১.
উমর রা. খলিফা হবার পর সর্বপ্রথম ইরাকে অভিযান পরিচালনার ব্যাপারে ভাবলেন। তিনি মানুষদেরকে কিতালের জন্য উৎসাহিতও করতে লাগলেন। কিন্তু আল্লাহর তরবারি খালিদ রা.-এর অনুপস্থিতিতে অন্য কারও নেতৃত্বে লোকেরা এ লড়াইয়ের ব্যাপারে হিম্মত করল না। উমর রা. লাগাতার কয়েকদিন তাশকিল করার পরও উল্লেখযোগ্য ফলাফল পাওয়া গেল না। লোকেরা ইরাককে পারসিক সাম্রাজ্যের প্রাণকেন্দ্র হিসেবে বিবেচনা করত। এ জন্য তারা এত দীর্ঘ তাশকিলের পরও নীরবই থাকল। অবশেষে একদিন মুসান্না শাইবানি রহ. জি হা দি প্রেরণায় অনুপ্রাণিত হয়ে সকলের সামনে দাঁড়িয়ে বললেন,
أيها المسلمون، لقد جربنا المجوس، إنهم ليسوا برجال حرب، لقد فتحنا كبريات مناطق العراق واعترف العجم ببأسنا وشدتنا.
ওহে মুসলমানরা, পারসিকদের ব্যাপারে আমরা ইতিমধ্যে অভিজ্ঞতা অর্জন করে ফেলেছি। তারা কোনো যুদ্ধে পারঙ্গম জাতি নয়। আমরা ইরাকের বিস্তৃত অঞ্চল ইতিমধ্যে জয় করে নিয়েছি। অনারবরাও আমাদের রণশক্তি ও বাহুবলের স্বীকারোক্তি দিয়েছে।
তার এ ইমানদীপ্ত সাহসী উক্তি শুনে সাকিফ গোত্রের সর্দার আবু উবায়দা রহ. দাঁড়িয়ে বললেন, আমি এর জন্য প্রস্তুত আছি। তার দেখাদেখি অন্যরাও তখন বলে উঠল, আমরা সকলে এর জন্য প্রস্তুত আছি। উমর রা. মদিনা ও তৎসংলগ্ন এলাকার অধিবাসীদের মধ্য থেকে বালাজুরির বর্ণনা অনুসারে এক হাজার এবং আবু হানিফা দিনাওয়ারির বর্ণনা অনুসারে পাঁচ হাজার সৈন্য বাছাই করলেন আর আবু উবায়দ সাকাফিকে তাদের সেনাপতি নিযুক্ত করলেন। তখন এক ব্যক্তি বলে উঠল, আপনি কোনো সাহাবিকে সেনাপতি বানান। এত শত শত সাহাবির সমন্বয়ে গঠিত সেনাবাহিনীর প্রধানও একজন সাহাবি হওয়াই সংগত। তার কথার পরিপ্রেক্ষিতে উমর রা. বাহিনীতে থাকা সাহাবিদের দিকে তাকিয়ে বললেন, তোমরা সাহসিকতা ও অবিচলতার দ্বারাই মর্যাদা লাভ করেছ। কিন্তু এখন তোমরা নিজেরাই নিজেদের মর্যাদা নষ্ট করেছ। আমি এমন কারও কাঁধে নেতৃত্বের ভার তুলে দিতে পারি না, যে কিতালের ব্যাপারে অনাগ্রহ প্রদর্শন করেছে।
২.
Battle of Namaraq-এ আবু উবায়দা সাকাফি রা.-এর বাহিনীর এক সৈনিকের হাতে শত্রুবাহিনীর প্রধান সেনাপতি জাবান গ্রেফতার হয়। তবে যার হাতে সে গ্রেফতার হয়, সে জানত না যে, ধৃত লোকটিই শত্রুবাহিনীর প্রধান সেনাপতি। জাবান কৌশল করে তাকে বলে, আমি এক বয়ঃবৃদ্ধ লোক। আমাকে গ্রেফতার করে তোমার কী লাভ? সুতরাং এক কাজ করো। আমাকে ছেড়ে দাও আর এর পরিবর্তে এই দুই গোলামকে নিয়ে যাও। তার কথামতো সেই সৈনিক তাকে ছেড়ে দেয় এবং দুই গোলামকে গ্রেফতার করে নেয়। কিন্তু মুসলমানরা যখন জাবানকে দেখে ফেলে, তখন তারা চিৎকার করে বলে ওঠে, আমরা এমন দুশমনকে কিছুতেই ছাড়ব না। তখন তাদেরকে শান্ত করে আবু উবায়দ রহ. বলেন, ইসলামে অঙ্গীকার ভঙ্গ করা বৈধ নয়।
৩.
একই যুদ্ধাভিযানে باروسما এবং زوابي অঞ্চলের শাসক فرخ এবং فراوند মুসলিম বাহিনীর সামনে আনুগত্য প্রদর্শন করে। তারা তাদের নিষ্ঠার নিদর্শনস্বরূপ একদিন আবু উবায়দা রহ.-এর উদ্দেশে খাবারভর্তি এক বড় শাহি দস্তরখান উপঢৌকন পাঠায়। আবু উবায়দা রহ. জিজ্ঞেস করেন, এই শাহি দস্তরখান কি পুরো বাহিনীর জন্য নাকি আমার একার জন্য? ফররুখ বললেন, এত বড় বাহিনীর জন্য আয়োজন করা এই অল্প সময়ে আমাদের পক্ষে সম্ভব হয়নি। তখন আবু উবায়দা রহ. তার দাওয়াত প্রত্যাখ্যান করে বললেন, মুসলমানদের মধ্যে এমন কেউ নেই, যে নিজেকে অন্যদের ওপর শ্রেষ্ঠ ভাবতে পারে।
রহমাতুল্লাহি আলাইহি…