ফিকহুস সিরাত-১
আমরা প্রতিটি আলোচনাকে দুই ভাগে ভাগ করে উপস্থাপন করবো। প্রথমে আমরা বিশ্লেষণধর্মী উপস্থাপনায় সিরাত তুলে ধরবো। এরপর সেই সিরাতের আলোকে ফিকহ বয়ান করবো। এখানে গুহার ধ্যানমগ্নতা শিরোনামের অধীনে সিরাতের অংশটি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। একই শিরোনামের দ্বিতীয় পর্বে ইন শা আল্লাহ আলোচ্যবিষয়ের ফিকহ সম্পর্কে আলোচনা করা হবে। আল্লাহ তাআলাই সর্বোত্তম তাওফিকদাতা।
যখন রাসুলুল্লাহ সা.-এর আবির্ভাবের সময় ঘনিয়ে আসে তখন তৎকালীন জাতি-সম্প্রদায়গুলোর মধ্যে এই আলোচনা ব্যাপকভাবে বিস্তার লাভ করে যে, আল্লাহ তাআলা অচিরেই শেষ যামানার নবিকে প্রেরণ করবেন। তার আত্মপ্রকাশের সময় অত্যাসন্ন। যে-সকল জাতির কাছে কোনো আসমানি কিতাব ছিলো, তারা তাদের কিতাবের ভবিষ্যদ্বাণীর আলোকে এ বিষয়টি ঠাহর করেছিলো আর যাদের কাছে কোনো কিতাব ছিলো না, তারা বিভিন্ন আলামতের মাধ্যমে বিষয়টি অনুমান করেছিলো।
ইমাম ইবনু ইসহাক রহ. বলেন: ‘ইহুদিদের ধর্মযাজক, খ্রিস্টানদের ধর্মগুরু এবং আরবের গণকরা রাসুলুল্লাহ সা.-এর আবির্ভাবের সময় নিকটবর্তী হলে তার সম্পর্কে আলোচনার ধারাপাত করেছিলো। ইহুদিদের ধর্মযাজক এবং খ্রিস্টানদের ধর্মগুরুরা এজন্য করেছিলো যে, তারা তাদের ধর্মীয় গ্রন্থে তাঁর এবং তাঁর যামানার বিবরণ-বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জেনেছিলো। এ ছাড়াও তাদের নবিরা তাদেরকে নবি সা.-এর আগমনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে গিয়েছিলেন। আর আরবের গণকরা এভাবে অবগত হয়েছিলো যে, দুষ্ট জিনেরা উর্ধ্বাকাশের বিভিন্ন বিষয় চুরি করে শুনে তাদের কাছে খবর পৌঁছাতো। এভাবে গণক নর-নারীদের থেকে তাঁর কিছু কিছু বিষয়ের আলোচনা শোনা যেতো। আরববাসীরা তার দিকে খুব একটা ভ্রূক্ষেপ করতো না। এভাবেই একপর্যায়ে আল্লাহ তাঁকে নবিরূপে পাঠালেন। ইতিপূর্বে তারা যে-সকল বিষয়ের আলোচনা করতো, তা সব তখন বাস্তবেই প্রকাশিত হলো। তখন তারা সবকিছুই চিনে ফেললো।’[1]
ইহুদি-খ্রিস্টানরা যে নবি সা.-এর আগমনবার্তা সম্পর্কে আলোচনা করতো, এর কিছু বিবরণ সিরাত এবং ইতিহাসের গ্রন্থাদিতে সংরক্ষিত রয়েছে। যেমন: মদিনার একজন ইহুদি মদিনাবাসীদের সামনে পুনরুত্থান, পাপ-পুণ্যের হিসাব, মিজান (আমল মাপার দাঁড়িপাল্লা), জান্নাত এবং জাহান্নাম সম্পর্কে আলোচনা করেছিলো। ইহুদিসমাজের কাছে এ বিষয়গুলো অন্যরকম ঠেকলো। তারা চরম বিরক্তির সাথে এগুলোকে অস্বীকার করলো। তারা এর স্বপক্ষে নিদর্শন জানতে চাইলো। তখন সেই ইহুদি ব্যক্তি তাদের সামনে মক্কা এবং ইয়ামানের দিকে ইঙ্গিত করে বলেছিলো, এ দিকের দেশগুলো থেকে প্রেরিত নবিই হলেন এর সুস্পষ্ট নিদর্শন।[2]
রাসুলুল্লাহ সা.-এর আবির্ভাবের কয়েক বছর পূর্বে ইবনুল হাইবান নামক এক ইহুদি শাম থেকে মদিনায় আগমন করে সেখানকার ইহুদিদের উদ্দেশে বলেছিলো, আমার এখানে আগমনের উদ্দেশ্য হলো এ ভূমিতে প্রেরিত সর্বশেষ নবির সান্নিধ্য লাভ করা এবং তাঁর অনুসরণের সৌভাগ্য অর্জন করা। সে পুরো ইহুদিসমাজকে সেই নবির অনুসরণের দিকে দাওয়াত দিয়েছিলো।[3]
সালমান ফারিসি রা.-এর ঘটনা তো সুবিদিত। তিনি সত্যের সন্ধানে সেই সুদূর পারস্য থেকে হিজরত করেছিলেন। অবশেষে খ্রিস্টান ধর্মগুরু তাকে মদিনার পথে দেখিয়েছিলো।[4]
রাসুলুল্লাহ সা.-এর নবুওয়াতপ্রাপ্তির সময় ঘনিয়ে আসলে ক্রমশ তাঁর কাছে একাকিত্ব প্রিয় হয়ে উঠতে থাকে। সমাজের কোলাহল ছেড়ে তিনি জাবালে নুরের হেরা গুহায় ধ্যানমগ্নতা অবলম্বন করতে থাকেন। ইমাম ইবনু হিশাম রহ. বলেন: ‘আল্লাহ তাআলা তাঁর কাছে নির্জনতাকে প্রিয় করে তুলেন। ফলে একাকী নির্জনবাস অপেক্ষা অন্য কিছু তাঁর কাছে আর অধিক পছন্দনীয় ছিলো না।’[5] সহিহ বুখারির হাদিসে বিবৃত হয়েছে: ‘এরপর তাঁর কাছে নির্জনতা প্রিয় হয়ে পড়ে এবং তিনি হেরা গুহায় নির্জনে থাকতেন। আপন পরিবারের কাছে ফিরে আসা এবং কিছু খাদ্যসামগ্রী সঙ্গে নিয়ে যাওয়া—এভাবে সেখানে তিনি একাধারে বেশ কয়েক রাত ইবাদতে নিমগ্ন থাকতেন। তারপর খাদিজা রা.-এর কাছে ফিরে এসে আবার অনুরূপ সময়ের জন্য কিছু খাদ্যসামগ্রী নিয়ে যেতেন। এমনিভাবে হেরা গুহায় অবস্থানকালে একদিন তাঁর কাছে সত্য (ওহি) এলো।’[6]
রাসুলুল্লাহ সা. গুহার ধ্যানমগ্নতার সময়ে কী ধরনের ইবাদত করতেন—এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানা যায় না। এ ব্যাপারে আলিমগণের অভিমত নিচে উল্লেখিত হলো—
ক. আল্লামা যুরকানি শারহুল মাওয়াহিব গ্রন্থে বলেন: ‘হেরা গুহায় রাসুলুল্লাহ সা.-এর ইবাদতের বিবরণ উল্লেখিত হয়েছে—এমন সুস্পষ্ট কোনো বর্ণনা পাওয়া যায়নি। তাই সম্ভাবনা রয়েছে যে, শুধু নির্জনে অবস্থানের ওপরই ‘ইবাদত’ শব্দ প্রয়োগ করা হয়েছে। কারণ, জনমানুষের থেকে পৃথক হয়ে—বিশেষত যারা বাতিলের ওপর রয়েছে—নির্জনে অবস্থান করা, এক বিশেষ ধরনের ইবাদত। ইবনুল মুরাবিত রহ. এবং অন্যান্যদের থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি চিন্তা-ফিকিরের মাধ্যমে ইবাদত করতেন। এটাই অধিকাংশ (জুমহুর) আলিমের মত।’[7] ইবনু হাজার রহ.ও একই ধরনের মত প্রদান করেছেন। তিনি এর সাথে আরও বলেন: ইবরাহিম আ.-এর ক্ষেত্রেও এমনটা হয়েছে যে, তিনি নির্জনতা অবলম্বনকেই ইবাদতরূপে গ্রহণ করেছেন। যেমন কুরআনে তাঁর ভাষ্য বর্ণিত হয়েছে: ‘আমি তো আমার প্রতিপালকের দিকে চললাম, তিনি আমাকে পথপ্রদর্শন করবেন।’[8]
খ. ইমাম ইবনু কাসির রহ. বিভিন্ন ধরনের অভিমত উল্লেখ করে যেটাকে প্রাধান্য দিয়েছেন, তা হলো: রাসুলুল্লাহ সা. ইবরাহিম আ.-এর শরিয়াহর আলোকে আমল করতেন। তিনি বলেন: ‘বাস্তবতার সাথে এটাই অধিক সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং দলিলের বিচারে অধিক শক্তিশালী।’[9]
গ. ইমাম গাযালি রহ. এ ব্যাপারে পূর্ববর্তীদের বিভিন্ন অভিমত উল্লেখ করে বলেন: ‘এ সকল বিষয়ই তো যুক্তির নিরিখে সম্ভব। কিন্তু প্রকৃত অবস্থা তো অকাট্যভাবে জানা যায় না। যে বিষয়টি ইবাদতের পন্থার সঙ্গে সম্পৃক্ত সম্পূর্ণ যুক্তির বাইরের একটি বিষয়, তাতে ধারণাভিত্তিক অভিমত প্রদান করার কোনো অর্থ নেই।’[10]
এ ছাড়াও আরও বিভিন্ন ধরনের মত বর্ণিত হয়েছে। সবগুলো সামনে রাখলে মোটামুটি এ সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায়—নবিজি সা. আল্লাহ তাআলার সৃষ্টি এবং নিদর্শন নিয়ে ভাবতেন। এ সকল সৃষ্টির উদ্দেশ্য ও তাৎপর্য সম্পর্কে গভীরভাবে চিন্তা করতেন। পাশাপাশি আল্লাহ তাআলা তাঁর সামনে যে সত্যকে উদ্ভাসিত করতেন তিনি তা গ্রহণ করতেন।[11] ইবরাহিম আ.-এর শরিয়াহর যে বিষয়গুলো যথাযথ এবং সুনিপুণভাবে তাঁর কাছে পৌঁছেছিলো, তিনি সেগুলো পালন করতেন।[12] এর পক্ষে বড় প্রমাণ হলো, তিনি হেরা গুহা থেকে যখনই ফিরতেন, এ ছাড়া অন্যান্য সময়ও, তিনি প্রচুর পরিমাণে বাইতুল্লাহর তাওয়াফ করতেন। বাইতুল্লাহর তাযিমে তার অন্তর ছিলো পরিপূর্ণ। এ ছাড়াও প্রিয়নবি সা. জাহেলি সমাজের করুণ অবস্থা নিয়ে ভাবতেন। তাঁর সমাজের লোকগুলোর মধ্যে কীভাবে মূর্তিপূজা, জুলুম, সাম্প্রদায়িকতা, মিথ্যা, আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা প্রভৃতি মহামারির মতো ছেয়ে গেছে। জাহিলিয়াত কীভাবে তাদের ওপর পূর্ণরূপে প্রভাব বিস্তার করেছে। আর কীভাবেই-বা এ থেকে উত্তরণ সম্ভব। খাদিজা রা.-এর কথায় এ বিষয়টির প্রমাণ মিলে—‘আল্লাহর কসম, আল্লাহ কখনোই আপনাকে অপমানিত করবেন না। আপনি তো আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করেন, সর্বদা সত্য কথা বলেন, অসহায় দুর্বলের দায়িত্ব বহন করেন, নিঃস্বকে সাহায্য করেন, অতিথির আতিথেয়তা করেন এবং দুর্দশাগ্রস্থকে সাহায্য করেন।’[13]
খাদিজা রা. রাসুলুল্লাহ সা.-কে সান্ত্বনাপ্রদানের পরিপ্রেক্ষিতে তার এমন কিছু গুণের কথা উল্লেখ করেন, যা ছিলো তৎকালীন সমাজে বিরল, সমাজবাসীর স্বাভাবিক ধারার থেকে ভিন্ন। এ বৈশিষ্ট্যগুলোর সম্পূর্ণ পরিপন্থী বিষয়গুলো দ্বারা সে যুগ এবং সমাজ ছিলো চিহ্নিত। এমতাবস্থায় রাসুলুল্লাহ সা.-এর এই বিষয়গুলো ছিলো সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র এবং অনন্য বৈশিষ্ট্য। তো যার মধ্যে এত উন্নত গুণ ও বৈশিষ্ট্য একীভূত হয়েছে, নিশ্চয়ই আল্লাহ তাঁকে অপমানিত করবেন না—নবুওয়াতপ্রাপ্তির পূর্বেও রাসুলুল্লাহ সা.-এর ব্যাপারে এই ছিলো খাদিজা রা.-এর ধারণা এবং বিশ্বাস।
রাসুলুল্লাহ সা. গুহায় অবস্থানকালে সমাজের এসব বিষয় নিয়ে ভাবতেন। এ থেকে নিজ সম্প্রদায়কে কীভাবে উত্তরণ করা যায়—সেই পথ খুঁজতেন। তার সমাজের লোকেরা শুধু যে কুকর্মে লিপ্ত ছিলো, তাই-ই নয়। বরং তারা ইবরাহিম আ.-এর শরিয়াহর মধ্যেও পরিবর্তন-বিকৃতি সাধন করেছিলো। এমনকি তারা যে বিষয়টিকে পরম যত্নে আগলে রেখেছিলো—সেই হজের ক্ষেত্রেও তারা ইবরাহিম আ.-এর আদর্শের সম্পূর্ণ পরিপন্থী পন্থাকে গ্রহণ করেছিলো। তিনি ভাবছিলেন, কীভাবে প্রকৃত মিল্লাতে ইবরাহিমকে প্রতিষ্ঠা করা যায়, কীভাবে এ সকল ভ্রান্তি-বিচ্যুতি অপনোদন করা যায়।
কুরাইশরা মনে করতো, অন্যান্য লোকদের ওপর তাদের রয়েছে বিশেষ বৈশিষ্ট্য। তারা বিশেষ পন্থায় হজ পালন করতো। বাইরের লোকেরা নিজেদের সঙ্গে খাবার এনে হারাম এলাকায় খেতে পারতো না। তারা এতে বাধারোপ করতো। বাইরের লোকেরা তাদের নিজেদের কাপড় পরিধান করে বাইতুল্লাহর তাওয়াফ করতে পারতো না। এটা কঠিনভাবে নিষিদ্ধ ছিলো। তাওয়াফ করতে চাইলে ‘হুমুস’ কাপড় পরিধান করতে হতো। হুমুস কুরাইশদের বিশেষ ধরনের কাপড়ের নাম। যদি কেউ হুমুস সংগ্রহ করতে না পারতো, তাহলে তাকে উলঙ্গ হয়ে তাওয়াফ করতে হতো। ‘জন্মদিনের পোশাকে’ সকলের সামনে কা‘বা প্রদক্ষিণ করতে হতো। একান্ত কেউ যদি হারামের বাইরে থেকে আনা নিজের পোশাক পরিধান করে তাওয়াফ করে বসতো, তাহলে তাকে অনিবার্যভাবে সেই পোশাক ফেলে দিতে হতো। সে আর কখনোই তা পরিধান করতে পারতো না।[14]
কুরাইশরা হজের গুরুত্বপূর্ণ দুটি বিধান—আরাফায় অবস্থান এবং সেখান থেকে রওয়ানা হওয়া—কেও অহংবশত পরিহার করেছিলো।[15] অথচ জুবাইর ইবনু মুতইম রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘কসম করে বলছি, নিশ্চয়ই আমি রাসুলুল্লাহ সা.-কে তাঁর প্রতি ওহি নাজিল হওয়ার পূর্বে দেখেছি যে, তিনি অন্যান্য মানুষদের সাথে আরাফায় তাঁর একটি উটের ওপর সওয়ার ছিলেন, যতক্ষণ না তাদের সঙ্গেই সেই স্থান ত্যাগ করেছেন।’
রাসুলুল্লাহ সা. নবুওয়াতপূর্ব সময়ে কুফর, শিরক এবং ইলহাদে ছেয়ে যাওয়া সেই জাহেলি সমাজ, রন্ধ্রে রন্ধ্রে ফিতনায় ভরপুর সেই অন্ধকার সমাজকে ছেড়ে কিছুটা সময় ধ্যানমগ্ন থেকেছেন মহান প্রতিপালকের স্মরণে। লাগাতার কয়েক বছর রমজান মাস পুরোটাই তিনি ধ্যানমগ্ন থেকেছেন হেরা গুহায়। নবুওয়াতপ্রাপ্তির সময় যত ঘনিয়ে আসছিলো, নির্জনতা তাঁর কাছে তত বেশি প্রিয় হয়ে উঠছিলো। এতদূরের পথ মাড়িয়ে, সুউচ্চ পাহাড়ের ওপর চড়ে, একাকী অবগাহন করেছেন খোদায়ি প্রেমের সরোবরে। সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।
সেই নির্জনতায় রাসুলুল্লাহ সা.-এর অন্তর আরও পরিশুদ্ধ হচ্ছিলো, ওহির গুরুদায়িত্ব গ্রহণের জন্য তাঁর মানসজগত প্রস্তুত হচ্ছিলো, তিনি হকের নিকটতম অবস্থানে পৌঁছছিলেন, বাতিল থেকে তাঁর অবস্থান ক্রমশ দূর থেকে দূরবর্তী হচ্ছিলো। ধীরে ধীরে অদৃশ্যের ছায়া তাঁর অন্তরের ওপর প্রতিফলিত হচ্ছিলো। এভাবে ক্রমান্বয়ে অবস্থা এমন হলো যে, তিনি যে স্বপ্নই দেখতেন প্রভাতের আলোর মতো পরিস্ফুট হয়ে তা সামনে আসতো।[16] রাসুলুল্লাহ সা.-এর এই নির্জনতা ও ধ্যানমগ্নতা ছিলো আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে তারবিয়াতের অংশ। তিনি প্রিয়নবি সা.-কে প্রস্তুত করছিলেন সর্বশ্রেষ্ঠ এবং সর্বশেষ নবুওয়াতের মহান দায়িত্ব প্রদানের জন্য।
ধ্যানমগ্নতার এ স্তর তিনি নবুওয়াতের পূর্বে অতিক্রম করেছিলেন। মহান দায়ি তাঁর দাওয়াতি মিশনের প্রস্তুতি হিসাবে নির্জনতা অবলম্বন করেছিলেন। হাঁ, নবুওয়াত লাভের পরও তাঁর নির্জনতা-গ্রহণের আদত বাকি ছিলো। তবে তার রূপ ও পন্থা ছিলো ভিন্ন। তিনি গভীর রাতে নীরবে নিভৃতে নির্জনে একাকী মহান প্রতিপালকের সামনে কিয়ামুল লাইলে (তাহাজ্জুদের সালাতে) দণ্ডায়মান হতেন। কখনো কখনো সারারাত এভাবেই কাটিয়ে দিতেন। তাঁর পা ফুলে যেতো। তিনি এই একাকিত্ব এবং ইবাদাতের মাঝেই খুঁজে পেতেন আত্মার প্রশান্তি।
টীকা
[1] সিরাতু ইবনি হিশাম: ১/২২১
[2] প্রাগুক্ত: ১/২৩২; আলমুসতাদরাক, ইমাম হাকিম: ৩/৪১৭-৪১৮
[3] প্রাগুক্ত: ১/২৩২-২৩৩; আলবিদায়া ওয়ান নিহায়া; ২/৩১০
[4] প্রাগুক্ত: ১/২৩৪
[5] প্রাগুক্ত
[6] সহিহ বুখারি: ৩
[7] শারহুল মাওয়াহিব: ১/২৫৪
[8] সুরা সাফফাত: ৯৯; ফাতহুল বারি: ৮/৭১৭
[9] আলবিদায়া ওয়ান নিহায়া: ৬/৩
[10] আলমুসতাসফা: ১/১৩২
[11] তাফসিরু জুযয়ি ‘আম্মা, ইবনু উসায়মিন: ২৫৬; আসসিরাতুন নাবাবিয়্যাহ, সাদিক উরজুন: ১/২১৬-২১৭
[12] প্রাগুক্ত; মিন মায়িনিস সিরাত: ২৮-২৯
[13] সহিহ বুখারি: ৩
[14] মিন মায়িনিস সিরাত: ২৮-২৯
[15] সুরা বাকারার ১৯৯ নম্বর আয়াতের তাফসির দ্রষ্টব্য
[16] সহিহ বুখারি: ৩