পূর্ণাঙ্গ ধর্ম ইসলাম। বিধাতার নির্বাচিত ধর্ম ইসলাম। তাঁর কাছে একমাত্র গ্রহণীয় ধর্ম ইসলাম। ইরশাদ হয়েছে- ‘আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দীনকে পূর্ণাঙ্গ করে দিলাম। তোমাদের ওপর আমার নিয়ামত পরিপূর্ণ করলাম। এবং দীন হিসেবে ইসলামকে তোমাদের জন্য পছন্দ করে দিলাম। ’ [সুরা মায়িদা- ৩] আরো ইরশাদ হয়েছে- ‘নিশ্চয়ই আল্লাহর কাছে গ্রহণীয় দীন শুধুই ইসলাম। [সুরা আলে ইমরান- ১৯]

ইসলামের নবি মুহাম্মাদে আরাবি সা.। সত্য পথের দিশারী। নিবিড় তমসা বিদূরকারী। যার চরিত্রে ছিলো না কদর্য, ছিলো না কোনো পঙ্কিলতা।  তাঁর আনীত শাশ্বত ধর্ম ইসলাম। খোদায়ি নুরে পূর্ণ উদ্ভাসিত এই ইসলাম। তার অনুসারীগণ দিগন্তজোড়া আকাশের নিচে সবচে মহান, সবচে উদার। আলোকিত তাদের হৃদয়মিনার। দীপ্ত তাদের চরিত্র। সত্য পথের পথিক যেমন হওয়া কাম্য তারা ঠিক তেমনই।

মানবতার আদর্শ এই সত্য নবির আগমনের সুসংবাদ দিয়েছিলেন হযরত ইসা আ.; যাঁর আগমনের পরে রহিত হয়ে গেছে সকল ধর্ম, সকল আসমানি গ্রন্থ। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে- ‘স্মরণ করো ঐ সময়ের কথা, যখন মারয়াম তনয় ইসা. বলেছিলো, হা বানি ইসরাইল! নিঃসন্দেহে আমি তোমাদের কাছে প্রেরিত আল্লাহর রাসুল, আমার পূর্বে অবতীর্ণ তাওরাতের সত্যায়নকারী এবং আমার পরে আগত এক মহান রাসুলের সুসংবাদ দানকারী, যার নাম আহমদ। তিনি যখন তার কাওমের কাছে সুস্পষ্ট প্রমাণদাই নিয়ে আসবেন, তখন তারা বলবে, এ দেখি সুস্পষ্ট জাদু।’ [সুরা সফ- ৬]

ইউহোন্নার ইনজিলে আছে, ইসা আ. শিষ্যদের উদ্দেশে প্রদত্ত এক দীর্ঘ ভাষণে বলেছেন- ‘তোমরা যদি আমাকে মহব্বত করো, তবে আমার সমস্ত হুকুম পালন করবে। আমি পিতার নিকট চাইবো আর তিনি তোমাদের নিকট চিরকাল থাকবার জন্য আর একজন সাহায্যকারীকে পাঠিয়ে দেবেন। সেই সাহায্যকারীই সত্যের রূহ। দুনিয়া তাঁকে গ্রহণ করতে পারে না। কারণ দুনিয়া তাঁকে দেখতে পায় না এবং তাঁকে জানেও না। তোমরা কিন্তু তাঁকে জানো, কারণ তিনি তোমাদের সঙ্গে সঙ্গে থাকেন। আর তিনি তোমাদের অন্তরে বাস করেন। ’[ইউহোন্না- ১৪/১৫-১৭]

‘যে কথা শুনছো তা আমার কথা নয়; কিন্তু যিনি আমাকে পাঠিয়েছেন সেই পিতারই কথা। তোমাদের সঙ্গে থাকতে থাকতেই এ সমস্ত কথা আমি তোমাদের বলেছি। সেই সাহায্যকারী অর্থাৎ পাক-রূহ, যাঁকে পিতা আমার নামে পাঠিয়ে দেবেন, তিনি সমস্ত বিষয়য় তোমাদের শিক্ষা দেবেন। আর আমি তোমাদের যা কিছু বলেছি, সেই সমস্ত তোমাদের মনে করিয়ে দেবেন। ’[ইউহোন্না- ১৪/২৪-২৬]

‘আমি তোমাদের সঙ্গে আর বেশীক্ষণ কথা বলবো নয়া, কারণ দুনিয়ার কর্তা আসছেন। আর আমার ওপর তাঁর কোন অধিকার নেই।’ [ইউহোন্না১৪/৩০-৩১]

‘যে সাহায্যকারীকে আমি পিতার নিকট থেকে তোমাদের নিকট পাঠিয়ে দেবো, তিনি যখন আসবেন, তখন তিনিই আমার বিষয়ে সাক্ষ্য দেবেন। ইনি হলেন সত্যের রূহ, যিনি পিতার কাছ থেকে আসবেন। আর তোমরাও আমার বিষয়ে সাক্ষ্য দেবে, কারণ প্রথম থেকে তোমরা আমার সংগে সঙ্গে আছো।’ [ইউহোন্না- ১৫/২৬-২৭]

‘তবুও আমি তোমাদের সত্য কথা বলছি যে, আমার যাওয়া তোমাদের পক্ষে ভালো। কারণ আমি নয়া গেলে সেই সাহায্যকারী তোমাদের নিকট আসবেন না। কিন্তু আমি যদি যাই তবে তাঁকে তোমাদের নিকট পাঠিয়ে দেবো। তিনি এসে দুনিয়াকে পাপের সম্বন্ধে চেতনা দেবেন।’ [ইউহোন্না-১৬/৭-৯]

‘কিন্তু সেই সত্যের রূহ যখ আসবেন, তখন তিনি তোমাদের পথ দেখিয়ে পূর্ণ সত্যে নিয়ে যাবেন; তিনি নিজ থেকে কথা বলবেন না। কিন্তু যা কিছু শোনেন তাই বলবেন। আর যা কিছু ঘটবে তাও তিনি তোমাদের জানাবেন। [ইউহোন্না- ১৬/১৩-১৪]

জাহেলি যুগে আরবে যখন ভূমিষ্ঠ হলেন নবি মুহাম্মাদ সা., ধীরে ধীরে বেড়ে উঠলেন খোদায়ি প্রতিপালনে সমাজে পুঞ্জীভূত সব আঁধার তাড়ালেন আলোর দীপ্ত মশাল হাতে, ছড়িয়ে দিলেন সর্বত্র পুণ্যের আলো। মানবতাহীন মানুষদেরকেই তারবিয়াত করে গড়ে তুললেন সত্যের গর্বিত বাহকরূপে। তাঁর মাধ্যমে বিশ্ব মানবতা পেলো সভ্যতার দীক্ষা। তাঁর চরিত্রের বিভা দর্শনে অভিভূত হয়ে পবিত্র ইসলামবৃক্ষের সুশীতল ছায়ায় আশ্রয় নিলো হাজারো মুক্তিকামী মানবতা। ইতিহাস সাক্ষী, মুহাম্মাদে আরাবি সা. ও তাঁর সাহাবিগণের মহানুভবতা ছাড়িয়ে গিয়েছিলো আকাশের উচ্চতা। তাদের চরিত্র ছিলো অনুপম, আকাশের তারকার মতো যা জ্বলজ্বল করে জ্বলতো, বিশ্ব মানবতার জন্য চিরআদর্শ।

মাতৃক্রোড় থেকেই সেই মহানবির আদর্শে বেড়ে অথে প্রতিটি মুসলিম। নিজেদের চরিত্রকে রাঙায় নববি রঙে। মুসলিম শিশু বড় হয়ে প্রিয় রাসুলের এই শিক্ষা নিয়ে- ‘সম্পদের প্রাচুর্য দিয়ে তোমরা জনগণের ওপর জয়ী হতে পারবে না। হৃদয়ের উদারতা ও চরিত্র-মাধুর্যই পারে তাদের ওপর তোমাদের প্রভাব প্রতিষ্ঠিত করতে।’ [বায়হাকি] আনাস রা. বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সা.কে জিজ্ঞাসা করা হলো, হে আল্লাহর রাসুল! মুমিনদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা শ্রেষ্ঠ ইমান কার? রাসুলুল্লাহ সা. উত্তর দিলেন, তাদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা উত্তম চরিত্র যার সে।’ [আবু দাউদ]

দেড় হাজার বছর পূর্বে পারাণের চূড়া থেকে মুসলিম জাতির বিজয়ের উৎসারিত যে ধারা প্লাবিত করেছিলো ইরান তুরান আফগান স্পেন মিশর ভারতসহ কতো দেশ, কতো মানচিত্র- তার ভিত্তিমূলেই ছিলো মুসলমানদের চরিত্র-মাধুর্য। দেশ জয়ের পূর্বেই তা জয় করে নিয়েছিলো দেশবাসীর হৃদয়মিনার। তরবারির জোরে ইসলাম সারা পৃথিবীতে ছড়ায়নি, সেই শক্তিতে কালিমা তার হেলালি নিশান ওড়ায়নি। হাঁ, শক্তি ও তরবারি ইসলামি সাম্রাজ্যের পরিধি বিস্তৃতকরণে তো বিরাট ভূমিকা রেখেছে।  কিন্তু তরবারির শক্তি প্রয়োগ করে কাউকে মুসলমান বানানো হয়নি। তাছাড়া শুধুই তরবারির ভয়ে যে ইসলাম গ্রহণ করে তার ইসলাম কখনোই বিধাতার দরবারে গৃহীত হয় না।

ইউরোপ-আমেরিকায় শিশুদের কচি হৃদয়ে তাদের শৈশবেই এ ধারণা বদ্ধমূল করে দেয়া হয়- ‘মুসলিম জাতি বর্বর জাতি। বড় হিংস্র ও রক্তপিপাসু তারা।’ফলে সেসব কোমলমতি শিশুরা যখন বড় হয়, তখন তাদের হৃদয়ফলকে উৎকীর্ণ থাকে একটি বাক্য- ‘মুসলিম জাতি বর্বর জাতি।’

কিন্তু পাঠক ইতিহাস ও বাস্তবতা কি তা-ই বলে? মহানবি সা. ও তাঁর সাহাবিগণের জীবনচরিত তো দিবালোকের মতো সুস্পষ্ট। তাদের জীবনচরিত নিয়ে বিশ্বের প্রায় সব ভাষায়ই রচিত হয়েছে বিপুল পরিমাণ গ্রন্থ। সত্যের অনুসন্ধিৎসা নিয়ে তাতে একবার নজর বুলিয়ে নিতে পারেন। সত্যের সূর্য আর আড়াল থাকবে না আপনার দৃষ্টিপথে।

এখানে ইসলামের কয়েকজন সাধারণ অনুসারীর অনুপম চরিত্র-মাধুর্যের দু-চারটি দৃষ্টান্ত তুলে ধরছি, যা পাঠ করলে পাঠকের সামনে সুস্পষ্ট প্রতিভাত হবে কবির নিম্নলিখিত বক্তব্যের যথার্থতা-

‘‘ওরাই মোদের পূর্বসুরী

ওদের নিয়েই গর্ব করি,

কোন সুরেতে গর্ব করো

লও তো দেখি তাদের জুড়ি।’’

 

১. কায়স ইবনে আসিম। সাধারণ একজন মুসলিম। বিত্তের প্রাচুর্য নেই তার। অজপাড়াগাঁইয়ের ছোট্ট এক কুটিরের মালিক। একদিন সন্ধ্যেবেলায় শিশুসন্তানকে কোলে নিয়ে বসে আছেন। শ্রাবণের ব্যাকুল সন্ধ্যার উথা-পাথাল হাওয়ায় জুড়িয়ে নিচ্ছেন দেহ-মন। এমন সময় তার এক দাসি কাবাবভর্তি শলাকা নিয়ে সমুখে হাজির। আচমকা দাসির হাত ফসকে লৌহশলাকা পড়ে গেলো। পড়লো তা শিশুর মাথায়। ফলে তৎক্ষণাতই নিষ্পাপ শিশুটি মৃত্যুর সুধা পান করলো। দাসি ভয়ে নিশ্চল, নিথর। তার শুভ্র মুখাবয়বে ফুটে উঠেছে দুশ্চিন্তার রেখা। নেমে সেছে তাতে রাজ্যের সব কালো মেঘ। কায়স বললেন, ‘তোমার ঘাবড়ানোর কিছু নেই। বিধাতা আমার ভাগ্যে এ রেখেছিলেন। যাও, আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য আজ থেকে তুমি আযাদ।’

২. মারুফ কারখি। খোদার প্রেমসরোবরে সদা অবগহনকারী এক যুবক। আল্লাহর সন্তুষ্টির সন্ধানে হৃদয় তার সর্বদা ব্যাকুল। একদিন উজু করতে দজলা নদীতে নামলেন তিনি। নদীর তীরে ঘাসের ওপর রেখে গেলেন তোয়ালে ও পবিত্র কোরআনের একটি মুসহাফ। পুলকিত হৃদয়ে উজু করছেন তিনি। এমন সময় অচেনা এক যুবতী চোর এসে তার মুসহাফ ও তোয়ালে নিয়ে উল্টোদিকে দিলো ছুট। মারুফও তার পেছনে পেছনে ছুটতে লাগলেন। দূরত্ব কিছুটা কমে এলেই চিৎকার করে তিনি বললেন, ‘এই মেয়ে, ভয় পেও না। আমি তোমার কোনো ক্ষতি করবো না। শুধু এতোটুকু বলো, তোমার বাসায় যারা আছে তাদের কেউ কি মুসহাফ দেখে দেখে কোরআন তিলাওয়াত করতে পারে?’ যুবতী মেয়েটি এবার থেমে বললো, ‘না, কেউই পারে না।’ মারুফ বললেন, ‘তবে এই মুসহাফটি নিয়ে তোমার কোনো লাভ হবে না। এরচে ভালো, ওটা আমাকে দিয়ে আমার জুব্বাটি তুমি নিয়ে যাও। বাজারে বিক্রি করে দিলে কিছু টাকা তো হাতে পাবে। তাতে তোমার ভালোই উপকার হবে।’ এই বলে মারুফ তার জুব্বা খুলে যুবতী চোরের হাতে দিলেন।

৩. আব্দুল্লাহ। এক বিখ্যাত দর্জি। তার দোকানের পাশে ছিলো এক অগ্নিপূজক দর্জির দোকান। নিজের কাজ না থাকলে থাকলে আব্দুল্লাহ তার থেকে নিয়ে কাপড় সেলাই করে দিতেন। বিনিময়ে সেই অগ্নিপূজক দর্জি আব্দুল্লাহকে সর্বদাই জাল মুদ্রা দিতো। আব্দুল্লাহও কোনো আপত্তি না জানিয়ে তা নিয়ে তা নিয়ে নিতেন। একদিন কোনো এক কাজে আব্দুল্লাহ দূরে কোথাও গেলেন। দোকানে রেখে গেলেন তার এক কর্মচারীকে। এমন সময় সেই অগ্নিপূজক দর্জি এসে তার কাপড়গুলো চাইলো। কর্মচারী কাপড় দিলে সে পূর্বের মতো জাল মুদ্রা দিলো। কর্মচারী এতে চটে গেলো। তখন সে দ্রু নির্ভেজাল মুদ্রা পরিশোধ করে সেখান থেকে কেটে পড়লো। আব্দুল্লাহ রাতে ফিরে এসে দেখলেন, দোকানে অগ্নিপূজক দর্জির কাপড় নেই। কর্মচারীকে জিজ্ঞেস করলে সে আদ্যোপান্ত সব বললো। সব শুনে আব্দুল্লাহ ভারি মর্মাহত হলেন। তিনি বললেন, ‘যেদিন থেকে আমি তার কাপড় সিলিয়ে দিচ্ছি বিনিময়ে সে সর্বদাই আমাকে জালমুদ্রা দিয়ে আসছে। কিন্তু কই কখনো তো আমি কোনো আপত্তি করিনি।!তার দেয়া মুদ্রাগুলো সব সময় আমি কুঁয়ায় ছেড়ে ফেলে দিতাম। আজ তুমি এ কী করলে! তার দ্বারা কোনো মুসলমান প্রতারিত হওয়ার পথ সুগম করে দিলে!

৪. ইবরাহিম ইবনে আদহাম। খোরাসানের রাজাধিরাজ। জনমানবহীন এক জনপদ ধরে হাঁটছেন তিনি। এমন সময় কোত্থেকে এক সৈনিক এলো। এসে জিজ্ঞেস করলো, কী ব্যাপার? এই এলাকার লোকজন সব কোথায়? ইবরাহিম ইবনে আদহাম কবরস্থানের দিকে ইশারা করলেন। তার এই কাজটিকে ঠাট্টা ও দুষ্টুমি ভেবে ভীষণ রেগে গেলো সৈনিক। ইবরাহিম ইবনে আদহামের সুন্দর শ্মশ্রুমণ্ডিত গালে সজরে বসিয়ে দিলো এক চড়। কোনো প্রতিবাদ না করে, নিশ্চুপ থেকে নিজ পথে পা বাড়ালেন খোরাসানের রাজাধিরাজ। দূর থেকে এ দৃশ্য দেখলো এক কাঠুরী। ইবরাহিম ইবনে আদহাম দূরে চলে গেলে সে ছুটে এলো সৈনিকের কাছে। এসে বললো, ‘এ আপনই কী করলেন?’ সৈনিক উত্তর দিলো, ‘কেনো? কী হয়েছে?’ কাঠুরী বললো, ‘এইমাত্র যাকে মারলেন, আপনি তারই আজ্ঞাবহ কর্মচারী। খোরাসানের রাজা তিনি!’ কথাটি শুনে সৈনিকের বুক ধুকপুক করে উঠলো। কপাল বেয়ে তরতর করে ঘাম বইতে শুরু করলো। হৃৎকম্পন প্রচণ্ড রকম বেড়ে গেলো। এ কী করলাম আমি! ছুটে গিয়ে ইবরাহিম বিন আদহামের পায়ে পড়লো। কাকুতিভরা স্বরে ক্ষমা চাইতে লাগলো। মহানুভব রাজা বললেন, ‘অস্থির হচ্ছো কেনো? আমাকে যখন তুমি চপেটাঘাত করেছো, তখন তোমার জন্য আমি রহমানের কাছে জান্নাত প্রার্থনা করেছি।’ রাজ্যের বিস্ময় বয়ে গেলো সৈনিকটির ভাবুক মনে। জিজ্ঞেস করে বসলো, ‘কিন্তু কী কারণে, জাহাঁপনা?!’ ইবরাহিম ইবনে আদহাম বললেন, ‘আমি নিশ্চিত জানি, আমাকে তুমি অন্যায়ভাবে প্রহার করার কারণে মহার স্রষ্টার কাছে আমার জন্য বিরাট প্রতিদান সাব্যস্ত হয়েছে। আমি এতো বড় স্বার্থপর নেই, যার জন্য বিরাট প্রতিদানের অধিকারী হলাম তাকে হতভাগারূপে জাহান্নামের কয়েদীদের সাথে ফেলে আসবো! আমি চেয়েছি, যার কারণে আমি এক নেয়ামতের অধিকারী হচ্ছি আমার কারণে সে সবচে বড় নেয়ামত জান্নাতের অধিকারী হোক। তাইও এমনটি করেছজি।’

এখানে চারটি দৃষ্টান্ত উল্লেখ করলাম মাত্র। প্রকৃত মুসলিম যারা, এমন বরং এরচেও বিস্ময়স্কর সব ঘটনা তাদের জীবনে অহরহই ঘটছে। ব্যতিক্রমও যে কিচু নেই তা নয়। ধর্মীয় জ্ঞান যাদের নেই, তারা মাঝেমধ্যে কাণ্ডজ্ঞানহীন কাজ করে বসে। কিন্তু সেসব বিক্ষিপ্ত ঘটনাকে কেন্দ্র করে তো আর পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ জাতিকে বর্বর, হিংস্র সাব্যস্ত করা যায় না। মুসলিম জাতির চরিত্র সর্বদাই মহান, বিশ্ব মানবতার আদর্শ। প্রসঙ্গত এখানে একটি ঘটনার বিবরণ উল্লেখ করা সঙ্গত মনে হচ্ছে।

ইসলামের অনুসারী এক মুজাহিদ কাফেলার নাম তালেবান। যারা আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী হিসেবে স্বীকৃত বিশ্ব-মোড়লদের কাছে। ইউরোপ-আমেরিকায় যাদেরকে আখ্যায়িত করা হয় ‘রক্তপিপাসু’ বলে। ওদের চোখে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীরই একটা ঘটনা উল্লেখ করছি। তথ্যসংগ্রহের জন্য তাদের ক্যাম্পে অন্যায়ভাবে ঢুকে পড়েন লন্ডনের ‘সানডে এক্সপ্রেসে’র মহিলা সাংবাদিক মিস ইয়োভনি রিডলি। ফলে তালেবান যোদ্ধাদের হাতে গ্রেফতার হন তিনি। এবার যে আর রক্ষা নেই! মৃত্যুভয়ে একেবারে কুঁকড়ে যান ইয়োভনি রিডলি। দীর্ঘ দশদিন থাকেন তাদের হেফাজতে। এ সময়ে কোনো তালেবান যোদ্ধাও একবারের জন্য তার দিকে চোখ তুলে তাকায়নি; কিন্তু তার সেবা-যত্নে কোনো ত্রুটি করেনি এই ‘রক্তপিপাসু’ দল। তাদের অপার্থিব আচরণ দেখে বিস্ময়ে অভিভূত হন ইয়োভনি রিডলি। দেশে ফিরে তালেবানদের ধর্ম নিয়ে গবেষণা শুরু করেন তিনি। যে ধর্ম মানুষকে এতো মহান করে তুলতে পারে, নিশ্চয় তা-ই সত্যধর্ম। সুদীর্ঘ গবেষণার ফলে তার সামনে উদঘাটিত হয় প্রকৃত সত্য। স্বেচ্ছায়, সজ্ঞানে ইসলাম গ্রহণ করেন তিনি।

বিকৃত ইতিহাসকে অবলম্বন না করে সঠিক ইতিহাসের পাতায় চোখ বুলালে মুসলিম জাতির বর্বরতার চিত্র খুঁজে পাবে না কেউ কোথাও। অপরদিকে আবু গারিব ও গুয়ানতানামো প্রোজ্জ্বল সাক্ষী ইসলামের বিরুদ্ধে দৃপ্তকণ্ঠ সেকুলারিজমের বর্বরতার। মিডিয়া শক্তিকে অপব্যবহার করে বিশ্ববাসীর সামনে মুসলিম জাতিকে ওরা চিত্রিত করছে বর্বররূপে। না বুঝে ওদের পাতানো ফাঁদে পা দিয়েছে বহু মুসলিম। আজ সময় এসেছে নব জাগরণের; খালিদি হুংকারে বিশ্ব কাঁপিয়ে দেয়ার সময় আজই।

ইসলামি রেনেসাঁর কবি ফররুখ আহমদ যথার্থই বলেছেন-

ভেঙ্গে ফেলো আজ খাকের মমতা আকাশে উঠেছে চাঁদ,
দরিয়ার বুকে দামাল জোয়ার ভাঙছে বালুর বাঁধ
ছিঁড়ে ফেলো আজ আয়েশী রাতের মখমল – অবসাদ,
নতুন পানিতে হাল খুলে দাও, হে মাঝি সিন্দাবাদ !

বয়স তখন মাত্র পনেরো। লেখালেখিতে তখন মাত্র অভিষেক হয়েছে। জ্ঞানের ভাণ্ডার তো পুরোই শূন্য। সেসময়ের লেখা এটি।

Share This