কয়েকজন ভাই এ বইটার ব্যাপারে আমার মতামত জানতে চেয়েছেন। তাদের উদ্দেশ্যেই মূলত এ লেখা। পুরো লেখার সারকথা হলো, বইটির কিছু বিষয়ে আমার খটকা লেগেছে। যার কয়েকটি এখানে উল্লেখ করেছি। এ বিষয়গুলো বাদ দিলে বইটি অসুন্দর নয়। এটা কোনো দালিলিক পর্যালোচনা নয়। ব্যক্তিগত অনুভূতি মাত্র।
একরাশ খটকা:
আমরা এখানে বইয়ের কয়েকটি উদ্ধৃতি উল্লেখ করবো, যেগুলো আমার কাছে খটকা লেগেছে—
- লেখক বই লিখেছেন হালাল বিনোদন প্রসঙ্গে। তিনি জায়গায় জায়গায় সেসকল স্কলারদেরকে ঝেড়েছেন, যারা ইসলাম থেকে বিনোদনকে আলাদা করে উপস্থাপন করেছে। তার বক্তব্য—“বিনোদনের ব্যাপারে চরম অবস্থানের আরেক প্রান্তে রয়েছেন ধর্মনিষ্ঠ মুসলিমেরা। তারা আল্লাহকে ভয় করেন ঠিকই, তবে বিনোদনের মাধ্যমগুলোর ব্যাপারে সঠিকভাবে জানা না-থাকার কারণে কিংবা কোনো নির্দিষ্ট মাজহাব বা আলেমকে অন্ধ অনুসরণের ফলে বিনোদনের পুরো ধারণাটাকেই তারা নাকচ করে দেন।” {পৃ. ১১} অন্যত্র তিনি বলেন, “বিনোদনের বৈধতা প্রমাণে আমি এখন কিছু সাধারণ প্রমাণ উল্লেখ করছি। অজ্ঞতাবশত যাঁরা বিনোদনের প্রায় সব মাধ্যমকেই হারাম বলে ঘোষণা করেছেন, এই প্রমাণগুলো তাঁদেরকে ভাবনার খোরাক দেবে বিনোদনের ব্যাপারে। বিনোদনের সকল মাধ্যমকে হারাম ঘোষণার মাধ্যমে তাঁরা ইসলামকে যেমন নিজেদের জন্য কঠিন বানিয়ে ফেলেছেন তেমনি কঠিন বানিয়ে ফেলেছেন অন্যান্যদের জন্যও।” {পৃ. ২৫}
এই কথাটা পড়ার পর একটু কেমন যেনো লাগলো। এমন আলিমও কি আছেন, যিনি বিনোদনের সকল প্রকারকে হারাম ঘোষণা করতে পারেন! আচ্ছা, তাহলে বিনোদন কী জিনিস? কেনোই বা একদল আলিম বিনোদনমাত্রকেই হারাম বলছেন, আর লেখক সেই বিনোদনের বড় অংশকেই হালাল প্রমাণের চেষ্টায় বই লেখেছেন। অবশেষে বিনোদনের সংজ্ঞা লেখকের যবানিতেই পেয়ে গেলাম—“যা-কিছু মানুষকে একটু আনন্দ করার, অবসর সময় কাটানোর সুযোগ দেয় সেটাকেই বিনোদন হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা যায়।” হালাল বিনোদনের দৃষ্টান্ত হিসেবে তিনি যা যা এনেছেন এবং যেগুলোর ব্যাপারে বিস্তর আলোচনা করেছেন, তার কয়েকটি এই—‘বই পড়া, পরিবারের সাথে সময় কাটানো, আল্লাহর সৃষ্টি নিয়ে চিন্তা-ভাবনা, শরীর চর্চা, সাঁতার কাটা, বিশ্রাম নেওয়া, স্ত্রী-সহবাস ইত্যাদি’। আচ্ছা পৃথিবীর কোন স্কলার এসকল বিনোদনকে হারাম বলেছেন? জানতে বড় ইচ্ছা করে। যদি তারা ঢালাওভাবেই বিনোদনকে হারাম বলে থাকেন, তাহলে তাদের বিনোদনের সংজ্ঞা আর লেখকের সংজ্ঞা কি একই? যদি তা না হয়, তাহলে তিনি কেনো এভাবে সকলের ওপর মিথ্যাচার করলেন? এমন একজন আলিমও কি দেখানো সম্ভব, যিনি ‘বই পড়া, পরিবারের সাথে সময় কাটানো, আল্লাহর সৃষ্টি নিয়ে চিন্তা-ভাবনা, শরীর চর্চা, স্ত্রী-সহবাস ইত্যাদি’কে হারাম বলে ফতোয়া দিয়েছেন? মিথ্যাচার করে ক্রেডিট নেয়ার কী প্রয়োজন?
- “ফ্যাশান শো দেখা কিংবা র্যাম্প মডেলদের দিকে লোলুপ দৃষ্টিতে চেয়ে থাকা এগুলোও একইভাবে বাতিল ক্যাটাগরিভুক্ত। মোদ্দাকথা বিনোদনের যেসব মাধ্যমের সাথে বিপরীত লিঙ্গের দিকে কামনার দৃষ্টি জড়িয়ে আছে, সেগুলো সবই কঠোরভাবে নিষিদ্ধ।” {পৃ. ৩৩} বিনোদনের যেসব মাধ্যমের সাথে বিপরীত লিঙ্গের দিকে কামনার দৃষ্টি জড়িয়ে আছে, সেগুলো সবই কঠোরভাবে নিষিদ্ধ আর যেগুলোতে কামনামুক্ত দৃষ্টি জড়িয়ে আছে সেগুলোর কী বিধান? বইয়ে তিনি হারাম বিনোদনের লম্বা তালিকা দিয়ে বলেছেন, এর বাইরে সবই হালাল। সেই তালিকায় ভিন্ন লিঙ্গের দিকে কামনামুক্ত দৃষ্টির কথা নেই। তাহলে কি ধরে নেবো যে, কামনা ছাড়া ভিন্ন লিঙ্গের কাউকে দেখা যাবে? হাঁ, এটা হয়তো লেখক মহোদয়ের উদ্দেশ্য নয়। কিন্তু এ থেকে কেউ ভিন্ন মেসেজ নেয়ার পথ হয়তো খোলা রয়েছে।
- বাদ্যযন্ত্র ও অসাধু গান শিরোনামে লেখক আলোচনা করেন, বাদ্যযন্ত্র অনুমোদিত কি না এটা নিয়ে আজ তুমুল তর্ক বাধে। অবিশ্বাসী কাফেররা যেসব সঙ্গীত চর্চা করে, তাদের গানে যেসব বিষয়বস্তু ও কথা তুলে ধরে, সেগুলোর কারণে সাধারণভাবে এগুলো হারাম। কিন্তু বাদ্যযন্ত্র যদি অনুমোদিত কথার সাথে ব্যবহার করা হয় সেক্ষেত্রে সেটা হালাল কি না এটা নিয়েই মূল দ্বন্দ্ব। এরপর তিনি এ বিষয়ে দীর্ঘ আলোচনা করে এবং এতে হারাম-ফতোয়াপ্রদানকারীদের ঐকমত্যের দাবিকে খণ্ডন করেন। পরিশেষে এ বলে ইতি টানেন—“উপরোক্ত সবগুলো মত বিবেচনায় নিলে মুসলিমদের জন্য মিউজিকের ব্যাপারে সবচেয়ে নিরাপদ দৃষ্টিভঙ্গি হচ্ছে সংখ্যাগরিষ্ঠ আলেমদের অনুসরণ করা। যেসব মিউজিকে তারযুক্ত ও বায়ুচালিত বাদ্যযন্ত্রের সংশ্লিষ্টতা আছে সেগুলো পরিহার করা। একইসাথে মনে রাখতে হবে যে, ইস্যুটিতে মতভেদ আছে। কাজেই যারা আন্তরিকভাবে বাদ্যযন্ত্রের অনুমোদনে বিশ্বাস করেন, তাদের অবিশ্বাসী-কাফের বা পথভ্রষ্ট হিসেবে অভিহিত করা ঠিক হবে না; বরং এরা আমাদেরই মুসলিম ভাই ও বোন যারা সংখ্যালঘু আলেমদের মত অনুসরণ করছেন। সর্বশক্তিমান আল্লাহই ভালো জানেন কোন অভিমতটি সঠিক।” {পৃ. ৪০-৪৪} কথা হলো, ইখতিলাফের ক্ষেত্রে তো ভিন্ন ভিন্ন মতকে অনুসরণের অবকাশ আছে। কিন্তু যাল্লাত-স্খলন বা বিচ্ছিন্ন মতের ক্ষেত্রে কি সেই অবকাশ আছে? তাহলে তো শাইখ যাহেরির মতো বিয়ের পূর্বে পাত্রীর শরীরের সব মাংসল অঙ্গ দেখাকে জায়িয বলাও দোষণীয় হবে না, যারা মুতআ (সাময়িক বিবাহ) করে তাদেরকেকেও ভাই মনে করতে হবে, হস্তমৈথুনের ব্যাপারে শিথিল আচরণ করতে হবে। এমন আরো বহু কিছু। আচ্ছা, এসব ক্ষেত্রে এই নীতি তারা প্রচার করে থাকলে, দেশের বড় একজন আলিমের জর্দার ব্যাপার নিয়ে এতো কেনো ট্রল করা হয়?
- দাবা খেলা প্রসঙ্গেও লেখক ইখতিলাফ বয়ান করেছেন। একপর্যায়ে তিনি বলেন, “দাবা খেলা নিষিদ্ধ প্রমাণে যেসব হাদিস ব্যবহার করা হয় সেগুলো বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, এগুলোর কোনোটিই সহীহ নয়। আর তাই আলেমগণ যেমন ইবনে হায্ম মনে করেন দাবা খেলা হারাম নয়; এতে কিছু কল্যাণও আছে। শাইখ ইউসুফ আল-কারদাউই এ ব্যাপারে বলেছেন, ‘দাবা খেলায় মানসিক ব্যায়াম হয়, কারণ এতে চিন্তা-ভাবনা ও পরিকল্পনার প্রয়োজন। সেদিক থেকে এটা পাশা খেলার চেয়ে আলাদা। কারণ পাশা খেলায় ভাগ্যের ওপর নির্ভর করা হয়। আতি একে তুলনা করা যায় তীর নিক্ষেপ করে ভাগ্য নির্ণয়ের খেলার মতোই। অন্যদিকে দাবা খেলায় প্রয়োজন হয় দক্ষতা ও কৌশলের। একে তুলনা করা যায় তীরন্দাজি খেলার সাথে’।” এরপর তিনি উপসংহার টানেন এই বলে—“তবে দাবা খেলার সাথে যদি জুয়ার সংস্পর্শ থাকে তাহলে সেটা অবশ্যই হারাম হবে। কিংবা পরবর্তী পৃষ্ঠায় উল্লেখকৃত সাধারণভাবে যেগুলো হারাম এমন কিছুও যদি এ খেলার সাথে জড়িত করে, তাহলেও সেটা হারাম হবে।” {পৃ. ৪৭}
- “এখন আসি পেশাদার খেলাধুলা দেখার ক্ষেত্রে আমাদের অবস্থান কী হবে। পেশাদার খেলা দেখার ক্ষেত্রে বিধান আলাদা। যদিও এ ধরনের খেলায় অংশগ্রহণ করা কিংবা দেখা অনুমোদিত। নিচের হাদিসে এর প্রমাণ রয়েছে। আয়েশা রা. বর্ণনা করেন, ‘আমার মনে আছে একবার আমি আবিসিনিয়ানদের খেলা দেখছিলাম। রাসূলুল্লাহ সা. তাঁর উপরের কোট দিয়ে আমাকে আড়াল করে রেখেছিলেন। আমি তখন ছিলাম এক কিশোরী বালিকা। তো এই বয়সের ছেলেমেয়েরা খেলা দেখতে কী পছন্দ করে তা আপনারা জানেন নিশ্চয়’।” {মুসলিম} {পৃ. ৫৫}
- অনেক আলেমের মতে, খেলনা হিসেবে প্রাণী কিংবা মানুষের আদলে তৈরি পুতুল নিষিদ্ধ। কারণ সাধারণভাবে মানুষ কিংবা প্রাণীর ছবি আঁকা, ভাস্কর্য নির্মাণ করা হারাম। …তবে বাচ্চাদের খেলনা এই নিয়মের ব্যতিক্রম। আয়েশা রা. এরই অন্য একটি হাদিস থেকে এর প্রমাণ পাওয়া যায়। তিনি উভয় কথার পরে হাদিস উল্লেখ করে তা থেকে এই বক্তব্য প্রমাণ করার চেষ্টা করেছেন। এরপর তিনি লেখেন—“শিশুদের জন্য যেসব এনিমেশন মুভি, কার্টুন বানানো হয় উপরোক্ত ব্যতিক্রমের মধ্যে এগুলোও অন্তর্ভুক্ত করা যায়, যদি-না এর মধ্যে কোনো হারাম কিছু থাকে। শিক্ষণীয় বিষয় আছে এমন সবধরনের এনিমেশনকেই কতিপয় আলেম এই ব্যতিক্রমের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করেছেন। এগুলোর মধ্যে রয়েছে ছবিসহ শিশুদের বই।” {পৃ. ৬০-৬১} এরপর তিনি আলবানি রহ.-এর একটি বক্তব্য উল্লেখ করেন। এরই আলোকে হয়তো আমাদের গার্ডিয়ানের ভাইয়েরা সিরাতের বইও তাদেরই মতো শার্টপ্যান্ট পরা এবং ক্লিনশেভড ব্যক্তির ছবিসহ প্রকাশ করেন।
- টেলিভিশন সম্পর্কে তিনি দীর্ঘ আলোচনা করেছেন। তার বক্তব্যের সারকথা হলো, “প্রাথমিকভাবে মুসলিম আলেমগণ টেলিভিশনকে বাতিল বলেছিলেন। …তবে পরবর্তীকালে বিশেষজ্ঞগণ তাদের সিদ্ধান্তের ভুল ধরতে পেরেছেন। তারা বুঝছেন, টেলিভিশন নয়; বরং কিভাবে এটা ব্যবহৃত হচ্ছে সেটাই নির্ধারণ করে এটা ভালো কি মন্দ। টেলিভিশন যদি সঠিকভাবে ব্যবহার করা যায়, তাহলে মানুষকে সঠিক দিকনির্দেশনা দেওয়ার জন্য এটা হতে পারে একটা অসাধারণ মাধ্যম। এটা বিবেচনা করে অনেক বিশেষজ্ঞই টেলিভিশনের ব্যাপারে তাদের পূর্বের মত বদল করেছেন।” {পৃ. ৬৪}
- “তাছাড়া সব মুসলিমই জান্নাতে যাবেন এমন কোনো নিশ্চয়তা কেউ দেয় নি। আমাদের কাজের মাধ্যমেই আমাদের প্রকৃত বিশ্বাস ফুটে ওঠে। সেই কাজ অনুযায়ীই আমাদের বিচার করা হবে।” {পৃ. ৬৯}
- চেয়ারে বসা, খাবার টেবিলে খাওয়া কিংবা পার্থিব কাজে মাইক্রোফোন ব্যবহার করা। এগুলো ফুটবল খেলা, ভিডিও গেমস কিংবা গান গাওয়ার মতোই পার্থিব জিনিস। কাজেই স্পষ্টভাবে হারাম প্রমাণিত না হলে এগুলো সবই হালাল। {পৃ. ৭০}
- ধর্মীয় ক্ষেত্রে কুফফারের অনুকরণ নিষিদ্ধ প্রসঙ্গে আলোচনা করতে গিয়ে তিনি বলেন, “ধর্মীয় ক্ষেত্রে অনুকরণের মধ্যে আছে যিক্র করার জন্য জপমালা ব্যবহার করা, চলতি বাংলায় যাকে আমরা তাসবিহ বলি। এটাও একটা খ্রিষ্টীয় প্রথার অনুকরণ।” {পৃ. ৭১}
- রাসূলুল্লাহ সা. পানাহার করেছেন, বিয়ে করেছেন। তিনি দৌড়াতেন … সাহাবীদের সাথে কুস্তি লড়তেন। {পৃ. ৭৩}
- কুফফার-অবিশ্বাসীদের সব কাজই যদি হারাম হিসেবে গণ্য করা হয়, তাহলে পরিস্থিতি খুবই অবাস্তবিক হয়ে দাঁড়াবে। জীবনযাপন কঠিন হয়ে পড়বে। ইসলাম মোটেও প্রযুক্তি, সামাজিক কিংবা বৈজ্ঞানিক অগ্রগতির বিরুদ্ধে নয়। কাজেই হালাল কাজে অবিশ্বাসী-কুফফারের অনুরূপ কোনো কাজ করা নাজায়েয নয়। {পৃ. ৭২}
- বিধর্মীদের ধর্মীয় উৎসব পালনের ক্ষেত্রে এটাই বিধান (অর্থাৎ নাজায়েয)। যে উৎসবগুলো ধর্মীয় প্রকৃতির নয়, সেগুলো পালন করা যাবে। তবে খেয়াল রাখতে হবে এসব অনুষ্ঠানে হারাম কিছুর অনুপ্রবেশ যাতে না ঘটে। {পৃ. ৪৬} বিজয় দিবস, স্বাধীনতা দিবস, পহেলা বৈশাখ থেকে শুরু করে এ ধরনের সকল দিবস পালনকে যারা বৈধ বলে, তারা সাধারণত এ কথাই বলে থাকে।
- বুখারির একটা হাদিসের অনুবাদের ধরন দেখে খুব অবাক হলাম। “…কাজেই আপনারা বাড়াবাড়ি করবেন না। যতটা সম্ভব নিখুঁত হওয়ার চেষ্টা করুন। নিশ্চিত থাকুন আপনারা সওয়াব পাবেন আর দিনে ও রাতে ইবাদতের মাধ্যমে শক্তি অর্জন করুন।” {পৃ. ২৬}
- বেশি বেশি কমেডি শো ও সিটকম অনুষ্ঠান দেখার যে প্রবণতা আজকাল দেখা যায় সেটা অগ্রহণযোগ্য। সারাদিন হাস্যরসে মশগুল কেউ ইসলামকে গুরুত্বের সাথে নেবে, এমনটা দেখা যায় না। {পৃ. ৩৯}
- আপনি যদি গেমস খেলতে পছন্দ করেন এবং দৈনন্দিন কাজের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রেখে চলতে পারেন, তাহলে গেমস খেলায় কোনো আপত্তি নেই। তবে সাবধান! গেমস খেলার প্রতি আসক্ত হয়ে যাবেন না। আর খেললেও হালাল গেম খেওলবেন। মুভি ও অন্যান্য ভিডিওর ক্ষেত্রেও একই কথা। {পৃ. ৭৬}
- কথিত আছে, ওমর রা. বলেছেন, ‘গান সফরকারীর সঙ্গী’। বর্ণনাটি কতটুকু সহীহ জানি না, তবে ইমাম মালিক বলেছেন যে, ভ্রমণের সময় গান গাওয়ায় কোনো দোষ নেই, তো আপনার গাড়িতে আজই জেইন বিখা ও দাউদ ওয়ার্নসবির সিডি দিয়ে ভরে তুলুন। ছুঁড়ে ফেলে দিন সব হারাম মিউজিক। কাজে যেতে, কাজ থেকে ফিরতে উপভোগ করুন হালাল গান-নাশীদ। {পৃ. ৭৭}
বইয়ের একটি প্যারা অবশ্য বেশ ভালোও লেগেছে। আপনি যদি বিবাহিত না হন, তাহলে শিগগিরই বিয়ে করে ফেলুন, অনেকগুলো বাচ্চা নিন। যাতে করে একসাথে সবাই মিলে বিনোদন… উপভোগ করতে পারেন। {পৃ. ৭৯}
যারা বইটির খেদমতে নিয়োজিত হয়েছেন, আমরা সর্বোপরি তাদের জন্য কল্যাণ কামনা করি। পাশাপাশি বইটা যদি খটকামুক্ত হতো, তাহলে কতোই না ভালো হতো—এই শূন্যতা অনুভব করি।
প্রসঙ্গ-কথা : ১
“অনেকেই শরিয়ত ও ফিক্হকে এক মনে করেন। তাই শুরুতেই শরীয়ত ও ফিক্হ-এর মধ্যে পার্থক্য জানাটা জরুরি। দুটো শব্দকেই সাধারণভাবে ‘ইসলামী আইন’ হিসেবে অনুবাদ করা হয়। কুরআন ও সুন্নাহর স্পষ্ট বিধিবিধানের ওপর ভিত্তি করে ইসলামী আইনের যে-মূল কাঠামো দাঁড়িয়ে আছে সেটাই শরীয়ত। এটা সুনির্দিষ্ট। সবাই এর সাথে একমত। এই বিধানগুলো অপরিবর্তনীয়। কারণ, আবহমনকাল থেকে মানব-প্রকৃতি সবসময় অপরিবর্তনীয়। কাজেই মানুষের মূল করণীয় কাজগুলো কখনোই বদলাবে না। এ ধরনের বিধানগুলোর মধ্যে রয়েছে ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভ সঠিকভাবে নিয়মিত পালন করা। অনৈতিক, অসামাজিক কাজ থেকে বিরত থাকা। যেমন, অবিবাহিত নারী-পুরুষের মধ্যে শারিরিক সম্পর্ক, বিবাহিতদের ক্ষেত্রে স্বামী বা স্ত্রী ছাড়া অন্য কারও সাথে শারীরিক সম্পর্ক এবং সমকামিতা।
ফিক্হ হলো ইসলামী আইনের দ্বিতীয় পর্যায়ের বিধিবিধান। আল্লাহ তাঁর অসীম দয়াগুণে অনেক ব্যাপারে কেবল একটা সাধারণ দিক-নির্দেশনা দিয়ে রেখেছেন। বিধানগুলো নির্দিষ্ট করে দেন নি। আইন বিশেষজ্ঞগণ এসব বিধিবিধানের ক্ষেত্রে মতভেদ করতে পারেন। এই বিধিবিধানগুলো পরিস্থিতি ও পারিপার্শ্বিক পরিবেশ অনুযায়ী বদলে যায়। ফিক্হকে এমন সাধারণ রাখার পেছনে কারণ হচ্ছে, এর মাধ্যমে সকল যুগে যেকোনো স্থানে ইসলামের সহজসাধ্যতা ও প্রায়োগিকতা নিশ্চিত করা। মানব-প্রকৃতি না-বদলালেও মানুষের সংস্কৃতি, পরিবেশ, প্রযুক্তিগত উৎকর্ষ স্থানভেদে বদলায়। এসব বাস্তবতা চিন্তা করেই ইসলাম ফিক্হের দ্বার উন্মুক্ত করেছে। আল্লাহ যেসব সাধারণ দিকনির্দেশনা দিয়ে রেখেছেন ইসলামী আইনবিশেষজ্ঞগণ সেগুলোকে ফিক্হের মূলনীতি হিসেবে গ্রহণ করেছেন।” {পৃ. ১৬}
উপরিউক্ত বক্তব্য থেকে বিশেষভাবে কয়েকটি পয়েন্ট বেরিয়ে আসছে, যে পয়েন্টগুলোতে আমাদের জেনারেল ভাইদের অনেকেই হোঁচট খান—
- “কুরআন ও সুন্নাহর স্পষ্ট বিধিবিধানের ওপর ভিত্তি করে ইসলামী আইনের যে-মূল কাঠামো দাঁড়িয়ে আছে সেটাই শরীয়ত”। অর্থাৎ শরিয়াহ দাঁড়িয়ে আছে কুরআন ও সুন্নাহর স্পষ্ট বিধিবিধানের ওপর ভিত্তি করে। আর যেহেতু এখানে শরিয়াহ এবং ফিকহের মধ্যকার পার্থক্য বয়ান করা হচ্ছে, তাই এর অর্থ দাঁড়ায়, ফিকহ দাঁড়িয়ে আছে কুরআন ও সুন্নাহর অস্পষ্ট বিধিবিধানের ওপর ভিত্তি করে। আর তাই “শরিয়াহ সুনির্দিষ্ট। সবাই এর সাথে একমত। এই বিধানগুলো অপরিবর্তনীয়”। এরপর তিনি কিছু বিধানের কথা উল্লেখ করেন, যেগুলো শরিয়াহর বিধান, ফিকহের নয়। “এ ধরনের বিধানগুলোর মধ্যে রয়েছে ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভ সঠিকভাবে নিয়মিত পালন করা। অনৈতিক, অসামাজিক কাজ থেকে বিরত থাকা। যেমন, অবিবাহিত নারী-পুরুষের মধ্যে শারিরিক সম্পর্ক, বিবাহিতদের ক্ষেত্রে স্বামী বা স্ত্রী ছাড়া অন্য কারও সাথে শারীরিক সম্পর্ক এবং সমকামিতা”।
- ফিকহের বিধানগুলো নির্দিষ্ট নয়, অনির্দিষ্ট। মহান শরিয়াহপ্রণেতা এর “বিধানগুলো নির্দিষ্ট করে দেন নি। তাই আইন বিশেষজ্ঞগণ এসব বিধিবিধানের ক্ষেত্রে মতভেদ করতে পারেন”। আর যেহেতু মহান শরিয়াহপ্রণেতা ফিকহের বিধানগুলোকে নির্দিষ্ট করে দেননি, তাই “এই বিধিবিধানগুলো পরিস্থিতি ও পারিপার্শ্বিক পরিবেশ অনুযায়ী বদলে যায়”। একেক কালে একেক রূপ ধারণ করে। বৈধতা-অবৈধতার চক্রে ক্রমান্বয়ে ঘুরপাক খায়। অর্থাৎ ফিকহ শাস্ত্রটাই হলো কাদামাটির ওপর গড়ে ওঠা সুউচ্চ প্রাসাদ। তরঙ্গের দোলাও যার পতনের কারণ হতে পারে। “ফিক্হকে এমন সাধারণ রাখার পেছনে কারণ হচ্ছে, এর মাধ্যমে সকল যুগে যেকোনো স্থানে ইসলামের সহজসাধ্যতা ও প্রায়োগিকতা নিশ্চিত করা”। কারণ, “মানব-প্রকৃতি না-বদলালেও মানুষের সংস্কৃতি, পরিবেশ, প্রযুক্তিগত উৎকর্ষ স্থানভেদে বদলায়”। তাই মানব-প্রকৃতির সঙ্গে তাল মেলাতে গিয়ে ফিকহকেও অনিবার্যভাবে বহুরূপী হতে হয়।
শাইখ মুস্তাফা আহমাদ যারকা রহ. তার ‘আলমাদখালুল ফিকহিয়্যুল আম’ গ্রন্থে লেখেন—
“এখানে একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ সূক্ষ্ম বিষয় রয়েছে, যেখানে অনেকেরই বিভ্রান্তি ঘটে। বিষয়টি স্পষ্ট করা এবং পাঠককে এ সম্পর্কে অবগত করা উচিত। বিষয়টি এই যে, ইসলামি ফিকহ দু’ধরনের বিধানকে অন্তর্ভুক্ত করে, যা সম্পূর্ণভাবে একটি অপরটির থেকে ভিন্ন।
প্রথম প্রকার হলো, এমন সব বিধিবিধান, যা প্রামাণিকতা এবং নির্দেশনার ক্ষেত্রে অকাট্য নুসুস দ্বারা সাব্যস্ত; যেগুলো ইসলামের শরিয়াহপ্রণেতার সুস্পষ্ট ইচ্ছার প্রতিনিধিত্ব করে, তিনি মুকাল্লাফদের (যাদের ওপর শরিয়াহ পালন করা অপরিহার্য) ইসলামের জীবনবব্যবস্থারূপে যা তাদের ওপর আবশ্যক এবং অনিবার্য করে দিয়েছেন। যেক্ষেত্রে তিনি তাদের ব্যাখ্যা, উপলব্ধি কিংবা ভিন্ন ফলাফল বের করার কোনো পথই খোলা রাখেন নি। যেমন, নামাজ, যাকাত, রমজানের রোজা, চুক্তি পূর্ণ করা এবং প্রয়োজন ও শক্তি-সামর্থ্য অনুসারে জিহাদ করা প্রভৃতি, অর্থাৎ এ ধরনের যতো বিধান কুরআন এবং মুতাওয়াতির সুন্নাহয় বিবৃত হয়েছে।
দ্বিতীয় প্রকার হলো, এমন সব বিধিবিধান, যে ব্যাপারে কিতাব এবং সুন্নাহ নীরব থেকেছে এবং শরিয়াহর আলিমগণের জন্য ইজতিহাদ এবং ইসতিমবাতের সুযোগ রেখেছে, অথবা সে ব্যাপারে প্রামাণিকতা কিংবা নির্দেশনার ক্ষেত্রে অকাট্য নয় এমন নুসুস বর্ণিত হয়েছে, যা তার প্রামাণিকতা কিংবা অর্থের প্রতি নির্দেশনার ব্যাপারে আলিমগণের বিভিন্ন মতের সম্ভাবনা রাখে। এসকল নুসুস তার উপলব্ধি এবং তা থেকে বিধান উদ্ঘাটনের ক্ষেত্রে আলিমগণের ইজতিহাদের ক্ষেত্র।
ইসলামি ফিকহ এবং ফিকহি গ্রন্থাদি উপরিউক্ত উভয় প্রকার বিধানকে অন্তর্ভুক্ত করে।” {আলমাদখালুল ফিকহিয়্যুল আম: ১/১৫৪}
উপরিউক্ত উদ্ধৃতি থেকে পাঠক নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন যে, ফিকহকে প্রধানত দু’ভাগে ভাগ করা যায়, যার একভাগের সঙ্গে শরিয়াহর অমিল দাঁড় করানো গেলেও প্রথমভাগের সঙ্গে তার অমিল খঁজে পাওয়া যাওয়া নিশ্চয়ই দায়!
আচ্ছা, ফিকহের দ্বিতীয় প্রকারের সঙ্গে তাহলে শরিয়াহর কী পার্থক্য দাঁড়াচ্ছে?
শায়খ রহ. লেখেন—
“শরিয়াহ হলো কুরআনের নুসুস, যা আল্লাহর পক্ষ থেকে তার রাসুল মুহাম্মাদ সা.-এর ওপর অবতীর্ণ, এবং নববি সুন্নাহ, অর্থাৎ রাসুলুল্লাহ সা.-এর কথা এবং কাজ, যা কুরআনে যা-কিছু সংক্ষিপ্তরূপে রয়েছে তারই ব্যাখ্যা এবং বিস্তারিত রূপ, কুরআনের আদেশ নিষেধ এবং বৈধতার প্রায়োগিক রূপ।
…আর ফিকহ হলো, আলিমগণ শরিয়াহর নুসুস থেকে যা-কিছু বুঝেছেন, সে-সকল নুসুস থেকে যেসব বিধান উদ্ঘাটন করেছেন এবং তার আলোকে যেসব মূলনীতি বের করেছেন ইত্যাদির নাম।
…তো শরিয়াহ হলো মাসুম (যা ভুলের সম্পূর্ণ উর্ধ্বে)। ইসলামি আকিদা অনুসারে যার পুরোটাই সঠিক যথার্থ এবং কল্যাণকর, যা মানবজীবনকে সরল সঠিক পথে পরিচালিত করে।
আর ফিকহ হলো শরিয়াহ অনুধাবন এবং শরিয়াহপ্রণেতার উদ্দেশ্যের প্রতি লক্ষ্য রেখে মৌলিক মূলনীতির আলোকে তা থেকে বিধান-উদ্ঘাটনের নিমিত্তে শরিয়াহর নুসুসকে বাস্তবিক প্রয়োগের ক্ষেত্রে ফকিহগণের একটি কর্ম। …সুতরাং ফিকহ হলো ফকিহের অনুধাবন এবং সিদ্ধান্ত, যদিও তা শরয়ি নুসুসের ওপর ভিত্তি করেই হয়ে থাকে।” {প্রাগুক্ত: ১৫৩-১৫৪}
তো ফিকহ শাস্ত্র নামে আমরা যা-কে চিনি, তা মূলত ফিকহের উভয়প্রকার বিধানকেই ধারণ করে। সুতরাং ফিকহ মানেই এমন কিছু নয়, যার বিধানগুলো অনির্দিষ্ট। যুগ-যুগান্তে যা শুধু পরিবর্তিত হতেই থাকে। বরং ফিকহের দ্বিতীয় প্রকারের কোনো কোনো বিশেষ কোনো পরিস্থিতিতে বিধান স্থান-কাল-পাত্র ভেদে উসুলের আলোকে বিবেচ্য কোনো কারণে পরিবর্তিত হলেও এর সংখ্যা খুবই সীমিত। প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখ্য, সেক্যুলাররা শরিয়াহ এবং ফিকহের মধ্যে এক ধরনের পার্থক্য ফেরি করে বেড়ায়, যা জ্ঞাতসারে কিংবা অজ্ঞাতসারে অনেক মানুষকে বিভ্রান্ত করে। ইসলামওয়েবের এক ফাতাওয়ায় বলা হয়েছে—
وأما من أراد من التفريق أن يقول بأن الشريعة هي: ما ينظم علاقة العبد بالله، وهي منزلة من عند الله. والفقه هو: استنباط الفقهاء، فلهم أن يستنبطوا من الأحكام، ويُعملوا عقولهم دون التقيد بنصوص الشريعة والمصادر التي اعتمدتها، فهذه دعوى العلمانيين الذين يريدون زحزحة الدين عن مجالات الحياة المختلفة، وحصره في جانب العقائد والعبادات.
ثم يتولى الناس التشريع لأنفسهم، فيشرعون ما شاءوا، وهذا كفر بالله تعالى مخرج من ملة الإسلام.
نسأل الله العافية.
“শরিয়াহ এবং ফিকহের মধ্যে যারা এভাবে পার্থক্য দেখাতে চায় যে, শরিয়াহ আল্লাহর সঙ্গে বান্দার সম্পর্ক সুসংহত করে। আর তা আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে অবতীর্ণ। আর ফিকহ হলো ফকিহদের উদ্ভাবন। ফকিহরা যেকোনো বিধান উদ্ঘাটন করতে পারে, তারা নিজেদের আকলকে ব্যবহার করে এসব করে, শরিয়াহর নুসুস এবং শরিয়াহ যেসকল তথ্যসূত্রের ওপর নির্ভর করেছে তার ধার ধারে না। এটা তো সেক্যুলারদের দাওয়া, যারা দ্বীনকে জীবনের বিভিন্নমুখী ক্ষেত্র থেকে আলাদা করতে চায় এবং দ্বীনকে আকিদা এবং ইবাদতের মধ্যে সীমাবদ্ধ করতে চায়। (এই বাতিল চিন্তাধারায় যে ইসলামপন্থী অনেক লেখকও আক্রান্ত তার প্রমাণ মেলবে ‘বি স্মার্ট উইথ মুহাম্মাদ’ বইয়ে নজর বুলালে) এরপর লোকেরাই নিজেদের জন্য বিধান প্রণয়নের দায় কাঁধে নিয়ে নেয়। অনন্তর তারা যা চায়, তা উদ্ভাবন করতে থাকে। এটা আল্লাহ তাআলার সাথে কুফরের নামান্তর, যা আক্রান্ত ব্যক্তিকে ইসলাম-ধর্ম থেকে বের করে দেয়। আমরা আল্লাহর কাছে পানাহ চাই।” {লিংক: https://goo.gl/qSqSEB }
‘হালাল বিনোদনে’র লেখক যদিও পুরোপুরি সেক্যুলারদের মতো দাওয়া করেন নি, তবে তিনি ফিকহের যে পরিচয় দিয়েছেন, তা একটু কেমন যেনো লাগছে, হতে পারে এ থেকে অনেকেই ভুল বুঝবেন। তিনি ইচ্ছাকৃত এমনটা করেছেন, আমরা তা বলছি না। তবে অনিচ্ছাকৃত হলেও এই দুর্ঘটনাটি ঘটেছে। তার বক্তব্য থেকে কিংবা অনুবাদকের অনুবাদ থেকে ফিকহ খুবই হালকা একটি শাস্ত্র হিসেবে প্রতীয়মান হচ্ছে, বাতাসের দোলায়ও যা রীতিমতো কম্পমান হয়।
প্রসঙ্গ-কথা : ২
“একজন লোক তখনই পাপের ভাগিদার হয়, যখন তার ফরজ কোনো ইবাদত ছুটে যায় অথবা যখন সে কোনো হারাম কাজ করে বসে।” {পৃ. ১৭} শরিয়াহর বিধিবিধানের প্রকারগুলো উল্লেখ করার পর তিনি এ কথা বলেছেন। এজন্যই মূলত খটকা জেগেছে।
অথচ মাকরুহে তাহরিমিতে লিপ্ত হলেও ব্যক্তি পাপের ভাগিদার হয়, শুধু ভাগিদারই নয়, বরং কর্মগত বিচারে তার মধ্যে এবং হারামের মধ্যে পার্থক্য দাঁড় করানো দুষ্কর। হারাম সাব্যস্ত হওয়ার জন্য একেবারে অকাট্য দলিলের প্রয়োজন হয়, পক্ষান্তরে যন্নি দলিল দ্বারা মাকরুহে তাহরিমি সাব্যস্ত হয়। এই বিষয়টিকে না মানলে নিশ্চিত জুলমে পতিত হবে। কারণ তখন মাকরুহে তাহরিমিকেও গুনাহ মনে না করে এতে লিপ্ত হওয়ার পথ খুলবে। কিংবা তাকে হারাম বলে চালিয়ে দেয়া হবে। উভয়টিই প্রান্তিকতা। মাসিক আলকাউসার তার ফতোয়ার ক্ষেত্রে বর্তমানে সাধারণত ‘মাকরুহে তাহরিমি’ শব্দের স্থলে ‘নাজায়িয’ শব্দ ব্যবহার করে। আর মাকরুহে তাহরিমি যে সম্পূর্ণ নাজায়িয—এতে তো সন্দেহের অবকাশ নেই। পক্ষান্তরে হারামের ক্ষেত্রে সরাসরি ‘হারাম’ শব্দই লেখা হয়।