গণতন্ত্রের আসল হৃৎপিণ্ড হলো ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতি। গণতন্ত্র পুরোটাই বাতিল এবং অগ্রহণযোগ্য। মুফতি হামিদুল্লাহ জান রহ. লেখেন :

‘প্রত্যক্ষদর্শন ও অভিজ্ঞতায় প্রমাণিত হয়েছে যে, বর্তমানের পশ্চিমা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাই দীনহীনতা, নির্লজ্জতা ও সকল নষ্টের মূল। বিশেষ করে এ ব্যবস্থাপনায় সংসদকে আইন প্রণয়নের অধিকার দেওয়া সম্পূর্ণরূপে কুরআন, সুন্নাহ ও উম্মাহর ইজমা’র বিপরীত।’[1]

গণতন্ত্রের কুফর অতীতের সকল কুফরের চেয়ে ভিন্ন। অতীতে কুফরের ধরন ছিল, মানুষ সরাসরি এক ধর্ম ত্যাগ করে অন্য ধর্ম গ্রহণ করত আর কেবল তখনই তাকে কাফির বলা হতো। পক্ষান্তরে গণতন্ত্রের কুফরে সরাসরি আল্লাহ কিংবা তার রাসুলকেও অস্বীকার করা হয় না, ব্যক্তিগত কিছু ইবাদত পালনেও বাধারোপ করা হয় না। অপরদিকে গণতন্ত্রে আল্লাহর আইন-কানুনকে পার্লামেন্টের মুখাপেক্ষী বানানো হয়। এ ব্যবস্থাপনায় আল্লাহ এবং তার রাসুলের অকাট্য আইন ও বিধানগুলো ততক্ষণ পর্যন্ত রাষ্ট্রে বাস্তবায়িত হতে পারে না, যতক্ষণ পর্যন্ত না সেগুলো সংসদে পাশ হয়। এ কারণে কোনো গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে যদি ইসলামি আইন-কানুনের বাস্তবায়ন থাকেও, এরপরও সেই রাষ্ট্রের গণতন্ত্র বৈধ হয়ে যাবে না। কারণ, সেখানে ইসলামি আইনগুলো এ জন্য বাস্তবায়িত হয়নি যে, আল্লাহ এবং তার রাসুল এগুলোর আদেশ করেছেন। বরং এ জন্য হয়েছে যে, অধিকাংশ জনগণ তা চেয়েছে। এরপর যখন তারা আবার ভিন্নটা চাবে, তখন সেই ভিন্ন কিছুই এখানে কার্যকর হবে। তো এই ব্যবস্থায় হাকিমিয়্যাত তথা বিধান প্রণয়নের ক্ষমতা আল্লাহকে না দিয়ে পার্লামেন্টকে দেওয়া থাকে, যারা অধিকাংশ জনগণের রায়কে মূল্যায়ন করে পারস্পরিক পরামর্শের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।

গণতন্ত্রে আল্লাহর সঙ্গে স্পষ্ট শিরক রয়েছে। কারণ, এ ব্যবস্থায় আইন প্রণয়নের অধিকার পার্লামেন্টকে দিয়ে দেওয়া হয়। এটা এমন এক অপরিহার্য মূলনীতি, যা ছাড়া কোনো সরকারকেই গণতান্ত্রিক বলা হবে না। আর এই গণতন্ত্রের সুরক্ষার জন্য রয়েছে প্রত্যেক দেশে জাতীয় নিরাপত্তাবাহিনী। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোও এর সুরক্ষায় সদা তৎপর।

গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় জনগণের সঙ্গে একটা প্রতারণাও রয়েছে, যা আমাদের দেশগুলোতে খুবই স্পষ্টভাবে দৃষ্টিগোচর হয়। মাওলানা আসিম উমর (হাফিজাহুল্লাহ) লেখেন :

‘কোনো জাতির নেতৃস্থানীয় লোকজন আল্লাহর কিতাব ছেড়ে নিজেরাই কেন স্বতন্ত্র শরিয়তপ্রণেতা হয়ে যায়? কেন তারা আইন প্রণয়নে হাত দিয়ে দেয় এবং আল্লাহর সেই ক্ষমতাকে নিজেদের হাতে তুলে নেয়? এর কারণ হলো, সেই ক্ষমতার মাধ্যমে তারা নিজেদের দাপট-কর্তৃত্বের ভিত্তি মজবুত করতে পারে। নিজেদের এবং সমমনাদের প্রবৃত্তির সুরক্ষা দিতে পারে। ইচ্ছামতো আইন তৈরি করতে পারে এবং সাধারণ মানুষকে নিজেদের দাস বানিয়ে রাখতে পারে। তারপর সেই আইন প্রণয়নকে সম্মানিত করার জন্য সেটাকে কোনো ধর্ম বা কোনো মতবাদের মুখোশ পরিয়ে দেয়; যাতে মানুষ ধর্মীয় শ্রদ্ধাবোধ নিয়ে সেটার ইবাদত করে এবং সেটার বিরোধিতাকে পাপ মনে করে। ফলে সাধারণ মানুষ পুরো জীবন নেতৃত্বস্থানীয়দের সেবাদাস হয়েই থাকে।

এ ক্ষমতা অর্জিত হওয়ার পর ক্ষমতাশীলরা শুধু রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক আইন প্রণয়নই করে না; বরং সমাজকে নিজেদের ক্ষমতার ক্রীড়নক বানাতেও নিজেদের পক্ষ থেকে আইন বানিয়ে নেয়। তারা আল্লাহর অনুমতি ছাড়াই পরিপূর্ণ একটি ধর্ম বানিয়ে নেয়।

মক্কার জাহেলি যুগের পার্লামেন্ট (দারুন নদওয়া) এই কাজই করত। নিজেদের কর্তৃত্ব, ক্ষমতা, দাপট, রাজত্বকে দৃঢ় করার জন্য যা ইচ্ছা হালাল বা বৈধ করে দিত, যা ইচ্ছা হারাম বা অবৈধ করে দিত। তারপর সেই আইন প্রণয়নকে ধর্মের মুখোশ পরানোর জন্য নিজেদের উপাস্যদের দিকে সম্বন্ধ করে দিত যে, এসব তো তোমাদের উপাস্যদের পক্ষ থেকে; যাতে মূর্খ মানুষ তাতে প্রশ্ন করার অবকাশ না পায়।

এখানে সেই ধর্মীয় রাজনৈতিক বাস্তবতা বোঝা প্রয়োজন যে, প্রত্যেক যুগে ক্ষমতাবানরা আইন প্রণয়নের পর সেটিকে নিজেদের প্রভুদের প্রতি সম্বন্ধ করে থাকে। এ ক্ষমতাবান শ্রেণি সেই আইন প্রণয়নকে সচরাচর নিজেদের দিকে সম্বন্ধ করে না। নব্য জাহেলি ব্যবস্থায় হাকিমিয়্যাতের সব ক্ষমতাকে জনগণের দিকে সম্বন্ধ করা হয়। আর এটিই হলো এ জাহেলি ব্যবস্থার প্রধান প্রতারণা। বাস্তবতা হলো, সব ক্ষমতা নেতাদেরই হাতে।’

এ ছাড়াও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় আল্লাহ কর্তৃক অবৈধ ও হারামকৃত বস্তুকে বৈধ ও হালাল বানিয়ে ফেলা হয়। একইভাবে অবশ্য পালনীয় ফরজকে হারাম ও অবৈধ বানিয়ে ফেলা হয়। এ কারণেই গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে মদ, ব্যভিচার, সমলিঙ্গে বিয়ে, ভাই-বোনে বিয়ে, ফ্রি মিক্সিং, ফ্রি সেক্স এবং পতিতাবৃত্তি থেকে শুরু করে অনেক জঘন্যকর্মকে বৈধতা দেওয়া হয়, যেগুলোকে আল্লাহ হারাম করেছিলেন। একইভাবে এতে হদ, কিসাস, জিহাদ থেকে শুরু করে অসংখ্য বিধানকে হারাম বানিয়ে ফেলা হয়, যেগুলোকে আল্লাহ ফরজ করেছিলেন।

মাওলানা আসিম উমর (হাফিজাহুল্লাহ) লেখেন :

‘খেলাফতে উসমানিয়ার ধ্বংসের পর পৃথিবীর বুকে আল্লাহর শরিয়ত পুরোপুরি শাসিত ও পরাভূত হয়ে গেছে। মুসলিম ভূখণ্ডসমূহে শরিয়াহব্যবস্থা শেষ করে দিয়ে ইংরেজ, ফরাসি ও অন্যান্য মিশ্র ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করা হয়েছে।

তারপর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের (১৯৩৯-১৯৪৫ খ্রি.) পর সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলো যখন নিজেদের অধীনস্থ মুসলিম দেশগুলো ত্যাগ করছিল, তখন তারা খুব ভালোভাবেই খেয়াল রেখেছে যে, তাদের চলে যাওয়ার পরও যাতে কোনো ভূখণ্ডে মুহাম্মাদ ﷺ-এর শরিয়ত বাস্তবায়িত হতে না পারে। তাই অধিকাংশ মুসলিম দেশে গণতন্ত্র চালু করা হয় এবং এ বিষয়টি আবশ্যক করে দেওয়া হয় যে, কোনো মুসলিম দেশে শরয়ি শাসনব্যবস্থা চালু করা যাবে না। এ লক্ষ্যে জাতিসংঘের চার্টারকে জীবনব্যবস্থা (ধর্ম) হিসেবে প্রত্যেক রাষ্ট্রের জন্য বাধ্যতামূলক করে দেওয়া হয়েছে। সরকারগুলো এসব আইন-কানুন গুরুত্বের সঙ্গে বাস্তবায়ন করছে। রাষ্ট্রের পুলিশবাহিনী তা বাস্তবায়নে মাঠে নেমেছে।

ফলে মুসলিম সাম্রাজ্য থেকে ইসলামের কর্তৃত্ব শেষ হয়েছে। যে ব্যবস্থা মানুষের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে, যার পোশাকটি নতুন হলেও তার বাস্তবতা ফিরআউন, নমরুদ, সামিরি, শাদ্দাদ, আবু লাহাব ও আবু জাহিলদের মতোই ছেঁড়া ও পুরোনো। আসলে এ জীবনব্যবস্থা হলো সেই পুরোনো জাহিলিয়্যাতের নতুন সংস্করণ। এর কর্তৃত্বকালীন মানুষ শুধু পাপাচারেই লিপ্ত হয় না; বরং পাপাচার প্রসার করার দাওয়াত, তার প্রতি অনুরোগ ও উৎসাহিতকরণ এবং পাপাচারের সব উপকরণ রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় জোগাড় করা হয়। পাপাচারের অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার দাওয়াত, রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় এগুলো প্রচার ও সুরক্ষাদান রাষ্ট্রের দায়িত্ব সাব্যস্ত কর হয়। সুদের ভাগাড় (ব্যাংক) হোক বা বেহায়াপনার আখড়া (মালিশকেন্দ্র, সিনেমাহল, ক্যাবল, টিভি, ইন্টারনেট, নাইটক্লাব, ক্যাফে ইত্যাদি) হোক বা গানবাজনার অনুষ্ঠান হোক—এদের কারও কোনো আশঙ্কা হলে রাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের নিরাপত্তা দেওয়াকে নিজেদের ওপর ফরজ মনে করে। এমন মুহূর্তে কোনো ইমানদার পাপাচার রুখতে উঠে দাঁড়ালে তাকে লাল মসজিদ ও জামিয়া হাফসার মতো টার্গেট করা হয়।

মুহাম্মাদ ﷺ-এর শরিয়তকে রোখার জন্য রাষ্ট্রের সব শাখা (সরকার, প্রশাসন, বিচারবিভাগ, গণমাধ্যম) নিজেদের মতো করে কাজ করে যাচ্ছে। তেমনিভাবে ইসলাম সম্পর্কে সন্দেহ-সংশয় সৃষ্টি করা, ইসলামের নিদর্শনাবলি (দাড়ি, টুপি, হুদুদ, কিসাস)-কে নিয়ে হাসি-ঠাট্টা করা, উম্মাহকে জিহাদ হেকে দূরে সরানোর বিভিন্ন পায়তারা করা, মাদরাসা উলামা ও দীনি শিক্ষার প্রতি ঘৃণা ছড়ানো ওদের মৌলিক মিশনের অন্তর্ভুক্ত।’

মুফতি নিজামুদ্দিন শামজায়ি রহ. বলেন :

‘বিশ্বের অধিকাংশ দেশে যে দুটো রাষ্ট্রব্যবস্থা চলছে, এ দুটো রাষ্ট্রব্যবস্থাই ইহুদিদের তৈরি। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা—এটাও ইহুদিদের আবিষ্কার, ইহুদিরাই এর স্রষ্টা এবং ইহুদিরাই এটাকে বিশ্বের সামনে তুলে ধরেছে। তেমনিভাবে এই যে সাম্যবাদী রাষ্ট্রব্যবস্থা ছিল, সেটাকেও বিশ্বের সামনে ইহুদিরাই উপস্থাপন করেছে।’[2]

মাওলানা আসিম উমর (হাফিজাহুল্লাহ) বলেন :

‘যেহেতু গণতন্ত্র নামক এ নব্য কুফরে পূর্বের ধর্ম থেকে বের হয়ে যাওয়া আবশ্যক নয়, তাই অনেকে এ কুফরি ধর্মের কুফরিই বোঝে না। তারা নিজেদের ধর্ম পালনের পাশাপাশি আরেকটি নতুন ধর্মকেও জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত করে নেয়। খ্রিষ্টানরা রবিবারে গির্জায় যেতে পেরেই সন্তুষ্ট। কারণ, নতুন এ ধর্ম ইবাদতের ব্যাপারে তাদের প্রতি কোনো বাধ্যবাধকতা আরোপ করেনি। পুরো সমাজব্যবস্থা যে ইহুদিদের তৈরি সেকুলারিজমের অধীনে চলে যাচ্ছে, সেটার প্রতি তাদের কোনো পরোয়াই নেই।

তেমনিভাবে মুসলমানদের এ ধর্মে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য প্রথমে খিলাফাতব্যবস্থা ভেঙে ফেলা হয়; যাতে কুরআন কারিমের জীবনব্যবস্থা তাদের নিজেদের জীবন থেকে বিদায় নেয় এবং তারা শুধু ব্যক্তিগত ইবাদতকেই ধর্ম মনে করে। এর জন্য প্রাচ্যবিদ, তথাকথিত প্রগতিশীল ও আধুনিকমনা বুদ্ধিজীবীদের মাধ্যমে ধারাবাহিক প্রয়াস চালানো হয়। শরয়ি পরিভাষাসমূহের অর্থ বিকৃত করা হয়। যেমন : ফকিহগণ ধর্মীয় স্বাধীনতার এক ব্যাখ্যা দেন; কিন্তু ইংরেজ মুফতি ও কাদিয়ানিমার্কা মুফতিরা তার ব্যাখ্যা দেয় নতুন করে। তেমনিভাবে দারুল হারব ও দারুল ইসলামের রূপ, হাকিমিয়্যাত ও আল-ওয়ালা ওয়াল-বারা’র[3] রূপ, আল্লাহর আইন ও গাইরুল্লাহর আইনে বিচারকার্য—সবগুলোর এমন সব অর্থে দাঁড় করিয়েছে যে, ফকিহগণের কথাগুলো পুরোনো কিতাবাদিতেই রয়ে গেছে।

মুসলমানদের ধোঁকা দেওয়ার জন্য পাশ্চাত্যের গণতন্ত্র শরয়ি পরিভাষাসমূহকে খুবই শঠতার সঙ্গে ব্যবহার করেছে। যেখানেই গণতন্ত্রের কুফরি স্পষ্ট হয়ার আশঙ্কা ছিল, সেখানেই নতুন পরিভাষা সৃষ্টি করা হয়েছে।

মুসলমানদের কিছু আচার-অনুষ্ঠান ও কিছু ইবাদতের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে, অথচ তাদের সামাজিক জীবন থেকে শুধু ধর্মকেই বিতাড়ন করা হয়নি; বরং সামাজিক জীবনের জন্য কুফরের স্রষ্টারা তাদের একটি নতুন ধর্ম আবিষ্কার করে। যে ধর্মমতে জীবন পরিচালনা করার কাজটি জাতিসংঘের সব সদস্য রাষ্ট্রকে আবশ্যিকভাবে পালন করতে হয়। কুফরি আইন ও জীবনব্যবস্থাকে জোরপূর্বক মুসলমানদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে; কিন্তু এটা তারা অনুভব করতে পারেনি। কারণ, নামাজ রোজা হজ ইত্যাদির অনুমতি প্রদান করা হয়েছে।  ইসলামি নাম রাখতেও নিষেধ করা হয়নি। তাদের অনুভব না করার কারণ হলো, তাদের দৃষ্টিতে কুফর হলো ইসলাম থেকে পূর্ণাঙ্গভাবে বের হয়ে যাওয়ার নাম। এককালে কেউ নতুন ধর্ম গ্রহণ করে নিজের নাম পরিবর্তন করাকেই কেবল কুফরি মনে করা হতো। নব্য কুফর তো এমন কোনো কিছুই দাবি করছে না।

কিন্তু গণতন্ত্র ও সেক্যুলার সিস্টেমে একটু চিন্তা করলেই এ কথা দিবালোকের মতো সুস্পষ্ট হয়ে যায় যে, এটি একটি ধর্ম; তাতে রয়েছে নিজস্ব হালাল-হারাম। রয়েছে ফরজ-ওয়াজিব। রয়েছে শত্রুতা-বন্ধুত্বের মাপকাঠি। এসব তো স্বতন্ত্র ধর্মের মধ্যেই থাকে। কিন্তু এ ব্যবস্থার ধূর্ততা দেখুন, তার দাবি হলো, গণতন্ত্রে বা ধর্মনিরপেক্ষতাবাদে কোনো ধর্মের আবশ্যকতা বা কোনো ধর্মের প্রতি নিষেধাজ্ঞা নেই। তাতে প্রত্যেক ধর্মই স্বাধীন। অথচ চিন্তা করলে বোঝা যায়, এটা এ ব্যবস্থার প্রতারণা। পরিভাষাসমূহকে শঠতাপূর্ণ পন্থায় ব্যবহার করে মুসলমানদের সামনে উপস্থাপন করা হচ্ছে। আল্লামা সায়্যিদ আবুল হাসান আলি নদবি রহ. বলেন : “কুফর শুধু একটি না-বাচক বিষয় নয়; বরং তা হ্যাঁ-বাচক ও প্রমাণিত বিষয়। শুধু আল্লাহর দীন অস্বীকারের নাম কুফর নয়; বরং সেটিও একটি ধর্মীয় ও চারিত্রিক ব্যবস্থা এবং বিশেষ একটি ধর্ম, যেখানে রয়েছে ফরজ-ওয়াজিব, মাকরুহ-হারাম। তাই এ দুই ধর্ম এক স্থানে একত্রিত হতে পারে না। একজন মানুষ একই সময়ে দুই ধর্মের প্রতি আনুগত্য করতে পারে না।”’[4]

এ ছাড়াও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা দাঁড়িয়েই রয়েছে সুদ এবং করের ওপর; ইসলামের দৃষ্টিতে যে দুটো অত্যন্ত জঘন্য। যা সমাজকে একেবারে বরবাদ করে দেয়। গরীবের রক্ত চুষে খায় আর পুঁজিবাদীদের রাতারাতি আঙুল ফুলিয়ে কলাগাছ বানানোর সুযোগ করে দেয়। এ ছাড়াও তাতে রয়েছে বেহায়াপনার অবাধ প্রসার। সমাজে দীনি মেহনত যতই বৃদ্ধি পাক না কেন, মসজিদ-মাদরাসার সংখ্যা যতই বাড়ুক না কেন, তাবলিগ জামাত আরও বিস্তৃত পরিসরে মেহনত শুরু করুক না কেন, কিছুতেই সমাজ থেকে এ সকল ফিতনা দূরীভূত হবে না। কারণ, যে ব্যবস্থা বিজয়ী থাকবে, তারই জীবনধারা বিজয়ী থাকবে। সেই ব্যবস্থার ছায়াতলে থেকে যতই সংশোধনের চেষ্টার করা হোক না কেন, তা কোনো সুফল বয়ে আনবে না। এ জন্যই আল্লাহ বলেছেন :

‘শরিয়তের শত্রুদের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাও; যাবত্‌ না ফিতনা নির্মূল হয়।’[5]

সুতরাং যতদিন গাইরুল্লাহর মতবাদের শাসন বিদ্যমান থাকবে, ততদিন সমাজে ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হবে না। স্মতর্ব্য যে, ইসলাম প্রচার আলাদা বিষয় আর ইসলাম প্রতিষ্ঠা আলাদা বিষয়। রাসুলুল্লাহ ﷺ ইসলাম প্রচারও করেছেন, ইসলাম প্রতিষ্ঠাও করেছেন। কুরআনে আল্লাহ তাকে পাঠানোর উদ্দেশ্য বর্ণনা প্রসঙ্গে এ-ও বলেছেন, ‘যেন তিনি আল্লাহর দীনকে সকল দীনের ওপর প্রতিষ্ঠিত করেন; যদিও মুশরিকরা তা অপছন্দ করে।’[6]

মুফতি হামিদুল্লাহ জান রহ. বলেন :

‘যতদিন এই দুর্গন্ধযুক্ত গণতন্ত্র, ইংরেজপ্রদত্ত শাসনব্যবস্থা এই দেশে থাকবে, ততদিন কূপ পাক হতে পারে না। সর্বপ্রথম মৃত কুকুরকে কূপ থেকে বের করতে হবে, তবেই এই পানি পাক হবে। যতক্ষণ মরা কুকুর পানিতে পড়ে থাকবে, হাজার বালতি পানি বের করলেও কূপ পাক হবে না।’[7]

তিনি আরও বলেন :

‘ভোটের ব্যবহার মূলত পশ্চিমা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থাকে কার্যত মেনে নেওয়া এবং সেটার সকল অন্যায়ের অংশীদার হওয়াকে সাব্যস্ত করে। এ জন্য প্রচলিত পশ্চিমা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাপনার অধীনে ভোটের ব্যবহার শরিয়তের দৃষ্টিতে জায়িয নয়।’[8]

এক বক্তৃতায় তিনি বলেন :

‘কেউ বলবে, ভোট আমানত; কেউ বলবে, ভোট ওকালত বা প্রতিনিধিত্ব; কেউ বলবে, ভোট হচ্ছে সাক্ষ্য। ভোট যা-ই হোক না কেন, আমি একটা কথা জিজ্ঞাসা করছি, সাক্ষ্য সর্বদা হকের ব্যাপারে দেওয়া হবে। যে বাতিল শাসনব্যবস্থা রয়েছে, তার সমর্থনে ভোট দেওয়া আদতে সেই বাতিল ব্যবস্থাকে এভাবে মেনে নেওয়ার নামান্তর যে, এই বাতিল শাসনব্যবস্থা সঠিক। আপনি শাহাদাত-সাক্ষ্য বলছেন, তো আমি শাহাদাত মেনে নিচ্ছি। আপনি ওকালত-প্রতিনিধিত্ব বলছেন, আমি ওকালত মেনে নিচ্ছি। আপনি আমানত বলছেন, তো আমি আমানত মেনে নিচ্ছি। আপনি যা-ই বলতে চান, বলুন। কিন্তু আপনি বলুন তো, গণতান্ত্রিক শাসনব্যস্থা, এই নাপাক শাসনব্যবস্থা, ইংরেজদের দেওয়া শাসনব্যবস্থা—এটাকে কার্যকরভাবে মেনে নেওয়া নয় কি? উত্তর দিন, আপনারা ফাতওয়া দিন, এটাকে কার্যকরভাবে মেনে নেওয়া নয় কি?’[9]

মুফতি রশিদ আহমদ লুধিয়ানবি রহ. বলেন :

‘আফসোস তো হয় ওই সকল ব্যক্তিত্বের ব্যাপারে, যারা দাবি করে, প্রচলিত রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করে আমাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে, দেশে সহিহ ইসলামি রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত করা। অথচ রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে তারা ইসলামি বিধিনিষেধের তোয়াক্কা করে না এবং শরিয়ত-পরিপন্থী কৌশল অবলম্বন করে।

যখন তাদের বলা হয়, আপনারা তো ইসলামি রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত করার দাবিদার; কিন্তু আপনারা ইসলাম বাস্তবায়নের জন্য যে পন্থা অবলম্বন করেছেন, তা তো অনৈসলামিক এবং নাজায়িয, তখন তারা প্রত্যুত্তরে বলে, যদিও এ পদ্ধতি নাজায়িয; কিন্তু তা ব্যতীত ইসলাম প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। এ জন্য এখন তো জায়িয-নাজায়িযের তোয়াক্কা না করে ক্ষমতায় যাওয়ার চেষ্টা-প্রচেষ্টা করা আবশ্যক। ক্ষমতা অর্জিত হলে পরিপূর্ণভাবে ইসলাম বাস্তবায়ন করব।

এটা ধোঁকা ছাড়া আর কিছুই নয়। তাদের নিয়তের ব্যাপারে আমরা সন্দেহ করছি না; কিন্তু তাদের কর্মপদ্ধতি এমন, যার মাধ্যমে কখনোই ইসলাম বাস্তবায়নের আশা করা যায় না। কেননা অনৈসলামিক পদ্ধতিতে দীনহীনদের জন্য তো সফলতা অর্জন করা সম্ভব; কিন্তু দীনদারদের জন্য প্রথমত সফলতা অর্জন করাই সম্ভব নয়। আর যদি বাহ্যত সফল হয়েও যায়, তবুও সেটার পরিণামে ইসলাম আসবে না; বরং ইসলাম নামের অন্য কিছু হবে। বাহ্যত যে সফলতা অর্জন করেছে, তা-ও দীর্ঘস্থায়ী হবে না। যেহেতু তার ভিত্তি দুর্বল ছিল, তো সেটার ওপর ভবন কীভাবে টিকে থাকবে?’[10]

মিল্লাতে ইবরাহিমের জাগরণ গ্রন্থের লেখক বলেন :

‘সকল গোষ্ঠী তিনটি বিষয়কে অজুহাত হিসেবে দাঁড় করায় :

  1. সদস্য-সংখ্যার স্বল্পতা
  2. বস্তুগত প্রস্তুতির অবিদ্যমানতা
  3. শত্রুর সংখ্যাধিক্য, ভয়ানক অস্ত্রশক্তি এবং অসাধারণ রণপ্রস্তুতির সামনে টিকতে না পেরে পরাজিত হওয়ার আশঙ্কা।

অথচ এ বিষয়গুলো কখনোই অজুহাত হতে পারে না। সদস্যা-সংখ্যার স্বল্পতা তো এ জন্য অজুহাত হতে পারে না যে, মক্কায় তেরো বছর পর্যন্ত রাসুলুল্লাহ ﷺ-এর সাহাবিরা সব ধরনের কষ্ট সয়েছেন। আমাকে বলো, তাদের সংখ্যা কত ছিল? এরপরও কি রাসুলুল্লাহ ﷺ তাদেরকে নীরব থাকার, সন্ধি করে নেওয়ার, বস্তুবাদী পৃথিবীর বেশি থেকে বেশি উপকার অর্জনের দিকে অভিমুখী হওয়ার এবং শত্রুদের সঙ্গে মিলে কাজ করার অনুমতি প্রদান করেছেন? তিনি কি তাদেরকে কাফিরদের ধোঁকায় রেখে তাদের গুরুত্বপূর্ণ দফতরগুলোর ওপর নিয়ন্ত্রণ লাভের উৎসাহ দিয়েছেন? নাকি রাসুলুল্লাহ ﷺ সাহাবিদেরকে তোমাদের বুদ্ধিবৃত্তিক পরিকল্পনাগুলোর মতো কোনো সুদৃঢ়-সুসংহত পরিকল্পনা করে দিয়েছিলেন? পক্ষান্তরে তোমাদের পরিকল্পনাগুলোর অবস্থা তো আমরা সরাসরি প্রত্যক্ষ করছি এবং তার ফলাফল পুরোপুরিই ভোগ করছি।

অপরদিকে মুহাম্মাদ ﷺ-এর দাওয়াতের ফলাফল তো কোনো চক্ষুষ্মানের দৃষ্টিপটে অস্পষ্ট থাকার কথা নয়। তার সাথে ছিল ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র সাহাবিদের এক কাফেলা, যাদের ভয়ে রোম এবং পারস্য আতঙ্কিত হয়ে উঠত—যে রোম এবং পারস্য ছিল তৎকালীন পরাশক্তি, তোমাদের এ যুগে যেমন যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়া হলো দুনিয়ার পরাশক্তি। আবু সুফিয়ানের সাথে রোমসম্রাট হিরাক্লিয়াসের প্রশ্নোত্তর এবং তা থেকে হিরাক্লিয়াস যে সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছিল—তা থেকে সেই অবস্থা সম্পর্কে সম্যক ধারণা পাবে।

সহিহ বুখারির দীর্ঘ হাদিসে বিবৃত হয়েছে :

হিরাক্লিয়াস বলল,‘আমি তোমাকে জিজ্ঞেস করেছি, সম্ভ্রান্ত লোক তার অনুসরণ করে, নাকি সাধারণ লোক? তুমি বলেছ, সাধারণ লোকই তার অনুসরণ করে। আর বাস্তবেও এই শ্রেণির লোকেরাই হন রাসুলগণের অনুসারী। আমি তোমাকে জিজ্ঞেস করেছি, তিন্নি সন্ধি ভঙ্গ করেন কি না? তুমি বলেছ, না। প্রকৃতপক্ষে রাসুলগণ এরূপই সন্ধি ভঙ্গ করেন না। তুমি যা বলেছ, তা যদি সত্য হয়, তবে শীঘ্রই তিনি আমার দুপায়ের নিচের জায়গার অধিকারী হবেন।[11]

হিরাক্লিয়াসের সুগভীর জ্ঞান এবং তার দূরদর্শিতার দিকে লক্ষ করো—সে রাসুলুল্লাহ ﷺ এর বিজয়লাভের ঘোষণা দিচ্ছে, অথচ এটা তার জানা যে, এই নবির অধিকাংশ অনুসারী নিতান্ত সাধারণ লোক। সে নবির রণপ্রস্তুতি, শক্তি এবং বাহিনী সম্পর্কে কোনো প্রশ্নই করেনি।

আখের নবি ﷺ-এর দীনের প্রভাব প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, নাকি তা হয়নি?

হ্যাঁ, দীন ইসলামের প্রভাব প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং তা যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়ার সমকক্ষ রোম-পারস্য শাসন করেছিল।

কিন্তু তোমরা যেহেতু মিল্লাতে ইবরাহিম ত্যাগ করেছ, তার বিরোধিতায় সরব হয়েছ, ভিন্ন কোনো আদর্শ গ্রহণ করেছ, নিজেদের ধারা বদলে ফেলেছ আর মিল্লাতে ইবরাহিমের মধ্যে পরিবর্তন ও বিকৃতি সাধনের প্রচেষ্টায় রত হয়েছ, তাই আমরা দৃঢ়তার সঙ্গে এ কথা বলব যে, কিছুতেই তোমাদের প্রভাব প্রতিষ্ঠিত হতে পারবে না।

যদি বলো, কেন আমাদের প্রভাব প্রতিষ্ঠিত হতে পারবে না?

আমরা বলব, তোমরা ধোঁকার পথকে নিজেদের পরিকল্পনার অংশ বানিয়ে নিয়েছ, অথচ রাসুল ﷺ এবং তার অনুসারীরা কখনো ধোঁকার পথে হাঁটেননি।

তোমরা নিজেদের সংগঠনের জন্য তোমাদের দৃষ্টিতে বিশেষ ক্ষমতাধর শ্রেণি এবং শক্তিশালী কর্তৃপক্ষের সদস্যদের বেছে নিয়েছ, অথচ রাসুলুল্লাহ ﷺ-এর অনুসারীরা ছিল দুর্বল। ‘রাসুলুল্লাহ ﷺ ছিলেন মানুষদের মধ্যে পার্থক্যকারী’—যেমনটি সহিহ বুখারির উদ্ধৃতিতে পূর্বে উল্লেখিত হয়েছে। তেমনি তার সাহাবিরাও নিজ প্রতিপালককে কিয়ামাতের দিন বলবে : ‘হে আমাদের প্রতিপালক, আমরা মানুষদের থেকে আলাদা হয়েছি এমতাবস্থায় যে, তাদের প্রতি আমাদের প্রয়োজন ছিল প্রচণ্ড।’

অথচ তোমরা সব ধরনের মানুষের সঙ্গে মিলেমিশে চলো, সবাই-ই তোমাদের দৃষ্টিতে মুসলমান; তাদের বিশ্বাস দৃষ্টিভঙ্গি কাজকর্মে পারস্পরিক কতটা ভিন্নতা—তা সবই তোমাদের দৃষ্টিতে অবিবেচ্য এবং গুরুত্বহীন একটি বিষয়। একমাত্র গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, তারা জাতীয়তার সারিতে সহাবস্থানে চলে আসুক, সম্মানজনক পদসমূহ অধিকার এবং ধোঁকার মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোর ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে তারা তোমাদের সহযোগী হয়ে যাক—যাতে তোমরা নিজেদের কল্পিত ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হও।

অথচ রাসুলুল্লাহ ﷺ তার প্রকাশ্য মানহাজকে দৃপ্তকণ্ঠে ঘোষণা করে, মানুষদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে এবং তাদের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেও ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে দেখিয়েছেন। তার সাহাবিদের মধ্য থেকেও শহিদ হয়েছে মাত্র গুটিকয়েক প্রাণ, বন্দির সংখ্যা তো নিতান্ত স্বল্প।

তোমরা নিজেদের বিশ্বাসকে গোপন রাখো, মুশরিকদের সারিতে প্রবেশ করে ঐক্যের বন্ধনেও আবদ্ধ হও, সবধরনের চাল প্রয়োগ করো, এতদসত্ত্বেও নিজেদের কল্পিত ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে সমর্থ হও না। অথচ এই ধোঁকার আন্দোলনে তোমাদের হাজার ব্যক্তি মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করেছে। বাস্তবতা হলো, তোমরা এখনো পর্যন্ত নবিজি ﷺ-এর এই বাণী হৃদয়ঙ্গম করোনি :

‘মুমিন এক গর্তে দুবার দংশিত হয় না।’

আমরা তোমাদের সে কথাই বলব, ইমাম মালিক r যা বলেছিলেন :

‘এই উম্মাহর শেষভাগের লোকেরা কিছুতেই সংশোধিত হতে পারবে না, তবে সেই উপাদানের মাধ্যমে পারবে, যার মাধ্যমে প্রথমভাগের লোকেরা সংশোধিত হয়েছিল।’

আর নবিজি ﷺ তো বলেছেন :

‘আমার উম্মাহর একদল সত্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকবে। যারা তাদের বিরুদ্ধাচারণ করবে, তারা তাদের কোনো ক্ষতি করতে পারবে না, যাবত্‌ না আল্লাহর নির্দেশ আসে।’[12]

মুফতি নিজামুদ্দিন শামজায়ি শহিদ রহ. বলেন :

‘নির্বাচন পদ্ধতি ও গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে আলিমগণ আটচল্লিশটি বছর নষ্ট করেছে। আমি জোর দাবি করে বলছি, এই ব্যবস্থায় আটচল্লিশ হাজার বছরেও ইসলাম আসবে না। কবি ইকবালের কথা অনুযায়ী—গণতন্ত্র এমন একটি শাসনব্যবস্থা, যাতে মানুষকে গণনা করা হয়; কিন্তু মাপা হয় না। সুতরাং এ কর্মপন্থায় শ্রম ব্যয় না করে তরুণদের নিয়ে মেহনত করুন। তাদের মানসিকতা তৈরি করুন। মার্কিন ও ইহুদি অভিসন্ধি তাদের বুঝিয়ে দিন। প্রথমে নিজেও বিষয়টি বুঝে নিন।’[13]

অন্যত্র তিনি বলেন :

‘আল্লাহ তাআলার দীন পৃথিবীতে ভোটের মাধ্যমে, পশ্চিমা গণতন্ত্রের মাধ্যমে বিজয় লাভ করতে পারবে না। কেননা পৃথিবীতে ফাসেক-ফাজের দুষ্টমতি ও দুশমনদের আধিক্য। আর গণতন্ত্র হচ্ছে মানুষদের গণনা করার নাম; মাপার নাম নয়। পৃথিবীতে ইসলামকে বিজয়ী করার একমাত্র পথ হচ্ছে, যেটা রাসুলুল্লাহ ﷺ গ্রহণ করেছেন। আর তা হচ্ছে জিহাদ-কিতালের পথ।’[14]


[1] আদইয়ান কি জঙ্গ : ৫৬

[2] খুতবাতে শামজায়ি : ১/১৭২-১৭৩

[3] আল-ওয়ালা ওয়াল-বারা সম্পর্কে মৌলিক ধারণা পেতে পড়ুন—মিল্লাতে ইবরাহিমের জাগরণ

[4] মাওলানা আসিম উমরের উপরিউক্ত সঞ্চয়নগুলো সুরা আসরের তাফসির থেকে সংগৃহীত হয়েছে।

[5] সুরা আনফাল : ৩৯

[6] সুরা তাওবা : ৩৩

[7] ইউটিউবে হজরতের একটি বয়ান থেকে সংগৃহীত।

[8] আদইয়াক কি জঙ্গ : ৫৬

[9] ইউটিউবে হজরতের একটি বয়ান থেকে সংগৃহীত।

[10] আহসানুল ফাতাওয়া : ৬/৪৩

[11]. সহিহ বুখারি : ৭

[12]. সহিহ বুখারি : ৭৩১১; সহিহ মুসলিম : ১৯২১

[13] খুতুবাতে শামজায়ি : ১/২০৩-২০৪ (সংক্ষেপিত)

[14] আদইয়ান কি জঙ্গ : ৫৮ (সংক্ষেপিত)

Share This