ফিকহুস সিরাত – ৭ 

 

আল্লাহ তাআলা যখন সুরা মুদ্দাসসিরের এই আয়াতগুলো অবতীর্ণ করেন—

হে চাদরাবৃত, ওঠো এবং মানুষদের সতর্ক করো আর তুমি নিজ প্রতিপালকের বড়ত্ব ঘোষণা করো।[1]

তখন থেকে রাসুলুল্লাহ সা.’র দাওয়াতি কার্যক্রম গোপনীয়তার সাথে শুরু হয়। দাওয়াতের এই ধারা বহাল ছিলো সর্বসাকুল্যে তিন বছর।[2] সুরা হিজরের নিম্নলিখিত আয়াতের মাধ্যমে সেই ধারার পরিসমাপ্তি ঘটে তিনি প্রকাশ্যে দাওয়াতের জন্য আদিষ্ট হন—

অতএব তুমি যে বিষয়ে আদিষ্ট হয়েছো তা প্রকাশ্যে প্রচার করো এবং মুশরিকদের উপেক্ষা করো।[3]

এ সময়টাতে রাসুলুল্লাহ  সা. শুধু  সে সকল লোককেই  দাওয়াত দিয়েছেন, যারা তার নিকটাত্মীয় এবং যাদের মধ্যে তিনি সত্য গ্রহণের যোগ্যতা প্রত্যক্ষ করেছেন, যাদের ব্যাপারে তিনি নির্ভীক এবং আস্থাশীল ছিলেন যে, তারা গোপনীয়তা রক্ষা করবে, রহস্য ফাঁস করবে না।

এভাবেই গোপনীয়তার সঙ্গে ইসলামের দাওয়াতি কার্যক্রম চলছিলো। যাদের ভেতরজগত মূর্তিপ্রেমে ছেয়ে যায়নি, যাদের অন্তর খোদাদ্রোহীতায় কালো হয়ে যায়নি তারা ক্রমশ ইসলামের সুশীতল ছায়ায় আশ্রয় গ্রহণ করছিলো। তাদের ওপর ভিত্তি করেই পরবর্তীতে ইসলামের বাণী প্রাচ্য-প্রতীচ্য সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে। তারা একেকজন ছিলেন দীনের খুঁটিস্বরূপ।

রাসুলুল্লাহ সা. এই সময়টাতে গোপনীয়তা রক্ষার জন্য যারপরনাই চেষ্টা করেছেন। সত্যের বাণী প্রচারিত হলে অসত্যপূজারীরা একদিন না একদিন যে দৃপ্ত পদবিক্ষেপে তেড়ে আসবে—এটা তো সহজেই অনুমেয়। তবে তার আগে একঝাঁক আলোকিত মানুষের প্রয়োজন ছিলো, যারা সর্বশক্তি দিয়ে ইসলামকে আঁকড়ে ধরবে এবং ইসলামের বাণী প্রচারে রাসুলুল্লাহ সা.’র সহযোগী হবে।

আলি রা.’র ইসলাম গ্রহণের ঘটনায় আমরা রাসুলুল্লাহ সা.’র গোপনীয়তা রক্ষার বিষয়টি লক্ষ করতে পারি।

আলি রা. রাসুলুল্লাহ সা.’র কাছে আসলেন। রাসুলের সঙ্গে তখন ছিলেন খাদিজা রা.। তারা দুজন সালাত আদায় করছিলেন। আলি রা. এ দেখে বলে ফেললেন, ‘হে মুহাম্মাদ, এ কী!’ তিনি বললেন, ‘এটা হলো আল্লাহর দীন, যা তিনি নিজের জন্য নির্বাচিত করেছেন এবং যা-সহ তিনি তার রাসুলগণকে পাঠিয়েছেন। সুতরাং আমি তোমাকে আল্লাহ তাআলার দিকে—যিনি এক, যার কোনো শরিক নেই—এবং তার ইবাদতের দিকে দাওয়াত দিচ্ছি। আর তোমাকে এই দাওয়াতও দিচ্ছি যে, তুমি লাত এবং উযযাকে অস্বীকার করবে।’ এ কথা শুনে আলি রা. বললেন, ‘এ তো দেখছি এমন বিষয়, যা আমি আজকের পূর্বে কখনও শুনিনি। সুতরাং আমি কোনো বিষয়কে বাবা আবু তালিবের সঙ্গে আলোচনা না করে চূড়ান্ত করতে পারছি না।’ তখন রাসুলুল্লাহ সা. এ বিষয়টি অপছন্দ করলেন যে, তিনি প্রকাশ্যে ঘোষণা দেওয়ার পূর্বে তার রহস্য ফাঁস করে দেওয়া হবে। তাই তিনি তাকে বললেন, ‘হে আলি, যদি তুমি ইসলামগ্রহণ না করো, তাহলে অন্তত বিষয়টা গোপন রাখো।’ তখন আলি রা. এ দোদুল্যমানতার অবস্থায়ই সে রাতটি পার করলেন। অবশেষে আল্লাহ তার অন্তরে ইসলামের বীজ বপন করে দিলেন।[4]

এ কারণেই যখন মুসলমানদের সংখ্যা কিছুটা বৃদ্ধি পেলো তখন রাসুলুল্লাহ সা. কোনো গোপন স্থানে তাদের সঙ্গে মিলিত হতেন, তাদের দীন এবং আল্লাহর কালাম শিক্ষা দিতেন। আরকাম রা.’র বাড়ি এক্ষেত্রে সবিশেষ উল্লেখযোগ্য। এর ভিত্তিতেই বলা হয়ে থাকে যে, ইসলামের প্রথম মাদরাসা ছিলো ‘দারুল আরকাম’।[5]  এ সময়ে কেউ যদি সালাত আদায় করতে চাইতো, তাহলে কোনো গর্ত বা পাহাড়ের ঢালুতে গিয়ে সালাত আদায় করে নিতো।

প্রথম দিকে যারা ইসলামগ্রহণ করেছিলেন তাদের অধিকাংশই সম্প্রদায়ের বিশেষ ব্যক্তিবর্গ ছিলেন। তারা সমাজের নিম্নশ্রেণি কিংবা দাসদাসী ছিলেন না—যেমনটা ইসলামবিদ্বেষীরা প্রচার করে থাকে। তাদের সংশয়ের মৌলিক কারণ দুটি—প্রথম কারণ হলো, সহিহ বুখারিতে উল্লেখিত হিরাক্লিয়াসের সঙ্গে আবু সুফিয়ান রা.’র কথোপকথনসংক্রান্ত হাদিস। সেই হাদিসে এসেছে, ‘আমি তোমাকে জিজ্ঞেস করেছি, সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিরা তার অনুসরণ করে নাকি সাধারণ লোকেরা। তুমি বলেছো, সাধারণ লোকেরাই তার অনুসরণ করে। আর বাস্তবেও এরাই হয় রাসুলগণের অনুসারী।’[6] আরেকটি কারণ হলো, সে সময়ে যারা মুশরিকদের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন তারা ছিলেন গোলাম এবং দাসশ্রেণি। জনসমক্ষেই তাদের নির্যাতন-নিপীড়ন করা হতো। পক্ষান্তরে সমাজের উচ্চশ্রেণির মধ্য থেকে যারা ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন, তারা গোত্রীয় মর্যাদা এবং প্রতাপের কারণে প্রকাশ্য নির্যাতনের সম্মুখীন হওয়া থেকে বেঁচে যেতেন। হাঁ, নিজ গোত্রের মাঝে তাদের কাউকে কাউকে কষ্টকর পরিস্থিতির মোকাবেলা করতে হতো। তবে গোত্রীয় বিষয় সচরাচর বাইরে গড়াতো না এবং জনসমাগমের প্রকাশ্য স্থানগুলোতে তাদের ওপর নির্যাতন নেমে আসতো না। এজন্য তাদের আলোচনা তেমন প্রচারিত হয়নি এবং তা ব্যাপকতাও লাভ করেনি।[7]

তাহলে সারকথা দাঁড়াচ্ছে, প্রথমদিকে ইসলামগ্রহণকারী সাহাবিদের তিন ধরনের অবস্থা ছিলো। এর মধ্যে যারা প্রকাশ্যে জনসমক্ষে নির্যাতিত হয়েছেন তাদের বিষয়টিই ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়েছে। আর তারা ছিলেন সে সকল সাহাবি, মক্কায় যারা কোনো গোত্রভুক্ত ছিলেন না, বরং তারা ছিলেন গোলাম এবং দাসশ্রেণি। এ থেকেই অনেকে ভেবে নিয়েছেন যে, প্রথমদিকে ইসলামগ্রহণকারী সাহাবিদের অধিকাংশই বোধহয় সমাজের নিম্নশ্রেণি ছিলো। অমুসলিমরা এ বিষয়টাকে ফলাও করে প্রচার করে ইসলামের প্রতি লালিত আক্রোশ উগড়ে দেয়।

বাকি থাকলো হিরাক্লিয়াসের সঙ্গে আবু সুফিয়ান রা.’র কথোপকথনসংক্রান্ত হাদিস। সেখানে এসেছে—‘আমি তোমাকে জিজ্ঞেস করেছি, সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিরা তার অনুসরণ করে নাকি সাধারণ লোকেরা। তুমি বলেছো, সাধারণ লোকেরাই তার অনুসরণ করে। আর বাস্তবেও এরাই হয় রাসুলগণের অনুসারী।’ এখানে ‘সাধারণ’ (অন্যভাবে অনুবাদ করলে ‘দুর্বল’) শব্দ দ্বারা কেউ কেউ ভেবে নিয়েছেন যে, এর দ্বারা উদ্দেশ্য বোধহয় সমাজের নিম্নশ্রেণি, দাসদাসী। তবে বিষয়টি আসলে এমন নয়। এজন্যই সহিহ বুখারির ব্যাখ্যাকার হাফিজ ইবনু হাজার রহ. বলেন,

‘এখানে ‘সম্ভ্রান্ত ব্যক্তি’ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো সম্প্রদায়ের উদ্ধত এবং অহংকারী ব্যক্তিবর্গ। যে-কোনো ‘সম্ভ্রান্ত ব্যক্তি’ই এর দ্বারা উদ্দেশ্য নেয়া হবে না। যাতে করে আবু বকর রা., উমর রা. এবং অনুরূপ সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিরা—যারা হিরাক্লিয়াসের এই জিজ্ঞাসার পূর্বে ইমান এনেছিলেনি—এর আওতায় না এসে যায়।’

এরপর তিনি ‘তুমি বলেছো, সাধারণ লোকেরাই তার অনুসরণ করে। আর বাস্তবেও এরাই হয় রাসুলগণের অনুসারী।’—এর ব্যাখ্যায় বলেন,

‘এর অর্থ হলো, নবিগণের অনুসারী সাধারণত বিনয়ীরাই হয়ে থাকে; অহংকারীরা নয়, যারা হিংসা এবং বিদ্বেষবশত নবিগণের বিরোধিতায় অনড় থাকে; যেমন: আবু জাহ্‌ল ও তার অনুসারীরা।’[8]

সিরাতের নির্ভরযোগ্য গ্রন্থাবলির তথ্যের আলোকে প্রতীয়মান হয় যে, ইসলামের সূচনাকালে, গোপন দাওয়াতের সময়কালে রাসুলুল্লাহ সা.-সহ মুসলমানদের সর্বমোট সংখ্যা ছিলো তেষট্টিজন। এর মধ্যে হতদরিদ্র দাসদাসী এবং অনারব দুস্থ সাহাবির সংখ্যা মাত্র তেরোজন। পূর্বের সংখ্যার তুলনায় এই সংখ্যা অনেক কম। এ অবস্থায় নিশ্চয়ই ‘অধিকাংশ’ই ছিলেন নিম্নশ্রেণি এ কথা বলা কোনোভাবেই শুদ্ধ হয় না।[9]

এককথায়, যার সামনে ইসলামের সত্যতা এবং যথার্থতা প্রকাশিত হয়েছে সে-ই নিজেকে মুসলমানদের কাতারে শামিল করে নিজেকে ধন্য করেছে। এক্ষেত্রে ধনী বা গরীব কেউই সবিশেষ নয়। কারণ, ইসলাম যদি সমাজতন্ত্রের মতো দরিদ্রদের নিয়ে সমাজের মোড়ল শ্রেণির বিরুদ্ধে সংগ্রামে নামার নাম হতো, তাহলে এ ধরনের দরিদ্রের সংখ্যা তো মক্কায় সহস্র ছিলো। তবে তারা কেন ইসলাম গ্রহণ করলো না? মক্কি জীবনে মুসলমানদের সংখ্যা কেন তাহলে এত কম ছিলো? বরং বাস্তবতা তো হলো, ইসলামের পূর্বে যারা শান্তির দিন গুজরান করছিলো, সেই মানুষগুলোই যখন ইসলামের ছায়াতলে এসেছে তখন তাদের ওপর পাশবিক নির্যাতনের অমানবিক চাপ বয়ে গেছে। অথচ ইতোপূর্বে তারা ভালোই ছিলো। এমনকি যদি তারা ইসলাম ছেড়ে দিতো তবুও সুখে-শান্তিতে বসবাস করার সুযোগ পেয়ে যেতো। ইসলাম মহান আল্লাহর মনোনীত সর্বশেষ দীন। ইসলাম সমাজের উচ্চশ্রেণির বিপক্ষে নিম্নশ্রেণির কিংবা নিম্নশ্রেণির বিপক্ষে উচ্চশ্রেণির কোনো বিপ্লব বা সংগ্রাম নয়। ইসলাম তো বিশ্বমানবতার মুক্তির ধর্ম। এতে নেই গরিব-ধনীর কোনো ভেদাভেদ। জয়তু ইসলাম।

এখানে একটি বিষয় সবিশেষ উল্লেখযোগ্য : যদিও পাঁচওয়াক্ত সালাত ফরজ করা হয়েছে মেরাজের রাত্রিতে, যা ছিলো রাসুলের নবুওয়াতপ্রাপ্তির এক যুগেরও বেশি সময় পরে, কিন্তু ইসলামে ইমান আনয়ন এবং তাওহিদে বিশ্বাস স্থাপনের পর মুসলিমরা সর্বপ্রথম যে আমলটি করেছিলো, তা ছিলো সালাত আদায়। যদিও সে সময়ে সালাত ফুরজ ছিলো নাকি নফল এ নিয়ে আলিমগণের মাঝে বিতর্ক আছে। তবে তা ফরজই হোক কিংবা নফল, তাওহিদের পর মুসলমানরা সর্বপ্রথম এ আমলটিই আদায় করেছে। এর দ্বারা এ সালাতের গুরুত্ব অনুমিত হয়। ইমানের ঘোষণার পূর্ণতার জন্য সালাত অনেকটা অবধারিত বিষয়। ইমান হলো অন্তরের আমল। আর অন্তরের সেই অব্যক্ত আমলের প্রকাশ্য রূপ হলো সালাত, যা বান্দা এবং তার স্রষ্টার মাঝে সেতুবন্ধন।

 

ফিকহ

 

  1. আল্লাহ তাআলা যখন প্রিয়নবি সা.কে সুরা মুদ্দাসসিরের প্রথম আয়াত অবতীর্ণ করার মাধ্যমে দাওয়াতের মিশন নিয়ে নামার নির্দেশ দিলেন তখন কালবিলম্ব না করেই রাসুলুল্লাহ সা. ইসলামের দাওয়াত প্রচারের মহান ব্রত পালনে আত্মনিমগ্ন হলেন। আল্লাহ তাআলা স্বতন্ত্র ওহির মাধ্যমে তাকে গোপনীয়তা রক্ষা করে দাওয়াত দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন বিধায় তিনি পরবর্তী নির্দেশ আসা পর্যন্ত দীর্ঘ তিন বছর গোপনে দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন। আল্লাহ তাআলা প্রথম দিনই যদি তাকে প্রকাশ্যে দাওয়াত দেওয়ার নির্দেশ দিতেন তাহলে তিনি তা-ই করতেন। এটা ভাবার কোনোই অবকাশ নেই যে, রাসুলুল্লাহ সা. প্রাণের ভয়ে তার দাওয়াতকে সকলের থেকে গোপন রেখেছেন। এই সময়টা ছিলো প্রশিক্ষণ এবং প্রস্তুতির কাল; ভীরুতা কিংবা পলায়নপর মানসিকতা লালনের কাল নয়।

 

  1. রাসুলুল্লাহ সা.’র অজানা ছিলো না যে, যেহেতু আল্লাহ তাকে সর্বশেষ এবং সর্বশ্রেষ্ঠ নবি হিসেবে প্রেরণ করেছেন তাই দুদিন আগে হোক কিংবা পরে, তাকে প্রকাশ্য দাওয়াতের মিশন নিয়ে নামতেই হবে এবং তখন আলোর শত্রুদের প্রচণ্ড বিরোধিতা ও দমন-পীড়নের সম্মুখীন হতেই হবে; যেমনটা তার পূর্বের অন্যান্য নবিগণের ক্ষেত্রেও হয়েছে। এর পূর্বে বছর তিনেক সময় গোপনে দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনার অন্যতম রহস্য হলো, যাতে করে ইসলামের খুঁটিকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরবে সাহাবিদের—এমন একটি জামাত প্রস্তুত হয়; যারা ইসলামের দাওয়াতকে দিগ্বিদিক ছড়িয়ে দিতে পারবে এবং কিছুটা হলেও খোদাদ্রোহীদের দাঁতের দাগ থেকে একে প্রতিরোধ করতে পারবে। ইসলামের সূর্য পৃথিবীর আকাশে আলো বিকিরণ করার পূর্বেই যেন হারিয়ে না যায়—গোপন দাওয়াতি কার্যক্রমের অন্যতম রহস্য ছিলো এটাও।[10] তবে রাসুলুল্লাহ সা.’র দাওয়াতের এই পন্থা থেকে কারও কোনো ধরনের গলদ ব্যাখ্যা নেওয়ার অবকাশ নেই। শাইখ আবু বকর জাযায়িরি রহ. বলেন,

মুসলমানদের দেশে যারা গোপনে দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনার কথা বলে, তাদের জন্য রাসুলুল্লাহ সা.’র তিন বছর গোপনে দাওয়াত দেওয়ার ঘটনা কোনো দলিল নয়। কারণ, রাসুলুল্লাহ সা. এবং তার সাহাবিদের “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ” বলা কিংবা আজান দেওয়া বা সালাত আদায়ের কোনো সুযোগই ছিলো না। যখন তাদের ভিত্তি কিছুটা শক্ত হয়েছে তখন তাদের প্রকাশ্যে দাওয়াত প্রদানের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অনন্তর তারা প্রকাশ্যে দাওয়াত দিয়েছেন এবং এ কারণে কী পরিমাণ কষ্ট সয়েছেন—তা তো মুসলমানদের মাঝে সুবিদিত।[11]

সুতরাং দাওয়াতের ক্ষেত্রে মূল বিধান হলো, প্রকাশ্যে ঘোষণা দেওয়া। এক্ষেত্রে গোপনীয়তার অনুমতির বিষয়টি বিশেষ প্রেক্ষাপট এবং অপারগতার সময়ের সাথে বিশেষিত; ব্যাপকভাবে প্রযোজ্য নয়।[12]

 

  1. আল্লাহ তাআলা কারও ওপর সাধ্যাতীত বোঝা চাপিয়ে দেন না।[13] যারা কোনো মৃত সমাজে ইসলামকে পুনরুজ্জীবিত করতে চায়, যারা জাহেলি সমাজে ইসলাম প্রতিষ্ঠিত করার স্বপ্ন দেখে তাদের জন্য আল্লাহর রাসুল সা.’র মাঝে রয়েছে উত্তম আদর্শ। রাসুলুল্লাহ সা. প্রকাশ্যে ইসলামের ঘোষণা দেওয়ার পূর্বে, আল্লাহর প্রতি ইমান এবং তাগুতকে প্রত্যাখ্যানের দাওয়ায়ত দেওয়ার পূর্বে দীর্ঘ তিন-তিনটি বছর গোপনে এক জামাতকে প্রস্তুত করেছেন। যে-কোনো বিপ্লবের জন্য একনিষ্ঠ মানুষদের একটি দলের অস্তিত্ব এবং তাদের যথাযথ দৈহিক এবং আত্মিক প্রশিক্ষণ পূর্বশর্ত। রাসুলুল্লাহ সা. কীভাবে তার সাহাবিদের প্রশিক্ষিত করেছেন, কীভাবে তিনি গোপনীয়তার মধ্যেও তাদের তারবিয়াত করেছেন—এখানে আমরা এ বিষয়টি লক্ষ করবো।

যারা ইসলাম গ্রহণ করতো, রাসুলুল্লাহ সা. প্রথমে তাদের মাঝে এক ধরনের অলিখিত শৃঙ্খলা বেঁধে দিতেন। তিনি দু-তিন জন করে করে সাহাবিদের জুড়ে দিতেন। সাধারণত, যার ধন-সম্পদ এবং শক্তি-সামর্থ্যে কিছুটা প্রাচুর্য থাকতো, তাকে মূল রেখে তার সঙ্গে দুয়েকজনকে মিলিয়ে দিতেন। তারা তার সঙ্গে সঙ্গে থাকতো। তার খাবারের অতিরিক্ত অংশ খেয়ে নিতো। নিজেদের মধ্যে ছোট ছোট হালাকা করতো। যে কুরআনের কিছু অংশ মুখস্থ জানতো, সে অন্যদেরও কুরআনের সেই অংশ শিখিয়ে দিতো। রাসুলুল্লাহ সা. সকলকেই সতর্কতার সঙ্গে সময় দিতেন। রাসুলুল্লাহ সা.’র শিখিয়ে দেওয়া বিষয়গুলোকেও তারা নিজেদের মধ্যে মুযাকারা করতো। এভাবে ভ্রাতৃত্ববোধ এবং ইলমচর্চার ছোট ছোট হালাকা গড়ে উঠেছিলো।

এই প্রজন্মটা মূলত আলকুরআনের মানহাজে গড়ে উঠছিলো। রাসুলুল্লাহ সা. আকিদা, ইবাদত, আখলাক এবং নিরাপত্তা বিষয়ে তাদের দরস দিতেন। সতর্কতা-নিরাপত্তার বিষয়টি তখন খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিলো। এজন্য আলকুরআনের অনেক আয়াতে সতর্কতার আলোচনা এসেছে সবিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে। বিপ্লবের জন্য বিপ্লবের সঙ্গে সম্পৃক্ত প্রতিটি সদস্য সতর্ক এবং চৌকান্ন হওয়া একান্ত অপরিহার্য।

এ সময়টাতে তারা যাদের দাওয়াত দিতেন, দাওয়াত নিয়ে যাওয়ার পূর্বে তারা তার সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে নিতেন। কারও ব্যাপারে সম্পূর্ণ নিশ্চিত না হয়ে তার সামনে নিজেদের মিশনের কথা, আল্লাহ তাআলার নির্বাচিত দীনের কথা আলোচনা করতেন না। এমনকি আপনজনদের থেকেও গুরুত্বের সঙ্গে তারা এই নীরব বিপ্লবের কথা চেপে গেছেন। রাসুলুল্লাহ সা. নিজে পুরো বিষয়টার তত্ত্বাবধান করতেন। নেতা যত চৌকান্ন হয়, মিশন তত বেশি সফল হয়। নেতা নিজে পুরো বিষয়ের তত্ত্বাবধান না করে অন্যের ওপর নির্ভর করলে মিশন ব্যর্থ হওয়ার শঙ্কা এড়ানো যায় না কিছুতেই। সে সময়টাতে যদি ইসলামের দাওয়াত প্রচার করাই শুধু রাসুলুল্লাহ সা.’র লক্ষ্য হতো, তাহলে এর জন্য তো সবচে উপযুক্ত জায়গা ছিলো কা‘বার অভ্যন্তর। কিন্তু রাসুলুল্লাহ সা. গোপনীয়তা রক্ষার ব্যাপারে এতটাই সতর্কতা অবলম্বন করেছেন যে, তিনি কোনো প্রকাশ্য জায়গায়ই সাহাবিদের সঙ্গে মিলিত হতেন না।[14]

প্রথমে রাসুল সা. এবং তার সাহাবিরা মিলিত হওয়ার জন্য কোনো জায়গা নির্দিষ্ট করা ছিলো না। একদিন সাহাবিদের এক জামাতের সাথে মক্কার এক গিরিপথে সা‘দ ইবনু আবি ওয়াক্কাস রা. সালাত আদায় করছিলেন। এমতাবস্থায় মুশরিকরা তাদের দেখে ফেলে। তারা তাদের তীব্র সমালোচনা করে, ধিক্কার জানায়, কটু কথা বলে। একপর্যায়ে তারা সাহাবিদের সঙ্গে লড়াইয়ে লিপ্ত হয়। তখন সা‘দ রা. প্রতিরোধ করতে গিয়ে উটের চোয়ালের হাড় দিয়ে এক মুশরিককে আঘাত করে আহত করে ফেলেন। তার প্রচণ্ড আঘাতে মুশরিক ব্যক্তির মাথা জখম হয়ে যায়। ইসলামে এটাই ছিলো প্রথম রক্তপাত।[15]

এ ঘটনার পর রাসুলুল্লাহ সা. সাহাবি আরকাম ইবনু আবিল আরকাম রা.’র ঘরকে দাওয়াতের নতুন মারকায হিসেবে গ্রহণ করেন। সাহাবিরা গোপনে সেই ঘরে একত্রিত হতেন। রাসুলুল্লাহ সা. তাদের দীনের তালিম দিতেন। সাহাবিরা মনোযোগসহকারে শ্রবণ করতেন। রাসুলুল্লাহ সা. তাদের আল্লাহর কথা স্মরণ করাতেন, কুরআন পাঠ করে শোনাতেন। তারা তার সামনে বিস্তারিত হালত তুলে ধরতো। সব শুনে তিনি তাদের তারবিয়াত করতেন। আর তার তারবিয়াত হতো সরাসরি আল্লাহ তাআলার তত্ত্বাবধানে।[16]

 

  1. ফলাফলের জন্য তাড়াহুড়া না করা। রাসুলুল্লাহ সা. যেহেতু ইসলামের দাওয়াত বিশ্ব-মানবতার কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য আদিষ্ট হয়েছিলেন, তাই অবশ্যই তিনি দাওয়াতের প্রতি ভালোবাসা লালন করতেন, লোকেরা যেন এই দাওয়াতকে সহজেই গ্রহণ করে নিয়ে য়াল্লাহ তাআলার ক্রোধ এবং পাকড়াও থেকে মুক্তি পেয়ে যায় এর প্রতি অনুরাগী ছিলেন। এতদসত্ত্বেও তিনি নির্ধারিত সময় পর্যন্ত ধৈর্যধারণ করেছেন। দায়িদের জন্য এই গুণটি—অর্থাৎ ক্রমান্বয়ে দাওয়াত পেশ করা, প্রথমে মানসিকতা প্রস্তুত করা এবং এরপর মূল বার্তাটি প্রদান করা—অতি জরুরি। আয়িশা রা. বলেন,

‘মুফাসসাল সুরাসমূহের মাঝে প্রথমত ঐ সুরাগুলো অবতীর্ণ হয়েছে, যাতে জান্নাত ও জাহান্নামের আলোচনা রয়েছে। তারপর যখন লোকেরা দলে দলে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করতে লাগলো, তখন হালাল-হারামের বিধানসংবলিত সুরাগুলো অবতীর্ণ হলো। যদি প্রথমেই এ আয়াত অবতীর্ণ হতো যে, “তোমরা মদ পান কোরো না”, তাহলে লোকেরা বলতো, “আমরা কখনো মদপান ত্যাগ করবো না।” যদি শুরুতে অবতীর্ণ হতো, “তোমার ব্যভিচার কোরো না”, তাহলে তারা বলতো, “আমরা কখনো অবৈধ যৌনাচার ত্যাগ করবো না।”’[17]

প্রতিটি মানুষের মাঝে সত্যকে গ্রহণ করে নেওয়ার স্বভাবজাত যোগ্যতা রয়েছে।[18] তবে এই স্বভাবজাত যোগ্যতা গুনাহ এবং পাপের অন্তরালে ঢাকা পড়ে যায়। এজন্য প্রয়োজন ধৈর্যধারণ এবং প্রতীক্ষার। এর দৃষ্টান্ত এভাবে দেওয়া যায়—কেউ যদি কোনো স্তুপে আগুন জ্বালায়, এরপর সেই স্তুপ আগুনে পুড়ে ছাই হয়, তখন বাইরে থেকে যদিও মনে হয়, এখানে কোনো আগুন নেই; কিন্তু কেউ যদি ছাই হয়ে যাওয়া স্তুপের ওপর ধীরে ধীরে ফুঁ দেয়, একবার দুবার এবং কয়েকবার সে এই চেষ্টাটা করে, তাহলে সে কিন্তু ঠিকই কিছুটা সময় অতিবাহিত হবার পর ভেতর থেকে অগ্নিস্ফুলিঙ্গ বের করে আনতে পারবে, যা পুনরায় আপন শক্তিক্ব জ্বলে উঠবে এবং পাশে কিছু পেলে তাকেও জ্বালিয়ে ফেলবে।

কিন্তু কেউ যদি তাড়াহুড়াবশত খুব জোরে ফুঁ দেয় তাহলে ছাই উড়ে এসে তার মুখে পড়বে এবং অগ্নিস্ফুলিঙ্গ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে যাবে। তখন আর সে এর দ্বারা কোনো উপকারই লাভ করতে পারবে না। আশার পিদিমের সলতে শেষটুকুও নিভে যাবে।  দাওয়াতের বিষয়টাও এমনই। যে তাড়াহুড়া করে, তার লাভের থেকে ক্ষতি হয় ঢের বেশি। আর যে ধৈর্যের সাথে ধীরস্থিরভাবে এগোয় এবং প্রথমে অন্তরের জংকার দূর করে এরপর তাতে দাওয়াতের আলপনা আঁকে, সে বিলম্বে হলেও তার লক্ষ্যে সফলতা লাভ করে। আল্লাহ তো আমাদের বিজয়ের জন্যই প্রস্তুত করছেন। তাই তাড়াহুড়া না করে ধীরস্থিরভাবে এগোনোটাই নিরাপদ।[19]

 

  1. আবু আবু বকর রা. ছিলেন এমন ব্যক্তিত্ব, এই উম্মতের মধ্যে যিনি সর্বপ্রথম দাওয়াতের ব্রত পালন করেছেন। জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত দশজন সাহাবির মধ্য থেকে পাঁচজনই এমন, যারা তার হাতে ইসলামগ্রহণ করেছেন।[20] কখনো এক ব্যক্তি একাকীই অসংখ্য মানুষের দায়িত্ব আঞ্জাম দেয়। যেমন : আল্লাহ তাআলা ইবরাহিম আ.’র ব্যাপারে বলছেন,

নিশ্চয়ই ইবরাহিম ছিলো আল্লাহর অনুগত এক উম্মত।[21]

অর্থাৎ তিনি একাই ছিলেন এক উম্মত তথা জাতি। আর তা এই অর্থে যে, একটি জাতির মাঝে যে সমস্ত গুণাবলি পাওয়া যায়, এক ব্যক্তি ইবরাহিমের মাঝেই তা বিদ্যমান ছিলো। উল্লেখ্য, কারও কারও মতে এখানে উম্মতের অর্থ হলো আদর্শ পুরুষ, ইমাম বা কল্যাণের শিক্ষক।

আবু বকর রা.’র দাওয়াত ছিলো ব্যক্তিগত দাওয়াত। এ ধরনের দাওয়াতের খেদমত ছোট-বড়, নারী-পুরুষ সকলেই আঞ্জাম দিতে পারে। সামগ্রিক দাওয়াতের থেকেও এর কার্যকারিতা এবং উপকারিতা অনেক বেশি। কারণ, এর পরিধি অনেক বিস্তৃত। হাঁটে-ঘাটে, উঠতে-বসতে, দোকানে কিংবা যানবাহনে সব জায়গায়ই এই কার্যক্রম পরিচালনা করা যায়। আন্তরিকতা এবং ঘনিষ্ঠতা গড়ে ওঠার পর কৌশলে শ্রোতার সামনে তার উপযোগী করে দাওয়াত উপস্থাপন করা যায়।

আলজিরিয়ায় ঔপনিবেশের সময় ফ্রান্স সরকারের হাই কমিশনার একদিন শাইখ আবদুল হামিদ জাযায়িরি রহ.কে ডেকে পাঠালো। সে শাইখকে সতর্কবাণী হিসেবে বললো, ‘হয়তো আপনি আপনার শিক্ষার্থীদের এসব চেতনার জ্ঞানদান থেকে নিবৃত্ত হবেন, নতুবা আমি সৈন্য পাঠিয়ে মসজিদই বন্ধ করে দেবো, যেখানে বসে আপনি আমাদের বিরুদ্ধে বিষ ছড়াচ্ছেন।’ শাইখ রহ. তখন তাকে জবাব দিলেন, ‘হে অধিকর্তা কমিশনার, আপনি তা পেরে উঠবেন না।’ এ কথা শুনে সে রাগে অগ্নিশর্মা হয়ে বললো, ‘কেন আমি তা পেরে উঠবো না?’ শাইখ রহ. বললেন, ‘আমি যখন কোনো উৎসবে থাকি তখন উৎসবে অংশগ্রহণকারীদের তালিম দিই। যখন কোনো শোক-সমাবেশে থাকি শোকপ্রকাশকারীদের নসিহত করি। যখন কোনো রেলগাড়িতে চড়ে বসি তখন মুসাফিরদের শিক্ষাদান করি। যদি আমি কারাগারে প্রবেশ করি তাহলে কারারুদ্ধ ব্যক্তিদের পথ দেখাই। যদি তোমরা আমাকে হত্যা করে ফেলো তাহলে দেশবাসীর অনুভূতি জ্বলে উঠবে। হে কমিশনার, তোমাদের জন্য উত্তম হবে তোমরা এ জাতির দীন এবং ভাষার ব্যাপারে কোনো হস্তক্ষেপ কোরো না।’[22]

 

[1] সুরা মুদ্দাসসির : ১-৩

[2] সিরাতু ইবনি হিশাম : ১/২৬২

[3] সুরা হিজর : ৯৪

[4] আলবিদায়া ওয়ান নিহায়া : ৩/২৪

[5] সহিহ বুখারি : ৩৮৬১; আল-বিদায়া ওয়ান-নিহায়া : ৩/৩৪

[6] সহিহ বুখারি : ৬

[7] আল-বিদায়া ওয়ান-নিহায়া : ৩/২৮; হাদায়িকুল আনওয়ার : ১/৩১৫; সিরাতু ইবনি হিশাম : ১/২৬৮; মিন মায়িনিস সিরাত : ৪২

[8] ফাতহুল বারি : ১/৩৫-৩৬, হাদিস : ৬

[9] মিন মায়িনিস সিরাত : ৪৪। আলোচ্যবিষয়ে শাইখ সালিহ আহমাদ শামি তার এই গ্রন্থে নাতিদীর্ঘ আলোচনা করেছেন। তিনি দলিল এবং বাস্তবতার আলোকে বিষয়টি প্রমাণিত করেছেন। শাইখ সাইদ রামাদান বুতি এক্ষেত্রে ভিন্ন অবস্থান গ্রহণ করেছেন। তার সেই অবস্থান খণ্ডনের জন্যই মূলত শাইখ সালিহ আহমাদ শামি এ বিষয়ে সিরাত এবং শুরুহুল হাদিসের নির্ভরযোগ্য গ্রন্থের বরাতে দলিলসমৃদ্ধ আলোচনার সূত্রপাত করেছেন। এবং তার থেকে ড. আলি সাল্লাবি তার সিরাতগ্রন্থে আলোচনার সারকথা উদ্ধৃত করেছেন। আমাদের সমাজের অনেক বক্তা এবং লেখকও ভুল মতটিই প্রচার করে থাকেন। উল্লেখিত সংশয় দুটিতে আক্রান্ত হয়েই তারা মূলত এ ব্যাপারে ভুল অবস্থান গ্রহণ করেছেন।

[10] তাআমমুলাত ফিস সিরাতিন নাবাবিয়্যাহ : ৪২/৪৩

[11] হাযাল হাবিব ইয়া মুহিব, জাযায়িরি : ৯৯

[12] মানাহিজু আহলিল আহওয়া : ১৪৩

[13] সুরা বাকারা (২) : ২৮৬

[14] দাওলাতুর রাসুল মিনাত তাকওয়িন ইলাত তামকিন : ২১৮

[15] সিরাতু ইবনি হিশাম : ১/২৩৬

[16] আততারবিয়াতুল কিয়াদিয়্যাহ : ১/১৯৮

[17] সহিহ বুখারি : ৪৯৯৩

[18] সহিহ বুখারি : ১৩৮৫

[19] ফিকহুস সিরাত, আব্দুল কারিম যায়দান : ১৪১-১৪২

[20] মিনহাজুস সুন্নাহ, ইমাম ইবনু তাইমিয়া : ৫/২১

[21] সুরা নাহল (১৬) : ১২০

[22] নাহওয়া উসলুবিন আমসাল লিদ-দাওয়াতিল ইসলামিয়্যাহ, মাহমুদ মুহাম্মাদ আম্মারা : ৯২

Share This