রাসুলুল্লাহ সা. মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করার পর তাঁরই হাতে সর্বপ্রথম ইসলামি সমাজ ও রাষ্টব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়। তাই দারুল ইসলামের সর্বপ্রথম প্রতিষ্ঠাতা খোদ রাসুলুল্লাহ সা.। ইসলামি সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে মহান রাসুল কিছু মৌলিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। বক্ষ্যমাণ নিবন্ধে আমরা সেই মৌলিক পদক্ষেপ ও ভিত্তিগুলোর ওপর সংক্ষিপ্ত আলোকপাত করার প্রয়াস পাবো।
ইসলামি সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে রাসুলুল্লাহ সা. যে-সকল উদ্যোগ ও পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন, তার মধ্যে সবিশেষ উল্লেখযোগ্য হলো—
১. মসজিদ নির্মাণ
২. মুসলমানদের মধ্যে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন স্থাপন
৩. মুসলমানদের পারস্পরিক শৃঙ্খলা-সম্পর্ক এবং অমুসলিমদের সাথে তাদের আচার-আচরণের বিধিবিধান-সংবলিত সংবিধান প্রণয়ন।
ইসলামি সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা ও সুদৃঢ়করণের ক্ষেত্রে উপরিউক্ত তিনটি বিষয়ের ভূমিকার ব্যাপারে এখানে আমরা সংক্ষেপে আলোচনা করবো।
মসজিদ নির্মাণ:
রাসুলুল্লাহ সা. যখন মদিনায় হিজরত করেন, তখন তার উটনীটি মহান আল্লাহর নির্দেশে যে জায়গায় গিয়ে হাঁটু গেড়ে বসেছিলো, তা ছিলো দুজন আনসারি এতিম বালকের মালিকানাধীন জায়গা। রাসুলুল্লাহ সা. এর হিজরতের পূর্বেই আসআদ ইবনু যুরারা রা. সে জায়গাটিকে সালাত আদায়ের স্থানরূপে গ্রহণ করেছিলেন। সেখানে তিনি তার সঙ্গীদেরকে নিয়ে সালাত আদায় করতেন। রাসুলুল্লাহ সা. সেই জায়গাটিতে স্থায়ী মসজিদ নির্মাণের আদেশ দিলেন। তিনি বালকদুটিকে ডাকলেন —তারা আসআদ ইবনু যুরারা রা. এর তত্ত্বাবধানেই প্রতিপালিত হচ্ছিলো— এরপর তিনি তাদেরকে নিজ ইচ্ছার কথা জানিয়ে জায়গাটি মসজিদ নির্মাণের উদ্দেশ্যে বিক্রি করে দিতে বললেন। রাসুলুল্লাহ সা. তাদেরকে সেই জায়গার দাম জিজ্ঞেস করলেন। তারা বললো, হে আল্লাহর রাসুল, আমরা আপনাকে এই জায়গাটি হাদিয়া দিচ্ছি। রাসুলুল্লাহ সা. তাদের থেকে তা হাদিয়াস্বরূপ গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানালেন। অবশেষে দশ দিনারের বিনিময়ে তিনি জায়গাটি মসজিদের জন্য কিনে নিলেন। {বুখারি, ফাতহুল বারি, তাবাকাতু ইবনি সাদ, ইলামুস সাজিদ ফি আহকামিল মাসাজিদ লিযযারকাশি}
সেই জায়গায় কিছু গারকাদ এবং খেজুর গাছ ছিলো। আর ছিলো মুশরিকদের কতক প্রাচীন কবর। রাসুলুল্লাহ সা. এর নির্দেশে কবরগুলো খনন করা হলো এবং গাছগুলো কেটে ফেলা হলো। এরপর রাসুলুল্লাহ সা. নিজে সাহাবিদেরকে সাথে নিয়ে মসজিদ নির্মাণের কাজে লেগে গেলেন। মসজিদের কিবলা রাখা হলো আলআকসা অভিমুখে।
রাসুলুল্লাহ সা. মদিনায় পৌঁছেই মুহাজির এবং আনসার সাহাবিদেরকে নিয়ে এক সুদৃঢ় সুসংহত ইসলামি সমাজ প্রতিষ্ঠার প্রতি মনোযোগ নিবদ্ধ করলেন। এক্ষেত্রে সর্বপ্রথম তিনি যে পদক্ষেপ রাখলেন, তা হলো— মসজিদ নির্মাণ। এতে বিস্ময়ের কিছু নেই। কারণ, ইসলামি সমাজ বিনির্মাণে মসজিদ-প্রতিষ্ঠা সর্বপ্রথম এবং সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ অবলম্বন। কেননা ইসলামি সমাজ দৃঢ়তা এবং সুসংহতি লাভ করে ইসলামের নেযাম-শৃঙ্খলা, তার আকিদা-বিশ্বাস এবং আদব-শিষ্টাচার গ্রহণ করার দ্বারা। আর এসবই উৎসারিত হয় মসজিদের প্রাণ এবং আত্মা থেকে।
ইসলামের মৌলিক দৃষ্টিভঙ্গির অন্যতম হলো, মুসলমানদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব এবং সম্প্রীতির বন্ধন সৃষ্টি করা। আর এই বন্ধন পূর্ণতা পায় মহান আল্লাহর ঘর মসজিদে। মুসলমানদের মধ্যে প্রত্যহ কয়েকবার দেখা-সাক্ষাৎ, সালাম-কালাম হয় এই পবিত্র ঘরেই। এখানে থাকে না সম্পদ, সামাজিক প্রতিপত্তি এবং রূপ-লাবণ্যের কোনো ক্রিয়া। থাকে না কোনো ধরনের বিভেদ-বিসংবাদ। সকলে একসাথে, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে, পায়ের গোড়ালি সমান রেখার ওপর রেখে সালাত আদায় করে। একসাথে সকলে লুটিয়ে পড়ে মহান প্রভুর উদ্দেশে সিজদায়। এভাবে তাদের অন্তরের ক্লেদ-অহং দূর হয়। সৃষ্টি হয় ভালোবাসা ও একতার নিবিড় বন্ধন।
ইসলাম চায় মুসলমানদের মধ্যে তাদের জীবনের সর্বক্ষেত্রে সর্বদা সাম্য-ইনসাফ এবং নীতি-নৈতিকতা সুপ্রতিষ্ঠিত রাখতে। এক্ষেত্রেও মুসলমানদের প্রাত্যহিক সাক্ষাৎ এবং একসাথে এক কাতারে দাঁড়িয়ে মহান রবের উদ্দেশ্যে নিবিষ্ট হৃদয়ে সালাত আদায়ের ভূমিকা অশেষ।
মুসলমানদের মধ্যে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন স্থাপন
ইসলামি সমাজ বিনির্মাণের ক্ষেত্রে দ্বিতীয় পর্যায়ে রাসুলুল্লাহ সা. যে উদ্যোগ নিয়েছিলেন, তা ছিলো— মুসলমানদের মধ্যে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন স্থাপন। মুহাজির এবং আনসার সাহাবিদের মাঝে তিনি এ বন্ধনের ভিত্তিতে নিবিড় ঐক্য প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তাদেরকে অধিকার, সহমর্মিতা এবং উত্তরাধিকার লাভের ক্ষেত্রে তিনি এক বন্ধনে গেঁথে দিয়েছিলেন। এমনকি সুদীর্ঘকাল পর্যন্ত মৃত ব্যক্তির পরিত্যক্ত সম্পদ প্রাপ্তির ক্ষেত্রে আত্মীয়তার বন্ধনের থেকে এই বন্ধন ছিলো অধিক প্রভাব-বিস্তারকারী। যেমন তিনি জাফর ইবনু আবি তালিব এবং মুআয ইবনু জাবাল রা. এর মাঝে, হামযা ইবনু আব্দিল মুত্তালিব এবং যায়দ বিন হারিসা রা. এর মাঝে, আবু বকর সিদ্দিক এবং খারিজা ইবনু যুহায়র রা. এর মাঝে, উমর ইবনু খাত্তাব এবং ইতবান ইবনু মালিক রা. এর মাঝে, আব্দুর রহমান ইবনু আওফ এবং সাদ ইবনু রাবি রা. প্রমুখ সাহাবিদের মাঝে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন গড়ে দিয়েছিলেন। ফলে তারা পরস্পরে পরিণত হয়েছিলেন ভাই হিসেবে, যার অধিকার, প্রভাব এবং কার্যকারিতা ছিলো ক্ষেত্রবিশেষ আপন ভাইয়ের থেকেও বেশি। {সিরাতু ইবনি হিশাম: ১/৫০৪; তাবাকাতু ইবনি সাদ: ৩/২}
এটা তো ছিলো বিশেষভাবে; এছাড়াও ব্যাপকভাবে তিনি সকল মুসলমানের মাঝে একতা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। মহান আল্লাহও নির্দেশ দিয়েছেন— তোমরা সকলে সম্মিলিতভাবে আল্লাহর রজ্জুকে আঁকড়ে ধরো এবং বিভক্ত হয়ো না। তোমাদের ওপর আল্লাহর অনুগ্রহের কথা স্মরণ করো, যখন তোমরা ছিলে পরস্পর পরস্পরের শত্রু, অনন্তর তিনি তোমাদের অন্তরসমূহের মধ্যে সম্প্রীতি সৃষ্টি করলেন, ফলে তোমরা তাঁর অনুগ্রহে ভাই-ভাই হয়ে গেলে। তোমরা ছিলে জাহান্নামের প্রান্তে। অনন্তর আল্লাহ তোমাদেরকে সেখান থেকে রক্ষা করলেন। এভাবেই আল্লাহ তোমাদের জন্য তার নিদর্শনসমূহ সুস্পষ্টরূপে বর্ণনা করেন, যাতে তোমরা হিদায়াতপ্রাপ্ত হও। {সুরা নিসা:
ঐতিহাসিক বদর যুদ্ধ পযন্ত উত্তরাধিকারপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে এ ধারা অব্যাহত ছিলো। এরপর সুরা আনফালের ৭৫ নাম্বার আয়াতের মাধ্যমে উত্তরাধিকারপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে এই বিধান রহিত হয়ে যায়, অন্যান্য ক্ষেত্রে পূর্বের মতোই বাকি থাকে। {সহিহ বুখারি: ২২৯২}
যেকোনো সামাজিক জাগরণ এবং বিল্পবের জন্য, এমনকি সুস্থ সুন্দর সমাজ বিনির্মাণের জন্যও যে বিষয়টি একান্ত অপরিহার্য, তা হলো— সামাজিক ঐক্য এবং সম্প্রীতি। এক্ষেত্রে রাসুলুল্লাহ সা. এর গৃহীত এই উদ্যোগ যে কতোটা ফলপ্রসূ— সচেতন পাঠকমাত্রই তা হৃদয়ঙ্গম করার কথা। এক্ষেত্রে যে বিষয়টি লক্ষণীয়, তা হলো— ইসলামে ঐক্যের একমাত্র ভিত্তি হলো আকিদা এবং ধর্মীয় বিশ্বাস। আল্লাহ তাআলার তাওহিদকে কেন্দ্র করে মূলত মুসলিম উম্মাহর ঐক্যের অক্ষ আবর্তিত হয়। এমনকি মহান আল্লাহ তার রাসুলকে নির্দেশ দিচ্ছেন, তিনি যেনো আহলে কিতাবকে সম্বোধন করে ঘোষণা দেন— “হে আহলে কিতাব, তোমরা এমন এক কথার দিকে এসে যাও, যা আমাদের এবং তোমাদের মধ্যে একই রকম। (আর তা এই যে,) আমরা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো ইবাদত করবো না, তাঁর সঙ্গে অন্য কিছুকে শরিক করবো না এবং আমরা একে অন্যকে প্রভু হিসেবে গ্রহণ করবো না। যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়, তাহলে বলে দাও যে— তোমরা সাক্ষী থাকো, আমরা মুসলিম।” {সুরা আলু ইমরান: ৬০}
ইসলামে ঐক্যের একমাত্র ভিত্তি হলো আকিদা এবং তাওহিদ। রাসুলুল্লাহ সা. বলেন— “পারস্পরিক সহমর্মিতা, ভালোবাসা ও সহানুভূতি প্রদর্শনের ক্ষেত্রে তুমি মুমিনদেরকে দেখবে একটি দেহের মতো। যখন দেহের কোনো অঙ্গ রোগে আক্রান্ত হয়, তখন শরীরের সকল অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিনিদ্রা এবং জ্বরে তার সাথে অংশ নেয়।” {সহিহ বুখারি: ৬০১১}
ইসলাম তার অনুসারীদেরকে জাতীয়াতাবাদ, বর্ণ, ভাষা কিংবা অন্য কোনো বিবেচনাবোধের ভিত্তিতে গঠিত ঐক্যের দিকে আহ্বান করে না। কেননা সেসব বিষয়ে মানুষের কোনো হস্তক্ষেপ নেই, বরং তা সম্পূর্ণই সৃষ্টিকর্তার ওপর নির্ভরশীল। যে বিষয়ের চাবিকাঠি ব্যক্তির হাতেই নয়, তার ভিত্তিতে কীভাবে সে কারো সাথে একতা গড়তে পারে! জাতীয়তাবাদ শেখায়— কাকতালীয়ভাবে যে ভূমিতে তোমার জন্ম, আদতে তা যাই হোক এবং যতো বড় জালিমই হোক, তোমাকে অবধারিতভাবে তারই সাফাই গাইতে হবে এবং তোমার অনুরূপ বিশ্বাসলালনকারীদের ওপরও সর্বাবস্থায় এই ভূমিকে প্রাধান্য দিতে হবে। ভূমির জন্য প্রয়োজনে তোমার ধর্মমত-লালনকারী ব্যক্তিদের রক্তেই নিজ হাতকে রঞ্জিত করতে হবে। জাতীয়তাবাদ ভৌগলিক সীমারেখার ভিত্তিতে বিভক্তি কায়েম করে। তার দৃষ্টিভঙ্গি হলো— সীমানার এপারের মাটি সর্বাবস্থায় ওপারের মাটি থেকে শ্রেষ্ঠ; কারণ আর কিছু নয়, এপারে তোমার জন্ম। গণতন্ত্র সমাজতন্ত্র ধর্মনিরপেক্ষতা থেকে শুরু করে অন্যান্য তন্ত্র-মন্ত্রের ক্ষেত্রেও একই কথা। ইসলাম এসব একতাকে আদতে বিভক্তি মনে করে। ইসলামি রাজনীতিব্যবস্থায় দলাদলি থাকে না। কেউ নিজের থেকে ক্ষমতার দাবি নিয়ে উত্থিত হয় না। নিজেই নিজের যোগ্যতা-অভিজ্ঞতা প্রমাণের ব্যর্থ চেষ্টায় রত হয় না। ফলত ইসলামে রাজনীতিকেন্দ্রিক বিভাজন-বিভক্তি হয় না। বর্তমানকালে প্রতিটি দেশে উম্মাহর বিভক্তির বড় সূত্র এই গণতান্ত্রিক দলাদলি। প্রত্যেকেই হক এবং হক্কানিয়াতের ওপর সর্বদা নিজের দলকে প্রাধান্য দেয়। বিপরীত দলের অনুসারীদেরকে নিজেদের প্রতিপক্ষ এবং ক্ষেত্রবিশেষ শত্রু মনে করে। জুলুমের ক্ষেত্রেও নিজ দলকে সমর্থন তো দেয়ই, বরং পারতপক্ষে জুলুমে অংশ নেয়। বিপরীত পক্ষের গুরুত্বপূর্ণ কেউ অত্যাচারিত হলেও তার সহায়তায় এগিয়ে আসে না। কারণ, তার অপরাধ একটাই, সে অন্য কোনো দলের সমার্থক। পৃথিবীতে ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর বর্তমান অধঃপতনের পেছনে অন্যতম কারণ হলো এসব বিভক্তি-বিচ্ছিন্নতা; যার সূত্রপাতই হয়েছিলো ইসলামের আদর্শিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে সরে গিয়ে বর্ণবাদ জাতীয়তাবাদ গণতন্ত্রের মতো বিজাতীয় জঘন্য কৃষ্টি-কালচারকে গ্রহণ করার মাধ্যমে।
ইসলাম সর্বদাই আকিদাকেন্দ্রিক ঐক্যকে প্রাধান্য দিয়েছে। ইসলাম এই ঐক্যকে স্থান, কাল বা অন্য কোনো বিশেষণের সাথে যুক্ত করে নি। এজন্যই তো উম্মাহর ফকিহগণ বলেছেন, পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তে একজন মুসলামনও যদি অত্যাচারিত অবস্থায় থাকে, তাহলে বিশ্বের সকল মুসলমানের ওপর পর্যায়ক্রমে তাকে উদ্ধার করার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা-পরিশ্রম ব্যয় করা অপরিহার্য হয়ে পড়ে। আমার রাষ্ট্রসীমানার বাইরে অবস্থান করে বলেই একজন মুসলমানের বিপদে আমি তার পাশে দাঁড়াবো না— ইসলাম এই অসার দৃষ্টিভঙ্গিকে কখনোই সমর্থন করে না। এজন্যই রাসুলুল্লাহ সা. অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে এই বিষয়টির প্রতি লক্ষ রাখতেন। ইমাম ইবনু আবদিল বার রহ. বলেন, পারস্পরিক ভ্রাতৃত্বের বন্ধন গড়ে দেয়ার বিষয়টি ঘটেছিলো দুবার— প্রথমবার ঘটেছিলো মক্কায়। তা ছিলো শুধু মুহাজির সাহাবিদের মাঝে। দ্বিতীয়বার ঘটেছিলো মদিনায়। আর তা ছিলো মুহাজির এবং আনসার সাহাবিদের মাঝে। {ফাতহুল বারি: ৭/১৯১}
সংবিধান প্রণয়ন
যেকোনো রাষ্ট্র —হোক তা দারুল ইসলাম কিংবা দারুল হারব অথবা পরবর্তীদের আবিষ্কৃত কথিত দারুল আমান— শৃঙ্খলিতভাবে পরিচালিত হওয়ার জন্য যে বিষয়টি একান্ত অপরিহার্য, তা হলো আইন এবং সংবিধান। রাসুলুল্লাহ সা. মদিনায় হিজরত করার অব্যবহিত পরে মদিনায় আনসারিদের এমন কোনো ঘর ছিলো না, যার অধিবাসীরা ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় নেয় নি। শুধু আউস গোত্রের কতক লোক এর সৌভাগ্য বরণ করা থেকে বঞ্চিত থেকেছে। তখন রাসুলুল্লাহ সা. একটি সার্বজনীন সংবিধান প্রণয়ন করলেন। মহান আল্লাহ তাআলার ঘোষণানুযায়ী প্রিয় রাসুলের জীবনীতে রয়েছে আমাদের জন্য উত্তম আদর্শ। ফলত ইসলামি সমাজব্যবস্থার জন্য রাসুলুল্লাহ সা. কর্তৃক প্রণীত এই সংবিধান এক অনন্য আদর্শের ভূমিকা রাখে। সিরাতের অসংখ্য গ্রন্থে এই সংবিধানটি হুবহু উল্লিখিত হয়েছে। পাঠকদের জ্ঞাতার্থে এখানে আমরা সেই সংবিধান —যা মদিনা সনদ নামে পরিচিত— এর অনুবাদ উল্লেখ করছি।
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম। এটি নবি মুহাম্মাদ সা. এর পক্ষ থেকে স¤পাদিত এবং মুমিনদের মাঝে লিখিত, কুরাইশ এবং ইয়াসরিবের মুমিন ও মুসলিম এবং আরো যারা তাদের অনুগামী হয়ে তাদের সাথে মিলিত হয়েছে ও একসাথে মিলে জিহাদ করেছে— তারা এক জাতি। আর অন্য সকল মানুষ তাদের থেকে আলাদা। কুরাইশের মুহাজির সাহাবিরা পূর্বের অবস্থায় থাকবে। তারা মুমিনদের মাঝে স্বীকৃত নীতি ও ইনসাফ অনুসারে নিজেদের মাঝে পূর্বের রীতিতে রক্তপণ লেনদেন করবে এবং বন্দিদের মুক্তিপণ বহন করবে। বনু আওফ তাদের পূর্বের অবস্থায় থাকবে। তারা মুমিনদের মাঝে স্বীকৃত নীতি ও ইনসাফ অনুসারে নিজেদের মাঝে পূর্বের রীতিতে রক্তপণ লেনদেন করবে এবং বন্দিদের মুক্তিপণ বহন করবে। (এভাবে একই কথা— বনু হারিস, বনু সাইদা, বনু জুশাম, বনু নাজ্জার, বনু আমর ইবনু আওফ, বনু নাবিত এবং বনু আওসের ক্ষেত্রেও লেখা হয়েছে।) রক্তপণ ও মুক্তিপণের ক্ষেত্রে মুমিনরা তাদের কোনো গোত্র ও মিত্রহীন ঋণগ্রস্তের সঙ্গত অর্থ-সহায়তা পরিত্যাগ করবে না। কোনো মুমিন অন্য মুমিনের গোলামের সাথে মনিবের অনুমতি ব্যতীত কোনোধরনের চুক্তিতে আবদ্ধ হবে না। আল্লাহভীরু মুমিনগণের শক্তি ও ক্ষমতা স্বজাতির এমন প্রতিটি ব্যক্তির বিরুদ্ধে কার্যকর থাকবে, যে জুলুম করে কিংবা জুলুম প্রতিরোধে উৎকোচ প্রার্থনা করে, অথবা মুমিনদের মাঝে গুনাহ ও জুলুমের প্রসার-বিস্তৃতি বা অনাচার-বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির সুযোগ অন্বেষণ করে। দুষ্কৃতিকারীর বিরুদ্ধে মুমিনগণের শক্তি-প্রতাপ ঐক্যবদ্ধ থাকবে। এমনকি সে যদি কারো সন্তান হয়, তবুও। কাফির হত্যার বদলে এক মুমিন অন্য মুমিনকে হত্যা করবে না এবং কোনো মুমিনের বিরুদ্ধে কোনো কাফিরকে সহায়তা দেবে না। আল্লাহপ্রদত্ত নিরাপত্তা একক ও অবিভাজ্য। সাধারণ কোনো মুমিনও সকলের পক্ষ থেকে কাউকে নিরাপত্তা দিতে পারে। আর মুমিনরা পরস্পর পরস্পরের মিত্র; অন্য সকল মানুষ তাদের মিত্র নয়। ইহুদিদের মধ্য থেকে যে আমাদের অনুগামী হবে, তার জন্যও সাহায্য ও সাম্য প্রযোজ্য হবে। তার ওপর কোনোপ্রকার জুলুম করা যাবে না, তার বিরুদ্ধে কেউ কাউকে সাহায্য করবে না। মুমিনদের সন্ধি অবিভাজ্য। আল্লাহর পথের জিহাদে কোনো মুমিন অপর মুমিনদেরকে রেখে (বিচ্ছিন্নভাবে) ও নিজেদের মাঝে ন্যায় ও সাম্য ছাড়া কোনোপ্রকার সন্ধিতে আবদ্ধ হবে না। আমাদের সাথে জিহাদের উদ্দেশ্যে যাত্রাকারী মুজাহিদদলে একে অন্যের স্থলবর্তী হবে (অর্থাৎ পালাক্রমে সকলেই অংশগ্রহণ করবে।) আল্লাহর পথে প্রবাহিত রক্তের প্রতিশোধ গ্রহণে মুমিনরা একে অন্যের সহযোগী হবে। তাকওয়ার অধিকারী মুমিনরা যথার্থ ও সুন্দর আচরণের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকবে। যার ব্যাপারে নিরপরাধ কোনো মুমিনকে জেনেবুঝে হত্যা করার অভিযোগ প্রমাণিত হয়, তাকেও হত্যা করা হবে, যদি না নিহত ব্যক্তির স্বজনরা রক্তপণ গ্রহণ করতে কিবা ক্ষমা করতে রাজি হয়। আর সকল মুমিন হত্যাকারীর বিরুদ্ধে অবস্থান নেবে; এর অন্যথা বৈধ নয়। মদিনার কোনো মুশরিক কোনো কুরাইশের সম্পদ কিংবা প্রাণের নিরাপত্তা দেবে না, তথাপি এক্ষেত্রে কোনো মুমিনের জন্যও প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়াবে না। কোনো মুমিন —যে এই সংবিধানের ধারাগুলো স্বীকার করে নিয়েছে এবং আল্লাহ ও শেষ দিবসের ওপর ইমান এনেছে— তার জন্য কোনো দুষ্কৃতিকারীকে সাহায্য করা বা আশ্রয় দেয়া বৈধ নয়। যে তাকে সাহায্য করবে বা আশ্রয় দেবে, তার ওপর কিয়ামত দিবসে আল্লাহর গযব ও লানত পতিত হবে। তার কোনো ফরজ বা নফল আমল গৃহীত হবে না। যে বিষয়ে তোমাদের মাঝে মতভেদ হবে, তা আল্লাহ এবং তাঁর রাসুলের সমীপে উপস্থাপিত হবে। মুমিনগণ যাবত্ জিহাদে থাকবে, ইহুদিরা তাদের সাথে খরচ বহন করবে। বনু আওফের ইহুদিরা মুমিনদের সাথে এক দলভুক্ত —ইহুদিদের জন্য ইহুদিদের ধর্ম এবং মুসলমানদের জন্য মুসলমানদের ধর্ম— তারা ও তাদের মিত্ররা অভিন্ন। তবে যে জুলুম করে ও পাপাচারে লিপ্ত হয়, সে তো নিজেকে এবং নিজ পরিবারকে ধ্বংসের মুখে ফেলে। (এরপর ইহুদিদের অন্যান্য মূল ও শাখা গোত্রের নাম উল্লেখ করে উপরিউক্ত অধিকারসমূহের কথা তাদের ক্ষেত্রেও ঘোষণা করা হয়।) ইহুদিদের কেউ রাসুলের অনুমতি ছাড়া যুদ্ধে বের হবে না। এই সংবিধান কোনো আঘাতের বদলার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধক হবে না। আর যে রক্তপাত করে, এর দায় তাকে ও তার পরিবারকে বহন করতে হবে। তবে যে জুলুমের শিকার হয়েছে, তার বিষয়টি ভিন্ন। ইহুদিরা নিজেদের ব্যয়ভার বহন করবে এবং মুসলমানরা নিজেদের ব্যয়ভার বহন করবে। তবে কেউ এই সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত কারো বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ণ হলে ইহুদি এবং মুসলমান পরস্পর পরস্পরকে সাহায্য করবে এবং একে অপরের কল্যাণকামী হবে। আর সকলে বিশ্বস্ততা রক্ষা করবে, কেউ বিশ্বাসসভঙ্গ করবে না। কেউ তার মিত্রের কারণে দায়ি হবে না। নিপীড়িত ব্যক্তিই হবে সাহায্যের হকদার। ইহুদিরা মুমিনদের সাথে যুদ্ধের ব্যয়ভার বহন করবে, যাবত্ তারা যুদ্ধে থাকবে। এই সংবিধানের অন্তর্ভুক্তদের জন্য মদিনার অভ্যন্তর হারাম তথা সম্মানিত পবিত্র ও নিরাপদ স্থল হিসেবে গণ্য হবে। যাকে নিরাপত্তাসাপেক্ষে প্রবেশ ও অবস্থানের অনুমতি দেয়া হবে, সেও সংবিধানের অন্তর্ভুক্তদের অনুরূপ অধিকার ও নিরাপত্তা পাবে, যতোক্ষণ না সে ক্ষতি সাধনকারী ও অপরাধী সাব্যস্ত হয়। কোনো নিরাপত্তাপ্রাপ্ত এলাকায় সেখানকার অধিবাসীদের অনুমতি ছাড়া নতুন কাউকে নিরাপত্তা দিবে না। এই সংবিধানের অন্তর্ভুক্তদের পক্ষসমূহের মাঝে যদি কোনো সমস্যা বা বিবাদ সৃষ্টি হয়, যা থেকে হানাহানি বেঁধে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়, তাহলে বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের সমীপে উত্থাপন করতে হবে। এই চুক্তিনামায় যা রয়েছে, এর প্রতি সর্বাধিক নিষ্ঠা ও বিশ্বস্ততা পোষণকারীর সাথে আল্লাহ রয়েছেন। নিরাপত্তা দেয়া যাবে না কুরাইশকে এবং কুরাইশের সাহায্যে রয়েছে এমন যে-কাউকে। চুক্তির সকল পক্ষ মদিনায় অতর্কিত আক্রমণকারীর বিরুদ্ধে পরস্পর পরস্পরের সাহায্যকারী হবে। এই চুক্তির অন্তর্ভুক্তদের যে-কাউকে যখন কোনো সন্ধির জন্য আহ্বান করা হবে —যে চুক্তি মুসলমানরা করেছে এবং যার মধ্যে তারা শামিল হয়েছে— তখন তারাও সেই সন্ধিচুক্তিতে আবদ্ধ হবে এবং তাতে শামিল হবে। তেমনি তারাও যখন মুসলমানদেরকে আহ্বান করবে, তখন তারাও মুসলমানদের নিকট এই অধিকারপ্রাপ্ত হবে। তবে যারা দ্বীনের বিষয়ে যুদ্ধরত (অর্থাৎ কুরাইশ), তাদের বিষয়টি ভিন্ন। প্রত্যেক পক্ষকে নিজ নিজ এলাকার রক্ষার দায়িত্ব নিতে হবে। (এরপর আওস গোত্রের ব্যাপারেও একই কথা উল্লেখ করা হয়।) এই সংবিধান কোনো অত্যাচারী বা অপরাধীর পক্ষে সহায়ক হবে না। যে জিহাদে বের হবে এবং যে মদিনায় থাকবে— উভয়ই নিরাপত্তার অধিকারী থাকবে; তবে জালিম এবং অপরাধীর ব্যাপারটি ব্যতিক্রম। আল্লাহ ওই ব্যক্তির সাহায্যকারী, যে নিষ্ঠার সাথে চুক্তি পালন করে এবং আল্লাহকে ভয় করে, এবং আল্লাহর রাসুলও তার সাহায্যকারী।
যেকোনো ইসলামি সমাজ এবং রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা এবং বিনির্মাণের ক্ষেত্রে উপরিউক্ত ধারাসমূহের মাঝে রয়েছে উত্তম আদর্শ। রাষ্ট্রপরিচালনার ক্ষেত্রে ইসলামের মৌলিক দৃষ্টিভঙ্গি এতে ফুটে উঠেছে পূর্ণরূপে। মুসলমানদের পারস্পরিক আচার-আচরণ, অমুসলিমদের ক্ষেত্রে তাদের গৃহীত নীতি ইত্যাদি বিষয়ে মদিনা সনদ পর্যাপ্ত রাহনুমায়ি করে। ইসলামের আদর্শ, ন্যায়পরায়ণতার চিত্র এর প্রতিটি ছত্রে ভেসে ওঠে। আদর্শ এবং বিশ্বাসে বিরোধ থাকা সত্ত্বেও কীভাবে ভিন্ন ভিন্ন জাতিকে একতার নিবিড় বন্ধনে গাঁথা হবেÑ তার শিক্ষা পাওয়া যায় এই সংবিধানে। এক্ষেত্রে সবিশেষ লক্ষ্যণীয়, ইসলাম সর্বদা বিজিত থাকে। ইসলাম কখনো কোনো কিছুর সামনে নতি স্বীকার করে না। ইসলাম কখনো তার মৌলিক আদর্শকে যেকোনো স্বার্থে জলাঞ্জলি দেয়ার অনুমতি দেয় না। দুনিয়াবি বিষয়ে ভিন্ন ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদেরকে পারস্পরিক সহযোগিতার চুক্তিতে আবদ্ধ করা হলেও রাষ্ট্রপরিচালনা এবং বিচারব্যবস্থার ক্ষেত্রে কিন্তু শতভাগ ইসলামের বিধান, তথা আল্লাহ তাআলার নাযিলকৃত বিধানকেই একমাত্র মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে বিভিন্ন ধর্ম ও মতাদর্শের মিশেল ঘটানো হয় নি। ইসলাম কোনো অবস্থায় এর অনুমতিও দেয় নি। আল্লাহ বলেন— তবে কি তারা জাহিলিয়াতের বিচারব্যবস্থা কামনা করে? খাঁটি বিশ্বাসী সম্প্রদায়ের জন্য বিধান প্রণয়নে আল্লাহ অপেক্ষা কে অধিক উত্তম? {সুরা আলমায়িদা: ৫০}
আরো একটি বিষয় লক্ষ্যণীয়, যারা ইসলামের সাথে বৈরিতা এবং শত্রুতা পোষণ করে, নিজেদের দুর্গন্ধময় মুখের ফুৎকারে ইসলামের দীপ্ত মশালকে নিভিয়ে দেয়ার স্বপ্ন দেখে, মুসলমানদের বুকের তপ্ত খুনে নিজেদের লাল সাম্রাজ্য বিস্তৃতির ছক আঁকে, ইসলাম কোনো অবস্থায়ই তাদের ক্ষেত্রে নমনীয়তা প্রদর্শন করে নি। এমনকি তাদের বিরুদ্ধে নিজেদের প্রতিরোধকে শক্তশালী করার জন্য অন্যান্য ধর্ম-মতাদর্শাবলম্বীদের সহযোগিতা নেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রেও আবার সহযোগীদের ওপর অবধারিত করে দেয়া হয়েছে যে, তারা যেনো শত্রু সম্প্রদায়ের কাউকে নিরাপত্তা না দেয়।
এর থেকে বোঝা গেলো, ইসলাম সকল অমুসলিমকে একনজরে দেখে না। বরং তাদেরকে প্রথমত দুভাগে বিভক্ত করে— যারা ইসলামের সামনে নতি স্বীকার করে, রাষ্ট্র-পরিচালনা ও বিচারব্যবস্থার ক্ষেত্রে ইসলামের ফায়সালাকে সন্তুষ্টচিত্তে মেনে নেয় এবং মুসলমানদের সাথে কোনো ধরনের চুক্তিতে আবদ্ধ হয় আর যারা কুফর অবলম্বনের মাধ্যমে মহান স্রষ্টার বিপক্ষে বিদ্রোহ ঘোষণার পাশাপাশি ইসলামের কর্তৃত্বকে মেনে নেয় না, বরং ইসলামকে পৃথিবী থেকে মেটাতে যারপরনাই চেষ্টা-পরিশ্রম ব্যয় করে। প্রথম প্রকারের কাফিরদেরকে শরিয়াহর পরিভাষায় মুআহিদ এবং মুস্তামিন বলা হয় আর দ্বিতীয় প্রকারের কাফিরদেরকে হারবি বলা হয়।
ইসলামে প্রথম প্রকারের কাফিরদের পূর্ণ নিরাপত্তা রয়েছে। তারা মুসলমানদের মতোই নিরাপত্তা এবং অধিকার লাভ করে। হাঁ, মর্যাদাগত বিচারে স্রষ্টার সামনে আত্মসমর্পণকারী এবং স্রষ্টার প্রতি অস্বীকৃতি জ্ঞাপনকারী যে সমস্তরের হবে না— এ ব্যাপারে তো কারো সংশয় থাকার কথা নয়। তবে রাষ্ট্রীয় অধিকার এবং নিরাপত্তার ক্ষেত্রে তাদের মাঝে আর মুসলিমদের মাঝে কোনো পার্থক্য নেই।
আর দ্বিতীয় প্রকারের কাফিরদেরকে ইসলাম শত্রু মনে করে। শত্ররুকে তো আর কেউই বন্ধু মনে করে না। তাই তাদের ক্ষেত্রে রয়েছে ইসলামের আলাদা নীতি। এক্ষেত্রেও ইসলামের আদর্শ এবং নীতি অতুলনীয়। পৃথিবী অতীত কিংবা বর্তমান থেকে তার কোনো দৃষ্টান্তই দেখাতে পারবে না। এটা ইসলামের স্বকীয় বৈশিষ্ট্য। এই সংক্ষিপ্ত পরিসরে এ স¤পর্কে সবিস্তারে আলোচনা করা সম্ভবপর নয়।
পুনশ্চ:
যারা ইসলামি সমাজ ও রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখে, তাদের জন্য প্রিয়নবির জীবনীতে রয়েছে উত্তম আদর্শ। হক প্রতিষ্ঠিত হয় হক তরিকায়— এটাই স্বতঃসিদ্ধ কথা। ইসলাম প্রতিষ্ঠার নামে ইসলামের মৌলিক আদর্শ-দৃষ্টিভঙ্গি বিকিয়ে, কুফর এবং শিরকের গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসিয়ে কখনো ইসলাম প্রতিষ্ঠা করা যায় না। এখন তো প্রয়োজনে ইসলামকে কাটছাট করা হয়। অথচ ইসলাম কোনো কাটছাটকে গ্রহণ করে না। ইসলামের জন্য অন্য সকল পন্থা-পদ্ধতিকে অনুকূল না করে উল্টো বরং ইসলামকে সেগুলোর অনুকূল করে পরিবেশন করা হয়। এতে পরিবেশিত বস্তু আর প্রকৃত ইসলাম থাকে না, মহান আল্লাহ প্রণীত এবং রাসুলুল্লাহ সা. কর্তৃক আনীত ইসলাম না থেকে তা হয়ে যায় পাশ্চাত্যের ইসলাম— মডারেট মুসলিমের পরিমার্জিত ইসলাম। যুগে যুগে এভাবেই ইসলামের বিকৃতি সাধন করা হয়েছে, শরিয়াহর মাঝে বৈগুণ্য এবং বৈকল্যের অনুপ্রবেশ ঘটানো হয়েছে। কেউ তো এগুলো করে নীল নকশা বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে এবং দুরভিসন্ধি চরিতার্থ করার মানসে। আর কতক না বুঝে কিংবা দূরদর্শিতার অভাবে গা ভাসায় স্রোতে এবং গড্ডালিকা প্রবাহে। কুরআন কারিম এবং সিরাতেই রয়েছে যথার্থ পথনির্দেশিকা। ইসলামের সোনালি আদর্শই পারে মুসলিম উম্মাহকে অপদস্থতা এবং লাঞ্ছনার অতল গহ্বর থেকে উদ্ধার করে আলোকিত জীবনের পথে, সৌভাগ্য এবং নেতৃত্বের মসনদে আসীন করতে।
আসসালামুয়ালাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে কিভাবে ইসলামিক আইন প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব সে বিষয়ে একটি আর্টিকেল লিখলে উপকৃত হতাম ।