দীর্ঘদিন থেকে একটা বিষয় নিয়ে কিছু ভাইকে ধূম্রজাল সৃষ্টি করতে দেখা যাচ্ছে। এসব স্বশিক্ষিত ভাইয়ের উদ্ভট তাহকিক (?) দ্বারা প্রভাবিত হয়ে অনেকে আবার যুগের শ্রেষ্ঠ উলামা ও দাঈদেরকে অজ্ঞ বলে আখ্যায়িত করছে। তাদেরকে আসন্ন ফিতনাসমূহের ব্যাপারে অসচেতন ভাবছে। এমনকি কেউ কেউ তো তাদের ব্যাপারে মিথ্যাচার করে ফিতনা সৃষ্টির ভুয়া অভিযোগ তুলে জনসাধারণের অন্তরে তাদের ব্যাপারে বীতশ্রদ্ধা সৃষ্টি করছে। ঈসা আ. ও মাহদির আগমন : একযুগে নাকি ভিন্নযুগে—এ নিয়ে একটা লেখা ফেসবুকে ব্যাপক শেয়ার হয়েছে। অনেক ভাই না বুঝেও তা শেয়ার করেছেন। তারা অজ্ঞতাকে ইলম এবং ধোঁয়াশাকে মহান তাহকিক ভেবে বিভ্রান্ত হয়েছেন। বক্ষ্যমাণ নিবন্ধে আমরা অত্যধিক প্রচারিত সেই লেখার ব্যবচ্ছেদ করব ইনশাআল্লাহ।


মূল আলোচনায় যাওয়ার আগে আমরা সেই লেখাটির মূল অংশের দিকে একবার নজর দিই :


//‘আমাদের মুসলমানদের মধ্যে একটি ভূল ধারণা হচ্ছে, ইমাম মাহদীর যুগেই হযরত ঈসা (আঃ) আকাশ থেকে অবতরণ করবেন।কিন্তু আসলেই কি তাদের ধারণা মত এরকম হবে? নাকি ইমাম মাহদী ও ঈসা (আঃ) আলাদা দুটি যুগে আসবেন?

♣️কেন তারা এরকম ধারণা করছেন?

** হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “সেদিন কেমন হবে, যখন মরিয়মের পুত্র হযরত ঈসা (আঃ) তোমাদের মাঝে অবতরণ করে তোমাদেরই একজনের পিছনে ফজরের নামাজ আদায় করবেন”? (সহিহ বুখারী)

⚫উল্লেখ্য এই হাদিসে কোথাও ইমাম মাহদীর কথা উল্লেখ করা হয়নি, বরং এখানে স্পষ্ট করে “তোমাদের ইমামের ” কথা বলা হয়েছে।

** হযরত জাবের (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “আমার উম্মতের একদল মুজাহিদ কিয়ামত পর্যন্ত শত্রুর উপর বিজয়ী থাকবে। একপর্যায়ে আকাশ থেকে ঈসা ইবনে মারিয়ম (আঃ) অবতরণ করলে মুসলমানদের সেনাপতি বলবে- আসুন, নামাজের ইমামতি করুন! তখন ঈসা (আঃ) বলবেন – না, বরং তোমাদের একজন অপরজনের নেতা (অর্থাৎ তুমি ইমামতি কর)। এটি এই উম্মতের জন্য আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে একটি বিরাট সম্মানের”।
(সহিহ মুসলিম, মুসনাদে আহমাদ)

⚫এই হাদিসেও ইমাম মাহদীর কথা বলা হয়নি, বরং বলা হয়েছে, “তোমাদের একজন অন্যজনের আমীর”।

** হযরত আবু সাঈদ খুদুরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “ঈসা ইবনে মারিয়ম (আঃ) যার পিছনে নামাজ পরবেন, তিনি তোমাদের মধ্য থেকেই একজন”।
(হাদিসের মানঃ সহিহ, “কিতাব আল মাহদী” লেখকঃ হাফিজ আবু নাঈম রহঃ “ফাইয়াদ আল কাদির” লেখকঃ আল মানাওয়ী)

⚫এই হাদিসেও কোথাও ইমাম মাহদীর কথা উল্লেখ করা হয়নি, বরং এখানেও “তোমাদের একজনের” কথা বলা হয়েছে।

** হযরত উসমান ইবনে আবুল আস (রা.) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা.)কে বলতে শুনেছি, “হযরত ঈসা (আ.) ফজরের নামাযের সময় অবতরণ করবেন। তখন ‘মুসলমানদের আমীর’ তাঁর নিকট আবেদন জানাবেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি নামাজের ইমামতি করুন । তিনি বলবেন, এ উম্মত একে অন্যের উপর আমীর (অর্থাৎ তোমাদের জন্যই নামাজের ইকামত দেওয়া হয়েছে, তাই তোমরাই নামাজ পরাও) তখন আমীর অগ্রসর হয়ে নামায পড়াবেন।”
(মুসনাদে আহমদ, ৪র্থ খণ্ড, ২১৬ পৃষ্ঠা/ দুররে মানসুর, ২য় খণ্ড, ২৪৩ পৃষ্ঠা/ মুসতাদরাকে হাকিম, ৪র্থ খণ্ড, ৪৭৮ পৃষ্ঠা)

⚫এই হাদিসেও ইমাম মাহদীর কথা কোথাও বলা নেই, বরং বলা হয়েছে “মুসলমানদের আমিরের” কথা। তাই বেশিরভাগ আবেগী মুসলমান মনে করেছেন, এসকল হাদিস গুলোতে মুসলমানদের ইমাম বলতে, ইমাম মাহদীর কথা বলা হয়েছে। যদিও এই ধারণাটি একদমই ঠিক নয়। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর এমন কোন সহিহ, হাসান ও জয়িফ হাদিসে ও সরাসরি বলা হয়নি যে, হযরত ঈসা (আঃ) ও মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল্লাহ আল মাহদী একই সময়ে আত্নপ্রকাশ করবেন। বরং অসংখ্য হাদিস রয়েছে, যে হাদিস গুলো নিয়ে গবেষণা করলে বুঝা যায়, হযরত ঈসা আঃ ও ইমাম মাহদীর আবির্ভাবের মধ্যে রয়েছে বিশাল একটা সময়ের ব্যবধান।//


লেখক এখানে চারটি হাদিস উল্লেখ করে এর সরল সমীকরণ করার চেষ্টা করেছেন। তিনি তার অপরিণত তাহকিকের ভিত্তিতে এই সিদ্ধান্তেও উপনীত হয়েছেন যে, মাহদি ও ঈসা আ.-এর পারস্পরিক সাক্ষাতের ব্যাপারে সহিহ তো দূরের কথা; কোনো হাসান বা যয়িফ হাদিসও নেই। লেখক যদি অন্তত এতটুকু বলতেন যে, ‘আমি আমার গবেষণায় পাইনি’, তবুও না হয় এটাকে তার জন্য ওজর হিসেবে বিবেচনা করা যেত। কিন্তু তিনি অজ্ঞতাকে নিজের দিকে নিসবত না করে সরাসরি এর অস্তিত্বই অস্বীকার করে বসলেন। এটা তাহকিকের আদব নয়। শত আফসোস তার জন্য। রাসুলুল্লাহ ﷺ-এর নামে কথা বলতে প্রতিটি মুসলমানেরই সতর্কতা কাম্য।


আমরা স্বীকার করছি, লেখক তার উল্লেখিত রেফারেন্সে ওপরে যে চারটি বর্ণনা উদ্ধৃত করেছেন, সেখানে সরাসরি ‘মাহদি’র কথা নেই; বরং ‘ইমাম’ ‘আমির’ ইত্যাদি শব্দের উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু হাদিসশাস্ত্রের প্রাথমিক ছাত্ররাও জানে, কোনো এক গ্রন্থ থেকে হাদিসের পাঠ দেখেই তার ব্যাপারে এ ধরনের সিদ্ধান্ত দেওয়া বাস্তবসম্মত নয়। বরং এই হাদিসটি আর কোন কোন গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে, কারা কারা বর্ণনা করেছেন, সেসব বর্ণনায় এর পাঠ কেমন এসেছে, কোনো অংশ অতিরিক্ত আছে কি না, থাকলে সেই অংশ প্রমাণিত কি না, মুহাদ্দিসগণ এর কী ব্যাখ্যা করেছেন ইত্যাদি অনেক বিষয় দেখে এরপর কোনো হাদিসের ব্যাপারে সিদ্ধান্তে আসতে হয়। কিন্তু লেখক সেই কসরত করার কোনো প্রয়োজনীয়তাই অনুভব করেননি অথবা শাস্ত্রীয় এসব নীতির ব্যাপারে হয়তো তার ন্যূনতম জানাশোনাও নেই। এখানে তাকে তাচ্ছিল্য করা উদ্দেশ্য নয়; শুধু বাস্তবতার দিকে ইঙ্গিত করার জন্য একটা প্রমাণ দিই। লেখক তার এই লেখায় যেসব রেফারেন্স উল্লেখ করেছেন, সেগুলোর নাম যে অজ্ঞতাবশত কীভাবে বিকৃত করে ফেলেছেন, তার একটি উদাহরণ লক্ষ করা যেতে পারে। তিনি লেখেন, ‘লেখকঃ হাফিজ আবু নাঈম রহঃ “ফাইয়াদ আল কাদির” লেখকঃ আল মানাওয়ী।’ এখানে পাশাপাসি তিনটি নাম উল্লেখিত হয়েছে, তিনওটিই ভুল। নুয়াঈমকে বানিয়েছেন নাঈম, ফাইযুল কাদিরকে ফাইয়াদ আল কাদির এবং মুনাওয়িকে মানাওয়ী।


উল্লিখিত চারটি হাদিসে অস্পষ্ট শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। কোথাও বলা হয়েছে ‘ইমাম’, কোথাও ‘আমির’, কোথাও-বা ‘তোমাদের একজন’। এখন প্রথমে আমরা খুঁজে দেখব, এই অস্পষ্ট শব্দ দ্বারা কাকে উদ্দেশ্য নেওয়া হয়েছে, তার কোনো বিবরণ বিশুদ্ধ সূত্রে রাসুলুল্লাহ ﷺ থেকে বর্ণিত আছে কি না। যদি থাকে, তাহলে তো বিষয়টা প্রমাণিত হয়েই গেল। তো আমরা আমাদের অনুসন্ধানে পেয়েছি—


লেখক ‘সহিহ মুসলিম’ গ্রন্থ থেকে দ্বিতীয় যে হাদিসটি উল্লেখ করেছেন জাবির রা. থেকে, সেই হাদিসের আরেকটি বিশুদ্ধ সনদ রয়েছে; যেখানে স্পষ্টভাবে ‘মুসলমানদের আমির’ দ্বারা যে ‘মাহদি’ উদ্দেশ্য, তা রাসুলুল্লাহ ﷺ থেকেই বর্ণিত হয়েছে। ইমাম হারিস রহ. তার ‘আল-মুসনাদ’ গ্রন্থে সেই বর্ণনাটি উল্লেখ করেছেন। তিনি লেখেন :

حدثنا إسماعيل بن عبد الكريم، حدثنا إبراهيم بن عقيل، عن أبيه، عن وهب بن منبه، عن جابر قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: ينزل عيسى بن مريم، فيقول أميرهم المهدي: تعال صل بنا، فيقول: لا إن بعضهم أمير بعض، تكرمة الله لهذه الأمة.

ইসমাইল ইবনু আবদিল কারিম বর্ণনা করেন, ইবরাহিম ইবনু উকাইল তার পিতা হতে বর্ণনা করেছেন, তিনি ওয়াহব ইবনু মুনাব্বিহ থেকে বর্ণনা করেন, তিনি জাবির রা. থেকে বর্ণনা করেন যে, জাবির রা. বলেছেন, রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেন, ‘ঈসা ইবনু মারইয়াম অবতরণ করবেন। তখন মুসলমানদের আমির মাহদি বলবে, আপনি আসুন, আমাদের ইমামতি করুন। তখন তিনি বলবেন, না, আল্লাহর পক্ষ থেকে এই উম্মাহর জন্য সম্মানস্বরূপ তারাই একজন অন্যজনের আমির।

ইমাম ইবনুল কায়্যিম রহ. তার জগদ্বিখ্যত গ্রন্থ ‘আল-মানারুল মুনিফ ফিস সহিহ ওয়াদ দয়িফ’ (পৃষ্ঠা : ১৪৭-১৪৮)-এ হাদিসটি উল্লেখ করার পরে বলেন :

وهذا إسناد جيد
এটি একটি ভালো সনদ।

শায়খ আব্বাদ তার ‘আল-মাহদি’ পুস্তিকায় উপরিউক্ত বর্ণনাটি উল্লেখ করে এটাকে সহিহ বলে মেনে নেন। তার পুস্তিকাটি মদিনা ইউনিভার্সিটি থেকে প্রকাশিত মাজাল্লায় (বর্ষ : ১২, সংখ্যা : ১) ছাপা হয়। শায়খ আলবানি রহ. তার ‘সিলসিলাতুল আহাদিসিস সহিহাহ’ (৫/২৭৬) গ্রন্থেও হাফিজ ইবনুল কায়্যিম রহ.-এর অভিমত উল্লেখ করে তার সঙ্গে ঐকমত্য প্রকাশ করেন। শায়খ আহমাদ আকতাশ তার সংকলিত সহিফায়ে ইবনু মুনাব্বিহ (হাদিস : ৪৬) গ্রন্থেও এই হাদিসটি উল্লেখ করেন। হাফিজ আবু নুয়াইম ইস্পাহানি রহ. তার সংকলিত ‘আল-আরবাউন ফিল মাহদি’ (১/২৯) গ্রন্থেও আবু বকর ইবনু খাল্লাদ সূত্রে ‘আল-মুসনাদ’ প্রণেতা হারিস রহ.-এর সনদে হাদিসটি উল্লেখ করেছেন। শায়খ সিদ্দিক হাসান খান রহ. তার ‘আল-ইযাআহ’ গ্রন্থে সহিহ মুসলিমে বর্ণিত জাবির রা.-এর হাদিসটি উল্লেখ করার পর লেখেন :

وليس فيه ذكر المهدي ولكن لا محمل له ولأمثاله من الأحاديث إلا المهدي المنتظر كما دلت على ذلك الأخبار المتقدمة والآثار الكثيرة.

এতে যদিও মাহদির নাম উল্লেখ নেই; কিন্তু এই হাদিস এবং এজাতীয় অন্যান্য হাদিসের একমাত্র প্রয়োগক্ষেত্র শুধু প্রতীক্ষিত মাহদি ছাড়া কেউ নয়; যেমনটা পূর্ববর্তী হাদিসসমূহ এবং অসংখ্য আসার প্রমাণ করে। {শরহু সুনানি আবি দাউদ লিল-আব্বাদ : ৩/৪৮২}


এছাড়াও ইমাম ইবনু হাজার হাইতামি রহ. (মৃত্যু : ৯৭৪ হিজরি) তার ‘আস-সাওয়ায়িকুল মুহাররিকা’ (২/৪৭৫) গ্রন্থে উল্লেখ করেন :

أخرج الطَّبَرَانِيّ مَرْفُوعا (يلْتَفت الْمهْدي وَقد نزل عِيسَى ابْن مَرْيَم عَلَيْهِ السَّلَام كَأَنَّمَا يقطر من شعره المَاء فَيَقُول الْمهْدي تقدم فصل بِالنَّاسِ فَيَقُول عِيسَى إِنَّمَا أُقِيمَت الصَّلَاة لَك فَيصَلي خلف رجل من وَلَدي) الحَدِيث
وَفِي صَحِيح ابْن حبَان فِي إِمَامَة الْمهْدي نَحوه

তাবারানি রহ. রাসুলুল্লাহ ﷺ থেকে বর্ণনা করেন, ‘মাহদি ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাবেন। ইতিমধ্যে ঈসা আ. এমনভাবে অবতরণ করেছেন, যেন তার মাথা থেকে ফোঁটা ফোঁটা পানি ঝরছে। তখন মাহদি বলবেন, আপনি সামনে যান। লোকদের নামাজের ইমামতি করুন। তখন ঈসা বলবেন, নামাজের ইকামত দেওয়া হয়েছে তোমার জন্য। তখন তিনি আমার এক সন্তানের পেছনে নামাজ আদায় করবেন।’ সহিহ ইবনু হিব্বান গ্রন্থেও মাহদির ইমামতির অধ্যায়ে অনুরূপ হাদিস রয়েছে।

ইমাম ইউসুফ ইবনু ইয়াহইয়া মাকদিসি সুল্লামি শাফেয়ি রহ. (মৃত্যু : ৬৫৮ হিজরি) তার ‘আকদুদ দুরার ফি আখবারিল মুনতাজার’ (১/৭৩, ২৯২, ৩০৬, ৩৯০) গ্রন্থে সাহাবি হুযায়ফা ইবনুল ইয়ামান রা. সূত্রে রাসুলুল্লাহ ﷺ থেকে উপরিউক্ত হাদিসটি বর্ণনা করেন। এরপর তিনি লেখেন, ‘হাফিজ আবু নুয়াইম রহ. তার ‘মানাকিবুল মাহদি’ গ্রন্থেও এই হাদিসটি বর্ণনা করেছেন।’ এছাড়াও আবু আমর দানি তার ‘আস-সুনান’ গ্রন্থে এই হাদিসটি উল্লেখ করেছেন।

আল্লামা আনওয়ার শাহ কাশ্মীরি রহ. প্রণীত ‘আত-তাসরিহ বি-মা তাওয়াতারা ফি নুযুলিল মাসিহ’ গ্রন্থের টীকায় শায়খ আবদুল ফাত্তাহ আবু গুদ্দাহ রহ. এ-সংক্রান্ত বেশ কয়েকটি বর্ণনা উল্লেখ করেন। ‘আল-আসাস ফিস সুন্নাহ ওয়া ফিকহিহা’ গ্রন্থের দ্বিতীয় অংশে ‘ইসলামি আকায়িদ’ অধ্যায়ে (পৃ. ১০২৪) তার সূত্রে সেই বর্ণনাগুলো উল্লেখিত হয়েছে; যার অধিকাংশ ইমাম দানি রহ.-এর সুনান থেকে গৃহীত হয়েছে। যেমন, সেখানে ১০৪০ নম্বর হাদিসে এসেছে :

…ينزل على المهدي…

ঈসা আ. মাহদির ওপর অবতরণ করবেন।

ইমাম সুয়ুতি রহ.-এর ‘আল-হাওয়ি’ গ্রন্থের ‘আল-আরফুল ওয়ারদি’ রিসালা (২/৬৫)-তে এসেছে, ইমাম ইবনু আবি শায়বা তার ‘আল-মুসান্নাফ’ গ্রন্থে ইবনু সিরিন রহ. থেকে বর্ণনা করেছেন :

المهدي من هذه الأمة، وهو الذي يؤم عيسى ابن مريم عليه السلام.

মাহদি এই উম্মাহর একজন। আর সে ওই ব্যক্তি, যে ঈসা ইবনু মারইয়াম আ.-এর ইমামতি করবে।


আসলে এই স্বীকৃত বিষয়টি প্রমাণ করার জন্য এত বর্ণনা উল্লেখ করার প্রয়োজন ছিল না। আমাদের উল্লেখিত প্রথম বর্ণনাটিই এর জন্য যথেষ্ট ছিল। হাদিস সহিহ হলে এবং তার বক্তব্য দ্ব্যর্থহীন হলে তা মেনে নিতে সবাই বাধ্য। এরপরও সেই বর্ণনার সমর্থনে আমরা আরও কয়েকটা উদ্ধৃতি উল্লেখ করলাম। লেখক যে দাবি করলেন, এ বিষয়ে কোনো সহিহ, হাসান বা যয়িফ হাদিসও নেই—তার সেই বক্তব্যের অসারতা চোখে আঙুল দিয়ে দেখানোর জন্যই এই অতিরিক্ত কসরত। আশা করি, লেখক তার ভুল স্বীকার করে নেবেন এবং নিজের ভুল তাহকিকের দায় নিজের কাঁধে তুলে নিয়ে আল্লাহর রাসুল ﷺ-এর ব্যাপারে মিথ্যা প্রচারের গোনাহ থেকে প্রকাশ্যে তাওবা করবেন। তার সেই লেখার ওপর ভিত্তি করে যারা যুগশ্রেষ্ঠ উলামা ও দাঈদের শানে আপত্তিকর মন্তব্য করেছেন, তারাও এর জন্য অনুতপ্ত হবেন। আল্লাহ সবাইকে সহিহ ইলম হাসিল করার তাওফিক দান করুন।

Share This