আমাদের সহিহ আকিদার দাবিদার ভাইয়েরা মাঝেমধ্যে অসহিহ কাজ করেন। ‘আল-ইবানাহ’ কিতাবটিকে এখন যে রূপে আমরা দেখতে পাচ্ছি, ইমাম আবুল হাসান আশআরি রহ. কি কিতাবটিকে এভাবেই রচনা করেছিলেন, নাকি কোনো ফিরকা তাতে বিকৃতি সাধন করেছে, যেমনিভাবে ইহুদি ও খ্রিষ্টানরা তাওরাত ও ইঞ্জিলে বিকৃতি সাধন করেছে? এ লেখায় আমরা সে বিষয়টির ওপরই সংক্ষিপ্ত আলোকপাত করার চেষ্টা করব। কারণ, এই প্রমাণ দেখিয়েই নব্য সালাফিরা আশআরিদের উদ্দেশ্য করে বলতে চায়, তোমরা তো তোমাদের ইমাম আবুল হাসান আশআরির মাযহাব থেকে সরে গেছ এবং তিনি ফিরে আসার পরও তোমরা অদ্যাবধি বিদআতের (!) মধ্যেই পড়ে রয়েছ। অথচ এ বিষয়টি তো ভাবাই যায় না যে, উম্মাহ এতকাল ধরে নিজেদেরকে ইমাম আশআরির দিকে নিসবত করে আসছে, অথচ তাদের এত বিদগ্ধ যুগশ্রেষ্ঠ জ্ঞানী-গুণীদের কেউই এতকাল যাবত্‌ তার রুজু (প্রত্যাবর্তন) সম্পর্কেই জানতে পারেনি। একমাত্র নব্য সালাফিরাই বিষয়টি জানতে পেরেছে।

ইমাম ইবনু আসাকির রহ. বলেন :

بل هم ـ يعني الأشاعرة ـ يعتقدون ما فيها ـ أي الإبانة ـ أسدّ اعتقاد، ويعتمدون عليها أشدّ اعتماد، فإنهم بحمد الله ليسوا معتزلة ولا نفاة لصفات الله معطلة، لكنهم يثبتون له سبحانه ما أثبته لنفسه من الصفات، ويصفونه بما اتصف به في محكم الآيات، وبما وصفه به نبيّه صلى الله عليه وسلم في صحيح الروايات، وينزهونه عن سمات النقص والآفات

বরং তারা—অর্থাৎ আশআরিরা—তাতে—অর্থাৎ ‘আল-ইবানাহ’ কিতাবে—যা কিছু রয়েছে, তার প্রতি যথাযথ বিশ্বাস রাখে এবং তার ওপর প্রচণ্ড নির্ভরতা রাখে। কারণ, আল্লাহর প্রশংসা, আশআরিরা মুতাজিলা নয় এবং আল্লাহ তাআলার সিফাতসমূহকে নাকচকারী মুআত্তিলাও নয়। তারা আল্লাহ তাআলা—আমি তার পবিত্রতা বর্ণনা করছি—এর জন্য সে সকল সিফাতকে সাব্যস্ত করে, আল্লাহ তাআলা নিজের জন্য যা সাব্যস্ত করেছেন। তারা আল্লাহকে সেসব গুণে গুণান্বিত করে, আল্লাহ তাআলা দ্ব্যর্থহীন আয়াতসমূহে নিজেকে গুণান্বিত করেছেন এবং তাঁর নবি ﷺ সহিহ বর্ণনায় তাঁকে যেসব গুণে গুণান্বিত করেছেন। তারা আল্লাহ তাআলাকে অসম্পূর্ণতা এবং ত্রুটির সকল নিদর্শন থেকে পবিত্র ঘোষণা করে। [তাবয়িনু কাযিবিল মুফতারি : ৩৮৮]

এ থেকে স্পষ্ট প্রতিভাত হচ্ছে যে, আশআরিরা নিজেদের মাযহাবের ভিত্তি ‘আল-ইবানাহ’ কিতাবের ওপরও সুদৃঢ়ভাবে রেখে থাকে। অথচ ‘আল-ইবানাহ’ কিতাবে আজকাল যা দেখা যাচ্ছে, তা তাদের মাযহাবকে সত্যায়িত না করে নব্য সালাফিদের মাযহাবের পক্ষে প্রমাণ পেশ করে। এর কী কারণ? আজকাল আমরা ‘আল-ইবানাহ’ কিতাবে যা দেখতে পাচ্ছি, আদতে যদি ইমাম আবুল হাসান আশআরি রহ. নিজেই সেগুলো রচনা করে থাকেন আর আশআরিরাও সেগুলোর ওপর মাযহাবের দ্ব্যর্থহীন বিশ্বাস স্থাপন করে থাকে, তাহলে তো তাদের মধ্যে আর নব্য সালাফিদের মধ্যে পার্থক্য থাকার কথা ছিল না। এতদ্‌সত্ত্বেও এ দুই মাযহাবের মধ্যে পরিদৃষ্ট হয় মৌলিক অনেক পার্থক্য এবং ভিন্নতা। এমনকি ইতিহাস বলে, এ কিতাবটি যখন রচনা করা হয়, তখন অনেক সালাফি এ কিতাবটির প্রতি অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করে। [দ্রষ্টব্য : সিয়ারু আলামিন নুবালা : ১৫/৯০; তাবাকাতুল হানাবিলা : ২/১৮; আল-ওয়াফি বিল-ওয়াফায়াত : ১২/১৪৬]

যদি এ কিতাবটি সালাফিদের মাযহাবের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণই হয়ে থাকে, তাহলে তাদের অস্বীকৃতি জ্ঞাপনেরই বা কী কারণ ছিল?শাইখ জাহিদ কাউসারি রহ. ‘তাবয়িনু কাযিবিল মুফতারি’ গ্রন্থের ভূমিকায় লেখেন :

والنسخة المطبوعة في الهند من الإبانة نسخة مصحفة محرفة تلاعبت بها الأيدي الأثيمة، فيجب إعادة طبعها من أصل موثوق

হিন্দুস্তানে ‘আল-ইবানাহ’র প্রকাশিত নুসখা একটি ভুলভাবে লিখিত এবং বিকৃত নুসখা। অনেক পাপিষ্ঠ হাত তা নিয়ে প্রতারণা করেছে। সুতরাং নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে তা পুনরায় প্রকাশ করা অপরিহার্য। তিনি আরও লেখেন :

ومن العزيز جدّاً الظفر بأصلٍ صحيح من مؤلفاته على كثرتها البالغة، وطبْعُ كتاب الإبانة لم يكن من أصل وثيق، وفي المقالات المنشورة باسمه وقفة

ইমাম আশআরির কিতাবগুলোর বিশুদ্ধ সূত্র লাভ করা একটি অত্যন্ত দুরূহ বিষয়; যেহেতু তার সংখ্যা অনেক বেশি। ‘আল-ইবানাহ’ গ্রন্থটি নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে প্রকাশ করা হয়নি। তার নামে প্রকাশিত ‘আল-মাকালাহ’ গ্রন্থটি নিয়েও সংশয় রয়েছে। শাইখ জাহিদ কাউসারি রহ. একই বিষয়ে ‘আস-সাইফুস সাকিল’ গ্রন্থের টীকায়ও সুদীর্ঘ আলোচনা করেছেন। দ্রষ্টব্য : আস-সাইফুস সাকিল : ১৫৫-১৯৬।

আরও অনেক মুহাক্কিক আলিমই শাইখ জাহিদ কাউসারি রহ.-এর মতো একই মত পোষণ করেছেন। উদাহরণস্বরূপ, ড. আবদুর রহমান বাদাওয়ি লেখেন :

وقد لاحظ الشيخ الكوثري بحق أن النسخة المطبوعة في الهند.. تلاعبت بها الأيدي الأثيمة..

শাইখ কাউসারি যথাযথ পর্যবেক্ষণই করেছেন যে, হিন্দুস্তানে ‘আল-ইবানাহ’র প্রকাশিত নুসখা একটি ভুলভাবে লিখিত এবং বিকৃত নুসখা। অনেক পাপিষ্ঠ হাত তা নিয়ে প্রতারণা করেছে। সুতরাং নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে তা পুনরায় প্রকাশ করা অপরিহার্য। [মাযাহিবুল ইসলামিয়্যিন : ১/৫১৭]

স্বনামধন্য গবেষক শাইখ ওয়াহবি গাওয়িজি রহ. এ বিষয়ে একটি পুস্তিকাই রচনা করেছেন। পুস্তিকাটির নাম : نظرة علمية في نسبة كتاب الإبانة جميعه إلى الإمام أبي الحسن সেখানে তিনি অসংখ্য স্পষ্ট প্রমাণের মাধ্যমে এ বিষয়টি তুলে ধরেছেন যে, বর্তমানে ইলমি গ্রন্থাগারে সংরক্ষিত এবং ইলমচর্চাকারীদের মধ্যে প্রচলিত ‘আল-ইবানাহ’র অনেক বিষয়ই এমন, ইমাম আবুল হাসান আশআরি রহ.-এর দিকে যেগুলোকে নিসবত করা নিরেট গলদ।

শাইখ ফাওকিয়্যাহ হুসাইনের তাহকিকে ‘আল-ইবানাহ’র একটি নুসখা কিছুকাল আগে প্রকাশিত হয়েছে; যেটাকে চারটি পাণ্ডুলিপির আলোকে তুলনা করে প্রকাশ করা হয়েছে। এ নুসখাটি যদিও পূর্বের নুসখার চাইতে ভালো; কিন্তু এর মধ্যেও অনেক বিষয় এমন রয়ে গেছে, ইমাম আশআরির দিকে যেগুলোর নিসবত সহিহ নয়। যুগে যুগে জালিয়াতিকারীরা নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য এমন মন্দ পন্থারই আশ্রয় নেয়। চার-চারটি হাতে লেখা পাণ্ডুলিপিকে সামনে রেখেও যার কারণে প্রকৃত ‘আল-ইবানাহ’কে উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। উদাহরণস্বরূপ, ‘আল-ইবানাহ’র প্রচলিত নুসখায় (পৃ. ১৬) রয়েছে :

وأنكروا أن يكون له عينـان مـع قولـه تجري بأعيننا..

এখানে আল্লাহ তাআলার জন্য দুটো আইন (শাব্দিক অর্থ : চোখ) সাব্যস্ত করা হয়েছে। অথচ মূল ‘আল-ইবানাহ’ থেকে এ ইবারতটিকে ইমাম ইবনু আসাকির বহুকাল আগে উদ্ধৃত করেছিলেন (পৃ. ১৫৭) এভাবে :

وأنكروا أن يكون له عين…

যেখানে স্পষ্ট একটি ‘আইন’-এর কথা রয়েছে।

একইভাবে প্রচলিত নুসখায় (পৃ. ১৮) আরও রয়েছে :

وأن له عينين بلا كيف..

আরও (পৃ. ২২) রয়েছে :

وأن له سبحانه عينين بلا كيف

অথচ ইবনু আসাকিরে (পৃ. ১৫৮) রয়েছে এভাবে :

وأن له عيناً بلا كيف..

আপনি বলবেন, একবচন আর দ্বিবচনে কী পার্থক্য? পার্থক্য তো অনেক। একবচন ব্যবহার করলে তা কুরআন-সুন্নাহর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়। আর দ্বিবচন ব্যবহার করলে তা বিদআত হয়। কারণ, কুরআন-সুন্নাহর কোথাও তা বিবৃত হয়নি। বিদআত যে হয় এর প্রমাণ কী? এখানে তিনজন ইমামের বক্তব্য উদ্ধৃত করছি; যাদের বক্তব্যের আলোকে ইন শা আল্লাহ বিষয়টি স্পষ্ট প্রতিভাত হবে : শাইখ জাহিদ কাউসারি রহ. ইমাম বায়হাকির আল-আসমা ওয়াস-সিফাত গ্রন্থের ৩১৩ নম্বর পৃষ্ঠার টীকায় লেখেন :

(لم ترد صيغة التثنية في الكتاب ولا في السنة، وما يروى عن أبي الحسن الأشعري من ذلك فمدسوس في كتبه بالنظر إلى نقل الكافة عنه) ثم قال: (قال ابن حزم: لا يجوز لأحد أن يصف الله عز وجل بأن له عينين لأن النص لم يـأت بـذلك) اهـ.

কুরআন অথবা সুন্নাহয় দ্বিবচনের শব্দ বিবৃত হয়নি। ইমাম আবুল হাসান আশআরি রহ. থেকে দ্বিবচনের যে শব্দ বর্ণনা করা হয়েছে, তা তার কিতাবে পরবর্তীতে সংযোজন করা হয়েছে। তার থেকে এ বিষয়ক আকিদা বর্ণনাকারীদের সবার বর্ণনা সামনে রাখলে যা স্পষ্ট অনুমিত হয়। ইমাম ইবনু হাজম রহ. বলেছেন, কারও জন্য এটা বৈধ নয় যে, সে আল্লাহকে দুটো ‘আইন’ (শাব্দিক অর্থ : চোখ)-এর গুণে গুণান্বিত করবে। কারণ, কোনো নসে তা বিবৃত হয়নি।

শাইখ ইবনু আকিল রহ. ‘দাফউ শুবাহিত তাশবিহ’ গ্রন্থের টীকায় (পৃ. ২৬৩) দাজ্জালের হাদিসের ব্যাখ্যাপ্রসঙ্গে লেখেন :

يحسب بعض الجهلة أنه ـ صلى الله عليه وسلم ـ لما نفى العور عن الله عز وجل أثبت من دليل الخطاب أنه ذو عينين، وهذا بعيد من الفهم، إنما نفى العور من حيث نفي النقائص..

ইমাম ইবনুল জাওযি রহ. ‘দাফউ শুবাহিত তাশবিহ’ গ্রন্থে (পৃ. ১১৪) লেখেন :

قلت: وهذا ابتداع لا دليل لهم عليه، وإنما أثبتوا عينين من دليل الخطاب في قوله عليه الصلاة والسلام: ” وإن الله ليس بأعور ” وإنما أراد نفي النقص عنه تعالى

‘আল-ইবানাহ’র প্রচলিত নুসখা আর শাইখ ফাওকিয়্যাহ হুসাইনের তাহকিককৃত নুসখার মধ্যেও রয়েছে অনেক তফাৎ। যেমন, প্রচলিত নুসখায় রয়েছে (পৃ. ৬৯) :

إن قال قائل: ما تقولون في الاستواء؟ قيل له نقول: إن الله عز وجل مستوٍ على عرشه كما قال : ( الرحمن على العرش استوى )

তাহকিককৃত নুসখায় রয়েছে (পৃ. ১০৫) :

.. نقول إن الله عز وجل استوى على عرشه استواءً يليق به من غير حلول ولا استقرار..

প্রচলিত নুসখায় কৌশল করে শেষাংশের আন্ডারলাইন করা ইবারতটি মুছে দেওয়া হয়েছে। প্রচলিত নুসখায় রয়েছে (পৃ. ৭৩) :

فكل ذلك يدل على أنه تعالى في السماء مستوٍ على عرشـه، والسماء بإجماع الناس ليست الأرض، فدل على أن الله تعالى منفرد بوحدانيته مستوٍ على عرشه

তাহকিককৃত নুসখায় রয়েছে (পৃ. ১১৩) :

فدل على أنه تعالى منفرد بوحدانيته مستوٍ على عرشه استواءً منزهاً عن الحلول والاتحاد

এ ধরনের দৃষ্টান্ত একটা-দুটো নয়। বরং এমন দৃষ্টান্ত এতটাই বেশি যে, সবগুলো উল্লেখ করলে এবং সঙ্গে অনুবাদ ও সামান্য ব্যাখ্যা জুড়ে দিলে এ নিবন্ধটি একটি পুস্তিকার আকার ধারণ করবে। পাঠকও পড়তে পড়তে বিরক্ত হয়ে যাবে। ‘আল-ইবানাহ’ কিতাবটি উম্মাহর ইমামগণের কাছে কতটাই সমাদৃত ছিল, তা জানার জন্য নিচের ইবারতটিই আশা করি যথেষ্ট হবে। ইমাম ইবনু আসাকির রহ. লেখেন :

ولم يزل كتاب الإبانة مُستصوباً عند أهل الديانة، وسمعت الشيخ أبا بكر أحمد بن محمد بن إسماعيل بن محمد بن بشار البوشنجي المعروف بالخسروجـردي الفقيه الزاهد يحكي عن بعض شيوخه أن الإمام أبا عثمان إسماعيل بن عبد الرحمن بن أحمد الصابوني النيسابوري ما كان يخرج إلى مجلس درسه إلا وبيده كتاب الإبانة لأبي الحسن الأشعري، ويظهر الإعجاب به، ويقول: ماذا الذي يُنكر على من هذا الكتاب شرح مذهبه. فهذا قول الإمام أبي عثمان وهو من أعيان أهل الأثر بخراسان.

অথচ এ কিতাবটিতে যদি এ ধরনের বিদআতি আকিদা বা সঠিক আকিদার গলদ উপস্থাপনা থাকে, তাহলে তো কখনোই তা উম্মাহর ইমামগণের কাছে সমাদৃত হওয়ার কথা নয়। ‘আল-ইবানাহ’র বিকৃতি বোঝার জন্য খুব বেশি দূরে যেতে হবে না। ইমাম আবু হানিফা রহ.-এর নামে যেসব মিথ্যাচার তাতে করা হয়েছে, তা সামনে রাখলে দুটো বিষয় স্পষ্ট হয়ে যাবে : (ক) বিকৃতির কাজটি কারা করেছে; (খ) বিকৃতিকারীদের উদ্দেশ্য কী ছিল। প্রচলিত ‘আল-ইবানাহ’র ৫৭ নম্বর পৃষ্ঠায় দাবি করা হয়েছে যে, ইমাম আবু হানিদা রহ. কুরআনকে মাখলুক মনে করতেন এবং তিনি এই বাতিল আকিদা পোষণ করতেন।

وذكر هارون بن إسحاق الهمداني عن أبي نعيم عن سليمان بن عيسى القاري عن سفيان الثوري، قال: قال لي حماد بن أبي سليمان: بلِّغ أبا حنيفة المشرك أنِّي منه بريء. قال سليمان: ثم قال سفيان: لأنه كان يقول القرآن مخلوق.وذكر سفيان بن وكيع قال عمر بن حماد بن أبي حنيفة قال أخبرني أبي قال: الكلام الذي استتاب فيه ابن أبي ليلى أبا حنيفة هو قوله: القرآن مخلوق. قال: فتاب منه وطاف به في الخلق. قال أبي: فقلت له كيف صرت إلى هذا؟ قال: خفت أن يقوم عليّ، فأعطيته التقيّـة.وذكر هارون بن إسحاق قال سمعت إسماعيل بن أبي الحكم يذكر عن عمر بن عبيد الطنافسي أن حمّاداً ـ يعني ابن أبي سليمان ـ بعث إلى أبي حنيفة: إني بريء مما تقول، إلا أن تتوب. وكان عنده ابن أبي عقبة، قال، فقال: أخبرني جارك أن أبا حنيفة دعاه إلى ما استتيب منه بعد ما استتيب.وذكر عن أبي يوسف قال: ناظرت أبا حنيفة شهرين حتى رجع عن خلق القرآن

‘আল-ইবানাহ’র তাহকিককৃত নুসখায় (পৃ. ৯০-৯১) ইমাম সুফয়ান রহ. থেকে স্পষ্ট উল্লেখ করা হয়েছে :

وحاشى الإمام الأعظم أبو حنيفة رضي الله عنه من هذا القول بل هو زور وباطل فإن أبا حنيفة من أفضل أهل السنة

ইমাম আজম আবু হানিফা রা. এ ধরনের কথা থেকে পবিত্র। বরং তা মিথ্যা ও বাতিল। কারণ, ইমাম আবু হানিফা ছিলেন আহলুস সুন্নাহর শ্রেষ্ঠ মনীষীগণের মধ্যে অন্যতম। এর কয়েক ছত্র পর ইবনু আবি আকাবাহর বক্তব্য :

أخبرني جارك أن أبا حنيفة دعاه لما استتيب منه بعد ما استتيب.-এর পর পুনরায় তার কথা উল্লেখিত রয়েছে :

وهذا كذب محض على أبي حنيفة رضي الله عنه

এটা ইমাম আবু হানিফা রা.-এর ওপর নিরেট মিথ্যাচার। এমনকি কোনো কোনো নুসখায় তো জালিয়াতি করে হাম্মাদ রহ.-এর ভাষ্যে ইমাম আবু হানিফা রহ.-কে মুশরিক পর্যন্ত অভিহিত করা হয়েছে। শাইখ জাহিদ কাউসারি রহ. ইমাম ইবনু কুতায়বার ‘আল-ইখতিলাফ ফিল-লাফজ’ গ্রন্থের টীকায় (পৃ. ৪৯) লেখেন :

ومن غريب التحريف ما دُسَّ في بعض نسخ الإبانة للأشعري كما دُسَّ فيها أشياء أخر من أن حمّاد بن أبي سليمان قال ” بلِّغ أبا حنيفة المشرك أني بريء من دينه ” وكان يقول بخلق القرآن. فإن لفظ حمّاد ” بلّغ أبا فلان ” لا أبا حنيفة! كما في أول خلق الأفعال للبخاري، وجعل من لا يخاف الله لفظ ” أبا حنيـفة ” فـي موضـع ” أبا فلان ” والله أعلم من هو أبو فلان هذا، وما هي المسألة..

ইমাম বায়হাকি রহ. তার ‘আল-ইতিকাদ’ (পৃ. ১১২) গ্রন্থে লেখেন :

روّينا عن محمد بن سعيد بن سابق أنه قال : سألت أبا يوسف فقلت : أكان أبو حنيفة يقول القرآن مخلوق؟ فقال : معاذ الله، ولا أنا أقوله. فقلت : أكان يرى رأي جهم؟ فقال : معاذ الله، ولا أنا أقوله. رواته ثقات

মুহাম্মাদ ইবনু সাইদ রহ. বলেন, আমি আবু ইউসুফ রহ.-কে জিজ্ঞেস করলাম, ‘আবু হানিফা রহ.-কে বলতেন যে, কুরআন মাখলুক?’ তিনি বললেন, ‘আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করি। আমিও এ কথা বলি না।’ এরপর আমি তাকে বললাম, ‘তিনি কি জাহামের মত পোষণ করতেন?’ তিনি বললেন, ‘আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করি। আমিও এ কথা বলি না।’ (ইমাম বায়হাকি রহ. বলেন,) এই বর্ণনার বর্ণনাকারীগণ নির্ভরযোগ্য। এ জালিয়াতির বিষয়টিকে আরও স্পষ্টভাবে তুলে ধরেছেন শাইখ ওয়াহবি গাওয়িজি হাফি. তার نظرة علمية في نسبة كتاب الإبانة جميعه إلى الإمام أبي الحسن গ্রন্থে (পৃ. ২০) :

ولا بأس أن نقول: لو كان الإمام الأشعري رحمه الله تعالى نسب حقاً إلى الإمام ـ يعني أبا حنيفة ـ القول بخلق القرآن لما كان للإمام الأشعري تلك المكانة العالية عند الحنفية أتباع الإمام أبي حنيفة رحمه الله تعالى. فلا تلتفت أيها القارئ إلى تلك النقول المبتورة مبتدأً والباطلة سنداً، وأحسن الظن بالإمام الأشعري كما تحسن الظن بإمام الأئمة الفقهاء وسائر الأئمة رضوان الله تعالى عليهم. وتذكر أنه أُدخِل الكثيرُ من الأباطيل على حديث رسول الله صلى الله عليه وسلم، رُكّبت لها أسانيد باطلة، لكلمات باطلة. كذلك ولا تنس أنه حُشِر في كتب كثير من العلماء كلماتٌ وعبارات وحذف منها كلمـات وعبارات حتى في حيـاة أصحابها

আমরা এ কথা বলতে সমস্যা নেই যে, ইমাম আশআরি রহ. যদি প্রকৃতপক্ষে ইমাম আবু হানিফা রহ.-এর দিকে কুরআন মাখলুক হওয়ার বক্তব্য সম্পর্কিত করতেন, তাহলে ইমাম আবু হানিফার অনুসারী হানাফিদের নিকট আর ইমাম আশআরির সেই সমুন্নত অবস্থান থাকত না। সুতরাং হে পাঠক, তুমি সেসব বক্তব্যের দিকে দৃষ্টিপাত কোরো না, যেগুলো সূচনাতেই গলদ এবং সনদের বিচারেও বাতিল। তুমি ইমাম আশআরির প্রতি সুধারণা পোষণ কোরো, যেমনিভাবে তুমি ফকিহ ইমামগণ এবং অন্য সকল ইমামগণের ইমাম (আবু হানিফা রহ.)-এর প্রতি সুধারণা পোষণ করে থাকো। তুমি স্মরণ কোরো, রাসুলুল্লাহ ﷺ-এর হাদিসের ভাণ্ডারেও তো কত জাল বর্ণনা প্রবেশ করানো হয়েছে। বাতিল কথার গায়ে বাতিল সনদও চড়ানো হয়েছে। একইভাবে এ-ও বিস্মৃত হোয়ো না যে, অনেক আলিমের বইপত্রেই কিছু কথা এবং কিছু ইবারত সংযুক্ত করা হয়েছে আর কিছু কথা এবং কিছু ইবারত মুছে দেওয়া হয়েছে। এমনকি কোনো কোনোটি তো লেখকের জীবদ্দশায়ই ঘটানো হয়েছে।

(উল্লেখ্য, এ বিষয়ে এটা আমাদের একমাত্র পোস্ট নয়। বিষয়টি সম্পর্কে আরও বিস্তরভাবে ইন শা আল্লাহ আলোচনা হবে। সর্বশেষ এটাকে সুবিন্যস্তভাবে আমাদের সাইটে আপলোড করে রাখা হবে। উপরিউক্ত আলোচনার তথ্যগুলো সংগ্রহের ক্ষেত্রে ‘মারকাজু আবিল হাসান আশআরি’-এর একটি নিবন্ধের সহযোগিতা নেওয়া হয়েছে।)

‘আল-ইবানাহ’ কিতাব নিয়ে বিভ্রান্তি নিরসন (প্রথম পর্ব) : আমাদের কথা

আমরা বিগত ২৬ ডিসেম্বর ২০১৮ তারিখে ফেসবুকের ওয়ালে ‘প্রচলিত আল-ইবানাহ কিতাবটি কি ইমাম আবুল হাসান আশআরির রচনা?’ শিরোনামে একটি নোট পাবলিশ করেছিলাম। নোটটির লিংক : https://goo.gl/7ywzUz । এর দু-দিন পর জনৈক আহলে হাদিস তরুণ আলিম এর পর্যালোচনায় একটি লেখা প্রকাশ করেন। তার লেখার শিরোনাম ছিল :  ‘আল-ইবানাহ কিতাব নিয়ে বিভ্রান্তি নিরসন (১ম পর্ব)’। এতে তিনি দুটো পর্যালোচনা তুলে ধরেছেন। তার লেখার ‘১ম পর্ব’ শব্দগুচ্ছ থেকেই অনুমেয়, এ সম্পর্কে তিনি আরও লিখবেন। তবে দ্বিতীয় পর্ব লেখার পূর্বে তিনি সময় নিয়েছেন। হয়তো তার পর্যালোচনা সম্পর্কে আমাদের মূল্যায়ন জানানোর জন্য এ কাজটি তিনি করেছেন। ফেসবুকে প্রকাশিত প্রত্যেক আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের কিছু বলতে হবে—এমন কোনো নীতিতে আমরা বিশ্বাস করি না। তবে কিছু কিছু আলোচনার ব্যাপারে আমরা যৎকিঞ্চিৎ আলোচনা করাই সংগত মনে করি। সত্য সুস্পষ্ট থাক। এরপর যার ইচ্ছা তা গ্রহণ করুক। আর যার ইচ্ছা তা বর্জন করুক। এমনিও ফেসবুকে মানুষ সাধারণত গ্রহণ করতে আসে না। আসে অন্য উদ্দেশ্যে। এ সম্পর্কে আমরা কিছুটা আলোচনা করেছিলাম এ পোস্টে : https://goo.gl/kQrJDJ

যাহোক, এবার আমরা মূল কথায় ফিরে যাই। নির্বাচনের দু-দিন পূর্ব থেকে আজ দুপুর পর্যন্ত আমরা সফরে ছিলাম। মোবাইলে নেটও চলছিল না। যার কারণে বিলম্ব। অন্যথায় অনেক আগেই তার পর্যালোচনা সম্পর্কে আমাদের মূল্যায়ন জানিয়ে দিতাম। এখানে আমরা প্রথমে লেখকের পর্যালোচনা উল্লেখ করব। এরপর শেষে তার পর্যালোচনার ব্যাপারে আমাদের মন্তব্য জানাব। এমন নয় যে, আমরা সত্য গ্রহণের ব্যাপারে বক্রতা অবলম্বন করেছি। আমরা সত্য গ্রহণের জন্য সর্বদা প্রস্তুত রয়েছি। তবে কথা হলো, অসত্যকে সত্য হিসেবে চালানো হলে আমরা কখনোই তা গ্রহণ করব। কেউ যদি প্রামাণিকভাবে সত্যকে সত্য হিসেবে প্রমাণ করতে পারে, তাহলে তা আমাদের বিরুদ্ধে গেলেও আমরা নির্দ্বিধায় তা মেনে নেব। কারণ, সবকিছুর ওপর সত্য অগ্রগণ্য।

১. সেই নোটে আমাদের প্রথম প্যারাটি এরূপ ছিল :

//আমাদের সহিহ আকিদার দাবিদার ভাইয়েরা মাঝেমধ্যে অসহিহ কাজ করেন। ‘আল-ইবানাহ’ কিতাবটিকে এখন যে রূপে আমরা দেখতে পাচ্ছি, ইমাম আবুল হাসান আশআরি রহ. কি কিতাবটিকে এভাবেই রচনা করেছিলেন, নাকি কোনো ফিরকা তাতে বিকৃতি সাধন করেছে, যেমনিভাবে ইহুদি ও খ্রিষ্টানরা তাওরাত ও ইঞ্জিলে বিকৃতি সাধন করেছে? এ লেখায় আমরা সে বিষয়টির ওপরই সংক্ষিপ্ত আলোকপাত করার চেষ্টা করব। কারণ, এই প্রমাণ দেখিয়েই নব্য সালাফিরা আশআরিদের উদ্দেশ্য করে বলতে চায়, তোমরা তো তোমাদের ইমাম আবুল হাসান আশআরির মাযহাব থেকে সরে গেছ এবং তিনি ফিরে আসার পরও তোমরা অদ্যাবধি বিদআতের (!) মধ্যেই পড়ে রয়েছ। অথচ এ বিষয়টি তো ভাবাই যায় না যে, উম্মাহ এতকাল ধরে নিজেদেরকে ইমাম আশআরির দিকে নিসবত করে আসছে, অথচ তাদের এত বিদগ্ধ যুগশ্রেষ্ঠ জ্ঞানী-গুণীদের কেউই এতকাল যাবত্‌ তার রুজু (প্রত্যাবর্তন) সম্পর্কেই জানতে পারেনি। একমাত্র নব্য সালাফিরাই বিষয়টি জানতে পেরেছে।//

এই প্যারার ওপর তিনি পর্যালোচনা করেছেন এভাবে :

//তিনি এখানে দাবি করলেন, এ যাবত কেউ ইমাম আবুল হাসান আশ’আরির রুজু (প্রত্যাবর্তন) সম্পর্কে জানতে পারেনি। এখানে কয়েকজন ইমামের নাম উল্লেখ করা হল, যারা রুজু (প্রত্যাবর্তন) এর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

ক. শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়াহ রাহি. ( মাজমুউল ফাতাওয়া, ৩/২২৮, ১৬/৪৭১; দারউ তা’আরুজিল আকল ওয়ান নাকল, ২/১২; মিনহাজুস সুন্নাহ, ১/৪৮৬-৪৮৭)

খ. ইমাম যাহাবি। (কিতাবুল আরশ, ২/২০২-২০৩; কিতাবুল উলু, ২/১৫৪-১৫৫)

গ. ইমাম ইবনুল কাইয়িম। (ইজতিমাউল জুয়ুশিল ইসলামিয়াহ, ১৬৭)

ঘ. ইমাম ইবনু কাসির। (তবাকাতুল ফুকাহা আশ-শাফেয়িন, ১/১৯৯)//

মন্তব্য :

সম্মানিত পর্যালোচনাকারী ভাই বোধ হয় লেখাটি লেখার সময় খুব তাড়াহুড়ো করেছেন। অন্যথায় এমন বিচ্যুতির আমরা কোনো কারণ দেখি না। আমরা আমাদের নোটে লিখেছিলাম : //অথচ এ বিষয়টি তো ভাবাই যায় না যে, উম্মাহ এতকাল ধরে নিজেদেরকে ইমাম আশআরির দিকে নিসবত করে আসছে, অথচ তাদের এত বিদগ্ধ যুগশ্রেষ্ঠ জ্ঞানী-গুণীদের কেউই এতকাল যাবত্‌ তার রুজু (প্রত্যাবর্তন) সম্পর্কেই জানতে পারেনি। একমাত্র নব্য সালাফিরাই বিষয়টি জানতে পেরেছে।//

এর পর্যালোচনায় তিনি কতিপয় আশআরি ইমামের নাম উল্লেখ করতে পারতেন, যারা ইমাম আবুল হাসান আশআরি রুজু (প্রত্যাবর্তন)-কে স্বীকার করে নিয়েছেন। কারণ, আমাদের বক্তব্য এটাই ছিল যে, উম্মাহ এতকাল ধরে নিজেদেরকে ইমাম আশআরির দিকে নিসবত করে আসছে, অথচ তাদের এত বিদগ্ধ যুগশ্রেষ্ঠ জ্ঞানী-গুণীদের কেউই এতকাল যাবত্‌ তার রুজু (প্রত্যাবর্তন) সম্পর্কেই জানতে পারেনি। সুতরাং যারা নিজেদেরকে ইমাম আশআরির দিকে নিসবত করে আসছে, তাদের কারও বিপরীত বক্তব্য উল্লেখ করলে তবেই তার পর্যালোচনা সার্থক হতো। কিন্তু তিনি তা না করে এমন কতিপয় ইমামের নাম উল্লেখ করেছেন, যারা কখনোই আশআরি মাযহাবের অনুসারী ছিলেন না। বরং তারা ছিলেন সালাফি আকিদার অনুসারী। তো আমাদের কথা এবং তার পর্যালোচনার মধ্যে সামঞ্জস্য কোথায়? যদিও মন্তব্যকারীরা এসব না দেখেই বাহবাধ্বনি বইয়ে দিতে মোটেও ত্রুটি করে না। কোনো একভাবে পর্যালোচনা তুলে দিলেই ‘নারায়ে তাকবির’ শুরু হয়ে যায়; যদিও সেই পর্যালোচনা মোটেও বাস্তবধর্মী না হয়।

২.

সেই নোটে আমাদের আরেকটি প্যারা এরূপ ছিল :

//ইমাম ইবনু আসাকির রহ. বলেন :

بل هم ـ يعني الأشاعرة ـ يعتقدون ما فيها ـ أي الإبانة ـ أسدّ اعتقاد، ويعتمدون عليها أشدّ اعتماد، فإنهم بحمد الله ليسوا معتزلة ولا نفاة لصفات الله معطلة، لكنهم يثبتون له سبحانه ما أثبته لنفسه من الصفات، ويصفونه بما اتصف به في محكم الآيات، وبما وصفه به نبيّه صلى الله عليه وسلم في صحيح الروايات، وينزهونه عن سمات النقص والآفات

বরং তারা—অর্থাৎ আশআরিরা—তাতে—অর্থাৎ ‘আল-ইবানাহ’ কিতাবে—যা কিছু রয়েছে, তার প্রতি যথাযথ বিশ্বাস রাখে এবং তার ওপর প্রচণ্ড নির্ভরতা রাখে। কারণ, আল্লাহর প্রশংসা, আশআরিরা মুতাজিলা নয় এবং আল্লাহ তাআলার সিফাতসমূহকে নাকচকারী মুআত্তিলাও নয়। তারা আল্লাহ তাআলা—আমি তার পবিত্রতা বর্ণনা করছি—এর জন্য সে সকল সিফাতকে সাব্যস্ত করে, আল্লাহ তাআলা নিজের জন্য যা সাব্যস্ত করেছেন। তারা আল্লাহকে সেসব গুণে গুণান্বিত করে, আল্লাহ তাআলা দ্ব্যর্থহীন আয়াতসমূহে নিজেকে গুণান্বিত করেছেন এবং তাঁর নবি ﷺ সহিহ বর্ণনায় তাঁকে যেসব গুণে গুণান্বিত করেছেন। তারা আল্লাহ তাআলাকে অসম্পূর্ণতা এবং ত্রুটির সকল নিদর্শন থেকে পবিত্র ঘোষণা করে। [তাবয়িনু কাযিবিল মুফতারি :  ৩৮৮]

এ থেকে স্পষ্ট প্রতিভাত হচ্ছে যে, আশআরিরা নিজেদের মাযহাবের ভিত্তি ‘আল-ইবানাহ’ কিতাবের ওপরও সুদৃঢ়ভাবে রেখে থাকে। অথচ ‘আল-ইবানাহ’ কিতাবে আজকাল যা দেখা যাচ্ছে, তা তাদের মাযহাবকে সত্যায়িত না করে নব্য সালাফিদের মাযহাবের পক্ষে প্রমাণ পেশ করে। এর কী কারণ? আজকাল আমরা ‘আল-ইবানাহ’ কিতাবে যা দেখতে পাচ্ছি, আদতে যদি ইমাম আবুল হাসান আশআরি রহ. নিজেই সেগুলো রচনা করে থাকেন আর আশআরিরাও সেগুলোর ওপর মাযহাবের দ্ব্যর্থহীন বিশ্বাস স্থাপন করে থাকে, তাহলে তো তাদের মধ্যে আর নব্য সালাফিদের মধ্যে পার্থক্য থাকার কথা ছিল না। এতদ্‌সত্ত্বেও এ দুই মাযহাবের মধ্যে পরিদৃষ্ট হয় মৌলিক অনেক পার্থক্য এবং ভিন্নতা। এমনকি ইতিহাস বলে, এ কিতাবটি যখন রচনা করা হয়, তখন অনেক সালাফি এ কিতাবটির প্রতি অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করে। [দ্রষ্টব্য : সিয়ারু আলামিন নুবালা : ১৫/৯০; তাবাকাতুল হানাবিলা : ২/১৮; আল-ওয়াফি বিল-ওয়াফায়াত : ১২/১৪৬] যদি এ কিতাবটি সালাফিদের মাযহাবের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণই হয়ে থাকে, তাহলে তাদের অস্বীকৃতি জ্ঞাপনেরই বা কী কারণ ছিল?//

এই প্যারার ওপর তিনি পর্যালোচনা করেছেন এভাবে :

//লেখকের দাবী যেহেতু ‘আল-ইবানাহ’ গ্রন্থ বিকৃত হয়ে গেছে, তাই ‘ইবানাহ’ থেকে উদ্ধৃতি না-দিয়ে স্বয়ং ‘তাবয়িনু কাযিবিল মুফতারি’ গ্রন্থ থেকেই ইমাম ইবনু আসাকিরের উদ্ধৃতিতে ইমাম আশ’আরির আকিদাহ উল্লেখ করা হল। আছে কি কোন আশ’আরি-মাতুরিদি সে-আকিদাহ গ্রহণ করবে?

ভ্রান্ত ফিরকাদের নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে ইমাম আবুল হাসান আশ’আরি বলেন,

ودفعوا أَن يكون لِلَّه وَجه مَعَ قَوْله {وَيَبْقَى وَجْهُ رَبِّكَ ذُو الْجلَال وَالْإِكْرَام} وأنكروا أَن يكون لِلَّه يدان مَعَ قَوْله {لِمَا خَلَقْتُ بِيَدَيَّ} وأنكروا أَن يكون لَهُ عين مَعَ قَوْله {تجْرِي بأعيننا} وَلقَوْله {ولتصنع على عَيْني} وَنَفَوْا مَا رُوِيَ عَن رَسُول اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ من قَوْله إِنَّ اللَّهَ يَنْزِلُ إِلَى سَمَاء الدني

তারা প্রতিহত (অস্বীকার) করেছে যে, আল্লাহর চেহারা আছে। অথচ আল্লাহ বলেছেন, ‘আর অবিনশ্বর শুধু আপনার রবের চেহারা, যিনি মহিমাময়, মহানুভব।’ তারা আল্লাহর দু’হাত অস্বীকার করেছে। অথচ আল্লাহ বলেন, ‘যা আমি আমার দু’হাতে সৃষ্টি করেছি।’ তারা আল্লাহর চোখ অস্বীকার করেছে। অথচ আল্লাহ বলেন,’আমাদের চোখসমূহের সামনে চলতে লাগল।’ আরও বলেন, ‘যাতে তুমি আমার চোখের সামনে বানাও।’ তারা রাসূল স. থেকে বর্ণিত “দুনিয়ার আসমানে আল্লাহর অবতরণ করেন”কেও অস্বীকার করেছে।

আবুল হাসান আশ’আরি নিজের আকিদাহ ও নীতি এভাবে বর্ণনা করেন :

قولنَا الَّذِي بِهِ تَقول وديانتنَا الَّتِي ندين بهَا التَّمَسُّك بِكِتَاب اللَّه وَسنة نبيه صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَمَا رُوِيَ عَن الصَّحَابَة وَالتَّابِعِينَ وأئمة الحَدِيث وَنحن بذلك معتصمون وَبِمَا كَانَ عَلَيْهِ أَحْمد بن حَنْبَل نضّر اللَّه وَجهه وَرفع دَرَجَته وأجزل مثوبته قَائِلُونَ وَلمن خَالف قَوْله قَوْله مجانبون لِأَنَّهُ الإِمَام الْفَاضِل والرئيس الْكَامِل الَّذِي أبان اللَّه بِهِ الْحق عِنْد ظُهُور الضلال وأوضح بِهِ الْمِنْهَاج وقمع بِهِ بدع المبتدعين وزيغ الزائغين وَشك الشاكين.

আমাদের মত ও দীন হচ্ছে, আল্লাহর কিতাব ও তাঁর নবির সুন্নাত এবং সাহাবি, তাবিয়ি ও মুহাদ্দিসদের থেকে যা বর্ণিত হয়েছে, তা আঁকড়ে ধরা৷ আমরা এসবকে শক্তভাবে ধরে থাকি। আহমাদ বিন হাম্বাল, তার চেহারাকে আল্লাহ সতেজ করুন, তিনি যার উপর ছিলেন আমরা তার প্রবক্তা। যে তার বিপরীতে মত প্রদান করে, তার মতকে পরিহার করি। কেননা তিনি সম্মানিত ইমাম ও পূর্ণাঙ্গ নেতা। ভ্রষ্টতা ছড়িয়ে পড়ার সময় আল্লাহ তার মাধ্যমে হককে প্রকাশ করেছেন, সঠিক পথকে স্পষ্ট করেছেন, বিদ’আতিদের উৎখাত করেছেন, বিপথগামীদের বিপথগামী ও সংশয়বাদীদের সংশয়বাদী করেছেন।

وَأَن اللَّه اسْتَوَى على عَرْشه كَمَا قَالَ {الرَّحْمَنُ عَلَى الْعَرْشِ اسْتَوَى} وَأَن لَهُ وَجها كَمَا قَالَ {وَيَبْقَى وَجْهُ رَبِّكَ ذُو الْجَلالِ وَالْإِكْرَام} وَأَن لَهُ يدا كَمَا قَالَ {بل يَدَاهُ مبسوطتان} وَقَالَ {لما خلقت بيَدي} وَأَن لَهُ عينَا بِلَا كَيفَ كَمَا قَالَ {تجْرِي بأعيننا} وَأَن من زعم أَن اسْم اللَّه غَيره كَانَ ضَالًّا وَأَن للَّه علما كَمَا قَالَ {أَنْزَلَهُ بِعِلْمِهِ}

নিশ্চয় আল্লাহ তা’আলা তাঁর আরশের উপর সমুন্নত হয়েছেন, যেমন- আল্লাহ বলেছেন, ‘পরম করুণাময় আরশের উপর সমুন্নত হয়েছেন।’ তাঁর চেহারা আছে, যেমন-আল্লাহ বলেছেন, ‘আর অবিনশ্বর শুধু আপনার রবের চেহারা, যিনি মহিমাময়, মহানুভব।’ নিশ্চয় তাঁর হাত রয়েছে। আল্লাহ বলেন, ‘বরং তাঁর দু’হাত প্রসারিত।’ আরও বলেন, ‘যা আমি আমার দু’হাতে সৃষ্টি করেছি।’ নিশ্চয় তাঁর দু’চোখ রয়েছে; কিন্তু ধরন অজানা, যেমন- আল্লাহ বলেন,’আমাদের চোখসমূহের সামনে চলতে লাগল।’ আর যে মনে করে, আল্লাহর নামসমূহ গাইরুল্লাহ, সে পথভ্রষ্ট। নিশ্চয় আল্লাহর ইলম রয়েছে, যেমন- আল্লাহ বলেন, ‘তিনি তা নাযিল করেছেন তাঁর ইলমের মাধ্যমে।’

وندين بِأَنَّهُ يقلب الْقُلُوب وَأَن الْقُلُوب بَين أصبعين من أَصَابِعه

আমরা দীন হিসেবে মনে করে, আল্লাহ অন্তরসমূহকে পরিবর্তন করেন। অন্তরসমূহ তাঁর আঙুলসমূহের দুই আঙুলের মাঝে।

وَأَن الْإِيمَان قَول وَعمل يزِيد وَينْقص

ঈমান হচ্ছে, স্বীকৃতি ও আমল, তা কম-বেশি হয়।

ونصدق بِجَمِيعِ الرِّوَايَات الَّتِي ثبتها أهل النَّقْل من النُّزُول إِلَى السَّمَاء الدُّنْيَا وَأَن الرب يَقُول هَل من سَائِر هَل من مُسْتَغْفِر وَسَائِر مَا نقلوه وأثبتوه

আমরা বর্ণনাকারীদের মাধ্যমে প্রমাণিত সকল হাদীস সত্য বলে বিশ্বাস করি, যেমন- দুনিয়ার আসমানে আল্লাহর অবতরণ করা এবং রবের বলতে থাকা যে, কোন প্রার্থনাকারী আছে? কোন ইস্তিগফারকারী আছে?

ونقول إِن اللَّه تَعَالَى يَجِيء يَوْم الْقِيَامَة كَمَا قَالَ {وَجَاءَ رَبُّكَ وَالْملك صفا صفا} وَأَن اللَّه تَعَالَى يقرب من عباده كَيفَ يَشَاء كَمَا قَالَ {وَنَحْنُ أَقْرَبُ إِلَيْهِ من حَبل الوريد} وكما قَالَ {ثُمَّ دَنَا فَتَدَلَّى فَكَانَ قَابَ قَوْسَيْنِ أَوْ أَدْنَى}

আমরা বলি, নিশ্চয় আল্লাহ কিয়ামতের দিন আসবেন, যেমন- আল্লাহ্‌ বলেন, ‘আর তোমার রব ও ফেরেশতাগণ উপস্থিত হবেন সারিবদ্ধভাবে।’ তিনি তাঁর বান্দার নিকটবর্তী হন, তিনি যেভাবে ইচ্ছা করেন। যেমন- আল্লাহ্‌ বলেন, আর আমি তার গলার ধমনী হতেও অধিক কাছে। আরও বলেন, ‘তারপর সে নিকটবর্তী হল অতঃপর আরও কাছে এল। তখন সে নৈকট্য ছিল দু’ধনুকের পরিমাণ অথবা তারও কম। (তাবয়িনু কাযিবিল মুফতারি, ১৫২-১৬২)

আছে কোন আশ’আরি-মাতুরিদি, যে আল্লাহর হাত, চোখ, চেহারা, আরশে সমুন্নত হওয়া, আসা, অবতরণ করা, আঙুল’সহ যাবতীয় সিফাতকে তা’বিল ছাড়াই মেনে নিবে? ইমাম আহমাদ বিন হাম্বালকে আকিদাহর ইমাম হিসেবে গ্রহণ করবে? আছে কোন বাঙালি আশ’আরি-মাতুরিদি, যে মেনে নিবে, ঈমান স্বীকৃতি ও আমলের নাম এবং তা কম-বেশি হয়?//

মন্তব্য :

এই দ্বিতীয় পর্যালোচনা করার ক্ষেত্রেও তিনি ভালো করে তার মাথা খাটাননি, বরং এখানেও একপ্রকার তাড়াহুড়ো করেছেন—বাহ্যত এমনটাই মনে হচ্ছে। কারণ, তিনি প্রথমে ধরে নিয়েছেন, আশআরিরা আল্লাহ তাআলার সকল সিফাতে তাবিল করে। এরপর তিনি ইমাম আবুল হাসান আশআরির গ্রন্থ থেকে কিছু আকিদা উল্লেখ করে দেখালেন যে, এই তো তোমাদের ইমাম তাবিল করে না। তোমরা কেন তার মাযহাব গ্রহণ করছ না? তিনি এখানে এসে অনেকটা আবেগপ্রবণও হয়ে গেছেন। অন্তত তার তর্জন-গর্জনগুলো থেকে এমনটাই মনে হচ্ছে।

তিনি এখানে যে সকল সিফাতের বিবরণ উল্লেখ করেছেন, নিঃসন্দেহে আশআরিরা এ সকল সিফাতকে আল্লাহর জন্য সাব্যস্ত করে। হয়তো পর্যালোচনাকারী ভাই বিষয়টি জানেন না। ইমাম আবুল হাসান আশআরির ইবারতের সঙ্গে আমাদের কোনো দ্বিমত নেই। দ্বিমত থাকার সুযোগও নেই। আমাদের দ্বিমত পর্যালোচনাকারী ভাইয়ের অনুবাদের সঙ্গে। আমরা ইমাম আবুল হাসান আশআরির আকিদার অনুরূপ আকিদা রাখি। তবে আমরা পর্যালোচনাকারী ভাইয়ের পক্ষপাতদুষ্ট অনুবাদকে নির্দ্বিধ প্রত্যাখ্যান করি।

আমরা বিশ্বাস করি, আল্লাহ তাআলার সিফাতসমূহের মধ্য থেকে কয়েকটি সিফাত হলো :

  1. وَجه
  2. يدان
  3. عين
  4. أَصَابِع

একইভাবে রহমান আরশে ইসতিওয়া গ্রহণ করেছেন। নিকটবর্তী আকাশে তিনি নুজুল করেন। এ-জাতীয় সিফাত সাব্যস্তকরণের ক্ষেত্রে আমাদের কোনো দ্বিমত নেই। কিন্তু আমরা এসবের কোনো অর্থ করি না। কারণ, এগুলোর প্রচলিত যেকোনো অর্থ করা হলে তা অঙ্গ হওয়ার বিভ্রম সৃষ্টি করে। অথচ এগুলো আল্লাহ তাআলার অঙ্গ নয়; বরং সিফাত। কিন্তু আমরা এগুলোর যে অর্থ জানি, তা নিরেট অঙ্গ বোঝায়। শব্দগুলো দ্বারা সিফাত উদ্দেশ্য হলে এর অর্থ কেমন হবে, তার জ্ঞান আমাদের নেই। তাই আমরা এ সকল সিফাতের প্রকৃত অর্থ এবং স্বরূপের জ্ঞান আল্লাহ তাআলার ইলমের দিকে ন্যস্ত করি। তিনিই এ সম্পর্কে সম্যক অবগত। বস্তুত আমাদের ইলম দেওয়া হয়েছে অতি সামান্য।

আমরা আরও বিশ্বাস করি, ইমান অন্তরের সত্যায়ন, মুখের স্বীকৃতি এবং অঙ্গপ্রত্যঙ্গের আমলের নাম। তিনটি বিষয়ের সংমিশ্রণে গঠিত হয় ইমান। তবে তিনওটি বিষয়ের গুরুত্ব সমান নয়। যেমন : অন্তরের সত্যয়ন হলো ইমানের মূলভিত্তি, যা ছাড়া ইমান অস্তিত্বই লাভ করতে পারে না। মুখের স্বীকৃতি প্রয়োজন ইমানের পার্থিব বিধান প্রযোজ্য হওয়ার জন্য। কারও ব্যাপারে যদি জানা থাকে যে, সে তার অন্তরে আল্লাহ এবং তার রাসুলকে সত্য বলে বিশ্বাস করে; কিন্তু মুখে ইমানের কালিমা উচ্চারণ করে না তবে তার ব্যাপারে পার্থিব বিধানাবলি, যেমন : জিযয়া মাফ হওয়া ইত্যাদি, প্রযোজ্য হবে না।

আমল হলো ইমানের পরিপূরক। আমল ছাড়া ইমান পূর্ণতা লাভ করে না। আর কিছু আমল তো এমন, যা প্রকাশ পেলে ইমানই বরং নষ্ট হয়ে যায়। আর কিছু হলো এমন, যা করা হলে ইমান নষ্ট না হলেও অনেকটা নষ্টের কাছাকাছি চলে যায়। সুতরাং ইমানের জন্য আমলের গুরুত্ব অপরিসীম। হাঁ, সব আমল এক স্তরের নয়। কোনোটা ফরজ, কোনোটা ওয়াজিব; আবার কোনোটা সুন্নত, আর কোনোটা হলো বৈধ।

শরিয়াহর বিধান হিসেবে অকাট্যভাবে প্রমাণিত, এমন কোনো সাধারণ বিধানকে অস্বীকার করলে, এমনকি অস্বীকারই নয়; বরং অন্তরে সেটার প্রতি বিশ্বাস স্থাপনের ক্ষেত্রে সংশয় থাকলেও ব্যক্তি মুমিন হিসেবে বিবেচিত হবে না। ইমান আনার জন্য ইসলামের প্রতিটা বিধানের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করতে হয়; কিন্তু ইমান হারানোর জন্য প্রতিটা বিধানকে নয়; বরং যেকোনো একটা বিধানকে অস্বীকার করাই যথেষ্ট।

ইমানের ওপর অটল থাকার জন্য পুরো শরিয়াহর ওপর আমল করা অপরিহার্য নয়; বরং আল্লাহ যার ওপর শরিয়াহর যে অংশটুকুকে অবধারিত করেছেন, তার ওপর আমল করা অপরিহার্য। যেমন : সামর্থ্যহীনের ওপর হজ এবং জাকাত ফরজ নয়। তাই সামর্থ্যহীন হজ এবং জাকাত না করার কারণে তার ওপর কুফরের ফতোয়া আসবে না। কিন্তু কেউ যদি শরিয়াহর অকাট্য প্রমাণিত সাধারণ কোনো বিধানকেও অস্বীকার করে তবে সে কাফির হয়ে যাবে।

খারেজি এবং মুতাজিলা গোষ্ঠী বলে, কোনো ব্যক্তি যদি কোনো ফরজ আমল ছেড়ে দেয় কিংবা কোনো হারাম আমলে লিপ্ত হয় তবে সে আর মুসলিম থাকে না। খারেজিদের ভাষ্যানুযায়ী সেই ব্যক্তি কাফির হয়ে যায়। আর মুতাজিলাদের ফতোয়া অনুসারে সে ব্যক্তি কাফির না হলেও ইসলামের গণ্ডি থেকে বেরিয়ে ইসলাম এবং কুফরের মাঝামাঝি এক স্তরে গিয়ে উপনীত হয়। আর আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহর দৃষ্টিতে ফরজ আমল ছেড়ে দেওয়ার কারণে কিংবা কোনো কবিরা গুনাহে লিপ্ত হওয়ার কারণে ব্যক্তি ফাসিক হলেও কাফির হয় না। হাঁ, যে সকল আমলকে কুরআন-সুন্নাহয় ইমান ভঙ্গকারী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, সেগুলোর কথা ভিন্ন।

সুতরাং এর আলোকে বোঝা গেল, আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহর দৃষ্টিতে ইমানের সঙ্গে আমলের নিবিড় সম্পর্ক থাকলেও ইমানের ক্ষেত্রে অন্তরের সত্যয়নের যে মর্যাদা, আমলের মর্যাদা সে স্তরের নয়; বরং এটা হলো তার অনুগামী এবং পরিপূরক।

কাররামিয়া এবং মুরজিয়া গোষ্ঠীর দৃষ্টিতে ইমানের সঙ্গে আমলের কোনো সম্পর্কই নেই। তারা কোনো আমলকেই ইমানের লাভ-ক্ষতির কারণ হিসেবে বিবেচনা করে না। এ জন্য তাদের মতানুসারে একজন ব্যক্তি অনেক আমল করছে, আরেকজন ব্যক্তি কিছুই করছে না—দুজনার মর্যাদা বরাবর। কারণ, ইমান এবং আমল হলো আলাদা বিষয়। তাই আমলের হ্রাস-বৃদ্ধির কোনো প্রভাব ইমানের ওপর পড়বে না। একইভাবে কোনো আমলের কারণে কোনো ব্যক্তি কাফির হবে না; সেই আমলটি যত বড় কুফরি কিংবা শিরকি আমলই হোক না কেন এবং কুরআন-সুন্নাহয় স্পষ্টভাবে সেটাকে যতই ইমান ভঙ্গের কারণ বলা হোক না কেন।

আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহর দৃষ্টিতে খারেজি, মুতাজিলা, মুরজিয়া এবং কাররামিয়া—এসকল গোষ্ঠীই গোমরাহ। তারা সত্যের ওপর স্থির নেই, সিরাতে মুসতাকিমের ওপর প্রতিষ্ঠিত নেই।

ইমান কি বাড়ে এবং কমে? হাঁ, ইমান অবশ্যই বাড়ে এবং কমে। অসংখ্য আয়াত এবং হাদিস থেকে এর স্পষ্ট প্রমাণ মেলে। ইমান বাড়া এবং কমার কী অর্থ? আগে ইমান দশ শাখাবিশিষ্ট ছিল, এখন বেড়ে বারো শাখাবিশিষ্ট হয়ে যাবে—বিষয়টা কি এমন? জি না, বিষয়টা এমন নয়। ইমানের মধ্যে পরিমাণের বিচারে হ্রাস-বৃদ্ধি হয় না; বরং হ্রাস-বৃদ্ধি হয় গুণগত মানের বিচারে। অর্থাৎ ইমানের পরিমাণ (কোয়ান্টিটি) বাড়ে না কিংবা কমে না; যা বাড়ে এবং যা কমে তা হলো ইমানের গুণগত মান (কোয়ালিটি)। সুতরাং এ কথা বলার কোনো অবকাশ নেই যে, জিবরিল আ.-এর ইমান আর অমুক ফাসিকের ইমান সমস্তরের। কারণ, উভয়ের ইমানের গুণগত মানের মধ্যে রয়েছে আকাশ-পাতাল পার্থক্য। প্যারালাইজড রোগীও একজন মানুষ আর প্রবল শক্তিশালী সুঠাম দেহের অধিকারী যুবকও একজন মানুষ। কিন্তু উভয়ের মধ্যে রয়েছে কত তফাৎ!

এরপর তিনি শাইখ নুরুদ্দীন ইতারের বক্তব্য উল্লেখ করে বোঝাতে চেয়েছেন, যারা আল্লাহ তাআলা সিফাতে তাবিল করে, তারা আশআরি মাযহাবের ওপর নেই। কিন্তু পর্যালোচনাকারী ভাইয়ের এখানে এই বক্তব্য উল্লেখ করার তাৎপর্যও আমাদের বোধগম্য নয়। কারণ, সিফাতের আকিদার ক্ষেত্রে ইমাম আবুল হাসান আশআরির সর্বশেষ মাসলাক ছিল ‘তাফউইদ’। আর আমরাও সাধারণভাবে ‘তাফউইদ’ করে থাকি। তাই এই বক্তব্য এখানে অপ্রাসঙ্গিক।

এরপর সর্বশেষ তিনি লিখেছেন :

//মজার ব্যাপার হচ্ছে, আধুনিক যুগের জাহমিয়া গুরু যাহিদ কাওসারিও ‘আল-ইবানাহ’ গ্রন্থের আকিদাহ সালাফিদের সাথে মিলে যাওয়ার দোহাই দিয়ে গ্রন্থটিকে বিকৃত বলেননি। তিনি বলেছেন, ইমাম আবুল হাসান আশ’আরি পরবর্তীতে ‘আল-ইবানাহ’ গ্রন্থের আকিদাহ ত্যাগ করেন। (তাবয়িনু কাযিবিল মুফতারি ৩৯২ ও আল-লুম’আ ৫৭ পৃষ্ঠার টীকা) তার মানে যাহিদ কাওসারিও মেনে নিয়েছেন, ‘আল-ইবানাহ’ গ্রন্থের আকিদাহ সালাফি আকিদাহর মতই।//

এখানে প্রথমত তিনি শাইখ জাহিদ কাউসারির সঙ্গে বেয়াদবির পরিচয় দিয়েছেন। ব্যক্তি হিসেবে তার ভুল-বিচ্যুতি থাকা অস্বাভাবিক কিছু নয়। কিন্তু এ কারণে এরকম একজন বিদগ্ধ আলিমের শানে এমন শব্দ ব্যবহার করা নিতান্তই বেয়াদবির পরিচায়ক। যাদের স্বভাবে বেয়াদবি থাকে, তাদের সঙ্গে আলোচনার আগ্রহ থাকে না। তার শব্দপ্রয়োগে মনে হয় যেন শাইখ জাহিদ কাউসারি তার মসজিদের মুয়াজ্জিন বা তার মক্তবের স্টুডেন্ট। আজিব স্পর্ধা! মতভিন্নতারও তো কিছু আদব থাকে। অবশ্য আমি নিজেও এখনো মতভিন্নতার আদবসমূহ ভালোভাবে রপ্ত করতে পারিনি। আল্লাহ তাআলা আমাকে তাওফিক দান করুন। আমিন।

যাহোক, তার এই শেষ প্যারা থেকে মনে হয় আমরা ‘আল-ইবানাহ’ গ্রন্থের আকিদাহ সালাফিদের সাথে মিলে যাওয়ার দোহাই দিয়ে গ্রন্থটিকে বিকৃত বলি। বড় হাস্যকর কথা। এ ছাড়াও তিনি বলতে চেয়েছেন, শাইখ জাহিদ কাউসারি এ গ্রন্থটিকে পরবর্তীতে বিকৃতিপ্রাপ্ত বলেননি। এ-ও তো নিরেট অবাস্তব কথা। হয়তো আমাদের নোটটিও তিনি ভালোভাবে পড়ে দেখেননি। কারণ, সেখানে স্পষ্ট ছিল :

//শাইখ জাহিদ কাউসারি রহ. ‘তাবয়িনু কাযিবিল মুফতারি’ গ্রন্থের ভূমিকায় লেখেন :

والنسخة المطبوعة في الهند من الإبانة نسخة مصحفة محرفة تلاعبت بها الأيدي الأثيمة، فيجب إعادة طبعها من أصل موثوق

হিন্দুস্তানে ‘আল-ইবানাহ’র প্রকাশিত নুসখা একটি ভুলভাবে লিখিত এবং বিকৃত নুসখা। অনেক পাপিষ্ঠ হাত তা নিয়ে প্রতারণা করেছে। সুতরাং নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে তা পুনরায় প্রকাশ করা অপরিহার্য।

তিনি আরও লেখেন :

ومن العزيز جدّاً الظفر بأصلٍ صحيح من مؤلفاته على كثرتها البالغة، وطبْعُ كتاب الإبانة لم يكن من أصل وثيق، وفي المقالات المنشورة باسمه وقفة

ইমাম আশআরির কিতাবগুলোর বিশুদ্ধ সূত্র লাভ করা একটি অত্যন্ত দুরূহ বিষয়; যেহেতু তার সংখ্যা অনেক বেশি। ‘আল-ইবানাহ’ গ্রন্থটি নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে প্রকাশ করা হয়নি। তার নামে প্রকাশিত ‘আল-মাকালাহ’ গ্রন্থটি নিয়েও সংশয় রয়েছে।

শাইখ জাহিদ কাউসারি রহ. একই বিষয়ে ‘আস-সাইফুস সাকিল’ গ্রন্থের টীকায়ও সুদীর্ঘ আলোচনা করেছেন। দ্রষ্টব্য : আস-সাইফুস সাকিল : ১৫৫-১৯৬।//

আল্লাহ তাআলা আমাদের বক্ষসমূহকে সত্য গ্রহণের জন্য উন্মোচিত করে দিন। পর্যালোচকারী ভাই হয়তো শীঘ্রই তার দ্বিতীয় পর্ব নিয়ে হাজির হবেন। তাকে অগ্রিম স্বাগত জানিয়ে রাখছি। আর তিনি চাইলে তার পরবর্তী পর্বগুলোতেও পূর্বের রীতি অনুসারে ব্যক্তি আক্রমণ চালাতে পারেন, আবার চাইলে ভদ্র ও মার্জিত ভাষাও ব্যবহার করতে পারেন। এ ব্যাপারে তিনি সম্পূর্ণ স্বাধীন।

‘আল-ইবানাহ’ কিতাব নিয়ে বিভ্রান্তি নিরসন (শেষ পর্ব) : আমাদের কথা

পর্যালোচনাকারী ভাই তার লেখার শেষ পর্বে কিছু বিষয় নিয়ে পর্যালোচনা করেছেন। আমরা এখানে তার এই পর্যালোচনার ব্যাপারে আমাদের নাতিদীর্ঘ মূল্যায়ন উপস্থাপন করব।

১. পর্যালোচনাকারী ভাইয়ের প্রথমে তিনি আমাদের পক্ষ থেকে একটি আপত্তি দাঁড় করিয়েছেন। এরপর সেই দাঁড় করানো আপত্তির জবাব নিজের মতো করে দিয়েছেন। তার প্রথম পর্যালোচনাটি এরূপ ছিল :

// 👉 আপত্তি : লেখক ‘আল-ইবানাহ’ গ্রন্থকে বিকৃত প্রমাণ করতে যাহিদ কাওসারীর উদ্ধৃতি এনেছেন। যাহিদ কাওসারির মতে এ গ্রন্থ বিকৃত হয়ে গেছে।

✒ পর্যালোচনা : লেখক এমন একজনের উদ্ধৃতি এনেছেন, যিনি এ যুগের জাহমিয়া সর্দার। তিনি নিজ ধ্যানধারণা, চিন্তাচেতনা ও জাহমিয়া মতবাদকে সঠিক প্রমাণ করার জন্য রাতকে দিন বানান আর দিনকে রাত বানান। তার এ জঘন্য নীতি জানার জন্য আল্লামা আব্দুর রহমান মু’আল্লিমি ইয়ামানি রাহি. এর “আত-তানকিল বিমা ফি তা’নিবিল কাওসারি মিনাল আবাতিল” পড়া যথেষ্ট। এ লোকের মতবাদের সাথে না মিলাই সাহাবি থেকে শুরু করে বড় বড় ইমামগণ রেহাই পাননি।//

আমাদের কথা :

পর্যালোচনাকারী ভাই এখানে স্রেফ শাইখ জাহিদ কাউসারি রহ.-এর শানে বেয়াদবিমূলক মন্তব্য করেই মূল বিষয়টি পাশ কেটে গেছেন। কারও কারও কথার স্টাইল থেকে মনে হয়, শাইখ জাহিদ কাউসারি যদি বলেন ‘আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই’ কিংবা ‘পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ’ তবে তা-ও নির্দ্বিধ প্রত্যাখ্যাত হবে। আমাদের এ সকল আহলে হাদিস ভাইয়েরা নিজেদের মতের থেকে ভিন্নমত পোষণ করেন—এমন আলিমগণের সঙ্গে যতটা অসহিষ্ণু আচরণ করেন এবং তাদের শানে অকপটে এমন সব বেয়াদবিমূলক ভাষা ব্যবহার করেন, যেগুলো আমরা তাদের সাধারণ মাপের আলিমগণের সঙ্গে করার দুঃসাহসও কখনো দেখাই না। এ জাতির সবচে বড় সমস্যা সীমালঙ্ঘন। এবার সেই সীমালঙ্ঘন কেউ প্রদর্শন করে শাইখ জাহিদ কাউসারি বা শাইখ আবদুল ফাত্তাহ আবু গুদ্দাহর সঙ্গে, আর কেউ করে শাইখ আলবানি বা এ ধারার অন্য কোনো শাইখের সঙ্গে।

যাহোক, এমন নয় যে, আমরা আমাদের এ-সংক্রান্ত ফেসবুক নোটে ‘আল-ইবানাহ’ বিকৃতিপ্রাপ্ত হয়ে যাওয়ার ব্যাপারে স্রেফ শাইখ জাহিদ কাউসারির অভিমত উল্লেখ করেছিলাম; যার কারণে এখন তার সমালোচনা করা হলেই মূল বিষয়টি অগ্রহণীয় হয়ে যাবে। এটা আমাদের আগেই ধারণায় ছিল যে, শাইখ জাহিদ কাউসারির নাম দেখামাত্রই অনেকে এটাকে একটা নিজেদের পক্ষে একটা পয়েন্ট হিসেবে নিয়ে ‘ধরি মাছ না ছুঁই পানি’ টাইপের মন্তব্য করে বসবে। এ জন্য সেখানে আমরা স্পষ্ট উল্লেখ করে দিয়েছি যে, এটা শুধুই শাইখ জাহিদ কাউসারির মত নয়; বরং আরববিশ্বের স্বনামধন্য অনেক আলিমও তার সঙ্গে ঐকমত্য প্রকাশ করেছেন। শুধু আরববিশ্বই কেন; কারও সুযোগ থাকলে তাকে এ দেশের মুহাক্কিক আলিম মাওলানা আবদুল মালেক (হাফিজাহুল্লাহ)-এর কাছে গিয়ে তাঁর মতামত জেনে আসারও অনুরোধ থাকল। আমরা সেই নোট থেকে এ সংশ্লিষ্ট আলোচনাটুকু এখানে উদ্ধৃত করছি :

//আরও অনেক মুহাক্কিক আলিমই শাইখ জাহিদ কাউসারি রহ.-এর মতো একই মত পোষণ করেছেন। উদাহরণস্বরূপ, ড. আবদুর রহমান বাদাওয়ি লেখেন :

وقد لاحظ الشيخ الكوثري بحق أن النسخة المطبوعة في الهند.. تلاعبت بها الأيدي الأثيمة..

শাইখ কাউসারি যথাযথ পর্যবেক্ষণই করেছেন যে, হিন্দুস্তানে ‘আল-ইবানাহ’র প্রকাশিত নুসখা একটি ভুলভাবে লিখিত এবং বিকৃত নুসখা। অনেক পাপিষ্ঠ হাত তা নিয়ে প্রতারণা করেছে। সুতরাং নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে তা পুনরায় প্রকাশ করা অপরিহার্য। [মাযাহিবুল ইসলামিয়্যিন : ১/৫১৭]

স্বনামধন্য গবেষক শাইখ ওয়াহবি গাওয়িজি রহ. এ বিষয়ে একটি পুস্তিকাই রচনা করেছেন। পুস্তিকাটির নাম : نظرة علمية في نسبة كتاب الإبانة جميعه إلى الإمام أبي الحسن

সেখানে তিনি অসংখ্য স্পষ্ট প্রমাণের মাধ্যমে এ বিষয়টি তুলে ধরেছেন যে, বর্তমানে ইলমি গ্রন্থাগারে সংরক্ষিত এবং ইলমচর্চাকারীদের মধ্যে প্রচলিত ‘আল-ইবানাহ’র অনেক বিষয়ই এমন, ইমাম আবুল হাসান আশআরি রহ.-এর দিকে যেগুলোকে নিসবত করা নিরেট গলদ।//

সুতরাং এক শাইখ জাহিদ কাউসারির সমালোচনা করে বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ কোথায়! শাইখ ওয়াহবি গাওয়িজি তো এ ব্যাপারে পুরোদস্তুর পুস্তিকাই রচনা করে রেখেছেন। এগুলো যেন পর্যালোচনাকারী ভাইয়ের চোখেই পড়েনি। শাইখ ওয়াহবি গাওয়িজির কিতাব আমাদের তাখাসসুস ফিক ফিকহে নেসাবভুক্ত ছিল। ড. আবদুর রহমান বাদাওয়ির নাম শোনেনি—এমন মুহাক্কিক আলিমের সন্ধান পাওয়াও দুষ্কর। সুতরাং তাদের প্রসঙ্গ এড়িয়ে খালি মাঠে গোল দেওয়ার বিষয়টি সচেতন পাঠকের চোখে ভালো ঠেকবে না—এটাই স্বাভাবিক।

২. দ্বিতীয় পর্যালোচনায় তিনি দেখাতে চেয়েছেন, আমরা নাকি সেই নোটে ‘আল-ইবানাহ’ বিকৃতিপ্রাপ্ত হয়ে যাওয়ার ব্যাপারে স্রেফ তিনটি উদাহরণ উল্লেখ করেছি। যে উদাহরণগুলোতে কেবল সংস্করণ ও নুসখার ভিন্নতাই দৃশ্যমান হয়েছে। এরকম ভিন্নতা তো পুরোনো অনেক গ্রন্থের ক্ষেত্রেই দেখা যায়। সুতরাং এ আপত্তি মাকড়সার জালের মতো।

পর্যালোচনাকারী ভাই এখানেও আংশিক আলোচনা করে অনেক বিষয় এড়িয়ে গেছেন। উদাহরণস্বরূপ :

(ক) আমরা আমাদের সেই নোটে দেখিয়েছিলাম, ‘আল-ইবানাহ’ গ্রন্থের বিকৃতির ব্যাপারে নুসখার ভিন্নতা ছাড়াও সুস্পষ্ট প্রমাণ রয়েছে। যেমন :

//‘আল-ইবানাহ’ কিতাবটি উম্মাহর ইমামগণের কাছে কতটাই সমাদৃত ছিল, তা জানার জন্য নিচের ইবারতটিই আশা করি যথেষ্ট হবে। ইমাম ইবনু আসাকির রহ. লেখেন :

ولم يزل كتاب الإبانة مُستصوباً عند أهل الديانة، وسمعت الشيخ أبا بكر أحمد بن محمد بن إسماعيل بن محمد بن بشار البوشنجي المعروف بالخسروجـردي الفقيه الزاهد يحكي عن بعض شيوخه أن الإمام أبا عثمان إسماعيل بن عبد الرحمن بن أحمد الصابوني النيسابوري ما كان يخرج إلى مجلس درسه إلا وبيده كتاب الإبانة لأبي الحسن الأشعري، ويظهر الإعجاب به، ويقول: ماذا الذي يُنكر على من هذا الكتاب شرح مذهبه. فهذا قول الإمام أبي عثمان وهو من أعيان أهل الأثر بخراسان.

অথচ এ কিতাবটিতে যদি এ ধরনের বিদআতি আকিদা বা সঠিক আকিদার গলদ উপস্থাপনা থাকে, তাহলে তো কখনোই তা উম্মাহর ইমামগণের কাছে সমাদৃত হওয়ার কথা নয়।  

‘আল-ইবানাহ’র বিকৃতি বোঝার জন্য খুব বেশি দূরে যেতে হবে না। ইমাম আবু হানিফা রহ.-এর নামে যেসব মিথ্যাচার তাতে করা হয়েছে, তা সামনে রাখলে দুটো বিষয় স্পষ্ট হয়ে যাবে : (ক) বিকৃতির কাজটি কারা করেছে; (খ) বিকৃতিকারীদের উদ্দেশ্য কী ছিল।

প্রচলিত ‘আল-ইবানাহ’র ৫৭ নম্বর পৃষ্ঠায় দাবি করা হয়েছে যে, ইমাম আবু হানিফা রহ. কুরআনকে মাখলুক মনে করতেন এবং তিনি এই বাতিল আকিদা পোষণ করতেন।

وذكر هارون بن إسحاق الهمداني عن أبي نعيم عن سليمان بن عيسى القاري عن سفيان الثوري، قال: قال لي حماد بن أبي سليمان: بلِّغ أبا حنيفة المشرك أنِّي منه بريء. قال سليمان: ثم قال سفيان: لأنه كان يقول القرآن مخلوق.

وذكر سفيان بن وكيع قال عمر بن حماد بن أبي حنيفة قال أخبرني أبي قال: الكلام الذي استتاب فيه ابن أبي ليلى أبا حنيفة هو قوله: القرآن مخلوق. قال: فتاب منه وطاف به في الخلق. قال أبي: فقلت له كيف صرت إلى هذا؟ قال: خفت أن يقوم عليّ، فأعطيته التقيّـة.

وذكر هارون بن إسحاق قال سمعت إسماعيل بن أبي الحكم يذكر عن عمر بن عبيد الطنافسي أن حمّاداً ـ يعني ابن أبي سليمان ـ بعث إلى أبي حنيفة: إني بريء مما تقول، إلا أن تتوب. وكان عنده ابن أبي عقبة، قال، فقال: أخبرني جارك أن أبا حنيفة دعاه إلى ما استتيب منه بعد ما استتيب.

وذكر عن أبي يوسف قال: ناظرت أبا حنيفة شهرين حتى رجع عن خلق القرآن

‘আল-ইবানাহ’র তাহকিককৃত নুসখায় (পৃ. ৯০-৯১) ইমাম সুফয়ান রহ. থেকে স্পষ্ট উল্লেখ করা হয়েছে :

وحاشى الإمام الأعظم أبو حنيفة رضي الله عنه من هذا القول بل هو زور وباطل فإن أبا حنيفة من أفضل أهل السنة

ইমাম আজম আবু হানিফা রা. এ ধরনের কথা থেকে পবিত্র। বরং তা মিথ্যা ও বাতিল। কারণ, ইমাম আবু হানিফা ছিলেন আহলুস সুন্নাহর শ্রেষ্ঠ মনীষীগণের মধ্যে অন্যতম।

এর কয়েক ছত্র পর ইবনু আবি আকাবাহর বক্তব্য :

أخبرني جارك أن أبا حنيفة دعاه لما استتيب منه بعد ما استتيب.

-এর পর পুনরায় তার কথা উল্লেখিত রয়েছে :

وهذا كذب محض على أبي حنيفة رضي الله عنه

এটা ইমাম আবু হানিফা রা.-এর ওপর নিরেট মিথ্যাচার।

এমনকি কোনো কোনো নুসখায় তো জালিয়াতি করে হাম্মাদ রহ.-এর ভাষ্যে ইমাম আবু হানিফা রহ.-কে মুশরিক পর্যন্ত অভিহিত করা হয়েছে। শাইখ জাহিদ কাউসারি রহ. ইমাম ইবনু কুতায়বার ‘আল-ইখতিলাফ ফিল-লাফজ’ গ্রন্থের টীকায় (পৃ. ৪৯) লেখেন :

ومن غريب التحريف ما دُسَّ في بعض نسخ الإبانة للأشعري كما دُسَّ فيها أشياء أخر من أن حمّاد بن أبي سليمان قال ” بلِّغ أبا حنيفة المشرك أني بريء من دينه ” وكان يقول بخلق القرآن. فإن لفظ حمّاد ” بلّغ أبا فلان ” لا أبا حنيفة! كما في أول خلق الأفعال للبخاري، وجعل من لا يخاف الله لفظ ” أبا حنيـفة ” فـي موضـع ” أبا فلان ” والله أعلم من هو أبو فلان هذا، وما هي المسألة..

ইমাম বায়হাকি রহ. তার ‘আল-ইতিকাদ’ (পৃ. ১১২) গ্রন্থে লেখেন :

روّينا عن محمد بن سعيد بن سابق أنه قال : سألت أبا يوسف فقلت : أكان أبو حنيفة يقول القرآن مخلوق؟ فقال : معاذ الله، ولا أنا أقوله. فقلت : أكان يرى رأي جهم؟ فقال : معاذ الله، ولا أنا أقوله. رواته ثقات

মুহাম্মাদ ইবনু সাইদ রহ. বলেন, আমি আবু ইউসুফ রহ.-কে জিজ্ঞেস করলাম, ‘আবু হানিফা রহ.-কে বলতেন যে, কুরআন মাখলুক?’ তিনি বললেন, ‘আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করি। আমিও এ কথা বলি না।’ এরপর আমি তাকে বললাম, ‘তিনি কি জাহামের মত পোষণ করতেন?’ তিনি বললেন, ‘আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করি। আমিও এ কথা বলি না।’ (ইমাম বায়হাকি রহ. বলেন,) এই বর্ণনার বর্ণনাকারীগণ নির্ভরযোগ্য।

এ জালিয়াতির বিষয়টিকে আরও স্পষ্টভাবে তুলে ধরেছেন শাইখ ওয়াহবি গাওয়িজি হাফি. তার نظرة علمية في نسبة كتاب الإبانة جميعه إلى الإمام أبي الحسن গ্রন্থে (পৃ. ২০) :

ولا بأس أن نقول: لو كان الإمام الأشعري رحمه الله تعالى نسب حقاً إلى الإمام ـ يعني أبا حنيفة ـ القول بخلق القرآن لما كان للإمام الأشعري تلك المكانة العالية عند الحنفية أتباع الإمام أبي حنيفة رحمه الله تعالى. فلا تلتفت أيها القارئ إلى تلك النقول المبتورة مبتدأً والباطلة سنداً، وأحسن الظن بالإمام الأشعري كما تحسن الظن بإمام الأئمة الفقهاء وسائر الأئمة رضوان الله تعالى عليهم. وتذكر أنه أُدخِل الكثيرُ من الأباطيل على حديث رسول الله صلى الله عليه وسلم، رُكّبت لها أسانيد باطلة، لكلمات باطلة. كذلك ولا تنس أنه حُشِر في كتب كثير من العلماء كلماتٌ وعبارات وحذف منها كلمـات وعبارات حتى في حيـاة أصحابها

আমরা এ কথা বলতে সমস্যা নেই যে, ইমাম আশআরি রহ. যদি প্রকৃতপক্ষে ইমাম আবু হানিফা রহ.-এর দিকে কুরআন মাখলুক হওয়ার বক্তব্য সম্পর্কিত করতেন, তাহলে ইমাম আবু হানিফার অনুসারী হানাফিদের নিকট আর ইমাম আশআরির সেই সমুন্নত অবস্থান থাকত না। সুতরাং হে পাঠক, তুমি সেসব বক্তব্যের দিকে দৃষ্টিপাত কোরো না, যেগুলো সূচনাতেই গলদ এবং সনদের বিচারেও বাতিল। তুমি ইমাম আশআরির প্রতি সুধারণা পোষণ কোরো, যেমনিভাবে তুমি ফকিহ ইমামগণ এবং অন্য সকল ইমামগণের ইমাম (আবু হানিফা রহ.)-এর প্রতি সুধারণা পোষণ করে থাকো। তুমি স্মরণ কোরো, রাসুলুল্লাহ ﷺ-এর হাদিসের ভাণ্ডারেও তো কত জাল বর্ণনা প্রবেশ করানো হয়েছে। বাতিল কথার গায়ে বাতিল সনদও চড়ানো হয়েছে। একইভাবে এ-ও বিস্মৃত হোয়ো না যে, অনেক আলিমের বইপত্রেই কিছু কথা এবং কিছু ইবারত সংযুক্ত করা হয়েছে আর কিছু কথা এবং কিছু ইবারত মুছে দেওয়া হয়েছে। এমনকি কোনো কোনোটি তো লেখকের জীবদ্দশায়ই ঘটানো হয়েছে।//

পর্যালোচনাকারী ভাই এ বিষয়টি সম্পূর্ণই এড়িয়ে গেছেন। এর কারণ আমাদের মোটেও বোধগম্য নয়।

(খ) পর্যালোচনাকারী ভাই লিখেছেন :

// 👉 আপত্তি : লেখক দ্বিতীয় ও তৃতীয় উদাহরণ এনেছেন, “ড. ফাওকিয়া হুসাইন যে চারটি পাণ্ডুলিপি দেখে তাহকিক করেছেন, সেগুলোতে কম-বেশি রয়েছে। কোন পাণ্ডুলিপিতে একটা বাক্য আছে, কিন্তু অন্য পাণ্ডুলিপিতে তা নেই। যা প্রমাণ করে, ‘আল-ইবানাহ’ বিকৃত হয়ে গেছে।”

✒ পর্যালোচনা: এ অজুহাতে কোনো গ্রন্থকে বিকৃত প্রমাণ করা মানে গোটা ইসলামকে বিকৃত বলার নামান্তর। এ অজুহাতে কোনো গ্রন্থকে বিকৃত বললে, হাদীস গ্রন্থ থেকে শুরু করে প্রাচীন প্রায় সব গ্রন্থকে বিকৃত বলতে হবে। যাদের এ বিষয়ে ন্যূনতম জ্ঞান আছে তারা খুব ভালোভাবে জানেন যে, হাদীস গ্রন্থ থেকে শুরু করে প্রাচীন প্রায় যে কোনো গ্রন্থের পাণ্ডুলিপিতে কম-বেশি আছেই।//

মজার কথা হলো, বিষয়টি যদি স্রেফ এতটুকুই হতো তাহলে এ নিয়ে তো আমাদের আপত্তির কোনো কারণই ছিল না। আপত্তি যদি কেবল নুসখার সাধারন ভিন্নতার কারণেই করা হয়ে থাকে তাহলে সে আপত্তি তো নিরেট অসার বৈ কিছু নয়। কিন্তু তাহকিকের সাধারণ কোনো ছাত্রও তো কখনো তার আপত্তির ভিত্তি এর ওপর রাখা কথা নয়।

দুই মাসলাকের মধ্যে যদি আপত্তি থাকে ১৯ আর ২০-এর। সেখানে ১৯-এর স্থলে যদি ২০ লেখা থাকে তাহলে সেটাকে কিন্তু কেবল মাত্র ১-এর ভিন্নতা বলে কাটিয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। বরং তা হলো পুরো একটি মাসলাকের ভিন্নতা। আরবিতে একবচন আর দ্বিবচনের লেখার মধ্যে খুব বেশি পার্থক্য নেই। উদাহরণস্বরূপ নবিগণের মোট সংখ্যা কত—তা আল্লাহই ভালো জানেন। এরপরও কোনো কোনো বইয়ে তাদের মোট সংখ্যা উল্লেখ করার চেষ্টা করা হয়েছে। সেসব জায়গায় দেখা যায়, তাদের মোট সংখ্যা লেখা হয়েছে ১ লাখ ২৪ হাজার বা ২ লাখ ২৪ হাজার। সংখ্যার বিবেচনায় পার্থক্যটি কিন্তু অনেক বড়। কিন্তু আরবি লেখায় এখানে পার্থক্য কিন্তু কেবল একটি অক্ষর ‘আলিফ’-এর। একটি ‘আলিফ’ যোগ করলে হয়ে যায় ২ লাখ আর ‘আলিফ’টি মুছে দিলে হয়ে যায় ১ লাখ।

আল্লাহ তাআলার সিফাতে আইন কয়টি? যদি বলা হয় একটি তাহলে তা কুরআন-সুন্নাহর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়। আর যদি বলা হয় দুটো তাহলে তা কুরআন-সুন্নাহ বহির্ভূত আকিদা হয়। আর আকিদার ক্ষেত্রে কুরআন-সুন্নাহ বহির্ভূত সবই বিদআত। যার কারণে এখানে ১-এর স্থলে ২ বললে তা যে বিদআত হবে—এ বিষয়টি আমরা আমাদের নোটে শুধু শাইখ জাহিদ কাউসারিই নয়; বরং ইমাম ইবনু হাজম, ইমাম ইবনুল জাওযি এবং শাইখ ইবনু আকিল রহ.-এর সূত্রে উল্লেখ করেছি। সুতরাং এটাকে কেবলই নুসখার ভিন্নতা বলে এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ কোথায়! আল্লাহ কয়জন? এক জায়গায় লেখা রয়েছে একজন, আরেক জায়গায় লেখা রয়েছে দু-জন। এটাকে কি কেবল নুসখার ভিন্নতা বলে এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে?

একইভাবে আল্লাহ আরশের ওপর ইসতিওয়া গ্রহণ করেছেন। এখন এটাকে যদি শুধু এতটুকু বলেই ক্ষ্যান্তি দেওয়া হয় তাহলে নব্য সালাফিরা এর থেকে সহজেই নিজেদের মত বের করতে পারে যে, এই দেখো তোমাদের ইমাম বলেছেন, আল্লাহ তাআলা আরশের ওপর সমাসীন (নাউজুবিল্লাহ) হয়েছেন। কিন্তু যদি এর সঙ্গে استواءً منزهاً عن الحلول والاتحاد অংশটুকু উল্লেখ থাকে তাহলে এর সুযোগ অনেকাংশেই হ্রাস পেয়ে যায়।

(গ) বিষয় কেবল এই এক-দুটোই নয়। যাদের সময় আছে, তারা যদি কষ্ট করে শাইখ ওয়াহবি গাওয়িজির পুস্তিকাটি অধ্যয়ন করেন তাহলে অগণিত দৃষ্টান্তের আলোকে সুস্পষ্টভাবে দেখতে পাবেন যে, নব্য সালাফিরা ‘আল-ইবানাহ’র ওপর কত বেশি অত্যাচার চালিয়েছে। এটাকে বিকৃত করে করে এমন অবস্থায় উপনীত করেছে, যার দ্বারা কেবল তাদের নিজেদের মাযহাবই প্রমাণিত হয়। এই কাজ তারা শুধু এ বইয়ের ক্ষেত্রে করেছে কেবল তা-ই নয়; বরং আশআরি-মাতুরিদিদের মূল তথ্যসূত্র যেগুলো পেয়েছে, তার অধিকাংশগুলোতেই এই কাজ করেছে। যার কারণে ‘তাফউইদ’-এর পক্ষের অনেক সুস্পষ্ট দলিলকে মাত্র এক-দু শব্দ এদিক-সেদিক করে তারা ‘ইসবাত’-এর পক্ষে নিয়ে গেছে। আমরা যখন ‘তাফউইদ’-এর পক্ষে ধারাবাহিক লিখি তখন একটা দলিলের ব্যাপারে এক ভাই আপত্তি করেছিলেন, হুবহু এ দলিলের দ্বারাই তো অমুক শাইখ ‘ইসবাত’-এর পক্ষে সালাফের ঐকমত্য উল্লেখ করেছেন আর আপনি কিনা করছেন ‘তাফউইদ’-এর পক্ষে। প্রচলিত নুসখার আলোকে তো ওই শাইখের মতামতই প্রমাণিত হয়। তখন আমরা সেই একই উদ্ধৃতিকে অসংখ্য সালাফের গ্রন্থ থেকে উদ্ধৃত করেছি, যারা সেই মূলগ্রন্থ থেকে হুবহু সেটাকে উল্লেখ করেছিলেন, সবার গ্রন্থের আলোকে দেখা গেছে দলিলটি সুস্পষ্টভাবে ‘তাফউইদ’-এর পক্ষে যায়, অথচ নব্য সালাফি মুহাক্কিক একই দলিলে একটি শব্দ বিকৃত করে সেটাকে নিয়ে গেছে ‘ইসবাত’-এর পক্ষে। যুগে যুগে এই নব্য সালাফিরা এতটাই জালিয়াতির পরিচয় দেখিয়েছে। আল্লাহ তাদের হিদায়াত দান করুন।

যাহোক, প্রচলিত ‘আল-ইবানাহ’ যে বিকৃতিপ্রাপ্ত—এটা বোঝার জন্য পিএইচডি করতে হয় না। এরপরও সাধারণভাবে কোনো নব্য সালাফিই যে এর সঙ্গে ঐকমত্য পোষণ করবে না, বরং এ-জাতীয় লেখা না পড়েই কেবল একটি হা হা রিয়েক্ট দিয়ে কেটে পড়বে এবং এর বিপক্ষীয় যেকোনো মানের যেকোনো লেখায় গিয়ে উল্লাসধ্বনি জাহির করবে—এটা কে না জানে! কে না বোঝে! যাদের অন্তর বক্র হয়ে গেছে, তাদের সামনে সত্য দিবালোকের মতো সুস্পষ্ট হলেও তারা কখনোই তা গ্রহণ করতে পারে না। এটা এই বিষয়ের ক্ষেত্রে বলিনি। কথাটি ব্যাপকভাবে প্রযোজ্য এবং সাধারণভাবে স্বীকৃত।

ইমাম আশআরির জীবনের মোট ধাপ কয়টি?

এটাকে ভেঙে বললে একরকম উত্তর হবে আর ভেঙে না বললে আরেকরকম উত্তর হবে। যেমন, ইমানের মূল শাখাগুলোর বর্ণনায় কখনো বলা হয় ১, কখনো ৩, কখনো ৬ আর কখনো ৭। যদি বলা হয়, ইমানের মূল হলো তাওহিদ, রিসালাত ও আখিরাত, তবে এর অর্থ এটা নয় যে, বাকি বিষয়গুলোকে অস্বীকার করা হলো।

ইমাম আশআরি প্রথমে ছিলেন মুতাজিলি। এ ব্যাপারটি নিয়ে কারও কোনো সংশয় নেই। কিন্তু এরপর তিনি কী হয়েছেন, তা নিয়ে কথা।

মুতাজিলি মতবাদ থেকে প্রকাশ্য ঘোষণার মাধ্যমে ফিরে আসার পর তিনি আহলুস সুন্নাহর মাসলাক গ্রহণ করেছিলেন। তবে সে সময় তার মধ্যে তাবিলের প্রাধান্য ছিল। আর তাবিল একবাক্যে পরিত্যাজ্য নয়; বরং শর্তসাপেক্ষে অনুমোদিত। তাই এই ধাপটিকেও আহলুস সুন্নাহর মধ্যেই অন্তর্ভুক্ত করা যায়। অথবা অতিরিক্ত সতর্কতাস্বরূপ কেউ বলতে পারে ‘আংশিক সুন্নি’। এরপর সর্বশেষ তিনি ছিলেন তাফউইদের ওপর। জীবনের শেষের দিকের রচনাগুলো থেকে যা স্পষ্ট। যদিও নব্য সালাফিরা সেগুলোকে বিকৃত করে এখন তাফউইদের রচনাসমূহকে ইসবাতের নথি বানিয়েছে। আল্লাহ তাদের হিদায়াত দান করুন।

তো উপরিউক্ত বিবেচনানুসারে বলা যায়, তার জীবনের মোট ধাপ ছিল দুটো : (১) মুতাজিলি; (২) আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের মাসলাকের অনুসারী।

আবার আরেকটু ভেঙে বললে কথাটিকে এভাবেও বলা যায়, তার জীবনের মোট ধাপ ছিল তিনটি : (১) মুতাজিলি; (২) তাবিলপন্থী; (৩) তাফউইদপন্থী।

নব্য সালাফিরা বলতে চায়, ‘প্রথমে তিনি ছিলেন মুতাজিলি। এরপর হয়েছেন কুল্লাবি। সর্বশেষ ঠেকেছেন ইসবাতে এসে।’ এটা হাস্যকর। তারা তাদের কথার পক্ষে প্রমাণ হিসেবে উত্থাপন করে ‘আল-ইবানাহ’ এবং ‘মাকালাত’কে। কিন্তু এগুলো কীভাবে দলিল হবে, যখন এগুলোকেই বিকৃত করে রাখা হয়েছে! প্রকৃত ‘আল-ইবানাহ’ দ্বারা তাফউইদই প্রমাণিত হয়; ইসবাত নয়।

তা ছাড়া কোনো কোনো ইমাম স্পষ্ট বলে গেছেন, ইবনু কুল্লাবের মাসলাকের আলোকেই ‘আল-ইবানাহ’ রচিত হয়েছে। সুতরাং তিনি যে শেষাবধি কুল্লাবি মাসলাক থেকে ফিরে এসেছেন, এ কথাটিও অবাস্তব বৈ কিছু নয়। ইবনু কুল্লাবের মাযহাব ছিল তাফউইদ। ইমাম আশআরি সিফাতের ইনকার থেকে ফিরে প্রথমে ধরেছিলেন তাবিল। আর শেষাবধি বাগদাদে আসার পর তিনিও এসে ঠেকেছেন এই তাফউইদেই। মুতাজিলি মতবাদ থেকে তিনি তো প্রকাশ্যে ভরা মজলিসে রুজু করেছেন। ইবনু কুল্লাবের মাসলাক থেকে এভাবে রুজু করার প্রমাণ কোথায়?

যাহোক, তিন আর দুই নিয়ে মূল কথা নয়। মূল কথা হলো শেষ মাসলাক নিয়ে। তাঁর শেষ মাসলাক ছিল তাফউইদ। এখান থেকে আশআরিরাও তাফউইদ গ্রহণ করেছে। আর তাঁর প্রথমদিকের রচনায় যেহেতু তাবিলের প্রাধান্য, তাই অনেকে সেটাকে বানিয়েছে নিজেদের মাসলাক। তবে বোঝাই যাচ্ছে, এ দুই ধারার মধ্যে যারা জীবনের শেষ মাসলাককে গ্রহণ করেছে, তারাই নিজেদের আশআরি দাবি করার অধিক হকদার। আর সীমার মধ্যে থেকে শর্ত রক্ষা করে যারা তাবিল করে, তারাও আশআরি বৈ কিছু নয়। তবে যারা দেহবাদীদের মতো ব্যাখ্যা প্রদান করে অথবা নব্য সালাফিদের মতো ইসবাত করে, তারা কখনো আশআরি নয়। হ্যাঁ, ইসবাতপন্থীরা কতক সালাফের মাযহাব অনুসারে সীমার মধ্যে থেকে কাজটি করলে তারাও আহলুস সুন্নাহর অন্তর্ভুক্ত তো অবশ্যই। কেউ আশআরি না হওয়ার অর্থ সে আহলুস সুন্নাহ থেকে বহির্ভূত হওয়া নয়।

পুনশ্চ

ফেসবুক পোস্ট পড়ে কেউ কি কখনো মাযহাব পাল্টিয়েছে? না, এমনটা হওয়ার নয়। এখানে সাধারণত মানুষ শিখতে আসে না। হ্যাঁ, নিজের পক্ষের কথাগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য প্রকাশ করতে আসে। তাই মনমতো কথা পেলে খুশি হয়। লাভ কিংবা ওয়াও রিয়েক্ট দেয়। মনের খেলাফ হলে খেপে যায়। হাহা কিংবা এংরি রিয়েক্ট দেয়। হ্যাঁ, যাদের মস্তিষ্ক আগে থেকে জ্ঞানশূন্য থাকে, তারা এখানে এসে কোনো দলে ভিড়তে পারে। এটা মোটেও অস্বাভাবিক নয়।

ফেসবুকে সালাফিরা যতই চেষ্টা করুক না কেন, মাতুরিদি কিংবা আশআরিরা কখনোই তাদের মতবাদ গ্রহণ করবে না। একইভাবে মাতুরিদি কিংবা আশআরিরা যতই আলোচনা করুক না কেন, সালাফিরা তাদের মাযহাব মেনে নেবে না। এর অর্থ এটা নয় যে, কেউ নিজের মাযহাবের আলোচনা করতে পারবে না। মতভিন্নতা তো থাকবেই। মতের পক্ষে আলোচনা তো হবেই। প্রত্যেক পক্ষের অডিয়েন্স সে পক্ষের আলোচনা গিলবে। আলোচনায় সমস্যা নয়; সমস্যা হলো অন্যকিছুতে।

দেওবন্দিরা মাতুরিদি। তবে আশআরি মাযহাবের দিকেও ঝোঁকা। কোনো সালাফি দেওবন্দি হতে পারে না; এমনকি সে খোদ দারুল উলুম দেওবন্দে পড়ে এলেও। কারি তায়্যিব রহ.-এর লেখা থেকে এমনটাই অনুমিত হয়। তবে এর অর্থ এটা নয় যে, তারা সব সালাফিকে হক বা আহলুস সুন্নাহ থেকে খারিজ মনে করে। আল্লামা তাকি উসমানি হাফি.-এর লেখা থেকে স্পষ্ট প্রতিভাত হয়, আকিদার ক্ষেত্রে তাশবিহ এবং তাজসিম থেকে মুক্ত থেকে যারা তাফউইদ, ইসবাত এবং তাবিল করে, দেওবন্দিরা তাদের সবাইকেই আহলুস সুন্নাহর অন্তর্ভুক্ত মনে করে। যদিও তাফউইদই তাঁদের নিকট অগ্রগণ্য।

দুঃখের বিষয়, আকিদা নিয়ে আমাদের বর্তমানকালের আলিমগণ সাধারণত কম আলোচনা করেন। আকিদা নিয়ে যা কিছু আলোচনা শোনা যায়, তা প্রায় সবই সালাফি ধারার শাইখদের বা শিক্ষানবিশদের থেকে। যার কারণে অনেকের ধারণা হয়ে গেছে, সহিহ আকিদা মানেই সালাফি আকিদা। এর বাইরে কোনো সহিহ আকিদা হতে পারে না। অবশ্য সালাফি ধারার অনেক আলিমও বিষয়টাকে এভাবেই প্রচার করে থাকেন। তারা নিজেদের হকের একমাত্র ডিলার ঘোষণা করে বাকি সবাইকে বিভিন্ন ট্যাগ লাগিয়ে আহলুস সুন্নাহর কাতার থেকেই খারিজ করে দেন। এসবই তাদের ইনসাফহীনতার কারণে ঘটে থাকে।

মাতুরিদি, আশআরি বা সালাফি মাযহাব; একইভাবে হানাফি, শাফেয়ি, হাম্বলি ও মালেকি মাযহাব – এগুলো উম্মাহর ঐক্যের কেন্দ্রবিন্দু নয়। এগুলোকে কেন্দ্র করে না কখনো ঐক্য সম্ভব আর না এমন ঐক্যের প্রয়োজন আছে। তাওহিদের উসুলি বিষয়কে কেন্দ্র করে আল-ওয়ালা না গড়ে অনেকে এই সিফাতের আকিদার শাখাগত কোনো অংশের ভিত্তিতে আল-ওয়ালা গড়ে। ফলাফল স্পষ্ট। তারা দেওবন্দিদের সদলবলে হকের কাতার থেকে খারিজ করে দেয় এবং তাদের প্রতি আল-বারা লালন করে। আমি নিজেও দেখেছি, সেই ধারার কোনো কোনো ব্যক্তি আল-বারা লালনে ভালোরকম ধৈর্যেরও পরিচয় দিয়ে থাকেন। দুজনকে তো এমনো পেয়েছি, যাদের ফিতনা থেকে বাঁচার জন্য তাদের ব্লকলিস্টে রাখার পরও কেমন যেন তারা সর্বদা ওত পেতে থাকেন। পান থেকে চুন খসার আগেই বিশ্রী ভাষায় পোস্ট করে বসেন। যা তিলও নয়, তাকে তাল বানিয়ে দেখান। সেই পোস্টগুলো অবশ্য খুব বেশি স্থায়ী হয় না। প্রথমে তাদের পক্ষীয় মানুষেরা উল্লাসধ্বনি দিতে থাকেন। কিন্তু অনেক ইনসাফপছন্দ ভাই আপত্তিও করেন। আপত্তির পরিমাণ যখন খুব বেশি বেড়ে যায়, তখন পোস্ট কিছু সময়ের মধ্যেই অদৃশ্য হয়ে যায়।

যাহোক, আমি মাতুরিদি। সিফাতের মাসআলায় সাধারণভাবে তাফউইদ করি। এ কথা বলতে কোনো দ্বিধা নেই। দ্বিধা থাকার কথাও নয়। যার দ্বিধা রয়েছে, সে হয়তো ভীরু কিংবা কপট। নিজের আকিদা লুকানোর কিছু নেই। যেহেতু আমি মাতুরিদি, তাই সালাফিরা আমার আকিদাকে সহিহ আকিদা বলবে না। এটাই স্বাভাবিক। যেহেতু তারা সহিহ’র একমাত্র স্বঘোষিত ডিলার! তারা তাদের অনুসারীদের আমার ব্যাপারে সময়ে সময়ে সতর্কও করবে। আমাকে নিয়ে বিভিন্ন সময়ে পোস্ট দেবে এবং তাতে মূল প্রসঙ্গে কম কথা বলে অধিক পরিমাণে ব্যক্তিবিদ্বেষের প্রকাশও ঘটাবে। এগুলো স্বাভাবিক এবং গা সওয়া।

অপরদিকে আমি সালাফিদের ব্যাপারে সর্বদাই উদার থাকার চেষ্টা করি। কখনো এর ব্যতিক্রম কিছু প্রকাশ পেলে তা ছিল অসতর্কতা কিংবা অন্য কোনো অপারগতা। আমার কাছে একজন মুমিনের সবচে বড় পরিচয় সে মুমিন। সে কোন মাযহাবের বা কোন মতাদর্শের, তা আমার কাছে নিতান্তই গৌণ বিষয়। প্রত্যেক মুমিনের প্রতি আল-ওয়ালা লালন করি। তাওহিদে বিশ্বাসী প্রতিটি মানুষকে আল্লাহর জন্য ভালোবাসি। হ্যাঁ, যাদের ব্যাপারে উম্মাহকে সতর্ক করার প্রয়োজন বা যাদের প্রকাশ্য নাসিহাহ দেওয়ার প্রয়োজন, দীনি দায়িত্বের খাতিরেই তা করি। আর আমি বিশ্বাস করি, অসংখ্য মতপার্থক্য নিয়েও যদি সাহাবিরা ঐক্যবদ্ধ থাকতে পারেন, তবে আমরাও পারব।

নাটের গুরুরা সর্বদাই উম্মাহকে পৃথক করতে চেয়েছে। উম্মাহর প্রতাপকে বিনষ্ট করতে চেয়েছে। না বুঝে তাদের ফাঁদে অনেকে পা’ও দিয়েছে। কিন্তু পরিণামে এরা সকলে ব্যর্থই হয়েছে। আমি মনে করি না, এ যুগে কেউ কিতাল করতে চাইলে তাকে মাতুরিদি বা আশআরি মাযহাব ছেড়ে সালাফি হয়ে যেতে হবে। এটা তো হাস্যকর কথা। কিতালের ভিত্তি হবে রুবুবিয়্যাহ, উলুহিয়্যাহ এবং হাকিমিয়্যাহর ওপর। আমি বুঝতে পারি না, ফিতনাক্রান্ত ভাইয়েরা কি সিফাতের ভিত্তিতে কিতাল করতে চান কি না। যদি চান তাহলে তার রূপরেখা কী হবে? তবে কি তারা তামকিন পেলে আশআরি এবং মাতুরিদিদের বিরুদ্ধে কিতাল করবেন? অবশ্য মজার বিষয় হলো, আসমা এবং সিফাত নিয়ে যারা বাড়াবাড়ি করে এবং উম্মাহকে এর ভিত্তিতে আল-ওয়ালা কায়েম করতে বলে, তাদের অধিকাংশজনই সরাসরি কিতালবিরোধী। মাদখালি বা মুরজিয়া। পুরো মুরজিয়া না হলে ইরজার অনেক বৈশিষ্ট্যে বৈশিষ্ট্যবান। তারা উম্মাহকে শুধু আসমা এবং সিফাতের তাওহিদই শেখায়। তাওহিদে আমলির কোনো প্রয়োগ তাদের মধ্যে পাওয়া যায় না।

যার গলার জোর বেশি, দিনশেষে তারই বিজয়। অনলাইনে আকিদার আলোচনা যা হয়, তার প্রায় ৯৯ ভাগই আসে এক ঘরানা থেকে। সুতরাং অনলাইন থেকে আকিদা শেখার ফলাফলও স্পষ্ট। আকিদা শিখতে তো সমস্যা ছিল না। সমস্যা আকিদার সঙ্গে সঙ্গে ঢুকিয়ে দেওয়া নিন্দনীয় চেতনায়। আকিদার আলোচনা কখনো দূষণীয় নয়। এই আলোচনার কারণে উম্মাহর মধ্যে অনৈক্য আসার কথাও নয়। অনৈক্য আসবে মূল বিষয় বাদ দিয়ে মতবিরোধপূর্ণ বিষয়গুলোকে আল-ওয়ালা ওয়ালা-বারা’র মাপকাঠি বানালে। নিজেকে হকের একমাত্র হকের ডিলার হিসেবে দেখিয়ে বাকি সবাইকে বিভিন্ন ট্যাগ লাগিয়ে লাথি মেরে মেরে হকের কাতার থেকে বের করে দিলে।

পৃথিবীর সব আলোচনা আপনার ভালো লাগবে না। এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু ভিন্ন ঘরানার আলোচনাও যদি প্রামাণিক হয়ে থাকে তাহলে তাদের মুখে লাগাম পরানোর মানসিকতা ভালো নয়। যা ভালো লাগে না, তা এভোয়েড করা যায়। সে ব্যাপারে নীরব থাকা যায়। যেকোনো মতপার্থক্যের কারণে সম্পর্ক ত্যাগ করতে থাকলে একসময় পাশে আর কাউকে পাবেন না। যে আপনাকে ঘৃণা করে, আপনি তাকে ক্ষমা করুন। যে আপনার প্রতি বিদ্বেষ ছড়ায়, আপনি তাকে মাজুর মনে করুন। আর যে আপনাকে ভালোবাসে, আপনি তার সঙ্গে সুসম্পর্ক টিকিয়ে রাখুন।

সফরে রয়েছি। গভীর রাতে শয্যা গ্রহণ করার পূর্বে কয়েকটি কথা ওয়ালে গেঁথে রাখলাম। দিনকয়েকের সফর শেষ করে কিছু বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করার ইচ্ছা আছে। আপাতত শুধু পর্যবেক্ষণ চলুক।

Share This