ভূমিকা

গত ৬ এপ্রিল ভয়ানক করোনা ভাইরাস সংক্রমণ রোধকল্পে মসজিদের ক্ষেত্রে খতিব, ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদেমরা ব্যতীত অন্য সকল মুসল্লিকে সরকারের ধর্ম মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে নিজ নিজ বাসস্থানে নামাজ আদায় এবং জুমআর জামাআতে অংশগ্রহণের পরিবর্তে ঘরে জোহরের নামাজ আদায়ের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মসজিদে জামাআত চালু রাখার প্রয়োজনে সম্মানিত খতিব, ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদেম মিলে পাঁচ ওয়াক্তের নামাজে অনধিক ৫ জন এবং জুমআর জামাআতে অনধিক ১০ জন শরিক হতে পারবেন বলে জানানো হয়েছে। জনস্বার্থে অন্য মুসল্লিরা মসজিদের ভেতরে জামাআতে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না। কোনো প্রতিষ্ঠানে উক্ত সরকারি নির্দেশ লংঘিত হলে প্রশাসন সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবে জানিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদনক্রমে জনস্বার্থে এ নির্দেশ জারি করা হলো।

মুফতিয়ে আজম আল্লামা আবদুস সালাম চাটগামী হাফি.-এর মত

গত ১২ এপ্রিল মুফতিয়ে আজম (বাংলাদেশ) আল্লামা আবদুস সালাম চাটগামী হাফি. তাঁর অফিসিয়াল প্যাডে একটি ফাতওয়া প্রকাশ করেন। সেখানে তিনি লেখেন :

‘কিছু মানুষ যদি মসজিদে জুমআর নামাজ আদায় করে এবং তারা মসজিদের দরজা বন্ধ করে রাখে, তাহলে তাদের জুমআর নামাজ আদায় হবে না।’

এই ফাতওয়ার দলিল হিসেবে তিনি ফিকহের গ্রন্থাবলি থেকে নিম্নলিখিত ইবারতসমূহ উদ্ধৃত করেন :

وَالْإِذْنُ الْعَامُّ وَهُوَ أَنْ تُفْتَحَ أَبْوَابُ الْجَامِعِ وَيُؤْذَنَ لِلنَّاسِ، حَتَّى لَوْ اجْتَمَعَتْ جَمَاعَةٌ فِي الْجَامِعِ وَأَغْلَقُوا الْأَبْوَابَ وَجَمَعُوا لَمْ يَجُزْ، وَكَذَا السُّلْطَانُ إذَا أَرَادَ أَنْ يُصَلِّيَ بِحَشَمِهِ فِي دَارِهِ فَإِنْ فَتَحَ بَابَهَا وَأَذِنَ لِلنَّاسِ إذْنًا عَامًّا جَازَتْ صَلَاتُهُ شَهِدَتْهَا الْعَامَّةُ أَوْ لَا وَإِنْ لَمْ يَفْتَحْ أَبْوَابَ الدَّارِ وَأَغْلَقَ الْأَبْوَابَ وَأَجْلَسَ الْبَوَّابِينَ لِيَمْنَعُوا عَنْ الدُّخُولِ لَمْ تَجُزْ لِأَنَّ اشْتِرَاطَ السُّلْطَانِ لِلتَّحَرُّزِ عَنْ تَفْوِيتِهَا عَلَى النَّاسِ وَذَا لَا يَحْصُلُ إلَّا بِالْإِذْنِ الْعَامِّ. اهـ.

‘ইযনে আম’ (ব্যাপক অনুমতি) হলো, জামে মসজিদের দরজাসমূহ খুলে দেওয়া হবে এবং মানুষজনকে (প্রবেশের) অনুমতি দেওয়া হবে। কোনো এক জামাআত যদি জামে মসজিদে একত্রিত হয়ে দরজা বন্ধ করে দিয়ে জুমআ আদায় করে, তাহলে তা বৈধ হবে না। একইভাবে সুলতান (শাসক) যদি তার অনুচারবর্গকে নিয়ে নিজ বাড়িতে নামাজ আদায় করতে চান, যদি তিনি বাড়ির দরজা খোলা রেখে মানুষজনকে ব্যাপক অনুমতি দিয়ে থাকেন, তাহলে তার নামাজ বিশুদ্ধ হবে; সাধারণ মানুষ সেই জামাআতে অংশগ্রহণ করুক বা না করুক। আর যদি তিনি বাড়ির দরজাসমূহ খোলা না রাখেন, বরং দরজা বন্ধ করে দেন এবং তাতে দারোয়ান বসান—যাতে তারা জনসাধারণের প্রবেশে বাধা দেয়, তাহলে নামাজ বৈধ হবে না। কারণ, সুলতানের শর্ত ছিল মানুষের নামাজ যাতে ছুটে না যায়—এই অধিকার সংরক্ষণের জন্য। আর এটা তো ব্যাপক অনুমতি ছাড়া পাওয়া যায় না। [ফাতাওয়া শামি : ২/১৫২, এইচ এম সাইদ করাচি, পাকিস্তান প্রকাশিত]

(فَلَوْ دَخَلَ أَمِيرٌ حِصْنًا) أَوْ قَصْرَهُ (وَأَغْلَقَ بَابَهُ) وَصَلَّى بِأَصْحَابِهِ (لَمْ تَنْعَقِدْ) وَلَوْ فَتَحَهُ وَأَذِنَ لِلنَّاسِ بِالدُّخُولِ جَازَ وَكُرِهَ

কোনো আমির যদি দুর্গে বা তার প্রাসাদে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দেন এবং তার সঙ্গীদের নিয়ে নামাজ আদায় করেন, তাহলে তা সম্পন্ন হবে না। আর যদি আমির দরজা খুলে দিয়ে মানুষকে প্রবেশের অনুমতি দিয়ে রাখেন, তাহলে নামাজ বৈধ হবে এবং মাকরুহ হবে। [আদ-দুররুক মুখতার : ২/১৫২, এইচ এম সাইদ করাচি, পাকিস্তান প্রকাশিত]

(وَمِنْهَا الْإِذْنُ الْعَامُّ) وَهُوَ أَنْ تُفْتَحَ أَبْوَابُ الْجَامِعِ فَيُؤْذَنَ لِلنَّاسِ كَافَّةً حَتَّى أَنَّ جَمَاعَةً لَوْ اجْتَمَعُوا فِي الْجَامِعِ وَأَغْلَقُوا أَبْوَابَ الْمَسْجِدِ عَلَى أَنْفُسِهِمْ وَجَمَعُوا لَمْ يَجُزْ وَكَذَلِكَ السُّلْطَانُ إذَا أَرَادَ أَنْ يَجْمَعَ بِحَشَمِهِ فِي دَارِهِ فَإِنْ فَتَحَ بَابَ الدَّارِ وَأَذِنَ إذْنًا عَامًّا جَازَتْ صَلَاتُهُ شَهِدَهَا الْعَامَّةُ أَوْ لَمْ يَشْهَدُوهَا، كَذَا فِي الْمُحِيطِ

জুমআর অন্যতম শর্ত হলো ব্যাপক অনুমতি থাকা। ব্যাপক অনুমতি হচ্ছে, জামে মসজিদের দরজাসমূহ খুলে দেওয়া এবং সকল মানুষকে অনুমতি দিয়ে রাখা। কোনো জামাআত যদি জামে মসজিদে একত্রিত হয়ে নিজেদের জন্য মসজিদের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেয় এবং জুমআ আদায় করে, তাহলে তা বৈধ হবে না। একইভাবে সুলতান (শাসক) যদি তার অনুচারবর্গকে নিয়ে নিজ বাড়িতে নামাজ আদায় করতে চান, যদি তিনি বাড়ির দরজা খোলা রেখে মানুষজনকে ব্যাপক অনুমতি দিয়ে থাকেন, তাহলে তার নামাজ বিশুদ্ধ হবে; সাধারণ মানুষ সেই জামাআতে অংশগ্রহণ করুক বা না করুক। [ফাতাওয়া হিন্দিয়া : ১/১৪৮, রশিদিয়া প্রকাশনী]

فإن فتح باب قصره وأذن للناس بالدخول جاز ويكره؛ لأنه لم يقض حق المسجد الجامع وعللوا الأول بأنها من شعائر الإسلام وخصائص الدين فيجب إقامتها على سبيل الاشتهار

যদি প্রাসাদের দরজা খুলে দিয়ে মানুষকে প্রবেশের অনুমতি দেন, তাহলে তা জায়িয হবে এবং মাকরুহ হবে। কারণ, তিনি জামে মসজিদের হক আদায় করেননি। ফকিহগণ প্রথম মাসআলার ‘ইল্লত’ (কারণ) বর্ণনা করেছেন এই যে, জুমআ হলো ইসলামের অন্যতম প্রতীক এবং দীনের বিশেষ বিধান। তাই তা প্রসিদ্ধির পন্থা (অর্থাৎ ‘ইযনে আম’)-এর ভিত্তিতে কায়েম করা অপরিহার্য। [আল-বাহরুর রায়িক : ২/২৬৪, জাকারিয়া বুক ডিপো দেওবন্দ প্রকাশিত]

উপরিউক্ত উদ্ধৃতিগুলো উল্লেখ করার পর তিনি লেখেন :

‘ক. ফাতাওয়া শামি, ফাতাওয়া আলমগিরি এবং আল-বাহরুর রায়িক গ্রন্থের উদ্ধৃতি থেকে জানা গেল যে, জামে মসজিদে যদি কিছু সংখ্যক লোক জুমআর জন্য একত্রিত হয় এবং তারা মসজিদের দরজা বন্ধ করে দেয়—যাতে করে অন্য লোকেরা মসজিদে আসতে না পারে, তাহলে তাদের জুমআর নামাজ বৈধ হবে না।

খ. আর যদি মসজিদে এভাবে ‘ইযনে আম’ (ব্যাপক অনুমতি) থাকে যে, নামাজি ব্যক্তিরা আসতে চাইলে সবাই আসতে পারবে, না তাদের ওপর কোনো বাধানিষেধ আরোপ করা হয় আর না মসজিদের দরজা বন্ধ করে রাখা হয়, তাহলে অল্প সংখ্যক মানুষের জামাআত বৈধ ও সম্পন্ন হয়ে যাবে; তবে জামাআতের লোকস্বল্পতার কারণে মাকরুহ হবে।’

মুফতি মিজানুর রহমান সাঈদ হাফি.-এর মত

মুফতি মিজানুর রহমান সাঈদ হাফি. ‘একটি প্রামাণ্য উপস্থাপনা’ শিরোনামে বিগত ১৫ এপ্রিল একটি সুদীর্ঘ লেখা প্রকাশ করেন। সেখানে তিনি লেখেন :

মসজিদের মধ্যে সীমিত সংখ্যক মুসল্লী দ্বারা দরজা বন্ধ করে জুমা’ আদায় করা হলে, অন্যদের মসজিদে প্রবেশ নিষেধের কারণ যদি হয় দুশমনদের ভয়ভীতি অথবা প্রাচীন কালের রীতিনীতি অনুসরণে নামাজের পূর্বে গেইট বন্ধ করা তাহলে তা জুমা’ শুদ্ধ হওয়ার ব্যাপারে প্রতিবন্ধক হয় না। সুতরাং সরকার কর্তৃক করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে দরজা বন্ধ করে অন্যদেরকে প্রবেশ করতে না দিলে মসজিদে জুমা’ আদায়কারীদের জুমা’ সহীহ হবে না কেন?’

এছাড়াও তিনি লিখেছেন : বিগত ১০ই এপ্রিল মসজিদগুলোতে সীমিত সংখ্যক লোক দিয়ে, মসজিদের দরজা বন্ধ করে জুমা’ আদায় করা এবং বাকীদেরকে মসজিদে প্রবেশ করতে না দেয়ায় শ্রদ্ধেয় মুফতি সাহেব ফতোয়া দিয়েছেন যে, যারা মসজিদে জুমা’ পড়েছে তাদের জুমা’ হবে না। কারণ এখানে ‘ইযনে আম’ পাওয়া যায়নি । তিনি ফতোয়ায়ে শামী, আলমগিরি ও আলবাহরুর রায়েক্ব ইত্যাদি গ্রন্থের এবারত উল্লেখ করে দলীল পেশ করেছেন। আমি অত্যন্ত বিনয়ের সাথে মুফতি সাহেব সমীপে আরয করতে চাই যে, যেসব ফতোয়ার কিতাবের রেফারেন্স তিনি দিয়েছেন সেখানে পূর্বে ও পরে নিম্নের ইবারত উদ্ধৃত আছে । যেগুলো পড়লে দেখা যায় এই বিশেষ অবস্থায় ‘ইযনে আম’ বিলুপ্ত হয়নি। তাই জুমা’র নামাজও অশুদ্ধ নয়; বরং সহীহ হয়েছে।


এই মতের পক্ষে তিনি যেসব দলিল উদ্ধৃত করেছেন, তা নিম্নরূপ :

ফাতাওয়া হিন্দিয়া (১/১৫৮) গ্রন্থে এসেছে :

الإمام إذا منع أهل المصر أن يجمعوا لم يجمعوا. قال الفقيه أبو جعفر رحمه الله ، هذا إذا نهاهم مجتهدا بسبب من الأسباب و أراد أن يخرج ذلك الموضع من أن يكون مصرا، فأما إذا نهاهم متعنتا أو ضرارا بهم فلهم أن يجتمعوا علي رجل يصلي بهم الجمعة ، كذا في الظهيرية.

ফাতাওয়া শামি (২/১৫২) গ্রন্থে এসেছে :

و كذا السلطان إذا أراد أن يصلي بحشمة في داره….. و إن لم يفتح أبواب الدار و أغلق الابواب….. لم تجز…. قلت و ينبغي أن يكون محل النزاع ما إذا كانت لا تقام إلا في محل واحد أما لو تعددت فلا. لأنه لا يتحقق التفويت كما أفاده التعليل فتأمل.

আদ-দুররুল মুখতার (২/১৫২) গ্রন্থে এসেছে :

فلا يضر(الغلق) علي باب القلعة لعدو أو لعادة قديمة. لأن الإذن العام مقدر لأهله. و غلقه لمنع العدو لا المصلي. نعم، لو لم يغلق لكان أحسن كما في مجمع الأنهر.

মাজমাউল আনহুর (১/২৪৬) গ্রন্থে বলা হয়েছে :

و ما يقع في بعض القلع من غلق أبوابه خوفا من الأعداء أو كانت له عادة قديمة عند حضور الوقت فلا بأس به. لأن الإذن العام مقدر لأهله ولكن لو لم يكن لكان أحسن كما في شرح عيون المذاهب…

মারাকিল ফালাহ মাআত তহতাবি (পৃ. ২৭৮) গ্রন্থে এসেছে :

قلت، اطلعت علي رسالة للعلامة ابن شحنة. و قد قال فيها بعدم صحة الجمعة في قلعة القاهرة. لأنها تقفل وقت صلاة الجمعة…. و أقول في المنع نظر ظاهر. لأن وجه القول بعدم صحة صلاة الإمام بقفله قصره اختصاصه بها دون العامة و العلة مفقودة في هذه القضية…

উভয় মতের পর্যালোচনা

মুফতিয়ে আজম (বাংলাদেশ) আল্লামা আবদুস সালাম চাটগামী হাফি.-এর মত এবং তাঁর উল্লেখিত উদ্ধৃতিগুলোর সঙ্গে ফাতওয়ার সামঞ্জস্যতা তো সুস্পষ্ট। এ নিয়ে আলাদা বিশ্লেষণ বা পর্যালোচনার প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না। এ কারণে আমরা প্রথমে দ্বিতীয় মতের পক্ষে উল্লেখ করা উদ্ধৃতিগুলোর দিকে দৃষ্টি দেবো। বৈধতার এই ফাতওয়ার সঙ্গে উদ্ধৃতিগুলোর সামঞ্জস্যতা যাচাই করব।

১. দ্বিতীয় মতের পক্ষে সর্বপ্রথম যে উদ্ধৃতি উল্লেখ করা হয়েছে, তা ছিল ফাতাওয়া হিন্দিয়া’র ইবারত :

الْإِمَامُ إذَا مَنَعَ أَهْلَ الْمِصْرِ أَنْ يَجْمَعُوا لَمْ يَجْمَعُوا قَالَ الْفَقِيهُ أَبُو جَعْفَرٍ – رَحِمَهُ اللَّهُ تَعَالَى – هَذَا إذَا نَهَاهُمْ مُجْتَهِدًا بِسَبَبٍ مِنْ الْأَسْبَابِ وَأَرَادَ أَنْ يُخْرِجَ ذَلِكَ الْمَوْضِعَ مِنْ أَنْ يَكُونَ مِصْرًا فَأَمَّا إذَا نَهَاهُمْ مُتَعَنِّتًا أَوْ ضِرَارًا بِهِمْ فَلَهُمْ أَنْ يَجْتَمِعُوا عَلَى رَجُلٍ يُصَلِّي بِهِمْ الْجُمُعَةَ، كَذَا فِي الظَّهِيرِيَّةِ.

ইমামুল মুসলিমিন যদি শহরবাসীকে জুমআ পড়তে নিষেধ করে দেন, তাহলে তারা জুমআ পড়বে না। ফকিহ আবু জাফর রহ. বলেন, এটা সেক্ষেত্রে প্রযোজ্য, যখন তিনি তাদেরকে বিশেষ কোনো কারণে ইজতিহাদ করে নিষেধ করবেন এবং তার ইচ্ছা হবে ওই স্থানকে ‘শহর’ (যা জুমআর অন্যতম শর্ত) হওয়া থেকে বের করে দেওয়া। তবে তিনি যদি তাদেরকে একগুঁয়েমির কারণে বা তাদের ক্ষতিকরণের নিমিত্তে নিষেধ করেন, তাহলে শহরবাসীর জন্য এমন কোনো ব্যক্তির ওপর একত্রিত হওয়ার অধিকার রয়েছে, যে তাদেরকে নিয়ে জুমআর নামাজ আদায় করবে।

আমাদের কথা :

হজরতের মতের সঙ্গে উদ্ধৃতির প্রাসঙ্গিকতা একটু সূক্ষ্ম। এখানে বোঝানো উদ্দেশ্য, ইমামুল মুসলিমিন বিশেষ কোনো কারণে ইজতিহাদ করে মুসলিম জনসাধারণকে জুমআ আদায় করতে নিষেধ করার অধিকার রাখেন। যেহেতু হানাফি ফিকহে জুমআর শর্ত হিসেবে ‘সুলতান বা তার প্রতিনিধির উপস্থিতি’ শর্ত করা হয়েছে, এ জন্য মুফতি সাহেব এই ইবারতটি উল্লেখ করে দেখিয়ে দিলেন, মুসলমানদের ইমাম যেমনিভাবে জুমআর অনুমতি প্রদানের অধিকার রাখেন, একইভাবে তিনি জুমআ আদায় হতে নিষেধ করারও অধিকার রাখেন। হ্যাঁ, এই অধিকার যদি তিনি কোনো কারণ ছাড়া ব্যক্তিগত স্বার্থে ব্যবহার করেন, তাহলে মুসলিমরা তা মানতে বাধ্য নয়। অপরদিকে জনস্বার্থে তিনি যদি এই অধিকার প্রয়োগ করে থাকেন, তাহলে সকলের জন্য তা মেনে জুমআ আদায় থেকে বিরত থাকা কর্তব্য।

আমরা মুফতি সাহেবের এই ধারণাকে বিনীতভাবে প্রত্যাখ্যান করি। ইতিপূর্বেও তিনি ফেসবুকে এক মন্তব্যে লিখেছিলেন, ‘অনেক বিষয় এমন আছে, যা ফাতওয়ার নীতিতে শুদ্ধ নয়; কিন্তু উলুল আমর তা জারি করলে সকলের জন্য মেনে নেওয়া অপরিহার্য।’ আমরা আদবের সঙ্গে জানাতে চাই, বর্তমান পৃথিবীর নামধারী মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর শাসকবৃন্দ কখনোই ইমামুল মুমিমিন, খলিফাতুল মুসলিমিন, আমাদের সুলতান বা হাকিম নন। বরং তারা সুস্পষ্ট তাগুত। এর পক্ষে শত শত দলিল দেওয়া সম্ভব। তবে এক্ষেত্রে আমরা কোনো দলিল না দিয়ে শুধু মুফতিয়ে আজম (হিন্দুস্তান) মুফতি কেফায়াতুল্লাহ রহ.-এর একটি ফাতওয়া উল্লেখ করাকেই যথেষ্ট মনে করছি। তার ফাতওয়া : তাগুত কি উলুল আমর? ( https://bit.ly/3eqYd2z )

২. এরপর দ্বিতীয়ত তিনি যে দলিল উল্লেখ করেছেন, তা নিম্নরূপ :

وَالْإِذْنُ الْعَامُّ وَهُوَ أَنْ تُفْتَحَ أَبْوَابُ الْجَامِعِ وَيُؤْذَنَ لِلنَّاسِ، حَتَّى لَوْ اجْتَمَعَتْ جَمَاعَةٌ فِي الْجَامِعِ وَأَغْلَقُوا الْأَبْوَابَ وَجَمَعُوا لَمْ يَجُزْ، وَكَذَا السُّلْطَانُ إذَا أَرَادَ أَنْ يُصَلِّيَ بِحَشَمِهِ فِي دَارِهِ فَإِنْ فَتَحَ بَابَهَا وَأَذِنَ لِلنَّاسِ إذْنًا عَامًّا جَازَتْ صَلَاتُهُ شَهِدَتْهَا الْعَامَّةُ أَوْ لَا وَإِنْ لَمْ يَفْتَحْ أَبْوَابَ الدَّارِ وَأَغْلَقَ الْأَبْوَابَ وَأَجْلَسَ الْبَوَّابِينَ لِيَمْنَعُوا عَنْ الدُّخُولِ لَمْ تَجُزْ… اهـ. قُلْت: وَيَنْبَغِي أَنْ يَكُونَ مَحَلُّ النِّزَاعِ مَا إذَا كَانَتْ لَا تُقَامُ إلَّا فِي مَحَلٍّ وَاحِدٍ، أَمَّا لَوْ تَعَدَّدَتْ فَلَا لِأَنَّهُ لَا يَتَحَقَّقُ التَّفْوِيتُ كَمَا أَفَادَهُ التَّعْلِيلُ تَأَمَّلْ

‘ইযনে আম’ (ব্যাপক অনুমতি) হলো, জামে মসজিদের দরজাসমূহ খুলে দেওয়া হবে এবং মানুষজনকে (প্রবেশের) অনুমতি দেওয়া হবে। কোনো এক জামাআত যদি জামে মসজিদে একত্রিত হয়ে দরজা বন্ধ করে দিয়ে জুমআ আদায় করে, তাহলে তা বৈধ হবে না। একইভাবে সুলতান (শাসক) যদি তার অনুচারবর্গকে নিয়ে নিজ বাড়িতে নামাজ আদায় করতে চায়, যদি তিনি বাড়ির দরজা খোলা রেখে মানুষজনকে ব্যাপক অনুমতি দিয়ে থাকেন, তাহলে তার নামাজ বিশুদ্ধ হবে; সাধারণ মানুষ সেই জামাআতে অংশগ্রহণ করুক বা না করুক। আর যদি তিনি বাড়ির দরজাসমূহ খোলা না রাখেন, বরং দরজা বন্ধ করে দেন এবং তাতে দারোয়ান বসান—যাতে তারা জনসাধারণের প্রবেশে বাধা দেয়, তাহলে নামাজ বৈধ হবে না। আমি (ফাতওয়া শামির গ্রন্থকার) বলব, ইখতিলাফের ক্ষেত্র হওয়া উচিত সেই অবস্থা, যখন শুধু এক জায়গায় জুমআ কায়েম করা হবে। আর যদি জায়গা অনেক হয়, তাহলে তা নিয়ে ইখতিলাফ হওয়া উচিত নয়।কারণ, এক্ষেত্রে ‘মানুষ থেকে জুমআ ছোটানো’ বাস্তবায়িত হয়নি; যা মূল কারণ ছিল।

আমাদের কথা :

আলোচ্য ইবারতের প্রথমাংশ মূলত মুফতিয়ে আজম আবদুস সালাম চাটগামি হাফি.-এর দলিল ছিল। বোল্ড করা অংশ দ্বিতীয় মতের পক্ষে দলিল হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। এখানে তিনি দেখাতে চেয়েছেন, গোটা শহরে যদি কেবল এক জায়গায় জুমআ অনুষ্ঠিত হয়, তাহলে সেখানে দরজা বন্ধ করা হলে তা নিয়ে আপত্তি হবে। তবে জুমআ যদি অনেক জায়গায় সংঘটিত হয়, তাহলে এ আপত্তি দেখা দেবে না। কারণ, আপত্তি জাগার মূল কারণ ছিল জনসাধারণের জুমআ ছুটে যাওয়া। একাধিক জায়গায় জুমআ অনুষ্ঠিত হলে এই কারণ পাওয়া যাচ্ছে না। মানুষ আলোচিত জায়গায় সুযোগ না পেলেও অন্য অনেক জায়গায়ই তো সুযোগ পাচ্ছে। তাই এতে নিষিদ্ধতার কিছু নেই।

আমরা আদবের সঙ্গে মুফতি সাহেবের উদ্দেশে নিবেদন করতে চাই, এই উদ্ধৃতি বর্তমান অবস্থার সঙ্গে মোটেও সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। কারণ, বর্তমান পরিস্থিতিতে সরকারের পক্ষ থেকে জনসাধারণের জন্য পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ও জুমআর জামাতই পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এর অন্যথা করলে প্রশাসনকে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কেবল মসজিদের স্টাফদের জন্য ওয়াক্তিয়া নামাজে অনধিক ৫ ও জুমআর নামাজে অনধিক ১০ জনের জামাআতের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ঢাকাশহরের অনেক মসজিদে স্টাফের সংখ্যাই আছে এরচে কয়েকগুণ বেশি। তাহলে মসজিদের স্টাফরাও সকলে জামাআতের সঙ্গে নামাজ আদায় করার অনুমতিপ্রাপ্ত হয়নি। গোটা দেশে, করোনাক্রান্ত এলাকা ও করোনামুক্ত এলাকা, নগর-মফস্বল সর্বত্র এই নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। জনসাধারণের জন্য কোনো মসজিদেই জামাআতে অংশগ্রহণের অনুমতি রাখা হয়নি। কেবল জামাআত চালু রাখার স্বার্থে মসজিদের স্বল্প সংখ্যক স্টাফকে এই নিষেধাজ্ঞার বাইরে রাখা হয়েছে। তাহলে এক্ষেত্রে ফাতওয়া শামির গ্রন্থকারের ভাষ্য কীভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে : আর যদি জায়গা অনেক হয়, তাহলে তা নিয়ে ইখতিলাফ হওয়া উচিত নয়।কারণ, এক্ষেত্রে ‘মানুষ থেকে জুমআ ছোটানো’ বাস্তবায়িত হয়নি; যা মূল কারণ ছিল। কোথায় সেই অনেক জায়গা? বাহ্যত দেখতে অনেক মনে হলেও কোনোটিই তো উন্মুক্ত নয়। জুমআ ছোটানো বাস্তবায়িত হয়নি কীভাবে? কোটি কোটি মানুষের জুমআ ছুটছে। দেশের ৯৯% এর অধিক মুসলমান জুমআ আদায় থেকে বঞ্চিত থাকছে। উল্লেখিত ইবারতের সঙ্গে বাস্তবতার তো দূরতম মিলও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

৩. এরপর তৃতীয়ত তিনি যে দলিল উল্লেখ করেছেন, তা নিম্নরূপ :

فَلَا يَضُرُّ غَلْقُ بَابِ الْقَلْعَةِ لِعَدُوٍّ أَوْ لِعَادَةٍ قَدِيمَةٍ لِأَنَّ الْإِذْنَ الْعَامَّ مُقَرَّرٌ لِأَهْلِهِ وَغَلْقُهُ لِمَنْعِ الْعَدُوِّ لَا الْمُصَلِّي، نَعَمْ لَوْ لَمْ يُغْلَقْ لَكَانَ أَحْسَنَ.

সুতরাং শত্রুর জন্য বা পুরোনো রীতি অনুসারে কেল্লার ফটক বন্ধ করা ক্ষতি করবে না। কারণ, কেল্লাবাসীদের জন্য ‘ইযনে আম’ স্থির রয়েছে। আর তা বন্ধ করা হয়েছে শত্রুকে বাধা দেওয়ার জন্য; নামাজিকে নয়। হ্যাঁ, যদি তা-ও বন্ধ না করা হতো, তাহলে সর্বোত্তম হতো।

আমাদের কথা :

বাহ্যত এই উদ্ধৃতিটিকে মুফতি সাহেবের মতের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ মনে হয়। কিন্তু গভীরভাবে লক্ষ করলে দেখা যায়, উল্লেখিত মত ও ইবারতের মধ্যে স্পষ্ট বৈপরীত্য বিদ্যমান। দেখুন, জেলখানার মসজিদেও কিন্তু জুমআ বিশুদ্ধ হয়। কিন্তু কেন? জেলখানার মসজিদে কি বাইরের যে-কেউ জুমআ আদায়ের জন্য যেতে পারে? সকলের জন্য কি জেলখানার দুয়ার উন্মুক্ত? উত্তর নিশ্চয়ই ‘না’। তাহলে জুমআ আদায় কীভাবে বিশুদ্ধ হচ্ছে?

এখানে আমাদেরকে একটি বাস্তবতা বুঝতে হবে, এই যে ফিকহে হানাফিতে ‘ইযনে আম’র শর্তের কথা বলা হয়েছে, এটা কিসের জন্য শর্ত? জামে মসজিদের জন্য নাকি মসজিদের এলাকার জন্য? যদি বলা হয় মসজিদের এলাকার জন্য, তাহলে জেলখানায় জুমআ আদায় বিশুদ্ধ হবে না। যেসব দেশের বর্ডার সকল বিদেশীর জন্য উন্মুক্ত নয়, সেখানেও জুমআ আদায় বিশুদ্ধ হবে না। আর যদি বলা হয় মসজিদের জন্য, তাহলে জেলখানার মসজিদে জুমআ আদায় বিশুদ্ধ হবে। কারণ, জেলখানার জামে মসজিদ সকলের জন্য উন্মুক্ত। মসজিদে ‘ইযনে আম’ পাওয়া গিয়েছে। সচিবালয়ের মসজিদেও জুমআ আদায় বিশুদ্ধ হবে। কারণ, সেখানেও মসজিদে ‘ইযনে আম’ রয়েছে। প্রবেশাধিকার সংরক্ষিত করা হয়েছে এলাকার ক্ষেত্রে; মসজিদের ক্ষেত্রে নয়। তাই বর্ডার বন্ধ থাকা সত্ত্বেও দেশের মসজিদগুলোতেও জুমআ আদায় বিশুদ্ধ হবে। কারণ, ‘ইযনে আম’ মসজিদের জন্য শর্ত; দেশের জন্য নয়।

মুফতি সাহেবের উল্লেখিত ইবারতটি পূর্ণাঙ্গ বক্তব্য নয়। এর আগের অংশের সঙ্গে মিলিয়ে দেখলে পুরো বক্তব্যটি বোঝা সহজ হবে। আমরা সরাসরি আদ-দুররুল মুখতার থেকে পুরো ইবারতটি দেখে নিই :

(الْإِذْنُ الْعَامُّ) مِنْ الْإِمَامِ، وَهُوَ يَحْصُلُ بِفَتْحِ أَبْوَابِ الْجَامِعِ لِلْوَارِدِينَ

জুমআর অন্যতম শর্ত হচ্ছে ইমামুল মুসলিমিনের পক্ষ থেকে ‘ইযনে আম’। আর তা অর্জিত হবে নামাজে আগত ব্যক্তিদের জন্য জামে মসজিদের দরজাসমূহ খুলে দেওয়ার মাধ্যমে। অর্থাৎ জামে মসজিদের দরজাসমূহ যদি নামাজে আগত সর্বস্তরের মানুষের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়, তাহলে ‘ইযনে আম’ বাস্তবায়িত হবে। এরপর তিনি সেই কথাটি বলেন, যা মুফতি সাহেব উদ্ধৃত করেছেন, ‘সুতরাং শত্রুর জন্য বা পুরোনো রীতি অনুসারে কেল্লার ফটক বন্ধ করা ক্ষতি করবে না। কারণ, কেল্লাবাসীদের জন্য ‘ইযনে আম’ স্থির রয়েছে। আর তা বন্ধ করা হয়েছে শত্রুকে বাধা দেওয়ার জন্য; নামাজিকে নয়। হ্যাঁ, যদি তা-ও বন্ধ না করা হতো, তাহলে সর্বোত্তম হতো।’

ওয়াক্তিয়া নামাজ সবাই না পড়লেও জুমআর নামাজ সাধারণত সবাই পড়ার চেষ্টা করে। কেল্লার সব মানুষ যদি জুমআ আদায়ের জন্য জামে মসজিদে চলে যায়, তাহলে নামাজ চলাকালে কেল্লার ভেতরে শত্রুবাহিনী ঢুকে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ জন্য তারা যদি সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে জুমআ চলাকালে কেল্লার দরজা বন্ধ রাখে, তাহলে এতে নামাজ আদায় হয়ে যাবে; যদিও তা বন্ধ না করলে উত্তম হতো। এই হলো কিতাবের বক্তব্য। আচ্ছা, এখানে কী বন্ধ করা হয়েছে? কেল্লার ফটক নাকি জামে মসজিদের দরজা? মসজিদের দরজা বন্ধের কথা তো কিতাবে নেই। তাছাড়া মসজিদের দরজাই যদি বন্ধ থাকে, তাহলে লেখকের এই কথার কী অর্থ হবে : কেল্লাবাসীদের জন্য ‘ইযনে আম’ স্থির রয়েছে। এর দ্বারা তো স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে, কেল্লার দরজা বন্ধ করার পর যদিও বাইরের লোক সেই এরিয়ায় ঢুকতে পারবে না; কিন্তু জামে মসজিদের দরজা উন্মুক্ত থাকায় কেল্লাবাসী সবাই তো শরিক হতে পারবে। একই কথা তো জেলের ক্ষেত্রেও, সচিবালয়ের ক্ষেত্রেও। হ্যাঁ, লেখক শেষে যা বলেছেন, তার আলোকে আমরাও বলতে পারি, জুমআর সময় (প্রয়োজনে বিশেষ নিরাপত্তাসহকারে) জেলখানা ও সচিবালয়ের দরজাও সকলের জন্মু উন্মুক্ত রাখলে উত্তম হবে। এছাড়াও উল্লেখিত এই ইবারতের সঙ্গেও কি বাস্তবতার আদৌ মিল রয়েছে : ‘আর তা বন্ধ করা হয়েছে শত্রুকে বাধা দেওয়ার জন্য; নামাজিকে নয়।’ যাহোক, কেল্লার দরজা বন্ধের মাসআলাকে জামে মসজিদের দরজা বন্ধের সঙ্গে মিলিয়ে ফেলার কারণ আমাদের সামনে স্পষ্ট নয়।

৪. চতুর্থত তিনি যে উদ্ধৃতি উল্লেখ করেন, তা মূলত আলাদা কিছু নয়; তৃতীয় বক্তব্যটিই ভিন্ন কিতাব থেকে পুনরায় উল্লেখ করেছেন। একই বক্তব্য অভিন্ন উপস্থাপনায় যদি ১০ কিতাব থেকেও উদ্ধৃত করা হয়, তাহলে তা ভিন্ন ভিন্ন দলিল বলে বিবেচিত হয় না; একটি দলিল বলেই বিবেচিত হয়। তাই এটাকে আলাদাভাবে উল্লেখ করে পর্যালোচনা করার কিছু নেই। আগের পর্যালোচনাটিই এক্ষেত্রে প্রযোজ্য।

৫. পঞ্চমতও তিনি সেই একই যুক্তির অবতারণা করেছেন। কায়রোর কেল্লা নিয়ে একটি উদ্ধৃতি উল্লেখ করেছেন। মুফতি সাহেবের এই উদ্ধৃতির ক্ষেত্রেও আমাদের তৃতীয় পর্যালোচনাটি প্রযোজ্য।

সর্বশেষ কথা

উভয় মতের পক্ষে উল্লেখিত দলিলসমূহের তুলনামূলক পর্যালোচনা করে আমাদের কাছে প্রথম মতের পক্ষের দলিলগুলোকেই সুস্পষ্ট, দ্ব্যর্থহীন ও শক্তিশালী মনে হয়েছে। দ্বিতীয় মতের পক্ষে আমরা শুধু দাবিই পেয়েছি। দাবির পক্ষে যে দলিলগুলো উল্লেখ করা হয়েছে, তা একটাও সেই দাবির সঙ্গে প্রাসঙ্গিক বা সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। তাই দাবি আপাতত দলিলহীন অবস্থায় রয়েছে। সামনে যদি এই দাবির পক্ষে শক্তিশালী দলিল উল্লেখ করা হয়, তখন আমরা পুনরায় বিশ্লেষণ ও তুলনামূলক পর্যালোচনা করব ইনশাআল্লাহ। এখনো পর্যন্ত দলিলের আলোকে এটাই প্রতিভাত হয়েছে যে, সরকারের সিদ্ধান্ত অনুসারে অনধিক ১০ জন মুসল্লি নিয়ে মসজিদের দরজা বন্ধ করে জুমআ আদায় করলে তা আদায় হবে না। আল্লাহু আ‘লাম।

-আলী হাসান উসামা
একজন তালিবুল ইলম

Share This