পৃথিবীতে মানুষ ও জিন জাতি সৃষ্টির মূল লক্ষ্য হলো আল্লাহ তাআলার ইবাদত ও দাসত্বের বাস্তবায়ন। ইরশাদ হয়েছে :

وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْإِنْسَ إِلَّا لِيَعْبُدُونِ

আমি জিন এবং মানুষকে কেবল এ জন্য সৃষ্টি করেছি যে, তারা আমার ইবাদত করবে।[1]

এই লক্ষ্য সম্পাদনের জন্যই আল্লাহ তাআলা মানবজাতিকে তার খলিফা তথা প্রতিনিধি বানিয়েছেন। প্রতিটা মানুষ আল্লাহর খলিফা।

وَإِذْ قَالَ رَبُّكَ لِلْمَلَائِكَةِ إِنِّي جَاعِلٌ فِي الْأَرْضِ خَلِيفَةً

‘স্মরণ করুন ওই সময়ের কথা, যখন আপনার প্রতিপালক ফেরেশতাদেরকে বললেন, আমি পৃথিবীতে খলিফা বানাতে যাচ্ছি।’[2]

আল্লাহ তাআলা মানবজাতিকে তাদের সৃষ্টির লক্ষ্যের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য কিতাব নাজিল করেছেন, যুগে যুগে অসংখ্য নবি ও রাসুল প্রেরণ করেছেন। তিনি মানুষকে সত্য চিনিয়েছেন, সত্যের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন। যখনই মানুষ এই লক্ষ্য থেকে সরে গেছে তখনই আল্লাহ তাআলা কোনো না কোনো নবি বা রাসুল পাঠিয়ে তাদেরকে এর কথা স্মরণ করিয়েছেন, অন্ধকার থেকে আলোর রাজপথে বের করে এনেছেন।

এভাবে পৃথিবীর বুকে সর্বশেষ নবি ও রাসুল হিসেবে আগমন করেন আমাদের প্রিয়নবি মুহাম্মাদ ﷺ। তার পূর্বের সকল নবির নবুওয়াত ও সকল রাসুলের রিসালাতের ব্যাপ্তি ছিল সীমিত, মেয়াদও ছিল স্বল্প। অপরপক্ষে তার নবুওয়াত ও রিসালাতের ব্যাপ্তি কিয়ামত পর্যন্ত সুবিস্তৃত এবং এর সময়সীমা পৃথিবী ধ্বংস হওয়া অবধি সুনির্ধারিত। সহিহ হাদিসে তিনি ইরশাদ করেন :

‘আমি নবুওয়াতের প্রাসাদে সর্বশেষ ইট।’[3]

‘আমি শেষ যুগের নবি।’[4]

‘আমি দীনকে পরিপূর্ণ করেছি।’[5]

‘আমার দ্বারা নবুওয়াতের পরিসমাপ্তি ঘটানো হয়েছে।’[6]

‘আমি সর্বশেষ নবি। আমার পর আর কোনো নবি নেই।’[7]

কিন্তু মানুষের প্রকৃতি হলো, মানুষ খুব বিবর্তনপ্রিয়। ইতিহাসের প্রতিটি পর্যায়ে সীমালংঘন, বাড়াবাড়ি, প্রবৃত্তিপূজা, অজ্ঞতা, উদাসীনতা, কুসংস্কার, বিদআত এবং প্রান্তিকতা খুব বেশি চোখে পড়ে। মানুষ এসব ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে অনেক সময় শরিয়াহর ওপর আঘাত করে বসে। কখনো তারা দীনের বিধান গোপন করে। কখনো-বা তার অপব্যাখ্যা করে। এমনকি কখনো তারা এত বেশি উগ্র হয়ে ওঠে যে, দীনের বিশুদ্ধ পথের প্রবেশদ্বার রুদ্ধ করে রাখে। রাসুলুল্লাহ ﷺ নির্দেশিত শরিয়াহকে সিলগালা করে রাখে। তারা সত্যের সঙ্গে মিথ্যার মিশ্রণ ঘটিয়ে এক অভিনব দীন উপস্থাপন করে বসে। তাদের জ্ঞানীরাও তুচ্ছ পার্থিব স্বার্থে নিজেদের জ্ঞানের সঙ্গে প্রতারণা করে দীনের বিকৃত রূপ উদ্ভাবন করে তাদের সামনে তুলে ধরে। এভাবে ঘোর অন্ধকারের ঝাপটায় আলোর বিকিরণ স্তব্ধ হয়ে আসে। বাতিলের আঘাতে হকের ঝণ্ডা জমিনে লুটিয়ে পড়ে। পূর্বের যুগগুলোতে অবস্থা এরূপ হলে নতুন কোনো নবি বা রাসুল এসে দীনের সংস্কার করতেন। মানুষকে পুনরায় জাহিলিয়াত থেকে উদ্ধার করে বিশুদ্ধ তাওহিদের শিক্ষা দিতেন। কিন্তু সর্বশেষ রাসুলের বিদায়ের পর এখন কী হবে? অথচ কুরআনে আল্লাহ তাআলার শাশ্বত ঘোষণা বিবৃত হয়েছে :

إِنَّا نَحْنُ نَزَّلْنَا الذِّكْرَ وَإِنَّا لَهُ لَحَافِظُوْنَ

‘আমিই কুরআন অবতীর্ণ করেছি এবং আমিই এর সংরক্ষক।’[8]

আর প্রকাশ থাকে যে, কুরআন শুধু শব্দের নাম নয়; বরং শব্দ ও মর্ম উভয়টির সমষ্টির নাম হলো আল-কুরআন। সুতরাং উপরিউক্ত আয়াতের দ্বারা প্রতিভাত হয় যে, কুরআন কিয়ামাত পর্যন্ত সংরক্ষিত থাকবে। তার শব্দের মধ্যেও কোনো বিকৃতি ঘটবে না, তার মর্মের মধ্যেও কোনো অপব্যাখ্যা অনুপ্রবেশ করবে না। ইসলামের অনন্যসাধারণ বৈশিষ্ট্যই হলো, ইসলাম পূর্ণাঙ্গ দীন হওয়ার পাশাপাশি চিরকাল সবিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে সংরক্ষিত। কুরআন সংরক্ষিত থাকার অর্থ শুধু এ নয় যে, তার শব্দ ও মর্ম কেবল বইপত্রে হুবহু সংকলিত ও সংরক্ষিত থাকবে; বরং এর অর্থ হলো, তাত্ত্বিক ও প্রায়োগিক, অন্যভাষায় ইলমি ও আমলি উভয় ক্ষেত্রে তার সংরক্ষণ অব্যাহত থাকবে। আকিদা-বিশ্বাস, ইবাদত-বন্দেগি, পারস্পরিক আচার-আচরণ, আর্থিক লেনদেন ও চারিত্রিক দিকনির্দেশনা থেকে শুরু করে দীনের প্রতিটি বিধান ও নির্দেশনা কিয়ামত পর্যন্ত তাত্ত্বিক ও প্রায়োগিক উভয় পন্থায় সুরক্ষিত থাকবে। আল্লাহ তাআলা সর্বযুগে এমন কিছু মানুষ সৃষ্টি করে দেবেন, যারা এই দীনের কাণ্ডারি হবে। তারা সকল প্রকার বিকৃতি ও অপব্যাখ্যা থেকে ইসলামকে সুরক্ষিত রাখবে। কবি ইকবালের কবিতায় ফুটে উঠেছে সেই আলোকিত মানুষদের অমীয় চেতনা :

‘মেরি জিন্দেগি কা মাকসাদ

তেরে দীন কি স্যরফারাজি,

ম্যায়ঁ ইসি লিয়ে মুসলমান

ইসি লিয়ে নামাজি।’

‘আমার জীবনের লক্ষ্য

তোমার দীনের প্রহরা,

এ জন্যই তো আমি মুসলমান

এ জন্যই তো আমি নামাজি।’

মোদ্দাকথা, আল্লাহ তাআলা এই উম্মাহর জন্য তাদের দীনকে এমনভাবে হিফাজত করেছেন, যেমনটি অন্য কোনো উম্মাহর দীনের ক্ষেত্রে করেননি৷ কারণ, এ উম্মাহর মাঝে পুনরায় আর কোনো নবির আবির্ভাব ঘটবে না, যিনি এসে দীনের নিশ্চি‎হ্নপ্রায় অংশের সংস্কার করবেন; যেমনটা আমাদের পূর্ববর্তী নবিগণের দীনের ক্ষেত্রে হতো—যখনই কোনো নবির তিরোধানের পর তাঁর দীন আচ্ছাদিত কিংবা বিলুপ্তপ্রায় হয়ে যেত তখনই পরবর্তী কোনো নবি এসে পুনরায় সেই দীনের সংস্কার করতেন।

তাই আল্লাহ তাআলা নিজেই এ দীন হিফাজতের দায়িত্ব নিয়েছেন। তিনি প্রতি যুগেই এ দীনের জন্য এমন কিছু ধারক-বাহক সৃষ্টি করেছেন, যারা এই দীনের ইলমকে ধারণ করেন এবং একে সীমালঙ্ঘনকারীদের বিকৃতি, বাতিলপন্থীদের মিথ্যাচার এবং মূর্খদের অপব্যাখ্যা থেকে মুক্ত রাখেন।

রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন—

يَحْمِلُ هٰذَا الْعِلْمَ مِنْ كُلِّ خَلْفٍ عُدُوْلُهُ  يَنْفُوْنَ عَنْهُ تَحْرِيْفَ الْغَالِيْنَ  وَانْتِحَالَ الْمُبْطِلِيْنَ وَتَأْوِيْلَ الْجَاهِلِيْنَ

‘এই ইলমকে ধারণ করবে প্রত্যেক উত্তর প্রজন্মের আস্থাভাজন শ্রেণি। তারা একে মুক্ত রাখবে সীমালংঘনকারীদের বিকৃতি, বাতিলপন্থীদের মিথ্যাচার এবং মূর্খদের অপব্যাখ্যা থেকে।’[9]

আর তারাই এই ইলমের ক্ষেত্রে গ্রহণীয় ও অনুসরণীয় হবেন। যে-কেউ ইলমি বিষয়ে কথা বললেই তার কথা গ্রহণযোগ্য হবে না।

রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন—

إِنَّ اللّٰهَ لاَ يَقْبِضُ الْعِلْمَ انْتِزَاعًا يَنْتَزِعُهُ مِنَ الْعِبَادِ، وَلَكِنْ يَّقْبِضُ الْعِلْمَ بِقَبْضِ الْعُلَمَاءِ، حَتّٰى إِذَا لَمْ يُبْقِ عَالِمًا اتَّخَذَ النَّاسُ رُءُوْسًا جُهَّالًا، فَسُئِلُوْا فَأَفْتَوْا بِغَيْرِ عِلْمٍ، فَضَلُّوْا وَأَضَلُّوْا

‘আল্লাহ তাআলা বান্দাদের থেকে ইলম উঠিয়ে নেবেন না; তবে আলিমদের উঠিয়ে নেওয়ার মাধ্যমে ইলম উঠিয়ে নেবেন। একপর্যায়ে যখন কোনো আলিম অবশিষ্ট রাখবেন না তখন লোকেরা মূর্খদেরকেই ধর্মগুরু হিসেবে গ্রহণ করবে। ফলে তাদেরকেই ফাতওয়া জিজ্ঞাসা করা হবে। আর তারা ইলম ছাড়া ফাতওয়া দেবে। এভাবে নিজেরাও গোমরাহ হবে, অন্যদেরকেও গোমরাহ করবে।’[10]

হাদিসে আরও এসেছে :

لَا تَزَالُ طَائِفَةٌ مِنْ أُمَّتِي ظَاهِرِينَ عَلَى الْحَقِّ، لَا يَضُرُّهُمْ مَنْ خَذَلَهُمْ، حَتَّى يَأْتِيَ أَمْرُ اللهِ وَهُمْ كَذَلِكَ

‘আমার উম্মাহর একটি দল সত্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকবে। যারা তাদের অসহযোগিতা করবে তারা তাদের কোনো ক্ষতি করতে পারবে না, যতক্ষণ না আল্লাহর নির্দেশ আসে এবং তারা সেই আদর্শের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকে।’

রাসুলুল্লাহ ﷺ আরও বলেন :

لَنْ يَبْرَحَ هَذَا الدِّينُ قَائِمًا، يُقَاتِلُ عَلَيْهِ عِصَابَةٌ مِنَ الْمُسْلِمِينَ، حَتَّى تَقُومَ السَّاعَةُ

এই দীন প্রতিষ্ঠিত থাকবে। এর ওপর মুসলমানদের এক দল লড়াই চালিয়ে যাবে, যতক্ষণ না কিয়ামত সংঘটিত হয়।[11]

সুতরাং কুরআন এবং সহিহ হাদিসের আলোকে অন্য অনেক বৈশিষ্ট্যের পাশাপাশি তিনটি বিষয়কে মুসলিম উম্মাহর অনন্য ও অদ্বিতীয় বৈশিষ্ট্য হিসেবে নির্ধারণ করতে পারি : (ক) দীনের পরিপূর্ণতা, (খ) শরিয়াহর আমূল সংরক্ষণ, (গ) প্রতিযুগে বিজ্ঞ প্রাজ্ঞ সংস্কারকগণের জামাআতের উপস্থিতি। শেষোক্ত শ্রেণিকেই হাদিসের ভাষায় ‘মুজাদ্দিদ’ বলা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে :

إِنَّ اللَّهَ يَبْعَثُ لِهَذِهِ الْأُمَّةِ عَلَى رَأْسِ كُلِّ مِائَةِ سَنَةٍ مَنْ يُجَدِّدُ لَهَا دِينَهَا

নিশ্চয়ই আল্লাহ এই উম্মাহর জন্য প্রতি শতবর্ষের মাথায় এমন সব ব্যক্তিদেরকে প্রেরণ করেন, যারা উম্মাহর জন্য তাদের দীনকে সংস্কার করেন।[12]

দীনের মধ্যে বিকৃতি অনুপ্রবেশ করে প্রান্তিকতার পথ ধরে। একদল দীনের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করে, আরেকদল করে ছাড়াছাড়ি। একদল দেয় উগ্রতার পরিচয়, অন্যদল দেয় চরম শৈথিল্যের পরিচয়। একদল করে সীমালংঘন, অন্যদল করে অবহেলা অবলম্বন। প্রান্তিক মস্তিষ্ক সত্যকে গ্রহণ করতে পারে না। দীন ইনসাফের শিক্ষা দেয়, মধ্যপন্থার শিক্ষা দেয় এবং ভারসাম্যের শিক্ষা দেয়। কিন্তু প্রান্তিক মতাবলম্বীরা দীনের নির্দেশনা গ্রহণ করার পরিবর্তে নিজেদের দৃষ্টিভঙ্গি এবং অবস্থান প্রমাণসিদ্ধ করার জন্য অধিক আগ্রহী থাকে। তারা এর পেছনেই সার্বিক শ্রম ব্যয় করে। তারা কুরআন-সুন্নাহ থেকে জীবন গড়ার শিক্ষা না নিয়ে বল খাটিয়ে কুরআন-সুন্নাহকে নিজেদের অসার মতামতের অনুগামী করার চেষ্টা করে। তারা আল্লাহকে বাদ দিয়ে নিজেদের খেয়ালখুশিকে উপাস্যের আসনে আসীন করে। আল্লাহ বলেন :

أَفَرَأَيْتَ مَنِ اتَّخَذَ إِلَٰهَهُ هَوَاهُ وَأَضَلَّهُ اللَّهُ عَلَىٰ عِلْمٍ وَخَتَمَ عَلَىٰ سَمْعِهِ وَقَلْبِهِ وَجَعَلَ عَلَىٰ بَصَرِهِ غِشَاوَةً فَمَن يَهْدِيهِ مِن بَعْدِ اللَّهِ ۚ أَفَلَا تَذَكَّرُونَ

আপনি কি ওই ব্যক্তিকে দেখেছেন, যে তার খেয়ালখুশিকে নিজ উপাস্য বানিয়ে নিয়েছে এবং জ্ঞান বিদ্যমান থাকা সত্ত্বেও আল্লাহ তাকে পথভ্রষ্ট করেছেন এবং তার কান ও অন্তরে মোহর করে দিয়েছেন আর তার চোখের ওপর পর্দা ফেলে দিয়েছেন? অতএব, আল্লাহর পর এমন কে আছে, যে তাকে সুপথে নিয়ে আসবে? তবুও কি তোমরা শিক্ষা গ্রহণ করবে না?[13]

সে সকল জ্ঞানপাপীরা সত্যকে দিবালোকের মতো স্পষ্টভাবে দেখার পরও নিজেদের জঘন্য মানসিকতার কারণে তা গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকে। যেমন, কুরআনে ইরশাদ হয়েছে :

الَّذِينَ آتَيْنَاهُمُ الْكِتَابَ يَعْرِفُونَهُ كَمَا يَعْرِفُونَ أَبْنَاءَهُمْ وَإِنَّ فَرِيقًا مِنْهُمْ لَيَكْتُمُونَ الْحَقَّ وَهُمْ يَعْلَمُونَ (146) الْحَقُّ مِنْ رَبِّكَ فَلَا تَكُونَنَّ مِنَ الْمُمْتَرِينَ

‘যাদেরকে আমি কিতাব দিয়েছি, তারা নবিকে সেভাবে চেনে, যেভাবে চেনে নিজেদের পুত্রসন্তানদেরকে। আর তাদের একদল তো জেনেবুঝে সত্যকে গোপন করে। সত্য তো তোমার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে আসে। সুতরাং তুমি সন্দেহগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হোয়ো না।’[14]

এক ইসলামকে সামনে রেখে তিন শ্রেণির মানুষের প্রকাশ ঘটে : (ক) দীনের ব্যাপারে সীমালংঘনকারী, (খ) দীনের ব্যাপারে চরম শৈথিল্য প্রদর্শনকারী বা অতি উদারতার নামে আদর্শ বিসর্জনকারী, (গ) ইনসাফ, ভারসাম্য এবং মধ্যপন্থা গ্রহণকারী।

প্রথম দুই শ্রেণির হাতে ইসলামের বিকৃতি ঘটে। তারা শাশ্বত দীনকে ধোঁয়াশায় আচ্ছাদিত করে ফেলে। আর হাদিসে বর্ণিত মুজাদ্দিদরা শেষোক্ত শ্রেণির মধ্য থেকে হয়ে থাকে। তারা দীনকে প্রথম দুই শ্রেণির বিষাক্ত নখর থেকে সংরক্ষণ করে, দীনের বিকৃতিপ্রাপ্ত অংশকে সংস্কার করে মানুষের সামনে বিশুদ্ধ ইসলাম উপস্থাপন করে।

একজন মুজাদ্দিদ নবি ও রাসুলগণের প্রকৃত স্থলাভিষিক্ত ও যথার্থ প্রতিনিধি হয়ে থাকেন। নবিগণের মতো তিনিও আল্লাহপ্রদত্ত বিশেষ ব্যক্তিত্ব লাভ করে থাকেন। জ্ঞান, স্বভাব, বংশ, আচার-ব্যবহার ও জীবনচরিত—সব বিবেচনায়ই তার ব্যক্তিত্ব সত্যানুসন্ধিৎসু মানুষের দৃষ্টি কাড়ে। একজন মুজতাহিদ সমাজের গভীরের দিকে দৃষ্টি দেন। কল্যাণের ঘোষণাপ্রাপ্ত প্রথম তিন যুগের সঙ্গে মিলিয়ে তিনি এর বিশ্লেষণ করেন। এভাবে তিনি প্রথমে এই ফলাফল বের করে আনেন, বর্তমানে সমাজবাসীর দীনদারি ও ইমানের কী অবস্থা। বিভিন্ন মতবাদ ও মতাদর্শের মধ্য দিয়ে ইসলাম এখন কোন অবস্থানে আছে। এরপর তিনি দৃষ্টি ফেলে উদ্ধার করে আনেন, সমাজের মূল ব্যাধি কী। তা কীভাবে সমাজগাত্রে প্রবেশ করেছে, কোন পথ দ্বারা প্রবেশ করেছে এবং দেহের কোন কোন অঙ্গে কতটুকু পরিমাণে ছড়িয়ে পড়েছে। ব্যাধি চিহ্নিত করার পর তিনি এবার কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করার দিকে নিজের সবটুকু মনোযোগ নিবদ্ধ করেন। এভাবে তিনি এমন কর্মপন্থা বের করে আনেন, যার দ্বারা সকল সমস্যা দূর করা যায় এবং সকল বিশৃঙ্খলা রোধ করা যায়। তিনি তখন প্রয়োজনমাফিক তাওহিদ ও আকিদা বিশুদ্ধ করেন, ইবাদত-বন্দেগিতে প্রাণ সঞ্চার করেন, বিদআতের চিহ্ন মুছে ফেলেন, শিরকের সঙ্গে যুদ্ধে অবতীর্ণ হন, কুফরি মতবাদগুলোকে ঝেটিয়ে বিদায় করেন, নবোদ্ভাবিত সকল মতাদর্শ ছুড়ে ফেলেন, জালিমের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে শাশ্বত সত্যের দাওয়াহ করে যান, সুন্নাহর প্রসারে সর্বশক্তি প্রয়োগ করেন, দীনের ব্যাপারে সীমালংঘনকারীদের অপব্যাখ্যার গোমড় ফাঁস করেন, মূর্খদের ভুল নীতি ও রীতিগুলো ধরিয়ে দেন, মানুষের চারিত্রিক পরিশুদ্ধির জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করেন, সমাজে হিদায়াতের আলো এবং বরকতের ধারা ছড়িয়ে দেন। একজন মুজাদ্দিদ বাইরের শত্রু ও ভেতরের শত্রু কারও পরোয়া না করে সবার খোল্লমখোলা সমালোচনা করেন। তাদের ভুলগুলো জনসমক্ষে স্পষ্টভাবে তুলে ধরেন। তিনি সত্যের ওপর এতটা সুদৃঢ় থাকেন যে, কোনো ঘাত-প্রতিঘাত তাকে সামান্যও নাড়াতে পারে না। অর্থের লোভ বা খ্যাতির মোহে তিনি তাড়িত হন না। তিনি তার আদর্শের সঙ্গে কোনোক্রমেই গাদ্দারি করেন না। তিনি জীবনের প্রতিটি ধাপে মানুষের চোখে আঙুল দিয়ে ইসলাম ও জাহিলিয়াতের পার্থক্য তুলে ধরেন।[15] এ ক্ষেত্রে উমর রা.-এর সেই ঐতিহাসিক উক্তি স্মরণ করা যেতে পারে :

‘একটা সময় আসবে, যখন ইসলামের বন্ধনগুলো একে একে খুলে যাবে। কারণ, মুসলিমদের মধ্যে এমন একটি প্রজন্ম বেড়ে উঠবে, যারা জাহিলিয়াত চিনবে না।’[16]

একজন মুজাদ্দিদ তার কালের অতুলনীয় সুদৃঢ় জ্ঞান ও সুগভীর ব্যুৎপত্তির অধিকারী হয়ে থাকেন। তিনি ভাবনা ও স্বভাবের বিচারের নবিগণের মূর্তপ্রতীক হয়ে থাকেন। কালের বেষ্টন থেকে মুক্ত হয়ে তার দৃষ্টি থেকে কুরআন-সুন্নাহর শিক্ষার ওপর। শরিয়াহর দৃষ্টিভঙ্গি ও প্রকৃতি সঙ্গে তিনি থাকেন ভালোভাবে পরিচিত। তাফসির এবং হাদিসশাস্ত্রে তার পাণ্ডিত্য থাকে জ্ঞানীদের মধ্যে স্বীকৃত। ফিকহ, সিরাত এবং ইতিহাসে তার থাকে প্রজ্ঞাপূর্ন ইজতিহাদি দৃষ্টি। তাজকিয়া (আত্মিক পরিশুদ্ধি)-এর ক্ষেত্রে তিনি থাকেন অগ্রগামী। উম্মাহর উত্থান-পতন সম্পর্কে তার থাকে স্বচ্ছ ধারণা। আকিদা ও দর্শন সম্পর্কে তার থাকে গভীর জানাশোনা। শরিয়াহর সঙ্গে সম্পর্কিত সব শাস্ত্রে তার থাকে ঈর্ষণীয় পাণ্ডিত্য এবং ইজতিহাদি পর্যায়ের বিজ্ঞতা। কলব, কলম এবং জবানের ওপর থাকে প্রভাব বিস্তারকারী নিয়ন্ত্রণ। তার দৃষ্টিভঙ্গি ও মানসিকতা থাকে সর্বপ্রকার প্রান্তিকতা থেকে মুক্ত এবং পুরোপুরি ভারসাম্যের গুণে গুণান্বিত। বিগত জাতি-গোষ্ঠীর ইতিহাস সম্পর্কেও তার থাকে ব্যাপক জানাশোনা। অতীতের ভ্রান্ত দলগুলোর ফিতনা সম্পর্কেও তিনি জ্ঞানবান হয়ে থাকেন। বাতিলকে যেকোনো রূপে দেখলেই চিনে ফেলতে পারেন। যুগের সকল দর্শন ও মতবাদকে তিনি সুন্নাহর মাপকাঠিতে মাপার যোগ্যতা রাখেন। সুন্নাহ এবং বিদআত খুব ভালোভাবে পার্থক্য করে চিহ্নিত করতে পারেন। ইখলাস, তাকওয়া, সত্যবাদিতা, সাহসিকতা আমানতদারি, সহনশীলতা, ইবাদতে ধ্যানমগ্নতা, ইমানি গায়রত ইত্যাদি গুণ হয়ে থাকে তার স্বভাববৈশিষ্ট্য। তিনি যেকোনো সমালোচনা সয়ে নেওয়ার শক্তি রাখেন। আল্লাহ এবং তাঁর রাসুলের দুশমনদের বিরুদ্ধে জিহাদ করার চেতনায় তাঁর অন্তর থাকে পরিপূর্ণ। দুচোখে তিনি শাহাদাতের স্বপ্ন দেখেন। অন্তরে আল্লাহর পথে জীবন উৎসর্গ করার বাসনা লালন করেন। সর্বদা তার দৃষ্টি ইসলামের প্রচার, প্রসার ও হেফাজতের দিকে ব্যাপৃত থাকে। তার ভেতরে থাকে আপোষহীন মানসিকতা এবং দীনের জন্য যেকোনো বিপদাপদ ও নির্যাতন সয়ে নেওয়ার মতো পাহাড়সম ধৈর্য। আল্লাহ তাআলা সর্বযুগেই তাঁর প্রিয় বান্দাদেরকে পরীক্ষা করেন, যেমনিভাবে তিনি তাঁর নবিগণকে পরীক্ষা করেছিলেন। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে :

عَنْ أَنَسٍ قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : ” إِذَا أَرَادَ اللَّهُ بِعَبْدِهِ الْخَيْرَ عَجَّلَ لَهُ الْعُقُوبَةَ فِي الدُّنْيَا، وَإِذَا أَرَادَ اللَّهُ بِعَبْدِهِ الشَّرَّ أَمْسَكَ عَنْهُ بِذَنْبِهِ حَتَّى يُوَافِيَ بِهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ، إِنَّ عِظَمَ الْجَزَاءِ مَعَ عِظَمِ الْبَلَاءِ وَإِنَّ اللَّهَ إِذَا أَحَبَّ قَوْمًا ابْتَلَاهُمْ، فَمَنْ رَضِيَ فَلَهُ الرِّضَا، وَمَنْ سَخِطَ فَلَهُ السَّخَطُ

আনাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, আল্লাহ যখন তাঁর বান্দার কল্যাণ সাধন করতে চান তখন দুনিয়াতে তার বিপদ ত্বরান্বিত করেন। আর যখন তিনি তাঁর বান্দার অকল্যাণ চান তখন তাকে তার অপরাধের শাস্তি প্রদান করা থেকে বিরত থাকেন। তারপর কিয়ামতের দিন তিনি তাকে পুরোপুরি শাস্তি দেন। বিপদ যত মারাত্মক হবে, প্রতিদানও তত মহান হবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ যখন কোনো সম্প্রদায়কে ভালোবাসেন, তিনি তাদেরকে (বিপদে ফেলে) পরীক্ষা করেন। তখন যে সন্তুষ্ট থাকে, তার জন্য রয়েছে সন্তুষ্টি। আর যে অসন্তুষ্ট হয়, তার জন্য রয়েছে অসন্তুষ্টি।’[17]

রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেন :  

إِنَّ مِنْ أَشَدِّ النَّاسِ بَلَاءً الْأَنْبِيَاءَ، ثُمَّ الَّذِينَ يَلُونَهُمْ، ثُمَّ الَّذِينَ يَلُونَهُمْ، ثُمَّ الَّذِينَ يَلُونَهُمْ

‘নিশ্চয় সর্বাপেক্ষা কঠিন বিপদে আক্রান্ত হয় নবিগণ। এরপর ক্রমান্বয়ে যে তাদের নিকটবর্তী, এরপর যে নিকটবর্তী এবং এরপর যে নিকটবর্তী।’[18]

হাদিসটি অন্যত্র এভাবে এসেছে :

عَنْ مُصْعَبِ بْنِ سَعْدٍ ، عَنْ أَبِيهِ قَالَ : قُلْتُ : يَا رَسُولَ اللَّهِ، أَيُّ النَّاسِ أَشَدُّ بَلَاءً ؟ قَالَ : ” الْأَنْبِيَاءُ، ثُمَّ الْأَمْثَلُ فَالْأَمْثَلُ، فَيُبْتَلَى الرَّجُلُ عَلَى حَسَبِ دِينِهِ، فَإِنْ كَانَ دِينُهُ صُلْبًا اشْتَدَّ بَلَاؤُهُ، وَإِنْ كَانَ فِي دِينِهِ رِقَّةٌ ابْتُلِيَ عَلَى حَسَبِ دِينِهِ، فَمَا يَبْرَحُ الْبَلَاءُ بِالْعَبْدِ حَتَّى يَتْرُكَهُ يَمْشِي عَلَى الْأَرْضِ مَا عَلَيْهِ خَطِيئَةٌ

মুসআব ইবনু সাদ রহ. হতে তার বাবার সূত্রে বর্ণিত আছে, তিনি (সাদ রা.) বলেন, আমি প্রশ্ন করলাম, হে আল্লাহর রাসুল ﷺ, মানুষের মাঝে কার বিপদের পরীক্ষা সবচেয়ে কঠিন হয়? তিনি বললেন,  নবিদের বিপদের পরীক্ষা, তারপর যারা নেককার তাদের, এরপর যারা নেককার তাদের বিপদের পরীক্ষা। মানুষকে তার ধর্মানুরাগের অনুপাত অনুসারে পরীক্ষা করা হয়। তুলনামূলকভাবে যে লোক বেশি ধাৰ্মিক, তার পরীক্ষাও সে অনুপাতে কঠিন হয়ে থাকে। আর যদি কেউ তার দীনের ক্ষেত্রে শিথিল হয়ে থাকে তাহলে তাকে সে মোতাবেক পরীক্ষা করা হয়। অতএব, বান্দার ওপর বিপদাপদ লেগেই থাকে, অবশেষে তা তাকে এমন অবস্থায় ছেড়ে দেয় যে, সে জমিনে চলাফেরা করে অথচ তার কোন গুনাহই থাকে না।[19]

আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত রয়েছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন :

مَا يَزَالُ الْبَلاَءُ بِالْمُؤْمِنِ وَالْمُؤْمِنَةِ فِي نَفْسِهِ وَوَلَدِهِ وَمَالِهِ حَتَّى يَلْقَى اللَّهَ وَمَا عَلَيْهِ خَطِيئَةٌ

মুমিন নারী-পুরুষের ওপর—তাদের জীবন, সন্তান ও ধন-সম্পদের ক্ষেত্রে অনবরত বিপদাপদ লেগেই থাকে। সবশেষে আল্লাহ তাআলার সাথে সে গুনাহমুক্ত অবস্থায় মিলিত হয়।[20]

আল্লাহ তাআলা এ সকল বিপদাপদের মাধ্যমে বান্দার ইমান সুদৃঢ় করেন এবং তাদের মর্যাদা বৃদ্ধি করেন। আল্লাহ বলেন :

أَمْ حَسِبْتُمْ أَنْ تَدْخُلُوا الْجَنَّةَ وَلَمَّا يَأْتِكُمْ مَثَلُ الَّذِينَ خَلَوْا مِنْ قَبْلِكُمْ مَسَّتْهُمُ الْبَأْسَاءُ وَالضَّرَّاءُ وَزُلْزِلُوا حَتَّى يَقُولَ الرَّسُولُ وَالَّذِينَ آمَنُوا مَعَهُ مَتَى نَصْرُ اللَّهِ أَلَا إِنَّ نَصْرَ اللَّهِ قَرِيبٌ

‘তোমরা কি ভেবে রেখেছ, তোমরা এমনি এমনি জান্নাতে প্রবেশ করবে, অথচ এখনো পর্যন্ত তোমাদের ওপর সেই রকম অবস্থা আসেনি, যেমনটা এসেছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের ওপর। তাদের ওপর এসেছিল অর্থ-সংকট ও দুঃখ-কষ্ট এবং তাদেরকে করা হয়েছিল প্রকম্পিত, এমনকি রাসুল এবং তাঁর ইমানদার সঙ্গীগণ বলে উঠেছিল, আল্লাহর সাহায্য কখন আসবে। শোনো, নিশ্চয়ই আল্লাহর সাহায্য নিকটবর্তী।’[21]

إِنْ يَمْسَسْكُمْ قَرْحٌ فَقَدْ مَسَّ الْقَوْمَ قَرْحٌ مِثْلُهُ وَتِلْكَ الْأَيَّامُ نُدَاوِلُهَا بَيْنَ النَّاسِ وَلِيَعْلَمَ اللَّهُ الَّذِينَ آمَنُوا وَيَتَّخِذَ مِنْكُمْ شُهَدَاءَ وَاللَّهُ لَا يُحِبُّ الظَّالِمِينَ (140) وَلِيُمَحِّصَ اللَّهُ الَّذِينَ آمَنُوا وَيَمْحَقَ الْكَافِرِينَ (141) أَمْ حَسِبْتُمْ أَنْ تَدْخُلُوا الْجَنَّةَ وَلَمَّا يَعْلَمِ اللَّهُ الَّذِينَ جَاهَدُوا مِنْكُمْ وَيَعْلَمَ الصَّابِرِينَ

‘তোমাদের যদি আঘাত লেগে থাকে তবে তাদেরও অনুরূপ আঘাত ইতিপূর্বে লেগেছিল। এ তো দিন-পরিক্রমা, যা আমি মানুষের মধ্যে পালাক্রমে বদলাতে থাকি। এর উদ্দেশ্য ছিল মুমিনদেরকে পরীক্ষা করা এবং তোমাদের মধ্যে কিছু লোককে শহিদ করা। আর আল্লাহ জালিমদেরকে ভালোবাসেন না। এবং উদ্দেশ্য ছিল এটাও যে, আল্লাহ যেন মুমিনদেরকে পরিশুদ্ধ করতে পারেন ও কাফিরদেরকে সম্পূর্ণ নিশ্চিহ্ন করে ফেলেন। তোমরা কি ভেবে রেখেছ যে, তোমরা এমনিতেই জান্নাতে পৌঁছে যাবে, অথচ আল্লাহ এখনো পর্যন্ত তোমাদের মধ্য হতে সেই সকল লোককে যাচাই করে দেখেননি, যারা জিহাদ করবে এবং তাদেরকেও যাচাই করে দেখেননি, যারা অবিচল থাকবে।’[22]

সহিহ বুখারিতে বর্ণিত হয়েছে :

عَنْ عَبْدِ اللَّهِ، قَالَ دَخَلْتُ عَلَى رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَهْوَ يُوعَكُ فَقُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّكَ تُوعَكُ وَعْكًا شَدِيدًا‏.‏ قَالَ ‏”‏ أَجَلْ إِنِّي أُوعَكُ كَمَا يُوعَكُ رَجُلاَنِ مِنْكُمْ ‏”‏‏.‏ قُلْتُ ذَلِكَ أَنَّ لَكَ أَجْرَيْنِ قَالَ ‏”‏ أَجَلْ ذَلِكَ كَذَلِكَ، مَا مِنْ مُسْلِمٍ يُصِيبُهُ أَذًى شَوْكَةٌ فَمَا فَوْقَهَا، إِلاَّ كَفَّرَ اللَّهُ بِهَا سَيِّئَاتِهِ، كَمَا تَحُطُّ الشَّجَرَةُ وَرَقَهَا ‏”

আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ ﷺ-এর কাছে গেলাম। তখন তিনি জ্বরে ভুগছিলেন। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল, আপনি তো কঠিন জ্বরে আক্রান্ত! তিনি বললেন, হ্যাঁ। তোমাদের দুব্যাক্তি যতটুকু জ্বরে আক্রান্ত হয়, আমি একাই ততটুকু জুরে আক্রান্ত হই। আমি বললাম এটি এ জন্য যে, আপনার জন্য রয়েছে দ্বিগুণ সাওয়াব। তিনি বললেন হ্যাঁ, ব্যাপারটি এমনই। কেননা, যেকোনো মুসলিম বিপদে আক্রান্ত হয়, চাই একটি কাঁটা (বিদ্ধ হওয়া) কিংবা আরও ক্ষুদ্র কিছু হোক না কেন, এর দ্বারা আল্লাহ তার গুনাহগুলোকে মুছে দেন, যেভাবে গাছ থেকে পাতাগুলো ঝরে যায়।[23]


[1] সুরা জারিয়াত : ৫৬

[2] সুরা বাকারাহ : ৩০

[3] সহিহ বুখারি

[4] সহিহ বুখারি

[5] সহিহ বুখারি

[6] সহিহ বুখারি

[7] সহিহ মুসলিম ও সুনানুত তিরমিজি

[8] সুরা হিজর : ৯

[9] শারহু মুশকিলিল আসার : ৩৮৮৪; শুয়াবুল ইমান, বাইহাকি; মুকাদ্দিমাতুত তামহিদ

[10] সহিহ বুখারি, হাদিস : ১০০; সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২৬৭৩; মুসনাদু আহমাদ, হাদিস : ৬৮৯৬; আস-সুনানুল কুবরা, নাসায়ি, হাদিস: ৫৯০৮; আল-মুসান্নাফ, আবদুর রাযযযাক, হাদিস : ২০৪৭১

[11] সহিহ মুসলিম

[12] সুনানু আবি দাউদ। হাদিসটি সহিহ এবং মাশহুর।

[13] সুরা জাসিয়া : ২৩

[14] সুরা বাকারাহ : ১৪৬-১৪৭

[15] প্রসঙ্গত দ্রষ্টব্য—তাজদিদে দীনে কামেল, শাইখ আবদুল বারি নাদাবি : ৪৫-৪৬; মাজালিসে হাকিমুল ইসলাম : ২১৬; মাজাহিরে হক : ১/৪৯৩ 

[16] ফারায়িদুল কালাম লিল খুলাফায়িল কিরাম : ১৪৪ 

[17] সুনানুত তিরমিজি : ২৩৯৬। হাদিসটি হাসান।

[18] মুসনাদু আহমাদ : ২৭০৭৯

[19] সুনানুত তিরমিজি : ২৩৯৮

[20] সুনানুত তিরমিজি : ২৩৯৯

[21] সুরা বাকারাহ : ২১৪

[22] সুরা আলে ইমরান : ১৪০-১৪২

[23] সহিহ বুখারি : ৫৬৪৮

Share This