‘নিরপরাধ খুনি/চোর/ডাকাত/সন্ত্রাসী’ শব্দগুলো কি যথার্থ? যদি এগুলো যথার্থ না হয় তাহলে ওটাই বা যথার্থ হবে কীভাবে? তার মানে আপনার চোখে বিদ্রোহ, রাজাকারমূলক কর্মকাণ্ড, ধর্ষণ, মদপান, খুন, চুরি, ডাকাতি, সন্ত্রাস ইত্যাদি অপরাধ হলেও কুফর কোনো অপরাধ নয়? অথচ উল্লেখিত অপরাধগুলো ছিল কবিরা গুনাহ, যা ক্ষমার যোগ্য। কিন্তু কুফর তো এমন ধ্বংসাত্মক গুনাহ, যা ক্ষমারই অযোগ্য।//

এর ব্যবচ্ছেদ তিনি করেছেন এভাবে :

//শায়েখের জ্ঞানের দৌড় দেখুন! তিনি বান্দার হক বা দুনিয়াবী অপরাধকে আল্লাহর হকের সাথে মিলিয়ে বিরাট ভজঘট পাকিয়ে ফেলেছেন। তার কাছে প্রশ্ন, কুফরের শরিয়ত নির্ধারিত হদ কী? ইসলামে হত্যা, যিনা, চুরি ইত্যাদির হদ আছে আমরা সবাই জানি। কুফরের হদ কী? নবী সা. বা তার সাহাবীরা শুধু কুফরের অপরাধে কবে কাকে কী শাস্তি দিয়েছেন? শায়েখ কীভাবে ভুলে গেলেন যে, কুফর ক্ষমার অযোগ্য ঠিক, কিন্তু কুফরের শাস্তি আল্লাহই দেবেন। বান্দাকে কুফরের শাস্তি দেওয়ার অধিকার দেওয়া হয়নি। কাউকে জোর করে কুফর ত্যাগে বাধ্য করার অধিকারও বান্দার নাই।//

আমাদের কথা :

ব্যবচ্ছেদকারী ভাই মাথার মধ্যে প্রথমে এমন থিম সাজিয়েছেন, যার সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্কই নেই। এরপর তিনি তার ভিত্তিতে ব্যবচ্ছেদ করেছেন। তিনি প্রথমে ধরে নিয়েছেন : ‘আমরা কাফিরদের ওপর আক্রমণ করাকে সমর্থন করেছি। আর আমরা সেটাকে কাফিরদের শাস্তি হিসেবে চিহ্নিত করেছি।’ অথচ যেই পোস্টের ব্যবচ্ছেদ তিনি করতে বসেছেন, সেখানেও স্পষ্টভাবে এই কথা রয়েছে : “এর অর্থ এ নয় যে, আমরা অযথাই তাদের ওপর আক্রমণ করাকে সমর্থন করি; বিশেষত যদি তার মধ্যে ইসলামের সার্বিক কোনো কল্যাণ না থাকে, উল্টো বরং তার দ্বারা মুসলিমরা ক্ষতিগ্রস্ততায় নিপতিত হয়।”

আমাদের কথা ছিল ‘নিরপরাধ কাফির’ কথাটি শুদ্ধ কি না—এ নিয়ে। আমরা দেখিয়েছি, কাফিরকে নিরপরাধ বলা সংগত নয়। কারণ, কুফরই হলো সবচে বড় অপরাধ। আল্লাহ তাআলা কুরআনেও যতকাল ফিতনা থাকবে, ততকাল লড়াই অব্যাহত রাখার যে আদেশ করেছেন, সেখানে ফিতনার ব্যাখ্যাও করা হয়েছে কুফরের দ্বারা। যার কারণে ইসা আ.-এর হাতে দাজ্জাল নিহত হওয়ার পর লড়াইয়ের বিধান রহিত হয়ে যাবে। কারণ, তার হত্যার মধ্য দিয়ে সবচে বড় অপরাধের পরিসমাপ্তি ঘটবে।

বান্দার হক নষ্ট করলে এর কারণে ব্যক্তিকে তিনি অপরাধী মনে করেন। পক্ষান্তরে আল্লাহর হক নষ্ট করলে এর কারণে ব্যক্তিকে তিনি নিরপরাধ মনে করেন। শাস্তি কে দেবে—এটা তো আমাদের আলোচ্য বিষয় ছিল না। শাস্তি কী হবে—তা-ও তো মুখ্য ছিল না। বিষয় ছিল, কাফিরকে নিরপরাধ বলা সংগত কি না। তিনি দেখালেন—চোর, ব্যভিচারী ও খুনির হদ রয়েছে; কিন্তু কুফরের হদ নেই। উনার এই অপ্রাসঙ্গিক তুলনার খণ্ডনে কেউ যদি বলে—কুফরের বিরুদ্ধে কিতাল রয়েছে; কিন্তু ওসবের বিরুদ্ধে কিতাল নেই তাহলে তিনি কী বলবেন? প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, কোনো সুযোগসন্ধানী আবার এই কথার অর্থ এটা দাঁড় করাবেন না যে, আমরা বর্তমান ইস্যুকে কিতাল হিসেবে দেখাচ্ছি। আমরা শুধু এটা পরিষ্কার করতে চাচ্ছি যে, অপ্রাসঙ্গিক কথার দ্বারা আবার ব্যবচ্ছেদ হয় কীভাবে!

আর কুফরের শাস্তি আল্লাহ দেবেন, এটা যেমন ঠিক; কুফরের ধ্বজাধারীদেরকে মুসলিমরা গোলাম বানাবে, তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করবে, তাদের থেকে চাপ প্রয়োগ করে জিযয়া কর আদায় করবে – এ আরও অধিক ঠিক।

২.
আমাদের লেখার একটা অংশ ছিল নিম্নরূপ :

//“আমাদের পূর্বসুরি ইমামগণ তো বিদআতি, বাতিল ও পাপাচারী লোকদের মৃত্যুতেই স্বস্তি লাভ করতেন; এমনকি খুশি পর্যন্ত প্রকাশ করতেন। যার ভুরি ভুরি দৃষ্টান্ত ইতিহাসের গ্রন্থাদিতে উল্লেখ হয়েছে। সেখানে কাফির তো আরও জঘন্য।”//

এর ব্যবচ্ছেদ তিনি করেছেন এভাবে :

//এখানে তিনি বিদঈ আর কাফেরকেও এক পাল্লায় রেখে বিচার করেছেন। অথচ ইসলাম মুরতাদ এবং বিদঈকে অপরাধী মনে করে, কখনো কখনো মৃত্যুদণ্ডযোগ্য মনে করে। কিন্তু কাফেরের কোনো দণ্ড নেই। তাকে হেদায়াতের দাওয়াত দিতে হবে তার স্বাভাবিক মৃত্যু পর্যন্ত। মৃত্যুর পর আল্লাহই তার ব্যাপারে ফয়সালা করবেন।//

আমাদের কথা :

আমরা উভয় শ্রেণিকে এক পাল্লায় রাখলাম কোথায়? আমরা তো বললামই—‘কাফির তো আরও জঘন্য।’ তিনি বলছেন—‘ইসলাম মুরতাদ এবং বিদঈকে অপরাধী মনে করে, কখনো কখনো মৃত্যুদণ্ডযোগ্য মনে করে।’ এখানে তিনি অপ্রাসঙ্গিকভাবে মুরতাদকে টেনে এনেছেন। যদিও তাকে জিজ্ঞাসা করা যায়, কুরআনের ঘোষণা দ্বারাই প্রমাণিত হয়, দুনিয়ার মানুষ প্রধানত দুই প্রকার : (ক) মুমিন, (খ) কাফির। মুরতাদ কি মুমিন? যদি মুমিন না হয় তবে সে-ও তো কাফির। তিনি দাবি করছেন, ইসলাম মুরতাদ ও বিদআতিকে অপরাধী মনে করে। আমরা তাকে বলব, তবে কি ইসলাম কাফিরকে নিরপরাধ মনে করে? যদি করে থাকে তাহলে এর পক্ষে মাত্র একটা প্রমাণ দেখান। তিনি আরও বলতে চান, ইসলাম মুরতাদ ও বিদআতিকে মৃত্যুদণ্ডযোগ্য মনে করে। সাধারণ বিদআতিকে তো কস্মিনকালেও মৃত্যুদণ্ডযোগ্য মনে করে না। কুফরে লিপ্ত বিদআতিকে মনে করে। তাহলে মুরতাদ ও বিদআতে মুকাফফিরাহয় লিপ্ত ব্যক্তিও তো কাফিরই হলো। তাদেরকে আলাদা করে দেখিয়ে সিম্পেথি আদায়ের চেষ্টা করার কী দরকার?

এরপর আবারও সেই একই কথার পুনরাবৃত্তি—‘কাফেরের কোনো দণ্ড নেই। তাকে হেদায়াতের দাওয়াত দিতে হবে তার স্বাভাবিক মৃত্যু পর্যন্ত। মৃত্যুর পর আল্লাহই তার ব্যাপারে ফয়সালা করবেন।’ আমরা বলব, কোন কাফিরের দণ্ড নেই? মুরতাদও তো কাফির, বিদআতে মুকাফফিরাহয় লিপ্ত ব্যক্তিও তো কাফির, যুদ্ধবন্দিও তো কাফির। এদের কি দণ্ড নেই? কাফির বলতে আপনি কী বোঝেন, ক্লিয়ার করুন। আর কাফিরের একমাত্র বিধান হিসেবে তিনি মৃত্যু পর্যন্ত দাওয়াতের কথা উল্লেখ করলেন। তাকে জিজ্ঞেস করা দরকার, তাহলে কিতাল কার বিরুদ্ধে হবে? মুসলিমের বিরুদ্ধে? যেমনিভাবে আপনারা কিতাল করেন এতাআতিদের বিরুদ্ধে? সালাফিদের বিরুদ্ধে? জামাতিদের বিরুদ্ধে? বেরেলবিদের বিরুদ্ধে? প্রভৃতি।

এখানে প্রসঙ্গক্রমে সহিহ মুসলিমের ২৮৬৫ নম্বর হাদিসটি উল্লেখ করা যায়, যদিও এটা তাদের গায়ে সইবে না। আর সব হাদিস সবার গায়ে সয়ও না।

وَإِنَّ اللَّهَ أَمَرَنِي أَنْ أُحَرِّقَ قُرَيْشًا، فَقُلْتُ : رَبِّ، إِذَنْ يَثْلَغُوا رَأْسِي فَيَدَعُوهُ خُبْزَةً. قَالَ : اسْتَخْرِجْهُمْ كَمَا اسْتَخْرَجُوكَ، وَاغْزُهُمْ نُغْزِكَ، وَأَنْفِقْ فَسَنُنْفِقُ عَلَيْكَ، وَابْعَثْ جَيْشًا نَبْعَثْ خَمْسَةً مِثْلَهُ، وَقَاتِلْ بِمَنْ أَطَاعَكَ مَنْ عَصَاكَ

‘কুরাইশকে জ্বালিয়ে দেওয়ার জন্য আল্লাহ আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন।’ ‘আমি তখন বললাম, ‘হে আমার প্রতিপালক, আমি যদি এ কাজ করি, তাহলে তারা তো আমার মাথা ভেঙে রুটির মতো টুকরো টুকরো করে ফেলবে’! আল্লাহ তাআলা বললেন, ‘তারা যেভাবে তোমাকে বহিষ্কার করেছে, তুমিও ঠিক সেভাবে তাদেরকে বহিষ্কার করো। তুমি তাদের সাথে যুদ্ধ করো, আমি তোমাকে সাহায্য করব। (আমার পথে) ব্যয় করো, তোমার জন্যও ব্যয় করা হবে। তুমি একটি বাহিনী প্রেরণ করো, আমি অনুরূপ পাঁচটি বাহিনী প্রেরণ করবো, যারা তোমার আনুগত্য করে, তাদেরকে সঙ্গে নিয়ে যারা তোমার বিরুদ্ধাচারণ করে তাদের সাথে লড়াই করো।’

৩.
ব্যবচ্ছেদকারীর ব্যবচ্ছেদের একটি অংশ নিম্নরূপ :

//ভালো করে খেয়াল করে দেখেন এই হাদীস থেকে কী বোঝা যায়? রসূল কি কাফেরের মৃত্যুতে উল্লাস বা আনন্দ প্রকাশ করেছেন? তিনি শুধু মুমিন এবং কাফেরের মৃত্যুর প্রার্থক্য উল্লেখ করেছেন। বলেছেন, মুমিনের মৃত্যুতে মুমিন স্বস্তি পায় আর কাফেরের মৃত্যুতে জগত স্বস্তি পায়। এখানে কি রসূলের উল্লাস বা আনন্দ প্রকাশ পেয়েছে? উপরন্তু সেটা ছিলো স্বাভাবিক মৃত্যু। জুলুমের শিকার হয়ে মৃত্যু নয়।//

আমাদের কথা :

ওই যে আগেই বলেছি, লেখক নিজের থেকে একটা মনগড়া থিম সাজিয়ে ব্যবচ্ছেদ করতে বসেছেন। আর তার ফলশ্রুতিতেই ব্যবচ্ছেদ করতে গিয়ে বিভিন্ন ভুল পথে হেঁটেছেন। যেই পোস্টের ব্যবচ্ছেদ করার জন্য তিনি বসেছেন, সেখানে শোক প্রকাশ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। উল্লাস করার কথা কোথায়ই বা এসেছে! আর একজন মুসলমান অমুসলিমের মৃত্যুতে কীভাবে-ই বা শোকার্ত হবে! হ্যাঁ, সে খুশি হতে পারে। কুরআনেও তো আল্লাহ কাফির অবস্থায় যারা মৃত্যুবরণ করে, তাদের ব্যাপারে বলেছেন, তাদের ওপর আল্লাহ, রাসুল, ফেরেশতা এবং সব মানুষের লানত। কুরআন আরও জানিয়েছে, তাদের মৃত্যুতে না কাঁদে আকাশ আর না জমিন। উপরন্তু হারবি কাফিররা মুসলমানদের দুশমন। দুশমনের মৃত্যুতে কেনই বা মানুষ শোকার্ত হবে? অবশ্য আজকের মুসলিমরা তাদের দুশমন মনে করতে রাজি নয়। কাফিরদের মৃত্যুতে শোক প্রকাশের ব্যাপারে মাসুম ভাই নাতিদীর্ঘ আলোচনা করেছেন। প্রয়োজনে দ্রষ্টব্য : https://bit.ly/2vl6orG

৪.
ব্যবচ্ছেদকারী ভাই এরপর লিখেছেন :

// জুলুমের শিকার হয়ে কাফেরের মৃত্যুতে রসূল সা.-এর দুঃখ ও ক্ষোভ প্রকাশ পেয়েছে। এক যুদ্ধে সাহাবায়ে কেরামের একটি দল বাধ্য হয়ে কয়েকজন শিশুকে হত্যা করে ফেলেছিলো। যুদ্ধ থেকে ফিরে এলে রসূল সা. তাদেরকে এ ব্যাপারে জেরা করলেন। তারা বললো, হে আল্লাহর রসূল, তারা তো কাফেরদের সন্তান ছিলো। রসূল সা. বললেন, তারা তোমাদের চেয়ে উত্তম ছিলো।
মুসতাদরাকে হাকেম, হাদীস: ২৫৬৬ (যাহাবী তালখীসে বলেছেন, হাদীসটি বুখারী ও মুসলিমের হাদীসসমূহের মতোই সহীহ)//

আমাদের কথা :

প্রথমে তাকে হাদিসের নম্বরটি চেক করতে বলব এবং হাদিসের আরবি ইবারত উদ্ধৃত করতে বলব। কারণ, উল্লেখিত জায়গায় সন্ধান করে একাধিক নুসখায় আমরা তা পাইনি। তার কাছে বাস্তবেই রেফারেন্স থাকলে জানানোর অনুরোধ থাকল। আর এ ক্ষেত্রে মূলকথা হলো, রাসুলুল্লাহ ﷺ তো ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন সাহাবিদের ভুলের কারণে। কারণ, যুদ্ধের মধ্যে সাধারণভাবে শিশু হত্যা করা নিষেধ। তিনি কাফিরদের মৃত্যুতে শোকার্ত হতেন—এই ঘটনার মাধ্যমে সেটা কীভাবে প্রমাণিত হয়? তার জামানায় তো কত কাফির মৃত্যুবরণ করেছে। তাদের মৃত্যুতে কি তিনি শোকার্ত হতেন? আর শিশুদের বিষয়টি এ ক্ষেত্রে অপ্রাসঙ্গিক। কারণ, প্রত্যেক শিশু স্বভাবধর্ম ইসলামের ওপর জন্মগ্রহণ করে। প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর যখন বুঝেশুনে কুফরকে অবলম্বন করে তখন তাকে হারবি কাফির হিসেবে গণ্য করা হয়; এর আগে নয়।

৪.
ব্যবচ্ছেদকারী ভাই এরপর লিখেছেন :

//রসূল সা. যুদ্ধের ময়দানেও নারী, শিশু এবং বৃদ্ধদের হত্যা করতে নিষেধ করেছিলেন কঠোরভাবে। যে হামলাগুলোর সমর্থনে তারা এতো কথা বলছেন, সেই হামলাগুলোতে অসংখ্য নারী, শিশু ও বৃদ্ধ নিহত হয়েছে। তাদের মৃত্যুও তাদেরকে দুঃখিত করে না। তারা কি তবে রসূল সা.-এর চেয়েও বেশি ঈমানী শক্তির অধিকারী!//

আমাদের কথা :

সেই পুরোনো প্রলাপ! ব্যবচ্ছেদকারী দাবি করছে, ‘যে হামলাগুলোর সমর্থনে তারা এতো কথা বলছেন’ তার মানে আমরা সেই হামলাকে সমর্থন করি। আমি জানি না, তিনি কি অন্য কিছু খেয়ে ব্যবচ্ছেদ করতে বসেছিলেন কি না। বারবার কেন এই ভ্রান্ত অপবাদ চাপাচ্ছেন আমাদের ঘাড়ে! যেই পোস্টের ব্যবচ্ছেদ করতে বসেছেন, মাথায় হিংসা ও দ্বেষ প্রচণ্ড থাকার কারণে কি সেটার এই ছত্রগুলো একবারও তার চোখে পড়ে না—‘ এর অর্থ এ নয় যে, আমরা অযথাই তাদের ওপর আক্রমণ করাকে সমর্থন করি; বিশেষত যদি তার মধ্যে ইসলামের সার্বিক কোনো কল্যাণ না থাকে, উল্টো বরং তার দ্বারা মুসলিমরা ক্ষতিগ্রস্ততায় নিপতিত হয়।’

আর আমরাও বলি, রাসুলুল্লাহ ﷺ যুদ্ধে নারী, শিশু ও বৃদ্ধদের হত্যা করতে নিষেধ করেছেন। আমরাও এটাকে নিষিদ্ধই মনে করি। সিদ্ধ মনে করার কারণও নেই। কিন্তু একটা হাদিস দেখে লাফাতে শুরু করলে শরিয়াহর অনেক বিষয়ই অস্পষ্ট থেকে যায়—এ বিষয়টি হয়তো ব্যবচ্ছেদকারীর স্মরণ নেই। অন্যথায় তার জানা থাকার কথা ছিল, সকল নিষিদ্ধতার পরও কিছু ক্ষেত্র রয়েছে এমন, সব মাজহাবের সর্বসম্মতিক্রমে যেসব ক্ষেত্রে সেই নিষিদ্ধ কাজও আর নিষিদ্ধ থাকে না; বরং অনুমোদিত হয়ে যায়। সহিহ বুখারি এবং সহিহ মুসলিম গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে :

سُئِلَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنِ الذَّرَارِيِّ مِنَ الْمُشْرِكِينَ؟ يُبَيَّتُونَ فَيُصِيبُونَ مِنْ نِسَائِهِمْ وَذَرَارِيِّهِمْ؟، فَقَالَ: هُمْ مِنْهُمْ
নবি ﷺ-কে মুশরিকদের বংশধরদের সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলো, যাদের ওপর রাতে আক্রমণ চালানোর কারণে তাদের স্ত্রী ও সন্তানরাও আক্রান্ত হয়েছিল। তিনি বললেন, তারা মুশরিকদেরই অন্তর্ভুক্ত।

হাফিজ ইবনু হাজার রহ. ফাতহুল বারি গ্রন্থে লেখেন :

ومعنى البيات المراد في الحديث: أن يُغار على الكفار بالليل، بحيث لا يُميَّز بين أفرادهم
হাদিসে রাতে আক্রমণ করা দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, রাতের বেলায় তাদের ওপর গেরিলা হামলা পরিচালনা করা, যার কারণে তাদের সদস্যদের মধ্যে আর পার্থক্য করা যায় না।

রাসুলুল্লাহ ﷺ যে বললেন, তারা মুশরিকদেরই অন্তর্ভুক্ত। এর কী অর্থ? খাত্তাবি রহ. মাআলিমুস সুনান গ্রন্থে লেখেন :

يريد أنهم منهم في حكم الدين وإباحة الدم، وفيه بيان أن قتلهم في البيات وفي الحرب إذا لم يتميزوا من آبائهم وإذا لم يتوصلوا إلى الكبار إلاّ بالإتيان عليهم جائز
এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, তারা দীনের বিধান এবং রক্তের বৈধতার ক্ষেত্রে মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত। এর মধ্যে এ বিষয়টির বিবরণ রয়েছে যে, রাতে আক্রমণ এবং যুদ্ধক্ষেত্রে যখন বাবাদের থেকে আলাদা করে তাদেরকে পার্থক্য করা না যাবে এবং যখন তাদেরকে আক্রমণ করা ছাড়া বড়দের পর্যন্ত পৌঁছা না যাবে তখন তাদেরকে হত্যা করা জায়িয হবে।

ইবনু রুশদ রহ. বিদায়াতুল মুজতাহিদ গ্রন্থে লেখেন :

وَاتَّفَقَ عَوَّامُ الْفُقَهَاءِ عَلَى جَوَازِ رَمْيِ الْحُصُونِ بِالْمَجَانِيقِ، سَوَاءً كَانَ فِيهَا نِسَاءٌ وَذُرِّيَّةٌ، أَوْ لَمْ يَكُنْ؛ لِمَا جَاءَ أَنَّ النَّبِيَّ عَلَيْهِ الصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ نَصَبَ الْمَنْجَنِيقَ عَلَى أَهْلِ الطَّائِفِ
ফকিহগণ এ ব্যাপারে একমত হয়েছে যে, দূর্গের ওপর কামানের গোলা নিক্ষেপ করা যাবে; চাই তাতে নারী ও শিশু থাক বা না থাক। কারণ, হাদিসে এসেছে, নবিজি ﷺ তায়েফবাসীর ওপর (আক্রমণ করার জন্য) কামান স্থাপন করেছিলেন।

রাসুলুল্লাহ ﷺ কাফিরদের মৃত্যুতে শোকাহত হয়েছেন—এর কোনো প্রমাণ না দেখিয়েই উল্টো বরং লেখক খোঁচামারা কথা বলছেন—‘তারা কি তবে রসূল সা.-এর চেয়েও বেশি ঈমানী শক্তির অধিকারী!’ তায়েফবাসীদের ওপর কামান দাগানোর সেই ঘটনা কীভাবে যেন ব্যবচ্ছেদকারী পাশ কাটিয়ে গেলেন!

৫.
ব্যবচ্ছেদকারীর বক্তব্য :

//অন্য এক হাদীস থেকে বোঝা যায় রসূল সা. মৃত কাফেরকে সম্মান দেখাতেন, ইবনে আবী লায়লা বলেন, কাদেসিয়ায় একদিন কায়েস ইবনে সা’দ এবং সাহল ইবনে হুনাইফের পাশ দিয়ে একটি মরদেহ বহন করে নেওয়া হচ্ছিলো, তারা দু’জনই (লাশটির সম্মানার্থে) উঠে দাঁড়ালেন। তাদেরকে বলা হলো, এটা স্থানীয় এক অমুসলিমের মরদেহ। তারা বললেন, রসূল সা. এক ইহুদির মরদেহ দেখে দাঁড়িয়েছিলেন। তাকে বলা হয়েছিলো এটা ইয়াহুদির মরদেহ। তিনি উত্তরে বলেছিলেন, সে কি একজন মানুষ নয়? -সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২২৬৬//

আমাদের কথা :

এটা তো পুরোনো ক্যাচাল। এ বিষয়ে আমরা আগেও লিখেছি। ব্যবচ্ছেদকারীর পূর্বেও জনৈক মডারেট লেখক তার বইয়ে এই দর্শন গেলানোর চেষ্টা করেছিলেন। সেই প্রসঙ্গে আমরা নাতিদীর্ঘ আলোচনা করেছিলাম। ব্যবচ্ছেদকারী দেখাতে চান, রাসুলুল্লাহ ﷺ মৃত কাফিরকে সম্মান প্রদর্শন করেছেন। একে তো এটা ভুল তথ্য। তদুপরি আমাদের আলোচনা তো সম্মান প্রদর্শন নিয়ে নয়; বরং শোক প্রকাশ নিয়ে। কেন যে বারবার তিনি আলোচ্য বিষয় হারিয়ে ফেলেন! এবার আসি মূল প্রসঙ্গে।

রাসুলুল্লাহ ﷺ কেন দাঁড়িয়েছিলেন, বিভিন্ন হাদিসে এর ব্যাখ্যা এসেছে। উদাহরণস্বরূপ :

إن للموت فزعا
নিশ্চয়ই মৃত্যুর বিচলতা রয়েছে। (অর্থাৎ তিনি মৃত্যুর কথা স্মরণ করে দাঁড়িয়েছেন।) [বায়হাকি]

إنما قمنا للملائكة
আমরা শুধু ফিরিশতাদের সম্মানার্থে দাঁড়িয়েছি। [মুসতাদরাকে হাকিম]

إنما تقومون إعظاما للذي يقبض النفوس
তোমরা শুধু ওই সত্তার সম্মানার্থে দাঁড়াও, যে প্রাণসমূহ কবজা করে। [মুসনাদু আহমাদ]

إعظاما لله الذي يقبض الأرواح
আল্লাহর সম্মানার্থে দাঁড়াও, যিনি আত্মাসমূহ কবজা করেন। [সহিহ ইবনু হিব্বান]

إنما قام رسول الله صلى الله عليه وسلم تأذيا بريح اليهودي
রাসুলুল্লাহ ﷺ দাঁড়িয়েছিলেন তো এ জন্য যে, ইহুদির দুর্গন্ধে তাঁর কষ্ট হচ্ছিল। {মুসনাদু আহমাদ]

كراهية أن تعلو رأسه
তিনি দাঁড়িয়েছিলেন। কারণ, তিনি অপছন্দ করেছিলেন যে, ইহুদির মাথা (মুসলমানের মাথার চাইতে) উঁচু থাকবে। [বায়হাকি]

লেখক মহোদয় কীভাবে একই বর্ণনার উপরিউক্ত অংশগুলোকে এড়িয়ে গিয়ে নিজের মনমতো কারণ বর্ণনা করলেন—তা আমার বোধগম্য নয়।

বর্ণনার উপরিউক্ত অংশগুলোকে যদি বাদও দেওয়া হয়, রাসুলুল্লাহ ﷺ-এর কথা—‘সে কি মানুষ নয়’-কেই যদি একমাত্র কারণ হিসেবে গ্রহণ করা হয়, তবুও তো এর দ্বারা লেখকের দাবি প্রমাণিত হয় না। কারণ, আলিমগণের অজানা নয় যে, মৃত ব্যক্তির লাশ দেখলে দাঁড়ানো হবে কি না—এ মাসআলা নিয়ে ইমামগণের মধ্যে মতানৈক্য রয়েছে। কেউ এটাকে মুসতাহাব বলেন, আর অনেকেই এটাকে নাজায়িয বলেন। এমনকি ওয়াজিব হওয়ার মতও কারও কারও থেকে বর্ণিত আছে। উভয় পক্ষেরই দলিল রয়েছে। ইসলামের শুরুর দিকে মুসলমানদের মধ্যে মৃত ব্যক্তির লাশ দেখলে দাঁড়ানোর প্রচলন ছিল। রাসুলুল্লাহ ﷺ নিজেও দাঁড়িয়েছেন। কিন্তু পরবর্তীতে একাধিক হাদিসের মাধ্যমে এটাকে নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়। তো এটা ছিল নিষিদ্ধতা আসার পূর্ববর্তী হাদিস। যে সময় মুসলমানগণ লাশ দেখলে দাঁড়াতেন। দাঁড়ানোর কারণ লাশের প্রতি সম্মান প্রদর্শন নয়। বরং কারণ হলো সেগুলো, যা এই হাদিসেরই অন্যান্য অংশে বর্ণিত রয়েছে।

তো রাসুলুল্লাহ ﷺ যখন ইহুদির লাশ দেখে দাঁড়ালেন, তখন সাহাবিগণ আপত্তি জানিয়ে বললেন, হে আল্লাহর রাসুল, সে তো ইহুদি। তাদের এ আপত্তির কারণই হলো, আল্লাহর রাসুলের সান্নিধ্যে থেকে তারা এ শিক্ষা অর্জন করেছিলেন যে, যারা আল্লাহ এবং তার রাসুলকে অস্বীকার করে, তারা মোটেও সম্মান পাওয়ার উপযুক্ত নয়। তো তাদের আপত্তির পরিপ্রেক্ষিতে রাসুলুল্লাহ ﷺ তাদের জানান, আমি দাঁড়িয়েছি ইহুদির প্রতি সম্মানার্থে নয়। বরং দাঁড়িয়েছি, কারণ যেকোনো লাশ দেখলেই আমাকে দাঁড়ানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সুতরাং এটাও তো একটা লাশই। যদিও কোনো সম্মানিত মানুষের লাশ নয়; বরং এক হীন লোকের লাশ। আর দাঁড়ানোর উদ্দেশ্য তো হলো আল্লাহ তাআলার প্রতি সম্মান জ্ঞাপন এবং মৃত্যুর কথা স্মরণ।

৬.
ব্যবচ্ছেদকারীর বক্তব্য :

//কাফেরের প্রতি রসূল সা.-এর অন্তরে রাগ বা ঘৃণা ছিলো না। যেমন এই হাদীস থেকে বোঝা যায়, আনাস রা. থেকে বর্ণিত এক ইহুদী ছেলে রসূল সা.-এর খেদমত করতো। একবার সে অসুস্থ হলো। রসূল সা. তাকে দেখতে গেলেন। তার মাথার কাছে বসলেন। তাকে বললেন, ইসলাম গ্রহণ করো। সে তার বাবার দিকে তাকালো যে তার পাশে বসে ছিলো। সে বললো, আবুল কাসেমের কথা মেনে নাও। তখন সে ইসলাম গ্রহণ করলো। রসূল সা. বের হতে হতে বললেন, সব প্রশংসা আল্লাহর যিনি তাকে আগুন থেকে মুক্তি দিয়েছেন।
সহিহ বুখারী, হাদীস: ৬৫৩১

শায়েখের কাছে প্রশ্ন, রসূল সা. একজন অপরাধীর খেদমত কীভাবে নিচ্ছিলেন? অপরাধীকে শাস্তি না দিয়ে কীভাবে তিনি স্থির রইলেন? শায়েখ যে রাগ এবং ঘৃণার তালিম দিলেন, সেই রকম রাগ, ঘৃণা যদি রসূলের অন্তরে থাকতো, তিনি কি অসুস্থতার খবর শুনে একজন কাফেরকে দেখতে যেতেন? গিয়ে তার মাথার কাছে বসতেন?//

আমাদের কথা :

ব্যবচ্ছেদকারী তো এখানে এক কথায় কয়েক শ হাদিসকে দাফন করে দিয়েছেন। “কাফেরের প্রতি রসূল সা.-এর অন্তরে রাগ বা ঘৃণা ছিলো না”—এটাই যদি মেনে নেওয়া হয় তাহলে আল্লাহর জন্য ভালোবাসা ও আল্লাহর জন্য ঘৃণার কী অর্থ থাকবে? আল-ওয়ালা ওয়াল-বারার কী হাকিকত থাকবে? মিল্লাতে ইবরাহিমের কী ব্যাখ্যা থাকবে? আশিদ্দাউ আলাল কুফফার, রুহামাউ বাইনাহুমের কী প্রয়োগ থাকবে? আসলে কিছু মানুষ নিজেদেরকে ইসলামধর্মের অনুসারী মনে করলেও বাহ্যিক কার্যকলাপ থেকে তাদেরকে অতি উদারমনা পশ্চিমা স্টান্ডার্ডের মানবধর্মের অনুসারী বলেই মনে হয়।

আর তারচে বড় কথা হলো, আমাদের আলোচ্য বিষয় ছিল হারবি কাফির। লেখক এনেছেন জিম্মি কাফিরের কথা। কী যে বলব! তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে কোন জায়গার কথা কোন জায়গায় প্রয়োগ করা হচ্ছে, তা মানুষ কেন যে ভাবে না!

ইসলামে যুদ্ধবন্দিদের দাস-দাসী বানানো হয়। ইমাম চাইলে অন্য শাস্তিও দিতে পারে। আচ্ছা, যারা দাস-দাসী হবে, মানুষ কি তাদের থেকে খেদমত নেবে না? যদি খেদমত নেয় তবে কি এই কথা প্রমাণিত হবে যে, তারা নিরপরাধ ছিল? অথবা তাদের প্রতি মুসলমানদের কোনো ঘৃণা ও শত্রুতা ছিল না? আজিব! বড় আজিব! অমুসলিমরা গোলাম হয়ে থাকবে—এটাই তো স্বাভাবিক। নাকি বর্তমানের মতো তাদেরকে মনিব মেনে মুসলিমরা গোলাম হয়ে থাকবে? আর এর সঙ্গে আমাদের আলোচ্য বিষয়ের কী সম্পর্ক?

৭.
ব্যবচ্ছেদকারী সর্বশেষে লিখেছেন :

// আলেমরা মুসলমানদের উদ্দেশে ওয়াজ নসীহত করেন; সেখানে কবীরা গোনাহ থেকে বেঁচে থাকার গুরুত্বই প্রাধান্য পায়। সেটা শায়েখের পছন্দ নয়। তার দৃষ্টিতে পৃথিবীর এক চতুর্থাংশ মানুষ যেহেতু কাফের, তাই আলেমদের উচিত কুফরের বিরুদ্ধে মসজিদে মুসলমান শ্রোতাদের উদ্দেশে ওয়াজ করা! ফেইসবুকের মতো জায়গায় এই ধরনের লেইম চিন্তা ভাবনাও বিপুল হাততালি যোগাড় করতে পারে!!//

আমাদের কথা :

হায়রে যুক্তির ধার! আমরা কবে বললাম, আলিমদের কবিরা গুনাহ নিয়ে আলোচনা আমাদের পছন্দ নয়? আমার নিজের আলোচনাগুলো শুনলেও তো এই অপবাদ অন্তত আরোপ করত না। হ্যাঁ, কবিরা গুনাহের চাইতে কুফর জঘন্য—এটা কে না মানে! কুফর, শিরক ও তাওহিদের আলোচনা বেশি হওয়াই তো যুক্তির দাবি। আর এটা তো আলোচ্য বিষয়ের সঙ্গেও অপ্রাসঙ্গিক। একজন মানুষ হারামে লিপ্ত হলে সে ক্ষমার যোগ্য, কিন্তু কুফরে লিপ্ত হলে তো ক্ষমারই অযোগ্য। কোনটা নিয়ে তাহলে বেশি আলোচনা হওয়া যুক্তির দাবি? ভুল ধরতে গিয়ে অন্ধ হয়ে যাওয়া তো সমীচীন নয়।

সর্বশেষ কথা হলো, বিরোধিতার জন্যই যখন বিরোধিতা হয় তখন আর কী বলার থাকে! এ কথাগুলো তাদের জন্য লিখিনি। কারণ, তারা কখনো আমাদের ছিল না এবং তাদেরকে পাশে পাওয়ার আশাও আমরা বাহ্যদৃষ্টিতে করতে পারি না। এ কথাগুলো লিইখেছি আমার ভাইদের জন্য। যাতে করে কেউ কুমন্ত্রণাদাতার কুমন্ত্রণার শিকার হয়ে বিভ্রান্তিতে নিপতিত না হয়। অন্যথায় এ ইস্যুগুলো তো আমাদের জন্য উপকারী। এর মাধ্যমে কিছু মুখোশধারী সহজেই খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসে এবং নিজেদের আসল রূপ প্রকাশ করে দেয়।

Share This