বই : জঙ্গিবাদের উৎস : কওমি মাদরাসা ও একটি পর্যালোচনা

লেখক : ডা. মো. মাহবুবুল হাসান রনি

প্রকাশনী : বইপল্লী

নির্ধারিত মূল্য : ৬০ ৳

প্রথম প্রকাশ : জানুয়ারি ২০১৯

বইটির সূচিপত্র এখানে সংযুক্ত হলো :

অভিমত

বইটির শুরুতে মাওলানা নূরুল ইসলাম ওলিপুরী এবং বাংলাদেশ এদারা বোর্ডের মহাসচিব মাওলানা আব্দুল বছীর (হাফিজাহুল্লাহ)-এর অভিমত সংযুক্ত রয়েছে। মাওলানা ওলিপুরী তার অভিমতে বলেন : ‘আমি পুস্তিকাটি বিভিন্ন অংশ দেখেছি। এতে উল্লেখিত তথ্যগুলোর ভিত্তিতে বলা যায়, পুস্তিকাটি পাঠ করলেই অপপ্রচারকারীদের বিভ্রান্তি থেকে পাঠকের আই ওয়াশ হয়ে যাবে। তাই আমি পুস্তিকাটির বহুল প্রচার কামনা করি।’ মাওলানা আব্দুল বছীর তার অভিমতে লেখেন : জঙ্গিবাদের উৎস নামক পুস্তিকার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দেখার সুযোগ আমার হয়েছে আলহামদুলিল্লাহ। কওমি মাদরাসায় জঙ্গি সৃষ্টি তত্ত্ব ও ইসলামের আলোকে অনবদ্য যে আলোচনা করা হয়েছে তা অত্যন্ত উঁচু পর্যায়ের। এই বইটি এমন একটি অস্ত্র, যা আলেম, তলাবা ও প্রত্যেক মুসলিমের সংগ্রহে থাকা বাধ্যতামূলক বলে আমি মনে করি।’

বই লেখার প্রেরণা

‘আমি কোনো মাদরাসায় পড়ালেখা করিনি। তবে মাঝেমধ্যে পাঞ্জাবি টুপি পরিধান করি। একবার বাড়িতে যাবার পথে আমি সিলেটে হজরত শাহজালাল রহ.-এর মাজারে জুমুআর নামাজ পড়তে যাই। আমার হাতে ছিল একটি ব্যাগ, যাতে আমার কিছু পোশাক ছিল। আমি যখন শাহজালাল মাজার মসজিদে যাই, তখন আমার পরনে পাঞ্জাবি, মাথায় টুপি আর হাতে ব্যাগ দেখে নিরাপত্তাকর্মীরা আমাকে ব্যাপক সার্চ করল। অবশ্যই সন্দেহজনক কিছুই পায়নি; শার্ট, প্যান্ট আর লুঙ্গি ছাড়া। অথচ আমার পাশ দিয়েই আরও অনেকে এমন ব্যাগ নিয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু তাদেরকে এমনভাবে সার্চ করা হয়নি, যেমনটি আমাকে করা হচ্ছিল। এটি প্রশংসনীয় যে, নিরাপত্তারক্ষীরা আগন্তুকদের নিরাপত্তার জন্যই সার্চ করেছিল। কিন্তু তারা আমাকে সার্চ করেছিল মাদরাসার ছাত্র মনে করে। অথচ হাতে ব্যাগ থাকা সত্ত্বেও অন্যদের করেনি। এ ঘটনা আমাকে বাংলাদেশের সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বাস্তবতার সাথে কওমি মাদরাসার আদৌ কোনো সম্পর্ক রয়েছে কি না, তা পর্যালোচনা করতে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছিল।’ [পৃ. ৮৫-৮৬]

কওমি মাদরাসায় জঙ্গি তৈরি হয় না

‘দেশে কিছু বুদ্ধিজীবী আছেন, তারা অকারণেই বলেন, কওমি মাদরাসাগুলোতে জঙ্গি তৈরি হয়। আমি এটা বিশ্বাস করি না। মাদরাসাগুলোতে ইসলামের খুঁটিনাটি বিষয় শিক্ষা দেয়া হয়ে থাকে। মাদরাসার শিক্ষার্থীদের দু-চারজন পথভ্রষ্ট হতেই পারে।’—পুলিশের আইজিপি। সেখানে আরও বক্তৃতা করেন মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসউদ, মাওলানা রুহুল আমিন, মাওলানা দেলোয়ার হোসেন সাইফী, মাওলানা যাইনুল আবেদীন প্রমুখ। [পৃ. ৮৬]

জঙ্গিবাদের পরিচয়

‘জঙ্গিবাদ শব্দটি আভিধানিকভাবে ইতিবাচক হলেও বর্তমানে পারিভাষিকভাবে নিরীহ মানুষকে ধর্মের নামে হত্যা ও নিরীহ মানুষকে বোমাবাজির মাধ্যমে হত্যাকাণ্ডের সাথে সম্পৃক্ততা বোঝাতে ব্যবহৃত হয়।’ [পৃ. ১৭]

‘জঙ্গিবাদের বৈশিষ্ট্য : আদর্শবাদ, অনুপ্রেরণা শক্তি, সঞ্চালক শক্তি, সাংগঠনিক শক্তি, ধর্মনীতি; নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য, সমন্বিত কর্মী, সমন্বিত কর্মকাণ্ড।’ [পৃ. ১৭-১৮]

‘উপরিউক্ত সংজ্ঞা ও বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী পর্যবেক্ষণে পৃথিবীর অনেকে দেশে জঙ্গি সংগঠনের উপস্থিতি লক্ষ করা যায়। যেমন, বাংলাদেশে জেএমবি, হরকাতুল জিহাদ ইত্যাদি।’ [পৃ. ১৮]

জিহাদের পরিচয়

‘জিহাদ সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা থাকা প্রয়োজন। স্বাভাবিকভাবে জিহাদ মানে হলো : প্রচেষ্টা করা, পরিশ্রম করা, উদ্যমী হওয়া। এর মানে এ-ও যে, অসৎ প্রকৃতির বিরুদ্ধে সর্বশক্তি দিয়ে লড়াই করা। যুদ্ধক্ষেত্রে আত্মরক্ষা করাকেও জিহাদ বলা হয়।… এককথায় জিহাদ মানে হলো, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ, জুলুম নির্যাতন, অন্যায় ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে লড়াই করা। জিহাদের বিভিন্ন স্তর রয়েছে। স্থান, কাল ও পাত্রভেদে জিহাদ জবান দ্বারা, লিখনীর দ্বারা, অস্ত্রের দ্বারা এবং নফসের বিরুদ্ধে জিহাদ যিকিরের দ্বারাও হতে পারে।’ [পৃ. ৭২]

‘কোনো মুসলমানের জন্য এটাও উচিৎ নয় যে, সে নিরীহ মানুষ হত্যা, গুপ্ত হত্যা, সুস্পষ্ট জিহাদ ঘোষণা ছাড়া বোমা বিস্ফোরণ ইত্যাদি সমর্থন করবে।’ [পৃ. ৭৩]

পর্যালোচনা :

লেখক জিহাদ সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা দেয়ার চেষ্টা করেছেন। আমরা তার কথাকে ছয় ভাগে বিভক্ত করে বিশ্লেষণ করতে পারি—

(ক) ‘জিহাদ মানে প্রচেষ্টা করা, পরিশ্রম করা, উদ্যমী হওয়া।’ সুতরাং যারা প্রচেষ্টা করে, জীবনে পরিশ্রম করে এবং সফলতা অর্জনের জন্য উদ্যমী হয়, তারা সবাই মুজাহিদ।

(খ) জিহাদের আরেকটি অর্থ হলো, ‘অসৎ প্রকৃতির বিরুদ্ধে সর্বশক্তি দিয়ে লড়াই করা।’ তার মানে নিজের সর্বশক্তি ব্যয় করে নফসের দাবি উপেক্ষা করার নাম হলো জিহাদ। সুতরাং আপনার যদি মেয়েদের সুঢৌল বক্ষের দিকে তাকাতে ইচ্ছা করে, কিন্তু আপনি নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে সেদিকে দৃষ্টিপাত না করেন, তাহলে আপনি একজন মুজাহিদ।

(গ) জিহাদের আরেকটি অর্থ হলো, ‘যুদ্ধক্ষেত্রে আত্মরক্ষা করা।’ এ থেকে অনুমিত হয় যে, ইসলামে আক্রমণাত্মক জিহাদ বলতে কিছু নেই! জিহাদ মানেই হলো প্রতিরোধমূলক লড়াই। তাও ঘরে বসে প্রতিরোধ করলে হবে না। যুদ্ধক্ষেত্রে স্রেফ আত্মরক্ষা করার নাম হলো জিহাদ। যে রকম জিহাদ সকল বন্য পশুই করে থাকে। কুকুর, শূকর, বিড়াল কেউই যে জিহাদ থেকে পিছিয়ে থাকে না।

(ঘ) ‘এককথায় জিহাদ মানে হলো, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ, জুলুম নির্যাতন, অন্যায় ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে লড়াই করা।’ লেখক নিজেই জঙ্গিগোষ্ঠীর উদাহরণ পূর্বে উল্লেখ করেছেন। সুতরাং যারা সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন, হরকাতুল জিহাদ ইত্যাদিকে দমন করেছেন, তারাই মুজাহিদ। এককথায় তাদের লড়াইকেই জিহাদ বলা হয়। এ বিবেচনায় বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচে বড় মুজাহিদ দলের নাম বিএনপি। কারণ, তারাই এদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে।

(ঙ) ‘জিহাদের বিভিন্ন স্তর রয়েছে। স্থান, কাল ও পাত্রভেদে জিহাদ জবান দ্বারা, লিখনীর দ্বারা, অস্ত্রের দ্বারা এবং নফসের বিরুদ্ধে জিহাদ যিকিরের দ্বারাও হতে পারে।’ জিহাদের এই স্তরগুলো কবে আবিষ্কার হলো? হাদিস বা ফিকহের কোনো কিতাবে জিহাদ অধ্যায়ে কেন জিকিরের দ্বারা নফসের জিহাদের আলোচনা উল্লেখিত হয়নি? তারা কি এ বিষয়টা মোটেও বোঝেননি? এ বিবেচনায় তো প্রত্যেক পিরের মুরিদরা মুজাহিদ। কিন্তু এরকম হাইব্রিড মুজাহিদদের অস্তিত্ব কি আল্লাহর রাসুল ﷺ বা সাহাবিদের যুগে মোটেও ছিল? কোত্থেকে এর আবির্ভাব ঘটল? আর নফসের জিহাদ বলতে কী বোঝায়? নফস মানেই কি মন্দ? আমার নফস চাচ্ছে স্ত্রী সহবাস করতে, আমি যদি তা না করে জিকির করতে বসি, তাহলে কি আমি একজন মুজাহিদ?

(চ) ‘কোনো মুসলমানের জন্য এটাও উচিৎ নয় যে, সে নিরীহ মানুষ হত্যা, গুপ্ত হত্যা, সুস্পষ্ট জিহাদ ঘোষণা ছাড়া বোমা বিস্ফোরণ ইত্যাদি সমর্থন করবে।’ কে নিরীহ আর কে নিরীহ না—এই সমাধান কে করবে? পশ্চিমা বিশ্ব, মানবমস্তিষ্ক নাকি শরিয়াহ? ইসলামি ফিকহের গ্রন্থাদিতে সুস্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে, কে নিরীহ আর কে হত্যাযোগ্য। এক জায়গার পরিভাষা আরেক জায়গায় প্রয়োগ করা সমীচীন নয়। ‘নিরীহ’ শব্দটি নেব ইসলামি ফিকহ থেকে, আর তার ব্যাখ্যা নেব পশ্চিমা বিশ্ব থেকে—এটা জায়িয নেই এবং তা ইনসাফও নয়। আর ‘গুপ্তহত্যা’ মাত্রই কেন অসমর্থনযোগ্য হবে? সব ‘গুপ্তহত্যা’ই কি পাপ? যদি এটা পাপই হয়, তাহলে রাসুলুল্লাহ ﷺ কীভাবে এই পাপ (!) করলেন? তিনি তো মাসুম। তিনি কোনো পাপ করেন না। তাহলে রাফে ইবনু আবিল হাকিক প্রমুখকে তিনি কীভাবে গুপ্তহত্যা করালেন?

কয়েকটি জঙ্গি সংগঠন

‘আনসারুল্লাহ বাংলা টিম ২০১৩ সালে… অন্যতম আলোচিত জঙ্গি সংগঠনে পরিণত হয়। এই সংগঠনটি ২০০৭ সালে বাংলাদেশের নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে গঠিত হয়। এর ধর্মীয় গুরু মুফতি জসিম উদ্দিন রহমানি। এই সংগঠনটির প্রধান ও ধর্মীয় গুরু মুফতি জসিম উদ্দিন রহমানি… মারকাজুল উলুম আল ইসলামিয়া ঢাকা প্রতিষ্ঠা করেন। বিভিন্ন কওমি ও আহলে হাদিস শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়ন করলেও মূলত তিনি মূলধারার কওমি মাদরাসা বিরোধী আদর্শ লালন করেন। উগ্রপন্থার সাথে জড়িত থাকার কারণে তাকে মারকাজুল উলুম আল ইসলামিয়া মাদরাসা বসিলা মুহাম্মাদপুর থেকে বহিষ্কার করা হয়।’ [পৃ. ৩৭-৩৮]

পর্যালোচনা :

লেখক এখানে কিছু বিষয় গুলিয়ে ফেলেছেন বলে আমার মনে হয়েছে। যেমন, তিনি দেশে থাকা এত জঙ্গি সংগঠন সম্পর্কে আলোচনা করলেন। হোলি আর্টিজানের ঘটনাও উল্লেখ করলেন। কিন্তু আইসিস/আইএস-এর নাম পুরো বইয়ের কোথাও আমার চোখে পড়েনি। এই এড়িয়ে যাওয়ার বিষয়টি কি ইচ্ছাকৃত হয়েছে নাকি অনিচ্ছাকৃত, তা আমার জানা নেই। স্বাভাবিক বিবেচনায় তাদের নাম তো প্রথম দিকে থাকার কথা ছিল। কিন্তু একাধিক অপরিচিত জঙ্গি সংগঠনের নাম উল্লেখ করলেও এ বিষয়টির ক্ষেত্রে তাকে ভিন্ন আচরণকারীরূপে দেখা গিয়েছে।

আনসারুল্লাহ বাংলা টিম আসলে কারা? আমি যতটুকু জানি, এটা কোনো জঙ্গি সংগঠন নয়; বরং এটা কেবলই একটা অনুবাদক টিম, যারা বিভিন্ন বইপত্র অনুবাদ করে অনলাইনে প্রচার করত। পরবর্তীতে এরা বিলুপ্ত হয়ে যায়। তো বিষয়টা যদি এরূপই হয়, তাহলে ২০১৩ তে তারা আবার আক্রমণ পরিচালনা করবে কীভাবে? নাকি তিনি আনসার আল ইসলাম এবং আনসারুল্লাহ বাংলা টিমকে গুলিয়ে ফেললেন? আর আনসার আল ইসলামও যদি ধরা হয়, তাহলে এর প্রধান কি কখনো রহমানি ছিলেন? এমনটা তো কখনো মিডিয়ায় শোনা যায়নি।

‘রহমানি মূলধারার কওমি মাদরাসা বিরোধী আদর্শ লালন করতেন’ বলে তিনি কী বোঝাতে চেয়েছেন, তাও স্পষ্ট নয়। হ্যাঁ, লা মাজহাবিদের কিছু প্রভাব তার ওপর ছিল। তার বিভিন্ন আলোচনা ও লেখায় এর প্রকাশ ঘটেছে। কিন্তু এখানে তো সেই বিষয়টি মিন করা হয়েছে বলে মনে হচ্ছে না। তাহলে মূলধারার কওমি মাদরাসা বিরোধী কী আদর্শ তিনি লালন করতেন এবং কবে থেকে করতেন, তা স্পষ্ট হওয়া প্রয়োজন। তিনি দীর্ঘকাল জামিয়া রহমানিয়ার শিক্ষক ছিলেন—এ বিষয়টি লেখক এড়িয়ে গেছেন। তিনি অনেক কওমি মাদরাসার মাহফিলের বক্তা থাকতেন—মূলধারার কওমি মাদরাসা আদর্শ বিরোধী হলে এটা কীভাবে সম্ভব?

‘উগ্রপন্থার সঙ্গে জড়িত থাকার কারণে তাকে বহিষ্কার করা হয়’—এখানে ‘উগ্রপন্থা’ দ্বারা কী উদ্দেশ্য? তিনি কি খারেজি বা তাকফিরি ছিলেন? যদি তা না হয়, তাহলে এটা তো মিথ্যাচার বৈ কিছু হলো না। বাস্তবে যদি তাকে বহিষ্কার করা হয়ে থাকে, তাহলে এটা তো স্বাভাবিক কিতালি চেতনার কারণেও হতে পারে। প্রতিষ্ঠান তার নিরাপত্তার বিবেচনায় প্রায়শই এরূপ সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে। এখানে অস্পষ্টতার আশ্রয় নেওয়া হয়েছে। এর কারণ বোধগম্য নয়।

ওসামা কোন কওমি মাদরাসার ছাত্র ছিল?

‘৯/১১ এর পর পশ্চিমা বিশ্বের ইসলাম ও মাদরাসাবিরোধী অবস্থান পৃথিবীর সামনে সুস্পষ্ট হয়। যেই ৯/১১ এর টুইন টাওয়ারে হামলার পর পশ্চিমা বিশ্ব কওমি মাদরাসার বিরুদ্ধে আদাজল খেয়ে লেগেছে। এবার টুইন টাওয়ার হামলার কথা বিবেচনা করুন। বিশ্বে মুসলিম এবং অনেক পশ্চিমা পন্ডিতদের অভিমত হচ্ছে, টুইন টাওয়ারে হামলা হলো আমেরিকার নিজস্ব একটি সাজানো নাটক। তবে আমেরিকার সরকারের ভাষ্য হলো, এ হামলার ঘটনা ঘটিয়েছেন ওসামা বিন লাদেন। আমরা সত্যিকার অর্থেই জানি না যে, টুইন টাওয়ারে হামলা কে করেছে, আমেরিকা না ওসামা বিন লাদেন? তবে সামান্য সময়ের জন্য যদি আমরা পশ্চিমা মিডিয়ার সাথে তর্কের খাতিরে একমত হই যে, ওসামা বিন লাদেনই সত্যিকার অর্থে টুইন টাওয়ারে হামলা চালিয়েছে, তাহলে পশ্চিমা বিশ্ব ও তাদের দোশররা আমাদেরকে বলুন, ওসামা বিন লাদেন পৃথিবীর কোন কওমি মাদরাসা থেকে ইসলামি শিক্ষার ওপর উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করেছেন? ওসামা বিন লাদেন কি কোনো কওমি মাদরাসা থেকে শিক্ষা অর্জন করেছেন?’ [পৃ. ৬৩]

পর্যালোচনা :

‘আমরা সত্যিকার অর্থেই জানি না যে, টুইন টাওয়ারে হামলা কে করেছে, আমেরিকা না ওসামা বিন লাদেন?’ কেন জানেন না? এত স্পষ্ট একটা বিষয় না জেনে এ বিষয়ে কলম ধরাই তো সংগত হয়নি? ‘আমেরিকার সরকারের ভাষ্য হলো, এ হামলার ঘটনা ঘটিয়েছেন ওসামা বিন লাদেন।’ আরে, আমেরিকা সরকারের ভাষ্য লাগবে কেন, খোদ ওসামাই তো স্পষ্ট বিবৃতি দিয়ে এই হামলার দায় স্বীকার করেছে। সুতরাং ঘটনার মোড় অন্যদিকে নেওয়ার দরকার কী?

‘বিশ্বে মুসলিম এবং অনেক পশ্চিমা পন্ডিতদের অভিমত হচ্ছে, টুইন টাওয়ারে হামলা হলো আমেরিকার নিজস্ব একটি সাজানো নাটক।’ বিশ্বের সব মুসলিম এত বোকা হয়ে গেল কবে থেকে? আর পশ্চিমা যেসব পন্ডিত এই হামলার নায়ক আমেরিকাকেই দেখাতে চায়, তারা হয়তো মূর্খ, নয়তো পৃথিবীর সামনে থেকে ওসামাদের শক্তি আড়াল করে রাখতে চায়। তাছাড়া এটা যদি সাজানো নাটকই হয়, তাহলে একইদিনে পেন্টাগনে হামলা কারা চালিয়েছিল? সেটাও কি আমেরিকা নিজেই করেছিল? তারপর আবার হোয়াইট হাউজ অভিমুখে এয়ার স্ট্রাইক করার জন্য কারা যাচ্ছিল? মাঝপথে ক্রাশ না হলে হোয়াইট হাউজ ধ্বংসের দায়ও কি আমেরিকার কাঁধেই চাপত?

‘৯/১১ এর পর পশ্চিমা বিশ্বের ইসলাম ও মাদরাসাবিরোধী অবস্থান পৃথিবীর সামনে সুস্পষ্ট হয়।’ এগুলো বিভ্রান্তিকর তথ্য ছাড়া আর কী? ৯/১১ এর বহুকাল আগেই আমেরিকার ইসলামবিরোধী অবস্থান পৃথিবীর সামনে সুস্পষ্ট হয়েছিল। এর শত প্রমাণ এখানে হাজির করা যাবে। সুতরাং এসব কথা আমেরিকার ইমেজ পরিশুদ্ধি ছাড়া আর কিছু নয়।

কওমি মাদরাসায় পড়েনি বলেই নিজেদের ইমেজ রক্ষা করার জন্য ওসামা’কে আলাদা করে দেয়া কোন ধরনের ইনসাফ? পৃথিবীর সব কওমি মাদরাসার অধিকাংশ ছাত্র ও শিক্ষক গত এক যুগ আগেও ভালোবাসার সঙ্গে ওসামা’র নাম উচ্চারণ করত। বাংলাদেশের খতিবে আজম হাবিবুল্লাহ মিসবাহ রহ. তাকে এই উম্মাহর ইমাম ও মহান বীর হিসেবে মাহফিলগুলোতে প্রকাশ্যে উপস্থাপন করত। সুতরাং বইয়ের এই উপস্থাপনা মোটেও সংগত হয়নি। এর পরের পৃষ্ঠায় তো আওলাকি, তারেক মেহান্না প্রমুখদের ক্ষেত্রেও একই কাজ করা হয়েছে।

আফগান জিহাদ ও কওমি মাদরাসা

‘হাটহাজারী মাদরাসা কখনো নিজে আফগানিস্তানে জিহাদের জন্য মুজাহিদ সংগ্রহে অংশগ্রহণ করেনি। এই মাদরাসার শিক্ষা সমাপ্তকারী কিছু ছাত্র উচ্চ শিক্ষা অর্জন করতে গিয়ে আফগানিস্তানে জিহাদে অংশগ্রহণ করে বলে আমাদের মাদরাসাকে বলা হয় জঙ্গিবাদের প্রজননকেন্দ্র। খুব অল্প সময়ের জন্য তর্কের খাতিরে এটি মেনে নিয়ে চলুন সামনের দিকে অগ্রসর হই।’ [পৃ. ৬২]

পর্যালোচনা :

তর্কের খাতিরে মানবেন কেন? বাস্তবে মেনে নিলেই তো হয়। প্রেসিডেন্ট এরশাদের সময়ে আমেরিকার প্রত্যক্ষ মদদে সারা পৃথিবী থেকে অনেকেই আফগানের লড়াইয়ে অংশগ্রহণ করেছিল। আমেরিকার মদদে লড়াই করতে পেরে মুসলিমরা খুশি হয়ে অনেকেই নিজেদের নামের শেষে ‘জিহাদি’ অভিধা যুক্ত করেছিল। সে সময় এটা বড় গর্বের বিষয় হিসেবে বিবেচনা করা হতো। আফগানের লড়াইয়ে অংশগ্রহণের কারণে জঙ্গি ট্যাগ খাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিলো আর সেই ট্যাগ থেকে বাঁচার জন্য আপনারা সেই লড়াই থেকে নিজেদের সম্পর্কমুক্ত ঘোষণা করলেন—এটা তো হাস্যকর। কারণ, আপনাদের বর্ণিত সংজ্ঞা অনুসারেও তো আফগান লড়াইকে কোনোভাবেই জঙ্গিবাদ বলা যায় না। আর যদি এর ভিত্তিতে আপনাদের জঙ্গি বলা হয়েই থাকে, তাহলে তো স্পষ্ট বুঝে নেওয়া দরকার ছিল, জঙ্গি শব্দ দ্বারা ওরা আদতে কী মিন করে। এরপরও কেন নিজেদের ইমেজ রক্ষার জন্য এত প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন? মনে পড়ে গেল ইমাম শাফেয়ির সেই কবিতা : ‘মুহাম্মাদ ﷺ-এর পরিজনকে ভালোবাসা যদি রাফেজি মতবাদ হয়ে থাকে, তাহলে জিন ও ইনসান সাক্ষী থাকুক যে, আমি একজন রাফেজি।’ আফগান জিহাদে আপনারা অংশগ্রহণ করেছেন এবং সেক্ষেত্রে শুধু প্রাতিষ্ঠানিক সাপোর্টই নয়; বরং রাষ্ট্রীয় সাপোর্ট ছিল—এটাই বাস্তব কথা। নিজেদেরকে জঙ্গি ট্যাগ থেকে মুক্ত রাখার জন্য আখের আগ্রাসী শত্রুর বিরুদ্ধে মাজলুমের লড়াইকেও জঙ্গিবাদ হিসেবে মেনে নিতে কেন রাজি হয়ে যাচ্ছেন?

সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদের সম্ভাব্য কারণ

‘পশ্চিমা বিশ্ব, বিশেষ করে আমেরিকা ও তার মিত্রবাহিনী ক্রমাগত মুসলিম দেশগুলোকে টার্গেট করে বিভিন্ন আক্রমণ পরিচালনা করেছে এবং ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে যত ধরনের ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার করার উপায় আছে, তা তারা যথানিময়েই করে যাচ্ছে। ফলে সারা বিশ্বের মুসলমানদের মধ্যে স্বাভাবিকভাবেই এ ধারণা বিস্তার লাভ করেছে যে, পশ্চিমা বিশ্বের মুসলমানদের বিরুদ্ধে অবস্থান সুস্পষ্ট এবং পশ্চিমা বিশ্বের এ অবস্থানই সবচেয়ে বেশি দায়ী সারা বিশ্বে জঙ্গিবাদের উত্থানের জন্য।’ [পৃ. ৭১]

এ লাইনগুলো পড়লে ‘জঙ্গিবাদ’ শব্দের অর্থ বুঝতে ভালোই কষ্ট হয়। এখানে এসে লেখকের উদ্দেশিত অর্থ আর ইসলামবিদ্বেষীদের উদ্দেশিত অর্থের মধ্যে পার্থক্য খুঁজে পাওয়া দুষ্কর হয়ে দাঁড়ায়। 

‘অনেক সময় সরকার এমন কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে থাকেন, যেগুলো ইসলামের বিরুদ্ধে যায়। আবার সরকারের বিভিন্ন ব্যক্তিত্বের ইসলামবিরোধী বিভিন্ন বক্তব্য ও কাজ দেশে জঙ্গিবাদের বিস্তারে সহায়তা করে থাকে। এসকল ক্ষেত্রে উলামায়ে কেরাম নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন এবং সমঝোতার মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা করে থাকেন। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, অনেক ইসলামবিদ্বেষী ইসলামের ওপর আক্রমণকারী ব্যক্তিদের সরকার কর্তৃক শাস্তির আওতাভুক্ত না করায় পরিবেশ আরও ঘোলাটে হয়ে যায় এবং অনেকেই আবেগের সাথে সন্ত্রাস এবং জঙ্গিবাদের সাথে জড়িয়ে পড়ে।’ [পৃ. ৭০]

নিয়মতান্ত্রিক গণতান্ত্রিক আন্দোলন এবং সবক্ষেত্রে সমঝোতাই কি তবে আলিমগণের একমাত্র আদর্শ! আর শাতিমে রাসুল প্রমুখদের ব্যাপারে শক্ত অবস্থানই সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ?

দ্বৈতনীতির উদাহরণ

‘হিজবুত তাহরির বাংলাদেশ ও ভারতের সরকারের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি প্রচারে লিপ্ত। এই সংগঠনটির মাধ্যমে বাংলাদেশে উল্লেখযোগ্য পর্যায়ের কোনো নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড সংঘটিত হওয়ার কথা খুঁজে পাওয়া যায় না।… জঙ্গি সংগঠনের নেতৃবৃন্দ বা সদস্যরা কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত থাকার কারণে যদি ওই প্রতিষ্ঠানকে জঙ্গিবাদের প্রজননকেন্দ্র বলে মেনে নিতে হয়, তাহলে নিঃসন্দেহে আমাদেরকে বলতে হবে যে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালত হলো হিজবুত তাহরিরের প্রজননকেন্দ্র। এখন প্রশণ হলো, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কি এই দাবি মেনে নেবে? [পৃ. ৩৪-৩৫]

‘হরকাতুল জিহাদ বাংলাদেশ। এই সংগঠনটি বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৯২ সালে। এর প্রতিষ্ঠার পেছনে কারা কাজ করেছিল, তাদের নাম সন্ত্রাসের ওপর বিভিন্ন ওয়েবসাইট থেকে জানা গেলেও তাদের প্রতিষ্ঠানিক শীক্ষার ব্যাপারে কোনো আলোচনা পাওয়া যায় না। আর তা গুরুত্বপূর্ণও নয়। কেননা প্রতিষ্ঠার পর থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত এই সংগঠনটির কোনো নাশকতামূলক আক্রমণের কথা শোনা যায় না। তবে যখন এই সংগঠনটির আমির হিসেবে মুফতি আব্দুল হান্নান নিযুক্ত হন, সে সময় থেকে বিভিন্ন আক্রমণের খবর পাওয়া যায়।… তবে আব্দুল হান্নান নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন এবং তিনি আদালতে উল্লেখ করেন, তাকে বিভিন্ন সময় মোট ৩৬৯ দিন রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন চালিয়ে তার থেকে জোরপূর্বক স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নেয়া হয়।’ [পৃ. ৩১]

পর্যালোচনা :

হরকাতের প্রতিষ্ঠাতাদের ব্যাকগ্রাউন্ড সেসব ওয়েবসাইটে না থাকলেও মোটামুটি সকলেরই জানা রয়েছে। কওমি মাদরাসাগুলোর সঙ্গে এক যুগেরও বেশি সময়ব্যাপী হরকতের সংশ্লিষ্টতা এক দিবাসত্য। হরকতের নেতাকর্মীদের অধিকাংশই ছিল কওমি ব্যাকগ্রাউন্ডের। ৯৯ পর্যন্ত কোনো নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড না থাকায় যদি কওমি মাদরাসার দিকে প্রশ্ন ছোড়া না যায়, তাহলে তো একই যুক্তিতে হিজবুত তাহরিরের কিছু সদস্যের সঙ্গে ঢাকা ভার্সিটির সংশ্লিষ্টতা থাকার পরও তার উদ্দেশেও প্রশ্ন ছোড়ার সুযোগ না থাকা উচিৎ, যেহেতু তারাও কোনো নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড ঘটায়নি। তথাপি হরকত যে সৃষ্টিলগ্ন থেকে বার্মা স্বাধীন করার জন্য লড়াই করার চেষ্টা করেছে, এ বিষয়টিও এখানে আড়াল করা হয়েছে। আসলে এভাবে লুকোচুরি করে নিজেদের ইমেজ কখনো ঠিক রাখা যায় না। গবেষণা উপস্থাপন করলে বস্তুনিষ্ঠ গবেষণার মতোই তা উপস্থাপন করা উচিৎ। আর মুফতি আব্দুল হান্নান কি গোটা হরকাতের আমির হয়েছিল—বাস্তবতা তো বোধ হয় এমন নয়। হরকাতের একাংশ তো গণতান্ত্রিক দলও খুলে বসেছিল। একাংশ ছিল বার্মার মিশন নিয়ে। আরেকদল অতি জযবাতি এই-সেই বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নিজেদের ডুবিয়েছে। সুতরাং তাদের প্রসঙ্গ আসলে আলোচনার মোড় একমুখী রাখার সুযোগ নেই। 

বই সম্পর্কে আমার কিছু কথা

১. বইটিতে উপকৃত হওয়ার মতো অল্প কিছু তথ্য আছে। সেগুলো বাদ দিলে লেখক তার বই রচনার ক্ষেত্রে যথাযথ তাহকিকের আশ্রয় নেননি—এ কথাটিই বলতে হয়। তাহকিক যতটুকু করেছেন, তাও যে খবর যে সোর্স থেকে গ্রহণ করা দরকার ছিল, অনেক ক্ষেত্রে তা করেননি বা করতে পারেননি।

২. কওমি মাদরাসার ইমেজ রক্ষার জন্য বইটিতে কিছু বেইনসাফির আশ্রয় নেওয়া হয়েছে। কোথাও নিজেদের ওঠাতে গিয়ে অন্যদের ওপর রীতিমতো জুলুম হয়ে গিয়েছে।

৩. লেখক জিহাদ ও জঙ্গিবাদের মধ্যে সুস্পষ্ট পার্থক্যরেখা টানতে পারেননি। যার কারণে কিছু আলোচনা এলোমেলো হয়ে গেছে।

৪. বইটিতে কিছু ভুল ও অসত্য তথ্য উঠে এসেছে। বিষয়বস্তুর আলোচনার ক্ষেত্রেও কিছু দিকের অসম্পূর্ণতা ও অপূর্ণাঙ্গতা রয়ে গেছে।

৫. বাংলাদেশের কওমি মাদরাসার একটা শিক্ষাবোর্ডের স্বনামধন্য মহাসচিব পুরো বইটি আদ্যোপান্ত পড়ে এ সম্পর্কে যে মন্তব্য করেছেন, তা মোটেও সংগত হয়নি। বড়দের এসব ব্যাপারে সতর্ক হওয়া উচিৎ। সাধারণ দৃষ্টিতেই তার এ মন্তব্যটি বড়ই আপত্তিকর ও অসার ঠেকে—জঙ্গিবাদের উৎস নামক পুস্তিকার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দেখার সুযোগ আমার হয়েছে আলহামদুলিল্লাহ। কওমি মাদরাসায় জঙ্গি সৃষ্টি তত্ত্ব ও ইসলামের আলোকে অনবদ্য যে আলোচনা করা হয়েছে তা অত্যন্ত উঁচু পর্যায়ের। এই বইটি এমন একটি অস্ত্র, যা আলেম, তলাবা ও প্রত্যেক মুসলিমের সংগ্রহে থাকা বাধ্যতামূলক বলে আমি মনে করি।’

৬. লেখক যে বিষয়ে কলম ধরেছেন, এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এই বিষয়ে গঠনমূলক কাজ হলে উম্মাহ উপকৃত বৈ অপকৃত হবে না। যদিও এর দ্বারা ইসলামবিদ্বেষীদের মুখ মোটেও থামানো যাবে না। তবে মনে রাখতে হবে, এটা চূড়ান্ত সেনসিটিভ ও সংবেদনশীল একটি বিষয়। এক্ষেত্রে চিন্তা বা কলমের সামান্য বিচ্যুতি হাজারো মানুষের আকিদাকে আক্রান্ত করতে পারে।

৭. বইপল্লী প্রকাশনীকে বই প্রকাশে আমরা আরও সচেতন দেখতে চাই। এ ব্যাপারে ছানা উল্লাহ সিরাজী ভাই দৃষ্টি দেবেন আশা করি।

৮. বইটিতে প্রচুর মুদ্রণপ্রমাদ ও বানানভুল রয়ে গেছে। এ ব্যাপারে প্রকাশককে সতর্কতার পরিচয় দিতে হবে।

৯. নিজেদের ইমেজ সুন্দর উপস্থাপন করার জন্য তাগুত ও বাতিলকেও প্রমোট করা হয়েছে; চেতনে বা অবচেতনে। এটাও অনুচিত কাজ হয়েছে।

১০. মাদরাসার জঙ্গিবাদবিরোধী কার্যক্রমের পাশাপাশি এর কিছু জিহাদি কার্যক্রমের চিত্রও উঠে আসা উচিৎ। তাহলে সাধারণ মানুষের জন্য দুটোর মধ্যে পার্থক্য করা সহজ হবে। অন্যথায় এই সংশয় জাগা মোটেও অস্বাভাবিক নয় যে, মাদরাসাগুলোর কোনো জিহাদি কার্যক্রমই নেই।

Share This