আমাদের দেশের প্রেক্ষিতে করোনাভাইরাস খুব আহামরি সিরিয়াস কোনো ইস্যু না। ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী ও তাদের নিয়ন্ত্রিত মূর্খ মিডিয়া মুজিববর্ষের উদ্বোধনী দিনের আগ পর্যন্ত এটাকে সম্পূর্ণ ধামাচাপা দিয়ে রেখেছে। এরপর এসে রাতারাতি এটাকে ইস্যু বানিয়ে পুরো দেশের অর্থনীতি ও চিকিৎসাব্যবস্থার বারোটা বাজিয়ে ছেড়েছে। এখন আবার সফট কর্নারে এসে সম্পূর্ণ ভিন্ন নিউজ প্রকাশ করা শুরু করেছে। আর আমরা হুজুগে জাতিও মিডিয়ার তালে তালে নাচছি।
মিডিয়া করোনা নিয়ে গণসংক্রমণের যে দাওয়া করেছিল, তাও ছিল ভুয়া। এখনো তা কমিনিউনিটি ট্রান্সমিশনের পর্যায়ে আসেনি। এ দেশের প্রেক্ষিতে এটাকে মহামারি নামে আখ্যায়িত করাও যথার্থ নয়। কারণ, অতীত মহামারিগুলোর সঙ্গে এর কার্যকর মিল নেই। তথাপি এখানকার আবহাওয়ায় এই করোনার অস্তিত্বই বরং হুমকির মুখে। এই আবহাওয়ার বিষয়টি মাথায় না থাকার কারণেই তো অন্য দেশের আচরিত নীতি ও রীতিগুলো জাস্ট ফটোস্ট্যাট করেই এখানে এপ্লাই করা হচ্ছে। এমনকি এর লাভ-ক্ষতিও চিন্তা করা হচ্ছে না। বাস্তবতা হলো, বিদেশি ও প্রবাসীরা এখানে অবাধে প্রবেশ ও যাতায়াত না করলে এখানে এর আমদানিই ঘটত না।
যাহোক, দেশের যতটা ক্ষতি হয়েছে করোনার দ্বারা, তারচে বেশি ক্ষতি হয়েছে লকডাউন, চিকিৎসাহীনতা, লাঠিয়াল বাহিনীর বেধড়ক পিটুনি, জনমনে সৃষ্ট আতঙ্ক, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর ঢালাও ছুটি, গরিব-দুঃখী মানুষের চরম অভাবে দিনযাপন ইত্যাদি দ্বারা। শুধু আতঙ্কের দ্বারাই কত মানুষ নিজেদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল করে ফেলেছে। যার ফলে এখন সাধারণ রোগেও একেবারে কাত হয়ে পড়ছে। অনেকে তো এই ভীতির কারণে নিজেকে রীতিমতো স্ট্রোকের ঝুঁকিতেই ফেলে দিচ্ছে। এতকিছুর পরও মানুষ সরকারের থেকে এই সমস্যার সমাধান আশা করছে। অথচ একমাত্র এদের গাফিলতি ও ব্যর্থতার কারণেই গোটা দেশের আজ এই অবস্থা। বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকারবাবু মুজিববর্ষের জন্য বরাদ্দকৃত শত কোটি টাকাও যদি এই খাতে ব্যয় করার ঘোষণা দিত, তা-ও না হয় হতদরিদ্র মানুষগুলো একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারত। যেখানকার মানুষ সবাই এখনো তিনবেলা পেট পুরে খেতে পারে না, সেখানে টনকে টন আতশবাজির মহড়া গরীবলোকের প্রতি উপহাস বৈ কী! ভিক্ষুকের অর্থেও করের ভাগ বসিয়ে দিয়ে এসব বিলাসিতার জয়গান গাওয়া মানুষগুলোকেও লোকে কিনা নিজেদের ত্রাণকর্তা ভাবে! সুবহান তেরি কুদরত।
যারা কুফরি বিশ্বের আক্রান্ত ও নিহতদের সংখ্যা দেখেই মৃত্যুভয়ে ভীত হয়ে পড়েছে, যারা মিডিয়ার প্রচারণার ওপরই শতভাগ আস্থা ও বিশ্বাস স্থাপন করেছে, সর্বোপরি যারা বাস্তবিক অবস্থা অনুধাবন করতে ব্যর্থ হয়েছে, তারাই মূলত করোনা নিয়ে জল ঘোলা করেছে। কেউ কেউ তো আবার ঘোলা জলে মাছ শিকার করার অপচেষ্টাও চালিয়েছে। আর তারাই আবার এক্ষেত্রে এ দেশের সাধারণ দীনদার মানুষদের সরলতা ও ধর্মের প্রতি আবেগপ্রবণতাকে হাস্যরসের বিষয় বানিয়ে ছেড়েছে।
যারা প্রিন্টমিডিয়ার কালো কালো অক্ষরগুলোর বাইরে কিছু ভাবতে চায় না, যারা কিতাবের জ্ঞানের বাইরে পর্যাপ্ত জাগতিক জ্ঞান রাখে না, উপরন্তু যারা স্বগর্বে সর্বপ্রকার মিডিয়া থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে লোকমুখে শোনা কথার বাইরে জগত দেশ ও ধান্ধাবাজদের সূক্ষ্ম চাল সম্পর্কেও কিছুই জানে না, এক্ষেত্রে তাদের থেকে সঠিক নির্দেশনা আশা করা বোকামি। কারণ, সমাধান ও নির্দেশনা দেওয়ার জন্য কিতাবি জ্ঞানের পাশাপাশি ‘ইলমুল ওয়াকি’ তথা বাস্তবতার জ্ঞান থাকা জরুরি। কেননা, ‘ইলমুশ শারিয়াহ’র সঙ্গে যথাযথভাবে ‘ইলমুল হাল’ ও ‘ইলমুল ওয়াকি’র সমন্বয় না ঘটলে ফাতওয়া, সমাধান বা নির্দেশনা কখনো শুদ্ধ, যথার্থ ও বাস্তবসম্মত হয় না।
সেদিন হয়তো খুব দূরে নয়, যখন ক্ষুধার জ্বালায় কাতর হয়ে বুভুক্ষু বাঙালি বলতে শুরু করবে, ‘ভাত দে হারামজাদা, নইলে তোর করোনা চিবিয়ে খাব’।
thik bolechen
যাজাকাল্লাহ্খাইরান