কীভাবে বুঝব, পির দাবিকারী লোকটি হক না বাতিল?

একজন হক পির চিহ্নিত করার পদ্ধতি কী হবে, এ সম্পর্কে আমাদের আকাবিরগণ স্পষ্ট দিকনির্দেশনা দিয়ে গেছেন। তারা এর জন্য কিছু মানদণ্ড জানিয়েছেন। যে এসব মানদণ্ডে উত্তীর্ণ হবে, সে হক পির হিসেবে বিবেচিত হবে। আর যে এসব মানদণ্ডে উত্তীর্ণ হবে না, সে হক পির হিসেবে বিবেচিত হবে না। আমরা এখানে কয়েকটি মানদণ্ডের কথা উল্লেখ করব।


১. পিরের কোনো কথা শরিয়তবিরোধী হবে না।

আজকাল অনেক পির বেরিয়েছে, যারা বিভিন্ন সময়ে, বিভিন্ন মজলিসে, উদ্ধত ভঙ্গিতে শরিয়তবিরোধী কথাবার্তা বলে থাকেন। তাদের এহেন শরিয়তবিরোধী কথা শুনতে পেলে মুরিদদের মধ্যে অদম্য জযবা জেগে ওঠে। তারা হুংকার তুলে আকাশ-বাতাস কাঁপিয়ে ফেলে। মুরিদদের সংখ্যাধিক্য দেখে সৃষ্ট অহংবোধের কারণে পিরকে তার শরিয়তবিরোধী কথাবার্তা সম্পর্কে সতর্ক করা হলেও তিনি আর সতর্ক হন না। বরং নিজের পক্ষে বিভিন্ন উদ্ভট যুক্তি ও ব্যাখ্যা দাঁড় করানোর অপপ্রয়াস চালাতে থাকেন। উপরন্তু সতর্ককারীদেরকে তাচ্ছিল্য করেন, বিভিন্ন সময়ে সুযোগ পেলেই তাদের অপমানকর করেন।


২. পিরের সকল আকিদা বিশুদ্ধ হবে।

সুতরাং যেসব পির হুলুল, ইত্তিহাদ, ওয়াহদাতুল উজুদ, শিরক ফিল হাকিমিয়্যাহ, ডেমোক্রেসি, ন্যাশনালিজম এবং কিতালবিরোধী আকিদা রাখে, তারা কখনোই হক পির হতে পারে না। একজন মানুষ একই সময়ে পিরও হবে, আবার ডেমোক্রেটিকও হবে; পিরও হবে, আবার ন্যাশনালিস্টও হবে; পিরও হবে, আবার কিতালবিরোধী অবস্থানও জানান দেবে – এটা কখনোই হওয়ার নয়।


৩. পির দীনের মাসায়িল সম্পর্কে স্বচ্ছ জ্ঞান রাখবেন। শরিয়ত সম্পর্কে অজ্ঞ হবেন না।

সুতরাং যেসব পির ফরজ বিধানকে প্রত্যাখ্যান করে, হালালকে হারাম বা হারামকে হালাল হিসেবে উপস্থাপন করে, শরিয়তের বিভিন্ন বিধানের অপব্যাখ্যা করে, বিভিন্ন দলিল (আদতে শুবহা তথা বিভ্রম) উপস্থাপন করে ভুল বিধান উদঘাটন করে, জাকাতের টাকাকে সাধারণ দানের সঙ্গে মিলিয়ে ফেলে, সুদ-ঘুষের টাকা এবং হারাম সম্পদকেও ভুলভাল হিলা-তাবিল করে বৈধ বানিয়ে ফেলে, তারা কখনো হক পির হতে পারে না।


৪. পিরকে মুহাক্কিক আলিমগণ ও অধিকাংশ হকপন্থী মানুষ ভালো বলবে।

সুতরাং যে পিরকে মুহাক্কিক আলিমগণ এবং অধিকাংশ তাওহিদবাদী হকপন্থী মানুষ ভালো বলবে না, বরং তার স্পষ্ট পদস্খলনের কারণে সমালোচনা করবে, সে কখনো হক পির হতে পারে না।


৫. পিরের সাহচর্যে দীনের প্রতি ভালোবাসা বাড়বে এবং দীন পালনের আকর্ষণ সৃষ্টি হবে।

সুতরাং যে পিরের সাহচর্যে দীনের প্রতি ভালোবাসা বাড়ার পরিবর্তে পার্থিব বিভিন্ন মতবাদের প্রতি ভালোবাসা সৃষ্টি হবে, যার সাহচর্যে অবৈধ উপায়ে ক্ষমতায় আরোহণ করার বাসনা বৃদ্ধি পাবে, যার সাহচর্যে দীন পালনের আকর্ষণ সৃষ্টি হওয়ার পরিবর্তে দীনের বিভিন্ন ফরজে আইন বিধান পালনের প্রতি ভীতি ও শঙ্কা সৃষ্টি হবে, সে কখনো হক পির হতে পারে না।


৬. পির সাহেব জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সুন্নাহর অনুসারী হবেন। নিজের ভক্ত ও মুরিদগণকে প্রতিটি কাজে সুন্নাহর অনুসরণের জোর তাগিদ দেবেন।

সুতরাং যে পির জীবনের কোনো ক্ষেত্রে, উদাহরণস্বরূপ রাজনৈতিক ক্ষেত্রে, সুন্নাহর অনুসারী না হয়ে দীনের সাইনবোর্ড ব্যবহার করে নবোদ্ভাবিত বিভিন্ন কুফরি, শিরকি ও বিদআতি মতবাদের অনুসারী ও প্রচারক হবেন, নিজের ভক্ত ও মুরিদদেরকেও সুন্নাহর অনুসরণের পরিবর্তে সেসব শিরকি, কুফরি ও বিদআতি মতাদর্শ অনুসরণের জোর তাগিদ দেবেন, এমনকি কেউ সুন্নাহর অনুসরণ করতে চাইলে তাকে তাচ্ছিল্য করবেন এবং অবাঞ্ছিত ঘোষণা দেবেন, তিনি কখনো হক পির হতে পারেন না।


৭. পিরের সাথে আত্মশুদ্ধির সম্পর্ক স্থাপনকারীদের অধিকাংশই বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণভাবে শরিয়তের অনুসারী হবে।

সুতরাং যে পিরের সাথে আত্মশুদ্ধির সম্পর্ক স্থাপনকারীদের অধিকাংশই কোনো ক্ষেত্রে শরিয়তের বিধানকে থোড়াই কেয়ার করবে, কুরআন-সুন্নাহর নির্দেশ ও নির্দেশনাকে বাদ দিয়ে পিরের কথাকেই স্বতন্ত্র শরিয়ত হিসেবে জ্ঞান করবে এবং পিরের বাতিল কথার পক্ষেও অসার তাবিল দাঁড় করাবে, বাহ্যিকভাবে ও অভ্যন্তরীণভাবে মুহাম্মাদি শরিয়ত ধারণ করার পরিবর্তে আব্রাহাম লিংকন বা প্রমুখের শরিয়তকে ধারণ করবে, সেই পির কখনো হক পির হতে পারে না।

Share This