রাসুলুল্লাহ সা. তার জীবনের চল্লিশতম বছরে, গুহার ধ্যানমগ্নতার তৃতীয় বছরে এবং ওহিস্বরূপ স্বপ্ন দেখার ধারাবাহিকতার ছয় মাস পূর্ণ হওয়ার পরে জাগরণের অবস্থায় প্রথম ওহি প্রাপ্ত হন। এই ওহি প্রাপ্ত হওয়ার পূর্বেই এমন অনেক আলামত প্রকাশ পেয়েছিলো, যা তার বিশেষত্ব এবং নবুওয়াতের প্রতি ইঙ্গিত বহন করছিলো। রাসুলুল্লাহ সা. বলেন—

‘নিশ্চয়ই আমি মক্কার সেই পাথরটিকে চিনি, আমি নবিরূপে প্রেরিত হওয়ার পূর্বে যা আমাকে সালাম দিতো। এখনও পর্যন্ত আমি সেটাকে চিনি।’[1]

পূর্বের তিন বছরের মতো সেবারও তিনি হেরা গুহায় রমজান অতিবাহিত করছিলেন। তাঁর বয়স তখন চল্লিশ বছর ছয় মাস। ইমাম ইবনু ইসহাক রহ.-এর ভাষ্যানুসারে, দিনটি ছিলো পবিত্র রমজান মাসের সতেরো তারিখ। সে দিনটিও ছিলো সোমবার। রাসুলুল্লাহ সা. দীনে হানিফ তথা ইবরাহিম আ.-এর দীনানুসারে এবং চিন্তা-ফিকির ও ধ্যানমগ্নতার পুণ্যময় ইবাদতে রত ছিলেন। এমতাবস্থায় জিবরিল আ. তাঁর কাছে ওহি নিয়ে আগমন করলেন। আয়িশা রা. বর্ণনা করেন—

‘এভাবে হেরা গুহায় অবস্থানকালে তাঁর নিকট ওহি আসলো। তাঁর নিকট ফেরেশতা এসে বললো, ‘পড়ুন’। তিনি বললেন, ‘আমি পড়তে জানি না’। রাসুলুল্লাহ সা. বলেন, ‘এরপর তিনি আমাকে জড়িয়ে ধরে এমনভাবে চাপ দিলেন যে, আমার জীবন বেরিয়ে যাওয়ার উপক্রম হলো। এরপর তিনি আমাকে ছেড়ে দিয়ে বললেন, ‘পড়ুন’। আমি বললাম, ‘আমি তো পড়তে জানি না’। এরপর তিনি আমাকে আবারও জড়িয়ে ধরে এমনভাবে চাপ দিলেন যে, আমার খুব কষ্ট হলো। তারপর আমাকে ছেড়ে দিয়ে বললেন, ‘পড়ুন’। এরপর (তৃতীয়বার) তিনি আমাকে জড়িয়ে ধরে চাপ দিলেন। তারপর ছেড়ে দিয়ে বললেন, “পড়ুন আপনার প্রতিপালকের নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন। সৃষ্টি করেছেন যিনি মানুষকে ‘আলাক’ (জোঁকের মতো বস্তু, যা জড়ায়ুর  সঙ্গে ঝুলে থাকে।[2]) থেকে। পড়ুন, আর আপনার প্রতিপালক সর্বাপেক্ষা মহানুভব, যিনি শিক্ষা দিয়েছেন কলম দ্বারা। তিনি শিক্ষা দিয়েছেন মানুষকে, যা সে জানতো না।”’[3]

অর্থাৎ আপনি তো আপনার নিজ জ্ঞান বা শক্তিতে পড়বেন না। বরং আপনি পড়বেন আপনার প্রতিপালকের দেয়া শক্তিতে। তিনি আপনাকে শিখিয়ে দেবেন, যেমনিভাবে তিনি আপনাকে এবং পৃথিবীর সকল মানুষকে সৃষ্টি করেছেন, সৃষ্টি করেছেন তিনি ‘আলাক’ থেকে। তিনি তো সেই সত্তা, যিনি নিরক্ষর মানুষকে ইলম দান করেছেন, যার ফলে সে কলম দ্বারাও লিখতে সমর্থ হয়েছে। “যিনি শিক্ষা দিয়েছেন কলম দ্বারা। তিনি শিক্ষা দিয়েছেন মানুষকে, যা সে জানতো না।”

আলোচ্য আয়াতে ইলমের দুই প্রকারের দিকে ইঙ্গিত রয়েছে—এক প্রকার ইলম হলো, যা মানুষ নিজস্ব চেষ্টা-মেহনতে, লিখে-পড়ে অর্জন করে। আরেক প্রকার ইলম হলো, যা সরাসরি আল্লাহ তাআলা বান্দার হৃদয়ে অবতীর্ণ করেন। পরিভাষায় যে ইলমকে ‘ইলমে লাদুন্নি’ বলা হয়। যা আল্লাহ তাআলার বিশেষ দান। তিনি যাকে ইচ্ছা করেন, তাকেই কেবল দান করেন। বান্দা যখন শরিয়াহর মৌলিক বিষয়াদিতে গভীর জ্ঞানার্জন করে, তার ওপর আমল করে এবং তা নিয়ে চিন্তা-ফিকির করে, তখন আল্লাহ তার সামনে অজানা ইলমের দুয়ার খুলে দেন। সে তখন ‘ইলমে লাদুন্নি’র সরোবরে অবগাহন করে।

এখানে একটি বিষয় লক্ষণীয়: জিবরিল আ. যতবারই রাসুলুল্লাহ সা.-কে পড়তে বলেছেন, প্রতিবারই তিনি এই বলে জবাব দিয়েছেন যে, ‘আমি পড়তে জানি না’। যেহেতু তিনি ‘উম্মি’ তথা নিরক্ষর ছিলেন, তাই এই উত্তরে বিস্ময়েরও কিছু নেই। তবে এখানে যে প্রশ্নটি জাগে, তা হলো, ‘উম্মি’রা লেখা পড়তে পারে না, যেহেতু তাদের অক্ষরজ্ঞান থাকে না। তবে এমন নিরক্ষর কিন্তু খুঁজে পাওয়া দায়, যে মুখে বলতে পারে না। উপরন্তু রাসুলুল্লাহ সা. ছিলেন আশৈশব বিশুদ্ধভাষী। কুরআনের এই কয়টি আয়াত পড়তে তাঁর সমস্যা হওয়ার কথা নয়। কত নিরক্ষর সাহাবি কুরআনের হাফিজ ছিলেন। তাহলে বারবার কেন তিনি এই নিরক্ষরতাকে ওজর হিসেবে দেখিয়ে পড়া থেকে বিরত থাকলেন। আর জিবরিল আ.ই যে তাঁকে বারবার পড়তে বলছেন, কিন্তু তিনি কী পড়বেন, তা কিন্তু একবারও বলছেন না। এতদসত্ত্বেও রাসুল সা. তার অপারগতা প্রকাশ করেই যাচ্ছেন।

সিরাতে ইবনে হিশামের বর্ণনা লক্ষ করলে এ প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যায়। ‘অনন্তর জিবরিল আ. আমার কাছে আসলেন একটি রেশমের আধার নিয়ে, যাতে ছিলো এক কিতাব। তখন তিনি আমাকে বললেন, ‘পড়ুন’।[4] ইমাম আবুল কাসিম সুহাইলি রহ. বলেন, ‘এই হাদিসে ‘একটি রেশমের আধার নিয়ে, যাতে ছিলো এক কিতাব’—থেকে এ দিকেও ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে, মহাগ্রন্থ আল-কুরআনে রয়েছে জান্নাত লাভের নিশ্চয়তা। কারণ, জান্নাতের পোশাক হবে রেশমি কাপড়। তেমনি এতে রয়েছে অনারব দেশগুলোর ওপর ইসলামের বিজয়ী হওয়ার নিদর্শন, যেহেতু সেকালে অনারবদের ভূষণ এবং পোশাক ছিলো রেশমের তৈরি কাপড়।’[5]

আয়িশা রা. এরপর বলেন—

‘রাসুলুল্লাহ সা. এ আয়াত নিয়ে প্রত্যাবর্তন করলেন। তাঁর হৃদয় তখন কাঁপছিলো। তিনি খাদিজা বিনতু খুওয়াইলিদ রা.-এর কাছে এসে বললেন, ‘আমাকে চাদর দ্বারা আবৃত করো। আমাকে চাদর দ্বারা আবৃত করো।’ তারা তাঁকে চাদর দ্বারা আবৃত্ত করলেন। এমনকি তাঁর শঙ্কা দূর হলো। তখন তিনি খাদিজা রা.-কে ঘটনাবৃত্তান্ত জানিয়ে বললেন, ‘আমি নিজের ব্যাপারে শঙ্কাবোধ করছি।’ খাদিজা রা. বললেন, ‘আল্লাহর কসম, কখনো না! আল্লাহ আপনাকে কখনো অপমানিত করবেন না। আপনি তো আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করেন, অসহায়-দুর্বলের দায়ভার বহন করেন, নিঃস্বকে সাহায্য করেন, মেহমানের মেহমানদারি করেন এবং দুর্দশাগ্রস্তকে সাহায্য করেন।’

এরপর খাদিজা রা. তাঁকে নিয়ে নিজ চাচাতো ভাই ওয়ারাকা ইবনু নাওফাল’র কাছে গেলেন, যিনি জাহিলী যুগে ইসায়ি ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। তিনি ইবরানি ভাষায় লিখতে জানতেন এবং আল্লাহর তাওফিক অনুযায়ী ইবরানি ভাষায় ইনজিল থেকে অনুবাদ করতেন। তিনি ছিলেন অত্যন্ত বয়োবৃদ্ধ এবং তিনি অন্ধ হয়ে গিয়েছিলেন। খাদিজা রা. তাঁকে বললেন, ‘হে চাচাতো ভাই! আপনার ভাতিজার কথা শুনুন।’ ওয়ারাকা তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘ভাতিজা! তুমি কী দেখো?’ রাসুলুল্লাহ সা. যা দেখেছিলেন, সবই খুলে বললেন। তখন ওয়ারাকা তাঁকে বললেন—

‘ইনি সে দূত যাঁকে আল্লাহ মুসা আ.- এর কাছে পাঠিয়েছিলেন। হায়, আমি যদি সেদিন যুবক থাকতাম! হায়, আমি যদি সেদিন জীবিত থাকতাম, যেদিন তোমার কওম তোমাকে বের করে দেবে।’ রাসুলুল্লাহ সা. বললেন, ‘তারা কি আমাকে বের করে দেবে?’ তিনি বলেন, ‘হাঁ, অতীতে যিনিই তোমার মতো কিছু নিয়ে এসেছেন তাঁর সঙ্গেই শত্রুতা করা হয়েছে। সেদিন যদি আমি থাকি, তবে তোমাকে প্রবলভাবে সাহায্য করবো।’[6]

অন্য বর্ণনায় এসেছে, ওয়ারাকা ইবনু নাওফাল বলেন—

‘তুমি সুসংবাদ গ্রহণ করো। কারণ, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, তুমি সেই ব্যক্তি, যার সুসংবাদ দিয়েছেন ইবনু মারয়াম। তুমি প্রেরিত নবি। মুসার কাছে আগত ফেরেশতার অনুরূপ ফেরেশতার মুখোমুখি তুমি। নিশ্চয়ই তোমাকে জিহাদের নির্দেশ দেয়া হবে।’[7]

ওয়ারাকা যদিও খ্রিস্টান ছিলেন, কিন্তু তিনি যেহেতু অবগত ছিলেন যে, শেষ যামানার নবি হবেন মুসা আ.-এর মতো নাবিয়্যুল জিহাদ। সহিহ হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ সা. বলেন, ‘আমি যুদ্ধের নবি’।[8] তিনি আরও বলেন, ‘কিয়ামাতের পূর্বে আমি প্রেরিত হয়েছি তরবারিসহ—যতক্ষণ না আল্লাহর ইবাদত করা হয়, যিনি এক, যার কোনো শরিক নেই। আমার রিযিক রাখা হয়েছে আমার বর্শার নিচে। আর যারা আমার দীনের বিরুদ্ধাচারণ করবে, তাদের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে অপদস্থতা এবং লাঞ্ছনা’।[9] তাছাড়া মুসা আ.-এর শরিয়াহতে যেমন হদ-কিসাস, হালাল-হারামের বিধান ছিলো, এই নবির শরিয়াহতেও তা থাকবে তাই তিনি প্রসঙ্গত মুসা আ.-এর নাম উল্লেখ করেছেন; যদিও মুসা আ. ছিলেন ইহুদিদের নবি, আর খ্রিস্টানদের নবি ছিলেন ইসা আ.।

এখানে একটি বিষয় লক্ষণীয়: রাসুলুল্লাহ সা. যখন নিজের ব্যাপারে আশঙ্কা প্রকাশ করলেন যে, তিনি বোধহয় এই ভার সহ্য করতে পারবেন না। তাঁর এতই কষ্ট হচ্ছিলো যে, তিনি কিছুতেই স্বাভাবিক থাকতে পারছিলেন না। মনে হচ্ছিলো, প্রাণ বুঝি ওষ্ঠাগত তখন খাদিজা রা. তাঁকে হৃদয়স্পর্শী ভাষায় সান্ত্বনা দিলেন। তিনি রাসুলের অনন্য কতগুলো বৈশিষ্ট্য তুলে ধরলেন, সে কালে যা ছিলো একেবারেই বিরল, তাঁর সত্তার মধ্যে এতগুলো অনন্য বৈশিষ্টের সম্মিলিত উপস্থিতিই প্রমাণ করছিলো, তিনি বিশেষ কেউ, তাছাড়া পূর্বের অনেক আলামত বর্ণনা ভবিষ্যদ্বাণী ইত্যাদির আলোকে তাঁর নবুওয়াতপ্রাপ্তির বিষয়টি ছিলো স্বাভাবিক ব্যাপার। রাসুলের এসব অনন্য বৈশিষ্ট্যের কারণেই তো স্বেচ্ছাপ্রণোদিত হয়ে খাদিজা রা. তাকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন এবং তাঁর সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন। তাঁর নবুওয়াতপ্রাপ্তির বিষয়টি খাদিজা রা. ঠিকই ঠাহর করে ফেলেছিলেন, তবে তার এই ধারণা ছিলো যুক্তির ভিত্তিতে। পক্ষান্তরে ওয়ারাকার বক্তব্য এবং নবি সা.-কে সুসংবাদপ্রদান ছিলো বর্ণনাভিত্তিক। রাসুল সা.ও ওহির বিষয়ে সন্দেহপরায়ণ হয়েছিলেন—বিষয়টি এমন নয়। তবে নবুওয়াতের এই অস্বাভাবিক ভার সামলে নিতে তাঁর প্রচণ্ড বেগ পেতে হয়েছিলো। খাদিজা রা.ও তাঁর প্রতি সর্বপ্রথম ইমান-আনয়নকারী ছিলেন। তিনি যে নবি সা.-কে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নজনের কাছে নিয়ে গিয়েছেন, তা ছিলো স্রেফ নবি সা.-কে সান্ত্বনাপ্রদান এবং তাঁর অন্তরাত্মাকে প্রশান্ত করার জন্য; অন্য কোনো উদ্দেশ্যে নয়।

উল্লেখ্য, কতক ভ্রান্ত সুফি দাবি করে থাকে, রাসুলুল্লাহ সা. চল্লিশ বছরে নবুওয়াত পেয়েছেন—এই কথাটি ভুল। বরং তিনি নবি ছিলেন সে সময়েই, যখন আদম আ.-এরও সৃষ্টি হয়নি। অর্থাৎ প্রথম নবিই হলেন মুহাম্মাদ সা.; আদম আ. নন। তাদের দলিল হলো এই হাদিস—

عن ميسرة الفجرِ، قَالَ: قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، مَتَى كُتِبْتَ نَبِيًّا؟ قَالَ: وآدَمُ بَيْنَ الرُّوحِ وَالْجَسَدِ

মাইসারা রা. বলেন, আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসুল, কখন আপনাকে নবি হিসাবে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে?’ তিনি বললেন, ‘এমতাবস্থায় যে, আদম ছিলেন আত্মা এবং দেহের মাঝে।’[10] (অর্থাৎ তাঁর দেহে প্রাণসঞ্চারেরও পূর্বে)

ইমাম ইবনু তাইমিয়া রহ. তার মাজমুউল ফাতাওয়া গ্রন্থে সুফিদের এই ভ্রান্ত অভিমতকে মজবুতভাবে খণ্ডন করেছেন। তিনি বিস্তর পরিসরে এ বিষয়টির প্রতি আলোকপাত করেন যে, এ সকল সুফিরা আসলে তাকদিরের মর্মই উপলব্ধি করতে পারেনি। শুধু রাসুলুল্লাহ সা.-এর নবুওয়াতই কেন, পৃথিবীর সবকিছুই তো ভাগ্যলিপিতে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে আদম আ.-এর সৃষ্টিরও পূর্বে। তো তাকদিরে লিপিবদ্ধ হওয়া এক জিনিস আর কার্যত প্রাপ্ত হওয়া আরেক জিনিস। সুফিরা তাদের গলদ অভিমতকে পরিপুষ্ট করার জন্য এ ব্যাপারে বর্ণিত অসংখ্য ভিত্তিহীন এবং জাল হাদিসও বর্ণনা করে থাকে। আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের আকিদা কখনও এমন নয়। উপরিউক্ত হাদিসের শব্দের দিকে খেয়াল করলেও অনুমিত হয় যে, এখানে ভাগ্যলিপিতে লিপিবদ্ধ হওয়ার সময়ের কথা বলা হয়েছে; কার্যত প্রাপ্ত হওয়ার কথা নয়। কারণ, যদি এ কথা মেনে নেয়া হয় যে, রাসুলুল্লাহ সা. আদম আ.-এর সৃষ্টিরও পূর্বে নবুওয়াত লাভ করেছেন তাহলে শরিয়াহর অনেক নুসুস মিথ্যা সাব্যস্ত হয়ে যায়। আর এই অযৌক্তিক দাবিকে সুস্থ বিবেকও গ্রহণ করে না। আর কুরআনের অসংখ্য আয়াতও সেই ভ্রান্ত দাবিকে খণ্ডন করে। যেমন: ‘ইতোপূর্বে তুমি জানতে না, কিতাব কী এবং ইমান কী।’[11] ‘এবং তিনি তোমাকে পেয়েছেন পথ সম্পর্কে অনবহিত, অনন্তর তিনি পথ দেখিয়েছেন।’[12] {বিস্তারিত জানার জন্য দেখুন—শারহু বাবি তাওহিদির রুবুবিয়্যাহ মিন ফাতাওয়া ইবনি তাইমিয়া, শাইখ নাসির ইবনু আব্দিল কারিম আলি: ৭/৫}

 

এর পরবর্তী পর্বে এ শিরোনামের অধীনে আলোচিত সিরাতের ফিকহ সম্পর্কে আলোচনা করা হবে ইন শা আল্লাহ 

আরও পড়ুন—প্রথম ওহি-১ 

টীকা 

[1] সহিহ মুসলিম : ২২৭৭; সুনানুদ দারিমি : ২০; আলমুসনাদ, ইমাম আহমাদ : ২০৮২৮, ২০৮৯৩

[2] উল্লেখ্য, অনেকেই ‘আলাক’ শব্দের অর্থ করে থাকেন রক্তপিণ্ড। যা যথাযথ নয়। আর রক্তপিণ্ড অনুবাদ করলে বিজ্ঞানের সঙ্গেও কুরআন সাংঘর্ষিক হয়ে যায়। অনেক অনুবাদগ্রন্থে যদিও তাই-ই লেখা হয়েছে, কিন্তু ভাষাবিজ্ঞান এবং চিকিৎসাবিজ্ঞান উভয় দৃষ্টিকোণ থেকে তা যথাযথ অনুবাদ নয়।

[3] সহিহ বুখারি : ৩; সহিহ মুসলিম : ১৬০

[4] সিরাতে ইবনে হিশাম : ১/২৩৫-২৩৯

[5] আররাওযুল আনফ : ১/৪০৪

[6] সহিহ বুখারি : ৩

[7] ফাতহুল বারি : ৮/৪৫৪; উয়ুনুল আসার : ১/৮৪

[8] হাদিসটিকে ইবনুল মুলাক্কিন, ইমাম যাহাবি, ইমাম ইবনু তাইমিয়া, এমনকি শাইখ আলবানি রহ.ও সহিহ বলেছেন। দেখুন—শারহুল বুখারি, ইবনুল মুলাক্কিন : ২০/৯৮; তারিখুল ইসলাম, যাহাবি : ১/৩২; নাযরিয়্যাতুল আকদ, ইবনু তাইমিয়া : ৩৭; সহিহুল জামি‘, আলবানি : ১৪৭৩

[9] আলমুসনাদ, ইমাম আহমাদ : ৫১১৫, ৫১১৪, ৫৬৬৭

[10] তাবারানি কাবির : ৮৩৩-৮৩৪; আলমুসনাদ, ইমাম আহমাদ : ২০৫৯৬; ইমাম হাকিম তার আলমুসতাদরাকে (৪২০৯) হাদিসটি উল্লেখ করে বলেন, ‘এটি একটি সহিহ সনদবিশিষ্ট হাদিস। তবে বুখারি-মুসলিম তা উল্লেখ করেননি।’ ইমাম যাহাবিও তাঁর সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেননি। হাইসামি তার মাজমাউয যাওয়ায়িদে (১৩৮৪৮) বলেন, ‘এই হাদিসের বর্ণনাকারীরা সহিহ গ্রন্থের বর্ণনাকারীগণই।’

[11] সুরা শুরা : ৫২

[12] সুরা দুহা : ৭

Share This