শিশুরা পৃথিবী নামক উদ্যানের সুরভিত পুষ্প; পুষ্পসদৃশ সুন্দর সম্ভাবনাময় মানবকলি। সুষ্ঠুভাবে বেড়ে উঠলে যারা নিজেদের সৌরভে বিমোহিত করে তুলে পৃথিবী ও তরি প্রকৃতি। মহান আল্লাহ নিজ কুদরতে প্রতিটি শিশুর মাঝে বহু সম্ভাবনার বীজ বপন করে রেখেছেন। উপযুক্ত প্রক্রিয়ায় শ্রম-সাধনা ব্যয়িত হলে এবং অনুকূল পরিবেশ পেলে সেই বপিত বীজের সুন্দর অঙ্কুরোদগম হয়। শিশু তার প্রতিভার আলোকচ্ছটায় প্রফুল্ল করে বাবা-মা’র মন, দীপ্ত করে পৃথিবী ও বইয়ে দেয় নীরব আলোড়ন। যথাযথ পরিচর্যার অভাবে অকালেই আবার অনেক পুষ্পকলি শুকিয়ে ঝরে যায়। তাদের উজ্জ্বল সম্ভাবনা ডানা মেলার আগেই মরে যায়। প্রতিভা প্রস্ফুটিত হওয়ার আগেই নষ্ট হয়ে পুষ্পবৃক্ষ থেকে খসে পড়ে যায়। শিশুদের নির্মল হৃদয় স্বচ্ছ আয়নার মতো; বড়দের কার্যকলাপ ও আশপাশের পরিবেশ-পরিস্থিতির ছায়া তার ওপর পূর্ণরূপে প্রতিফলিত হয়। বড়দেরকে দেখে দেখে গড়ে ওঠে শিশুদের মানসজীবন। ফলে তা কখনো ঋদ্ধ ও উদার হয়, বড় হওয়ার চেতনা ও প্রেরণা তাতে আশ্রয় গেড়ে নেয় আর কখনোবা তা হয় হীন ও তুচ্ছ, পৃথিবী ও তার অধিবাসীদের ওপর চরম ঘৃণা ও রোষ নিয়ে ক্রমান্বয়ে বেড়ে ওঠে, তমসায় গোটা পৃথিবী ছেয়ে ফেলতে তা প্রবল আক্রোশে ধেয়ে আসে।
জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রিয়নবি মুহাম্মাদে আরাবি সা. আমাদের জন্য অনুকরণীয় আদর্শ। মহান আল্লাহর ঘোষণা- “নিঃসন্দেহে তোমাদের জন্য আল্লাহর রাসুলের মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ।” সুরা আহযাব: ২১। শিশুদের সঙ্গে কেমন ছিলো সেই নবির আচরণ? কোন প্রক্রিয়ায় তিনি পুষ্পসদৃশ মানবকলিদের পরিচর্যা করেছেন, তাদের মানসজীবন ঋদ্ধ করেছেন, তাদের ভেতর আত্মবিশ্বাস ও প্রেরণা জাগিয়েছেন? কীভাবে তিনি আজকের শিশুকে আগামী দিনের ভবিষ্যতরূপে গড়ে তুলেছেন? বক্ষ্যমাণ নিবন্ধে কিছুটা বিস্তারিত পরিসরে আমরা নবিজীবনের এ দিকটির ওপর আলোকপাত করার প্রয়াস পাবো।
প্রিয়নবি সা. শিশুদেরকে আন্তরিকভাবে ভালোবাসতেন। শিশুদের ভালোমন্দের প্রতি সর্বদা লক্ষ রাখতেন। শিশু- সে যেই হোক, যেমনই হোক; হোক না কোনো পথশিশু কিবা ব্যভিচারিনীর গর্ভজাত সন্তান, প্রত্যেকের জন্য প্রিয়নবির আকাশসম হৃদয়ে ছিলো সংরক্ষিত আসন। কোনো শিশুর প্রতি তার আকাশসম হৃদয়ে ছিলো না সামান্য কঠোরতা কিবা ঘৃণা। বুরাইদা রা. বলেন, গামেদ বংশীয় এক নারী একবার ব্যভিচারে লিপ্ত হয়। পরবর্তীতে সেই নারী অনুতপ্ত হয়ে গুনাহের শাস্তি বরণ করে নিতে প্রিয়নবির কাছে ছুটে আসে। এসে আরজ করে- ‘হে আল্লাহর রাসুল, আমাকে পবিত্র করুন।’ রাসুলুল্লাহ সা. বললেন- ‘যাও। ফিরে যাও। গিয়ে আল্লাহর কাছে আন্তরিকভাবে ক্ষমাপ্রার্থনা করো, তওবা করো।’ এবার সে আরজ করে- ‘যেভাবে আপনি মায়িয ইবনে মালিককে পিরিয়ে দিয়েছিলেন, বোধ করি আমাকেও সেভাবে ফিরিয়ে দিতে চাচ্ছেন।’ রাসুলুল্লাহ সা. এবার জিজ্ঞেস করলেন, ‘কী হয়েছে?’ সে বলে- আমি ব্যভিচার করেছি। আর সেই পাপের বোঝা এখন পেঠে বয়ে চলছি।’ রাসুলুল্লাহ সা. বললেন, ‘তুমি?’ সে বলে, ‘জি হাঁ।’ রাসুলুল্লাহ সা. বললেন, ‘গর্ভস্থ সন্তান প্রসব করা পর্যন্ত তোমার ওপর কোনোপ্রকার শাস্তি আরোপ করা সম্ভব নয়।’ এক আনসারি সাহাবি তখন সেই নারীর দেখভালের দায়িত্ব নেয়। অবশেষে সে যখন সন্তান প্রসব করে, আনিসারি সাহাবি এসে রাসুলুল্লাহ সা.কে আবগত করে বলেন, ‘গামেদী নারী সন্তান প্রসব করেছে।’ রাসুলুল্লাহ সা. বলেন, ‘তবুও দুগ্ধপোষ্য শিশু সন্তানকে অনাথ করে আমরা তার মাকে প্রস্তরাঘাতে হত্যা করতে পারি না।’ এবার আরেক আনসারি সাহাবি দাঁড়িয়ে বলে, ‘বাচ্চার লালনপালন ও দুধপানের দায়িত্ব আমি নিলাম।’ তখন রাসুলুল্লাহ সা. সেই নারীর ব্যাপারে ‘রজমে’র ফয়সালা দেন। [সহিহ মুসলিম- ১৬৯৫]
সাহাবায়ে কেরামের যখনই যার কোনো সন্তান এই পৃথিবীতে আগমন করতো, ছেলে হোক বা মেয়ে- তারা সেই নবজাতককে কোলে নিয়ে তৎক্ষণাত প্রিয় রাসুলের কাছে উপস্থিত হতেন। রাসুলুল্লাহ সা. নবজাতককে কোলে নিয়ে আদর করতেন, তাহনকি করতেন, কল্যাণ ও বরকতের দোয়া করতেন। আসমা রা. বলেন, ‘আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর যখন আমার গর্ভে, প্রসবের সময়ও প্রায় ঘনিয়ে এসেছে, আমি তখন মদিনার উদ্দেশে বের হই। কুবায় এসে আমি অবস্থান গ্রহণ করি। সেখানেই আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইরের জন্ম হয়। আব্দুল্লাহকে নিয়ে আমি তখন রাসুলুল্লাহ সা.এর কাছে আসি। ওকে রাসুলের কোলে তুলে দেই। প্রিয় রাসুল সা. তখন খেজুর আনান। খেজুর ভালো করে চিবিয়ে তার রস আব্দুল্লাহর মুখে দেন। আমার সন্তানের পেটে সর্বপ্রথম প্রিয় রাসুলের থুথু প্রবেশ করে। এরপর রাসুল সা. তার জন্য কল্যাণ ও বরকতের দোয়া করেন। ইসলামে সেই ছিলো প্রথম নবজাতক। [সহিহ বুখারি- ৩৬১৯]
আনাস রা. বলেন, আব্দুল্লাহ ইবনে আবু তালহা জন্মগ্রহণ করলে আমি তাকে রাসুলের কাছে নিয়ে যাই। রাসুল সা. তখন আবা কাপড় পরে উটের পরিচর্যা করছিলেন। তিনি আমাকে বলেন, ‘তোমার কাছে খেজুর আছে কি?’ আমি বললাম, ‘জি হাঁ।’ আমি তখন রাসুলের হাতে খেজুর দিলাম। রাসুল সা. সেগুলোকে প্রথমে মুখে নিয়ে চিবালেন। এরপর শিশুর মুখ খুলে তা ভেতরে দিলেন। শিশু আব্দুল্লাহ তখন মনের আনন্দে তা চাটতে থাকে। রাসুলুল্লাহ সা. বললেন, ‘দেখো দেখো আনসারিদের খেজুরপ্রিয়তা!’ এরপর তিনি তার নাম রাখেন আব্দুল্লাহ। [সহিহ মুসলিম- ২১১৪]
ওাসুলুল্লাহ সা. শিশুদের সুন্দর সুন্দর নাম রাখতেন, ভালো নাম রাখার প্রতি বেশ গুরুত্বারোপ করতেন। কারো মন্দ নাম থাকলে তা পরিবর্তন করে সুন্দর নাম রেখে দিতেন। সাহল ইবনে সা‘দ রা. বলেন, আবু উসাইদ রা.এর সন্তান জন্মলাভ কররে নবজাতককে রাসুলুল্লাহ সা.এর কাছে নিয়ে আসা হয়। রাসুলুল্লাহ সা. তাকে কোলে তুলে নেন। আবু উসাইদ রা. তখন রাসুলুল্লাহ সা.এর পাশেই বসা। হঠাৎ রাসুলুল্লাহ সা. সামনের অন্য একটা জিনিসের প্রতি গভীর মনোযো নিবদ্ধ করেন। তখন আবু উসাইদ রা.এর নির্দেশে নবজাতককে রাসুলুল্লাহ সা.এর কোল থেকে সরিয়ে নেয়া হয়। কিছুক্ষণ পর রাসুলুল্লাহ সা. স্বাভাবিক হলে জিজ্ঞেস করেন, ‘বাচ্চা কোথায়?’ আবু উসাইদ রা. বলেন, ‘তাকে তো ঘরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, হে আল্লাহর রাসুল।’ রাসুলুল্লাহ সা. জিজ্ঞেস করলেন, ‘তার নাম কী?’ আবু উসাইদ রা. তখন একটা নাম বলেন। রাসুলুল্লাহ সা. বলেন, ‘না। তার নাম হলো মুনযির।’ তখন থেকে সেই শিশুর নাম হয়ে যায় মুনযির। [সহিহ বুখারি- ৬১৯১] নববি রহ. বলেন, এই সন্তানের নাম মুনযির রাখার কারণ হলো, তার এক চাচার নাম ছিরো মুনযির ইবনে ‘আমর। বিরে মা‘উনার যুদ্ধে কাফিরদের হাতে তিনি নির্মমভাবে শাহাদত বরণ করেন। তিনি ছিলেন সেই মোবারক কাফেলার আমির। রাসুলুল্লাহ সা. বরকত হিসেবে ভাতিজার জন্যও এ নাম রেখে দেন: বড় হয়ে সেও যেনো তার চাচার মতো হয়। [শরহুন নববি ‘আলা সহিহ মুসলিম- ১৪/১২৮]
আবু মুসা রা. বলেন, আমার সন্তান হলে আমি তাকে প্রিয় রাসুলের কাছে নিয়ে যাই। রাসুল সা. তার নাম রাখেন ইবরাহিম। এরপর তাহনিক করেন এবং কল্যাণ ও বরকতের জন্য দোয়া করেন। সব শেষে তাকে আমার কোলে তুলে দেন। [সহিহ বুখারি- ৫৪৬৭]
রাসুলুল্লাহ সা. শিশুদেরকে অবলীলায় কোলে তুলে নিতেন। তারা দুষ্টুমি করলে কিছু বলতেন না। কোলে উঠে প্রস্রাব করে দিলেও কিছু মনে করতেন না। আয়েশা রা. বলেন, রাসুলুল্লাহ সা.এর কাছে প্রায়ই ছোট্ট সোনামনিদেরকে নিয়ে আসা হতো। রাসুলুল্লাহ সা. তাদের জন্য বরকতের দোয়া করতেন, তাহনিক করতেন। একবার এক শিশু রাসুলুল্লাহ সা.এর কোলে প্র¯্রাব করে দেয়। রাসুলুল্লাহ সা. তখন পানি আনিয়ে কাপড়ের সেই অংশে গড়িয়ে দেন। পুরো কাপড় আর ধৌত করেননি। [সহিহ বুখারি- ৫৪৬৮]
রাসুলুল্লাহ সা. শিশুদের সামনে গম্ভীরতা প্রদর্শন করতেন না। তাদেরকে আদর তরে কাছে টেনে নিতেন, ঠাট্টা-রসিকতা করতেন। উম্মে খালিদ রা. বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সা.এর কাছে একবার অনেকগুলো কাপড় হাদিয়া আসলো। এরমধ্যে একটি কাপড় ছিলো অত্যন্ত সুন্দর। চারদিকে নকশা করা। রাসুলুল্লাহ সা. উপস্থিত সবাইকে লক্ষ্য করে বললেন, ‘বলো তো, এই নকশী কাপড়টা আমি কাকে পরাবো?’ সবাই নীরবতা অবলম্বন করলো। রাসুলুল্লাহ সা. বললেন, ‘উম্মে খালিদকে আমার কাছে নিয়ে আসো।’ আমাকে আনা হলো। রাসুলুল্লাহ সা. নিজ হাতে আমাকে কাপড়টি পরিয়ে দিলেন। এরপর কাপড়ের নকশা করা প্রান্তের দিকে তাকিয়ে আমাকে লক্ষ্য করে বললেন, ‘উম্মে খালিদ, “ছানা”। উম্মে খালিদ, “ছানা”।’ (হাবাশার ভাষায় “ছানা” অর্থ- সুন্দর, চমৎকার, দারুণ, মনোরম। মদিনায় হিজরতের পূর্বে উম্মে খালিদ রা. পরিবারের সাথে হাবাশায় হিজরত করেছিলেন। তাই সেই ভাষার একটি শব্দ দিয়েই রাসুলুল্লাহ সা. তার সাথে রসিকতা করলেন।) এরপর রাসুলুল্লাহ সা. তার দীর্ঘজীবন লাভের জন্য দোয়া করলেন। বুখারি রহ. বলেন, তার মতো এতো দীর্ঘ জীবন আর কোনো নারী পায়নি। [সহিহ বুখারি- ৫৮৪৫; ফাতহুল বারি- ৬/১৮৪]
আনাস ইবনে মালিক রা. বলেন, রাসুলুল্লাহ সা. উম্মে সালামা রা.এর মেয়ে যায়নাবকে দুষ্টুমি করে যুওয়াইনাব যুওয়াইনাব বলে ডাকতেন। [আলআহাদিসুল মুখতারা, মাকদিসি- ১৭১১]
ইবনুল কায়্যিম রহ. বলেন, একবার রাসুলুল্লাহ সা. গোসল করছিলেন। এমন সময় যয়িনাব রা. তাঁর কাছে আসলে তিনি তার চেহারায় পানি ছিটিয়ে দেন। এর বরকতে একেবারে বুড়িয়ে যাওয়া পর্যন্ত তার চেহারায় যৌবনের ছাপ ছিলো জ¦লজ¦লে উজ্জ্বল। [হাশিয়াতুহু ‘আলা সুনানি আবি দাউদ-১/১২২]
একবার রাসুলুল্লাহ সা.এর সামনে এসে দাঁড়ায় এক বালক সাহাবি- মাহমুদ ইবনে রাবি‘। তার বয়স তখন মাত্র পাঁচ বছর। রাসুলুল্লাহ সা. তখন বালতি থেকে পানি নিয়ে মাহমুদ ইবনে রাবি‘র মুখে ছিটা দেন। মাহমুদ ইবনে রাবি‘ রা. বলেন, রাসুলুল্লাহ সা.এর সাথে আমার স্মৃতি হিসেবে এই একটা ঘটনার কথাই স্মরণ আছে। এরপর তিনি এই ঘটনা বর্ণনা করেন। [সহিহ বুখারি- ৭৭]
আনাস রা. বলেন, চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যে প্রিয়নবি সা. অদ্বিতীয়, সবার চেয়ে উন্নত। আমার একটা ভাই ছিলো। তার ডাকনাম ছিলো আবু উমায়ের। তখন সদ্য দুধ ছেড়েছে সে। রাসুলুল্লাহ সা. যখনই আসতেন, তাকে লক্ষ্য করে ছন্দ মিলিয়ে বলতেন, ‘ওহে হে আবু উমায়ের, কী করলো তোমার নুগায়ের?’ (নুগায়ের- ছোট্ট পাখি, যা নিয়ে সে খেলা করতো। অকস্মাৎ পাখিটি মরে যায়।) [সহিহ বুখারি- ৬২০৩]
আনাস রা. বলেন, দুষ্টুমি করে রাসুলুল্লাহ সা. আমাকে ‘এই যে দু’কানওয়ালা’ বলে ডাকতেন। [সুনানে আবু দাউদ- ৫০০২; সুনানে তিরমিযি- ১৯৯২]
রাসুলুল্লাহ সা. কখনো শিশুদের মধ্যে দৌড় প্রতিযোগিতার আয়োজন করতেন। একবার আব্বাস রা.এর তিন সন্তান আব্দুল্লাহ উবায়দুল্লাহ এবং কুসায়্যিরকে সারিবদ্ধ করে দাঁড় করিয়ে ঘোষণা দেন, ‘তোমাদের যে সবার আগে আমাকে এসে ছুঁতে পারবে তার জন্য থাকবে আকর্ষণীয় পুরস্কার।’ তারা সবাই দৌড়ে এসে রাসুলুল্লাহ সা.এর বুক-পিঠের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে লুটোপুটি খায়। রাসুলুল্লাহ সা. তাদেরকে জড়িয়ে ধরে চুমু খান। [মুসনাদে আহমদ- ১৮৩৯]
রাসুলুল্লাহ সা. শিশুদের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় তাদেরকে সালাম দিতেন। শিশুদের মন তখন খুশিতে ভরে যেতো। তারা উৎফুল্ল হয়ে উঠতো। তাদের ভেতরে জন্মাতো উদ্যম ও প্রেরণা। এর মাধ্যমে তারা এও শিখে নিতো- বড়দের সাথে কেমন হবে তাদের আচরণ। রাসুলুল্লাহ সা.এর প্রজ্ঞাপূর্ণ তারবিয়াতের অংশ ছিলো এই অমায়িক আচার। আনাস রা. বলেন, রাসুলুল্লাহ সা. একবার বাচ্চাদের কাছে এলেন। তারা তখন খেলছিলো। রাসুলুল্লাহ সা. তাদেরকে সালাম দিলেন। [সহিহ বুখারি- ৬২৪৭]
রাসুলুল্লাহ সা. শিশুদের মাথায় ¯েœহের হাত বুলিয়ে দিতেন। গাল ছুঁয়ে তাদেরকে আদর করতেন। আনাস রা. বলেন, রাসুলুল্লাহ সা. আনসার সাহাবিদের সাথে সাক্ষাতের উদ্দেশ্যে বরে হতেন। যখন তাদের ঘরবাড়িতে পৌঁছতেন, ছোট ছোট শিশুরা জড়ো হয়ে রাসুলকে ঘিরে ফেলতো। রাসুলুল্লাহ সা. তখন তাদেরকে সালাম দিতেন, তাদের মাথায় হাত বুলিয়ে কল্যাণের দোয়া করতেন। [সুনানে কুবরা, নাসায়ি- ৮৩৪৯]
আব্দল্লাহ ইবনে হিশাম রা.কে নিয়ে তার মা যায়নাব বিনতে হুমায়দ রা. রাসুলুল্লাহ সা.এর কাছে এসে আরজ করে, ‘হে আল্লাহর রাসুল, আপনি ওকে বায়‘আত করুন।’ রাসুলুল্লাহ সা. বললেন, ‘সে তো এখনও ছোট।’ এরপর তিনি আব্দল্লাহ ইবনে হিশাম রা.এর মাথায় হাত বুলিয়ে দেন এবং তার জন্য কল্যাণের দোয়া করেন। [সহিহ বুখারি- ২৫০২]
জাবের আবনে সামুরা রা. বলেন, রাসুলুল্লাহ সা.এর সাথে আমি জোহরের নামাজ আদায় করলাম। নামাজ শেষে তিনি পরিজনের সাথে সাক্ষাতের উদ্দেশ্যে বের হলে আমিও তার সাথে বের হলাম। এসময় অনেক শিশু তার কাছে এসে জড়ো হলো। তিনি তাদের প্রত্যেকের দু’গাল ছুঁয়ে আদর করলেন। আমাকেও দু’গাল ছুঁয়ে আদর করলেন। তখন আমি রাসুলুল্লাহ সা.এর পবিত্র দু’হাতের শীতলতা ও এক অপার্থিব সুঘ্রাণ অনুভব করি। বোধ হচ্ছিলো, কোনো আতরের শিশি থেকে সুঘ্রাণ বেরিয়ে পুরো প্রকৃতিকে বিমোহিত করে তুলেছে। [সহিহ মুসলিম- ২৩২৯]
রাসুলুল্লাহ সা. আদর করে, ভালোবেসে শিশুদেরকে চুমু খেতেন। আবু হুরায়রা রা. বলেন, রাসুলুল্লাহ সা. আপন নাতি হাসান রা.কে চুমু খেলেন। সেখানে ‘আকরা ইবনে হাবিস নামক এক সাহাবি উপস্থিত ছিলেন। রাসুলুল্লাহ সা. হাসান রা.কে চুমু খাচ্ছেন দেখে তিনি বলে ফেললেন, ‘আমার দশ-দশটি সন্তান। অথচ আমি ওদের কাউকেই চুমু খাই না।’ নবিজি সা. তার দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘যে দয়া করে না, সে দয়াপ্রাপ্ত হবে না।’ [সহিহ বুখারি- ৫৬৫১; সহিহ মুসলিম- ৬৫]
আয়েশা রা. বলেন, একদল গ্রাম্যলোক রাসুলুল্লাহ সা.এর কাছে আসলো। একপর্যায়ে তারা জিজ্ঞেস করলো, ‘আপনারা কি আপনাদের সন্তানদেরকে চুমু খান?’ মদিনার সাহাবিরা বললেন, ‘হাঁ।’ তারা বললো, ‘আমরা কিন্তু –আল্লাহর কসম করে বলছি- আমাদের সন্তানদেরকে চুমু খাই না’। তখন রাসুলুল্লাহ সা. বললেন, ‘আল্লাহ তোমাদের থেকে রহমত ছিনিয়ে নিলে আমার আর কী করার আছে!’ [সহিহ বুখারি- ৫৯৯৮]
আবু হুরায়রা রা. বলেন, একবার এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ সা.এর কাছে উপস্থিত হলো। তার সাথে একটি শিশুও ছিলো। নবিজি সা. তাকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘তুমি কি এই শিশুটির ওপর রহম করো?’ সে বললো, ‘জি হাঁ।’ তখন রাসুলুল্লাহ সা. বললেন, ‘তবে শুনে রাখো, এই শিশুটির ওপর তুমি যতোটুকু রহম করবে, আ?ল্লাহ তা‘আলা তারচে অনেক বেশি রহম তোমার ওপর করবেন। তিনি দয়ালুদের মধ্যে সবচে বড় দয়ালু।’ [আলআদাবুল মুফরাদ- ৩৭৭]
রাসুলুল্লাহ সা. শিশুদেরকে অনেক উপহার দিতেন। উপহার তো যেকোনো মানুষের হৃদয়েই আবেগ, অনুভূতি ও ভালোবাসার সঞ্চার করে। শিশুদের ক্ষেত্রে তার প্রভাব পড়ে সবচে বেশি। আবু হুরায়রা রা. বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সা.এর কাছে বছরের প্রথম ফল আনা হতো। তিনি তখন এই বলে দোয়া করতেন, ‘হে আল্লাহ, আপনি বরকত দান করুন আমাদের মদিনায়, আমাদের ফলফলাদিতে, আমাদের প্রতিটি “মুদ” এবং “ছা”তে।’ এরপর তিনি সেসব ফল উপস্থিত শিশুদের মধ্যে সবচে ছোট য,ে তাকে উপহার দিতেন। [সহিহ মুসলিম- ১৩৭৩]
প্রিয়নবির অমায়িক আচার ও বাৎসল্যের প্রভাবে তিনি স্থান করে নিয়েছিলেন শিশুদের হৃদয়-সিংহাসনে। হয়ে উঠেছিলেন তাদের পরমপ্রিয়, সবচে আপন। শিশুরা এসেই প্রিয়নবির কোলে চড়ে বসতো, কখনোবা পিঠে উঠে তাঁকে ঘোড়া বানিয়ে মনের আনন্দে খেলা করতো। রাসুলুল্লাহ সা.ও শিশুদেরকে নিয়ে মেতে উঠতেন, তাদেরকে মনপ্রাণ খুলে ভালোবাসতেন, কাছে টেনে নিতেন, চুমু খেতেন। পাশাপাশি শিশুদের তালিম-তারবিয়াতের প্রতিও ছিলো তার সদা সতর্ক দৃষ্টি। আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেন, একদিা আমি রাসুলুল্লাহ সা.এর পেছনে বসা ছিলাম। রাসুলুল্লাহ সা. তখন আমাকে বললেন, ‘শোনো বালক, আমি তোমাকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের তালিম দিচ্ছি। তুমি আল্লাহর হেফাজত করো, আল্লাহ তোমার হেফাজত করবেন। তুমি আল্লাহর হেফাজত করো, সর্বদা তাকে সামনে পাবে। সুখের সময়ে তুমি আল্লাহকে স্মরণ করবে, তোমার দুঃখের সময়ে তিনিও তোমাকে স্মরণ করবেন। যখন কিছু চাইবে, আল্লাহর কাছেই চাইবে। যখন সাহায্য প্রার্থনা করবে, আল্লাহর কাছেই সাহায্য প্রার্থনা করবে। আর জেনে রেখো, গোটা উম্মত যদি তোমার কোনো উপকার করার জন্য একত্রিত হয়, আল্লাহ তোমার তাকদিরে যা লিখে রেখেছেন- এর বাইরে তারা তোমার কোনো উপকারই করতে পারবে না। যদি তারা সবাই মিলে তোমার কোনো অনিষ্ট সাধনে প্রয়াসী হয়, আল্লাহ তোমার ভাগ্যলিপিতে যে অনিষ্টের কথা লিখে রেখেছেন- তার বাইরে তারা তোমার কোনো ক্ষতিই করতে পারবে না। ভাগ্যলিপি রচনার কলম উঠিয়ে নেয়া হয়েছে। কালিও শুকিয়ে গেছে। মনে রেখো, আপদে ধৈর্যধারণের মধ্যে লুকায়িত আছে অসংখ্য কল্যাণ। সবরের সাথে রয়েছে প্রভুর নুসরত। দুর্যোগের সাথে স্বাচ্ছন্দ্য ও দুঃখের সাথে সুখ জড়িত ওতপ্রোতভাবে। [মুসনাদে আহমদ- ২৮০০]
রাসুলুল্লাহ সা. শিশুদেরকে ইমান, কোরআন এবং তাওহিদের শিক্ষা দিতেন। আগামী দিনের যোগ্য কান্ডারীরূপে তাদেরকে গড়ে তুলতে সার্বিক পদক্ষেপ গ্রহণ করতেন। ছোট্ট সাহাবি জুনদুব ইবনে আব্দুল্লাহ রা. বলেন, আমরা উঠতি বয়সের কয়েকজন কিশোর রাসুলুল্লাহ সা.এর কাছে থাকতাম। আমরা কোরআন শেখার আগে ইমান শিখেছি। এরপর কোরআন শিখেছি। যার ফলে আমাদের ইমান হয়েছে সুদৃঢ়। [সুনানে বিনে মাজাহ- ৬১]
রাসুলুল্লাহ সা. শিশুদেরকে উত্তম চাল-চলন, সুন্দর আচার-ব্যবহারের শিক্ষা দিতেন। আনাস রা. বলেন, রাসুলুল্লাহ সা. আমাকে বলেছেন, বালক, যখন পরিজনের কাছে যাবে এবং ঘরে ঢুকবে তখন অবশ্যই সালাম দিবে। তা তোমার জন্য এবং ঘরের মানুষদের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে। [সুনানে তিরমিযি- ২৬৯৮]
এমনতি প্রিয়নবি সা. শিশুদের সাতে অনায়াসে খাবার খেতেন। তারা খেতে বসে দুষ্টুমি করলে, তাদের থেকে ভুল-ত্রুটি পরিলক্ষিত হলে নমনীয়তার সাথে সেগুলো শুধরে দিতেন, প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিতেন, পানাহারের আদবও শিখিয়ে দিতেন। উমর ইবনে আবু সালামা রা. বলেন, আমি ছিলাম এক ছোট্ট বালক। রাসুলুল্লাহ সা.এর ঘরেই আমি লালিত-পালিত হয়েছি। আমার অভ্যেস ছিলো, খেতে বসলে পাত্রের চারদিকে আমার হাত ছুটোছুটি করতো। রাসুলুল্লাহ সা. আমাকে বলেন, শোনো বাবা, খেতে বসে প্রথমে বিসমিল্লাহ বলবে। ডান হাতে খাবে। নিজের সামনে থেকে খাবে। উমর ইবনে আবু সালামা রা. বলেন, এরপর থেকে সারাজীবন আমি সেভাবেই খেয়েছি। [সহিহ বুখারি- ৫৩৭৬]
শিশুরা যে অন্যায়ই করুক, যেমন অপরাধই করুক প্রিয়নবি সা. তাদেরকে বকাঝকা মারধর করতেন না, কোমলভাবে বোঝাতেন, স্নেহের সাথে ভুল-ত্রুটি সংশোধন করে দিতেন। শাসন-তারবিয়াতের ক্ষেত্রেও বয়সের তারতম্য তিনি গভীরভাবে খেয়াল রাখতেন। আবু রাফে রা. বলেন, আমি ছিলাম াকে দুষ্টু বালক। আনসার সাহাবিদের খেজুর বাগানে শুধু ঢিল ছুঁড়তাম। একবার তারা আমাকে ধরে রাসুলুল্লাহ সা.এর কাছে নিয়ে যায়। রাসুলুল্লাহ সা. আমাকে বলেন, এই ছেলে, খেজুর গাছে ঢিল ছুঁড়ো কেনো? আমি বললাম, ক্ষুধার তাড়নায়, হে আল্লাহর রাসুল! তিনি বললেন, এখন থেকে আর ঢিল ছুড়বে না। হাঁ, যে খেজুরগুলো নিচে পড়ে থাকে, সেগুলো খেতে পারো। এরপর রাসুলুল্লাহ সা. তার মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করেন। এবং এই দোয়া করেন, আল্লাহ তোমাকে পরিতৃপ্ত করুন। [সুনানে তিরমিযি- ১২৮৮]
আনাস রা. ছোট ছিলেন। দশ-দশটি বছর তিনি রাসুলুল্লাহ সা.এ খেদমত করেছেন; কিস্তু এই সুদীর্ঘ সময়ে একটিবারের জন্যও রাসুলুল্লাহ সা. তাকে মারেননি, বকা দেননি, কটু কথা বলেননি। বলেননি কখনো, ‘এটা কেনো করলে’ কিবা ‘ওই কাজটি কেনো করলে না’।
রাসুলুল্লাহ সা. শিশুদের সাথে কথা বলার সময়ে তাদেরকে সুন্দর সুন্দর শব্দে সম্বোধন করতেন। আমাদের মতো কখনো অসুন্দর ও শ্রুতিকটু কোনো শব্দে শিশুদেরকে ডাকতেন না, সম্বোধন করতেন না। ওপরে বর্ণিত বিভিন্ন হাদিসে পাঠক বিষয়টি খেয়াল করেছেন। শিশুদের কারো সুন্দর ডাকনাম-উপনাম থাকলে সেসব বলেও কখনো তাদেরকে সম্বোধন করতেন।
আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যত। তাই রাসুলুল্লাহ সা. শৈশব থেকেই শিশুদেরকে ভবিষ্যতের কা-ারীরূপে দায়িত্বসচেতন করে গড়ে তুলতেন। আনাস রা. বলেন, একবার আমি বাচ্চাদের সাথে খেলছিলাম। এমন সময় রাসুলুল্লাহ সা. এসে আমাদের সবাইকে সালাম দিলেন। এরপর আমাকে একটা কাজে পাঠালেন। যার কারণে ঘরে ফিরতে কিছুটা দেরি হয়ে যায়। যখন ফিরি মা জিজ্ঞেস করেন, কী ব্যাপার! কোনো কাজে আটকে গিয়েছিলে? আমি বললাম, রাসুলুল্লাহ সা. আমাকে একটা কাজে পাঠিয়েছিলেন। মা বললেন, কী কাজে? আমি বললাম, একটা গোপন বিষয়। (তাই তিনি আর মা’কে পর্যন্তও তা অবগত করেননি। [সহিহ বুখারি-৬২৮৯; সহিহ মুসলিম- ২৪৮২]
এবার আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের একটি স্বকীয় বৈশিষ্ট্যের কথা আলোচনা করবো। প্রিয়নবি সা. শিশুদের ব্যক্তিত্বের মূল্যায়ন করতেন। কখনো তাদেরকে অবজ্ঞা করতেন না। শিশুদের মানসজীবন গঠনে এর অবদান অপরিসীম। এর মাধ্যমেতাদের আত্মবিশ^াস সুদৃঢ় হয়, ভেতরে সৃষ্টি হয় আত্মমর্যাদাবোধ। এর সুফলে তাদের মানসজবিন হয়ে ওঠে ঋদ্ধ, দৃষ্টিভঙ্গি হয় উদার। বড়দের জন্য তাদের ছোট্ট কোমল হৃদয়ে জাগে শ্রদ্ধাবোধ ও ভালোবাসা। অপরদিকে শিশুদের ব্যক্তিসত্তার তাচ্ছিল্য-অবমূল্যায়ন তাদের ভেতরে সৃষ্টি করে তুচ্ছ মনোভাব ও হীনতা, দ্বেষ ও ঘৃণা, হিংসা ও অস্থিরতা। বড়দের প্রতি শ্রদ্ধাবোধটুকুও তখন তারা হারিয়ে ফেলে। একপর্যায়ে নিজেরা হারিয়ে যায় আঁধারজগতে, প্রয়াসী হয় গোটা সমাজ ও দেশকে তমসায় ছেয়ে ফেলতে। প্রিয়নবি সা.এর মহান ও সুউচ্চ মর্যাদাপূর্ণ ব্যক্তিস্ততায় এ অনন্য গুণ ও বৈশিষ্ট্যটি ছিলো পরিপূর্ণরূপে। সাহল ইবনে সাদ রা. বলেন, রাসুলুল্লাহ সা এর কাছে একবার পানীয় আনা হলো। তিনি নিজে তা থেকে পান করলেন। তখন তার ডাব পাশে ছিলো একটা বালক আর বাম পাশে ছিলো কয়েকজন প্রবীণ সাহাবি। রাসুলুল্লাহ সা. বালককে লক্ষ্য করে বললেন, তুমি অনুমতি দিলে আগে মুরুব্বিদেরকে দিয়ে শুরু করি। বালক উত্তর দিলো, না, আল্লাহর কসম, আমার ভাগের ক্ষেত্রে আমি কাউকে নিজের ওপর অগ্রাধিকার দেবো না। রাসুলুল্লাহ সা. তখন পাত্রটি তার হাতেই দিলেন। [সহিহ বুখারি- ২৪৫১]
রাসুলুল্লাহ সা শিশুদের সাথে সর্বদা সত্য কথা বলা ও কখনো তাদের সাথে মিথ্যে না বলার ব্যাপারে অত্যাধিক গুরুত্বারোপ করতেন। আব্দুল্লাহ ইবনে আমের রা বলেন, রাসুলুল্লাহ সা আমাদের ঘরে উপবিষ্ট। এমন সময় মা আমাকে ডাক দিয়ে বলেন, এই, এদিকে এসো। তোমাকে একটা জিনিস দেবো। রাসুলুল্লাহ সা. তখন মাকে লক্ষ্য করে বলেন, তুমি ওকে কী দিতে চাচ্ছো? মা বললেন, ওকে খেজুর দেবো। রাসুলুল্লাহ সা. বললেন, যদি তুমি ওকে কিছু না দিতে তবে তোমার আমলনামায় একটি মিথ্যে কথার গুনাহ লেখা হতো। [সুনানে আবু দাউদ- ৪৯৯১]
শিশুদের সাথে মিথ্যে কথা বললে তারা স্বাভাবিকভাবেই বাবা-মার ওপর থেকে নির্ভরতা হারিয়ে ফেলে। এভাবে একপর্যায়ে বাবা-মাসহ অন্যান্যদের কথায় সে আর তেমন কর্ণপাত করে না। তাছাড়া শিশুরা যেহেতু বড়দেরকে অনুকরণ করেই বেড়ে ওঠে, তাই তারাও ধীরে ধীরে মিথ্যে বলায় অভ্যস্ত হয়ে পড়ে। এজন্য বড়দের আবশ্যিক কর্তব্য, শিশুদের সাথে সর্বদা সত্য কথা বলা, মিথ্যের পঁচা বীজ তাদের উর্বর হৃদয়ক্ষেত্রে বপন না করা। ঘুম পাড়ানো, গল্প বলা, হাসি-ঠাট্টাসহ সবক্ষেত্রে শিশুদের সাথে উচিত সর্বদা সত্য কথা বলা।
শিশুদের সাথে প্রিয়নবির অমায়িক আচার-ব্যবহারের সংক্ষিপ্ত চিত্র আমরা তুলে ধরার প্রয়াস পেয়েছি। নবিজীবনের মহান আদর্শের আলোকে আমরাও গড়ে তুলতে প্রয়াসী হই আমাদের জীবন। এই পুষ্পসদৃশ মানবকলিদের যেভাবে যত্ন নিয়েছেন, পরিচর্যা করেছেন মহান রাসুল সা., আমরাও যদি সেভাবে তাদের যত্ন নিতে পারি, পরিচর্যা করতে পারি তবেই গড়ে উঠবে আলোকিত সমাজ, দীপ্ত হবে জীবন, ছড়িয়ে যাবে সর্বত্র প্রশান্তির স্নিগ্ধ সমীরণ। মহান আল্লাহ আমাদেরকে প্রিয়নবির জীবনাচারকে আমাদের জীবনপথের উজ্জ্বল আলোকবর্তিকারূপে গ্রহণ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।