প্রকৃত মুমিন সেই ব্যক্তি, যে আল্লাহর ফায়সালার ওপর সন্তুষ্ট থাকে। প্রকৃত মুমিন শোকর ও সবর দুটোকেই নিজের স্বভাববৈশিষ্ট্যে পরিণত করে নেয়। নিশ্চয়ই করোনাভাইরাস আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত একটি আজাব। আল্লাহ এর দ্বারা তার দুশমনদের খানিকটা শিক্ষা দিচ্ছেন। যার কারণে কাফিররা, তাও আবার নব্য ক্রুসেডার ও তাদের সহযোগী জোটেরাই এতে অধিক আক্রান্ত হচ্ছে। পাশাপাশি কিছু মুনাফিকেরও শিক্ষা হচ্ছে। অনেকের তো এই উপলক্ষে আল্লাহর ওপর ইমানই নসিব হয়ে যাচ্ছে।

এই করোনাভাইরাসের দ্বারা আল্লাহর তার কুদরতের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন। পৃথিবীর তথাকথিত সুপার পাওয়ার রাষ্ট্রগুলোর অক্ষমতা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন। তাগুতি রাষ্ট্রগুলোর অর্থনীতিতে ধ্বস নামছে। তাদের মেরুদণ্ড ক্রমশ ভাঙার দিকে এগোচ্ছে। প্রকৃত মুমিনদের বিজয়ের পথ আরও সুগম হচ্ছে। ইসলামের লাখ লাখ জানবাজ ফিদায়ি সৈনিক কয়েক বছর ব্যয় করেও কুফরি বিশ্বের যতটুকু ক্ষতি সাধন করতে পারত না, মাত্র কয়েক মাসের ব্যবধানে আল্লাহর এ অদৃশ্য বাহিনী তাদের সে ক্ষতি করে দিয়েছে। বদরে যেমন ফেরেশতারা নুসরত (সাহায্য) নিয়ে অবতীর্ণ হয়েছিল, এই একবিংশ শতাব্দীতেও আল্লাহ ইমারাতে ইসলামিয়ার অধীনস্থদের কুরবানির বরকতে দুনিয়ায় সেরূপ নুসরত পাঠিয়েছেন। মুসলিমরা ভেবো না, এগুলো শুধুই তোমাদের পাপের ফসল; বরং এগুলো আল্লাহর পথের সৈনিকদের ত্যাগের পার্থিব প্রতিদান। বদরে কুফফার বাহিনীর মেরুদণ্ড ভেঙেছিল, আবু জাহলসহ নেতৃস্থানীয় ৭০ জন পটল তুলেছিল; এখনো আলহামদুলিল্লাহ সুম্মা আলহামদুলিল্লাহ অবস্থা সেদিকেই গড়াচ্ছে।

ময়দানে যেমন শুধু শত্রুই মরে না, কিছু মিত্রও মরে, একইভাবে এই অদৃশ্য লড়াইয়েও শুধু তারাই আক্রান্ত হবে না, আমাদেরও কিছু ভাই আক্রান্ত হবে। ফেরেশতারা ভাইরাসের অ্যাটাক চালায় কাফিরদের ওপর, আর দাজ্জালের সহচর শয়তানরা একই ভাইরাসের হামলা ফেরাতে চায় মুমিনদের ওপর। অর্থাৎ এই অদৃশ্য লড়াইয়ে এক দিকে আছে ফেরেশতারা, আরেক দিকে আছে শয়তানরা। ফেরেশতারা লড়াই করছে আমাদের পক্ষে আর শয়তানরা প্রতিরোধমূলক আক্রমণ চালাচ্ছে আমাদের বিপক্ষে। লড়াই চলাকালে কখনো এই দুষ্ট শয়তানদের আঘাতে কিছু মুমিনও আক্রান্ত হয়ে পড়ে। তবে ভাইরাস অভিন্ন হলেও এতে মৃত্যুবরণকারী কাফির ও শহিদ মুমিনদের আবাসস্থল হয় ভিন্ন। কারণ, সহিহ বুখারির হাদিস অনুসারে মহামারি কাফিরদের জন্য আজাব এবং মুমিনদের জন্য রহমত। আল্লাহ এর দ্বারা কিছু বান্দাকে শহিদদের মর্যাদায় মর্যাদাবান করতে চান আর একদল কাফিরকে জাহান্নামের সদরদরজায় পৌঁছাতে চান।

এই করোনাভাইরাস ও পঙ্গপাল নব্য ক্রুসেডার ও তাগুতি জোটের কফিনে শেষ প্যারেকটাও ঠুঁকে দিক – আমরা এটাই কামনা করি। এতে যদি আমাদেরও কিছু ক্ষয়ক্ষতি হয়, তা হোক। এমনকি এই ভাইরাসে আমি নিজেও যদি আক্রান্ত হই, তাতেও কোনো দুঃখ নেই; যদিও হেফাজতের মাসনুন আমল জারি থাকলে তা সাধারণভাবে হওয়ার নয়। আমরা চাই কুফরের বিনাশ। আমরা চাই যুগের হোবলের পতন। আল্লাহই ভালো জানেন, তবে ব্যক্তিগত পর্যবেক্ষণ বলছে, আগামী দেড় থেকে দুই মাসের মধ্যে আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে বড় কোনো সুসংবাদ। অবশ্য এই পর্যবেক্ষণ ভুলও হতে পারে। আল্লাহু আ’লাম।

শয়তানি শক্তির এই দুরবস্থা দেখে দাজ্জাল বেচারাও নিশ্চয়ই বসে থাকবে না। অদৃশ্যে থেকেই সে তার সর্বোচ্চ চাল চালাতে থাকবে। অবশ্য এসব অদৃশ্য বাস্তবতা নিয়ে না ভেবে আমাদের অনেকেই বৃথা মায়াকান্না জুড়ে দিচ্ছে। যেন তারা রবের এই অনিন্দ্যসুন্দর ফায়সালায় খুশি নয়। তারা ভেবেছে, এই মহামারি বুঝি আমাদের ওপর আজাব। তারা যদি অন্তত মিডিয়ার নিউজগুলোতেও নজর রাখত, তাহলেও এটা ভেবে অবাক হতো যে, চারিদিকে মৃত্যুর এই সুবিশাল মিছিলের মধ্য দিয়েও আল্লাহ কীভাবে যেন আমাদের সমাজ ও অঞ্চলগুলোকে তুলনামূলক বিচারে অনেক অনেক নিরাপদ রেখেছেন। চক্ষুষ্মানদের জন্য এতে শিক্ষণীয় অনেক ব্যাপার আছে। করোনার আতঙ্কে আতঙ্কিত বিবেক দিয়ে অবশ্য এগুলো ভাবা যায় না। বিবেক তো আগেই বন্ধক দিয়ে রেখেছি। নিজস্ব কিছু স্বকীয়তা না থাকলে হুজুগে তাল মেলাব, এটাই তো স্বাভাবিক।

আরও পড়ুন :

কভিড-১৯ : প্রেক্ষিত ইসলাম

করোনাভীতিতে বৃথা আতঙ্কিত জনতা

করোনা : আতঙ্ক নয়, সচেতনতা কাম্য

Share This