প্রথমে শাইখুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়্যাহ রহ.-এর একটি ফাতওয়া দ্বারা শুরু করি—

أما قتال الدفع عن الحرمة والدين فواجب إجماعاً، فالعدو الصائل الذي يفسد الدين والدنيا لا شيء أوجب بعد الإيمان من دفعه، فلا يشترط له شرط، بل يدفع بحسب الإمكان

সম্ভ্রম ও দীন প্রতিরক্ষায় লড়াই করা সকলের ঐকমত্যে অপরিহার্য৷ কারণ, যেই আক্রমণকারী শত্রু মুসলমানদের দীন ও দুনিয়া উভয়টি ক্ষতিগ্রস্ত করে, ইমান আনার পর তাকে প্রতিহত করার চেয়ে বড় কোনো অপরিহার্য বিষয় নেই৷ তাই তা ওয়াজিব হওয়ার জন্য কোনো শর্ত নেই; বরং সাধ্যমতো তাদের প্রতিহত করা হবে৷[1]

একজন মুসলমান অপর কোনো মুসলমানকে নির্যাতিত হতে দেখেও নির্লিপ্ততা অবলম্বন করবে—এটা কখনোই ভাবা যায় না। মুসলমান তো সেই জাতি, যারা একজন নারীর মর্যাদাহানি হতে দেখে কুফফারের বিরুদ্ধে নাঙা তলোয়ার হাতে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। এই উম্মাহর সবচে জালিম হিসেবে খ্যাত হাজ্জাজ বিন ইউসুফের মতো একজন ব্যক্তিও মাজলুম নারীর আর্তনাদকে উপেক্ষা করতে পারেনি। সর্বোচ্চ ঝুঁকি নিয়ে তিন-তিনটি বাহিনী পাঠিয়ে রাজা দাহিরের বন্দিশালা থেকে মাজলুমদের মুক্ত করেছে এবং সিন্ধু পর্যন্ত ইসলামের শুভ্র নিশান উড়িয়েছে। সকল মুসলমান এক দেহের মতো। দেহের কোনো অঙ্গ আক্রান্ত হলে গোটা দেহই তার সঙ্গে ব্যথা ও বিনিদ্রায় শরিক থাকে। প্রতিরোধ প্রচেষ্টায় নিজের জন্মদাত্রী মা এবং অজানা অপরিচিতা আরেকজন মুসলিম মা’র মধ্যে পার্থক্য না করাই ইসলামের শিক্ষা। রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেন :

مَا مِنَ امْرِئٍ يَخْذُلُ امْرَأً مُسْلِمًا فِي مَوْضِعٍ تُنْتَهَكُ فِيهِ حُرْمَتُهُ وَيُنْتَقَصُ فِيهِ مِنْ عِرْضِهِ، إِلَّا خَذَلَهُ اللَّهُ فِي مَوْطِنٍ يُحِبُّ فِيهِ نُصْرَتَهُ، وَمَا مِنَ امْرِئٍ يَنْصُرُ مُسْلِمًا فِي مَوْضِعٍ يُنْتَقَصُ فِيهِ مِنْ عِرْضِهِ وَيُنْتَهَكُ فِيهِ مِنْ حُرْمَتِهِ، إِلَّا نَصَرَهُ اللَّهُ فِي مَوْطِنٍ يُحِبُّ نُصْرَتَهُ

যে ব্যক্তি এমন স্থানে অপর মুসলিমের সাহায্য পরিত্যাগ করে, যেখানে তার সম্ভ্রম-মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হয়, আল্লাহ তাকে এমন স্থানে সাহায্য করা থেকে বিমুখ থাকবেন, যেখানে সে তাঁর সাহায্য কামনা করে। আর যে ব্যক্তি কোনো মুসলিমের সম্ভ্রম-মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হওয়ার স্থানে তাকে সাহায্য করে, আল্লাহ তাকে এমন স্থানে সাহায্য করবেন, যেখানে সে তাঁর সাহায্য প্রত্যাশা করে।[2]

একজন মুসলমান তার ভাইকে বিপদাক্রান্ত দেখে সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কখনোই তার সাহায্য পরিত্যাগ করতে পারে না। হাদিসে এসেছে :

لَا يَقِفَنَّ أَحَدُكُمْ مَوْقِفًا يُقْتَلُ فِيهِ رَجُلٌ ظُلْمًا، فَإِنَّ اللَّعْنَةَ تَنْزِلُ عَلَى مَنْ حَضَرَ حِينَ لَمْ يَدْفَعُوا عَنْهُ، وَلَا يَقِفَنَّ أَحَدٌ مِنْكُمْ مَوْقِفًا يُضْرَبُ فِيهِ أَحَدٌ ظُلْمًا، فَإِنَّ اللَّعْنَةَ تَنْزِلُ عَلَى مَنْ حَضَرَهُ حِينَ لَمْ يَدْفَعُوا عَنْهُ

তোমাদের কেউ যেন এমন জায়গায় অবস্থান না করে, যেখানে কোনো ব্যক্তিকে জুলুমবশত হত্যা করা হয়। কারণ, যারা সেখানে উপস্থিত থেকেও তার প্রতিরোধ না করে, তাদের ওপর অভিশাপ বর্ষিত হয়। তোমাদের কেউ যেন এমন জায়গায় অবস্থান না করে, যেখানে কোনো ব্যক্তিকে জুলুমবশত প্রহার করা হয়। কারণ, যারা সেখানে উপস্থিত থেকেও তার প্রতিরোধ না করে, তাদের ওপর অভিশাপ বর্ষিত হয়।[3]

المُسْلِمُ أَخُو المُسْلِمِ لاَ يَظْلِمُهُ وَلاَ يُسْلِمُهُ، وَمَنْ كَانَ فِي حَاجَةِ أَخِيهِ كَانَ اللَّهُ فِي حَاجَتِهِ، وَمَنْ فَرَّجَ عَنْ مُسْلِمٍ كُرْبَةً، فَرَّجَ اللَّهُ عَنْهُ كُرْبَةً مِنْ كُرُبَاتِ يَوْمِ القِيَامَةِ، وَمَنْ سَتَرَ مُسْلِمًا سَتَرَهُ اللَّهُ يَوْمَ القِيَامَةِ

মুসলমান মুসলমানের ভাই। সে নিজে তার ওপর জুলুম করবে না এবং তাকে জালিমের হাতে সোপর্দ করবে না। (অন্য বর্ণনায় রয়েছে—তার সহযোগিতা পরিত্যাগ করবে না।)[4] যে-কেউ তার ভাইয়ের প্রয়োজন পূরণ করবে, আল্লাহ তার প্রয়োজন পূরণ করবেন। যে-কেউ তার মুসলিম ভাইয়ের বিপদ দূর করবে, আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিন তার বিপদসমূহ দূর করবেন। যে ব্যক্তি কোনো মুসলমানের দোষ ঢেকে রাখবে, আল্লাহ কিয়ামতের দিন তার দোষ ঢেকে রাখবেন।[5]

মুসলমানরা যদি আল্লাহর কোনো বান্দাকে মাজলুম হতে দেখেও জালিমকে প্রতিহত না করে, তাহলে আল্লাহ তাদের সকলকে আজাবে আক্রান্ত করবেন। মাজলুমের সহায়তা পরিত্যাগ করার দ্বারা তারা নিজেরাও জালিম বলে বিবেচিত হবে। হাদিসে এসেছে :

إِنَّ النَّاسَ إِذَا رَأَوْا الظَّالِمَ فَلَمْ يَأْخُذُوا عَلَى يَدَيْهِ أَوْشَكَ أَنْ يَعُمَّهُمُ اللَّهُ بِعِقَابٍ مِنْهُ.

মানুষ যদি কোনো অত্যাচারীকে অত্যাচারে লিপ্ত দেখেও তার দু-হাত চেপে ধরে তাকে প্রতিহত না করে, তাহলে আল্লাহ তাআলা অতি শীঘ্রই তাদের সকলকে তার ব্যাপক শাস্তিতে নিক্ষিপ্ত করবেন।[6]

আল্লাহ তাআলা মুমিন বান্দাদের সম্বোধন করে বলেন :

وَمَا لَكُمْ لَا تُقَاتِلُونَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَالْمُسْتَضْعَفِينَ مِنَ الرِّجَالِ وَالنِّسَاءِ وَالْوِلْدَانِ الَّذِينَ يَقُولُونَ رَبَّنَا أَخْرِجْنَا مِنْ هَذِهِ الْقَرْيَةِ الظَّالِمِ أَهْلُهَا وَاجْعَلْ لَنَا مِنْ لَدُنْكَ وَلِيًّا وَاجْعَلْ لَنَا مِنْ لَدُنْكَ نَصِيرًا

তোমাদের জন্য এর কী বৈধতা আছে যে, তোমরা আল্লাহর পথে সেই সকল অসহায় নর-নারী ও শিশুদের জন্য লড়াই করবে না, যারা দুয়া করছে, হে আমাদের প্রতিপালক, আমাদের এই জনপদ থেকে—যার অধিবাসীরা জালিম—অন্যত্র সরিয়ে নিন এবং আমাদের জন্য আপনার পক্ষ হতে একজন অভিভাবক বানিয়ে দিন এবং আমাদের জন্য আপনার পক্ষ হতে একজন সাহায্যকারী দাঁড় করিয়ে দিন।[7]

মাজলুমের দুয়া সরাসরি আল্লাহর কাছে পৌঁছে যায়। কোনো কিছুই তার সামনে অন্তরায় হয় না। এমনকি সে যদি পাপাচারীও হয়, তবুও আল্লাহ তার দুয়া কবুল করেন। মাজলুমের দুয়া শুধু জালিমের ওপরই পতিত হয় না; বরং যারা সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও তাদের সহযোগিতা থেকে বিমুখ থাকে, তাদের ওপরও পতিত হয়। ইরশাদ হয়েছে :

اتَّقِ دَعْوَةَ المَظْلُومِ، فَإِنَّهَا لَيْسَ بَيْنَهَا وَبَيْنَ اللَّهِ حِجَابٌ

মাজলুমের ফরিয়াদকে ভয় করবে। কেননা, তার ফরিয়াদ এবং আল্লাহর মাঝে কোনো পর্দা থাকে না।[8]

دَعْوَةُ الْمَظْلُومِ مُسْتَجَابَةٌ، وَإِنْ كَانَ فَاجِرًا فَفُجُورُهُ عَلَى نَفْسِهِ

মাজলুমের দুয়ায় সাড়া দেওয়া হয়। এমনকি যদি সে পাপাচারী হয়, তাহলে তার পাপাচার তার নিজের ওপর আপতিত হবে; (কিন্তু সর্বাবস্থায় তার দুয়া কবুল করা হবে)।[9]

আমরা যদি আমাদের নিজেদের অবস্থা বিবেচনা করি, তাহলে দেখতে পাই, আমাদের সামনে দুটো অপরিহার্য বিষয় দেখা দিয়েছে :

  1. নিজেদের দেশ হিসেবে আশৈশব আমরা যেই ভূখণ্ডকে চিনে আসছি—যার মধ্যে আমাদের বেড়ে ওঠা এবং যার সঙ্গে আমাদের অসংখ্য স্মৃতি জড়িত—সেই ভূমিতে পূর্ণাঙ্গ ইসলামি শরিয়াহ প্রতিষ্ঠা করা।
  2. পার্শ্ববর্তী দেশ—জাতীয়তাবাদের বিভক্তি ও সীমান্তের কাঁটাতার যদিও তা আমাদের থেকে আলাদা করে রেখেছে। কিন্তু আমরা যখন ইসলামি আকিদায় বিশ্বাসী হব, তখন আমাদের বিশ্বাস এটাই হবে যে, পৃথিবী আল্লাহর। সুতরাং চীন আমাদের। ভারত আমাদের। আরব আমাদের। পাশ্চাত্য আমাদের। গোটা পৃথিবীটাই আমাদের। কারণ, এ সবকিছুর অধিকারী একমাত্র তিনি। আর আমরা তাঁর বান্দা। তো পার্শ্ববর্তী দেশসমূহে মুসলিমরা যখন জালিম কুফফার কর্তৃক আক্রান্ত হবে, তখন এই আগ্রাসী শত্রুদের প্রতিরোধ করে মাজলুম মানবতাকে সাহায্য করা ইমান আনার পর আমাদের ওপর সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ফরজ।

মনে রাখতে হবে, আমাদের লড়াই মূলত কুফরের ইমামদের বিপক্ষে। আমরা কুরআনের নির্দেশ ও নববি মানহাজের অনুসরণে ‘সাপের মাথা’ যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য কুফরি শক্তির কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রসমূহের বিপক্ষে লড়াইয়ে অবতীর্ণ হয়েছি। কারণ, আমরা প্রথমে কুফরের মেরুদণ্ড ভেঙে দিতে চাই; যাতে করে তারা আর মুসলিম উম্মাহর বিরুদ্ধে কোনোদিনও পিঠ সোজা করে দাঁড়াতে না পারে। কিন্তু তাই বলে আমাদের জন্য নিকটবর্তী মাজলুম উম্মাহর সহযোগিতা পরিত্যাগ করা কোনোভাবেই বৈধ নয়। নিশ্চয়ই আরাকান ও আসামের নির্যাতিত মুসলমানদের জন্য আমরা আল্লাহর কাছে জিজ্ঞাসিত হব। সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও ভারত ও মিয়ানমার নামক জালিম রাষ্ট্রপক্ষের জুলুম প্রতিহত না করে আমরা নিজেরাও জালিমদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাচ্ছি। এভাবে আমরা ক্রমশ আল্লাহর সাহায্য থেকে দূরে সরে যাচ্ছি। আমরা পৃথিবীতে তার প্রতিনিধিত্ব করার উপযুক্ততা হারিয়ে ফেলছি। কারণ, আমাদের নির্লিপ্ততা দেখে মাজলুমের বুক ফেঁটে যে আর্তনাদ বের হচ্ছে, নিশ্চয়ই তা সরাসরি রহমানের আরশকেও কাঁপিয়ে তুলছে। আমরা ইসলামি শরিয়াহ প্রতিষ্ঠার অজুহাতে উম্মাহর সাহায্য থেকে যদি নিজেদের হাত গুটিয়ে নিই, তবে কি আমরা আগামীতে কবরস্থানে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করব? দীন প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা তো উম্মাহর জন্য। উম্মাহর অস্তিত্বই যদি পৃথিবীতে অবশিষ্ট না থাকে, তাহলে আমাদের প্রতিষ্ঠিত দীনের উপকারিতাই বা কে ভোগ করবে? আমরা তো এখানে বসে এখনো প্রস্তুতির ধাপই অতিক্রম করতে পারছি না; কিন্তু চারিদিকে উম্মাহ আজ ক্ষতবিক্ষত। ধর্ষিতা নারীর কাতর চিৎকারে আকাশও যেন বিদীর্ণ হতে চলছে। অপরদিকে প্রতিনিয়ত জালিমের প্রাসাদ থেকে গগনবিদারী হাসির হররা ছুটছে। আমাদের চতুর্দিকই ইতিমধ্যে আক্রান্ত হয়ে পড়েছে। সেদিন হয়তো খুব দূরে নয়, যেদিন সরাসরি আমরাও আক্রান্ত হব। আমরা মাজলুমের সাহায্য পরিত্যাগ করলে আল্লাহও আমাদের সাহায্য পরিত্যাগ করবেন—এটা তার ঘোষণা। আজ তাদের আর্তনাদে যদি আমাদের বুক না কাঁপে, কাল আমাদের আর্তনাদেও কারও বুক কাঁপবে না।

কৌশলগত বিবেচনায়ও পার্শ্ববর্তী দেশসমূহের জালিমদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ গড়ে তোলা সশস্ত্র ইসলামি আন্দোলনগুলোর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, একটি সশস্ত্র গেরিলা আন্দোলন তখনই সফলতার মুখ দেখে, যখন তার পেছনে জনসমর্থন থাকে। এসব দেশে প্রস্তুতিপর্বে বা দাওয়াহ প্রসঙ্গে আমরা যখন আমাদের লক্ষ্য মানুষের সামনে স্পষ্ট করতে চাই, তখন অনেক সময় তা পুরোপুরি স্পষ্ট হয়ে ওঠে না। বিরুদ্ধবাদীদের উপর্যুপরি প্রচারণা এবং অনেক অবুঝ জ্ঞানীগুণীর ভিন্ন সুরের কথাবার্তার কারণে মানুষের সামনে ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়ে যায়। যার কারণে অনেকেই মানহাজ গ্রহণ করতে দ্বিধান্বিত হয়ে পড়ে। কিন্তু মাজলুম মানবতার সাহায্য, হৃত গৌরব ও মর্যাদা পুনরুদ্ধার এবং আগ্রাসী শত্রুর প্রতিরোধ এমন বিষয়, যে ব্যাপারে সচেতন কোনো মুসলিমের ভিন্নমত নেই। সুতরাং এই সুযোগ কাজে লাগালে জনসমর্থন আদায় ও জনমত গড়ে তোলার ক্ষেত্রে তা অনন্য নজির স্থাপন করত। উম্মাহর মধ্যে হারিয়ে যাওয়া জিহাদি চেতনা পুনরায় জেগে উঠত। উপরন্তু এর দ্বারা মুসলমানদের ‘সেইফ জোন’ও তৈরি হতো। আল্লাহ চাইলে স্বল্প পরিসরের ইমারাহও হয়তো উম্মাহ পেয়ে যেত; যেখানে শরিয়াহর বিধিবিধান শতভাগ প্রতিষ্ঠিত থাকত।

নিশ্চয়ই আল্লাহ জালিমদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেবেন। কিন্তু তিনি আমাদের হাতে তাদেরকে সেই শাস্তি দেবেন। আল্লাহ বলেন :

قَاتِلُوهُمْ يُعَذِّبْهُمُ اللَّهُ بِأَيْدِيكُمْ وَيُخْزِهِمْ وَيَنصُرْكُمْ عَلَيْهِمْ وَيَشْفِ صُدُورَ قَوْمٍ مُّؤْمِنِينَ 

তোমরা তাদের সঙ্গে লড়াই করো। আল্লাহ তোমাদের হাতে তাদেরকে শাস্তি দেবেন। তাদেরকে অপদস্থ করবেন এবং তোমাদেরকে তাদের ওপর বিজয়ী করবেন আর তিনি মুমিন সম্প্রদায়ের অন্তর প্রশান্ত করবেন। (সুরা তাওবা : ১৪)

আমাদের কাজ শুধু চেষ্টা করা। হাদিসের ঘোষণা অনুসারে আমরা আল্লাহর দিকে এক হাত অগ্রসর হলে তিনি আমাদের দিকে দু-হাত অগ্রসর হবেন। আমরা তার দিকে হেঁটে হেঁটে অগ্রসর হলে তিনি আমাদের দিকে দৌড়ে দৌড়ে অগ্রসর হবেন। আমাদেরকে শুরু করার জন্য আদেশ করা হয়েছে; বিজয়ী হওয়ার জন্য আদেশ করা হয়নি। আমরা চাইলেই বিজয়ী হতে পারব না। বিজয় আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত। কিন্তু নিজেদের সাধ্যে যা আছে, আমরা যদি তা ব্যয় না করি, তাহলে আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে কখনোই ক্ষমা করবেন না এবং তিনি এমন অকর্মণ্য বান্দাদেরকে তার দীনের সাহায্যে প্রতিষ্ঠিত করবেন না।

আর ভুলে গেলে চলবে না, ইসলাম জিন্দা হয় হিজরত ও নুসরতের দ্বারা। আমরা যদি মুহাজির হতে পারি এবং এই মাজলুম মুসলমানরাও সাধ্যমতো আমাদের নুসরত করে, তাহলে ইনশাআল্লাহ এসব অঞ্চলে ইসলাম প্রতিষ্ঠা হতে খুব বেশি সময় লাগবে না। তথাপি এই মাজলুমদের মধ্য হতে মুজাহিদ ও আনসার তৈরি করে নিতেও খুব বেশি বেগ পেতে হবে না। কারণ, তাদের গায়ে এখনো লেগে রয়েছে রক্তের দাগ। জালিমের লকলকে জিহ্বা ও হিংস্র নখর তাদের চোখের সামনে এখনো জ্বলজ্বল করে জ্বলে। তাদের রক্তে প্রতিনিয়ত আগুন জ্বলে। শাহাদাতের অদম্য বাসনা ও প্রতিশোধের দৃঢ় প্রতিজ্ঞা তাদেরকে প্রতিমুহূর্তে তাড়িত করে। তাদের দু-চোখে নিরাপদ ও সুন্দর এক পৃথিবীর স্বপ্ন ভাসে। আজ এই মাজলুম মুসলমানদের দুর্দিনে মুসলিম মুজাহিদরা যদি তাদের পাশে না দাঁড়ায়, তাহলে ইতিহাস কখনোই তাদের ক্ষমা করবে না। সাধারণ মানুষজনও মুজাহিদদের ব্যাপারে খুব বেশি সুধারণা রাখতে পারবে না। সুতরাং এখনই সময় জেগে ওঠার। নিজেদের ভোতা বিবেককে জাগ্রত করার। দাওয়াহ, ই‘দাদ ও রিবাতের পাশাপাশি সরাসরি কিতালে অবতীর্ণ হওয়ার। জালিমকে তার উপযুক্ত প্রাপ্য বুঝিয়ে দিয়ে ধর্ষিতা নারী, সন্তানহারা মা, স্বামীহারা স্ত্রী ও নিষ্পাপ এতিম শিশুদের মুখে হাসি ফুটানোর।



[1] আল-ফাতাওয়াল মিসরিয়্যাহ : ৪/৫০৮

[2] সুনানু আবি দাউদ : ৪৮৮৪; মুসনাদু আহমাদ : ১৬৩৬৮

[3] আল-মুজামুল কাবির, তাবারানি : ১১৬৭৫

[4] সহিহ মুসলিম : ২৫৬৪; মুসনাদু আহমাদ : ২০২৭৮

[5] সহিহ বুখারি : ২৪৪২

[6] সুনানুত তিরমিজি : ২১৬৮; সুনানু আবি দাউদ : ৪৩৩৮  

[7] সুরা নিসা : ৭৫

[8] সহিহ বুখারি : ২৪৪৮

[9] মুসনাদু আহমাদ : ৮৭৯৫

Share This