জান্নাতে কোনো ত্রুটি নেই, শূন্যতা নেই, অপূর্ণতা নেই। একজন মানুষের যত চাহিদা রয়েছে, তারচে অনেক বেশি কিছু সে জান্নাতে বুঝে পাবে। এ কথা কে না জানে! এরপরও কিছু মানুষ জান্নাত নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়ে থাকে। ‘জান্নাতে পুরুষরা পাবে হুর, নারীরা কী পাবে?’ ভালো খাবার এবং পানি যেমন মানুষের প্রয়োজন ও চাহিদা, যৌনসুখ লাভ করাও মানুষের প্রাকৃতিক প্রয়োজন ও চাহিদা। যিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন এবং তার ভেতরে এই প্রকৃতি গেঁড়ে দিয়েছেন, এটা কি তার অজানা? কখনোই নয়। বরং মানবীয় স্বভাব-প্রকৃতি, ঝোঁক-চাহিদাও তো তারই সৃষ্টি। সুতরাং যিনি আপনার ভেতরে যৌন আকর্ষণ দিয়েছেন, তিনিই তা পূরণের ব্যবস্থা করে দেবেন। আর এ কারণেই তো আপনি স্ত্রী হলে স্বামীর সঙ্গে যৌন চাহিদা পূরণ করার সুযোগ করে দিয়েছেন। দাসী হলে মনিবের সঙ্গে সহবাস করার বৈধতা দিয়েছেন। দুনিয়ায়ই যখন এ কথা, জান্নাতে কেন তিনি আপনাকে বঞ্চিত রাখবেন? জান্নাত তো বঞ্চনার জায়গা নয়।

জান্নাতে কত নারী এমন যাবে, যাদের স্বামী চিরস্থায়ী জাহান্নামি অথবা যাদের বিয়েই হয়নি। তো আপনার কি মনে হয়, তাদের যৌনচাহিদা পূরণের ব্যবস্থা আল্লাহ করবেন না? তিনি যাকে যতটুকু চাহিদা দিয়েছেন, তার চাহিদা পূরণের ততটুকু ব্যবস্থাও তিনি করে রেখেছেন। তাইতো পুরুষকে দিয়েছেন একসঙ্গে সর্বোচ্চ চার বিয়ের অনুমতি আর নারীকে দিয়েছেন একসঙ্গে সর্বোচ্চ এক বিয়ের অনুমতি। এর দ্বারা বোঝা যায়, কোনো পুরুষের জন্য একসঙ্গে পাঁচজনের প্রয়োজন পড়বে না। কেউ এটা দাবি করলে, সে মিথ্যা বলেছে। কোনো নারীর জন্য একসঙ্গে একাধিক স্বামীর প্রয়োজন পড়বে না। কেউ এটা দাবি করলে, সে মিথ্যা বলেছে। মৌলিক চাহিদা এর দ্বারাই পূরণ হয়ে যাবে। তাছাড়া সম্ভ্রমশীলা নারীদের মানসিকতাই আল্লাহ এভাবে গড়ে দিয়েছেন, একইসঙ্গে একাধিক পুরুষ তাকে ভোগ করবে, এটা তার আত্মমর্যাদাবোধ মেনে নেয় না। নির্লজ্জা বেহায়াদের কথা ভিন্ন, যারা গ্রুপ সেক্সেই পরম আনন্দ খুঁজে পায়। রুচি বিকৃত হয়ে গেলে নেশাদ্রব্যও তো যমযমের পানির চাইতে অধিক প্রিয় মনে হয়।

নারীর জন্য পুরুষ দরকার। এই পুরুষের ব্যবস্থা আল্লাহ দুনিয়ায়ও করবেন, জান্নাতেও করবেন। জান্নাতের হুররা হচ্ছে নারী; পুরুষ নয়। অনেক নারীর ভাবটা এমন, দুনিয়ার পুরুষদের সঙ্গে কেন জান্নাতে সংসার করতে হবে। জান্নাতি পুরুষ হুরদের সঙ্গে তাদেরকে সহবাস করতে দিলে কতই না আনন্দদায়ক হতো! আসলে বিষয় হলো, জান্নাতের হুরদের মর্যাদা কি বনি আদমের চাইতে বেশি? তারা তো সেবক; বনি আদম সেবিত। তাদেরকে সৃষ্টিই করা হয়েছে সেবার জন্য। দুনিয়ায় দেখুন, একজন স্বাধীন নারীর জন্য একজন দাস পুরুষকে কি সমকক্ষ ধরা হয়? কখনোই নয়; বরং বলা হয়, তাদের মধ্যে ‘কুফু’ (সমতা) নেই। এমনকি একসময় দাস ছিল, এখন মুক্ত হয়েছে, এমন ব্যক্তির সঙ্গে সম্ভ্রান্ত স্বাধীন নারীর বিয়ে হলেও অনেক সময় সংসারে বনিবনা হয় না। যেমনটা উম্মুল মুমিনিন যায়নাব বিন জাহাশ রা. ও রাসুলুল্লাহ সা.-এর পালকপুত্র যায়দ বিন হারিসা রা.-এর সংসারে হয়েছিল। স্বামী থাকে মনিবের ভূমিকায়। এ কারণে পুরুষের জন্য দাসীর সঙ্গে সহবাস করা বৈধ হলেও নারীর জন্য দাসের সঙ্গে সহবাস করা কিন্তু বৈধ নয়। কোনোভাবেই বৈধ নয়। একই কথা জান্নাতেও। সেখানে যাদেরকে সৃষ্টি করা হয়েছে সেবার জন্য, তাদেরকে আপনার মনিব বানিয়ে দিলে সেটা কখনোই আপনার জন্য প্রীতিকর হতো না। আপনার আত্মমর্যাদা ও সম্ভ্রমই তা গ্রহণে বাধা দিত এবং অন্তরকে সংকুচিত করে ফেলত।

জান্নাতে যদি পুরুষ হুর দেওয়াও হতো, তবুও তারা কি জান্নাতি বনি আদমের চাইতে উত্তম ও স্মার্ট হতো? কখনোই নয়। দুনিয়ার মানুষদেরকে দেখে তো আর জান্নাতি বনি আদমদের কল্পনা করতে পারবেন না। কী নেই তাদের? রূপ, গুণ, যৌনশক্তি কোন ক্ষেত্রে ত্রুটি ও স্বল্পতা দেখাতে পারবেন? ঝগড়াটে, রাগীস্বভাব, কেয়ার করে না এমন কোন বদনামের অভিযোগ সেখানের ব্যাপারে তুলতে পারবেন? এতটুকু নিশ্চিত থাকুন, আল্লাহ আপনাকে ঠকাবেন না। আপনার যা প্রাপ্য, তারচে মোটেও কম দেবেন না। তিনি কখনো বিন্দুমাত্র জুলুম করেন না। তার উদ্দেশে অন্তর সমর্পিত থাকলে কখনোই দুশ্চিন্তা হবে না। মনে ওয়াসওয়াসাও আসবে না।

সারা দুনিয়ায় বিপুল পরিমাণ নারী জিন্দিকদের সাথে সংসার করছে। তাদের সাথে সহবাস করছে। তাদের স্বামীরা স্বঘোষিত মুরতাদ নয়। তাদের স্বামীরা নাস্তিকও নয়। তারা নিজেদেরকে মুসলিম বলেই পরিচয় দেয়; কিন্তু আদতে তারা মুনাফিক। তারা কুফরে আকবর তথা বড় কুফরে লিপ্ত। একটি নয়; একাধিক কুফরি আকিদা লালন করে। কুফরি কথা বলে। কুফরি কাজ করে। তাদের তাকফিরের প্রতিবন্ধকতাও নেই। তাদের এমন অজ্ঞতা নেই, যা অজুহাত হিসেবে গৃহীত হবে। এমন ব্যাখ্যা নেই, যা শরিয়াহ ওজর হিসেবে বিবেচনা করবে। অন্যান্য প্রতিবন্ধকতাগুলোও তাদের মধ্যে পাওয়া যায় না। উপরন্তু তারা দীনের বিভিন্ন বিষয়কে অপছন্দনীয়তার চোখে দেখে, এগুলোকে অবজ্ঞা ও হেয়জ্ঞান করে, কখনোবা উপহাস ও তাচ্ছিল্য করে, এছাড়াও কুফরের বিভিন্ন প্রতীক ও কুফফারকে ভালোবাসে, তাদেরকে তাকফির না করে উল্টো তাদেরকেও হক মনে করে; এরপরও এমন পুরুষদের সাথে দিব্যি সংসার চলছে। সেসব সংসারে বাচ্চাকাচ্চাও হচ্ছে। অথচ প্রতিটা সহবাসই ছিল নিশ্চিত জিনা। এখন এসব নারী যদি তামান্না করে, তারা জান্নাতে যাবে আর জান্নাতে এসব পুরুষকেই স্বামী হিসেবে পাবে, তাহলে তাদের এই ভাবনার প্রতিও আক্ষেপই করতে হয়।

মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত কথার অর্থ এটা নয় যে, সেই মা মুশরিক হলেও জান্নাতে যাবে। হ্যাঁ, তার হক আদায় করে আপনি জান্নাতি হতে পারেন; কিন্তু তার ইমান না থাকলে তিনি কখনোই মুক্তি পাবেন না। একই কথা স্বামীর ক্ষেত্রেও। স্বামীকে নিয়ে জান্নাতে থাকতে চান, ভালো কথা। তাই বলে মুনাফিক, মুলহিদ, জিন্দিক ও মুরতাদদেরকে নিয়ে সংসার করলে তাদেরকে জান্নাতে স্বামী হিসেবে তো পাবেনই না; আপনাকেও বরং ব্যভিচারিণী হিসেবে দোজখের আগুনে পুড়তে হবে দীর্ঘকাল। এরপর আপনি মুক্তি পেলেও সে কখনোই মুক্তি পাবে না। আর আপনি যদি এদের সাথে সংসারকে বৈধ মনে করেন, শরিয়তের এই বিধানকে অপছন্দনীয়তার চোখে দেখেন বা এর সাথে দ্বিমত পোষণ করেন, তাহলে আপনারও আর মুক্তি কোনোদিন কপালে জুটবে না। একই কথা বিপরীত দিক থেকেও বিবেচনা করা যায়। আর আমার পর্যবেক্ষণ হচ্ছে, এই যুগে পুরুষদের তুলনায় নারী জিন্দিকদের সংখ্যা অনেক অনেক বেশি। জিন্দিক নারীদের সঙ্গে রাতের বেলা যা মুমিন পুরুষ যা করে, তা আসলে বৈধ সহবাস হয় না; জিনা হয়। আর জিনার সন্তানদেরকেই পরিভাষায় হারামজাদা বলা হয়।

Share This