অসি-খঞ্জর করেছি বিক্রি,
তা দিয়ে কিনেছি জায়নামাজ।
এদিকে মেয়ের সতীত্বনাশ,
ওদিকে দোয়ায় লিপ্ত আজ।

খ্রিষ্টানরা যদি ক্রুসেডের পথ ধরে, ইহুদিরা যদি দাজ্জালি রাজত্ব কায়েম করার স্বপ্ন দেখে, হিন্দুরা যদি অখণ্ড রামরাজ্য বা কৃষ্ণরাজ্য বানানোর কথা বলে, তবে তাদের ধর্মীয় বিশ্বাস, আদর্শ বা স্পৃহা অনুসারে তারা ঠিকই করেছে, ঠিকই বলেছে। তারা মুসলিমদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করেনি। তাদের ধর্মের সিদ্ধান্ত অনুসারে এটাই আদর্শ শিক্ষা।

সুতরাং দোষ তো তাদের নয়। দোষ আমাদের। আমরাই বরং রবের করুণা না চেয়ে তাদের করুণা নিয়ে বাঁচতে চেয়েছি। আল্লাহর দুনিয়ায় আল্লাহর হাকিমিয়্যাত (শাসনাধিকার) প্রতিষ্ঠা না করে জাহিলিয়াতের শাসন জারি করেছি। ইসলামের আল-ওয়ালা ওয়াল-বারার চর্চা ছেড়েছি। শত্রু-মিত্র নির্ধারণের ক্ষেত্রে তথাকথিত মানবধর্মের আশ্রয় নিয়েছি। আমরা ইসলাম প্রতিষ্ঠার কথা বলতে ভয় পেয়েছি। ইসলাম প্রতিষ্ঠার নির্দেশ ও নির্দেশনা-সংবলিত আয়াত ও হাদিসসমূহকে সারাজীবন গোপন করেছি বা ভিন্ন অর্থে প্রয়োগ করেছি।

আমরা আসমানওয়ালাকে অসন্তুষ্ট করে জমিনে ভালো থাকার দিবাস্বপ্ন দেখেছি। আর তাইতো তাদের মুখে হিন্দুস্তানকে রামরাজ্য বানানোর কথা শুনলেও আমরা হিন্দের গাজওয়ার কথা বলতে পারিনি। আমরা বলেছি সেক্যুলারিজমের কথা, বলেছি ডেমোক্রেসি ও ন্যাশনালিজমের কথা। ভেবেছি, এতেই বুঝি কাফির প্রভুরা সন্তুষ্ট হয়ে যাবে। কিন্তু না, আমরা আমাদের মূল ভুলে যেতে পারি, আমরা শিকড়বিচ্ছিন্ন হতে পারি। কিন্তু এই নির্বুদ্ধিতা তারা করে না।

রাসুলুল্লাহ সা.-এর মক্কিজীবনের সমাপ্তি হয়েছে মাত্র তেরো বছরের মাথায়। কিন্তু আমাদের মক্কিজীবন চলতে থাকে এক শতাব্দীকাল ধরেও। ইসলাম পরিপূর্ণ হয়ে যাওয়ার পর আমরা ফের ফিরে যাই অধিকাংশ বিধিবিধান অবতীর্ণ হওয়ার পূর্বের যুগে। মক্কিজীবনে আছি বলে রোজা, হজ, জুমআ ও জাকাত ছাড়ি না। শুধু ইসলামের প্রতিরক্ষাবিধান অস্বীকার করি। আমরা প্রচার করি, বদরওয়ালাদের মধ্যে আমাদের আদর্শ নেই। যেহেতু আমরা নিজেদেরকে মক্কিজীবনের মুসলমান ভাবি। মক্কিযুগ তো নির্যাতনের যুগ, নিপীড়নের যুগ, নিগৃহীত হওয়ার যুগ, রক্তাক্ত হওয়ার যুগ। সুতরাং আঘাত পেয়ে কেন কাঁদি? প্রায় শ’খানেক সবরের আয়াত কেন ভুলে যাই? আমাদের তো উচিত, এক গালে আঘাত খেলে অপর গালও এগিয়ে দেওয়া। রক্তের সাগরে দিনমান ভাসতে থাকা। আর নবি যে মক্কিযুগেই বলেছিলেন, ‘আমি তোদের কাছে জবাইয়ের বিধান নিয়ে এসেছি’, এগুলো দেখেও না দেখার ভান করা।

যে মুসলমান আল্লাহকে তার যথার্থ মূল্যায়ন করেনি, যে মুসলমান বাতিলের ভয়ে হক গোপন করেছে, সর্বোপরি যে মুসলমান ভালো থাকার দিবাস্বপ্নে তার দীনে বিকৃতি, অপব্যাখ্যা ও গোপনতার পথ খুলেছে; তার নিদ্রাভঙ্গের জন্য এসব নির্যাতনই উত্তম পথ। আঘাত থেকে শুরু হবে প্রতিঘাত, ক্রিয়া থেকে জন্ম নেবে প্রতিক্রিয়া। এভাবেই একদিন মুসলিমরা জাগবে। আবারও তাওহিদের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে সম্পূর্ণ ঘুরে দাঁড়াবে। স্রেফ মুখে তাওহিদের বুলি না কপচিয়ে আমলি তাওহিদও বাস্তবায়ন করা শিখবে।

Share This