দাজ্জালের ফিতনা সম্পর্কে কিতাবিদের ধর্মীয় গ্রন্থাদি কী বলে

 

১. “পরে ঈসা যখন জৈতুন পাহাড়ে বসে ছিলেন তখন উম্মতেরা গোপনে তাঁর কাছে এসে বললেন, “আমাদের বলুন, কখন এই সব হবে কি রকমের চিহ্নের দ্বারা বোঝা যাবে আপনার আসবার সময় ও কেয়ামতের সময় হয়েছে?” জবাবে ঈসা তাঁদের বললেন, “দেখো, কেউ যেন তোমাদের না ঠকায়, কারণ অনেকেই আমার নাম নিয়ে এসে বলবে, ‘আমিই মসীহ্‌’, এবং অনেক লোককে ঠকাবে। তোমাদের কানে যুদ্ধের আওয়াজ আসবে আর যুদ্ধের খবরাখবরও তোমরা শুনতে পাবে। কিন্তু সাবধান! এতে ভয় পেয়ো না, কারণ এই সব হবেই; কিন্তু তখনও শেষ নয়। এক জাতি অন্য জাতির বিরুদ্ধে এবং এক রাজ্য অন্য রাজ্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে। অনেক জায়গায় দুর্ভিক্ষ ও ভূমিকম্প হবে। কিন্তু এই সব কেবল যন্ত্রণার শুরু।”[1]

২. “সেই সময়ে যদি কেউ তোমাদের বলে, ‘দেখ, মসীহ্‌ এখানে’ কিংবা ‘দেখ, মসীহ্‌ ওখানে’, তবে তা বিশ্বাস কোরো না; কারণ তখন অনেক ভণ্ড মসীহ্‌ ও ভণ্ড নবী আসবে এবং বড় বড় আশ্চর্য ও চিহ্ন-কাজ করবে যাতে সম্ভব হলে আল্লাহ্‌ বাছাই করা বান্দাদেরও তারা ঠকাতে পারে। দেখ, আমি আগেই তোমাদের এই সব বলে রাখলাম।”[2]

৩. “কেউ যেন কোন ভাবেই তোমাদের ভুল পথে নিয়ে না যায়, কারণ সেই দিন আসবার আগে আল্লাহ্‌র বিরুদ্ধে ভীষণ বিদ্রোহ হবে, আর সেই অবাধ্যতার পুরুষ, যে জাহান্নামী, সে প্রকাশিত হবে। “মাবুদ” বলে যা কিছু আছে সেই সমস্তের বিরুদ্ধে আর এবাদত করবার মত সব কিছুর বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে সে নিজেকে বড় করে দেখাবে; এমনকি, সে আল্লাহ্‌র এবাদত-খানায় বসে নিজেকে আল্লাহ্‌ বলে দাবি করবে। আমি যখন তোমাদের কাছে ছিলাম তখন এই সব কথা যে তোমাদের বলতাম, তা কি তোমাদের মনে পড়ে না? সেই অবাধ্যতার পুরুষ যাতে ঠিক সময়ের আগে প্রকাশিত হতে না পারে সেইজন্য যা এখন তাকে বাধা দিয়ে রাখছে তা তো তোমরা জান। তোমরা এও জানতে পেরেছ যে, অবাধ্যতার পুরুষের গোপন কার্যকলাপ এখনও চলছে, কিন্তু যিনি তাকে বাধা দিয়ে রাখছেন তিনি সরে না যাওয়া পর্যন্ত বাধা দিতেই থাকবেন। তারপরে সেই অবাধ্যতার পুরুষ প্রকাশিত হবে। হযরত ঈসা তাঁর মুখের নিঃশ্বাসে তাকে ধ্বংস করবেন এবং তাঁর মহিমাপূর্ণ উপস্থিতির দ্বারা তার শক্তি শেষ করে দেবেন। সেই অবাধ্যতার পুরুষ যখন আসবে তখন তার সংগে থাকবে শয়তানের শক্তি। সেই শক্তি প্রকাশ পাবে সব রকম মিথ্যা চিহ্ন এবং কেরামতী ও শক্তির কাজের মধ্যে, আর ধ্বংসের পথে এগিয়ে যাওয়া লোকদের ঠকাবার সব রকম দুষ্ট ছলনার মধ্যে। এই লোকেরা ধ্বংস হবে, কারণ নাজাত পাবার জন্য তারা সত্যকে ভালোবাসে নি এবং তা গ্রহণও করে নি। এইজন্য আল্লাহ্‌ তাদের কাছে এমন এক শক্তি পাঠাবেন যা তাদের ভুল পথে নিয়ে যাবে, যেন তারা মিথ্যায় বিশ্বাস করে। ফলে যারা সত্যের উপর ঈমান না এনে অন্যায় কাজে আনন্দ পেয়েছে তাদের সকলকে হাশরে দোষী বলে ধরা হবে।”[3]

৪. “সন্তানেরা, এ-ই শেষ সময়। তোমরা তো শুনেছ যে, দজ্জাল আসছে, কিন্তু তাঁর আরও অনেক দজ্জাল এরই মধ্যে এসে গেছে। তাই আমরা বুঝতে পারছি যে, এ-ই শেষ সময়।”[4]

খ্রিস্টানরা দাজ্জালকে ‘আলমাসিহুল কাযযাব’ তথা মিথ্যাবাদী মাসিহ বলে থাকে। তারা তাকে Anti Christ নামেও অভিহিত করে থাকে। তারা মনে করে, দাজ্জাল নিজেকে প্রভু দাবি করার মাধ্যমে পৃথিবী ধ্বংসের অন্যতম কারণ হবে।

 

দাজ্জালের গাধা

 

দাজ্জাল একটি গাধার পিঠে চড়ে সারা পৃথিবী বিচরণ করে বেড়াবে। জাবির ইবনু আব্দিল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সা. বলেন—

“দ্বীনদারির করুণ অবস্থা এবং ইলমের প্রস্থানলগ্নে দাজ্জালের আত্মপ্রকাশ ঘটবে। …তার একটা গাধা থাকবে, যাতে সে আরোহণ করবে। গাধাটির দুই কানের মাঝে দূরত্ব থাকবে চল্লিশ গজ পরিমাণ।”[5]

আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সা. বলেন—

“দাজ্জাল একটি শ্বেত-শুভ্র গাধার পিঠে চড়ে আত্মপ্রকাশ করবে। গাধাটির দুই কানের মাঝে দূরত্ব হবে সত্তর হাত।”[6]

হুযায়ফা ইবনু উসায়দ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন—

“দাজ্জালের মধ্যে তিনটি আলামত থাকবে—সে কানা হবে, অথচ তোমাদের রব কানা নন। তার দু’চোখের মাঝে ‘কাফির’ লেখা থাকবে, যা সকল মুমিন পড়তে পারবে—নিরক্ষর হোক কিবা লেখক—, গাধা ছাড়া অন্য কোনো পশু তার অনুগত হবে না। ফলে তা হবে নোংরার ওপর নোংরা।”[7]

আবু তুফায়ল রহ. জনৈক সাহাবি থেকে বর্ণনা করেন—

“দাজ্জাল একটা নোংরা গাধার ওপর চড়ে আত্মপ্রকাশ করবে।”[8]

দাইলামি রহ. তার ‘মুসনাদুল ফিরদাউস’ গ্রন্থে উপরিউক্ত বর্ণনাটিকে এই শব্দে বর্ণনা করেন—“অধিক লোমবিশিষ্ট শ্বেত-শুভ্র গাধায় চড়ে…।”

 

দাজ্জালের ফিতনা

দাজ্জালের ফিতনা মানবেতিহাসের সবচে বড় ফিতনা। ইমরান ইবনু হাসিন রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেন—

“আদম আ. এর সৃষ্টি থেকে কিয়ামাত পর্যন্ত দাজ্জালের ফিতনা থেকে বড় কোনো বিষয় সংঘটিত হবে না।”[9]

এজন্যই রাসুলুল্লাহ সা. তার উম্মাহকে প্রত্যেক নামাজান্তে দাজ্জাল থেকে মুক্তি প্রার্থনার দুয়া শিখিয়েছেন। তিনি নিজেও সর্বদা এই আমল জারি রাখতেন। এমনকি সালাফের একদল আলিম—ইতিহাস যাদেরকে ‘জাহেরি’ নামে চিনে থাকে—প্রত্যেক নামাজান্তে দাজ্জাল থেকে মুক্তিপ্রার্থনা করাকে ওয়াজিব বলে অভিহিত করেছেন। আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সা. বলেন—

“তোমাদের কেউ যখন তাশাহ্‌হুদ পাঠ করে, তখন সে যেনো অবশ্যই চারটি জিনিস থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করে। সে যেনো বলে—হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে আশ্রয়প্রার্থনা করি জাহান্নামের আজাব থেকে, কবরের আজাব থেকে, জীবন-মৃত্যুর ফিতনা থেকে এবং দাজ্জালের নিকৃষ্ট ফিতনা থেকে।”[10]

দাজ্জালের ফিতনার অত্যাধিক গুরুত্বের কারণেই তো সকল নবি তার উম্মাহকে এ ব্যাপারে সতর্ক করে গেছেন। আব্দুল্লাহ ইবনু উমার রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন—

“রাসুলুল্লাহ সা. আমাদের মাঝে দাঁড়ালেন। এরপর তিনি আল্লাহ তাআলার যথাযথ প্রশংসা করলেন। এরপর দাজ্জালের কথা উল্লেখ করে বললেন, নিশ্চয়ই আমি তোমাদেরকে দাজ্জালের ব্যাপারে সতর্ক করছি। এমন কোনো নবি ছিলেন না, যিনি তার উম্মাহকে সতর্ক করেন নি। তবে আমি তোমাদেরকে এমন একটি কথা বলে দিচ্ছি, যা অন্য কোনো নবি তার সম্প্রদায়কে বলেন নি। নিশ্চয়ই দাজ্জাল হবে কানা। আর তোমাদের রব কানা নন।”[11]

নাওয়াস ইবনু সামআন রা. বর্ণনা করেন—

“রাসুলুল্লাহ সা. এক সকালে দাজ্জাল প্রসঙ্গে আলোচনা করেন। তিনি তার ভয়াবহতা ও নিকৃষ্টতা এমনভাবে তুলে ধরেন যে, আমাদের ধারণা সৃষ্টি হলো, দাজ্জাল হয়তো খেজুর বাগানের ওপাশেই বিদ্যমান। বর্ণনাকারী বলেন, আমরা রাসুলুল্লাহ সা. এর কাছ থেকে চলে গেলাম। তারপর আবার আমরা তার কাছে ফিরে এলাম। তিনি আমাদের মধ্যে দাজ্জালের ভীতির চিহ্ন দেখে প্রশ্ন করলেন, তোমাদের কী হয়েছে? আমরা বললাম, হে আল্লাহ্‌র রাসুল! আপনি সকালে দাজ্জাল প্রসঙ্গে আলোচনা করেছেন এবং এর ভয়াবহতা ও নিকৃষ্টতা এমন ভাষায় উত্থাপন করেছেন যে, আমাদের ধারণা হচ্ছিলো, হয়তো সে খেজুর বাগানের পাশেই উপস্থিত আছে। তোমাদের ব্যাপারে দাজ্জাল ছাড়া অন্য কিছু আমার জন্য এতো বেশি আশঙ্কার কারণ নয়। যদি সে আমার জীবদ্দশাতেই তোমাদের মাঝে আসে, তাহলে আমিই তোমাদের পক্ষে তার প্রতিপক্ষ হবো। আর যদি সে আমার অবর্তমানে আবির্ভূত হয়, তাহলে তোমরাই তার প্রতিপক্ষ হবে। আর আল্লাহ তাআলাই প্রত্যেক মুসলমানের জন্য আমার পরিবর্তে সহায় হবেন। সে হবে কুঞ্চিত চুলবিশিষ্ট, স্থির দৃষ্টিসম্পন্ন যুবক, সে হবে আবদুল উযযা ইবনু কাতানের অনুরূপ। … সে সিরিয়া ও ইরাকের মধ্যবর্তী কোনো এলাকা থেকে আত্মপ্রকাশ করবে। তারপর সে ডানে-বামে ফিতনা ফ্যাসাদ ও বিপর্যয় সৃষ্টি করে বেড়াবে। হে আল্লাহ্‌র বান্দাগণ, তোমরা দৃঢ় থাকবে।”[12]

উপরিউক্ত বর্ণনা থেকে সাহাবিরা দাজ্জালের ফিতনার ব্যাপারে কতোটা শঙ্কিত ছিলেন—তা সুস্পষ্টভাবে প্রতিভাত হচ্ছে। তাদের এমনটাও মনে হয়েছে যে, এই বুঝি খেজুর বাগানের পেছনে দাজ্জাল এসে পড়েছে। আর আমাদের সমাজের অধিকাংশের ধারণা হলো, দাজ্জালের আবির্ভাবের এখনও বুঝি হাজার বছর বাকি রয়েছে। সভ্যতা-সংস্কৃতির এই চরম উৎকর্ষের যুগে কি তার আগমন সম্ভব! দাজ্জালকে নিয়ে আমাদের ভাবার সময় কোথায়! এর থেকে কতো জরুরি জরুরি বিষয়ের মোকাবেলা করতে হচ্ছে! উম্মাহ কী ভয়াল অবস্থার মাঝে দিনাতিপাত করছে! পরিতাপের বিষয় হলো, স্রেফ জনসাধারণের ভাবনা এমন হলে তা একপর্যায়ের সহনীয় ছিলো। কিন্তু বাস্তবতা হলো, ইলমের সঙ্গে সম্পৃক্ত বিরাট সংখ্যক মানুষের ভাবনা-কল্পনাও এমন।

উম্মু শারিক রা. বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেন—

“অবশ্যই মানুষ দাজ্জালের থেকে পলায়নের উদ্দেশ্যে পাহাড়ে আশ্রয় নেবে।” উম্মু শারিক রা. বলেন, “হে আল্লাহ্‌র রাসুল, আরবরা সেদিন কোথায় থাকবে?” তিনি বললেন, “তারা হবে স্বল্প।”[13]

অর্থাৎ সেসময়ে আরবদের পরিমাণ হবে নগণ্য। ফলে তারা এই ফিতনার মোকাবেলা করতে অক্ষম হবে। এর এক অর্থ তো এই যে, আদতেই তাদের জনসংখ্যা হ্রাস পাবে। আরেক অর্থ হতে পারে, তাদের ইমানদারদের সংখ্যা হবে স্বল্প। কারণ সেসময়ে রিদ্দাহ এবং নিফাকের অবাধ প্রবাহে তাদের অধিকাংশই গা ভাসাবে। দাজ্জালের সৈন্যবাহিনীতেও আরব মুনাফিক এবং কাফিরদের বড় অংশ স্থান পাবে। আরববিশ্বে বর্তমান চিত্রের দিকে নজর দিলেই বিষয়টা সুস্পষ্টভাবে প্রতিভাত হওয়ার কথা। ইমানের মৌখিক স্বীকৃতি দেয়াটাই তো শুধু ইমানের মাপকাঠি নয়। কারণ মুনাফিকরাও তো এই কাজ করে থাকে। একশ্রেণির অবস্থা তো এমন যে, তাদের যবান ইসলাম গ্রহণ করলেও অন্তর এযাবৎ ইসলাম গ্রহণ করে নি, যেমনটি আল্লাহ কুরআনে বলেছেন। আর আরেক শ্রেণির অবস্থা হলো, ইসলাম গ্রহণের পর ইমান-নষ্টকারী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়ে নিজেদের ইমানকে খুইয়ে বসেছে। এখন বাহ্যত তাদেরকে মুমিন বোধ হলেও আদতে তারা বহু আগেই ইসলামের সীমানা অতিক্রম করে কুফরির চৌহদ্দিতে পা রেখেছে।

দাজ্জালের ফিতনার ভয়াবহতার কারণেই রাসুলুল্লাহ সা. তার থেকে দূওরত্ব বজায় রেখে চলার এবং তার ফিতনা থেকে গা বাঁচিয়ে নিজের দ্বীন ও ইমানকে সুরক্ষিত রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।

ইমরান ইবনু হুসাইন রা. বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সা. ইরশাদ করেছেন—

“কেউ দাজ্জালের আবির্ভাবের কথা শুনলে সে যেনো তার থেকে দূরে সরে যায়। আল্লাহ্‌র কসম, ব্যক্তি তার কাছে আসবে এমতাবস্থায় যে, নিজের ব্যাপারে তার ধারণা থাকবে—আমি তো মুমিন, অথচ এরপর সে দাজ্জালের সাথে থাকা সংশয়গুলোতে আক্রান্ত হয়ে তার অনুসরণ করে বসবে!”[14]

অলৌকিক সব ক্ষমতা এবং যাদুময় কর্মকাণ্ডের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে বিপুল পরিমাণ অনুসারী দাজ্জালের দলে যোগ দেবে। কেউ যোগ দেবে লোভে আর কেউ দেবে দাজ্জাল কর্তৃক পীড়িত হবার ভয়ে। ইসলামের দীপ্ত মশালকে নিজেদের ফুৎকারে নিভিয়ে দেয়ার ঘৃণ্য প্রয়াসেও একদল তার অনুসারী হবে। দাজ্জালের বাহিনীর প্রধান সদস্য হবে ইহুদি গোষ্ঠী। রাসুলুল্লাহ সা. বলেন—

“আসফাহান অঞ্চলের সত্তর হাজার ‘তাইলাসান’ পরিহিত ইহুদি দাজ্জালের অনুসারী হবে।”[15]

তাইলাসানের চিত্র - ১

তাইলাসানের চিত্র – ১

তাইলাসানের চিত্র - ২

তাইলাসানের চিত্র – ২

তাইলাসান পরিহিত একদল ইহুদি পণ্ডিত

তাইলাসান পরিহিত একদল ইহুদি পণ্ডিত

আবু হুরায়রা রা. বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সা. বলেন—

“সত্তর হাজার অনুসারী নিয়ে দাজ্জাল খোয ও কিরমান অঞ্চলে অবতরণ করবে। তাদের চেহারা স্থূল ঢালসদৃশ স্ফীত বর্মের মতো দেখাবে।”[16]

খোয এবং কিরমান ইরানের দুটো এলাকার নাম। প্রথমটি ইরানের পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত। খোযকে বর্তমানে খোযিস্তান বলা হয়। আর কিরমান দক্ষিণ-পূর্ব ইরানের প্রসিদ্ধ একটি নগরী। রাজধানী তেহরান থেকে প্রায় ৩৪০ কি. মি. দূরে অবস্থিত ইরানের প্রসিদ্ধ একটি প্রদেশের নাম আসফাহান। সরকারি গণনা-অনুযায়ী বর্তমানে সেখানে প্রায় ৩০ হাজার ইহুদি বাস করে। বোঝাই যাচ্ছে, ধীরে ধীরে এদের সংখ্যা বাড়বে—হয়তো প্রজননের মাধ্যমে কিবা অন্য অঞ্চলের ইহুদি তাদের সাথে যুক্ত হওয়ার মাধ্যমে। ইহুদিবাদের সবচে মজার বিষয় হলো, নতুন করে কেউ ইহুদি ধর্মের দীক্ষিত হতে পারে না। এটা বংশকেন্দ্রিক। ইহুদিদের সন্তান-সন্ততিই কেবল ইহুদিদের মধ্যে গণ্য হয়। নতুন কারো জন্য এর দুয়ার উন্মুক্ত নয়। এজন্যই পৃথিবীতে এতো এতো খ্রিস্টান মিশনারি থাকা সত্ত্বেও ইহুদিবাদের দিকে দাওয়াহ্‌র উদ্দেশ্যে গঠিত—এমন একটি মিশনারিরও কিন্তু অস্তিত্ব নেই। ওরা এ পথে নামলে ফিতনার ভয়াবহতা হতো আরো প্রকট। আল্লাহ যা করেন, ভালোর জন্যই করেন। স্মতর্ব্য যে, দাজ্জালের অধিকাংশ অনুসারী ইহুদি হওয়ার রহস্য হলো, ইহুদিরা তাদের বিকৃত ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী দাজ্জালকে মনে করে তাদের পরম মুক্তিদাতা, প্রতীক্ষিত মাসিহ। তারা দাজ্জালের জন্য প্রতীক্ষার প্রহর গুনছে এবং দাজ্জালের আবির্ভাবের জন্য সম্ভাব্য সকল ক্ষেত্র সযত্নে প্রস্তুত করছে। দাজ্জালের আবির্ভাবের পূর্বেই পুরো দুনিয়ায় দাজ্জালি মিশনের প্রসার ঘটানোর পেছনে মূল অবদান এই ইহুদি গোষ্ঠীরই। আর এদের ক্রীড়নক হিসেবে সঙ্গ দিচ্ছে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের একটা অংশ।

ইহুদিদের বিশ্বাস হলো, আল্লাহ তাআলা দাউদ আ. এর বংশ থেকে একজন বাদশাহ্‌র প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। সেই বাদশাহ ইহুদিদের বিস্তৃত রাজ্য প্রতিষ্ঠা করবে। ইহুদিদের ধর্মীয় প্রথানুসারে দাজ্জালের শীঘ্রই আগমনের প্রত্যাশায় বিশেষ উপাসনা করা হয়। তাদের বিশেষ উৎসবে দাজ্জালের জন্য সবিশেষ প্রার্থনাপর্ব অনুষ্ঠিত হয়। ‘তালমুদে’ এসেছে—

“মাসিহের আগমনকালে খাদ্য শস্য এবং পশমের পোশাকে বিশ্ব ভরে যাবে। সেদিন যবের একটি দানা গাভীর স্তন সদৃশ হবে। সেদিন বিশ্বময় ইহুদি কর্তৃত্ব ফিরে আসবে। সবাই মাসিহকে অনুসরণ করবে। সেদিন প্রত্যেক ইহুদির ২৮০০ করে সেবক থাকবে। জল-স্থল সর্বত্র তারই নেতৃত্ব চলবে। তবে অনিষ্টদের শাসনব্যবস্থা সমাপ্ত হলেই মাসিহের আগমন ঘটবে।”[17]

ইহিদিদের পাশাপাশি দাজ্জালের বাহিনীর অন্যতম সদস্য হবে স্থূল বর্মসদৃশ স্ফীত চেহারাবিশিষ্ট চেহারাবিশিষ্ট লোকেরা। আবু বকর রা. বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেন—

“দাজ্জাল প্রাচ্যের খোরাসান নামক ভূমি থেকে আত্মপ্রকাশ করবে। স্থূল বর্মসদৃশ স্ফীত চেহারাবিশিষ্ট সম্প্রদায় তার অনুসারী হবে।”[18]

স্থূল বর্মসদৃশ স্ফীত চেহারাবিশিষ্ট—এর অর্থ হলো, ক্ষুদ্র মাথা ও শুভ্র গোলাকার চেহারাবিশিষ্ট। গালের গোশত কিছুটা উঁচু। এককথায়—মোটা ও প্রশস্ত চেহারার অধিকারী।

স্থূল বর্মসদৃশ স্ফীত চেহারার নমুনা

স্থূল বর্মসদৃশ স্ফীত চেহারার নমুনা – ১

স্থূল বর্মসদৃশ স্ফীত চেহারার নমুনা - ২

স্থূল বর্মসদৃশ স্ফীত চেহারার নমুনা – ২

স্থূল বর্মসদৃশ স্ফীত চেহারার নমুনা - ৩

স্থূল বর্মসদৃশ স্ফীত চেহারার নমুনা – ৩

ইহুদি গোষ্ঠী ছাড়াও নাস্তিক মুরতাদ মুনাফিক এবং কাফিররাও দাজ্জালের অনুসারী হবে। মক্কা-মদিনায় দাজ্জালের অনুপ্রবেশ নিষিদ্ধ। এতোদসত্ত্বেও মক্কা-মদিনা থেকে কাফির মুনাফিকদের বিশাল জামাআত দাজ্জালের উদ্দেশে বেরিয়ে এসে তার দলে যোগ দেবে। আনাস ইবনু মালিক রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সা. বলেন—

“মক্কা-মদিনা ব্যতীত অন্য সকল শহর-নগরেই দাজ্জালের অপতৎপরতা ছড়িয়ে পড়বে। সেদিন মক্কা-মদিনার প্রতিটি সড়কে ফেরেশতারা সারিবদ্ধভাবে নাঙ্গা তলোয়ার হাতে প্রহরায় থাকবে। দাজ্জাল সাবখা প্রান্তরে এসে উপনীত হলে মদিনায় তিনটি ভূ-কম্পন অনুভূত হবে। তখন সকল কাফির-মুনাফিক (কোনো কোনো বর্ণনায় এসেছে—সকল পাপিষ্ঠ নর-নারী) মদিনা থেকে বেরিয়ে দাজ্জালের দলে এসে যোগ দেবে। সেদিন হবে নিষ্কৃতির দিন।”[19]

মূর্খসম্প্রদায়ও অজ্ঞাতসারে দাজ্জালের প্রভুত্ব মেনে নেবে। এজন্যই দাজ্জালের ফিতনার ব্যাপারে প্রত্যেক মুসলিমের পর্যাপ্ত জ্ঞান থাকা জরুরি। অন্যথায় অজ্ঞতাই সেদিন তাকে গোমরাহ করে ছাড়বে। দাজ্জালের বাহিনীর অন্যতম সদস্য হিসেবে এই মূর্খ শ্রেণিও থাকবে। আবু উমামা বাহিলি রা. বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেন—

“দাজ্জালের আরেকটি অনাসৃষ্টি এই যে, সে এক বেদুইনকে বলবে, “আমি যদি তোমার বাবা-মা’কে তোমার সামনে জীবিত করে তুলতে পারি, তবে তুমি কি এই সাক্ষ্য দেবে যে, নিশ্চয়ই আমি তোমার রব?”

সে বলবে, “হাঁ।”

তখন দাজ্জালের নির্দেশে দু’টি শয়তান তার বাবা-মা’র অবয়ব ধারণ করে তার সামনে হাজির হয়ে বলবে, “হে বৎস, তার আনুগত্য করো। সে-ই তোমার রব।”[20]

দাজ্জালের ফিতনা হবে মহাফিতনা। যাদের ইমানে দুর্বলতা রয়েছে, তারা সদলবলে সেদিন দাজ্জালের বাহিনীতে যোগ দিয়ে নিজেদের জন্য জাহান্নামকে নিশ্চিত করবে। দাজ্জাল মুমিনদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের অবতারণা করবে। মুমিনরাও তার মোকাবেলায় প্রাণোৎসর্গ করতে জিহাদের বাইয়াত দেবে। অবশেষে ইসা আ. কর্তৃক দাজ্জাল নিহত হবার মাধ্যমে এবং এরপর মুমিনদের হাতে দাজ্জালের বাহিনী কচুকাটা হবার পরে এই যুদ্ধের পরিসমাপ্তি ঘটবে। দাজ্জালের বাহিনীতে পুরুষদের পাশাপাশি নারীরাও থাকবে। এমনকি বর্ণনা থেকে অনুমিত হয় যে, দাজ্জালের বাহিনীর অধিকাংশ সদস্যই হবে এই দ্বিতীয় লিঙ্গধারী শ্রেণি। রাসুলুল্লাহ সা. বলেন—

“দাজ্জাল এসে সাবখা’র মাররে কানাত নামক ভূমিতে অবতরণ করবে। তখন যারা তার উদ্দেশে বেরিয়ে যাবে, তাদের অধিকাংশই হবে নারী। তখন মুমিন পুরুষ ঘরে গিয়ে তার প্রিয়জন, মা মেয়ে বোন ফুফুকে শক্ত করে বেঁধে রাখবে—এই আশঙ্কায় যে, পাছে তারা না আবার দাজ্জালের বাহিনীতে যোগ দেয়ার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ে।”[21]

সেই ফিতনা তো হবে এক মহা ফিতনা, যা থেকে শুধু এমন ব্যক্তিই পরিত্রাণ পাবে, যাকে মহান আল্লাহ আপন অনুগ্রহে এই ফিতনা থেকে সুরক্ষিত রাখবেন। সেদিন আল্লাহ্‌র অনুগ্রহ ছাড়া এই ফিতনার মুখে টিকে থাকার সাধ্য কারো নেই, কারো নেই। দাজ্জালের ফিতনার কথা মুখে আলোচনা তো কতো না সহজ! কিন্তু সেই পরিস্থিতিতে যে এই ফিতনায় আক্রান্ত হবে, সে-ই শুধু উপলব্ধি করতে পারবে এই ভয়াবহতা। আল্লাহ আমাদের সবাইকে দাজ্জালের ফিতনা থেকে রক্ষা করুন। আমিন।

দাজ্জালের ফিতনার পরিধি সুবিস্তৃত। নাতিদীর্ঘ এক নিবন্ধে তার সবগুলো প্রকারের প্রতি আলোকপাত করা তো কিছুতেই সম্ভবপর নয়। এখানে আমরা দাজ্জালের বড় বড় কয়েকটা ফিতনা সম্পর্কে আলোকপাত করার প্রয়াস পাবো ইন শা আল্লাহ।

 

চরম দুর্ভিক্ষের কালে দাজ্জালের কাছে থাকবে নিয়ামতের অশেষ ভাণ্ডার এবং প্রাণীজগত ও জড়পদার্থের ওপরও থাকবে তার কর্তৃত্ব এবং প্রভাব

 

১. নাওয়াস ইবনু সামআন রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সা. বলেন—

“দাজ্জালের চলার গতি হবে বায়ূচালিত মেঘের অনুরূপ। তারপর সে কোনো জাতির কাছে গিয়ে তাদেরকে নিজের দলের দিকে আহ্বান করবে। কিন্তু তারা তাকে মিথ্যাবাদী আখ্যায়িত করবে এবং তার দাবিকে প্রত্যাখ্যান করবে। সে তখন তাদের কাছ থেকে চলে আসবে। তাদের ধনসম্পদও দাজ্জালের পেছনে পেছনে চলে যাবে। তারা পরদিন সকালে নিজেদেরকে নিঃস্ব অবস্থায় পাবে। তারপর সে অন্য জাতির কাছে গিয়ে তাদেরকে আহ্বান করবে। তারা তার আহ্বানে সাড়া দেবে এবং তাকে সত্য বলে মেনে নেবে। সে তখন আকাশকে বৃষ্টি বর্ষনের জন্য আদেশ করবে এবং সে অনুযায়ী আকাশ বৃষ্টি বর্ষণ করবে। তারপর সে যমিনকে ফসল উৎপাদনের জন্য নির্দেশ দেবে এবং সে মুতাবিক যমিন ফসল উৎপাদন করবে। এরপর বিকেলে তাদের পশুপালগুলো পূর্বের চেয়ে উঁচু কুঁজবিশিষ্ট মাংসবহুল নিতম্ববিশিষ্ট ও দুগ্ধপুষ্ট স্তনবিশিষ্ট হবে। তারপর সে নির্জন পতিত ভূমিতে গিয়ে বলবে, তোর ভেতরের খনিজভাণ্ডার বের করে দে। এরপর সে সেখান থেকে ফিরে আসবে এবং ভূমি-উৎসারিত ধনভাণ্ডার তার অনুসরণ করবে, যেভাবে মৌমাছিরা রানী মৌমাছির অনুসরণ করে। তারপর সে পূর্ণযৌবন এক তরুণ যুবককে তার দিকে আহ্বান করবে। সে তরবারির আঘাতে তাকে দু’টুকরা করে ফেলবে। এরপর সে তাকে ডাক দেবে, অমনি যুবক হাস্যোজ্জ্বল চেহারা নিয়ে সামনে এসে দাঁড়াবে।”[22]

২. হুযায়ফা রা. বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সা. বলেন—

“যখন দাজ্জাল বের হবে, তখন তার সঙ্গে পানি ও আগুন থাকবে। মানুষ যা আগুন দেখবে, তা মূলত শীতল পানি। আর মানুষ যা শীতল পানি দেখবে, আদতে তা দহনকারী অগ্নি। তোমাদের মধ্যে যে দাজ্জালের দেখা পাবে, সে যেনো অবশ্যই তার মাঝে ঝাঁপিয়ে পড়ে, যাকে সে আগুন দেখতে পাবে। কারণ, তা তো আসলে সুস্বাদু শীতল পানি।”[23]

৩. জাবির ইবনু আব্দিল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সা. বলেন—

“দাজ্জাল আত্মপ্রকাশ করবে এমন সময়, যখন দ্বীনদারি হালকা হয়ে যাবে এবং ইলম উঠে যাবে। তার সাথে থাকবে কতক রুটির পাহাড়। মানুষেরা তখন খুব কষ্টে থাকবে, তবে যারা তার অনুসারী হবে তাদের বিষয়টি ভিন্ন। তার সাথে থাকবে দু’টি নদি। আমি সে দুটি সম্পর্কে তার থেকেও অধিক অবগত। একটি নদিকে সে বলবে জান্নাত এর অপরটিকে বলবে জাহান্নাম। সে যেটাকে জান্নাত বলবে, যাকে তাতে প্রবেশ করানো হবে, তা হবে জাহান্নাম। আর সে যেটাকে জাহান্নাম বলবে, যাকে তাতে প্রবেশ করানো হবে, তা হবে জান্নাত। আল্লাহ তার সাথে কতক শয়তানকে পাঠাবেন, যারা মানুষদের সাথে কথাবার্তা বলবে। তার সাথে থাকবে ভয়াবহ ফিতনা। সে আকাশকে নির্দেশ দেবে, তখন আকাশ মানুষের দেখামতে বৃষ্টিবর্ষণ শুরু করবে।”[24]

৪. সাফিনা রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সা. বলেন—

“দাজ্জালের সাথে দু’জন ফেরেশতা থাকবে, যারা দু’জন নবির সাথে সাদৃশ্য রাখবে। আমি যদি চাই, তাহলে তাদের নাম এবং তাদের বাবার নাম উল্লেখ করতে পারবো। একজন থাকবে ডানে, অপরজন থাকবে বামে। সেটা হবে ফিতনা। তখন দাজ্জাল বলবে, আমি কি তোমাদের রব নই? আমি কি জীবন দান করি না, আমি কি মৃত্যু দান করি না? তকন একজন ফেরেশতা তাকে বলবে, তুমি মিথ্যা বলেছো। এই কথা তার সঙ্গী ফেরেশতা ছাড়া আর অন্য কেউ শুনবে না। তার এই কথা শুনে তার সঙ্গী ফেরেশতা তাকে উদ্দেশ্য করে বলবে, আপনি সত্য বলেছেন। মানুষেরা এই কথা শুনতে পাবে। তাদের তখন ধারণা হবে, এই ফেরেশতা বুঝি দাজ্জালকে সত্যয়ন করছে। সেটা হবে ফিতনা।”[25]

 

দাজ্জালের অসার দাবির ক্রমোন্নতি

 

দাজ্জাল প্রথমে সমাজ-সংশোধক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে। এরপর সে প্রতাপশালী বাদশাহ্‌র রূপ পরিগ্রহ করবে। তারপর সে নবুওয়াতের দাবি করবে এবং সর্বশেষ নিজেকে প্রভু বলে ঘোষণা দেবে। তার সূচনাই হবে কুফর এবং খোদাদ্রোহ প্রকাশের মাধ্যমে। ইমাম ইবনু কাসির রহ. তার ‘আননিহায়া ফিল ফিতান ওয়াল মালাহিম’ গ্রন্থে (১/৮৮) এবং ইমাম নুয়াইম ইবনু হাম্মাদ রহ. তার ‘আলফিতান’ (১৫২২) গ্রন্থে দু’টি বর্ণনা উল্লেখ করেছেন—যার আলোকে প্রতিভাত হয় যে, দাজ্জাল প্রথমে ইসলামি বিধিবিধান প্রতিষ্ঠা করবে। নির্ধারিত সময়ের পরে সে তার আসল রূপ প্রকাশ করবে। তখন ইমানদারগণ তার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে এবং সে তাদের ওপর পীড়ন-দমন চালাবে। তবে হাদিসশাস্ত্রের ইমামগণের দৃষ্টিতে এই বর্ণনাটি গ্রহণীয় নয়, বরং তা প্রত্যাখ্যাত। (উদাহরণস্বরূপ দেখুন—আননিহায়া, ইবনু কাসির: ১/৯০; ফায়জুল কাদির: ৩/৫৩৯; মাজমাউয যাওয়ায়িদ: ৭/৩৪৩; ফাতহুল বারি: ১৩/৯৮)।

দাজ্জালের অসার দাবির ক্রমোন্নতির ব্যাপারে নির্ভরযোগ্য হাদিসসমূহে যা বর্ণিত হয়েছে, তা নিম্নরূপ—

আবু উমামা রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সা. বলেন—

“আমি তোমাদের সামনে দাজ্জালের এমন একটি গুণ বর্ণনা করছি, যা আমার পূর্বে কোনো নবি তার উম্মাহকে অবগত করেন নি। দাজ্জাল প্রথমে সূচনা করবে এ বলে যে, “আমি নবি”। অথচ আমার পর আর কোনো নবি নেই। এরপর দ্বিতীয় ধাপে সে দাবি করবে, “আমি তোমাদের প্রতিপালক”। অথচ মৃত্যুর পূর্বে তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে দেখতে পাবে না। সে হবে অন্ধ। অথচ তোমাদের প্রতিপালক মোটেও অন্ধ নন।”[26]

রাসুলুল্লাহ সা. আরো বলেন—

“নিশ্চয়ই দাজ্জাল বলবে, “আমি তোমাদের প্রতিপালক।“ তখন যে ব্যক্তি বলবে, “তুমি আমাদের প্রতিপালক নও; বরং আল্লাহ আমাদের প্রতিপালক, তার ওপর আমরা ভরসা করেছি এবং তার প্রতি অভিমুখী হয়েছি, আমরা আল্লাহর কাছে শিরক থেকে আশ্রয়প্রার্থনা করি, তার ওপর দাজ্জালের কোনো প্রভাব কার্যকর হবে না।”[27]

সামুরাহ ইবনু জুনদুব রা. বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সা. বলেন—

“নিশ্চয়ই যখন সে আত্মপ্রকাশ করবে, তখন সে দাবি করবে যে, সে-ই আল্লাহ। তখন যে তার প্রতি ইমান আনবে, তাকে সত্যয়ন করবে এবং তার অনুসরণ করবে, পূর্বর্তী কোনো আমল আর তার উপকারে আসবে না। আর যে তাকে অস্বীকার করবে, মিথ্যা প্রতিপন্ন করবে, পূর্বে কৃত কোনো গুনাহের কারণে সে আর শাস্তিপ্রাপ্ত হবে না।”[28]

 

প্রভুত্বের পক্ষে দাজ্জালের প্রমাণ

 

আবু সাইদ খুদরি রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সা. বলেন—

“দাজ্জাল আত্মপ্রকাশ করবে, তখন মুমিনদের মধ্য থেকে একজন তার অভিমুখে বের হবে, পথিমধ্যে দাজ্জালের সশস্ত্র বাহিনী তাকে পেয়ে বসবে। তারা তাকে বলবে, “কোথায় যাচ্ছো?”

সে বলবে, “আমি এই লোকের কাছে যাচ্ছি, যে সদ্য আত্মপ্রকাশ করেছে।”

তারা তাকে বলবে, “তুমি কি আমাদের রবের ওপর ইমান রাখো না?”

সে বলবে, “আমাদের রবের ব্যাপারে তো কোনো অস্পষ্টতা নেই।”

তখন তারা বলবে, “একে মেরে ফেলো।”

তখন তাদের একদল অপরদলকে বলবে, “তোমাদের রব কি তোমাদেরকে নিষেধ করেন নি যে, তিনি ছাড়া তোমাদের কেউ যেনো কাউকে হত্যা না করে?”

তখন তারা সেই যুবককে দাজ্জালের কাছে নিয়ে যাবে। মুমিন যুবক দাজ্জালকে দেখামাত্র বলবে, “হে মানুষসকল, এই হচ্ছে সেই দাজ্জাল, যার বর্ণনা রাসুলুল্লাহ সা. দিয়ে গেছেন।”

তখন দাজ্জাল নির্দেশ দিয়ে বলবে—“তোমরা একে পাকড়াও করো, এরপর তাকে আচ্ছামতো ধোলাই দাও।”

অনন্তর সেই মুমিন যুবকের বুকে-পেটে প্রচুর প্রহার করা হবে।

এরপর দাজ্জাল বলবে, “তুমি কি আমার ওপর ইমান আনয়ন করবে না?”

তখন সে বলবে, “তুই “আলমাসিহুল কাযযাব”।

এরপর দাজ্জালের নির্দেশে তাকে করাত দিয়ে চেরা হবে। তার মাথা থেকে পা পর্যন্ত দ্বিখণ্ডিত করা হবে। তারপর দাজ্জাল কর্তিত টুকরা-দু’টোর মাঝ দিয়ে হেঁটে যাবে। এরপর সে তার উদ্দেশে বলবে, “ওঠো”। তখন সে সোজা হয়ে উঠে দাঁড়াবে।

এরপর দাজ্জাল তাকে বলবে, “তুমি কি আমার ওপর ইমান আনবে না?”

তখন যুবক বলবে, “তোর ব্যাপারে আমার পর্যবেক্ষণে আরো প্রবৃদ্ধি ঘটেছে।”

এরপর যুবক বলবে, “হে মানুষসকল, আমার পর আর কারো সাথে এরূপ করা হবে না।”

তখন দাজ্জাল তাকে জবাই করে ফেলার উদ্দেশ্যে ধরবে। সেই মুহূর্তে তার ঘাড় থেকে গলার হাড় পর্যন্ত অংশটি তামায় পরিণত হয়ে যাবে। ফলে দাজ্জাল আর কোনোভাবেই জবাই করার পথ খুঁজে পাবে না। তখন সে তার দু-হাত ও দু-পা ধরে নিক্ষেপ করবে। মানুষ ভাববে, দাজ্জাল তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করেছে। অথচ আদতে তাকে নিক্ষেপ করা হয়েছে জান্নাতে।

রাসুলুল্লাহ সা. বলেন, “মহান রাব্বুল আলামিনের কাছে এই যুবকই হবে সবচে মহান শাহাদাতের অধিকারী।”[29]

আবু উমামা বাহিলি রা. বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেন—

“দাজ্জালের আরেকটি অনাসৃষ্টি এই যে, সে এক বেদুইনকে বলবে, “আমি যদি তোমার বাবা-মা’কে তোমার সামনে জীবিত করে তুলতে পারি, তবে তুমি কি এই সাক্ষ্য দেবে যে, নিশ্চয়ই আমি তোমার রব?”

সে বলবে, “হাঁ।”

তখন দাজ্জালের নির্দেশে দু’টি শয়তান তার বাবা-মা’র অবয়ব ধারণ করে তার সামনে হাজির হয়ে বলবে, “হে বৎস, তার আনুগত্য করো। সে-ই তোমার রব।”

দাজ্জালের আরেকটি অনাসৃষ্টি এই যে, সে জনৈক ব্যক্তিকে পরাভূত করে হত্যা করবে। এরপর করাত দ্বারা তাকে ফেঁড়ে দু’টুকরা করে ছুড়ে মারবে। তারপর সে বলবে, “তোমরা আমার এ বান্দার দিকে লক্ষ করো, আমি একে এখনই জীবিত করবো। এরপরো কেউ বলবে কি যে, আমি ব্যতীত তার অন্য কোনো রব আছে?”

এরপর আল্লাহ তাআলা সেই ব্যক্তিটিকে জীবিত করবেন। তখন দাজ্জাল তাকে বলবে, “তোমার রব কে?”

সেই ব্যক্তি বলবে, “আমার রব আল্লাহ। আর নিশ্চয়ই তুই আল্লাহ্‌র দুশমন। তুই তো দাজ্জাল। আল্লাহ্‌র কসম, আজ আমি তোর সম্পর্কে প্রত্যক্ষভাবে বুঝতে পারছি যে, তুই-ই দাজ্জাল।”[30]

আসমা বিনতু ইয়াযিদ আনসারিয়া রা. বলেন—

“রাসুলুল্লাহ সা. আমার ঘরে ছিলেন। তখন তিনি দাজ্জালের আলোচনা প্রসঙ্গে বললেন, “তার অন্যতম ভয়াবহ ফিতনা হবে এই যে, সে এক গেঁয়ো ব্যক্তির কাছে এসে বলবে, “তোমার কী মত যে, যদি আমি তোমার উটকে জীবিত করি, তাহলে তুমি কি এটা নিশ্চিতভাবে বিশ্বাস করবে না যে, আমি তোমার রব?”

সে তখন বলবে, “জি হাঁ।”

তখন শয়তান তার উটের আকৃতি ধারণ করবে—তুমি যতো উট দেখো, এর মধ্যে সবচে সুন্দর ওলানবিশিষ্ট এবং সুউচ্চ কুঁজবিশিষ্ট উটের মতো।

দাজ্জাল এমন ব্যক্তির কাছে আসবে, যার বাবা এবং ভাই মরে গেছে। সে এসে বলবে, ““তোমার কী মত যে, যদি আমি তোমার বাবা এবং ভাইকে জীবিত করি, তাহলে তুমি কি এটা নিশ্চিতভাবে বিশ্বাস করবে না যে, আমি তোমার রব?”

সে বলবে, “অবশ্যই।”

তখন শয়তান তার বাবা এবং ভাইয়ের আকৃতি ধারণ করে আগমন করবে।”[31]

 

পৃথিবীজুড়ে দাজ্জালের গতিশীল অবাধ বিচরণ

 

আল্লাহ তাআলা দাজ্জালকে অমানবিক কিছু শক্তি দেবেন। দাজ্জালের আবির্ভাবই হবে ইমানের পরীক্ষার অংশ হিসেবে। তাই আল্লাহ তাআলা তাকে দান করবেন স্বল্প সময়ে পুরো পৃথিবী পরিভ্রমণ করার অসাধারণ ক্ষমতা। মাত্র চল্লিশ দিনে দাজ্জাল মক্কা এবং তাইবা (মদিনা) ছাড়া সারাটা পৃথিবী মাড়াবে। প্রতিটি দেশ, প্রতিটি অঞ্চল, প্রতিটি দুর্গ তার বিচরণকেন্দ্র হবে।[32]

তামিম দারি রা. এর হাদিসেই আমরা দেখেছি, দাজ্জাল তাকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন—

“অচিরেই আমাকে বের হওয়ার অনুমতি দেয়া হবে। আমি বের হয়ে যমিনে বিচরণ করে বেড়াবো। আমি এমন কোনো গ্রাম বাদ দেবো না, চল্লিশ দিনের ভেতর আমি যা মাড়াবো না।”[33]

নাওয়াস ইবনু সামআন রা. বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সা. বলেন—

“দাজ্জাল শাম এবং ইরাকের মধ্যবর্তী একটি কোনো এলাকা থেকে আত্মপ্রকাশ করবে। তারপর সে ডানে-বামে ফিতনা ফ্যাসাদ ও বিপর্যয় সৃষ্টি করে বেড়াবে। হে আল্লাহর বান্দারা, তোমরা তখন দৃঢ়তার সাথে থেকো।

আমরা প্রশ্ন করলাম, “হে আল্লাহ্‌র রাসুল, সে কতো দিন দুনিয়াতে থাকবে?”

তিনি বললেন, “চল্লিশ দিন। এর একদিন হবে এক বছরের সমান, একদিন হবে এক মাসের সমান এবং একদিন হবে এক সপ্তাহের সমান আর অবশিষ্ট দিনগুলো হবে তোমাদের বর্তমান দিনগুলোর মতো।”

আমরা প্রশ্ন করলাম, “হে আল্লাহ্‌র রাসুল, আপনার কী মত, যে দিনটি একবছরের সমান হবে, তাতে একদিনের সালাত আদায় করাই কি আমাদের জন্য যথেষ্ট হবে?”

তিনি বললেন, “না, বরং তোমরা সেদিনের সঠিক অনুমান করে নেবে (এবং সে অনুযায়ী সালাত আদায় করবে)।”

আমরা আবার প্রশ্ন করলাম, “দুনিয়াতে তার চলার গতি কতো দ্রুত হবে?”

তিনি বললেন, “তার চলার গতি হবে বায়ূচালিত মেঘের অনুরূপ।”[34]

উল্লেখ্য, উপরিউক্ত বর্ণনা থেকে পৃথিবীতে দাজ্জালের অবস্থানের সময়সীমা সম্পর্কেও ধারণা পাওয়া যাচ্ছে। রাসুলুল্লাহ সা. বলছেন—“দাজ্জাল পৃথিবীতে অবস্থান করবে চল্লিশ দিন। এর একদিন হবে এক বছরের সমান, একদিন হবে এক মাসের সমান এবং একদিন হবে এক সপ্তাহের সমান আর অবশিষ্ট দিনগুলো হবে তোমাদের বর্তমান দিনগুলোর মতো।”

এর অর্থ দাঁড়াচ্ছে, পৃথিবীতে দাজ্জালের মোট অবস্থানকাল হলো—১ বছর (হিজরি বর্ষ হিসেবে ৩৬০ দিন) + ১ মাস (৩০ দিন) + ১ সপ্তাহ (৭ দিন) + অবশিষ্ট ৩৭ দিন = ৪৩৪ দিন; অর্থাৎ এক বছর দুই মাস চৌদ্দ দিন বা চৌদ্দ মাস চৌদ্দ দিন।

মুসতাদরাকে হাকিমের বর্ণনা থেকে অনুমিত হয় যে, দাজ্জালের জন্য পুরো পৃথিবীকে এমনভাবে গুটিয়ে ফেলা হবে, যেভাবে দুম্বার লোমগুলো গুটানো থাকে[35]; অর্থাৎ দুম্বার লোমগুলোর পারস্পরিক দূরত্ব যেমন অত্যন্ত স্বল্প হয়ে থাকে, দাজ্জালের জন্য গোটা পৃথিবীর দূরত্ব হবে এমন স্বল্প, যা সে অতি সহজেই—মাত্র চৌদ্দ মাস চৌদ্দ দিনেই মাড়াতে সক্ষম হবে।

 

[1] মথি: ২৪/৩-৮; মার্ক: ১৩: ৩-৮, ২১-২৩; লুক: ২১/৭-১২

[2] মথি: ২৪/২৩-২৫

[3] ২ থিষলনীকীয়: ২/৩-১২

[4] ১ ইউহোন্না: ১৮

[5] আলমুসনাদ, ইমাম আহমাদ: ১৪৯৫৪; মাজমাউয যাওয়ায়িদ: ৭/৩৪৬

[6] আলবা‘সু ওয়ান নুশুর, ইমাম বায়হাকি; মিশকাতুল মাসাবিহ

[7] আলমুসতাদরাক, ইমাম হাকিম

[8] আলমুসান্নাফ, ইবনু আবি শায়বা

[9] সহিহ মুসলিম: ২৯৪৬; আলমুসনাদ, ইমাম আহমাদ: ১৬২৫৩, ১৬২৬৭

[10] সহিহ মুসলিম: ৫৮৮, ৫৮৯; সহিহ বুখারি: ৬৩৭৫, ৬৩৭৭; সুনানুত তিরমিযি: ৩৪৯৫; সুনানু ইবনি মাজাহ: ৩৮৩৮

[11] সহিহ বুখারি: ৩০৫৭, ৩৩৩৭, ৩৩৩৮, ৪৪০২, ৬১৭৫, ৭১২৭, ৭১৩১, ৭৪০৮; সহিহ মুসলিম: ১৬৯, ২৯৩৩, ২৯৩৬

[12] সহিহ মুসলিম: ২৯৩৭; সুনানুত তিরমিযি: ২২৪০; সুনানু ইবনি মাজাহ: ৪০৭৫; আলমুসনাদ, ইমাম আহমাদ: ১৭৬২৯

[13] সহিহ মুসলিম: ২৯৪৫; আলমুসনাদ, ইমাম আহমাদ: ২৭৬২০

[14] সুনানু আবি দাউদ: ৪৩১৯

[15] সহিহ মুসলিম: ২৯৪৪

[16] আলমুসনাদ, ইমাম আহমাদ: ৮৪৫৩

[17] আলকানযুল মারছুদ ফি কাওয়ায়িদিত তালমুদ, সপ্তম পরিচ্ছেদ, মাসিহ এবং ইহুদিদের বাদশাহ অধ্যায় থেকে উদ্ধৃত

[18] সুনানুত তিরমিযি: ২২৩৭; সুনানু ইবনি মাজাহ: ৪০৭২; আলমুসনাদ, ইমাম আহমাদ: ১২, ৩৩

[19] সহিহ বুখারি: ১৮৮১, ৭১২৪; সহিহ মুসলিম: ২৯৪৩; সুনানু ইবনি মাজাহ: ৪০৭৭; আলমুসনাদ, ইমাম আহমাদ: ১২৯৮৬, ১৩৯৪৫, ১৪১১২, ১৮৯৭৫

[20] সুনানু ইবনি মাজাহ: ৪০৭৭

[21] আলমুসনাদ, ইমাম আহমাদ: ৫৩৫৩

[22] প্রাগুক্ত

[23] সহিহ বুখারি: ৩৪৫০; সহিহ মুসলিম: ২৯৩৪, ২৯৩৫; সুনানু আবি দাউদ: ৪৩১৫; আলমুসনাদ, ইমাম আহমাদ: ২৩৩৫৩

[24] আলমুসনাদ, ইমাম আহমাদ: ১৪৮৯৫; আলমুসতাদরাক, ইমাম হাকিম

[25] আলমুসনাদ, ইমাম আহমাদ: ২১৯২৯

[26] সুনানু ইবনি মাজাহ: ৪০৭৭

[27] আলমুসনাদ, ইমাম আহমাদ: ২৩১৫৯

[28] আলমুসনাদ, ইমাম আহমাদ: ২০১৭৮

[29] সহিহ মুসলিম: ২৯৩৮

[30] সুনানু ইবনি মাজাহ: ৪০৭৭

[31] আলফিতান, নুয়াইম ইবনু হাম্মাদ: ১৫১৪

[32] আননিহায়া, ইবনু কাসির: ১/৮৮

[33] সহিহ মুসলিম: ৭২৭৬

[34] সহিহ মুসলিম: ২৯৩৭; সুনানুত তিরমিযি: ২২৪০; সুনানু ইবনি মাজাহ: ৪০৭৫; আলমুসনাদ, ইমাম আহমাদ: ১৭৬২৯

[35] আলমুসতাদরাক, ইমাম হাকিম: ৮৬১২। যাহাবি রহ. বলেন, হাদিসটি বুখারি ও মুসলিমের শর্তে উন্নীত।

Share This