আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘সুতরাং যদি তোমাদের জানা না থাকে, তাহলে জ্ঞানীদেরকে জিজ্ঞেস কোরো।’ {সুরা নাহল: ৪৩} শরিয়াহর শিক্ষা এটাই। আল্লাহ আরও বলেন, ‘যে বিষয়ে তোমার জ্ঞান নেই তুমি তার পেছনে পোড়ো না।’ {সুরা ইসরা: ৩৬} অর্থাৎ কোনো বিষয়ে কারও জ্ঞান না থাকলে সে বিষয়ে নীরব থাকা উচিত। ধারণার ভিত্তিতে কথা বলা, বিশেষত স্পর্শকাতর ইস্যুতে অভিমত প্রদান করা সত্যান্বেষী লোকের কাজ নয়। আজ এক নব্য সালাফি ভাই ‘তাফবিয’ নিয়ে অশ্লীল ভাষায় আজিব ধরনের মিথ্যাচার করেছেন। আরবি শব্দ ব্যবহার করে কাঁচা ভাষায় গালাগাল করেছেন। অথচ তার লেখা পড়লে একগাল হাসা ছাড়া কোনো উপায় থাকে না। প্রকৃত বিষয়টি তিনি মোটেও হৃদয়ঙ্গম করতে পারেননি। এর পূর্বেই মন্তব্যের ফুলঝুরি নিয়ে বসে পড়েছেন। আফসোস, কেন যে মানুষ তার বিবেককে কাজে লাগায় না! আমরা জানি, যারা মানার মানসিকতা রাখে না, বরং সর্বদা মানানোর মানসিকতা নিয়ে বিচরণ করে, এ ধরনের লেখা তো পরের কথা, প্রোজ্জ্বল সত্যও তাদের চোখ থেকে পর্দা সরাতে পারে না। পক্ষান্তরে যাদের মধ্যে সত্যানুসন্ধিৎসা আছে, তাদের কানে যখন সত্যের বাণী পৌঁছে, তখন তারা বলে, ‘আমরা শুনলাম এবং বিশ্বাস করলাম।’ আর অহংকারীরা বলে, ‘আমরা শুনলাম এবং অবাধ্যতা করলাম।’

শুধু তিনি একজনই নন, নব্য সালাফিদের গুরুদের মধ্য থেকেও যারা অধিকাংশ সালাফের মাযহাব ‘তাফবিযে’র সমালোচনায় সরব হয়েছেন, তাদের অধিকাংশের অবস্থাই এমন যে, তারা ‘তাফবিযে’র মনগড়া ব্যাখ্যা উত্থাপন করে এরপর তা খণ্ডন করেন। অথবা এগুলোর মনগড়া বা ভুল ব্যাখ্যা করে খণ্ডন করেছেন—পূর্বের এমন কারও বক্তব্য উদ্ধৃত করেই বিজয়োল্লাসে মেতে ওঠেন। আদতে তারা নিজেদের নবোদ্ভাবিত মাযহাবের বাইরে আর কিছু জানেনি বা জানার প্রয়োজনীয়তাও বোধ করেনি। সত্যের ওপর দলকে প্রাধান্য দিলে সেখান থেকেই সৃষ্টি হয় দলান্ধতা।

আপনি ‘তাফবিযে’র যে ব্যাখ্যা তুলে ধরে এর খণ্ডন করছেন, আগে আমাকে বলুন, ‘তাফবিয’-এর প্রবক্তা কোন ইমাম এ বিষয়টির এই পরিচয় উল্লেখ করেছেন। ব্যাখ্যা করবেন নিজের মতো করে আর দোষ চাপাবেন সালাফের ঘাড়ে—এ কেমন জুলুম আপনাদের? ‘তাফবিযে’র অপরাধে যাদের সমালোচনার লক্ষ্যবস্তু বানাচ্ছেন, তাদের বক্তব্য থেকে একবারও কি ‘তাফবিযে’র পরিচয় দেখে নেয়ার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছেন? সপ্তম শতাব্দীর অমুক আর তমুক কী বলেছে এর বাইরে কোনো কিছু দেখতে, জানতে এবং তার জ্ঞানার্জন করতে আপনারা সম্মত নন। আর এ কারণেই আজ আপনারা সরল পথ থেকে সরে গিয়ে ভিন্ন পথ ধরেছেন এবং দিনমান সালাফের নামে মিথ্যাচার করে বেড়াচ্ছেন।

প্রথমে আমরা ‘তাফবিযে’র হাকিকত তুলে ধরছি। তাফবিয হলো তিনটি বিষয়ের সমন্বয়ে গঠিত এক সরল পথের নাম। কী সেই তিন জিনিস?

1. শরিয়াহ যা-কিছু প্রয়োগ করেছে, তা সাব্যস্ত করা।

2. যে-সকল সিফাত আল্লাহ তাআলার জন্য তাশবিহ (সৃষ্টের সঙ্গে সাদৃশ্য)-এর সংশয় সৃষ্টি করে, সেগুলোর হাকিকত আল্লাহ তাআলার ইলমের দিকে ন্যস্ত করা।

3. এমন সব বাহ্যিক অর্থ নিরোধ করা, যা তাশবিহ (সাদৃশ্য)-এর সংশয় সৃষ্টি করে। যেমন যা-কিছু অঙ্গের সাদৃশ্যের সংশয় সৃষ্টি করে এবং যা-কিছু হাদিস (নতুন) হওয়ার সংশয় সৃষ্টি করে, আল্লাহ তাআলা থেকে তা নিরোধ করা।

‘তাফবিযে’র যে পরিচয় আমরা উল্লেখ করলাম, এর সূত্র কী?

ইমাম নববি রহ. বলেন, ‘তুমি জেনে রাখো, সিফাতের আয়াত এবং হাদিসে আলিমগণের দুটি অভিমত রয়েছে:

ক. অধিকাংশ সালাফ, বরং সকল সালাফের মাযহাব হলো, তার অর্থের ব্যাপারে কিছু বলা হবে না। বরং তারা বলেন যে, ‘আমাদের ওপর অপরিহার্য হলো, আমরা এগুলোর প্রতি ইমান রাখবো।

খ. এবং আমরা এর এমন অর্থের আকিদা রাখবো, যা মহান আল্লাহর বড়ত্ব এবং মাহাত্ম্যের সঙ্গে সুসমঞ্জস।

গ. পাশাপাশি আমরা দৃঢ়ভাবে এ বিশ্বাস রাখবো যে, আল্লাহ তাআলা এমন সত্তা, যার অনুরূপ কিছুই নেই আর তিনি দেহ, স্থানান্তর, কোনো দিকে স্থানধারণ করা এবং মাখলুকের অন্য সকল সিফাত থেকে পবিত্র। মুতাকাল্লিমদের এক জামাআতের মাযহাবও এটা। তাদের মুহাক্কিকদের এক জামাআত এই মতকেই গ্রহণ করেছে। আর এটাই সবচে নিরাপদ।’ {শারহু মুসলিম: ৩/১৯}

‘তাফবিযে’র ক্ষেত্র কী? এই ক্ষেত্র না জানার কারণে কিংবা না বোঝার কারণেই অনেক ইনসাফবর্জিত মানুষেরা রকমারি আপত্তি ফেরি করে বেড়ায়। প্রথমে জেনে রাখা দরকার যে, আল্লাহ তাআলার সিফাত তিন ধরনের। এরপর জানা দরকার যে, আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ কি সিফাতের তিনও প্রকারেই তাফবিয করেন, নাকি এক্ষেত্রে তারা এগুলোর মধ্যে কোনো পার্থক্য করেন।

আল্লাহ তাআলার সিফাতের প্রকার:

1. যা শুধুই পূর্ণতা বোঝায়। এই প্রকারের অন্তর্ভুক্ত হলো সে-সকল সিফাত যার হাকিকত গ্রহণ করলে আল্লাহ তাআলা হাদিস (নতুন) এবং দেহবিশিষ্ট হওয়া অবধারিত হয় না। যেমন: অস্তিত্ব, ইলম, শ্রবণ, দেখা ইত্যাদি। এগুলো আল্লাহ তাআলার জন্য সাব্যস্ত সেভাবে—যেভাবে তা তার জন্য উপযুক্ত। এগুলো আবার মানুষের জন্যও সাব্যস্ত। তবে পার্থক্য এখানে যে, মানুষের জন্য এই সিফাতগুলো হাদিস (নতুন) এবং দেহ-এর সঙ্গে বিশিষ্ট হয়ে সাব্যস্ত, যা মানবসত্তার অন্যতম বৈশিষ্ট্য। সুতরাং মানুষের ইলম অর্জিত হয় অঙ্গ-বিবেক ইত্যাদি দ্বারা। মানুষের শ্রবণ অস্তিত্ব লাভ করে কান, মস্তিষ্ক ইত্যাদির মাধ্যমে। পক্ষান্তরে এই সিফাতগুলো আল্লাহ তাআলার দিকে নিসবত হলে তখন শুধু মূল সিফাতটিই তার ক্ষেত্রে সাব্যস্ত হয়; পারিপার্শ্বিক বিষয়গুলো সাব্যস্ত হয় না। এই সিফাতগুলোর কারণে আল্লাহ তাআলাকে হাদিস (নতুন) বা দেহবিশিষ্ট আখ্যায়িত করা অপরিহার্য হয় না।

2. এমন সব সিফাত, যা শুধুই ত্রুটি। এ প্রকারের সিফাতকে অপরিহার্যভাবে তাবিল করা হবে, কিছুতেই ‘তাফবিয’ করা হবে না। যেমন: ‘ভুলে যাওয়া’। আল-কুরআনে এসেছে, ‘আজ আমি তাদের ভুলে যাবো, যেভাবে তারা তাদের এই দিনের সাক্ষাতের কথা ভুলে গিয়েছিলো।’ {সুরা আ‘রাফ: ৫১}

3. এমন সিফাত, যার বাহ্যিক অর্থ ত্রুটিকে অবধারিত করে। কারণ, তার বাহ্যিক অর্থ দেহের গুণ-বিশেষণের দিকে ইঙ্গিত করে। এসব সিফাতের একাধিক অর্থ থাকে। মহান সালাফগণ এগুলোর কোনো একটা অর্থ—প্রকৃত বা রূপক—নির্ধারণ না করে এর ইলম সরাসরি আল্লাহ তাআলার দিকে ন্যস্ত করেন। এর বাহ্যিক অর্থ সাব্যস্ত করলে কী সমস্যা হয়? এ লেখায় আমরা তা আলোচনা করেছি। আগ্রহী পাঠক দেখে নিতে পারেন।  কাল্পনিক ইসবাত সমাচার 

তাফবিযের পরিচয় প্রসঙ্গেও আমরা এর ওপর সংক্ষিপ্ত আলোকপাত করেছি। সিফাতের তৃতীয় প্রকারই হলো ‘তাফবিযে’র একমাত্র ক্ষেত্র। আমাদের উপরিউক্ত আলোচনার সূত্র কী? ইমাম কাজি আবু বকর ইবনুল আরাবি আরও বিস্তর পরিসরে এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছেন এবং প্রত্যেক প্রকারের বিধান আলাদা আলাদাভাবে বয়ান করেছেন। {দেখুন—আলআওয়াসিম মিনাল কাওয়াসিম: ২২৮; তারিখু ইবনি খালদুন: ১/৬০০। মূল আলোচনাটি দেখা হলে এরপর আরেকটু সহযোগিতা নিতে পারেন এখান থেকে—ফাতহুল বারি: ৮/৫৯৬।}

এক নব্য সালাফি ভাই, যিনি পূর্ব থেকেই ইমামগণের সঙ্গে নিয়মতান্ত্রিকভাবে বেয়াদবি করে আসছেন। তিনি মন্তব্য করেছেন, ‘তাফবিয’ হলো আহাম্মকদের মাযহাব। এ ছাড়াও অনেক গর্হিত কথা তিনি মুখে উচ্চারণ করেছেন। তো এবার আমরা সালাফের মাযহাবের ওপর সংক্ষিপ্ত দৃষ্টি দিয়ে এই লেখার ইতি টানবো। সচেতন পাঠক শুধু এতটুকু খেয়াল করলেই হবে যে, সালাফের মাযহাব কি ‘তাফবিয’ (তথা অর্থ এবং হাকিকত উভয়কে আল্লাহর ইলমের দিকে ন্যস্ত করা) নাকি ইসবাত (অর্থাৎ শব্দের বাহ্যিক অর্থ সাব্যস্ত করে স্রেফ রূপের জ্ঞান আল্লাহর ইলমের দিকে ন্যস্ত করা)

ইমাম সুফয়ান ইবনু উয়ায়না রহ. বলেন, ‘আল্লাহ তাআলা তার কিতাবে নিজেকে যে-সকল গুণে গুণান্বিত করেছেন, তার পঠনই হলো তার তাফসির। কারও জন্য এই অধিকার নেই যে, আরবি কিংবা ফার্সি ভাষায় তার তাফসির করবে।’ {আল-আসমা ওয়াস-সিফাত, বায়হাকি: ২৯৮}

ইমাম মুহাম্মাদ ইবনুল হাসান শাইবানি রহ. বলেন, ‘প্রাচ্য-প্রতীচ্যের সকল ফকিহ এ ব্যাপারে একমত যে, মহান রবের সিফাত-সংশ্লিষ্ট কুরআন এবং বিশ্বস্ত বর্ণনাকারীদের সূত্রে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ সা.-এর হাদিসের প্রতি কোনো ধরনের ব্যাখ্যা প্রদান, কোনো গুণে গুণান্বিতকরণ এবং কোনো সাদৃশ্য নিরূপন ব্যতিরেকেই ইমান আনয়ন করা অপরিহার্য। আজ যে এগুলোর কোনো ব্যাখ্যা করবে, সে সেই পথ থেকে বেরিয়ে যাবে, যার ওপর প্রতিষ্ঠিত ছিলেন নবি সা.। এবং সে জামাআত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। কারণ তারা (অর্থাৎ আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ) কোনো গুণে গুণান্বিত করেননি এবং কোনো ব্যাখ্যা করেননি। বরং তারা কুরআন ও সুন্নাহয় যা রয়েছে তা ফতোয়া দিয়ে নীরব থেকেছেন।’ {ই‘তিকাদু আহলিস সুন্নাহ, লালকায়ি: ৩/৪৩২; যাম্মুত তাবিল, ইবনু কুদামাহ: ১৪}

ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বাল রহ. সিফাতের আয়াত সম্পর্কে বলেন, ‘এগুলো যেভাবে এসেছে, আমরা সেভাবেই রেখে দেবো।’ এরপর আরও বিস্তারিতভাবে তিনি বলেন, ‘আমরা এর প্রতি ইমান রাখবো, এগুলোকে সত্যয়ন করবো। তবে এগুলোর কোনো রূপ এবং কোনো অর্থ নির্ধারণ করবো না। আমরা এগুলোর কোনো কিছুকে প্রত্যাখ্যান করবো না। আমরা জানি, রাসুলুল্লাহ সা. যা-কিছু নিয়ে এসেছেন, যখন তা সহিহ সনদে এসে থাকবে, তা সবই হক। আমরা রাসুলুল্লাহ সা.-এর বক্তব্যকে তাঁর দিকে ফিরিয়ে দেবো না। আল্লাহ তাআলা নিজেকে যা দ্বারা গুণান্বিত করেছেন কিংবা তাঁর রাসুল যা দ্বারা তাকে গুণান্বিত করেছেন, এরচে বেশি কিছু দ্বারা তাকে গুণান্বিত করা হবে না—কোনো সীমা-পরিসীমা ছাড়া। তার মতো আর কিছুই নেই। তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।’ {যাম্মুত তাবিল: ২১}

আচ্ছা, এবার যদি কোনো পণ্ডিত মহাশয় বলে ওঠে যে, মানলাম, সালাফগণ তাফসির (ব্যাখ্যা) করতেন না, বরং তারা তাফসির করতে নিষেধ করতেন, যেমনটা ইমাম মুহাম্মাদ, ইমাম সুফয়ান এবং ইমাম আহমাদের কথায় বিবৃত হলো। কিন্তু আলিমগণের থেকে কি সুস্পষ্টভাবে এ কথা এসেছে যে, এগুলোর বাহ্যিক অর্থ উদ্দেশ্য নেয়া যাবে না এবং আল্লাহ তাআলার ক্ষেত্রে এগুলোর বাহ্যিক অর্থ প্রয়োগ করা অসম্ভব?

আমরা বলবো, জি অবশ্যই। উদাহরণস্বরূপ শুনুন তাহলে—

ইমাম গাযালি রহ. বলেন, ‘এ ব্যাপারে লোকেরা কয়েক দলে ভাগ হয়েছে। তাদের একদল গোমরাহ হয়েছে এবং তারা এগুলোকে বাহ্যিক অর্থের ওপর প্রয়োগ করেছে। আরেক দল তাদের অনুগামী হয়েছে। তারা দ্বিধা করেছে, যদিও দৃঢ় হতে পারেনি। সফল হয়েছে সে, যে অকাট্যভাবে ‘স্থিরতা’কে নিরোধ করেছে।’ {আলমানখুল ফি-তা‘লিকাতিল উসুল: ১/১৭৩}

ইমাম ইবনুল জাওযি রহ. আবু আব্দিল্লাহ বাগদাদি, আবু ইয়া‘লা হাম্বলি এবং ইবনুয যাগুনির খণ্ডন প্রসঙ্গে বলেন, ‘তারা আসমা এবং সিফাত (আল্লাহ তাআলার নাম এবং গুণাবলি)-এর ক্ষেত্রে বাহ্যিক অর্থ নিয়েছে। তারা সে-সব নসের দিকে ঘাড় ফিরিয়ে তাকায়নি, যা বাহ্যিক অর্থ থেকে আল্লাহ তাআলার জন্য অপরিহার্য অর্থের দিকে ফেরায় এবং বাহ্যিক অর্থ হাদিস (নতুন) হওয়ার যে নিদর্শন অপরিহার্য করে তাকে বাতিল আখ্যা দেয়। তারা এতটুকু বলেই ক্ষান্তি দেয়নি যে, কর্মবাচক সিফাত, এমনকি তারা বলেছে যে, সত্তাবাচক সিফাত। এরপর যখন তারা সাব্যস্ত করেছে যে, এগুলো সিফাত, তখন তারা বলেছে যে, আমরা এগুলোকে ভাষার অন্য অর্থের ওপর বহন করবো না; যেমন: ‘ইয়াদ’ নেয়ামত এবং কুদরত অর্থে, ‘মাজি’ এবং ‘ইতয়ান’ দয়া এবং অনুগ্রহ অর্থে, ‘সাক’ ভয়াবহতা অর্থে; বরং তারা বলেছে যে, আমরা এগুলোকে এর প্রচলিত বাহ্যিক অর্থের ওপর বহন করবো। বাহ্যিক অর্থ তো মানুষের গুণ। কোনো বস্তুকে হাকিকতের ওপর তখন বহন করা হয়, যখন তা সম্ভবপর হয়। যদি কোনো বাধাপ্রদানকারী তাকে বাধাপ্রদান করে, তখন রূপক অর্থের ওপর প্রয়োগ করা হয়। এরপর আবার তারা তাশবিহ (সাদৃশ্যকরণ) থেকে কষ্টমষ্ট করে বাঁচার চেষ্টা করে এবং তাদের দিকে তাশবিহ নিসবত করাকে গর্বভরে প্রত্যাখ্যান করে। তারা বলে যে, আমরা ‘আহলুস সুন্নাহ’, অথচ তাদের বক্তব্য তাশবিহের ব্যাপারে সুস্পষ্ট।’ {দাফউ শুবাহিত তাশবিহ বি-আকুফফিত তানযিহ: ১০০}

ইমাম বদরুদ্দিন ইবনু জামাআহ বলেন, ‘যারা সালাফের বক্তব্য নকল করে এনে তাশবিহ (সাদৃশ্যকরণ) বা তাকয়িফ (আকৃতিবিশিষ্ট) হওয়ার কথা বলে, অথবা শব্দকে তার বাহ্যিক অর্থের ওপর প্রয়োগ করে, যা মাখলুকের সিফাত এবং যা থেকে মহান আল্লাহ সম্পূর্ণ উর্ধ্বে, সে তার নকলের ক্ষেত্রে একজন মিথ্যুক, সালাফের বক্তব্য এবং তাদের ইনসাফের থেকে সে সম্পূর্ণ মুক্ত।’ {ইযাহুদ দালিল ফি কাতয়ি হুজাজি আহলিত তাওয়িল: ৯৩}

ইমাম কুরতুবি রহ. বলেন, ‘এটা তো সুবিদিত যে, সালাফের মাযহাব হলো পর্যালোচনা না-করা, পাশাপাশি এটা অকাট্যভাবে দাবি করা যে, এগুলোর বাহ্যিক অর্থ অসম্ভব। তাই তারা বলেন যে, ‘এগুলোকে যেভাবে এসেছে সেভাবেই রেখে দাও।’ {তাফসিরে কুরতুবি: ৪/১২}

ইমাম শাহরাসতানি বলেন, ‘পরবর্তীদের এক দল সালাফ যা বলেছেন তার ওপর বৃদ্ধি করে বলেছে যে, অবশ্যই এগুলোকে বাহ্যিক অর্থের ওপর প্রয়োগ করতে হবে, ফলে তারা স্রেফ তাশবিহ (সাদৃশ্যকরণ)-এর মধ্যেই পতিত হয়েছে। সালাফ যে আকিদা পোষণ করতেন এটা তার সম্পূর্ণ খেলাফ।’ {আলমিলাল ওয়ান নিহাল: ১/৯৩}

কলেবর বেশি বড় হয়ে যাচ্ছে, তাই আপাতত এতটুকুতেই সীমাবদ্ধ থাকছি। আরে, সত্য উচ্চারণে ভয় কিসের? সত্যের বিজয় অবধারিত এবং মিথ্যার পরাজয় অবশ্যম্ভাবী। জাতির এখন আসল সালাফি এবং নকল সালাফি চেনার সময় হয়েছে। নব্য সালাফিরা যে উম্মাহর জন্য কেমন বিষফোঁড়া—তা এক-দুবাক্যে বলে কখনোই প্রকাশ করা যাবে না। সালাফের কথা বলে যারা উম্মাহকে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহর আকিদা থেকে এবং মহান সালাফে সালেহিনের পথ থেকে সরিয়ে ভ্রান্ত পথে নিয়ে যাওয়ার জন্য আবির্ভূত হয়েছে। পূর্ববর্তী আলিমগণের বিচ্ছিন্ন বক্তব্যকে গ্রহণ করে বা তাদের বক্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা করে এবং স্বতঃসিদ্ধ বিষয়কে গোপন করে যারা তাদের মিশন নিয়ে নেমেছে—সেই মানুষগুলোর হিদায়াতের প্রত্যাশায়…

Share This