বিভিন্ন সময়ে অনেক সুহৃদ ভাই ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, বিশেষত বেসরকারি (কওমি) মাদরাসায় দান করার আগ্রহ প্রকাশ করেন। কোথায় দান করলে ভালো হবে, এ ব্যাপারে পরামর্শ চান। তাদেরকে সাধারণত স্পেসিফিক কোনো প্রতিষ্ঠানের নাম না বলে দুটো বিষয়ের প্রতি লক্ষ রাখার পরামর্শ দিই :
১. মূলধারার যেসব প্রতিষ্ঠান দেশব্যাপী কালেকশন করে, তাদের প্রায় সবারই আর্থিকভাবে মোটামুটি ভালো অবস্থান আছে। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানের তো উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ব্যাংক ব্যালেন্সও আছে। হ্যাঁ, ব্যতিক্রমও যে একেবারে নেই, তা নয়। তবে সর্বোপরি তাদের কিছু না কিছু সাপোর্ট সবারই আছে।
এছাড়াও যেসব প্রতিষ্ঠান নিজেদের আত্মমর্যাদা বিলিয়ে পথেঘাটে, মাঠেহাঁটে, গাড়িঘোড়ায় ছোট ছোট শিশুদের ব্যবহার করে অমানবিক কালেকশন করে, তাদেরও প্রয়োজন সাধারণত পূরণ হয়েই যায়।
অন্যদিকে আল্লাহর দুনিয়ায় এমন কিছু আদর্শবাহী প্রতিষ্ঠান আছে, যারা বেলার পর বেলা না খেয়ে থাকলেও কখনো কারও কাছে হাত পাতে না। আল্লাহ ছাড়া আর কারও সামনে নিজেদের প্রয়োজনগুলো তুলে ধরে না। এমনকি কিছু প্রতিষ্ঠান তো এরূপও আছে, তারা যদি শুধু নিজেদের অভাবের ব্যাপারে মাদরাসার কল্যাণকামী শ্রেণিকে জাস্ট ইঙ্গিতও দেয়, তাদের নিমিষেই লাখ লাখ টাকা হাতে চলে আসে। কিন্তু এতদ্সত্ত্বেও তারা কখনোই কারও কাছে নত হয় না। কুরআনের ভাষায় : ‘লা ইয়াসআলুনান নাসা ইলহাফা’।
কিন্তু খোঁজ নিলে দেখা যায়, এজাতীয় প্রতিষ্ঠান থেকেই দীনের প্রকৃত কাণ্ডারি গড়ে ওঠে, যারা শুধু ইলমচর্চাই করেই ক্ষান্তি দেয়নি; বরং ইমান, ইলম ও আখলাকের মধ্যে উত্তম সমন্বয়ের অনুশীলন করে এসেছে। এদেশের শীর্ষস্থানীয় কিছু প্রতিষ্ঠানের নামও এক্ষেত্রে উল্লেখ করা যাবে, যারা এই আদর্শের ওপর অবিচল থেকে আজ নিজেদেরকে অনন্য উচ্চতায় আসীন করেছে।
আমাদের উচিত, খুঁজে খুঁজে এসব শাদা মনের মানুষগুলোর পাশে দাঁড়ানো। তাদের পাশে এসে তো আর হলুদ মিডিয়া দাঁড়াবে না। তাই আমাদের নিজস্ব মিডিয়াগুলোকেই এক্ষেত্রে কাজে লাগানো উচিত। আমাদের কর্তব্য হবে, তাদেরকে আরও সৎসাহস জোগানো। তাদের মনোবল বৃদ্ধিতে সহযোগী ভূমিকা পালন করা। আমাদের এই উদ্যোগের দ্বারা আমরা পৃথিবীর সামনে এক অনন্য নজিরও কায়েম করতে পারি। আমরা আদর্শচ্যুত পৃথিবীকে জানিয়ে দিতে পারি, ছ্যাঁচড়ামি করলে বেইজ্জতির সঙ্গে অর্থ আসে। অপরদিকে আদর্শের ওপর অবিচল থাকলে আল্লাহ মর্যাদার সঙ্গে প্রয়োজন পূরণ করার ব্যবস্থা করে দেন।
২. যেসব প্রতিষ্ঠান কোনো বাতিলের সঙ্গে আপস করে চলে না। নিজেদের পিঠ বাঁচানোর জন্য ইলম গোপন করে না বা তাতে অপব্যাখ্যার আশ্রয় নেয় না। উম্মাহর শার্দূলদের প্রতি বিদ্বেষ প্রচার করে না, তাদের বিরুদ্ধে কোনো ষড়যন্ত্রও করে না। ইলমের তালিবদের নিষ্কলুষ অন্তরকে নেফাকে কলুষিত করে না, তাদের চিন্তাধারা বক্রতায় ছেয়ে ফেলে না। সর্বোপরি যারা আসহাবুস সুফফার সাহাবিগণের আদর্শকে নিজেদের আদর্শ বানায়, দারুল উলুম দেওবন্দের প্রথম সারির আকাবিরগণকে নিজেদের পথিকৃৎ মনে করে। ইলমের মাজলুম অধ্যায়গুলোর চর্চা করে। উসওয়াতুন হাসানাহ (নববি উত্তম আদর্শ) পুনরুজ্জীবিত করার মানসে সব বাধা সহাস্যবদনে মাথা পেতে নেয়। যে লক্ষ্যে মাদারে ইলমি (কওমিজননী) দারুল উলুম দেওবন্দ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, তারাও সর্বদা নিজেদের প্রতিষ্ঠানের মূল লক্ষ্য হিসেবে সেই আদর্শই ধারণ করে ও প্রচার করে। উপরন্তু যেসব উচ্চতর গবেষণামূলক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আলোকিত সমাজ বিনির্মাণে মৃত সুন্নাহগুলো জনসমক্ষে তুলে ধরে।
আমাদের উচিত, সেসব প্রতিষ্ঠানের পাশে দাঁড়ানো। নিজেদের পরিবারের চাইতেও সেগুলোকে বেশি আপন করে নেওয়া। তাদের সকল প্রয়োজন পূরণের ফিকির করা। মনে রাখবেন, আদর্শত্যাগী লক্ষ-কোটি প্রতিষ্ঠানের চাইতে সঠিক আদর্শবাহী এরকম একটি প্রতিষ্ঠান অধিক মূল্যবান। আমাদের জন্য এগুলোর অস্তিত্ব মাছের জন্য পানির অস্তিত্বের মতো। আমরা যদি সুখে-শান্তিতে দিন গুজরান করি, আর এজাতীয় প্রতিষ্ঠানগুলো আমাদের অসহযোগিতার কারণে মুখ থুবড়ে পড়ে; তাহলে নিঃসন্দেহে আমরা অপরাধী হয়ে যাব।
নব্য জাহিলিয়্যাতের বাধভাঙা স্রোতের মোকাবিলা করার জন্য প্রতিটি জেলায় অন্তত এরকম প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠা উচিত। যদি আগে থেকে প্রতিষ্ঠিত থাকে, তাহলে আমাদের উচিত হবে, তার কার্যক্রম আরও বেগবান করার ফিকির করা। আর যদি আগে থেকে প্রতিষ্ঠিত না থাকে, তাহলে আদর্শবান কোনো আলিমের সঙ্গে পরামর্শ করে যোগ্য বিজ্ঞ প্রাজ্ঞ কারও তত্ত্বাবধানে নিজেরা এরকম কোনো প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার ফিকির করা।
জীবন সীমিত। কখন মৃত্যুর ডাক চলে আসে, কেউ জানে না। তাই আজই জেগে উঠুন। আলসেমি করে কাজের কাজ কিছু করা যায় না। গাফিলতির চাদর ছুড়ে ফেলে দীন প্রতিষ্ঠা ও প্রসারের আলোকিত স্বপ্ন নিয়ে কর্মোদ্যমী হোন। আল্লাহ আপনাকে সাহায্য করবেন। যারা কাজ করতে চায়, তাদের জন্য কাজের অভাব নেই। আর যারা অলস, তারা বছরের পর বছর পড়ে থেকেও কাজ খুঁজে পায় না। জীবন চলে যায়, তা-ও দীনের জন্য উল্লেখযোগ্য কোনো অবদানই রেখে যেতে পারে না।
‘হে ইমানদাররা, তোমরা আল্লাহর সাহায্যকারী হও।’ [আল-কুরআন]
Hozor emon manus or madrasar nam bolan please ami chai amr tk emandar miskin er kase jak please maf korban bol hola
Assalamu Alaikum sheikh।
Any specific name pkease
ভাই, ফিকিরে আছি, আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহ চাহেন তো ঐ মাদরাসার খবর তিনি মিলিয়ে দেবেন। দুআর দরখাস্ত।