কেউ যদি কোনো ফরজ বিধানকে অস্বীকার করে, তাহলে সে কাফির হয়ে যাবে”— কথাটিকে সাধারণত ব্যাপকতার সাথে এভাবেই বলা হয়ে থাকে। তবে কথাটি তার ব্যাপকতার ওপর নয়। বরং এক্ষেত্রে বিষয়টি ভেঙে বলার দাবি রাখে।

ফরজ দুই প্রকার: ১. ফরজে কাতয়ি (অকাট্য ও সংশয়হীন), ২. ফরজে যন্নি বা ফরজে ইজতিহাদি।

ফরজে কাতয়ি বলা হয় এমন ফরজকে, যার অপরিহার্যতা এমন দলিলের দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে, যাতে কোনো সংশয়-সন্দেহের অবকাশ নেই। এই প্রকারেরফরজ ইলম এবং আমল উভয় বিচারেই ফরজ। অর্থাৎ যেমনিভাবে সেই আমলফরজ ও একান্ত অপরিহার্য, তেমনি কেউ যদি সেই বিধানটিকেই বা তার ফরজহওয়াকে অস্বীকার করে, তাহলে সে কাফির হয়ে যাবে। (و هو الفرض علما و عملا)

অনেক সময় ফরজ শব্দটি প্রয়োগ করার দ্বারা এমন বিধান উদ্দেশ্য হয়ে থাকে, যার অনুপস্থিতিতে সেই বিধানটি আদায় হয়েছে হিসেবে পরিগণিত হয় না, বরং তা অনাদায়ীই রয়ে যায়। এ প্রকারের ফরজের ওপর আমল করা তো ফরজ, কিন্তুকেউ যদি তা অস্বীকার করে, তাহলে সে চরম গুনাহগার হলেও কাফির হবে না। (و هو الفرض عملا، لا علما)

প্রথম প্রকার ফরজের উদাহরণ: উজুতে হাত পা এবং চেহারা ধৌত করা আর মাথা মাসাহ করা। দ্বিতীয় প্রকার ফরজের উদাহরণ: অঙ্গগুলো ধৌত করার ক্ষেত্রে নির্ধারিত পরিমাণ। যেমন হানাফি মাযহাবে মাথা মাসাহের সর্বনিম্ন পরিমাণ হলো, মাথার এক চতুর্থাংশ। পক্ষান্তরে অন্য মাযহাবে ভিন্নমতও প্রদান করা হয়েছে। এখন হানাফি মাযহাবের অনুসারী কেউ যদি মাথার এক চতুর্থাংশের কম মাসাহকরে, তাহলে তাকে ফতোয়া দেয়া হবে যে, তার উজু পূর্ণ হয়নি। কিন্তু ইমাম শাফেয়ি এবং তার অনুসারীগণ মাথা মাসাহের সর্বনিম্ন পরিমাণ এক চতুর্থাংশ বলে স্বীকার করেন না। এখন এজন্য তাদেরকে কাফির বলার কোনো সুযোগ নেই (নাউযুবিল্লাহ)। কারণ এটা হলো ফরজে ইজতিহাদি; ফরজে কাতয়ি নয়।

{হাশিয়াতু ইবনি আবিদিন: ১/৩১৩, ২/২৩০; ফাতহু বাবিল ইনায়াহ: ২৫; কাশফুস সিতরি আন আহকামিল বিতরি: ৫; আললুবাব লিল মায়দানি: ২/১০}

Share This