১. যারা বাংলাদেশ পাকিস্তান এবং এ জাতীয় দেশগুলোকে দারুল ইসলাম বলেন। এই প্রকারের আলিমদের একদল তো এ ধরনের দেশগুলোকে সাধারণভাবেই দারুল ইসলাম বলেন। তারা দারুল ইসলামের শর্তের ব্যাপকতার অধীনে এ ধরনের দেশগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করেন। আরেক দল দারুল ইসলামকে দু’ভাগে বিভক্ত করেন। একভাগকে হাকিকি দারুল ইসলাম এবং অপর ভাগকে হুকমি দারুল ইসলাম বলে অভিহিত করেন, প্রথম প্রকারকে তারা বিলুপ্ত মনে করেন এবং দ্বিতীয় প্রকারের আওতাভুক্ত এ সকল দেশ – মর্মে ফতোয়া প্রদান করেন। দারুল উলুম দেওবন্দের ওয়েবসাইটে শেষোক্ত মতকেই গ্রহণ করা হয়েছে এবং তার পক্ষে একাধিক যুক্তি তুলে ধরা হয়েছে। আল্লামা তাকি উসমানি, আল্লামা পালনপুরী দা. বা. সহ আরো অনেকে এ জাতীয় দেশগুলোকে দারুল ইসলামই মনে করেন। তারা দারুল ইসলামের শর্তের ব্যপকতার অধীনে এ ধরনের দেশগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করেন। তবে সকলেই দলিলস্বরূপ বিগত ফকিহগণের বক্তব্যের একটু-আধটু অংশ তুলে ধরেন।

২. যারা এ ধরনের দেশগুলোকে না দারুল ইসলাম বলেন আর না দারুল কুফর বলেন, বরং তারা কাদরিয়্যা গোষ্ঠীর ‘মানযিলাতুন বাইনাল মানযিলাতাইন’ এবং তার আলোকে দারুল ইসলাম এবং দারুল হারবের মধ্যবর্তী ‘দারুল ফিসক’ মর্মে তাদের ফতোয়ার মতো এ ধরনের দেশগুলোকে ‘দারুল আমান’ নামের একটা প্রকার আবিষ্কার করে তার আওতাভুক্ত করেন। আরব আলিমরা এক্ষেত্রে দারুল আহদ বা দারুল মুওয়াআদাহ শব্দ ব্যবহার করেন। আর উপমহাদেশীয় আলিমরা এক্ষেত্রে দারুল আমান শব্দ ব্যবহার করেন। তাদের ফতোয়ারই অংশ, দারুল আমানে জিহাদ জায়েয নেই। হাকিমুল উম্মত থানবি রহ. এর ব্যাপারে বর্ণিত হয়েছে, “হাকিমুল উম্মত আশরাফ আলি থানভি রহ. উপমহাদেশের শ্রেষ্ঠ আলেমদের (গাঙ্গুহি রহ. এবং উনার মতাদর্শ লালনকারীদের) এই ফতোয়াকে বাতিল সাব্যস্ত করে ব্রিটিশ অধ্যুষিত ভারতের ব্যাপারে ঘোষণা করেন যে,
“ভারতবর্ষ দারুল আমান। এখানে লড়াই করা দুরস্ত বা বৈধ নয়।”
(কামালাতে আশরাফিয়া, ৬১১ নং মালফুজাত; মাকতাবাতুল আশরাফ)
ফাতাওয়া মাহমুদিয়াহ, কামুসুল ফিকহ জাতীয় গ্রন্থে এ মতকে পুষ্ট করা হয়েছে।

এই শ্রেণির সমকালীন আলিমগণ আবার দারুল হারব মানে বোঝেন যুদ্ধবিদ্ধস্ত রাষ্ট্র। এজন্য জাপান জার্মানি এমনকি ইউনাইটেড কিংডম বা ইউনাইটেড রাষ্ট্রকে দারুল আমান বলা হবে না দারুল হারব এ নিয়েও তাদের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দেয়। আরো একটি মজার বিষয় হলো, এই শ্রেণির সমকালীন আলিমেরা হানাফি মাযহাবকে ভুল বুঝে ফতোয়া পরিবেশন করেন, “দারুল হারবে ঈদ-জুমআ জায়েয নেই।” হাজি শরিয়তুল্লাহও সম্ভবত হানাফি মাযহাবের নামে এই মর্মেই ফতোয়াই প্রদান করেছিলেন। এ শ্রেণির সমকালীন আলিমরা বলেন, সুতরাং এ ধরনের দেশগুলোকে দারুল হারব বলে ফতোয়া দেয়ার অধিকার কোনো খতিব সাহেবের নেই। কেননা এগুলো যদি দারুল হারব হয়, তাহলে তারা ঈদ-জুমআ কীভাবে পড়াচ্ছেন। এ দলে যারা আছেন, তাদের মধ্যে অন্যতম, সকলের পরিচিত মুখ মাওলানা ফরায়েজি সাহেব। তিনি ইদানিং বোধহয় এ মতাদর্শ প্রচারে কোমরে গামছা বেঁধে নেমে পড়েছেন। তিনি মাঝেমাঝে এ প্রসঙ্গে বেশ হাসির কথাও বলে ফেলেন।

৩. খুব অল্প সংখ্যক দেওবন্দি আলিম এ ধরনের দেশগুলোকে দারুল কুফর দারুশ শিরক দারুল হারব বলে ফতোয়া দেন। তারা দারুল আমান শব্দ প্রয়োগ করলেও তা দারুল কুফরের প্রকার হিসেবেই করেন। তারা তৎকালীন হাবাশাকেও দারুল কুফর (যাতে খাওফ নয়, বরং আমান ছিলো) হিসেবে গণ্য করেন। তবে এই শ্রেণির আলিমগণ প্রকৃত অর্থেই গুরাবা।

এখন এই তিন ধরনের ফতোয়ার মধ্যে কোনটা যে দেওবন্দিয়্যাতের ফতোয়া হওয়া উচিত – তা চিহ্নিত করা মুশকিল। তিন পক্ষেই আছেন বিদগ্ধ ফকিহগণ। দেওবন্দিয়্যাতের যে ব্যাখ্যা সাইয়েদ আলী মিয়া নদবি রহ., মাওলানা মানযুর নুমানি রহ. এবং মাওলানা আবদুল মালেক দা. বা. দিয়েছেন, তার আলোকে বিশ্লেষণ করতে গেলে…। থাক, সেদিকে আর না যাই। বড়দের কাজ ছোটরা করতে গেলে আখের এর সাথে অনধিকার চর্চা বিশেষণ যুক্ত হবে। দেওবান্দিয়্যাত এক পবিত্র ধারার নাম। এই ধারার পতাকাবাহীদের কারো স্খলন দেওবান্দিয়্যাতকে কালিমালিপ্ত করবে না। জয়তু মহান দেওবান্দিয়্যাত!

Share This