একটি অপ্রিয় সত্য কথন হলো, আমাদের চোখে কোনো মুসলিম মুলহিদ যিন্দিক বা নাস্তিক হয়ে যাওয়াটা ততো বড় অপরাধ নয়, সে আহলে হাদিস বা জামাতি হয়ে যাওয়াটা যতো বড় অপরাধ। আমাদের দৃষ্টিতে “মুসলমান মুসলমানের ভাই”, “সকল মুসলমান এক দেহের মতো” ইত্যাদি নির্দেশ ও বিধানগুলো ব্যভিচারী মদ্যপ পাপাচারী মুসলিমদের ব্যাপারে প্রযোজ্য হলেও, যারা মাযহাব মানে না, তাদের ব্যাপারে কখনোই প্রযোজ্য নয়।
মুখে স্বীকার করি বা না করি, আমরা তাওহিদের ঐক্যে বিশ্বাসী নই; বরং আমরা মাযহাব চতুষ্টয়ের ঐক্যে বিশ্বাসী। মাযহাব না মানাকে সাধারণত কুফরির প্রথম সিঁড়ি গণ্য করা হয়ে থাকে। “আল-লা-মাযহাবিয়্যাহ কানতারাতুল লা-দিনিয়্যাহ”। তারা যদি সরল সঠিক পথের ওপর প্রতিষ্ঠিত না থাকে, তাহলে তার জন্য প্রতিষেধক কোনটা? তাদের সাথে সর্বদা বিবাদ জিইয়ে রাখা? তাদের মাঝে ও আমাদের মাঝে স্থায়ীভাবে বাধার প্রাচীর নির্মাণ করা? বয়ান বক্তৃতা ও লেখনিতে তাদের চৌদ্দগোষ্ঠী উদ্ধার করে মুহুর্মুহু “ঠিক”-এর ধ্বনি লাভ করা? নাকি তাদের সামনে হিকমাহ এবং সুন্দর উপদেশের সাথে দাওয়াহ তুলে ধরা ও তাদের ভুলগুলোকে স্পষ্টভাবে চিহ্নিত করা এবং তা থেকে সঠিক মানহাজে বেরিয়ে আসার পথ প্রদর্শন করা?
হাঁ, যাদের অন্তর বেঁকে গেছে, যারা “প্রাউড টু বি এ সালাফি” ছাড়া সকল কিছু থেকে চিরতরে দৃষ্টি ফিরিয়ে নিয়েছে, তাদের বিষয় আলাদা। তাদের কাছে রিস্কের সাথে দাওয়াহ পৌঁছানোর সময় কুরআনের এই আয়াত স্মরণে রাখতে হবে, “তুমি যাকে ভালোবাসো, নিশ্চয়ই তুমি তাকে হিদায়াত দিতে পারবে না। কিন্তু আল্লাহ যাকে ইচ্ছা করেন, তাকে হিদায়াত করেন। আর তিনি হিদায়াতপ্রাপ্তদের ব্যাপারে সম্যক অবগত।”
আমরা অনেক সময় বিধর্মীদের জন্যও সমবেদনা প্রকাশ করি। কিন্তু আহলে হাদিসদের জন্য আমাদের ঝুলিতে নেই ন্যূনতম সমবেদনা। কেনো এ আচার? কী তাদের অপরাধ? হাঁ, তাদের অপরাধ রয়েছে; কিন্তু তার পরিমাণ কি ‘কুফর’ ও ‘শিরকে’র থেকেও ভারি?
একই কথা সালাফি ভাইদের অনেকের আচরিত রীতির ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। বরং অনেক ক্ষেত্রে তাদের আচরণ তো এরচে’ও বহুগুণ বেশি মন্দ। জগতে তাদের চিরশত্রু হলো মাযহাবিরা এবং খারেজিরা। আর তাদের পরম মিত্র হলো কুফফার গোষ্ঠী ও মাদখালি এবং মুরজিয়ারা।
তাওহিদের পতাকাতলে সমবেত হয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে উম্মাহ যতোদিন না দুর্বার আন্দোলন ও শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তুলবে, ততোদিন লাঞ্ছনা ও অপদস্থতা একমুহূর্তের জন্যও তাদের পিছু ছাড়বে না। কুফফার গোষ্ঠী সর্বদাই তাদেরকে মেষপালের মতো পৃথিবীর এ-প্রান্ত থেকে সে-প্রান্ত পর্যন্ত তাড়িয়ে বেড়াবে।