আল-ওয়ালা ওয়াল-বারা’র ভিত্তি যদি হয় ভৌগলিক ও নৃতাত্ত্বিক পরিচয়, তাহলে এটা তাওহিদ নয়। ভিত্তি যদি হয় বংশ গোত্র বা সম্প্রদায়, তাহলে এটা তাওহিদ নয়। ভিত্তি যদি হয় কোনো বিশেষ পির শায়খ বা আলিমের অন্ধ অনুসরণ, তাহলে এটা তাওহিদ নয়। ভিত্তি যদি হয় দেওবন্দি আজহারি বা মাদানি সার্কেল, তাহলে এটা তাওহিদ নয়। ভিত্তি যদি হয় হানাফি মালেকি শাফেয়ি হাম্বলি বা জাহেরি, তাহলে এটা তাওহিদ নয়। ভিত্তি যদি হয় আশআরি মাতুরিদি আসারি বা মাদখালি, তাহলে এটা তাওহিদ নয়। ভিত্তি যদি হয় ভাষা বর্ণ দল সংগঠন বা মানবরচিত কোনো মতাদর্শ, তাহলে এটা তাওহিদ নয়।
তাহলে তাওহিদ কী?
তাওহিদ হলো একমাত্র আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের প্রতি ইমানের ভিত্তিতে আল-ওয়ালা ওয়াল-বারা কায়েম করা। আল-ওয়ালা হবে মুমিনদের সাথে, আল-বারা হবে কাফির মুশরিক মুনাফিক মুরতাদ জিন্দিক ও নাস্তিকদের সাথে। বিদআতিদের সঙ্গেও আল-বারা থাকবে তাদের বিদআত অনুপাতে। পাপী ও গোমরাহদের সঙ্গেও আল-বারা থাকবে তাদের পাপ ও গোমরাহি অনুসারে।
তাহলে কি সব ইখতিলাফ মিটিয়ে দিতে হবে? না, দালিলিক ইখতিলাফ আপন জায়গায় প্রতিষ্ঠিত থাকবে। চার মাযহাব ভেঙে এক মাযহাব হবে না। আজহারি মাদানি দেওবন্দি মুছে দিয়ে এক ধারা চালু হবে না। পৃথিবীর সব আলিমকে বাদ দিয়ে কেবলই তোমার অনুসৃত আলিমের পতাকাতলে সবাই সমবেত হবে না। আশআরি মাতুরিদি ও আসারি কখনো একঘাঁটে পানি খাবে না। শত শত বছর ধরে এই ইখতিলাফ চলে আসছে। সামনেও আল্লাহ যতদিন চাইবেন, চলতে থাকবে। কিন্তু এগুলো আল-ওয়ালা ওয়াল-বারা’র ভিত্তি নয়। এগুলোকে কেন্দ্র করে ভালোবাসা ও ঘৃণার চর্চাও করা যাবে না।
আমাদেরকে তো বলা হয়েছে উম্মাহ হতে, হানাফি বা দেওবন্দি হতে তো বলা হয়নি?
জি, আমাদেরকে বলা হয়েছে উম্মাহ হতে; এটা আপন জায়গায় সঠিক। কিন্তু এর বিকৃত ব্যাখ্যা গ্রহণযোগ্য নয়। রাসুলুল্লাহ সা. কেন কুরায়শি হলেন? সালমান কেন ফারসি হলেন? আবু হানিফা কেন কুফি হলেন? মুহাম্মাদ ইবনু ইসমাইল কেন বুখারি হলেন? সুলতান সালাহুদ্দীন আইয়ুবি কেন আশআরি হলেন? শাহ ওয়ালিউল্লাহ কেন নিজের পরিচয় প্রসঙ্গে হানাফি, আশআরি ও দেহলবি বললেন? তবে কি তারা উম্মাহ ছিলেন না? আসলে উম্মাহ অর্থই আমরা বুঝিনি। উম্মাহ হব তাওহিদের ভিত্তিতে। যখন সবাই মিলে আল্লাহর রজ্জুকে আঁকড়ে ধরব, তখন আমরা উম্মাহ। আমরা এক দেহ। স্রেফ শাখাগত বিষয়কে কেন্দ্র করে আমরা কখনো উম্মাহ ছিলাম না, কখনো উম্মাহ হতেও পারব না।
কুরআন নাজিল হয়েছিল আরবের সুপ্রসিদ্ধ ও বিশুদ্ধ সাত ভাষায়। সকল সাহাবির তেলাওয়াত অভিন্ন ছিল না। আবু বকর থেকে আলি রা.—এই চারজনের রাজনীতির পদ্ধতিও এক ছিল না। সকল সাহাবির ফিকহ এক ছিল না। তাদের মধ্যেও প্রচুর ইখতিলাফ ছিল। আবদুল্লাহ বিন মাসউদ রা. থেকে যেই ধারা ইরাকে ছড়িয়েছে, তাদের সঙ্গে মদিনাবাসীদের অনেক ক্ষেত্রে অমিল ছিল। তাই বলে তারা উম্মাহ হওয়া থেকে বেরিয়ে যাননি। সালাফ বলতে যাদেরকে বোঝায়, হাজার হাজার মাসআলায় তাদের মধ্যে দ্বিমত ছিল। ফিকহের প্রসিদ্ধ চার ইমাম, হাদিসের প্রসিদ্ধ ছয় ইমাম, আকিদার প্রসিদ্ধ শত ইমামের মধ্যে প্রচুর মতানৈক্য ছিল। এমনকি একেক মাযহাবের ইমামের অনুসারী যারা, তারাও ইজতিহাদ করে প্রচুর পরিমাণ পরস্পর বিপরীতধর্মী মতও দিয়েছেন। তাই বলে কেউই উম্মাহ হতে বের হয়ে যাননি।
চার মাযহাব সত্য—এর অর্থ এটা নয় যে, প্রতিটা মাসআলায় প্রত্যেক মুজতাহিদের দৃষ্টিতে অন্য সবাইও সঠিক। বরং এক্ষেত্রে তাদের মূলনীতি ছিল, ‘আমার মত সঠিক, তবে তা ভুলের আশঙ্কা রাখে। অন্যদের মত ভুল, তবে তাও সঠিক হওয়ার সম্ভাবনা রাখে।’ যার কারণে তালফিক জায়েয নেই। অর্থাৎ একই মাসআলার বিভিন্ন অংশ নেবেন বিভিন্নজনের থেকে। সবগুলোকে মিলিয়ে বানিয়ে ফেলবেন জগাখিচুড়ি। সবগুলো হক—এটা বলা হয় সার্বিক বিচারে। এর অর্থ এটা নয় যে, কারও কোনো ভুল নেই। প্রত্যেক ক্ষেত্রে সবাই-ই সঠিক। বিষয়টা কখনোই এমন নয়।
সহিহ বুখারি না পড়ে কেউ আলিম হয় না। তাই বলে ইমাম বুখারি যে বিশের অধিক জায়গায় ইমাম আবু হানিফাকে অনর্থক তাচ্ছিল্য করেছেন, এটা কিন্তু ইনসাফপন্থীরা কখনো গেলে না। প্রত্যেকের থেকে ততটুকুই গ্রহণীয়, যতটুকু কুরআন-সুন্নাহ সমর্থিত। ইসলামে ব্যক্তিপূজার কোনো স্থান নেই। আমরা ইমাম আবু হানিফার পূজা করি না, আর না ইমাম ইবনু তাইমিয়ার পূজা করি। আল্লাহর রাসুল সা. ছাড়া আর কেউই নিঃশর্তভাবে অনুসরণীয় নয়। সাহাবিগণকে হকের মাপকাঠি বলা হয় সামগ্রিক বিচারে। যার কারণে সাহাবিগণের ইজমার মর্যাদা সবচে বেশি। তাদেরকে হকের মাপকাঠি বলার অর্থ এটা নয় যে, প্রতিটা ক্ষেত্রে প্রতিজনকেই আমরা ভুলের ঊর্ধ্বে মনে করি। বরং অনেক ক্ষেত্রে তাদের কারও কারও থেকে ভুল হয়েছে, গোনাহও হয়েছে। কিন্তু সামগ্রিকভাবে তারা অবশ্যই হকের মাপকাঠি। কারণ, তারা সকলে কখনো ভুলের ওপর ঐক্যবদ্ধ হবেন না, এটা নুসুস দ্বারা স্বীকৃত।
কেউ নিজেকে দেওবন্দি বা আজহারি বলার অর্থ এটা নয় যে, সে কোনো ভুলের ক্ষেত্রেও এই ধারার পূর্বসূরিদের অনুসরণ করে। কেউ নিজেকে হানাফি বা হাম্বলি বলার অর্থও এটা নয় যে, সে ইমাম আবু হানিফা বা ইমাম আহমদের ভুল ইজতিহাদও ইচ্ছাকৃতভাবে অনুকরণ করে। এগুলো সবই জাস্ট পথ ছাড়া কিছু নয়। লক্ষ্যে পৌঁছার জন্য পথ ধরে এগোলে সহজে পৌঁছা যায়। অযোগ্যদের জন্য তাই পথ ধরার বিকল্প নেই। কিন্তু সকলের মূল লক্ষ্য এক, উদ্দেশ্য এক। পথ ধরে না কে? কেউ ধরে আবু হানিফা বা তহাবির পথ, আর কেউ ধরে মতিউর রহমান মাদানি বা আবদুর রাজ্জাক বিন ইউসুফ কিংবা আবু বকর জাকারিয়ার পথ। যার কারণেই তো কেউ নিজেই যোগ্য মুজতাহিদ হলে তার জন্য অন্য কোনো মুজতাহিদকে অনুসরণ করা আবশ্যক থাকে না। কারণ, আল্লাহ তাকে এসকল পথ না ধরেই মূলে পৌঁছার বিশেষ যোগ্যতা দান করেছেন।
হ্যাঁ, এরপরও কেউ যদি সহজার্থে যোগ্য হওয়া সত্ত্বেও অন্য কারও মূলনীতি অনুসরণ করে, যেমনটা ইমাম আবু ইউসুফ ও মুহাম্মাদ করেছেন, দেহলবি ও লাখনবিও করে গেছেন, তাহলে অবশ্যই এরও সুযোগ আছে। আর এটা তো স্বীকৃত সত্য যে, পরবর্তীদের চাইতে সামগ্রিকভাবে পূর্ববর্তীদের জ্ঞান ও বুঝ শ্রেষ্ঠ ছিল। হ্যাঁ, কিছু যে ব্যতিক্রম হয় না, তা নয়। এ জন্যই তো বলা হয়েছে, ‘উম্মাহর দৃষ্টান্ত বৃষ্টির মতো, জানা নেই, এর প্রথমাংশ উত্তম নাকি শেষাংশ’। অর্থাৎ কার দ্বারা উম্মাহ বেশি উপকৃত হবে, এটা নিশ্চিত করে বলার সুযোগ নেই। নিশ্চয়ই আবু হানিফার উস্তাদ হাম্মাদের চাইতে তার দ্বারাই উম্মাহ বেশি উপকৃত হয়েছে। হুমায়দির চেয়ে বুখারির দ্বারা উম্মাহর ফায়দা বেশি হয়েছে। মাহদিও তো শেষে এসে মুক্তোঝড়ানো বৃষ্টিরূপে আবির্ভূত হবেন। এত পরেও এসে সাহাবিগণের পরে সর্বোচ্চ মর্যাদাবান হবেন।
শোকরান জাযাকাল্লাহ খায়ের প্রিয় শাইখ আল্লাহ আপনাকে রহমতের চাদর দ্বারা ঢেকে রাখুন
বর্তমান যুগের সর্বজনপ্রিয় মুহাক্কিক আলেম শাইখুল ইসলাম মাওলানা মুহাম্মাদ তাকী উসমানী দামাত বারাকাতুহুমের কিছু কথা উল্লেখ করছি, যা ইনশাআল্লাহ মতভেদকে বিভেদ বানানো থেকে আত্মরক্ষার ক্ষেত্রে সহায়তা করবে। তিনি জামিয়াতুল ইমাম মুহাম্মাদ ইব সাউদ আলইসলামিয়ার সাবেক প্রফেসর, মুহাদ্দিসে শাম, শাইখ আব্দুল ফাত্তাহ আবু গুদ্দাহ রহ. (১৩৩৬হি.-১৪১৭হি.)-এর ইন্তেকালের পর মাসিক আলবালাগে প্রকাশিত তাঁর অনুভূতিতে লিখেছিলেন- “হযরত শাইখ আব্দুল ফাত্তাহ আবু গুদ্দাহ রহ. আল্লামা মুহাম্মাদ জাহিদ কাউসারী রহ.-এর খাস শাগরেদ ছিলেন। আল্লামা কাউসারী রহ.-এর বৈশিষ্ট্য ছিল এই যে, তিনি তাঁর অগাধ পাণ্ডিত্যের দ্বারা মাযহাবে হানাফি ও মাসলাকে আশাইরার পক্ষে মজবুত মোকাবেলা করেছেন এবং যারা ফুরূয়ি ইখতিলাফকে কেন্দ্র করে হানাফি ও আশআরি আলেমদেরকে নিন্দা ও কটূক্তির লক্ষ্যবস্তু বানিয়েছে তাদের উপযুক্ত জবাব দিয়েছেন। অন্যান্য আলেমদের মতো আল্লামা কাউসারি রহ.-এরও কোনো কোনো কথা ও উপস্থাপনার সঙ্গে দ্বিমত পোষণের অবকাশ আছে, কিন্তু এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, তিনি ওই মজলুম আহলে ইলম জামাতের পক্ষ হতে জবাব দেওয়ার ফরযে কিফায়া দায়িত্ব পালন করেছেন, যাদের উপর কোনো যৌক্তিক কারণ ছাড়াই গোমরাহ আখ্যা দেওয়া এবং কটূক্তি ও সমালোচনার তীরবৃষ্টি নিক্ষেপ করা হয়েছে।
হযরত শাইখ আব্দুল ফাত্তাহ আবু গুদ্দাহ রহ. এ বিষয়েও তাঁর উস্তায আল্লামা জাহিদ কাউসারি রহ.-এর উত্তরসূরির হক আদায় করেছেন। তবে পার্থক্য এই যে, হযরত শাইখ রহ.-এর লিখনীতে ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি পোষণকারী পূর্বেকার আলেমদের বিরুদ্ধে আক্রমণ বা বেআদবির লেশমাত্র প্রবেশ করতে পারেনি। ওই সব বিষয়ে তিনি তাঁর অলোচনা খাঁটি ইলমি ও শাস্ত্রীয় সীমানায় সীমাবদ্ধ রেখেছেন এবং সর্বদা ইলমি সীমানায় থেকে তাহকীকের হক আদায় করেছেন। একে ব্যক্তি পর্যন্ত পৌঁছুতে দেননি। আল্লামা ইবনে তাইমিয়া রহ. ও হাফেজ শামসুদ্দীন যাহাবী রহ.-এর সঙ্গে এসব বিষয়ে তাঁর ইখতিলাফ দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট, কিন্তু এই ব্যক্তিত্বদের সম্পর্কে কোনো ভারি বাক্য তাঁর যবান বা কলম থেকে বের হতে আমি কখনও দেখিনি। বরং আমি নিজে সাক্ষী যে, হাফেজ শামসুদ্দীন যাহাবী রহ.-এর ইলমি মাকাম সম্পর্কে বলতে গিয়ে একবার তিনি কেঁদে ফেলেছিলেন। তাঁর সামনে একবার আল্লামা ইবনে তাইমিয়া রহ.-এর আলোচনা কেউ এমন ভাষায় করেছিল, যা তাঁর শায়ানে শান ছিল না। এ কারণে তিনি নারাজি প্রকাশ করেছিলেন।
এই সতর্কতার পরও কোনো কোনো মহল তাঁর বিরুদ্ধে জোটবদ্ধ হয়ে শুধু পর্যালোচনাই নয়, এমন নিন্দা ও কটূক্তির লক্ষ্যবস্তু বানিয়েছিল, যা কোথাও কোথাও গালিগালাজের সীমানাতেও প্রবেশ করে। ইন্না লিল্লাহি ওয়া-ইন্না ইলাইহি রাজিউন।
সব যুগে আল্লাহর দ্বীনের খাদেমদের এ-ধরনের অবস্থার মুখোমুখি হতে হয়েছে, যা তাদের জন্য তারাক্কির উপায় হয়েছে। হায়! যদি মুসলিম উম্মাহর মাঝে ইখতিলাফকে ইখতিলাফের গণ্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার রুচি পয়দা হতো, তাহলে আমাদের কাতারে সৃষ্টি হওয়া কত শূন্যস্থান যে পূরণ হয়ে যেত!
এক্ষেত্রে আমাদের ওয়ালিদ মাজিদ (হযরত মাওলানা মুফতি মুহাম্মাদ শফী ছাহেব রহ.)-এর সুচিন্তিত কর্মপন্থা এই ছিল যে, ফুরূয়ি ইখতিলাফসমূহকে আম-মানুষের মাঝে বিস্তারের পরিবর্তে খালেস ইলমি ও তাহকীকী হালকাসমূহের মাঝেই সীমাবদ্ধ রাখা উচিত। আর যে পর্যন্ত কারও চিন্তাধারা স্পষ্ট গোমারহি বা কুফর পর্যন্ত না পৌঁছে তার সঙ্গে ফুরূয়ি ইখতিলাফকে লড়াইয়ের ক্ষেত্র না বানানো উচিত। এর পরিবর্তে ওই সব মুসলমান, যারা দ্বীনের মূলনীতিতে একমত, সম্মিলিতভাবে বর্তমান যুগের ওই সব ফেতনার মোকাবেলা করা উচিত, যা সরাসরি উসূলে দ্বীনের উপর আক্রমণরত। হযরত ওয়ালিদ মাজিদ রহ. এ বিষয়ে ‘ওয়াহ্দাতে উম্মত’ নামে একটি রিসালাও লিখেছিলেন, যার আরবী তরজমা أخلاف أم شقاق নামে সৌদি আরবেও ব্যাপক পঠিত হয়েছে। ওই রিসালার মূল আহ্বান এটিই ছিল।
হযরত ওয়ালিদ মাজিদ রহ.-এর এই রুচি ও মেযাজ আল্লাহর ফযল ও করমে উত্তরাধিকার সূত্রে আমাদের হিস্যাতেও এসেছে। এ কারণে যাদের সঙ্গে ফুরূয়ি ইখতিলাফ আছে, তাদের সঙ্গে ইলমি ইখতিলাফ ও সম্মিলিত কাজে অংশগ্রহণের মাঝে ভারসাম্য রক্ষার বিষয়টি সাধারণত চিন্তায় থাকে। সৌদি আরবের সালাফি আলেমদের সঙ্গে ইলমি ইখতিলাফ এখনও স্বস্থানে রয়েছে। এসব বিষয়ে ব্যক্তিগত মজলিসে খোলামালা আলোচনাও হয়ে থাকে। কিন্তু এই ইখতিলাফ তাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক, যৌথ কাজকর্মে পরস্পর সহযোগিতা এবং তাদের ভালো কাজের মূল্যায়নের বিষয়ে আলহামদুলিল্লাহ কোনো প্রভাব ফেলে না।
বিগত সময়ে অধমের এই কর্মপন্থার ভুল ব্যাখ্যা করে কেউ হযরত শাইখ আব্দুল ফাত্তাহ আবু গুদ্দাহ রহ.-এর কাছে এই কথা পৌঁছিয়েছিল যে, আমি আমার মাসলাকের ক্ষেত্রে শিথিলতা বা আপোষপ্রবণতার শিকার হচ্ছি। ফলে তিনি স্নেহের সাথে আমার কাছে তার এই আশংকার কথা প্রকাশ করলেন, কিন্তু আমি যখন আমার উপরোক্ত দৃষ্টিভঙ্গি ও কর্মপন্থা শাইখ রহ.-এর কাছে বিস্তারিতভাবে বললাম তখন তিনি শুধু আশ্বস্তই হলেন না, বরং এ বিষয়ে সমর্থন করে বললেন, এসব বিষয়কে না ঝগড়া-বিবাদের কারণ বানানো উচিত, না তা সম্মিলিত দ্বীনি কাজে পরস্পর সহযোগিতার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধক হওয়া উচিত। বিষয়টি তারাই বরবাদ করেছে, যারা ইলমি ইখতিলাফের সীমা অতিক্রম করে গোমরাহ-ফাসেক আখ্যা দেওয়া এবং নিন্দা-সমালোচনায় লিপ্ত হয়েছে।” -নুকূশে রফতেগাঁ, মাওলানা মুহাম্মাদ তাকী উসমানী, পৃ. ৩৯০-৩৯২।
শায়খ লাইটটা বেশী সুন্দর না৷ সাইটটা একটু সুন্দর করলে ভাল হত
আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহ শায়েখকে নেক হায়াত দান করুন।