ইসলামি জীবনব্যবস্থা। লেখক মাওলানা তারেকুজ্জামান। লেখক কুরআন, হাদিস, তাফসির, ফিকহ, উসুল, ফালসাফা, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞান, সমরনীতিসহ বিভিন্ন বিষয়ের শতাধিক প্রাচীন ও আধুনিক গ্রন্থকে সামনে রেখে বক্ষ্যমাণ বইটি সংকলন করেছেন। লেখক যেসব গ্রন্থ থেকে সহযোগিতা নিয়েছেন, ভূমিকায় তার কয়েকটির নাম উল্লেখ করেছেন। বইটির সর্বমোট পৃষ্ঠাসংখ্যা ৭৫৯। রুহামা পাবলিকেশন প্রকাশিত এ বইটির মুদ্রিত মূল্য ৮০০৳। আমার সৌভাগ্য যে, প্রকাশনীর ভাইয়েরা বইটি প্রকাশের পর আমার উদ্দেশে একটি সৌজন্য কপি পাঠিয়েছেন। সেটাকে সামনে রেখেই আজ এই রিভিউ লিখতে বসেছি।

লেখক এ বইয়ে প্রত্যেক মাসআলার পক্ষে যথাসম্ভব কুরআন ও সুন্নাহর দলিল দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। হাদিস যা কিছু উল্লেখ করেছেন, সেগুলোর মানও বর্ণনা করে দিয়েছেন। লেখকের দাবি অনুসারে বইয়ে কিছু জয়িফ হাদিস থাকলেও এর অধিকাংশ হাদিসই সহিহ বা হাসান পর্যায়ের। জাল বা অত্যাধিক দুর্বল হাদিস দ্বারা দলিল প্রমাণ করা থেকে তিনি বিরত থেকেছেন। বইটিকে সর্বমোট ছয়টি অধ্যায়ে বিন্যস্ত করা হয়েছে। প্রথম অধ্যায় : ইসলামি আকায়িদ। দ্বিতীয় অধ্যায় : ইসলামি শরিয়াহব্যবস্থা। তৃতীয় অধ্যায় : ইসলামি শাসনব্যবস্থা। চতুর্থ অধ্যায় : ইসলামি সমাজব্যবস্থা। পঞ্চম অধ্যায় : অর্থায়নব্যবস্থা। ষষ্ঠ অধ্যায় : বিভিন্ন মতবাদ ও তার আগ্রাসন। আমরা আমাদের রিভিউতে বইয়ের পরিচিতি ও ইতিবাচক দিকগুলো তুলে ধরার পাশাপাশি অসতর্ক ভুল বা বিচ্যুতিগুলোর দিকেও আলোকপাত করব; যাতে করে লেখক ও প্রকাশক এর আলোকে নিখুঁতভাবে বইয়ের পরবর্তী সংস্করণ প্রকাশ করতে পারেন।   

বইয়ে প্রমিত বানানরীতি অনুসরণ করা হয়েছে। তবে কিছু কিছু জায়গায় এর ব্যত্যয় চোখে পড়েছে। সম্ভবত এটা প্রুফ রিডারের বিচ্যুতি। আশা করি, কাজ করতে থাকলে ধীরে ধীরে বিষয়গুলো তার সামনে আরও স্পষ্ট হয়ে উঠবে। এ ছাড়াও বইয়ে কিছু মুদ্রণপ্রমাদ রয়ে গেছে। প্রকাশক চাইলে পরবর্তী সংস্করণে এগুলো ঠিক করে নিতে পারবেন। তা ছাড়াও কিছু কিছু জায়গায় সাধু ভাষার প্রয়োগ লক্ষ করা গেছে; যা দূষণীয়। অল্প কিছু জায়গায় অসতর্কতাবশত শব্দকে ভুলভাবে লেখা হয়েছে।

বইটি শুরু হয়েছে ‘লেখকের কথা’র দ্বারা। ছয় পৃষ্ঠাব্যাপী এই ভূমিকায় বইয়ের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি খুব সুন্দরভাবে উঠে এসেছে। যারাই এই বইটি পাঠ করবেন, তারা প্রথমে এই ভূমিকাটি পড়ে নিলে বইয়ের ব্যাপারে স্বচ্ছ ধারণা সৃষ্টি হবে এবং এ থেকে আরও বেশি উপকৃত হতে পারবেন ইনশাআল্লাহ। ভূমিকা সম্পর্কে এরচে বেশি কিছু বলার নেই। তবে আমি দুটো বিষয়ের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাচ্ছি।

  • ২৪ ও ২৫ নম্বর পৃষ্ঠায় এ বই রচনার ক্ষেত্রে যেসব বই থেকে সহযোগিতা নেওয়া হয়েছে, সেগুলোর নাম উল্লেখের ক্ষেত্রে কিছু ভুল ও অসতর্কতার প্রকাশ ঘটেছে। যেমন :

(ক) ‘আল-মালু ওয়াল হুকুম ফিল ইসলাম’। হুকুম শব্দটা ‘হুকমু’ হবে এবং ‘আল’ শব্দের পর যেহেতু হাইফেন ব্যবহার করা হয়েছে, তাই ‘ওয়াল’ শব্দের পরও তা ব্যবহার করা সংগত ছিল।

(খ) ‘আল-মাওকিফ মিনাদ দ্বীন লি-লেনিন’। এই ‘লেনিন’ শব্দটা অন্যভাবে লেখা সমীচীন ছিল। কারণ, আরবিতে এ-কারের ব্যবহার নেই।

(গ) ‘আসালিবুল গাজওয়ায়িল ফিকরি’। মধ্যবর্তী শব্দটা ‘গাজওয়ায়িল’ না হয়ে ‘গাজউইল’ বা ‘গাজওয়িল’ হওয়া সমীচীন ছিল। ‘গাজওয়ায়িল’ লিখলে মনে হয়, ‘ওয়াও’-এর পর হয়তো আরেকটি ‘হামজা’ রয়েছে। কিন্তু আদতে তা নেই। বরং ‘গাইন’, ‘যা’ এবং ‘ওয়াও’-এর সমন্বয়ে শব্দটি গঠিত হয়েছে।

  • ২৫ পৃষ্ঠায় এক জায়গায় রয়েছে ‘এতে অধিকাংশই সহিহ ও হাসান হাদিস আনা হয়েছে’। সহিহ শব্দটি দুই অর্থে ব্যবহৃত হয়। ব্যাপক অর্থের বিবেচনায় জয়িফ ও জাল হাদিসের মোকাবিলায় হাসান ও সহিহ উভয়টিকেই বোঝায়। কারণ, এই উভয় প্রকার হাদিসই বিশুদ্ধ। আর সীমিত অর্থের বিবেচনায় সহিহ ও হাসান আলাদা। লেখকের উপরিউক্ত বাক্যের দ্বারা বোঝা যায়, এখানে তিনি সহিহ’কে সীমিত অর্থে ব্যবহার করেছেন এবং এ জন্য আলাদাভাবে ‘হাসান’ শব্দটি উল্লেখ করেছেন। কিন্তু এর তিন লাইন পরে তিনি লিখেছেন, ‘সহিহ বুখারি ও মুসলিমের সব হাদিসই সহিহ হওয়ায়…’। প্রথম বাক্যের পাঠক এই বাক্যটি পড়ে এই সিদ্ধান্ত উপনীত হবে, বুখারি ও মুসলিমের সব হাদিস সহিহ; এমনকি তাতে হাসান হাদিসও নেই। কিন্তু বাস্তবতা এমন নয়। বরং তাতে অনেক হাসান হাদিস রয়েছে। সুতরাং লেখক উভয় বাক্যে ‘সহিহ’ শব্দকে অভিন্ন অর্থে ব্যবহার করলে সাধারণ পাঠকের বুঝের জন্য সুবিধাজনক হতো। কারণ, বুখারি ও মুসলিমের সব হাদিসকে সহিহ বলা হয় ব্যাপক অর্থ অনুসারে; সীমিত অর্থ অনুসারে নয়।

বইয়ের একেবারে শুরুতে ইসলামের পরিচিতি ও ইসলামের বুনিয়াদ সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। এরপর প্রথম অধ্যায়ে ‘ইসলামি আকায়িদ’র শিরোনামের অধীনে (ক) ইসলামের মৌলিক আকিদাসমূহ, (খ) আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহর সংক্ষিপ্ত আকিদাসমূহ, (গ) তাওহিদ পরিচিতি, (ঘ) তাওহিদ বা ইমান ভঙ্গকারী বিষয়সমূহ এবং (ঙ) আল-ওয়ালা ওয়াল-বারা সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। এই শেষোক্ত আলোচনার অধীনে আল-ওয়াল ওয়াল-বারা থেকে বিচ্যুতির ১৩টি সুরত উল্লেখ করা হয়েছে; যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আর ইমান ভঙ্গকারী বিষয়সমূহের অধীনে প্রসিদ্ধ দশটি ইমান ভঙ্গকারী বিষয়ের আলোচনাই স্থান পেয়েছে।

আমরা এখানে প্রথম অধ্যায়ের কয়েকটা বিষয়ের দিকেও দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। লেখক ও প্রকাশক চাইলে এগুলো সংস্কার করতে পারেন কিংবা সচেতন পাঠক চাইলে এ বিষয়গুলো নিয়ে ভেবে ও রিসার্চ করে এই কয়েকটি বিষয় গ্রহণ করার বা বর্জন করার সিদ্ধান্তও নিতে পারেন।

  1. ‘আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহর সংক্ষিপ্ত আকিদাসমূহ’। শিরোনামটি এভাবে না হয়ে ‘আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহর আকিদার সংক্ষিপ্ত বিবরণ’ হওয়াটা যুৎসই ছিল। কারণ, আকিদা তো আর সংক্ষিপ্ত নয়; বরং এখানে তার বিবরণ সংক্ষিপ্ত।
  2. ৫৩ নম্বর পৃষ্ঠায় ‘আল্লাহ তাআলা সম্পর্কিত আকিদা’ শিরোনামে একটি আকিদা বর্ণনা করা হয়েছে—‘তিনি আরশে আছেন’। এই বাক্যটি অনেক সালাফি ভাইয়ের মুখে প্রচলিত হলেও নিরেট ভুল ছাড়া কিছু নয়। এতে একে তো আল্লাহর জন্য স্থান সাব্যস্ত করা হচ্ছে, তথাপি এর দ্বারা আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহর আকিদা ‘আল্লাহর গুণাবলির মধ্যে কোনো স্থানান্তর বা পরিবর্তন সংঘটিত হয় না’ লঙ্ঘিত হচ্ছে। যেমন, শাহ ওয়ালিউল্লাহ দেহলবি রহ. লেখেন, ‘আল্লাহ তাআলার জন্য সংগত নয় যে, তাঁর সত্তা কিংবা গুণাবলির ক্ষেত্রে কোনো নড়াচড়া, স্থানান্তর কিংবা পরিবর্তন ঘটবে।’ [আল-আকিদাতুল হাসানাহ : ৪১]
    আরশ হচ্ছে সৃষ্ট। একদা তা ছিল না। কিন্তু আল্লাহ তাআলা চিরন্তন ও অবিনশ্বর। তিনি সর্বদা ছিলেন, আছেন এবং থাকবেন। এমনকি একসময় তাঁর সত্তা ছাড়া অন্য সবকিছু ধ্বংস হবে, সে সময়ও তিনি থাকবেন আপন অবস্থায় স্থির। এ ছাড়াও আল্লাহ যেমন চিরন্তন, তাঁর সকল গুণও চিরন্তন। তাঁর সত্তা এবং গুণাবলির মধ্যে কোনো অনিত্যত্ব নেই। সুতরাং আল্লাহ আরশ সৃষ্টির আগে যেমন ছিলেন, আরশ সৃষ্টির পরও তাঁর অবস্থায় পরিবর্তন সংঘটিত হওয়ার নয়। নিশ্চয়ই আল্লাহ আরশে আসন গ্রহণ করেননি বা সমাসীন ও উপবিষ্ট হননি। বইয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ভাইয়েরা যদিও আগে থেকেই এই আকিদা লালন করেন; কিন্তু এটা সহিহ আকিদার শিরোনামে গলদ আকিদা ছাড়া কিছু নয়। নিজেরা এই আকিদা লালন করলেও অন্তত এই বইয়ে সকল পাঠকের কথা বিবেচনা করে এ বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়া উচিত ছিল।
  3. একই পৃষ্ঠায় আরও রয়েছে—‘আল্লাহর ব্যাপারে অতটুকুই বলা যাবে, যতটুকু কুরআন ও সুন্নাহয় স্পষ্টভাবে এসেছে’। এই বাক্যটা অসম্পূর্ণ রয়ে গেছে ও অস্পষ্ট হয়ে গেছে। আল্লাহর ব্যাপারে শুধু তা-ই প্রয়োগ করা যাবে, যা কুরআন ও সুন্নাহয় স্পষ্টভাবে এসেছে’। কিন্তু আল্লাহর থেকে নিরোধ ও নাকচ করার ক্ষেত্রে এই সীমাবদ্ধতা নেই। কুরআন ও সুন্নাহয় আল্লাহর থেকে যেসব গুণ ও বিশেষণ নাকচ করা হয়েছে, আমরা সেগুলোও নাকচ করব। এর পাশাপাশি দোষ, ত্রুটি ও অপূর্ণতার সকল বিশেষণ, নিদর্শন ও সংমিশ্রণকেও আমরা নাকচ করব। কারণ, আল্লাহ এ সবকিছু থেকে পূত ও পবিত্র। কওমি মাদরাসায় ফজিলত জামাআতেই ‘শরহে আকায়িদ’ গ্রন্থে এ বিষয়টি শিখিয়ে দেওয়া হয়।
  4. ৫৪ নম্বর পৃষ্ঠায় ‘ফেরেশতা সম্পর্কিত আকিদা’ শিরোনামে লেখা হয়েছে—‘তাঁরা আমাদের মতো খান না, ঘুমান না’। এই বাক্যে ‘আমাদের মতো’ কথাটা যোগ না করলেই বোধ করি ভালো ছিল। কারণ, পূর্বে আল্লাহ তাআলার ব্যাপারে লেখা হয়েছিল—‘তিনি কথা বলেন, হাসেন, খুশি হন, রাগান্বিত হন, তবে মাখলুকের মতো করে নয়; বরং তাঁর মর্যাদা ও শান মোতাবেক’। এর আলোকে কেউ যদি ভেবে বসে, ‘ফেরেশতারাও খান এবং ঘুমান; তবে মাখলুকের মতো করে নয়; বরং তাঁর মর্যাদা ও শান মোতাবেক’। আর উল্লেখ করে দেওয়া সংগত ছিল যে, ‘আল্লাহ খুশি হন, রাগান্বিত হন’—এই কথার দ্বারা ভেতরের প্রভাব ও আবেগ উদ্দেশ্য হয় না, যেমন মানুষের ক্ষেত্রে প্রয়োগ হলে উদ্দেশ্য হয়ে থাকে; বরং আল্লাহ তাআলার শানে এই কথাটি বলা হলে এর দ্বারা এর ফলাফল উদ্দেশ্য হয়। কওমি মাদরাসায় ফজিলত জামাআতেই ‘তাফসিরে বায়জাবি’তে এ বিষয়টি বুঝিয়ে দেওয়া হয়।
  5. ৫৫ নম্বর পৃষ্ঠায় ‘কিতাবসমূহ সম্পর্কিত আকিদা’ শিরোনামে লেখা হয়েছে—মোট কিতাবের সংখ্যা একশ চারটি। এর মধ্যে চারটি হলো প্রধান।’ আমাদের ওপর আল্লাহ তাআলার অবতীর্ণ সকল কিতাবের ওপর ইমান আনতে হবে। এগুলোর সংখ্যা সুনির্দিষ্টভাবে আমাদের জানানো হয়নি। যে কয়েকটি হাদিসে সংখ্যার বিবরণ এসেছে, সেগুলোর সনদ তথা সূত্র পরম্পরার ওপর হাদিস বিশারদ ইমামগণ কালাম করেছেন। অর্থাৎ অকাট্যভাবে কোনো সংখ্যাই প্রমাণিত নয়। আর প্রকাশ থাকে যে, আকিদা সাব্যস্ত হওয়ার জন্য অকাট্য প্রমাণের প্রয়োজন হয়। সুতরাং এভাবে লোকমুখের প্রচলনের ওপর ভিত্তি করে এরকম শক্তিশালী একটি বইয়ে এ ধরনের সারহীন বিশ্বাস অন্তর্ভুক্ত না করাই সমীচীন।
  6. ৫৬ নম্বর পৃষ্ঠায় ‘সাহাবা সম্পর্কিত আকিদা’ শিরোনামের অধীনে লেখা হয়েছে—‘সাহাবিদের মধ্যে দশজন ছিলেন জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত’। এটা একেবারেই ভুল কথা। সাধারণত মফস্বলের মূর্খ মানুষেরা আলোচনাকালে এভাবে বলে থাকে। বাস্তবতা হলো, সাহাবিদের মধ্যে জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত কেবল এই দশজনই নন। আরবিতে তাদেরকে যে ‘আল-আশারাতুল মুবাশশারাহ’ বলা হয়, এই নাম দেখে অনেকে বিভ্রমে পড়ে যায়। মূলত এই দশজনকে এক হাদিসে, এক মজলিসে জান্নাতের সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে। সেখান থেকে তাদের নাম পড়ে গেছে এটা। অন্যথায় এ ছাড়াও অন্য সময়ে বিভিন্ন সাহাবিকে জান্নাতের সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, এই দশজনের মধ্যে তো হাসান, হুসাইন ও ফাতিমা রা.-এর নামও নেই। অথচ তাদের শুধু জান্নাতি হওয়ারই নয়; বরং প্রথম দুজনকে জান্নাতের যুবকদের সর্দার হওয়ার এবং ফাতিমা রা.-কে জান্নাতের নারীদের সর্দার হওয়ার সুসংবাদ শোনানো হয়েছে। এমন তো নয় যে, তারা জাহান্নামে থেকে জান্নাতিদের সর্দার হবেন।
  7. ‘ইমান আন্তরিক বিশ্বাস, মৌখিক স্বীকৃতি ও দৈহিক আমলের মাধ্যমে পূর্ণতা পায়। আন্তরিক বিশ্বাস না থাকলে তার ইমানের কোনো মূল্য নেই।’ [পৃ. ৫৭] এখানে সরলীকরণ করতে গিয়ে অস্পষ্টতা স্রষ্টি হয়েছে। আন্তরিক বিশ্বাসের দ্বারা ইমান গঠিত হয় আর দৈহিক আমলের দ্বারা পূর্ণতা পায়। আন্তরিক বিশ্বাস না থাকলে ইমান অপূর্ণ থাকে—বিষয়টা এমন নয়; বরং ইমান অস্তিত্বলাভই করতে পারে না। এরপরের বাক্য দ্বারা বোঝা যায়, ‘আন্তরিক বিশ্বাস না থাকলে তার ইমানের কোনো মূল্য নেই।’ মূল্যহীন বস্তু কিন্তু অস্তিত্বহীন হয় না। কারণ, যা অস্তিত্বহীন, তার মূল্য থাকা বা না-থাকার তো প্রশ্নই আসবে না। তো আন্তরিক বিশ্বাস না থাকলে ইমানের মূল্য থাকে না—এমন নয়; বরং ইমানের অস্তিত্বই থাকে না।
  8. বইয়ে ‘তাওহিদুল আসমা ওয়াস সিফাত’ শিরোনামে লেখা হয়েছে—‘তাওহিদুল আসমা ওয়াস সিফাতের অর্থ কোনো ধরনের তাহরিফ বা বিকৃতিসাধন, তাতিল বা নিষ্ক্রিয়করণ, তাকয়িফ বা ধরন নির্ধারণ এবং তামসিল বা সাদৃশ্য প্রদান ব্যতীত আল্লাহ তাআলার নামসমূহ ও গুণাবলির প্রতি বিশ্বাস স্থাপন’। [পৃ. ৬৩] এতটুকু বলেই তাওহিদুল আসমা ওয়াস সিফাতের পরিচয়ের ইতি টানা হয়েছে। এরপর এর দলিলের আলোচনা শুরু হয়েছে। কিন্তু কথা হলো, বইটি প্রাথমিক পর্যায়ের কোনো মুসলমানকে সাজেস্ট করলে আমার মনে হয় না, কেবল এতটুকু পড়ে সে তাওহিদের গুরুত্বপূর্ণ এই প্রকার সম্পর্কে কোনো স্বচ্ছ ধারণা লাভ করতে পারবে। সাধারণ পাঠকের কথা বিবেচনা করে পরিচয়টা এভাবে রেখে এর সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা যোগ করে দেওয়া প্রয়োজন ছিল। আর প্রকাশ থাকে যে, এ বইয়ের অধিকাংশ পাঠক সাধারণই হবে। কারণ, বিজ্ঞ আলিমরা বাংলা বই খুব কমই পড়ে থাকেন।

বইটি যেহেতু অনেক বড়, কলেবর বিশাল, তাই এর রিভিউও অনেক বড় হয়ে যাবে—এটাই স্বাভাবিক। অনলাইনে মানুষ মাত্রাতিরিক্ত দীর্ঘ লেখা পড়তে আগ্রহী হয় না। তাই আপাতত এতটুকুতেই ক্ষান্তি দিচ্ছি। আল্লাহ চাইলে পরবর্তীতে আরও কিছু বিষয় নিয়ে হাজির হতে পারি। ওয়া মা তাওফিকি ইল্লা বিল্লাহ। অবশ্য চতুর্মুখী ব্যস্ততার মধ্যে কতটুকু সময়-সুযোগ করে উঠতে পারব, তা আল্লাহই ভালো জানেন।

পরিশেষে বইয়ের একটা প্যারা উল্লেখ করে আমাদের এ পর্বের রিভিউয়ের ইতি টানছি।

‘পুরো বিশ্বজুড়ে আজ ইসলাম আবার জাগছে। এ জাগরণ থেকে বাড়ছে মানুষের জানার আগ্রহ। ব্যাপক অনুসন্ধিৎসু অধ্যয়ন থেকে বৃদ্ধি পাচ্ছে তাদের জ্ঞানের পরিধি। অথচ মুসলিম হয়েও আজ আমরা জানি না নিজেদের দীনের মর্মবাণী। উপলব্ধি করি না ইসলামের সৌন্দর্য ও স্বকীয়তা। বোঝার চেষ্টা করি না ইসলামি বিধিবিধানের সর্বজনীনতা। এর চেয়ে দুর্ভাগ্যের আর কী আছে!’

Share This