এক.

আলোর শত্রু কিছু পাপিষ্ঠকে এ পৃথিবী সর্বদাই বুকে আগলে রেখেছে, যারা নিজেদের দুর্গন্ধময় মুখের ফুৎকারে নিভিয়ে দিতে চায় সদা সত্যের প্রদীপ; তমসায় ছেয়ে ফেলতে চায় গোটা ধরাধাম। মুসলিম জাতিকে নিশ্চিহ্ন করার মানসে সম্ভাব্য সব পদক্ষেপ গ্রহণে তারা কোনো ত্রুটি করে না। মুসলমানদের বুকের তপ্ত খুনে নয়া সাম্রাজ্যের লাল মানচিত্র আঁকার স্বপ্নে তারা সদা বিভোর। এ শ্রেণীর বন্য পিশাচেরা হামলে পড়ে বারবার মুসলিম জনগোষ্ঠীর ওপরে। ছিঁড়েফেঁড়ে খেতে চায় মুসলিমদেরকে, শিশু-নারী-যুবা-বৃদ্ধ সবাইকে। মহামহিম আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহে রক্ষা পায় মুসলিম জনপদ। অনেক ক্ষেত্রেই ব্যর্থ হয় তাদের চক্রান্ত। অকালে ভাঙ্গে দিবাস্বপ্ন। নিমিষেই গুড়িয়ে যায় স্বপ্নের প্রাসাদ। দুর্বল মুসলিম কিশোর-তরুণ-যুবকদের হাতে লাঞ্চিত হয় তারা চরমভাবে। কেউ তো পটল তুলে সোজা পাড়ি জমায় জাহান্নামে, কেউবা বন্দি হয়ে আসে মুসলিমদের হাতে।

 

অভাবতাড়িত দুর্বল মুসলিম জনপদবাসী কী আচরণ করবে এসব বন্দিদের সাথে? এতোগুলো মানুষ! সবার রক্তে সিঞ্চিত করবে পবিত্র মুসলিমভূমি? না, মানুষদের প্রতিও এতো কঠোর হতে পারে না ইসলাম। তবে? এতোগুলো মানুষকে ‘লাল গুদামে’ ভরে রাখবে? তাও তো হওয়ার নয়। এতে এই দুর্বল জনপদের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হবে চরমভাবে। জেলখানা নির্মাণ, বন্দিদের খাবার-পোশাকের ব্যবস্থা, প্রহরী মোতায়েনসহ কতো ঝক্কি, খরচের সুদীর্ঘ ফিরিস্তি! তাছাড়া স্বাধীন মানুষকে, সে যতো মন্দই হোক, চিড়িয়াখানার প্রাণীদের মতো জেলে পুরে রাখা, খোদার দেয়া খোলা ভূমি-আকাশ, আলো-বাতাস, পরিবেশ-প্রকৃতির নেয়ামত থেকে চিরবঞ্চিত করে এক মানবেতর জীবনযাপনের দিকে ঠেঁলে দেয়া তো কোনো সুস্থ বিবেক-সমর্থিত হতে পারে না। যদিও মুসলিম বন্দিদের সাথে ওদের আচরণ বরাবরই প্রাণী-পশুর সাথে কৃত আচরণ থেকেও নিম্নস্তরের, আবু গারিব আর গুয়ান্তানামোর ধারা তো আর এ যুগের সৃষ্টি নয়, চলে আসছে এই হিংস্রতা প্রাচীন যুগ থেকে, তবুও দয়া-করুণার মূর্ত প্রতীক মুসলমানেরা এতো নিষ্ঠুর-পাষাণ কখনো হয়নি, হতে পারে না। তবে কী আচরণ করবে তারা এসব যুদ্ধবন্দিদের সাথে? প্রশিক্ষিত এতোগুলো সৈন্যকে তো আর মুক্তি দিয়ে মাতৃভূমিতে ফেরত পাঠানো যায় না। নইলে তা হবে নির্ঘাত ভুল সিদ্ধান্ত, যা নিজেদের অস্তিত্বের জন্য হয়ে দাঁড়াবে বিরাট হুমকি। কী করবে তবে? উপায় তো একটিই। এসব প্রাণীকে নিজেদের ক্রীতদাস বানিয়ে মুসলিম সমাজে রাখা, ইসলামের মহান শিক্ষার দীপ্তিতে ধীরে ধীরে তাদের হৃদয়াঞ্চলকে আলোকিত করার প্রয়াস পাওয়া, সত্য-গ্রহণের স্বভাবজাত যোগ্যতাকে কাজে লাগিয়ে সরল পথে পরিচালিত করার প্রচেষ্টা গ্রহণ করা। হ্যাঁ, তবেই তো মুক্তি, শান্তি। এতে নিজেদের জন্যও নেই কোনো ঝুঁকি কিবা ঝক্কি, উপরন্তু আছে এই বিশাল মানবগোষ্ঠীর সাফল্যলাভের প্রত্যাশা। মুসলমানদের অপরের জন্য হেদায়াতচিন্তা তো এটাকেই দৃঢ়ভাবে সমর্থন করে। কর্মপন্থা হিসেবে দাসব্যবস্থা তাই ইসলামি শরিয়তে গৃহীত হয়েছে। স্মতর্ব্য যে, যুদ্ধবন্দিদের জন্য একমাত্র শাস্তি এটা নয়। মুসলিম শাসক চাইলে তাদেরকে অন্য শাস্তিও দিতে পারেন, পারেন মুক্ত করে দিতে, কিবা পারেন তাদের দ্বারা বন্দি বনিময় করতে। তদুপরি ইসলাম দাসপ্রথার প্রবর্তক নয়। চলে আসছে দাসপ্রথা সেই আদিযুগ থেকেই। ইসলাম তাতে এনেছে শোভন। দিয়েছে দীপ্তি। তাদেরকে দিয়েছে পূর্ণ মানবাধিকার। দিয়েছে তাদেরকে অভূতপূর্ব মর্যাদা। ইসলাম দাসশ্রেণীর ভরণ-পোষণ, দেখভালের পূর্ণ দায়ভার দিয়েছে গৃহপতির কাঁধে। বিনিময়ে দাসশ্রেণীকে নির্দেশে দিয়েছে, কায়িক পরিশ্রম করে ব্যয়ভার পুষিয়ে দিতে। এতে দুপক্ষেরই পূর্ণ লাভ।

 

দুই.

প্রতিটি মুসলমান, যে মুখে ও হৃদয়ে ইসলামের কালিমা পড়েছে গ্রহণ করে নিয়েছে সে বিশ্বপ্রভুর দাসত্ব। আর যারা মহান আল্লাহকে অস্বীকার করেছে, তার অবতীর্ণ সত্যধর্মের গতিরোধের জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা ব্যয় করেছে, তারা বিমুখ হয়েছে সেই মহান স্রষ্টার দাসত্ব থেকে। তাই তাদেরকে শাস্তিস্বরূপ তিনি কিছুকালের জন্য তার অনুগত দাসদের অধীন করে দিয়েছেন। স্রষ্টার দাসত্বে যেহেতু তাদের চিত্তপ্রশান্তি নেই, সৃষ্টির দাসত্ব স্বীকার করে থাক তাই কিছুদিন। হেদায়াতের দীপ্ত পথ থেকে তবুও বিমুখ থাকলে শেষ পরিণামে জাহান্নাম তো আছেই।

 

এক্ষেত্রে সবিশেষ লক্ষণীয়, দাসত্বের উৎস পবিত্র ইসলামে একটিই। যারা যুদ্ধবন্দি এবং তাদের পরবর্তী প্রজন্ম, যাবত না তারা আযাদ হয়, কিবা তাদের ঔরসজাত সন্তান কোনো স্বাধীন নারীর গর্ভজাত না হয়। এছাড়া অন্য কাউকে দাসত্বের শৃঙ্খলে আবদ্ধ করেনি ইসলাম। হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, রাসুল সা. বলেছেন, “তিন ব্যক্তির বিরুদ্ধে কেয়ামতের দিন আমি নিজে বাদী হবো। ১. ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে, যে আমার নামে অঙ্গীকার করে ভঙ্গ করে। ২. যে কোনো স্বাধীন ব্যক্তিকে বিক্রি করে বিক্রয়লব্ধ অর্থ ভক্ষণ করে। ৩. যে শ্রমিকের থেকে ষোলআনা শ্রম আদায় করে তাকে বঞ্চিত করে তার প্রাপ্য পারিশ্রমিক থেকে।“ -বুখারি।

 

তিন.

শান্তির ধর্ম ইসলাম এ দাসশ্রেণীর জন্যও এমন সুন্দর ও চমৎকার বিধান ও নির্দেশনা আরোপ করেছে, যা থেকে অধুনা বঞ্চিত সভ্য দেশেরও বহু নাগরিক। কী সেই নির্দেশনা? কী সেই মহান বিধিমালা? আমরা সংক্ষিপ্ত পরিসরে তার ওপরে সামান্য আলোকপাত করার প্রয়াস পাবো।

 

পবিত্র ইসলাম এই দাসশ্রেণীকে মনিবদের ভাই বলে অভিহিত করেছে। নির্দেশ দিয়েছে তাদেরকে পরিবারভুক্ত সদস্য জ্ঞান করে তাদের সাথে ভালো ব্যবহার ও উত্তম আচরণের। হাদিসের বাণী, “নিঃসন্দেহে তোমাদের ভাইয়েরাই তোমাদের সেবক। তাই যার অধীনে রয়েছে তার ভাই। সে যেনো তাকে আহার করায় তা, যা আহার করে নিজে; তাকে যেনো পরিধান করায় তা, যা পরিধান করে নিজে।“ -বুখারি, মুসলিম।

 

কোরআনে আল্লাহ নির্দেশ দিচ্ছেন, ইবাদত করো আল্লাহর। শরিক করো না তার সাথে কাউকে। সদাচরণ করো বাবা-মা’র সাথে, নিকটাত্মীয়দের সাথে, ইয়াতিম মিসকিন আত্মীয়-অনাত্মীয় প্রতিবেশী, সাথি-সঙ্গী, মুসাফির এবং তোমাদের অধিকারভুক্ত দাস-দাসীর সাথে। -সুরা নিসা-৩৬।

 

ওফাতের পূর্বমুহূর্তেও প্রিয়নবির মুখে উচ্চারিত হচ্ছিলো, “নামাজ নামাজ আর তোমাদের অধিকারভুক্ত দাসদাসী!” “নামাজ নামাজ আর তোমাদের অধিকারভুক্ত দাসদাসী!”

 

দাসদাসীর শিক্ষাদান এবং তাদের সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপনে আগ্রহ-প্রদান প্রসঙ্গে প্রিয়নবি বলেন, “যে ব্যক্তির অধীনে কোনো দাসী থাকে আর সে তাকে উত্তম শিক্ষাদান করে,  এরপর তাকে আযাদ করে বিয়ে করে, সে দুটি পূণ্যের অধিকারী হবে।” বুখারি।

 

প্রিয়নবি দাসদাসীদেরকে অপমানজনক শব্দে সম্বোধন করতে নিষেধ করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, “তোমাদের কেউ যেনো এভাবে না বলে, ‘আমার গোলাম’ ‘আমার বাদী’, আর অধীন ব্যক্তি যেনো না বলে, ‘আমার প্রভু’। বরং মালিক যেনো বলে, আমার তরুণ, আমার তরুণী। আর অধীনেরা বলে, আমার সায়্যিদ, আমার সায়্যিদা। -সুনানে আবু দাউদ

 

ইসলাম মনিব ও দাসত্বের বিভাজিন রেখাকে অবলেপন করে দিয়েছে চিরতরে। দাসদেরকেও বসিয়েছে শাসকের ময়ুরসিংহাসনে। মদিনাতুর রাসুলের জামে মসজিদের মোয়াজ্জিন নিযুক্ত হয়েছিলো এক সাধারণ কৃষ্ণাঙ্গ ক্রীতদাস। দাসকে দাস বলে সম্বোধন করা তো দূরের কথা, ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা আমিরুল মুমিনীন হযরত ওমর রা. মসজিদে নববির মুয়াজ্জিন ক্রীতদাস বেলাল রা.কে দেখলেই দাঁড়িয়ে যেতেন। সশ্রদ্ধ স্বাগত জানাতেন এই বলে, আসুন সরদার, আসুন আমাদের নেতা। -বুখারি।

 

মহানবি সা. আপন প্রিয় চাচাত বোন যায়নাব বিনতে জাহাশ রা.কে বিয়ে দিয়েছিলেন আযাদকৃত গোলাম যায়দ বিন হারিছা রা.-র সাথে। প্রিয়নবি সা. মনিবদেরকে বারণ করেছেন, তারা যেনো দাসদের ওপরে সাধ্যাতীত দায় চাপিয়ে না দেয়। একান্ত যদি কখনো এরূপ হয়, তবে রাসুলের নির্দেশ, “তোমরা নিজেরা তাদেরকে সহযোগিতা করো।“ -বুখারি, মুসলিম।

 

দাসদাসীরা কাজ করতে গিয়ে ভুল-ত্রুটি করে ফেলবে বারবার। রাসুল সা. নির্দেশ দিয়েছেন, তাদের ভ্রান্তি-বিচ্যুতি হলে তোমরা তাদেরকে ক্ষমা করো। কতবার ক্ষমা করবো হে রাসুল? বললেন, সত্তরবার।

 

ইসলাম অধিকার দেয়নি দাসদেরকে অন্যায়ভাবে প্রহার করার। হাদিসের বাণী, যে ব্যক্তি তার দাসিকে চড় মারে কিবা প্রহার করে, তার কাফফারা হলো, সে যেনো তাকে আযাদ করে দেয়। -মুসলিম। বিখ্যাত সাহাবি আবু মাসউদ আনসারি রা. একদিন ক্রদ্ধ হয়ে নিজ দাসকে প্রহার করেন। হঠাৎ পেছন থেকে শুনতে পান গুরুগম্ভীর এক ধ্বনি। “জেনে রেখো আবু মাসউদ, তুমি তার ওপরে যতোটুকু ক্ষমতা রাখো, আল্লাহ তোমার ওপরে এরচে বেশি ক্ষমতা রাখেন।“ আবু মাসউদ রা. বলেন, পেছনে ফিরে দেখি, আল্লাহর রাসুল সা.! আমি বলি, হে আল্লাহর রাসুল, আল্লাহর ওয়াস্তে সে আযাদ। রাসুল সা. বলেন, যদি তুমি এটা না করতে, তবে জাহান্নামের বিভীষিকাময় আগুন তোমাকে ভস্মীভূত করে দিতো। -মুসলিম।

 

দাসরা কি চিরদিন দাসই থেকে যাবে? না, ইসলাম বিভিন্নভাবে তাদের দাসত্ব দূরীকরণের ব্যবস্থা রেখেছে। যিহার-কতলে খাতা-কসমের কাফফারা হিসেবে নির্দেশ দিয়েছে দাস আযাদ করার। এছাড়াও অসংখ্য হাদিসে দাসমুক্তির ফযিলত বর্ণনা করা হয়েছে, যাতে মুসলিম সম্প্রদায় সন্তুষ্টচিত্তে অধিকারভুক্ত দাসদেরকে আযাদ করে দেয়। হাদিসের বাণী, “যে ব্যক্তি কোনো মুসলিম দাসকে মুক্ত করে, মহান আল্লাহ তার প্রতিটি অঙ্গকে দাসের প্রতিটি অঙ্গের বিনিময়ে জাহান্নাম থেকে মুক্ত করে দেন। -বুখারি, মুসলিম।

 

যার সামর্থ্য নেই দাসমুক্তির, সে কীভাবে অধিষ্ঠিত হবে মর্যাদার সুউচ্চ আসনে? রাসুল বলেন, সর্বোত্তম সদকা হলো, দাসমুক্তকরণে সুপারিশ করা। -শু’আবুল ঈমান।

দাস যদি মনিবের সাথে তার মুক্তির জন্য চুক্তিতে আবদ্ধ হতে চায়, কোরআন বলছে, তোমরা তাতে কোনপ্রকার বাধ সাধবে না। কল্যাণ মনে করলে অবশ্যই চুক্তিতে সম্মত হবে।

মনিবের ঔরসজাত সন্তান প্রসবকারিণীর বিকিকিনিকে অবৈধ সাব্যস্ত করেছে ইসলাম।

 

চার.

ইসলাম মহাপবিত্র ঐশী ধর্ম, শান্তির ধর্ম। যারা প্রোপাগাণ্ডা ছড়িয়ে ইসলামের গায়ে কালিমা লেপন করতে চায়, আমরা তাদেরকে উদাত্ত আহ্বান করছি, তারা পারলে দেখাক, সমাজের সর্বনিম্নশ্রেণী দাসদের ব্যাপারে ইসলামের যেমন নির্দেশনা, পৃথিবীর আর কোনো ধর্মে কিবা তন্ত্রে রয়েছে এমন মহান বিধান ও নির্দেশনা। আজও দুচোখ মেললে দেখা যায়, শ্বেতাঙ্গদের হাতে কী পরিমাণ নিপীড়িত ও অধিকারবঞ্চিত কৃষ্ণাঙ্গ স্বাধীন ব্যক্তিরা। যেখানে ইসলাম দাসশ্রেণীকে অধিষ্ঠিত করেছে শাসকেরও আসনে। রাসুলের নির্দেশ, “তোমরা শাসকের কথা মানবে, তার পূর্ণ আনুগিত্য করবে, যদিও সে হয় কৃষ্ণবর্ণের কোনো ক্রীতদাস। দিগ্বিজয়ী সুলতান মাহমুদ গযনবী, শামসুদ্দীন ইলতুৎমিশ, গিয়াসুদ্দীন বলবনসহ ইসলামের ইতিহাসে কতো অসংখ্য দাসরা ছিলো নেতৃত্বের আসনে। যায়দ বিন হারিছা এবং তার পুত্র উসামা বিন যায়দ রা.কে যুদ্ধের সেনাপতি বানিয়ে প্রেরণ করেছেন মহান রাসুল। তাদেরকে নেতৃত্ব দিয়েছেন এমন সৈন্যদলের, যেখানে ছিলো উম্মতের সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তিবর্গ, প্রথম সারির সাহাবিগণ। ছিলেন ফারুকে আজম, আলী মুরতাজার মতো মহান বীরগণ। দাস হিসেবে কি আল্লাহর কাছে তাদের মর্যাদা ক্ষীণ? না, কোরআন মর্যাদার মাপকাঠি ঘোষণা করেছে তাকওয়া। আল্লাহ বলেন, “তোমাদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা সম্মানী সে, যে সবচে খোদাভীরু।“-সুরা হুজুরাত-১৩। প্রভুত্ব কিবা দাসত্বের আলাদা কোনো প্রভাব নেই আকাশে ব্যক্তির মর্যাদা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে।

ইসলামের বিধানাবলীর সৌন্দর্যে হৃদয়তন্ত্রীতে বিস্ময়ের ঢেউ ছড়িয়ে যায়, ভালোলাগার স্নিগ্ধ আবেশ ছুঁয়ে যায় মন। নামাজের কাতারে পাশাপাশি কাঁধে কাঁধ লাগিয়ে দাঁড়ায় মনিব ও দাস। নেই কোনো বিভেদ। নেই বৈষম্য। এজন্যই তো কবি বলেন –

“আইনে জঙ্গ মেঁ জব আগায়া ওয়াকতে নামায,
একহি সফ মেঁ খাড়ে হো গায়ে মাহমুদ ও আয়ায।”

মহান তুমি হে ইসলাম। উদার তোমার শাশ্বত বিধিমাল। তবুও যারা তোমার গায়ে কালিমা লেপন করতে চায় ওদের জন্য দুর্ভোগ, শত দুর্ভোগ। ধ্বংস হোক সেসব অথর্ব অর্বাচীনের দল।

পুনশ্চ:

বর্তমান পৃথিবীতে দাসব্যবস্থার প্রথা নেই। আমরা দেশ ও জাতিকে ফের এ ব্যবস্থার প্রত্যাবর্তনের দিকে আহ্বান করছি না। তবে আলোচিত নিবন্ধে আমরা চেষ্টা করেছি এক প্রজ্ঞাদীপ্ত ব্যবস্থা, পৃথিবীতে যার প্রবর্তক ইসলাম নয়; বরং যা চলে আসছে তারও সহস্র বছর আগ থেকে, ইসলাম বরং তাকে পরিয়েছে সভ্যতা ও শুভ্রতার বসন, তার ওপরে বিরুদ্ধাবাদীদের আরোপিত অভিযোগের খণ্ডন করতে। প্রয়াস পেয়েছি, দাসব্যবস্থার স্বরূপ ও অবস্থানকে সুস্পষ্ট করতে। প্রাচ্যবিদদের মুখরোচক বুলিতে কোনো কোনো অবুঝ সুহৃদ না বোঝেই দাসপ্রথার কারণে ইসলামের দিকে নির্দ্বিধায় তীর্যক বাণ ছুড়ে বসেন। ইসলামকে কলঙ্কিত করতে মূর্খতাপ্রসূত নানাবিধ অভিযোগ উত্থাপন করেন। সেসব সুহৃদদের সুবোধ উদয়ের প্রত্যাশায় আমাদের এই নিবন্ধ…

Share This